চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষ উপযোগী, খরাসহিষ্ণু বেগুনের জাত খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছেন কৃষকরা। জেলার নাচোল উপজেলার খড়িবোনা গ্রামের ২০ জন কৃষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ কাজ করছেন। তাদের সংগঠনের নাম দিয়েছেন ‘কৃষক ঐক্য’।
কৃষক ঐক্যের সম্মিলিত চেষ্টায় দেশের বিভিন্ন এলাকার বিলুপ্তপ্রায় ও প্রচলিত বেগুনের জাত সংগ্রহ করা হয়। তারা এখন পর্যন্ত ১৯টি জাতের বেগুন সংগ্রহ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে শিংনাথ সাদা, শিংনাথ কালো, মুক্তকেশী, বারোমাসি, বোতল বেগুন, নাসিমা বেগুন, ঝুরি বেগুন, চালতে বেগুন, টব বেগুন, ডিম বেগুন ও তাল বেগুন।
‘কৃষক নেতৃত্বে বেগুনের জাতবৈচিত্র্য গবেষণা’র অংশ হিসেবে এমন তৎপরতা শুরু করেছেন কৃষকরা। এ কাজে তাদের সহায়তা করছে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক) নামে একটি পরিবেশবাদী উন্নয়ন সংস্থা।
পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা বেগুনের ভালো ফলন দেখে অনেক কৃষকই সবজিটির চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
পরীক্ষামূলক চাষ করা এসব বেগুনের ভালো ফলন দেখে খুশি অনেক কৃষক। ছবি: নিউজবাংলা
খড়িবনা গ্রামের কৃষক আজিজুল হকের ৮ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ১৯টি জাতই চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু জাত ভালো ফলন দিয়েছে। জাতগুলো এ এলাকার জন্য উপযোগী বলে মনে করছেন কৃষকরা।
এ নিয়ে আজিজুল বলেন, ‘বরেন্দ্র এলাকার জন্যি বেগুনের কোন জাইত ভালো হবি, সেটা বের করবার লাগি আমরা মেলা জাগাত্থি (জায়গা থেকে) বেগুনের ১৯টি জাত সংগ্রহ করে লাগায়েলাম।
‘এর মধ্যে বরগুনার টব ও তাল বেগুন, নেত্রকোনার নাসিমা বেগুন, মানিকগঞ্জের মুক্তকেশী ও বারোমাসি চিকন কালো বেগুন, সাতক্ষীরার ঝুরি বেগুন বেশ ভালো ফলন দিছে।’
বিভিন্ন এলাকার বিলুপ্তপ্রায় ও প্রচলিত বেগুনের জাত সংগ্রহ করে সেগুলো চাষ করা হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
আরেক কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ছাড়াই বেগুনের ভালো ফলন পেয়েছেন। এতে করে তাদের খরচ কমেছে।
তিনি জানান, ধান চাষে অনেক বেশি সেচের প্রয়োজন পড়ে। তবে বেগুনে এক থেকে দুটি সেচ দিলেই হয়ে যায়।
ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বেগুন চাষের পরিকল্পনার কথা জানান এই কৃষক।
কৃষক ঐক্যের সংগঠক রঞ্জু আকন্দ জানান, সংগঠনের ২০ কৃষক ছাড়াও গ্রামের অন্য কৃষকদের মধ্যে তাল বেগুনের ৪০০ চারা বিতরণ করা হয়। এসব চারা রোপণ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন তারা।
এ বেগুনের একেকটির ওজন ৪০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম। এ বেগুন স্বাদেও ভালো। জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় বলে বিষমুক্ত এসব বেগুনের দামও বাজারে বেশি পাচ্ছেন তারা।
বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা অমৃত সরকার বলেন, ‘বারসিক এ জেলার উচ্চ বরেন্দ্র এলাকায় পরিবেশ-প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, কৃষি ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, লোকায়ত জ্ঞান ও প্রাকৃতিক সম্পদে প্রান্তিক মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ে কাজ করছে। বেগুনের এ জাতগুলো খরাসহিষ্ণু; সেচ কম লাগে। বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য এ বেগুনগুলো চাষ উপযোগী।
‘পরীক্ষামূলক চাষাবাদের ফলাফলের ভিত্তিতে বেগুনের চাষ সম্প্রসারণে কৃষকরা আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাই বীজ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বীজ তৈরি ও কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটিও গবেষণা কাজে অংশ নেয়া কৃষকরা করবেন। আমরা শুধু তাদের একটু সহায়তা করব।’
তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে এ গবেষণার মাধ্যমে বেগুনের উপযুক্ত স্থানীয় জাত বাছাই করা হবে। গবেষণাধীন এলাকায় কৃষকরা যাতে বেগুনের লুপ্তপ্রায় জাতগুলো সহজে পায়, তা নিশ্চিত করাই মূল উদ্দেশ্য।