বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দেয়া সরকারি প্রণোদনার পেঁয়াজের বীজে গজায়নি চারা।
চাষিদের অভিযোগ, তাদের নিম্নমানের বীজ দেয়া হয়েছে। এ বীজ বপন করে ক্ষতি পোষানোর বদলে উল্টো ক্ষতি হয়েছে তাদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পেঁয়াজের বীজের মান ভালো ছিল। তবে অতিরিক্ত শীতে হয়তো এই সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে দুই দফায় প্রণোদনা হিসেবে পেঁয়াজ বীজ দেয়া হয়। প্রথম দফায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর ৩০০ কৃষককে ২৫০ গ্রাম করে বীজ দেয়া হয়। ওই বীজগুলো জমিতে বপনের পর চারা গজিয়ে যায়।
দ্বিতীয় দফায় গত ২০ ডিসেম্বর আবার পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করে কৃষি বিভাগ। উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৫০ কৃষককে ৭৫০ গ্রাম করে বীজ দেয়া হয়। এর সঙ্গে আরও দেয়া হয় ২০ কেজি ড্যাপ ও ১০ কেজি এমওপি সার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বিতীয় দফায় দেয়া বীজ উপেজলার ১৫০ বিঘা জমিতে বপন করা হলেও কোনো কৃষকের জমিতে চারা গজায়নি।
কাজলার কটাপুর গ্রামের চাষি মতিন খাঁ জানান, পাশের জমিতে চাষিরা বাজার থেকে বীজ কিনে বপন করছে। সেই বীজগুলো জমিতে গজিয়ে তরতর করে পেঁয়াজের গাছ বেড়ে উঠছে। কিন্তু তার জমিতে সরকারি বীজ লাগিয়ে ফলন তো দূরের কথা, কোনো বীজই গজায়নি।
ওই গ্রামেরই কৃষক ইব্রাহিম শেখ বলেন, তাদের জমিগুলো পতিত পড়ে আছে। অন্য কোনো ফসল করার সময় এখন আর নেই।
বর্গা জমি নিয়ে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন ইব্রাহিম। জানালেন, এই অবস্থায় কী করণীয় তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না। বললেন, ‘এইটাই ছিল আমাদের কপালে।’
এই বীজগুলো উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের সরবরাহ করেছিলেন কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ সরকার।
তিনি বলেন, তারা চরের গরিব, অসহায় চাষি। তার (চেয়ারম্যান) ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু বীজের মান ভালো না থাকায় তা গজায়নি। এখন চাষিরা হা-হুতাশ করছেন।
সারিয়াকান্দির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘আমরা গাজীপুর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন পেঁয়াজের বীজ বপনের পর জমিতে ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকার দরকার ছিল।
‘এ মৌসুমে সেখানে তাপমাত্রা ৬ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করায় পেঁয়াজের বীজ ভালো গজায়নি। এ ছাড়াও বীজে ঠিকমতো পরাগায়ন না ঘটার কারণে বীজে সমস্যা হতে পারে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানালেন, পেঁয়াজ বীজের মান ভালো ছিল। তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা তো কেবল আমাদের এখানে না। খোঁজখবর নিয়ে আমরা জানতে পেরেছি, চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সমস্যা হয়েছে। এই এলাকার কৃষকরা দেরিতে পেঁয়াজ বীজ বপন করার কারণে ঠিকমতো গজায়নি।’