হাওরের ৪০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, লকডাউনের মধ্যে হাওরের ধান কাটায় কোনো ঝামেলা হবে না।
বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনায় বৃহস্পতিবার এক অনলাইন সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে। এ মুহূর্তে হাওরে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের কোনো সংকট নেই।
‘পর্যাপ্ত শ্রমিক রয়েছে। একই সঙ্গে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ পর্যাপ্ত ধান কাটার যন্ত্র হাওরে এ বছর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ বছর ধান-চালের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের প্রাণপণ চেষ্টা ছিল জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। বেশি জমি চাষের আওতায় আনা, উন্নত জাতের ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।
‘বীজ, সারসহ নানা প্রণোদনা কৃষকদেরকে প্রদান করা হয়েছে। হাইব্রিড ধানের বীজ সহায়তা বাবদ ৭৬ কোটি টাকার প্রণোদনা কৃষকদেরকে দেয়া হয়েছে।’
কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে কৃষকের পাশে থেকেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন উন্নত জাতের ধান চাষের জন্য চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছেন।’
সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। আশা করা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরোতে ৯-১০ লাখ টন বেশি উৎপাদন হবে।’
এ বছর সারা দেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টরে।
আর তাই এবার বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ধান কাটায় এগিয়ে আসার ও এ বিষয়ে যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর হাওরভুক্ত সাতটি জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু হাওরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত হাওরভুক্ত ৭টি জেলায় ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ২৫ ভাগ। অন্যদিকে শুধু হাওরের ১ লাখ ৮০ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৪০ ভাগ।
সভায় জানানো হয়, চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের আরএডিপিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৮২টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে।
এ বছরের মার্চ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ৪৯.১০ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় অগ্রগতি ৪১.৯২ শতাংশ।
সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম। এ সময় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংস্থাপ্রধানসহ প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।