শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে মাঠে মাঠে এখন দোল খাচ্ছে সুগন্ধি ধান ব্রি-৩৪। ‘জামাই সোহাগা’ হিসেবে খ্যাত ধানটিতেই স্বপ্ন দেখছেন এ অঞ্চলের কৃষক।
চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জের অনেক এলাকায় সুগন্ধি এ ধানের চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং পোকার আক্রমণ কম থাকায় বাম্পার ফলনের আশা কৃষকদের।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রি-৩৪ জাতের ধানের চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে দামও ভালো। আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হলেও এ জাতের ধান কৃষকের ঘরে উঠতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। তবে সময় বেশি লাগলেও সুগন্ধি এ ধানেই স্বপ্ন দেখছেন তারা।
উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের জামতৈল গ্রামের কৃষক আসাদুল ইসলাম জানান, চলতি বছর এ অঞ্চলে অন্য জাতের ধান চাষ করে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর পোকার আক্রমণে কাঙ্ক্ষিত ধান ঘরে তুলতে পারেননি অনেকে।
উপজেলার লবণকোটা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ব্রি-৩৪ জাতের ধান আবাদ করেছিলেন। ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন।
তিনি আরও জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। মোটা ধানে পোকার আক্রমণ হলেও ব্রি-৩৪ ধানে সমস্যা হয়নি।
উপজেলার চান্দেরপাইকড়া গ্রামের রাকিব হাসান জানান, বীজতলা থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১৩ থেকে ১৫ মণ ধান পেতে পারেন।
তিনি বলেন, বাজারে এই জাতের ধান মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকার উপরে। সেই হিসাবে, বিঘাপ্রতি লাভ হবে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা।
পাইকড়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান, ধান বিক্রির পর পরবর্তী আবাদের টাকা রেখে দেবেন। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে সন্তানদের শীতের পোশাক, নতুন জামা, জুতা ও বই-খাতা কিনে দেবেন।
নতুন ধান তুলে মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের নিয়ে শীতের পিঠা উৎসব করবেন বলেও জানান তিনি।
রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ব্রি-৩৪ জাতের ধানের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এ কারণে ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হানিফ জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় দুই হাজার ৯১ হেক্টর জমিতে ব্রি-৩৪ ধান এবং ১৬৭ হেক্টর জমিতে কালোজিরা ধান চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে রায়গঞ্জ উপজেলায়।
ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবেন বলেও জানান তিনি।