বুধবার শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। দিনভর রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতারিতে অন্যতম অনুষঙ্গ মুড়ি। আজকাল যদিও কারখানায় তৈরি হয় মুড়ি, তবে স্বাদে ও মানে সেরা হাতে ভাজা মুড়ি।
এ মুড়ির কদর গ্রামেগঞ্জ ও শহরে। বাজারে তাই ব্যাপক চাহিদা। এ কারণে মুড়ি ভাজার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের ৪০টি পরিবারের সদস্যরা।
লক্ষ্মীপুর গ্রামটি মুড়ির গ্রাম নামেও পরিচিত। গৃহবধূরা তাদের রান্নাঘরে একটি চুলায় চাল ভাজেন। অন্য চুলায় গরম করেন বালু। এরপর একটা পাত্রে গরম বালু ও চাল ঢেলে দেন। এরপর নাড়তে থাকেন। আর তখন চাল ফুটে মুড়ি হয়। পরে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা এ মুড়ি চালনির ওপর রেখে ঘোরাতে থাকেন। তখন বালু নিচে পড়ে যায়। আর মুড়ি থাকে চালনিতে। পরিষ্কার মুড়ি তারা বস্তায় ভরেন।
এভাবে দিনভর চলে মুড়ি ভাজা ও প্যাকেট করার কাজ। এরপর মুড়ির বস্তা সরবরাহের পালা। বস্তা পাঠিয়ে দেয়া হয় পাইকারদের কাছে। লক্ষ্মীপুর গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ি কুমিল্লা জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চট্টগ্রাম ও ঢাকায়।
লক্ষ্মীপুর গ্রামের দুর্গাচরণ পাল জানান, তাদের গ্রামে অন্তত ৪০টি পরিবার বাণিজ্যিকভাবে হাতে মুড়ি ভাজার কাজে যুক্ত। প্রতিটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৭০০ কেজি মুড়ি ভাজে। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারের কাছে বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। এতে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা লাভ হয়। বাজারে হাতে ভাজা এক কেজি মুড়ি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।
দুই ধরনের চাল থেকে মুড়ি ভাজা হয়। এর একটি গিগজ চাল। এ চালের মুড়ি লম্বা হয়। তবে বৈশাখ মাসে শুরু হবে টাফি চালের মুড়ি ভাজা। এ চালের মুড়ি গোল হয় এবং বেশ সুস্বাদু।
দুর্গাচরণ পাল জানান, বছরের অন্য সময় প্রতিমাসে গড়ে অন্তত ৫ লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি করেন। তবে রমজানে চাহিদা বেড়ে যায়। এ মাসে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি করেন।
কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারের মুদি দোকানি এনামুল হক বলেন, ‘আমরা মিলে তৈরি ও হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করি। তবে ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি চান হাতে ভাজা মুড়ি। ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকে হাতে ভাজা মুড়ি আনতে হয়।’