গত কয়েকদিনে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে গরম বাতাস বা ‘লু হাওয়ায়’ বোরো ধান নষ্ট হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ধান রক্ষায় জমিতে পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
শনিবার রাজধানীর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তাপদাহ ও কালবৈশাখীর থেকে কীভাবে ধান রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে কিছু করণীয় উল্লেখ করেছে। তারা বলছে, ধানের বৃদ্ধি পর্যায়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর বেশি হলে ধানে চিটা দেখা যায়।
গত মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ধানের ফুল ফোটা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়ায় দেশের অনেক অঞ্চলে ধানে চিটা দেখা গেছে।
গত ৪ এপ্রিল এই তাপমাত্রার সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় হওয়ায় দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে।
দেশের বোরো ধানের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার হঠাৎ এমন অচেনা এক দুর্যোগে (গরম বাতাস) পুড়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। একই দশা গোপালগঞ্জেরও কয়েকটি উপজেলায়।
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, গরম বাতাসে তিন জেলায় অন্তত ৪২ হাজার হেক্টর বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর সঠিক কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষিবিজ্ঞানীরা। কৃষকদের স্বপ্ন তছনছ করে দেয়া এই দুর্যোগকে কৃষিবিদদের কেউ বলছেন ‘হিট শক’, কেউ বলছেন ‘লু হাওয়া’।
আর আবহাওয়াবিদদের দাবি, বাংলাদেশে এখন যে তাপমাত্রা তাতে লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই।
এরপর পর্যবেক্ষণ ও ক্ষতির কারণ পরিদর্শনকালে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, অধিকাংশ জমির ধান কাইচ থোড় থেকে ফুল আসা পর্যায়ে রয়েছে। যেসব জমির ধান ঝড়ের দিন ফুল ফোটা অবস্থায় ছিল তার কিছু কিছু জমির ৫-১০ শতাংশ শীষ প্রথমে সাদা ও পরে কালো হয়ে চিটায় পরিণত হয়। সবেমাত্র বের হওয়া শীষ উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সংবেদনশীল থাকে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, উচ্চ তাপের সঙ্গে যদি কালবৈশাখী হয় তবে এমন সমস্যা হতে পারে। এর জন্য তারা কিছু করণীয় ঠিক করেছে কৃষকদের জন্য। তাপদাহ বা কালবৈশাখী থেকে ধানকে বাঁচাতে হলে, বোরো ধানের যে সব জাত ফুল ফোটা পর্যায়ে আছে বা এখন ফুল ফুটছে বা সামনে ফুল ফুটবে সেসব জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে। ধানের শীষের দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই দুই থেকে তিন ইঞ্চি দাঁড়ানো পানি ধরে রাখতে হবে।
তাদের হিসাবে রোববারের কালবৈশাখী ও গরম বাতাসে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা এবং গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ জেলাসহ কিছু অঞ্চলে বোরো আবাদের ন্যূনতম ৫ শতাংশ (ধানগাছ) মরে গেছে।
আর যে পরামর্শ
ঝড়ের কারণে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া বা ব্যাকটেরিয়াজনিত লালচে রেখা রোগের আক্রমণ হতে পারে। ধানে ফুল আসা পর্যায়ে রয়েছে এমন আক্রান্ত জমিতে ৬০ গ্রাম এমওপি, ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ২০ গ্রাম দস্তা সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে বিকেলে স্প্রে করতে হবে। তবে ধানে থোড় অবস্থায় থাকলে বিঘা প্রতি অতিরিক্ত ৫ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যেতে পারে।
বোরো ধানের এই পর্যায়ে নেক ব্লাস্ট ও শীষ ব্লাস্ট রোগের ব্যাপক আক্রমণ হতে পারে। শীষ ব্লাস্ট রোগ হলে পরে দমন করার সুযোগ থাকে না। তাই ধানের জমিতে রোগ হোক বা না হোক, থোড় ফেটে শীষ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একবার এবং পাঁচ-সাতদিন পর আরেকবার প্রতি বিঘা জমিতে ৫৪ গ্রাম টুপার ৭৫ ডব্লিওপি অথবা ৩৩ গ্রাম নাটিভো অথবা ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ৬৭ লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
জমিতে বাদামী ঘাসফড়িং আক্রমণ হতে পারে উল্লেখ করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিটিউট বলেছে, আক্রমণ প্রবণ এলাকায় কীটনাশক যেমন মিপসিন ৭৫ ডব্লিও, প্লিনাম ৫০ ডব্লিও, একতারা ২৫ ডব্লিও, এডমায়ার ২০ এসএল, সানমেক্টিন ১.৮ ইসি, এসাটাফ ৭৫ এসপিও, প্লাটিনাম ২০ এসপিও অথবা অনুমোদিত কীটনাশক এ মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।