তালেবান, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল-কায়েদা সুন্নি ইসলামে বিশ্বাসী হলেও সংগঠনগুলোর মৌলিক ভিত্তি এক নয়। বেশ ভিন্ন। কট্টরপন্থী জিহাদি হিসেবে পরিচিত এসব গোষ্ঠীর বিশ্বাস ও কাজের ধরনও এক নয়।
তবে এই তিন গোষ্ঠীর মধ্যে গণমাধ্যমের আলো সবচেয়ে বেশি পড়েছে আইএসের ওপর। বাকি দুই গোষ্ঠীকে নিয়েও আলোচনা ও ভীতি কম নেই। কী কী পার্থক্য রয়েছে এই তিন গোষ্ঠীর মধ্যে তা নিয়েই এই প্রতিবেদনের অবতারণা।
আল-কায়েদা
আল-কায়েদা ওয়াহাবিবাদে বিশ্বাসী। সুন্নি বিশ্বাসীদের মধ্যে এই পন্থাই সবচেয়ে কট্টোর।
ওসামা বিন লাদেন ও মোহাম্মদ আতিফ ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানে সংগঠনটির গোড়াপত্তন করেন। এর অল্প সময় পরই প্রতিবেশী আফগানিস্তান থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সেনা প্রত্যাহার করে।
আল-কায়েদা আরবি শব্দ। এর অর্থ ‘ভিত্তি’। তাদের বিশ্বাস, তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণার ইসলাম প্রতিষ্ঠায় জিহাদ অপরিহার্য। তারা মনে করে, ইসলামের সুরক্ষা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব।
এই গোষ্ঠীটিই নিউ ইয়র্কে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা চালায়। এই হামলায় নিহত হয় দুই হাজার ৯৭৭ জন।
তারা পশ্চিমা দেশ ও সংস্কৃতিকে ইসলামের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। তাদের মূল লক্ষ্যই শরিয়া আইনভিত্তিক ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা।
তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আল-কায়েদা বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এক পক্ষের সঙ্গে অন্য পক্ষের যোগাযোগ নেই।
তালেবান
আল-কায়েদার সঙ্গে তালেবানের মূল পার্থক্যটিই হচ্ছে তারা আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী পশতুন উপজাতীয় গোষ্ঠীর নিয়ম-নীতি, আচার-আচরণের অনুসারী। সুন্নি মুসলমান হলেও তাদের আচরণে গোষ্ঠীগত কারণে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
আফগান রাজনীতিতে তালেবান মুখ্য শক্তি হয়ে ওঠে ১৯৯৪ সাল থেকে। আর ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। এরপর পাঁচ বছর তারা ক্ষমতায় ছিল।
তালেবান শব্দটিও আরবি। অর্থ শিক্ষার্থী। সম্ভবত এর বেশির ভাগ সদস্যই মাদ্রাসা থেকে উঠে আসা বলে এ নামকরণ।
তাদের প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি ছিল পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পশতুন অধ্যুষিত এলাকায় শরিয়া আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে শান্তি ফেরাবে। যদিও ক্ষমতায় আসার পর তারা কঠোরতম শরিয়া আইন বলবৎ করে।
মেয়েদের ১০ বছর বয়স হলেই লেখাপড়া, টিভি দেখা এবং সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহার বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
জনশ্রুতি রয়েছে তালেবানও আর একক গোষ্ঠী হিসেবে তাদের তৎপরতা চালাতে পারছে না। নানাভাগে বিভক্ত তালেবানের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে পাকিস্তানের টিটিপি। এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের নারী শিক্ষা কর্মী মালালা ইউসুফজাইকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।
এই গোষ্ঠীর সঙ্গে আফগান তালেবানের সম্পর্ক অম্লমধুর। অতীতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ইতিহাস থাকলেও এখন তারা একাট্টা।
আইএস
এ সংগঠনের জন্ম ২০১৪ সালে। এর সদস্যরা এক জাতি বা গোষ্ঠী থেকে আসেননি। নানা দেশের নানা বর্ণের লোকজনের সমষ্টি এই গোষ্ঠী। তবে এদের নৃশংসতা নিয়ে কারো মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। গণমাধ্যমে আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনার আগে আইএসই প্রচার পেয়েছে সবচেয়ে বেশি।