রোববার রাত। একটি গাড়ি করে বেশ কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তি আদিল আহমেদ সাফির বাসায় যান। সাফি সেন্ট্রাল কাবুলের বাসিন্দা। ওই গ্রুপটি গিয়ে বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীর কাছে জানতে চায়, সেখানে সরকারি চাকরিজীবী কেউ থাকেন কি না।
নিরাপত্তাকর্মী জানান, সে ভবনে সরকারি চাকরিজীবী কেউ থাকেন না। এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে লোকগুলো চলে যায়।
২৬ বছর বয়সী সাফি ফোনে বিবিসিকে বলেন, ‘আজ সকালে ফেসবুকে দেখতে পেলাম, কিছু ব্যক্তি পরচুলা পরে তালেবানদের মতো আচরণ করে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে ডাকাতি ও লুটপাট করছে।
‘আমার কোনো ধারণা নেই তারা আমাদের এখানে গাড়িতে করে কেন এসেছিল, তবে আমার সন্দেহ হচ্ছে, তারা লুটপাট করতেই এসেছিল।’
সাফি কাবুলের একটি বেসরকারি স্কুলের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত।
তাদের তিনটি স্কুলে ২ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে আরও ৩০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে।
ভারতে ব্যবসায় প্রশাসনে ডিগ্রি নেয়ার পর সাফি চলতি বছরের শুরুতেই কাবুলে ফিরে চাকরি শুরু করেন।
সাফি বলেন, ‘আমি কাবুলে ফিরে আসি ভালো একটি ভবিষ্যতের আশায়। এখন তো সবই অনিশ্চিত হয়ে গেছে। কেউ যদি এমন অবস্থায় বাস না করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন না আমরা কি অবস্থায় আছি।’
একটাই আশার কথা, এখন পর্যন্ত কাবুলে কোনো সহিংসতা হয়নি। আমি মনে করি, নতুন শাসনব্যবস্থা আরও পরিচ্ছন্ন হবে, আরও সমতার সমাজ তৈরি করবে। আগের সরকারের আমলে অনেক দুর্নীতি ছিল। সব ধরনের সরকারি সেবা পেতে ঘুষ দিতে হতো। আইন ও শাসন ছিল খারাপ।’
সাফির ভাষায়, যদি তালেবান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায় তাহলে নারী ও শিশুদের অধিকার ও সম্মান দিতে হবে।
‘তাদের এটাও প্রমাণ করতে হবে, তারা মানুষের জন্য শুধু ভালো হওয়ার ভাণ করছে না, সত্যিই ভালো চায়।’
কাবুলে এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ দোকানপাট খোলা আছে। অবশ্য স্কুল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে।
তালেবানের নাম করে বিভিন্ন এলাকায় লুটপাটের কিছু খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিবিসি।
তালেবানের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, লুটপাটের সঙ্গে তাদের কোনো সদস্য জড়িত নন। বরং তারা এমন খবরে উদ্বিগ্ন এবং তাদের রুখতে কাজ করছে।
কাবুল দখলের পর দেশটির ক্ষমতা নেয়ার কথা রোববার জানায় তালেবান। সেদিনই দেশটির ক্ষমতাচ্যূত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে দেশটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলেও তার অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে তালেবান।