কাঁঠাল তো বটেই; অন্যান্য ফল, গাছগাছালির জন্যও খ্যাতি রয়েছে গাজীপুরের। টিলা, উঁচু চালাজমির জেলাটির উদ্ভীজ্জ জগতে এবার যুক্ত হচ্ছে চা।
যার হাত ধরে গাজীপুরে চা চাষ শুরু, তিনি লুৎফর রহমান। জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় নিজের পৈত্রিক বাড়ির অব্যবহৃত তিন হেক্টর জমিতে চা চাষ শুরু করেছেন তিনি।
বাড়ি কাপাসিয়ায় হলেও লুৎফর রহমানের বেড়ে ওঠা সিলেটে। এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন।
দীর্ঘ দিনের জানাশোনা থেকেই গাজীপুরে চা চাষের পরিকল্পনা করেন লুৎফর। এ জন্য বেছে নেন কাপাসিয়ার চিনাডুলি গ্রামের পৈত্রিক সম্পত্তির পরিত্যাক্ত জায়গা।
তার মতে, হাজারও উদ্ভিদের মধ্যে একমাত্র চা গাছ ব্যতিক্রম। কেননা তার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাছটি আপনাকে কিছু দেবেই। চা গাছ কারও সঙ্গে কোনো প্রতারণা করে না।
গাজীপুর যেহেতু বন্যামুক্ত এলাকা, উঁচু চালাজমি সমৃদ্ধ সে জন্যই বাড়ির পাশের প্রায় তিন হেক্টর জমি নির্ধারিত করে বন জঙ্গল পরিষ্কার করে ২০১৯ সালে সিলেট থেকে ১০ হাজার চারা এনে রোপণ করেন। অল্পদিনেই চারা গাছগুলো বেড়ে ওঠে।
সম্ভাবনা দেখে চলতি বছর বাড়ির পাশের শীতলক্ষার চরে আরও বেশ কিছু জমিতে চা গাছের চারা রোপণ করেন লুৎফর। তার আশা কয়েক বছরেই এই বাগান থেকে উৎপাদনে যেতে পারবেন।
লুৎফর জানান, আগে আমাদের দেশে সিটিসি (অর্থোডক্স) জাতীয় চা-চাষ হতো। দিন দিন এ জাতীয় চা চাষ কমে গেছে। বর্তমানে এ জাতীয় চা শুধু প্রতিবেশী ভারতের দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত হয়।
অর্থোডক্স অর্থাৎ প্রাচীন চা এই গাজীপুর থেকেই উৎপাদন করতে চান লুৎফর। সে লক্ষ্যেই পথচলা তার।
বর্তমানে সারা দেশেই চা চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে। গাজীপুরের পাশেই ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় চা চাষ হচ্ছে, সে হিসেবে গাজীপুরেও চা-চাষেও সম্ভাবনা রয়েছে মনে করেন লুৎফুর।
তার মতে, যেখানে পানি জমে না থাকে, যে মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি, সেচের ব্যবস্থা রয়েছে যেখানেই মূলত চা চাষ হতে পারে। এমনকি সমতল ভূমিতেও। বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থকরী ফসলের সম্প্রসারণে আরও কার্যকর ভূমিকা নেয়ার দাবি লুৎফরের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানান, চা দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হওয়ায় এ চাষ সম্প্রসারণে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের অনেক এলাকার সমতল ভূমির পাশাপাশি গাজীপুরের পাশেই ময়মনসিংহেও চা চাষ হচ্ছে।
তবে এখনও গাজীপুরের সম্ভাব্যতা যাছাই করা হয়নি। হয়তো পরীক্ষা করলে বলা যেতে পারে।
মোহাম্মদ আলী আরও জানান, শুধু চা চাষ করলেই হবে না, এর গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত করা। সে বিষয়টিতেও নজর দিতে হবে।