বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তালেবানের ভয়ে আফগান ছাড়ল সোশ্যাল মিডিয়ার তারকারা

  •    
  • ২০ আগস্ট, ২০২১ ১৫:৫০

লাখ লাখ আফগান (যাদের অধিকাংশই নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু) অনলাইনে নিজেদের করা পোস্টের জন্য জীবনের ভয়ে আছেন। শরিয়াহ আইনের কট্টর ব্যাখ্যায় অতি সাধারণ অনলাইন কন্টেন্টও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভয়ের কারণ সেটাই।

তালেবানের কাবুল দখলের পর সাধারণ নাগরিকদের মতো আতঙ্কে ভুগছেন দেশটির সোশ্যাল মিডিয়ার তারকারা।

ফেসবুক, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে জনপ্রিয় হওয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা বন্ধ করে দিচ্ছেন একের পর এক অ্যাকাউন্ট।তাদেরই একজন সাদিকা মাদাদগার। তালেবান আসার আগে তার অ্যাকাউন্টটি ছিল অন্য ১০ জন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের অ্যাকাউন্টের মতো।

তালেবানের হাতে ক্ষমতা আসার কারণে সাদিকার মতো অন্যরাও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকেই পালিয়েছেন বা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন।সাদিকা দেশটির জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘আফগান স্টার’-এ অংশ নিয়ে জনপ্রিয়তা পান সাদিকা। তার অসাধারণ কণ্ঠ ও গায়কির সঙ্গে ‘পাশের বাড়ির মেয়ের’ ইমেজ খুব দ্রুত তাকে ভক্তদের কাছে পৌঁছে দেয়।ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে মাথা সব সময় ঢেকে রাখা সাদিকার দিন কাটত ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে নিজের ভিডিও আপলোড করে। ইউটিউবে তার সাবস্ক্রাইবার ছিল ২১ হাজারের বেশি। আর ১ লাখ ৮২ হাজার ফলোয়ার ছিল ইনস্টাগ্রামে।নিজের গানের পাশপাশি দিনের নানা মুহূর্তের ভিডিও করে আপলোড করতেন সাদিকা। কোনোটিতে থাকত তার তরমুজ কাটার দৃশ্য, কোনোটিতে আবার বন্ধুদের সঙ্গে কান্দাহারে বেড়াতে গিয়ে পিৎজা খাওয়ার ঘটনা।এমন সব হালকা ও বিনোদনমূলক পোস্টের ফাঁকেই গত শনিবার সাদিকা নিজের ইনস্টাগ্রামে তালেবানের বিরুদ্ধে নিজের শক্ত অবস্থানের কথা জানান।এক পোস্টে লেখেন, ‘আমি আমার দুঃখ-কষ্ট অনলাইনে দিই না, কিন্তু যা হচ্ছে এটাতে আমি চরম বিরক্ত। চোখের সামনে আমার মাটি, মাতৃভূমিকে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে দেখে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে।’পরদিন তালেবান কাবুল দখল করে নেয়; সাদিকা পোস্ট করা বন্ধ করে দেন।

সোশ্যাল মিডিয়া আর নিরাপদ নয়

লাখ লাখ তরুণ আফগান (যাদের অধিকাংশই নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু) অনলাইনে নিজেদের করা পোস্টের জন্য জীবনের ভয়ে আছেন।তালেবান যখন ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে, তখনকার ভয়াবহ অবস্থা খুব কম মানুষই ভুলতে পেরেছে।জনসমক্ষে আসা থেকে নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। মেয়েরা স্কুলে যেতে পারত না। বিনোদন নিষিদ্ধ ছিল। বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের জন্য পাথর ছুড়ে মৃত্যুর মতো নির্মম শাস্তির প্রচলন হয়।সাদিকার মতো আরেকজন জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া তারকা আয়েদা শাদাব। আফগান তরুণীদের কাছে আয়েদা একজন ফ্যাশন আইকন, যার ইনস্টাগ্রামে ২ লাখ ৯০ হাজার ও টিকটকে ৪ লাখ ফলোয়ার রয়েছে।

কাবুলের নিত্যনতুন ফ্যাশন ও পোশাক পরে তিনি পোস্ট দিতেন প্রতিদিন।তবে এখন আয়েদা জানেন তার মতো ফ্যাশন সচেতন নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কী করতে পারে তালেবান সরকার।জার্মান বার্তা সংস্থা জেডডিএফকে তিনি বলেন, ‘তালেবান কাবুল দখল নিয়ে আমার মতো যারা রয়েছেন তারা আর নিরাপদ থাকবেন না। আমার মতো নারী যারা মাথা ঢাকে না, তাকে তারা গ্রহণ করবে না।’তালেবানের ভয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ভক্তদের জানান যে, তিনি তুরস্কে যাচ্ছেন।দেশটির অন্য ইনফ্লুয়েন্সাররাও তার পথেই এগোচ্ছেন।জনপ্রিয় পপ গায়িকা আরিয়ানা সাইদ বুধবার একটি সেলফি দেন, যাতে দেখা যাচ্ছে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর বিমানে দোহা যাচ্ছেন।ভক্তদের উদ্দেশে করা পোস্টে আরিয়ানা সাইদ লেখেন, ‘দুই অবিশ্বাস্য রাতের পর আমি ভালো আছি ও বেঁচে আছি। আমার হৃদয়, আমার প্রার্থনা ও আমার ভাবনায় সব সময় আপনারা আছেন।’

পপ তারকা আরিয়ানা সাইদ তালেবানের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন দোহায়। ছবি: এএফপি

ডিজিটালি নাম মুছে ফেলাঅন্যরা এত ভাগ্যবান নন।আফগানিস্তান বয়সভিত্তিক দলের ফুটবলার জাকি আনওয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের সেলফি ও ফ্যাশনের পোস্ট দিতেন।বৃহস্পতিবার আফগানিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশন নিশ্চিত করে যে, কাবুল থেকে বিমানে পালাতে গিয়ে ঝুলে মৃত্যুবরণ করা দুজনের একজন হলেন ১৯ বছরের জাকি।মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের অনুরোধে ফেসবুক নতুন নিরাপত্তাব্যবস্থার মাধ্যমে আফগানিস্তানের ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট দ্রুত বন্ধ করে দেয়ার সুযোগ দিচ্ছে।হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মাতৃপ্রতিষ্ঠান ফেসবুক জানিয়েছে, তারা বিশেষ একটি কেন্দ্র খুলেছে, যেটির কাজ হচ্ছে ‘নতুন কোনো হুমকির শঙ্কা থাকলে সেটিকে সামাল দেয়া’।হংকং ও মিয়ানমারের পর কীভাবে ডিজিটাল হিস্ট্রি মুছে ফেলতে হয়, সে বিষয়ে আফগানদেরও পশতু ও দারি ভাষাতে নির্দেশনা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট।সংস্থার পরামর্শক ব্রায়ান ডুলি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব নতুন সরকারের হাতে যাওয়ার পর তাদের হাতে নিশানা হওয়ার আশঙ্কার প্রচুর বার্তা আমরা পেয়েছি। আফগানিস্তানের মানবাধিকারকর্মীরাও একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।’আফগানদের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছে ডিজিটাল অধিকার সংস্থা অ্যাকসেস নাও। এর কর্মী রমন চিমা সতর্ক করে বলেন, শরিয়াহ আইনের কট্টর ব্যাখ্যায় অতি সাধারণ অনলাইন কন্টেন্টও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াতে পারে।এএফপিকে চিমা বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া হতে পারে। শুধু তালেবান নয়, দেশের অন্য কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলো তাদের বিরুদ্ধে ব্যভিচার বা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর