যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সামরিক অভিযানে ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান। এর পর ২০ বছর ধরে পশ্চিমা মদদপুষ্ট সরকার উৎখাতে লড়াই করে সংগঠনটি। রোববার আফগানিস্তানের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান হয়।
আশির দশকে সোভিয়েত বাহিনীকে দেশ থেকে হটানো যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত মুজাহিদীন যোদ্ধাদের নিয়ে ১৯৯৪ সালে সংগঠন গড়ে তালেবান।
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা ও মূল নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর ২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের পর আত্মগোপনে ছিলেন।
ওমর ঠিক কোথায় লুকিয়ে ছিলেন, তা এতই গোপনীয় ছিল যে ২০১৩ সালে তার মৃত্যুর খবরও কেউ জানত না।
দুই বছর পর ওমরের ছেলে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার পর দেশি-বিদেশি মহল তা প্রথম জানতে পারে।
তালেবানের বর্তমান সময়ের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে আল জাজিরা।
হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা
‘বিশ্বাসীদের নেতা’ হিসেবে পরিচিত আখুনজাদা তালেবানের প্রধান নেতা। সংগঠনের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে ইসলামি এই পণ্ডিতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
২০১৬ সালে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় তালেবান নেতা আখতার মনসুরের মুত্যৃর পর দলের দায়িত্ব নেন আখুনজাদা।
২০১৬ সালের মে মাসে হঠাৎ অন্তর্ধানের আগ পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুচলাক শহরের এক মসজিদে ধর্ম শিক্ষা দিতেন আখুনজাদা।
তার সহযোগী ও শিক্ষার্থীরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ধারণা করা হয়, আখুনজাদার বয়স ষাটের কাছাকাছি। তিনি এখন কোথায় থাকেন, তা কেউ জানে না।
হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা। ছবি: আল জাজিরা
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব সংগঠনের সামরিক অভিযানের দায়িত্বে রয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য, ইয়াকুব আফগানিস্তানেই থাকেন।
২০১৬ সালে তালেবানের নেতৃত্ব ঘিরে সংগঠনের ভেতরে বাগবিতণ্ডার সময় ইয়াকুবকে প্রধান নেতা করার প্রস্তাব ওঠে। তবে অল্প বয়স এবং যুদ্ধক্ষেত্রের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকায় ২০১৬ সালে আখুনজাদাকেই দলের দায়িত্ব নিতে বলেন ইয়াকুব।
ইয়াকুবের বয়স ত্রিশোর্ধ্ব বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
সিরাজুদ্দিন হাক্কানি
আফগানিস্তানের আলোচিত মুজাহিদীন কমান্ডার জালালুদ্দিন হাক্কানির ছেলে সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।
কিছুটা অসংগঠিত সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব দেয়া সিরাজুদ্দিন পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার চল এই হাক্কানিরাই করে।
কাবুলের শীর্ষস্থানীয় হোটেল, আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে গুপ্তহত্যার চেষ্টা, দেশটিতে ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলাসহ বেশ কয়েকটি হামলায় হাক্কানি নেটওয়ার্কের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
চল্লিশের শেষে বা পঞ্চাশের শুরুতে সিরাজুদ্দিনের বয়স বলে ধারণা করা হয়। তার হদিসও কেউ জানে না।
মোল্লা আব্দুল ঘানি বারাদার
তালেবানের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা বারাদার এখন সংগঠনটির রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান।
কাতারের রাজধানী দোহায় আফগান সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তি আলোচনার নেতৃত্ব দেন তিনি।
মোল্লা ওমরের অন্যতম বিশ্বস্ত কমান্ডার হিসেবে বারাদারকে দেখা হয়।
২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হন বারাদার। ২০১৮ সালে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
মোল্লা আব্দুল ঘানি বারাদার। ছবি: আল জাজিরা
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাই
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান সরকারের উপমন্ত্রী ছিলেন স্ট্যানিকজাই।
প্রায় এক দশক ধরে দোহায় থাকেন তিনি। ২০১৫ সালে শহরটিতে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান স্ট্যানিকজাই।
আব্দুল হাকিম হাক্কানি
তালেবানের প্রতিনিধি দলের প্রধান হাক্কানি। সংগঠনটির সাবেক প্রধান বিচারক হাক্কানি তালেবানের শক্তিশালী ধর্মীয় পরিষদের প্রধান।
অনেকেই মনে করেন, আখুনজাদা হাক্কানিকেই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন।