বাড়তি কিছু আয়ের জন্য গরু পালন করেন ঝিনাইদহের নিম্ন আয়ের লোকজন। কিন্তু গরুর খুরারোগ তাদের ভাগ্যে ডেকে এনেছে বিপর্যয়। একের পর এক মারা যাচ্ছে গরুবাছুর।
অনেকেই ঋণ নিয়ে গরু কিনেছিলেন। আশা ছিল, দুধ বিক্রি করে সংসারে বাড়তি টাকা আসবে। কিন্তু অসময়ে সেই গরু মারা যাওয়ায় সেই আশা তো পূরণ হলোই না বরং কীভাবে ঋণ শোধ করবেন, তা এখন বুঝতে পারছেন না।
এসব লোকজন বলছেন, গত দুই মাসে ছয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মারা গেছে চার শতাধিক গরুবাছুর।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত দুই মাসে সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৭০টি, শৈলকুপায় ১০৯টি, কালীগঞ্জে ৮৫টি, মহেশপুরে ৬৯টি, কোটচাঁদপুরে ২৬টি, হরিণাকুণ্ডুতে ২৭টি গরুবাছুর মারা গেছে। এ ছাড়াও আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৩০ হাজার গরুবাছুর।
সদর উপজেলার বিষয়খালী ঘোষপাড়ার মোশারফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এনজিও থেকে লোন করে গরু কিনিছিলাম। ভ্যান চালায়ে গরুরে খাওয়াতাম। আমার গরু ৭ মাসের গাভিন (গর্ভবতী) ছিল।
‘হঠাৎ করে মুখ আর পায়ে ঘা হয়। খাওয়া বন্ধ করে দ্যায়। ডাক্তার দ্যাখালাম। কোনো কাজ হলো না। কয়দিনের মদ্যিই মরে গেল আমার আড়াই লাক (লাখ) টাকার গরু।’
একই গ্রামের পলাশ ঘোষ বলেন, ‘আমি লোন করে দুইটা গরু কিনিছিলাম। খুরারোগে আমার গরু দুটা মরে গেল। আমার গুয়াল (গোয়াল) ঘর একুন ফাঁকা। যা দুধ হচ্ছিল তা বিক্রি করে সমিতির কিস্তি দিচ্ছিলাম।
‘এখন গরু মরে যাওয়াতি আমি টাকাও দিতি পারছিনে। সংসারও চলছে না। কী করব? এখন চোকে অন্দকার দেকছি।’
সদর উপজেলার হাবিবপুর গ্রামের খামারি মিঠু শেখ জানান, তিনি গরুর লালনপালন করে সংসার চালান। এ বছর তার খামারে ৩৭টি গরু ছিল। খুরারোগে তিনটি মারা গেছে। এখনও পাঁচটি গরু অসুস্থ রয়েছে।
কৃষি তথ্য সার্ভিস অনুযায়ী, ক্ষুরারোগ অতি তীব্র প্রকৃতির সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত পশুর মুখ ও পায়ে ঘা হবার কারণে খেতে পারে না এবং খুঁড়িয়ে হাঁটে। এ রোগ মারাত্মক ছোঁয়াচে।
কবিরপুর গ্রামের দুলাল ঘোষ জানান, তার পাঁচটি গরু ছিল। খুরারোগে তিনটি মারা গেছে। দুইটি গরুর মধ্যে একটি সুস্থ হয়েছে, অন্যটি এখনও অসুস্থ।
কামরুজ্জামান নামের এক খামারি বলেন, ‘আমি গরু বড় করে বিক্রি করি। আশপাশের লোকজনের গরুর খুরারোগ হচ্ছে। আমার গরু নিয়ে আমি খুব চিন্তায় আছি। কী করব বুঝতি পারছিনে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আনন্দ কুমার অধিকারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছরই গরুর খুরারোগ হয়। এবার আক্রান্তের সংখ্যা একটু বেশি। এখন পর্যন্ত জেলার সব কয়টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২৭ হাজার গরুকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত খামারিদের পরামর্শ দিয়ে আসছি।’