তালেবান ক্ষমতা নেয়ার পর নোবেলজয়ী পাকিস্তানি অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই আফগানিস্তানের শরণার্থীদের জন্য বিভিন্ন দেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নারীদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ২০১২ সালে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ইউসুফজাই। তালেবানই তাকে গুলি করেছিল।
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান সশস্ত্র গ্রুপটি রোববার দেশটির ক্ষমতা দখল করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ২০ বছরের যুদ্ধের পর সেনা প্রত্যাহার করে ন্যাটো জোট। এরপর রোববার কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্যালেস দখলে নিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয় তালেবান।
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি সেদিনই পালিয়ে যান। তবে কোন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তা এখনও অজানা।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান কাবুল দখলের পর বিভিন্ন মাধ্যমে বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়েছে। সে সব ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ কাবুল বিমানবন্দরে প্রবেশ করছেন। সোমবার বিমানবন্দর থেকে দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায় আফগানদের।
মালালা ইউসুফজাই বিবিসিকে বলেন, সাধারণ মানুষের এমন দেশ ছাড়ার প্রচেষ্টার বিষয়টি খুবই ‘বেদনাদায়ক’। একই সঙ্গে ঘটনাটিতে ‘জরুরি মানবিক বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান ছাড়তে কাবুল বিমানবন্দরে হাজার হাজার আফগান। ছবি: এএফপি
মালালা বলেন, ‘আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি, যেখানে অগ্রগতির কথা বলছি, সমতা ও জেন্ডার ইকুয়ালিটির কথা বলছি। আমরা একটি দেশকে কয়েক দশক এমনকি কয়েক শতাব্দী আগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি না।’
২৪ বছর বয়সী মালালা বিবিসির ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘নারী ও শিশুদের রক্ষায়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাঁচাতে এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের একটি শক্ত অবস্থা নেয়া উচিত।’
মালালার বয়স যখন ১৫ তখন তিনি নারীদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করা শুরু করলে তালেবানরা তাকে হত্যার লক্ষ্যবস্তু বানায়।
২০১২ সালের ৯ অক্টোবরে মুখোশ পরা কয়েকজন বন্দুকধারী মেয়েদের স্কুলবাসে উঠে জানতে চায় ‘মালালা কে’, এরপর তার মাথায় গুলি করে।
মালালা পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় মেয়েদের শিক্ষার জন্য কাজ করতে শুরু করেন ১১ বছর বয়সে। সেখানে মেয়েদের লেখাপড়ার দরকার নেই বলে যে প্রচার ছিল তাকে অস্বীকার করে শিক্ষাদানের জন্য জোরালো আওয়াজ তুলছিলেন।
২০১৪ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। এরপর তিনি ভর্তি হন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ রুখতে সমর্থ হয়েছে বলে নেতারা ঘোষণার পর মালালা দেশে ফেরেন ২০১৮ সালে।
পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানে এখন ক্ষমতায় তালেবান। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ আক্রমণ চালানো হয়।
তার আগে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে চলে তালেবানের শাসন। সে সময় নারীদের বাড়ির বাইরে গেলে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে যেতে হতো। এমনকি মেয়েদের পড়ালেখার জন্য কোনো স্কুলে যেতে দেয়া হতো না।
মালালা বলেন, ‘আমি মনে করি, এখন প্রতিটি দেশের কিছু ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে।’
ইউরোপের রাজনৈতিক আশ্রয় সহায়তা কার্যালয়ের মতে, সিরিয়া, আফগান ও পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আবেদন জমা পড়েছে। আফগানিস্তান থেকেও আবেদন অনেক বাড়ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এটা বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।
এর বাইরেও অনেক আফগান শরণার্থী বিভিন্ন পন্থায় ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, জার্মানি, গ্রিস এবং নেদারল্যান্ডসের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী শাখার সঙ্গে এক বৈঠকের কথা জানায়।
সেখানেও আফগানিস্তান থেকে দেশগুলোতে শরণার্থী বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
তারা আফগানদের দেশ ছাড়া বন্ধে নানা রকম সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়ার কথা জানান।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল জানান, আফগানিস্তান থেকে ১০ হাজার মানুষ সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থা বলছে, আফগানিস্তানে অন্তত আড়াই হাজার সহায়তাকারী রয়েছেন, যাদের সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
মেরকেল জানান, শরণার্থী হিসেবে কেউ জার্মানিতে গেলে তাদের সহায়তা ও আশ্রয় দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর বলছে, তারা আফগানিস্তান থেকে ৬ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। যাদের মধ্যে ৪ হাজার তাদের দূতাবাসে কাজ করতেন।
এ ছাড়া এখনও ৩ হাজার মানুষ বিমানবন্দরে রয়েছে, যাদের আমেরিকা সরিয়ে নিতে পারে।