সারা দেশের বোরো ধান সফলভাবে ঘরে তুলতে পারলে করোনাকালেও দেশে খাদ্য নিয়ে কোনো সংকট হবে না বলে মনে করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
শুক্রবার হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের যাত্রাপাশা গ্রামের হাওরে বোরো ধান কাটার আয়োজনে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বোরোর আবাদ বেশি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন বলেন, ‘এ বছর বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হয়েছে, তারপরও ভাল ফলন হবে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং হাওরসহ সারা দেশের বোরো ধান সফলভাবে ঘরে তুলতে পারলে দেশে খাদ্য নিয়ে সংকট থাকবে না। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারে উদ্যোগের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘মহামারি করোনাকালে খাদ্য নিয়ে মানুষকে যাতে আতঙ্কে থাকতে না হয়, খাদ্যের যাতে কোনো অভাব না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দৃঢ়ভাবে কাজ করছে।’
হাওরে উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেয়া নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেন আব্দুর রাজ্জাক। বলেন, ‘হাওরের বিশাল জমিতে বছরে মাত্র একটি ফসল বোরো ধান হয়। এ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে কৃষকদের উন্নত জাতের হাইব্রিড ধান দেয়া হবে।’
হাওরে সেচের অভাবে অনেক সময় জমি পতিত থাকে থাকে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এসব জায়গায় সেচসুবিধা সম্প্রসারণের জন্য বিএডিসির মাধ্যমে খাল খনন ও পুনখননের জন্য শীঘ্রই প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।’
বানিয়াচংয়ের হাওরে ধান কাটার উদ্বোধন করে ভর্তুকির আওতায় ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন কৃষিমন্ত্রী।
Caption
কৃষিযন্ত্র বিতরণ শেষে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকের অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি অত্যন্ত উদারভাবে কৃষকদেরকে নানা প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘হাওরে অনেক সময় আগাম বন্যা এসে ধান নষ্ট করে ফেলে। সেজন্য, দ্রুততার সঙ্গে ধান কাটার জন্য যন্ত্র দেয়া হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি করে দেয়া হবে, ২ বছর পরে ধান কাটার যন্ত্রের কোন অভাব হবে না, হাওরে যত যন্ত্রের প্রয়োজন হবে তা দেয়া হবে।’
হবিগঞ্জে বোরো ধান কর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক
গত মৌসুমে বোরো উৎপাদন ভালো হলেও, আউশ-আমন মৌসুমে দফায় দফায় বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে উৎপাদন কমে যাওয়ার বিষয়টি সামনে এনে তিনি বলেন, ‘ধান চালের দাম অনেক বেশি ছিল। সেজন্য এ বছরের শুরুতেই আমরা সর্বাত্মক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম যেকোনো মূল্যে বোরোতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের নানান উদ্যোগের ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বাড়ায় এবার বোরোতে ৯-১০ লাখ টন বেশি উৎপাদন হবে বলেও আশা করেন মন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী এসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ধান কাটায় এগিয়ে আসার ও এ বিষয়ে যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু জাহির, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আসাদুল্লাহ, ব্রির ডিজি ড. শাহজাহান কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্যা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপপরিচালক তমিজ উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী।