প্রতি বছরের মতো এবারও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ভুট্টার আবাদ করেছেন কৃষকরা। তবে কৃষকদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ পোকা।
ফসলের জন্য মারাত্মক এই পোকা একটি জমির পুরো ফসল খেয়ে শেষ করতে পারে এক রাতেই। কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আক্রমণ বেশি।
তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, শীতে পোকার আক্রমণ কম। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেই ফল আর্মিওয়ার্ম থেকে ফসল রক্ষা করা যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা গেছে, এ বছর চুয়াডাঙ্গায় ৪৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চার উপজেলায় ৪৪ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের কৃষক তৈয়ব আলী এ বছর ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর ভুট্টার ভুই খেয়ি ফেলিচে পোকাতে। খরচ করি বেশি লাভ হয়নি। এবার মনে করলাম লাভ হবে। কিন্তু এবারও পোকাতে সব শেষ করি দিয়িচে। ফেরামন ফাদ ও ওষুদেও কাজ হচ্চে না। খুব চিন্তায় আচি। এবারও মনে হয় লচ হবে।’
এক দশক ধরে ভুট্টা আবাদে দেশের শীর্ষে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা। ২০১৮ সালের নভেম্বরে জেলার কয়েকটি এলাকায় প্রথম এই পোকার আক্রমণ দেখা যায়।
সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারত থেকে এই পোকা এসেছে বলে মনে করেন কৃষিবিদরা।
ফল আর্মিওয়ার্মের আক্রমণ ঠেকাতে আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র (সিমিট) ২২ নভেম্বর মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের দুটি ব্যাচে চার দিনের প্রশিক্ষণ আয়োজন করে। তবে এবার পুরুষ কর্মকর্তারা নন, প্রশিক্ষণে অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ৫৫ জন নারী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা।
সিমিটের কনসালটেন্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. সৈয়দ নুরুল আলম জানান, এ বিষয়ে গত বছর স্থানীয় কৃষক ও বিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এবার বিষয়ভিত্তিক তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি সদর উপজেলার হাজরাহাটি মাঠে গিয়ে সরাসরি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নারী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
মাঠে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় কথা হয় মেহেরপুর সদর উপজেলা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা চায়না পারভিনের সঙ্গে। তিনি জানান, আগে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। এখন তারা নিজ নিজ এলাকার কৃষকদের এই পোকার বংশবিস্তার ও দমন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবেন।
কুমিল্লার দাউদকান্দির উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুমনা আক্তার স্মৃতি জানান, ভুট্টার উৎপাদন বাড়াতে প্রশিক্ষণটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আলী হাসান জানান, ফেরোমন ফাঁদ ও পানির ফাঁদ দিয়ে এই পোকা দমন করা যায়। এ ছাড়া তাপমাত্রা আরও কমে গেলে পোকার আক্রমণও তুলনামূলকভাবে কমে যাবে।