বাংলাদেশ যখন ফসলের মাঠে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে চেষ্টা করছে, তখন ধান চাষ পদ্ধতি পাল্টে দেয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘সমলয়’ নামে একটি উদ্যোগ।
সরকার বলছে, যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষকের সময়, শ্রম ও ব্যয় কমাতে চায় তারা। এর মাধ্যমে চাষের খরচ কমে আসলে ধান চাষ আবার লাভজনক হয়ে উঠবে বলে আশা করছে তারা।
শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর কেন্দুয়া গ্রামে ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ উদ্বোধন উপলক্ষে কৃষক সমাবেশে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই যন্ত্র দিয়ে এক একর জমিতে ধানের চারা রোপন করা যায় এক ঘণ্টায়। সনাতন পদ্ধতিতে এই পরিমাণ চারা রোপন করলে সারাদিন লেগে যাবে। আর শ্রমিক ভাড়া করতে হয় ১০ থেকে ১২ জন।
একদিনের শ্রমিক খরচ এখন সাতশ থেকে আটশ টাকা। এই হিসাবে ধানের রোপন খরচ লাগবে সাড়ে আট হাজার থেকে সাড়ে নয় হাজার টাকা। কিন্তু সমলয় এই খরচ কমিয়ে চার থেকে পাঁচ হাজারে নামাবে।
মন্ত্রী জানান, সমতলের কৃষকরা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার কিনলে এর দামের অর্ধেক পরিশোধ করবে তারা। বাকি টাকা দেবে সরকার।
হাওরের কৃষকদের বাড়তি সুবিধা দেয়া হবে। সেখানে ৩০ শতাংশ টাকা দিলেই একটি যন্ত্র কেনা যাবে, সরকার দেবে বাকি টাকা।
আকারভেদে যন্ত্রের দাম ১৭ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সমতলের কৃষকরা সাড়ে আট থেকে সাড়ে ১২ লাখ আর হাওরের কৃষকরা পাঁচ লাখ ১০ হাজার থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা দিয়ে যন্ত্রটা কিনতে পারবে।
চারা রোপণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রীধান রোপনের মতো কাটাও যাবে এই যন্ত্র দিয়ে। তখনও চাষির খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আশা করা হয়, কেউ যন্ত্র কিনে ভাড়া দিলে সনাতন পদ্ধতির অর্ধেক খরচে চাষ করা যাবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণে গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হয়েছে তিন হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্প। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ তরান্বিত করতে দক্ষ জনবল তৈরিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি প্রকৌশলীর ২৮৪টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।‘
মন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যাচ্ছে দেশ। আমাদের দেশে ক্ষেতগুলো ছোট। তাছাড়া, কৃষকেরা বিভিন্ন জমিতে বিভিন্ন সময়ে চারা রোপন করেন। ফলে কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার সঠিকভাবে করা যায় না। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চাষে প্রতি একর জমিতে কৃষকের খরচ কমবে সাড়ে চার হাজার টাকা। ৪-৫ বছর পরে কেউ আর হাতে ধান রোপণ করবে না।‘
কৃষক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম।
বক্তব্য রাখেন বিএডিসির চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম, ধান গবেষণা কেন্দ্র ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর।
কৃষি অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপপরিচালক বাশার আহমেদ জানান, ‘সমলয়’ চাষের এক নতুন পদ্ধতি। একটি ব্লক বা মাঠে যৌথভাবে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করা হয়। বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহসহ সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে সমসময়ে সম্পাদন করা হয়।
এ পদ্ধতিতে ধান আবাদে চারা তৈরি করতে হয় ট্রেতে। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। কৃষক ফসল একত্রে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারেন।
কারণ, একসঙ্গে চারা রোপণ করায় সব ধান পাকে একই সময়ে। তখন ধান কাটার মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়।