একদিন দল বেঁধে দাম বাড়লেই পরদিন আবার দল বেঁধে পতন। ব্যাংক খাতের এই প্রবণতা শেয়ারধারীদের মধ্যে যে বিরক্তি উদ্রেক করেছে, তার ব্যতিক্রম দেখা গেল পুঁজিবাজারে।
রোববার দল বেঁধে ব্যাংকের শেয়ারের দর বৃদ্ধির পরদিনও বেশিরভাগ কোম্পানির দাম বাড়ল, আরও এক-চতুর্থাংশ তার দাম ধরে রাখতে পেরেছে। এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানির দরপতন হলেও শতকরা হারে পতন খুব একটা বেশি নয়।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে সবচেয়ে বেশি চাঙাভাব দেখা গেছে মূলত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং বহুল আলোচিত বিমা খাতে।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল পরিচালনা পর্ষদ গঠনের পরদিন বড় খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র ও প্রকৌশল দর হারানোর পরেও সূচক বেড়েছে মূলত ব্যাংক, বিমা, জ্বালানি খাতে ভর করে।
দুই কর্মদিবসে অল্প সংশোধনের পর টানা দুই দিন বাড়ল সূচক। সূচক যে সাত হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের দিকে ছুটছে, সেটি বোঝা গিয়েছিল রোববারই। সেটি স্পষ্ট হলো আরও।
দিনটি ব্যাংক ছাড়াও বিমা ও জ্বালানি খাতের শেয়ারধারীদের স্বস্তি দিয়েছে।
টানা তিন কর্মদিবস উত্থানের পর রোববার বিমার শেয়ারের দরপতন এই খাতের বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তোলে। এর কারণ, কিছু কোম্পানির দর গত জুনের প্রথম ও কিছু কোম্পানির দর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংশোধনে গিয়েছিল। ক্রমেই দাম কমতে কমতে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ার দর ৩০ শতাংশ, কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ার দর কমে গিয়েছিল ৪০ শতাংশ।
গত সপ্তাহে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত ছিল। পরপর তিন কর্মদিবস দাম বৃদ্ধি, সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধির তালিকায় উঠে আসতে শুরু করে কোম্পানিগুলো। রোববারের ছন্দপতনের পরদিন আজও দেখা গেছে এই প্রবণতা।
দিনের সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৫টিই ছিল বিমা খাতের। আর আটটি কোম্পানি ছাড়া বেড়েছে বাকি সব কটির।
খাতওয়ারি হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। গত এক মাসে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল ছাড়া বেড়েছে বাকি সব কোম্পানির দাম।
গত এক বছরে পুঁজিবাজারে উত্থানের মধ্যেও এই খাতের ঘুমিয়ে থাকা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক দেখা যাচ্ছে খাতটিতে।
পুঁজিবাজারের বিষয়ে ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্ম্কমর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন,‘অবণ্টিত লভ্যাংশের যে তহবিল সেটির পরিচালনা পর্ষদ গঠন করার পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে।’
এই তহবিল আগেই গঠন হয়েছে। তবে তহবিল যারা পরিচালনা করবে, সেই পরিচালনা পর্ষদ গঠন হয়েছে রোববার।
দেবব্রত কুমার বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরাও এখন আস্থা নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপর। মূলত আগের যে কমিশন ছিল তাদের সঙ্গে বর্তমান কমিশনের পার্থক্য এটাই। আগের কমিশনও পুঁজিবাজারের জন্য অনেক ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্ত সেসব সিদ্ধান্তের পর পুঁজিবাজারে কী প্রভাব পড়েছে, বিনিয়োগকারীরা সে সিদ্ধান্তকে কিভাবে নিচ্ছে সে বিষয়ে নজরদারি ছিল না। যা বর্তমান কমিশন দক্ষতার সঙ্গে বাজার পর্যবেক্ষণ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি বছরের শুরুতে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দর তদন্ত করবে বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএসইসি, পুঁজিবাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় সেখান থেকে সরে আসে। কিন্ত পরবর্তীতে যখন আবার তদন্ত করার কথা বলছে, তখন কিন্ত ধারা ও কেন তদন্ত করা হবে সে বিষয়গুলো উল্লেখ করে দিয়েছে যাতে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার নিয়ে আতঙ্কিত না হয়।’
ব্যাংকে পর পর দুই দিন বাড়ল দাম
ব্যাংকে একদিন দাম বাড়লে পরদিন আবার পতনের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার পাশাপাশি লেনদেনেও দেখা গেছে চাঙাভাব।
সদ্য তালিকাভুক্ত সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংকের শেয়ারদর আবার দিনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ নিয়ে টানা আট কর্মদিবস ব্যাংকটির ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটল।
ব্যাংকটির শেয়ারদর এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ১৭টি ব্যাংকের দরকে। নতুন কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে অস্বাভাবিক আগ্রহ দেখা দেয়, এই কারণেই এমনটি ঘটেছে। অথচ এই ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয়, সম্পদ মূল্য ও অন্যান্য যে সূচক, তা এর চেয়ে কম দাম, এমন অনেক ব্যাংকের শেয়ারদরের চেয়ে কম।
এদিন ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৮৪ শতাংশ। শেয়ার দর ১৯ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১ টাকা ২০ পয়সা।
তারপরেই আছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, যার শেয়ার প্রতি দর ১০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৫.৮২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা ৯০ পয়সা। ৩.৪১ শতাংশ দর বেড়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকেরও।
দর হারানোর তালিকায় প্রথমে ছিল এবি ব্যাংক, যার শেয়ার প্রতি দর ১৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৫ টাকা ৯০ পয়সা।
রূপালী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১.৪৪ শতাংশ। ডাচ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর ৮৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১.৪২ শতাংশ কমে হয়েছে ৮৩ টাকা ১০ পয়সা।
ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১.৩৮ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে দশমিক ৬১ শতাংশ। পূবালী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে দশমিক ৩৯ শতাংশ। ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে দশমিক ২৬ শতাংশ।
এদিন ব্যাংক খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৪০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
লেনদেন হওয়া ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে দর কমেছে ১০টির। দর পাল্টায়নি ৫টির। বাকি ১৭টি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে।
বিমা উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনেও গতি
কয়েক মাস পর বিমা খাত আবার লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে।
বিমা খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৪০৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ২৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
লেনদেন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির দিন এই খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে কেবল আটটির। একটির দর ছিল অপরিবর্তিত। বেড়েছে বাকি ৪২টি কোম্পানির শেয়ার দর।
দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি ছিল বিমা খাতের। একদিনে দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে চারটি কোম্পানির।
জেড ক্যাটাগরি থেকে ‘বি‘ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হওয়া পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯১ শতাংশ। ৩৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা।
জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৪৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৯.৪২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৩ টাকা ৪০ পয়সা।
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৩৫ শতাংশ। প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.২২ শতাংশ।
এছাড়া সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৭.২৭ শতাংশ, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৬.২৬ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৫.৪৯ শতাংশ, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৫.২৮ শতাংশ, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৪.৭৭ শতাংশ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের ৪.৫৬ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
পতনে বস্ত্র
আগের দিন লেনদেনে সবার ওপরে থাকা এই খাত দর হারানোর পাশাপাশি লেনদেনও এক দিনেই অনেক কমে গেছে।
আগের দিন এই খাতে লেনদেন যেখানে ছিল ৪৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা, সেটি আজ কমে হয়েছে ৩৬২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ৪৪টির দর হারানোর দিন বেড়েছে কেবল ১৩টির দাম। আর একটি দর ধরে রাখতে পেরেছে।
দিনের সবচেয়ে বেশি দর হারানো স্টাইলক্রাফট এই খাতেরই কোম্পানি। বন্ধ কোম্পানিটি সম্প্রতি চালু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছিল। আজ ১১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৫.৭৮ শতাংশ কমে ১৯৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ১৮৪ টাকায়।
এছাড়া প্রাইমটেক্সে ৩.৬৯ শতাংশ, আনলিমা ইয়ার্ন ২.৬৩ শতাংশ, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ২.৫৯ শতাংশ, তাল্লু স্পিনিং ২.৫৮ শতাংশ, তুংহাই টেক্সটাইলের শেয়ারদর কমেছে ২.৫৩ শতাংশ।
জ্বালানি খাতে ব্যাপক আগ্রহ
এক বছরের বেশি সময় ধরে ঘুমিয়ে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্প্রতি যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তার আরও একটি নমুনা দেখা গেছে আজ।
সবচেয়ে বেশি লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এই খাত। ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২২টির দাম বুদ্ধির পাশাপাশি ৩৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লেনদেনই বলে দেয়, এই খাতটিও চাঙা হয়ে উঠার অপেক্ষায় আছে। আগের দিন এই খাতে লেনদেন ছিল ২৫৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
এই খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬.৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ারদর। এ ছাড়া সরকারি কোম্পানি পাওয়ার গ্রিডের দর বেড়েছে ৬.০৬ শতাংশ। জিবিবি পাওয়ারের শেয়ারদর বেড়েছে ৫.৯১ শতাংশ।
এছাড়া নতুন তালিকাভুক্ত বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের দর ৫.১৪ শতাংশ, তিতাস গ্যাসের শেয়ারদর ৪.৬৮, ডরেন পাওয়ারের দর ৪.০২, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের দর ৩.৮৭, ডেকসোর দর ৩.৭৫ শতাংশ বেড়েছে।
সবচেয়ে বেশি পতন আর্থিক খাতে
ব্যাংক চাঙাভাব ধরে রাখার দিন চরমভাবে হতাশ করল ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাত। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির দাম বেড়েছে। একটি দর ধরে রাখতে পেরেছে। কমেছে ২০টির দাম। একটির লেনদেন স্থগিত।
লেনদেনও কমে গেছে। আজ হাতবদল হয়েছে ১৫৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগের দিন যা ছিল ২০৯ কোটি ১ লাখ টাকা।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯টির দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ১১টির। লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৬২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
ভালো লভ্যাংশের পরেও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত দরপতন থেকে বের হতে পারছে না। ১০টির দাম ১০ থেকে ২০ পয়সা বাড়ার দিন আরও ১০টির দাম কমেছে প্রায় সম পরিমাণ। অপরিবর্তিত ছিল বাকি ১৬টির দর। লেনদেনও গতি হারিয়েছে। আজ হাতবদল হয়েছে ৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
তথ্য প্রযুক্তি খাতে আগের দিন একটি ছাড়া সবগুলোর দাম বাড়লেও আজ ৫টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৬টির। লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যা আগের দিন ছিল ৪৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বিবিধ খাতের ১৪টি কোম্পানির মোট লেনদেন হয়েছে ২০৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে শুধু বেক্সিমকো লিমিটেডের লেনদেন হয়েছে ১৩০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
আগের দিন এই খাতে লেনদেন ছিল ২০৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২০ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৬২ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৭ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৮৭ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৮ দশমিক ০৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৫৯ পয়েন্টে।
ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ৭৫ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯৯৬ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১০১ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের (ইআইএল) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পেয়েছেন মো. বদিউজ্জামান লস্কর।
তিনি বিমা পেশায় দীর্ঘ ২৮ বছর সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বদিউজ্জামান লস্কর ১৯৯৫ সালের ২ মে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ডেপুটি ম্যানেজার পদে যোগদানের মাধ্যমে বিমা পেশায় কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি ১৯৯৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ করেছেন।
পরবর্তী সময়ে ১৯৯৭ সালের ১ অক্টোবর নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এলিফ্যান্ট রোড শাখার প্রধান হিসেবে যোগ দেন বদিউজ্জামান। ওই প্রতিষ্ঠানে ১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর নাগাদ কাজ করেন তিনি।
বদিউজ্জামান লস্কর ১৯৯৯ সালের ১ ডিসেম্বর ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এলিফ্যান্ট রোড শাখার প্রধান হিসেবে যোগ দিয়ে ২০০১ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
পরে তিনি সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ও লোকাল অফিস শাখার প্রধান হিসেবে ২০০১ সালের ১ আগস্ট তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে যোগ দিয়ে হেড অফ মার্কেটিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এ কোম্পানিতে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করেছেন।
বদিউজ্জামান লস্কর ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দিলকুশা শাখার প্রধান হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে তাকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি ও কোম্পানির কাকরাইল শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি হেড অফ মার্কেটিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৩০৫তম সভায় তাকে সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিমা কোম্পানীর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি তার নিয়োগ অনুমোদন দেয়।
বদিউজ্জামান লস্কর গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি থেকে সমাজ বিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি বিমাবিষয়ক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যোগ দেন।
আরও পড়ুন:সফলতার সঙ্গে ১০ বছর শেষ করে একাদশ বছরে পা দিয়েছে দেশের বেসরকারি খাতের জীবনবিমা প্রতিষ্ঠান জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
সবার জন্য সুরক্ষিত, নিরাপদ ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে চতুর্থ প্রজন্মের শরিয়াহভিত্তিক এ বিমা কোম্পানি।
এ উপলক্ষে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজন করা হয় গৌরবগাঁথার এক দশক পূর্তি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান তার বক্তব্যে আগামী দিনের জন্য অনুপ্রেরণা ও সব ইতিবাচক পরিবর্তনে মূল্যবান দিকনির্দেশনা দেন।
তিনি কোম্পানির সাফল্য ও সার্বিক অগ্রযাত্রা তুলে ধরেন। শোকের মাস চলার কারণে জন্মবার্ষিকীর কেট কাটা হয়নি।
অনুষ্ঠানে এ বিমা কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি গ্রাহককে স্বাস্থ্য ও জীবনবিমার আওতায় সেবা দিচ্ছে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এর মধ্যে আংশিক মেয়াদপূর্তি ও মেয়াদপূর্তি বাবদ প্রায় ১৪ কোটি ২৬ লাখ টাকারও বেশি বিমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। মৃত্যুদাবি বাবদ প্রায় ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং স্বাস্থ্যবিমা দাবি বাবদ প্রায় ৮২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে ১৮ কোটি টাকারও বেশি বিভিন্ন বিমা দাবি পরিশোধ করেছে বলে জানায় চতুর্থ প্রজন্মের জীবনবিমা কোম্পানি জেনিথ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। দেশব্যাপী ৫৫টি শাখা অফিস ও প্রায় ১৩ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মী নিয়ে চলছে এ কোম্পানি।
শরিয়াহভিত্তিক এ জীবনবিমা কোম্পানিটি ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বিমা দাবি পরিশোধ করে থাকে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। পাশাপাশি, ঢাকা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, নগদ অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি প্রিমিয়াম জমা দেয়ার ব্যবস্থা আছে জেনিথের।
ইআরপি সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হয় বিমা কোম্পানিটির কার্যক্রম। রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১০০ গোষ্ঠী বিমা করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানান বিমা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০ বছরে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সফল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহক সন্তুষ্টির পাশাপাশি কোম্পানির শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে উঠেছে। এর স্বীকৃতি হিসেবে এসেছে নানা পুরস্কার ও সম্মাননা।
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহক, পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ অনুষ্ঠান।
আগামীতেও স্বপ্ন ও সম্ভাবনার মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে কার্যকরী বিমা সেবা সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তারা।
টাঙ্গাইল জেলায় সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ১০ বছর মেয়াদি জীবনবিমা করেছিলেন সেলেনা আক্তার। ২০২০ সালের দিকে বিমার একটি কিস্তি দেয়া বাকি ছিল তার, তবে ২০২০ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
সাড়ে তিন বছর পার হয়ে গেলেও সেলেনা আক্তারের স্বামী হাসমত খান ও তার ভাই মোহাম্মদ আসলাম হোসেন বিমা দাবির টাকা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
শুধু সেলেনা আক্তারই নন, এমন অনেক গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানটি। জীবনবিমা পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না কোম্পানিটি।
একাধিক গ্রাহকের ভাষ্য, সানলাইফ কোম্পানি থেকে গ্রাহকদের ব্যাংক চেক ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রাহক সেই নির্ধারিত ব্যাংকে চেক জমা দিলে তাকে জানানো হচ্ছে অ্যাকাউন্টে টাকা নেই।
সেলেনার ভাই মোহাম্মদ আসলাম হোসেন জানান, একাধিকবার সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগাযোগ করলে বারবার টাকা ফেরতের আশ্বাস দেয়া হয়।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সানলাইফ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক দিয়েছে, তবে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এখনও টাকা আসেনি। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে টাকা দেয়ার নামে আমাকে ঘোরাচ্ছে।’
আসলাম আরও বলেন, ‘আমার বোন নিয়মিত কোম্পানিতে পলিসির টাকা পরিশোধ করেছেন, তবে কোম্পানিটি আমার বোনের বিমা করার অর্থ পরিশোধ করছেন না।’
আইডিআরএর ২০২০ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট অর্থসংকটে থাকা বিমা গ্রাহকদের সহযোগিতা করার স্বার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ পলিসিগুলোর বিপরীতে প্রাপ্য দাবি ৯০ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের আবেদনের জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। তথ্যভান্ডার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণের তালিকা নিয়ে বিমা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে কোম্পানিগুলোকেই। এরপর কোম্পানিগুলোকে অনলাইনে গ্রাহকের ব্যাংকে বিমা দাবির টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
আইডিআরএর জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো গ্রাহকের মৃত্যু হলে ৯০ দিনের মধ্যে বিমা কোম্পানিকে টাকা পরিশোধ করতে হবে, তবে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স এ নিয়ম অনুসরণ করছে না।
‘কোম্পানিটির অবস্থাও ভালো নয়। সানলাইফের গ্রাহকরা হন্যে হয়ে টাকার জন্য ঘুরছেন।’
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে (আইডিআরএ) প্রায় ৬ হাজার গ্রাহকের অভিযোগ জমা পড়েছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নামে।
আইডিআরএর কর্মকর্তারা জানান, ছয় হাজার অভিযোগের সংখ্যা প্রকৃত চিত্র নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি অভিযোগ রয়েছে, যা আইডিআরএ পর্যন্ত আসে না। কারণ অনেক গ্রাহক আইডিআরএ সম্পর্কে অবহিত নন। ফলে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবার আগে গ্রাহকের স্বার্থের দিকে নজর দিতে হবে। গ্রাহক যাতে বিমার টাকা নিয়ে কোনো রকমের সমস্যার মধ্যে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। ফলে আইন মোতাবেক আইডিআরএর উচিত এ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’
এ বিষয়ে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ নুরুল ইসলামকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হয়। এরপর মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত ব্যয়
গ্রাহক হয়রানির অনুসন্ধান করা আইডিআরএর তদন্ত দল মনে করে, কোম্পানিটি নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি ব্যয় করায় গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। তদন্ত প্রতিবেদনে দেয়া পর্যালোচনায় তারা দেখিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৮৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। অর্থাৎ আইন অনুসারে কোম্পানিটি ব্যবসা পরিচালনায় যে ব্যয় করতে পারে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করেছে। অতিরিক্ত ব্যয় করা এসব টাকার ৯০ শতাংশই বিমা গ্রাহকের জমাকৃত টাকা।
লাইফ ফান্ড বিনিয়োগে বিধি লঙ্ঘন
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ড পর্যালোচনা করে তদন্ত দল জানিয়েছে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষিত হিসাব অনুসারে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড ১৯২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রবিধানমালা অনুসারে ১৫ শতাংশ সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ হবে প্রায় ২৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা, কিন্তু কোম্পানিটি সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ লাইফ ফান্ডের ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বিনিয়োগ করা হয়েছে সরকারি বন্ডে।
বিমা আইন লঙ্ঘন করে ব্যবসা
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের তদন্ত প্রতিবেদনে কর্তৃপক্ষের তদন্ত দল জানিয়েছে, সার্বিক বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ, তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করে এবং যথাসম্ভব কিছু কিছু জায়গা পরিদর্শন, প্রাপ্ত তথ্য ও প্রমাণ ইত্যাদি থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, কোম্পানির সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং বিমা আইন ২০১০ সালের বিধান মতে কার্যক্রম পরিচালনা না করার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিমা খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে আইডিআরএ ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান।
শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে আয়োজিত জেনিথ ইসলাম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অর্ধ-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুন্নাহার লাইলী।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের বিমা খাতকে কার্যকর ও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহায়ক ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বিমার আওতা বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিমা খাতের উন্নয়ন ও প্রসারের লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিমা কোম্পানিতে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে ১ মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বিমা মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
‘বিভিন্ন আইন, বিধি-বিধান ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কর্তৃপক্ষের কঠোর মনিটরিংয়ের ফলে পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিমা দাবি পরিশোধের পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত ও নির্ভুল সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ইউনিফায়েড মেসেজিং প্লাটফরম-ইউএমপি চালু করা হয়েছে।’
সম্মেলনে উপস্থিত বিমা কর্মীদের উদ্দেশে কামরুল হাসান বলেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন জীবনবিমা একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা; যা সমাজের অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এটি মানুষের জীবনের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য সম্পদ। আপনারা জনমানুষের পাশে থেকে তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শ্রম দিয়ে থাকেন।
‘আপনাদের কাজের মাধ্যমে পরিকল্পনা করা হয় যেন মানুষের পরিবার সুরক্ষিত থাকে এবং তাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। জীবনবিমা কর্মীরা পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বপূর্ণ কাজের কারণে তাদের যোগ্যতা দিয়ে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ কোম্পানিগুলোতে কাজ করছে। আপনাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ অত্যন্ত সৌভাগ্যের।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা এ অর্ধ-বার্ষিক সম্মেলনে এসেছেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনাদের প্রতিষ্ঠান তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে আপনাদের ওপর ভরসা করেছেন এবং আপনাদের দ্বারা প্রদানকৃত সেবার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের জীবন এবং পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। তাই আপনাদের সর্বদা উন্নত ও দ্রুত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বদা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গের কাজ করে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে হবে।’
আইডিআরএ সদস্য কামরুল হাসান বলেন, ‘চতুর্থ প্রজন্মের জীবনবিমা কোম্পানি হিসেবে জেনিথ ইসলামী লাইফ নিয়মিত দাবি পরিশোধ করে আসছে। আমি জেনেছি আপনারা বিভিন্ন প্রকার বিমা দাবি বাবদ প্রায় ১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন; যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও আনন্দদায়ক। আপনাদের লাইফ ফান্ডও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তবে লাইফ ফান্ড আরও বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে মেয়াদান্তে আকর্ষণীয় মুনাফাসহ গ্রাহকের টাকা ফেরত প্রদান করা যায়। এ লক্ষ্যে আপনাদের নবায়ন আদায় হার ৭০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।’
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, ‘জনসাধারণের জন্য বিমার কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়নের মহীসোপানে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে সকলের জন্য তখন বিমা প্রয়োজনীয়তা অনুভব হচ্ছে।’
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, ‘বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কঠোর মনিটরিংয়ের ফলে গ্রাহক ভোগান্তি আগের চেয়ে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। কোম্পানিগুলো এখন নিয়মিত দাবি পরিশোধ করছে। ফলে বিমার প্রতি গ্রাহক আস্থা আগের চেয়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ৩৫টি জীবনবিমা কোম্পানি কাজ করছে। এর মধ্যে যারা সর্বোত্তম সেবা দিতে পারবে তারাই এগিয়ে যাবে। সর্বদা গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে আমরা দ্রুত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত এবং দ্রুত বিমা দাবি পরিশোধ করে ইতোমধ্যেই গ্রাহকের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি।’
বেকারত্ব বিমোচনে বিমার গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, ‘মানুষের কল্যাণের জন্য আমরা কাজ করছি। এতিম ও বিধবাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি।’
বিমা কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা কথা বলে বা প্রতারণা করে কোনো বিমা পলিসি বিক্রি করবেন না। বিমা পলিসি চালাতে পারবে না বা নবায়ন আসবে না, এমন কাউকে বিমা পলিসি করাবেন না। মনে রাখবেন-একটি ভালো পলিসি আপনাকে নতুন আরেকটি পলিসি সংগ্রহে সহায়তা করবে।’
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, আমরা জেনিথ ইসলামী লাইফ এ পর্যন্ত ১৮ কোটি ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৩১ টাকা বিমা দাবি পরিশোধ করেছি। বর্তমানে আমাদের হাতে কোনো বিমা দাবি পেন্ডিং নেই। আমাদের কোম্পানির প্রায় ৩০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে আমাদের লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
‘আমরা এখন পর্যন্ত ১৮০টি মৃত্যুদাবি বাবদ ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা, ৩ হাজার ৫৪৫টি এসবি বাবদ ১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ৭৭৮টি স্বাস্থ্য বীমা বাবদ ৭১ লাখ ১২ হাজার টাকা, ম্যাচিউরিটির ২৭টি বীমা দাবি বাবদ ৫৮ লাখ টাকা এবং ১৪৪টি সারেন্ডারে ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। এ ছাড়াও ৪১টি পলিসি লোন দেয়া হয়েছে, যার পরিমাণ ২১ লাখ টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির ৯০ শতাংশ কার্যক্রম ইআরপি সল্যুশনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রমের ৯৯ শতাংশই পেপারলেস করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। বিমা আইনে ৯০ দিন থাকলেও আমরা সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিমা দাবি পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছি।’
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা আছে বলেই বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর গ্রুপ জীবন ও স্বাস্থ্য বীমা সেবা দিয়ে আসছি। ইতোমধ্যে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অন্যতম।’
আরও পড়ুন:প্রয়োজনে কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও বিমা দাবি পরিশোধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) নিজস্ব কার্যালয়ে ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে বুধবার তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সবাই বিমা করে সময় শেষে যেন টাকাগুলো বুঝে পায়, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সঠিক সময়ে গ্রাহক টাকা পাচ্ছে না। এ বিষয়ে একটা সেল গঠন করা হয়েছে। সেল কমিটির কাছে প্রচুর অভিযোগ আসে, সরাসরি কিংবা মেইল বা অন্যান্য মাধ্যমে। এ অভিযোগগুলো নিয়ে আমরা কাজ শুরু করছি। প্রয়োজনে কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও এসব বিমা দাবি পরিশোধের জন্য কাজ করছি।’
জয়নুল বারী বলেন, ‘এতদিন আমরা কমপ্লায়েন্স না মানলে শুধু কোম্পানিকে জরিমানা করেছি। এখন ব্যক্তিকেও অর্থাৎ অভিযুক্ত কর্মকর্তাকেও জরিমানা করা হবে। এসব সমস্যা সমাধানে আমরা বেশ কিছু আইন প্রনয়ণ করেছি, আরও কিছু আইন প্রনয়ণে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘কিছু কোম্পানি অতিরিক্ত টাকা খরচ করেছে। কেউ ম্যানেজমেন্ট খরচ বেশি করেছে। কেউ জমি কিনেছে বেশি দামে, এসব জমি বিক্রি করতে গেলে দেখা যায় কেনা দামের কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। এজন্য চাইলেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যৌক্তিক দামে বিক্রি করতে, তাহলে গ্রাহকের টাকাগুলো পরিশোধ বড় ভূমিকা রাখবে।’
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৭টা কোম্পানির বোর্ডকে ডেকেছি এবং তাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। তাদের প্রিমিয়াম কেমন এবং কি ধরনের সম্পদ আছে তা দেখেছি। সব শেষ যাতে পলিসি যেগুলো মেচুয়েট হয় সেগুলো কিভাবে পরিশোধ করবে সেই পরিকল্পনা চেয়েছি। এসব তথ্যগুলো দিলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।’
বিমা খাতে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটা বলে মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে জয়নুল বারী বলেন, ‘নন কমপ্লায়েন্স বড় চ্যালেঞ্জ। কোম্পানির অনিয়ম বন্ধ হলেই অনেক কিছু সমাধান হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেল্টা লাইফের অবস্থা পেয়েছি খুবই খারাপ। আইন অনুযায়ী দুইটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে হয়তো বোর্ড ভেঙে দেয়া। অথবা কোম্পানি বন্ধ করে দেয়া যায়, কিন্তু আমরা ভেবে দেখলাম কোম্পানিটি ভালো ছিল, তাই চেষ্টা করেছি কীভাবে পুনরায় দাঁড় করানো যায় সে কাজ শুরু করলাম। এরপর আদালত থেকে একটা রায় হয়। সব মিলে তাদের স্টোকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা কিছু শর্ত দিয়ে আদালতে পাঠালাম। আদালতের রায়ের পর তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে অনুমোদন করেছি।’
বিমা খাতের প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কত টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে সেটা বলা নেই।
ব্যয়ের পরিমাণ কত হতে পারে এই বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে জয়নুল বারী বলেন, ‘বিমা খাত ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নতুন নতুন জায়গায় যেতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে নন লাইফ বিমা কোম্পানির সঙ্গে একটা বৈঠক করেছি এবং তাদের কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছি। প্রচারণায় গুরুত্ব রাখে বীমা খাতের ব্যাপ্তি বাড়াতে। এসব কাজে যেন অতিরিক্ত খরচ না হয় সেটা আমরা দেখব।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জয়নুল বারী বলেন, ‘কোনো কাজ যেমন হুটহাট করা সম্ভব নয় ঠিক তেমনি রাতারাতি বিমা খাতের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। আপনারা দেখবেন আমরা দুর্নীতি করছি কি না। আমরা সমস্যা সমাধানে কাজ করছি কি না। সব কিছু দেখে আলোচনা সমালোচনা করবেন। তবে যৌক্তিক আলোচনা বা সমালোচনাকে আমি পছন্দ করি। আমরা যেমন বীমা খাতের উন্নয়নে কাজ করছি আপনারাও সে কাজে সহযোগিতা করবেন বলে আশা করছি।’
সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি জিয়াউর রহমান।
আরও পড়ুন:ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে কারও চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে ইন্স্যুরেন্সের টাকা দিতে হবে। যথাযথভাবে তদন্ত না করে কারও চাপে পড়ে কোনো টাকা দেবেন না।’
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার ‘জাতীয় বিমা দিবস-২০২৩’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দাবিদার দাবি করবে বড় একটা। তার প্রকৃত ক্ষতিটাকে যাচাই-বাচাই করেই অর্থ দেবেন। সেটা কেন করা হয় না?
‘আমি মনে করব, যারা তদন্ত করতে আসে তারাও কি এর ভাগিদার? তাদেরও নিশ্চয়ই হাত আছে? সেটাও আমার সন্দেহ হচ্ছে।’
অতীতের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় দেখা যেত গার্মেন্টসে শুধু আগুন লাগত। হঠাৎ কোনো এক গার্মেন্টসে আগুন লাগে। তারপর ইন্স্যুরেন্সের টাকা চায়। এবার মোটা অঙ্কের একটা টাকা চাইল। তখন আমি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে বললাম যে, আপনারা এখন টাকা দেবেন না, আমি তদন্ত করব।
‘তদন্ত করে দেখা গেল, ওই গার্মেন্টসের এক মেয়ে শ্রমিককে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আগুন দিয়ে তারপর ইন্স্যুরেন্সের মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। যেখানে কিছু নেই, যেখানে তারা বসে খাওয়া-দাওয়া করত, সেখানে আগুন দেয়া হয়েছিল। ওই মহিলাকে যখন ধরা হলো তখন সে স্বীকার করল তাকে দিয়ে এটা করা হয়েছে। এত ঘন ঘন আগুন একটা জায়গায় লাগবে কেন? সে ক্ষেত্রে বিমা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকা দরকার।’
আগুনে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগুনে কতটুকু ক্ষতি হলো সেটা যথাযথভাবে তদন্ত করা দরকার। যথাযথভাবে তদন্ত না করে, কারও চাপে পড়ে কোনো টাকা দেবেন না। একটা ফ্ল্যাটে কী সম্পদ থাকতে পারে যে, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তাকে ৪০ কোটি টাকা দেবে? আপনাদের কাছে এর জবাব আছে? তাহলে কীভাবে গেল সাধারণ বিমা থেকে।
‘আমার কাছে এই ধরনের একটা ঘটনা এসেছে সামনে। আমি এটাও তদন্ত করাব। কত সম্পদ একটা ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে আছে যে, তার ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেল আর বিমা থেকে টাকা নিয়ে গেল? যার ঘরটা সবচেয়ে বেশি পুড়ল তার বিমাও নেই। সে কিছু পেল না। এসব বিষয়ে সকলের একটু নজর দিতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিমা পলিসি মানুষ যাতে গ্রহণ করে তার জন্য আপনাদের প্রচার করতে হবে। সেই প্রচারটা ব্যাপকভাবে করতে হবে। আগে অনেক যুবসমাজ বিমার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করত।
‘সেই এজেন্ট নিয়োগ করা এবং তাদের দিয়ে কাজ করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কর্মসংস্থানেরও একটা সুবিধা হবে। বেকার যুবকরা এই পেশায় যাতে আরও বেশি আসে, তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পরিবহনের ব্যাপারটা আমি দেখব।’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিমার যোগসূত্র নিয়ে তার কন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সের একটা যোগসূত্র রয়ে গেছে। জীবন-জীবিকার জন্য আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে দায়িত্ব নেন, তবে এটা বেশি দিন টেকেনি। কারণ ১৯৬২ সালে আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
বাবার ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করার সময়টা জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারণ বাবা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেছেন, গাড়ি পেয়েছেন; আমরাও বেশ ভালোভাবে আছি। এই সময়টা বাবা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে আমাদের একটা আত্মার যোগাযোগ আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই ছয় দফা প্রণয়ন করেছিলেন বাবা। পুরো জিনিসটা টাইপ করেছিলেন মোহাম্মদ হানিফ। পরে এটা একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে ট্রান্সলেশন করা হয়।
‘আমাদের যে স্বাধীনতা অর্জন বা ছয় দফা প্রণয়ন, ছয় দফার ভিত্তিতে সত্তরের নির্বাচন, সবই কিন্তু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বসেই করা হয়। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সের এক যোগসূত্র রয়ে গেছে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। এতে আরও বক্তব্য দেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন।
বিমা দিবস উপলক্ষে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
আরও পড়ুন:আজকের এই দিনে আমি গভীরভাবে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি বিমা পেশায় ছিলেন বলেই আজকের এই দিনটি বিমা পেশাজীবিরা পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ তার সাহসী নেতৃত্বে দিবসটিকে ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত করায়।
বিমা দিবসের শপথ হোক দ্রুত বিমা দাবি পরিশোধ করব আমরা। বিমা দিবস সব বিমা পেশাজীবীদের একটি আনন্দের দিন। ঈদ ও পূজার দিনের মতো আজ প্রতিটি মোবাইলে বিমার গুরুত্বের এসএমএস পাওয়া যায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিবসটি উদ্বোধনের পর প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে র্যালি ও আলোচনা সভা হবে। এই কাজটি সব বিমা কোম্পানি মিলে ১০০ কোটি টাকা খরচ করলেও করা যেত না, যা সরকারের একটি নির্বাহী আদেশে হয়েছে। বিমা দিবসের ফলে জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র বের হচ্ছে। টিভিতে টকশো হচ্ছে ও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে জাতি বিমার সুফল পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা সব বিমা কোম্পানিকে বিক্রি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যে কোম্পানি যত দ্রুত দাবি পরিশোধ করবে সে কোম্পানি আগামী দিনে বীমা খাতের নেতৃত্ব দেবে। বাংলাদেশে গ্রুপ বিমার অপার সম্ভবনা রয়েছে।
বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার গ্রুপ বিমাতে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করা সম্ভব। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিমার জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। বর্তমানে দেশ স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রিমিয়াম আদায় করা সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে বিমা গ্রাহকরা ঘরে বসে ব্যাংকের পাশাপাশি বিইএফটিএন ও মোবাইল ব্যাংকিং যেমন: বিকাশ, রকেট ও নগদে দ্রুত ও সহজে সুবিধা পাওয়ায় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিকট দিন দিন গ্রাহক পর্যায়ে অভিযোগ হ্রাস পাচ্ছে।
আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড শুরু থেকেই আন্তরিকতার সঙ্গে বিমা দাবি পরিশোধ করে আসছে। জেনিথ ইসলামী লাইফ প্রায় ১৬ কোটি টাকারও অধিক বিমা দাবি ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে।
আমরা গ্রুপ বিমাসহ অনলাইনে ইআরপি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ৭ কর্মদিবসে দাবি পরিশোধ করে থাকি। বিমার আস্থা ফিরে আসার জন্য বিমা দাবি পরিশোধের বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিমার সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য পঞ্চম শ্রেণি হতে পাঠ্যসূচিতে বিমা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
লেখক: জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল
আরও পড়ুন:
মন্তব্য