চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় বগুড়ার ৬৩২টি চালকলের কাছ সরকারিভাবে ধান-চাল নেয়া হবে না বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়।
এর মধ্যে এক মৌসুমের জন্য ২২৮টি চালকল এবং আগামী দুই মৌসুমের জন্য ৪০৪টি চালকল থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ধান-চাল নেবে না সরকার। এই চালকল মালিকদের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে।
বগুড়ায় মোট চালকল আছে ১ হাজার ৯৬০টি। এর মধ্যে বোরো মৌসুমে ধান-চাল দেয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ১ হাজার ৫৫৬টি। আর চুক্তির বাইরে ছিল ৪০৪টি।
এবার বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৮৬৬ টন। এর মধ্যে ২০ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগৃহীত হয়। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ৮৪৮ টন। এর বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৪৪ হাজার মেট্রিক টন।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এবার সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থতার জন্য পুরোপুরি চালকল মালিকরা দায়ী।
তবে ধান-চাল সরবরাহ করতে না পারার বিপরীতে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকদের ভাষ্য, সরকারের বেঁধে দেয়া ক্রয় মূল্যের সঙ্গে বাজার দরের সামঞ্জস্য ছিল না। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় ও অতিবৃষ্টি ফসলের ক্ষতি করেছে।
করোনাভাইরাসের কারণে চালকলে শ্রমিক সংকট ছিল। পরবর্তী সময়ে বাজারে মোটা ধানেরও সংকট দেখা দেয়। এ সব কারণে মূলত সরকারের সঙ্গে চুক্তির পরও ধান-চাল পুরোপুরি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
এবার বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান আর ৩৬ টাকা দরে সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। সে লক্ষ্যে চালকল মালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।
চুক্তি অনুযায়ী, ২৬ এপ্রিল শুরু হয় ধান সংগ্রহ। আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযান শুরু হয় ৭ মে।
সরকারি গুদামে ধান-চাল সরবরাহের সময় ছিল ৩১ আগস্ট। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। তবে এই বাড়তি সময়েও চাল সংগ্রহ না হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নির্দেশ দেয় অধিদফতর।
জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলার মনি চালকলের মালিক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাজারে ধামের দাম বেশি হওয়ায় সরকারকে চাল সরবরাহ করতে পারেননি। এ জন্য চুক্তির মোট চালের দামের ২ শতাংশ এবং বস্তার মূল্য জামানত হিসেবে দিতে হয়। সেই টাকা সরকার কেটে নিতে পারে। কিন্তু চাল দিলে আরও অনেক বেশি ক্ষতি হতো।
উপজেলার চুক্তিবদ্ধ আরেক মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চাহিদা অনুযায়ী কিছু পরিমাণ চাল সরবরাহ করা হয়েছিল। তবে আরও চার দিলে প্রচুর লোকসান গুনতে হতো। ওই সময় চাল দিলে প্রতি কেজিতে প্রায় ৫ টাকা লোকসান হতো। এখন এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে।
শেরপুর উপজেলার আল নূর সেমি অটোরাইস মিলের মালিক মো. বশিরউদ্দিন বলেন, ৪০ কেজি ধানে চাল পাওয়া যায় ২৬ কেজি। সেই ধান থেকে চাল বের করতে মিলে কাটিং ও পরিবহন ব্যয় আছে। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে ধান ক্রয় করে তারা কীভাবে চাল বিক্রি করবেন?
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর তাদের দায়িত্ব ছিল ধান-চাল বুঝিয়ে দেয়া। কিন্তু তারা নির্দিষ্ট সময়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সময় বাড়িয়েও কোনো লাভ হয়নি।