‘লকডাউনে বাজারে মানুষ আসতিছে না। এই ভরা গরমে যেইখানে তরমুজ বিক্রি কইরে ফুরায় যায়, সেইখানে গত দুদিন হাজিরাই উঠিনি। এ রকম চললি পুঁজি হারাতি হবে। ব্যবসা লাটে উঠবে।’
আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন মাগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা বাজারে ফল ব্যবসায়ী হাসেম আলী।
তিনি জানান, মোট ৫০ হাজার টাকার তরমুজ এই মৌসুমে এনেছেন। প্রতিবছরের মতো এবারও ভেবেছিলেন তরমুজ বিক্রি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন। কিন্তু লকডাউনে বেচাবিক্রি একেবারে নেই।
সদরের ইটখোলা বাজারের প্রধান সড়কের পাশে তরমুজ বিক্রি করছিলেন মজনুর মোল্লা। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে আবার ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। শনিবার এক লক্ষ টাকার তরমুজ আনছি বরিশাল থেকে। ভাবলাম গরম পড়িছে ভালো বিক্রি হবে। এখন মানুষ থাকলিউ কেউ পয়সা খরচ করছেন না।’
তরমুজ কেনাবেচায় হঠাৎ ভাটার টানে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গরম যত পড়বে তত তরমুজের চাহিদা বাড়তে থাকে। কিন্তু শনিবার লকডাউন ঘোষণার পর থেকে বিক্রি শূন্যের কোঠায়। এভাবে কদিন চললে সব তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে।
খুচরা বিক্রেতাদের পাশাপাশি পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাইকাররাও। শহরের জামরুল তলায় তরমুজের পাইকারি ব্যবসায়ী সোহান। তিনি বলেন, ‘বরিশাল ও কুষ্টিয়া থেকে শনিবার দুই ট্রাক তরমুজ এনেছি। আড়াই লাখ টাকার তরমুজের অধিকাংশ গুদামে পড়ে আছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা তরমুজ অল্প পরিমাণে নিলেও তাদের বিক্রি থেমে গেছে। এখন মৌসুমের শুরুতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি।’
তরমুজ কিনতে আসা সখিনা খাতুন বলেন, ‘বাড়ি মনিরা তরমুজ খাবি। তাই কিনতে আইছি। এখন দেখি তরমুজ নরম হয়ে গেছে। এই তরমুজ খাতি তিতা লাগবি বলে কিনতে চাইছি না।’
তরমুজ ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, এবার ছোট সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। বড় সাইজের হলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি করছেন তারা। তবে যদি কালো জাতের তরমুজ হয় তবে তার দাম পিসপ্রতি ১০ টাকা বাড়তি।
তরমুজ আড়তের মালিক বাবুল ফকির বলেন, দাম কমিয়ে ধরলেও তরমুজ কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ক্রেতারা। লকডাউনে শখ করে কিছু কেনার প্রবণতা কমে গেছে।
জেলা ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা মামুন হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তরমুজ বিক্রি গত সপ্তাহে ভালো ছিল। আমি বিভিন্ন বাজারে দেখেছি ব্যবসায়ীরা তরমুজ ভালো দামে বিক্রি করছেন। সেখানে ক্রেতারা অভিযোগ করছিল দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। সে বিষয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছি ক্রেতাদের কাছে অল্প লাভে মৌসুমি ফল তরমুজ বিক্রি করেন।’