পবিত্র কোরআনের আত ত্বীন সূরায় বর্ণিত মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীনের চাষ হচ্ছে গাজীপুরে। শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা গ্রামে মডার্ন এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নিউট্রিশন ত্বীন চাষ করছে। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ডুমুর আকৃতির এই ফল এলাকায় সবার দৃষ্টি কেড়েছে। অন্যান্য চাষী ও সাধারণ মানুষও ফার্ম দেখে ত্বীন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মডার্ন এগ্রো ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা আজম তালুকদার জানান, ২০১৪-১৫ সালে তিনি থাইল্যান্ড থেকে ত্বীন গাছ এবং তুরস্ক থেকে গাছের কাটিং নিয়ে আসেন। পরে নিজস্ব প্রোপাগেশন সেন্টারে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় রেখে বারতোপা এলাকায় ২০১৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন ও আবাদ শুরু করেন। এখন তার ফার্ম থেকে বিভিন্ন জেলায় ত্বীন ফল ও চারা বিক্রি হচ্ছে।
তিনি জানান, প্রতিটি গাছে প্রথম বছরে এক কেজি, দ্বিতীয় বছরে সাত থেকে ১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। এভাবে একটি গাছ একটানা ৩৪ বছর ফল দিতে থাকে। গাছের আয়ু প্রায় একশ’ বছর।
তিন মাসের মধ্যেই শতভাগ ফলন আসে। পুরো গাছ জুড়ে ডুমুর আকৃতির এই ফল সবারই দৃষ্টি কেড়েছে। প্রতিটি পাতার গোড়ায় ত্বীন ফল জন্মে থাকে।
ত্বীন একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল, যা মরু অঞ্চলে অনায়াসে জন্মায়। ফলটি পুরোপুরি পাকলে রসে ভরা।
উদ্যোক্তা আজম তালুকদার জানান, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন। মাটিতে জৈব ও কম্পোসড সার মিশিয়ে মাঠে ও ছাদে টবে লাগিয়ে ফল উৎপাদনে সাফল্য পাওয়া গেছে।
ছাদ বাগানিদের মধ্যে এরই মধ্যে ত্বীন চাষে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। দেশ-বিদেশে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ভারত ও জাপানে এর চাহিদা অনেক।
তিনি আরও জানান, ত্বীন ফলের ১০৩টি জাত রয়েছে তাদের সংগ্রহে। তবে তারা এখানে ছয়টি জাত চাষাবাদ করছেন। এগুলোর ফল নীল, মেরুন, লাল, হলুদসহ বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। এখানকার গাছে প্রতিটি ত্বীন ফল ওজনে ৭০ থেকে ১১০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
মডার্ন এগ্রো ফার্মের বিক্রয় ব্যবস্থাপক পারভেজ আলম জানান, বারতোপা এলাকায় সাত বিঘা জমিতে ত্বীন ফলের চাষ করছেন। খোলা মাঠ ছাড়াও টবের মধ্যে ছাদের বাগানে ভালো ফলন পাওয়া গেছে।
ত্বীণ ফল ও গাছের ব্যাপক চাহিদার কারণে সাতটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফার্ম কর্তৃপক্ষ। এখান থেকে কলম তৈরি করে চাষীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফল বিক্রেতারা ত্বীন কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজির মূল্য এক হাজার টাকা।
ফার্ম থেকে প্রতি মাসে দুই হাজার চারা বিক্রি হচ্ছে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় টবসহ ফল ধরা চারা বিক্রি হয়। ত্বীন গাছে রোগ জীবাণু সংক্রমণ কম। ভারত, তুরস্ক, মিশর, জর্ডান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত।
বিক্রয় ব্যবস্থাপক পারভেজ আরও বলেন, ত্বীন বাগান ও চাষ পদ্ধতি জানতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষী, সাধারণ মানুষ বাগানটি দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর গাজীপুরের উপপরিচালক মাহবুব আলম জানান, আয়তনের দিক থেকে শ্রীপুরের ত্বীন ফলের প্রজেক্টটি দেশের সবচেয়ে বড়।
প্রকল্পটির প্রসারে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ত্বীন ফলের চাষ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আরও জানান, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এ ফলটি খুবই উপকারী। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোসহ এটি নানা রোগ নিরাময়েও সহায়ক। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়ামসহ নানা ভেষজ গুণ।