সবুজের বুকে লাল বৃত্ত, জাতীয় পতাকার আদলে ধানের মাঠ গড়ার শখ ছিল শেরপুরের ঝিনাইগাতীর শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকীর। তার সেই শখ পূরণ হওয়ার নয়, তবে জাতীয় পতাকার মাঝের বৃত্ত তিনি ভরাট করেছেন অন্য রঙের ধান গাছ দিয়ে।
লাল রঙের ধান গাছ হয় না। তবে ঘন বেগুনি রঙের একধরনের গাছ আছে। চারপাশে সবুজ আর মাঝে সেই বেগুনি রঙের ধানের চারা দিয়ে জাতীয় পতাকার আদলে একটি ধানক্ষেত তৈরি করেছেন তিনি।
তিনি ধানশাইল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আদর্শ শিক্ষক হিসেবেও তার স্বীকৃতি রয়েছে কৃষি বিভাগের।
তার এই উদ্যোগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর বেগুনি রঙের ধানের আবাদ প্রথম শুরু হয় গাইবান্ধায়। এ ধানের নাম ‘পার্পল লিফ রাইস’। এই ধানগাছের পাতা ও কাণ্ডের রং বেগুনি। এর চালের রংও বেগুনি। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধানের পরিচিতি বেগুনি রঙের ধান বা রঙিন ধান।
চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের এই ধানগাছ দেখে থমকে যায় পথচারীরা। তারা জানার চেষ্টা করে এটি কোন জাতের ধান বা ধানের এমন অবস্থা কী করে হলো?
অনেকেই এ সৌন্দর্যের ছবি তোলে। কেউ কেউ তোলে সেলফিও।
পথচারী যুবক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এত সুন্দর করে ধানের আবাদ করায় এ কৃষককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরাও এ ধরনের চাষ করব। আমি ছবি তুইলা রাখতাছি। একটি সেলফিও নিলাম।’
শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, তিনি ইউটিউবে ‘পার্পল লিফ রাইস’ ধানের চাষ দেখার পর এই ধান চাষের আগ্রহ জাগে।
শালচূড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নানের মাধ্যমে স্থানীয় আদিবাসী এক কৃষকের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করেছেন। এখন পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতক জমিতে ধান রোপণ করেছেন।
‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হওয়ায় আমি জাতীয় পতাকার আকৃতিতে দুই জাতের ধান রোপণ করেছি’-বলেন নূরে আলম সিদ্দিকী।
তিনি জানান, প্রায় এক একর জমিতে ‘বাংলামতি’ ও কাটারিভোগ’ নামের দুইজাতের ধানের চারা ধান রোপণ করেছেন। এসব ধানের ফলন কী রকম হবে, তা দেখার পর ভবিষ্যতে আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
অনেক কৃষক এই ধান চাষ করতে বীজ চেয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঝিনাইগাতীর দাঁড়িয়ারপাড় এলাকার কৃষক তারেক হোসাইন বলেন, ‘আমি প্রথমে দেইখা ভাবছিলাম, ধানখেত নষ্ট অইছে। পরে জিজ্ঞেস কইরা জানবার পাইলাম, এডা বেগুনি অঙের ধান। নূর আলম স্যার এমন কইরা নাগাইছে। দেখতে যেন আমাগোর দেশের জাতীয় পতাকার মতন। আগামীতে আমিও চাষ করমু ইনশা আল্লাহ।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঝিনাইগাতী উপজেলায় এ ধানের চাষ এটাই প্রথম। এই ধানের পুষ্টিমান বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু।
‘এই ধান ডায়াবেটিস রোগীদের বেশ উপকারী। ফলন ভালো হলে উৎপাদিত ধানগুলো বীজ আকারে রাখা হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ধানের আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে।’