কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়া সদরের বারখাদা ও বিত্তিপাড়ায় বৃহস্পতিবার সকালে কৃষকদের ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।সকালে দেখা যায়, শহরতলীর বারখাদা উত্তরপাড়ার গোরস্থানের কাছে মাঠে অনেক কৃষক ধান কাটছেন। কেউ আবার এক-দুই দিন আগে ধান কেটে বিচালি বানানোর জন্য মাঠে সারি দিয়ে রেখেছেন। কেউ ধান আঁটি বেঁধে মাথায় করে নিয়ে পাকা সড়কের ওপর রাখছেন। সেখান থেকে ভ্যান, অটোরিকশা ও ট্রলিতে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
এই মাঠে ধান লাগিয়েছেন উত্তর পাড়ার আব্দুল কাদের। ধানের আঁটি ভ্যানে তুলছিলেন তিনি। প্রখর রোদের মধ্যেও কাদেরের মুখে হাসি। তিনি বলেন, এবার ফলন ভালোই পাব।
তিনিই এই মাঠে সবার আগে ধান লাগিয়েছিলেন। ধান পেকেও গেছে। তাছাড়া ঝড়-বৃষ্টির সময় ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে কেটে নিলেন বলে জানান।
উত্তরপাড়ার মাঠের এইসব জমিতে কৃষকরা আগে তামাক চাষ করতেন। এখন অর্ধেকটাতে ধান হচ্ছে।
কৃষক জামসেদ আলী কিছু ৪৮ জাতের আর কিছু তেজগোল্ডের নতুন হাইব্রিড ধানের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নতুন হাইব্রিড ধানের বীজ কৃষি বিভাগ থেকে পেয়েছি। ৪৮ একটু মোটা ধান। বেশিরভাগ কৃষক আগে ধান লাগিয়েছে, কাটছেও আগে।’
কৃষক আব্দুর রহিমের জমিতে রয়েছে ২৯ জাতের ধান। এটি এখনও কাটা শুরু হয়নি।
তিনি জানান, তার ধানও ভালো হয়েছে। দুই-একটি জমিতে ধানের শীষ সাদা হয়ে পড়ে যাচ্ছে। কিছু আবার বাতাসে নষ্ট হয়েছে। এসব কারণে কিছু জমিতে বিঘাপ্রতি ৫-৬ মণ ধান হয়েছে। তবে ৪৮ জাতে এই ক্ষতি হয়নি।
রুহুল আমিন ধান কাটছিলেন, জানালেন, ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম না পেলে লোকসান হবে।
মাঠে ধান কাটা দেখতে এসেছিলেন সদর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘৮০ শতাংশ ধান পাকলে কাটার নির্দেশনা আছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে। সেটি শুরু হয়ে গেছে।
‘আবহাওয়া ভাল থাকলে কৃষকের কোনো সমস্যা হবে না। আগাম লাগানোর কারণেই এরা এখন ধান কাটতে পারছেন। বাকিদের ধান কাটা শুরু হতে আরও ১৫ দিন লাগবে।’
তিনি দাবি করেন, হাইব্রিড জাতগুলোতে কৃষক ২৫-২৭ মণ করে ধান পাচ্ছেন।
বারখাদা উত্তরপাড়া মাঠের বাকি অর্ধেক জমির তামাকও উঠে গেছে। এখন কৃষকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরবর্তী ধান চাষের। এরই মধ্যে বীজতলায় চারা গজিয়েছে।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস জানান, জেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা মাঝারি মানের ফলন পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। তার হিসাবে হেক্টরে গড়ে সাড়ে ছয় টন করে ধান হবে।