ইউনুস ভূঁইয়া কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতলী গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ ১৪ বছর ছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে কৃষিকাজ করতেন। কয়েক বছর আগে ফিরেছেন দেশে।
দেশে এসে দেখেন বাড়ির পাশে বিস্তৃর্ণ জলাভূমি। বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকে সেই জমিতে।
পরিকল্পনা করলেন জমিগুলো লিজ নেবেন। নিজের জমানো অর্থ দিয়ে ৭০ কানি (৩০ শতকে ১ কানি) জমি লিজ নিলেন। নিজের নামে থাকা জমি মিলিয়ে অন্তত ৮০ কানি অর্থাৎ ১ হাজার ৮০০ শতক (প্রায় ৬০ বিঘা) জমিতে গড়ে তুললেন তার ফল ও সবজির বাগান।
জমির চারপাশে বাঁধ দিয়ে তৈরি করলেন ফল ও সবজির বাগান। বাগানে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে বরই, লেবু ও টমেটো। সঙ্গী হিসেবে রয়েছে শীতকালীন সবজি।
বাগানের চারপাশে উঁচু মাটির দেয়াল। ভেতরে কাজ করছেন অন্তত ১৫ জন কৃষিশ্রমিক। কেউ কোদাল দিয়ে নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউবা গাছের গোড়ায় পানি সেচ ও সার দিচ্ছেন। বাগানের মাঝে রয়েছে পুকুর। আর চারপাশে খালের মতো করে নালা করা হয়েছে। যেন বাগানে পানি জমে না থাকে।
বাগানটি দেখতে ও ফল কিনতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরা। আগামী বছর দেড় কোটি টাকার ফল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউনুস ভূঁইয়ার বাগানটি এখন অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে।
কথা হয় ইউসুন ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, ইউটিউব দেখে বরই চাষ শিখে গত বছর বাগানে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী জাতের ২ হাজার ৫০০ বরইগাছ রোপণ করেন। বরইগাছে এ বছর প্রথম ফল আসে।
পাশাপাশি চায়না জাতের সাত হাজার সিডলেস লেবুগাছ রোপণ করেন। গাছ কেনা, কৃষিশ্রমিকদের নিয়মিত মজুরিসহ গত এক বছরে অন্তত ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। বাগান করতে গিয়ে এত টাকা বিনিয়োগ করায় পরিবার ও প্রতিবেশীদের সমালোচনার মুখে পড়েন। তবে হাল ছাড়েননি ইউনুস।
ইউনুসের দুই ছেলে দুই মেয়ে। ছেলেরা নিয়মিত বাগানে বাবার কাজে সহযোগিতা করে।
ইউনুস বলেন, ‘এবার প্রথমবারের মতো আমার বাগানে ফল হলো। এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছি। আগামী রমজানে বিক্রি করব লেবু। সে লক্ষ্যই বাগানে পরিচর্যা চলছে।
‘বাগানে আরও ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে ঋণের আবেদন করেছি। তবে পাচ্ছি না। কোনো ব্যাংকই ৭-৮ লাখ টাকার বেশি ঋণ দিতে রাজি হচ্ছে না।’
ইউনুস জানান, যদি তিনি চাহিদামতো বাগানে বিনিয়োগ করতে পারেন, তাহলে বরই, লেবু একং কৃষি সবজি মিলিয়ে আগামী বছর অন্তত দেড় কোটি টাকার ফল ও সবজি বিক্রি করতে পারবেন।
ইউনুস ভূঁইয়ার বাগান বিষয়ে কথা হয় কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শহীদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইউনুসের বাগানের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। তিনি যদি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তা হলে তাকে ঋণ দেয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।’