ব্যাংক খাতে দাম বৃদ্ধির পর দিনই পতনের ধারাবাহিকতা থেকে বের হতে পারল না চাঙা পুঁজিবাজারও। বস্ত্র খাতে। তালিকাভুক্ত ৩৬ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে প্রথমটির লভ্যাংশ চমৎকৃত করলেও এই খাতেও দরপতনে তৈরি হয়েছে বিস্ময়।
তবে সবচেয়ে বড় বাজার মূলধনের ব্যাংক খাতে দরপতনেও লভ্যাংশের অপেক্ষায় থাকা প্রধান প্রধান খাত বস্ত্র, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ওষুধ ও রসায়ন এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিকের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির চাঙাভাবে টানা পঞ্চম দিনের মতো বাড়ল পুঁজিবাজার।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বিমা খাতের শেয়ারধারীদেরকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। টানা প্রায় দুই মাস ধরে সংশোধনের মধ্যে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান এখন সাড়ে ছয় হাজার পয়েন্টের ঘর ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে। সূচকের অবস্থান এখন ২০১১ সালের ২৭ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৬২৭ পয়েন্ট। সেখান থেকে ৩১ পয়েন্ট কমে শেষ হয়েছে আজকের লেনদেন।
তখন অবশ্য ডিএসইএক্স সূচক ছিল না, সে সময় সূচকের নাম ছিল ডিএসই সূচক। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হয় ডিএসইএক্স সূচক।
এই ডিএসই ও ডিএসইএক্স সূচকের তুলনা করলে দেখা যায়, চালুর দিন ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজার ৫৫। তবে সেদিন ডিএসই সূচকের মানদণ্ডে তা ছিল ৪ হাজার ১৭১ পয়েন্ট।
সূচক ৬০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পাওয়ার দিন লেনদেনেও দেখা গেছে ঊর্ধ্বগতি। প্রায় দুই মাস পর লেনদেন আবার ছাড়াল আড়াই হাজার কোটি টাকার ঘর। এর আগে গত ১০ জুন ২ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা আর তার আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এই লেনদেন ছিল ২০১০ সালের মহাধসের পর সর্বোচ্চ।
আগের কর্মদিবস মঙ্গলবার ব্যাংক খাতের উত্থান আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। ২০২০ সালে অর্থবছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ, চলতি বছর আরও বেশি মুনাফা করে আলোচনায় থাকা এই খাতটির ঝিমিয়ে থাকার মধ্যে সেদিন ৩১টি কোম্পানির সবগুলোর দাম বৃদ্ধি ঘটে।
পুঁজিবাজারের চাঙাভাবের মধ্যে এই খাতটির শেয়ার দর অবমূল্যায়িত বলেই ধারণা করা হয়। এর আগে গত ২৭ মেও একই দিন সব কটি কোম্পানির দাম বৃদ্ধির চিত্র দেখেছিল পুঁজিবাজার। সেদিনও এই খাতের বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়ে উঠেন যে, খাতটি হয়ত ভালো করবে। কিন্তু পরের দিনেই দাম কমে যায় আর ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে ২০টির দামই এখন সেই ২৭ মের দামের চেয়ে কমে।
ব্যাংক খাতে কোনো একদিন দাম বৃদ্ধি পেলেও পরে তা ধরে রাখতে না পারার এই বিষয়টি ঘটল আবার। এদিন ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে আটটির দাম বেড়েছে নগণ্য পরিমাণে। এর বিপরীতে কমেছে ১৭টির দর। শতকরা হিসেবে দাম খুব বেশি কমেছে এমন নয়, তার পরেও দ্বিগুণ সংখ্যক শেয়ারের দাম হারানো নিশ্চিতভাবেই হতাশ করেছে এই খাতের বিনিয়োগকারীদের। বাকি ৬টি ব্যাংক দাম ধরে রাখতে পেরেছে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই খাতের প্রথম কোম্পানি হিসেবে এনএলআই ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড চলতি বছরের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ইউনিট প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই লভ্যাংশ পুঁজিবাজারের অন্য খাতের কোম্পানির এর চেয়ে কিছুটা বেশি হারে লভ্যাংশের চেয়ে ভালো। কারণ, ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশের জন্য কর দিতে হয় না বিনিয়োগকারীদের, যেখানে অন্য খাতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আয়কর কেটে রাখা হয়।
এই খাতের ৩০টি ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আসছে আরেও ১৩টির ঘোষণা।
ফান্ডগুলো চাঙা পুঁজিবাজারে গত এক বছরে রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করেছে। আর এখন লভ্যাংশ সব বিতরণ করতে হয় নগদে ফলে বেশ ভালো লভ্যাংশের আশা করা হচ্ছে।
এনএলআই দেখিয়েছে এবার লভ্যাংশ কেমন হতে পারে, কী নীতিমালায় হবে। তারা চমৎকৃত করার পর লেনদেনের শুরুতে এই খাতটি চাঙা হয়েছিল বটে, কিন্তু শেষ বেলায় দর হারিয়ে বসে বেশিরভাগ ফান্ড।
দিন শেষে ১১টি ফান্ডের দর বৃদ্ধির বিপরীতে মূল্য হারায় ১৩টি। দর ধরে রাখে বাকি ১২টি। এর মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করা এনএলআই এর দাম কমেছে ইউনিটপ্রতি ৬০ পয়সা।
টিকল না ব্যাংকের বাড়তি দর
আগের দিন সব কটি ব্যাংকের দাম বাড়ার কারণে এই খাতটি নিয়ে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, তাতে ধাক্কা লাগল দ্বিতীয় দিনই। বেশিরভাগ শেয়ারের দাম কমার পাশাপাশি লেনদেনও অর্ধেক হয়ে গেছে।
যদিও দাম বৃদ্ধি ও কমার হার খুব একটা বেশি না। সবচেয়ে বেশি কমা এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার দর হারিয়েছে ২.৩৯ শতাংশ। শেয়ার দর ২৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৮ টাকা ৫০ পয়সা।
রূপালী ব্যাংকের শেয়ার দর ৩২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ২.১৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৩১ টাকা ৯০ পয়সা।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর ২ শতাংশ কমে ৫ টাকার শেয়ার দিন শেষে হয়েছে ৪ টাকা ৯০ পয়সা।
ইউসিবি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১.৮১ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ১৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৬ টাকা ২০ পয়সা।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর ৮৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১.৭৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৮৪ টাকা ৪০ পয়সা।
ব্যাংক এশিয়ার শেয়ার দর কমেছে দেড় শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ২০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৯ টাকা ৭০ পয়সা।
এ তালিকায় আছে ওয়ান ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক।
এদিন দর বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংকের তালিকায় ছিল ব্র্যাক ব্যাংক, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে দশমিক ৪০ শতাংশ। উত্তরা ব্যাংকের শেয়ার দরও বেড়েছে একই হারে। ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে দশমিক ৮৫ শতাংশ। ব্যাংকটির শেয়ার দর ৩৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা।
এই খাতে হাতবদল হয়েছে মোট ১১৮.৭০ কোটি টাকা যা আগের দিন ছিল ২৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ লেনদেন কমেছে ১২৮ কোটি টাকার মতো।
আগ্রহের কেন্দ্রে তিন খাত
এদিন যত লেনদেন হয়েছে তার ৪৩.৮২ শতাংশই হয়েছে তিনটি খাতে। এগুলো হলো বস্ত্র, প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন।
এই তিনটি খাতের ১১৪টি কোম্পানির অর্থবছর শেষ হয়েছে। যদিও একটি অংশের কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ বা লোকসানে আছে, তার পরেও এসব কোম্পানিকে ঘিরে আগ্রহের শেষ নেই। কারণ, এগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন করে আবার চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আবার যেগুলো মুনাফায় আছে, সেগুলোর বেশিরভাগ করোনার মধ্যেও বেশ ভালো মুনাফা করেছে।
এই তিন খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বস্ত্র খাতে ৩৯৮ কোটি ২০ টাকা। আগের দিন এই খাতে হাতবদল হয়েছিল ২৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। এক দিনেই লেনদেন বেড়েছে ১২২ কোটি ১০ লাখ টাকা।
১০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির অর্ডার পাওয়ার পর গত সোমবার এই খাতে উত্থান দেখা দিলেও মঙ্গলবার ঘটে দর পতন। বুধবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় পুঁজিবাজারে লেনদেন ছিল বন্ধ। আর এই বিরতির শেষে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ এই খাতেই।
দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি ছিল বস্ত্র খাতের ঢাকা ডাইং, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১০ শতাংশ, দাম ২৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকা ৪০ পয়সা।
অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৯.৮৭ শতাংশ বেড়ে শেয়ার দর ১৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে হয়েছে ১৭ টাকা ৮০ পয়সা।
সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৯.৮১ শতাংশ বেড়ে ২১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে হয়েছে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা।
মালেক স্পিনিং মিলসের দর ৩০ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৯.৭০ শতাংশ থেকে হয়েছে ৩৩ টাকা ৯০ পয়সা।
৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টির দর কমেছে, পাল্টায়নি চারটির, বেড়েছে বাকি ৫৮টির।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে প্রকৌশল খাতে ৩৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবসে যা ছিল ৩১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
এই খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বন্ধ কোম্পানি অ্যাপোলো ইস্পাতের। ৯.১৭ শতাংশ বেড়ে ১০ টাকা ৯০ পয়সার শেয়ার হয়েছে ১১ টাকা ৯০ পয়সা।
জিপিএইচ ইস্পাতের দর ৮.৫০ শতাংশ বেড়ে ৪৯.৪ টাকা থেকে হয়েছে ৫৩.৬ টাকা।
নাহি অ্যালুমিনিয়ামের দর ৬.৭৫ শতাংশ, কপারটেকের ৬.৩১, কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৬ শতাংশ।
সব মিলিয়ে এই খাতে বেড়েছে ৩২টি শেয়ারের দর, কমেছে ১০টির। যেগুলোর দর কমেছে, সেগুলোর দাম কমার হার খুবই কম।
তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ৩২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের দিন যা ছিল ২৩৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। এই খাতে লেনদেন কমলে বেড়েছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর।
এই খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত বহুদিন ধরে। বাকিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২২টির আর কমেছে ৭টির দর।
এই ৩০টি কোম্পানির সিংগভাগই মুনাফায় আছে, আর এগুলোর অর্থবছরও শেষ হয়েছে ৩০ জুন। যে কোনো দিন আসবে বোর্ড সভার খবর। আর সেই সভা শেষে ঘোষণা হবে লভ্যাংশ।
এই খাতে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সেন্ট্রাল ফার্মার। ৯.৫৭ শতাংশ বেড়ে ১৮ টাকা ৮০ পয়সার শেয়ার হয়েছে ২০ টাকা ৬০ পয়সা।
৮.৫৭ শতাংশ বেড়ে ফার কেমিক্যালের দাম ১৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে হয়েছে ১৭ টাকা ৭০ পয়সা।
৭.৪৮ শতাংশ বেড়েছে লিব্রা ইনফিউশনের দর। ৬৬০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে শেয়ার দর হয়েছে ৭০৯ টাকা ৮০ পয়সা।
ওরিয়ন ইনফিউশনের দাম বেড়েছে ৭.১৬ শতাংশ। ৭২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে শেয়ার দর হয়েছে ৭৭ টাকা ৮০ পয়সা।
একই গ্রুপের ওরিয়ন ফার্মার দাম বেড়েছে ৬.৮৯ শতাংশ। ৬৩ টাকা ৮০ পয়সার শেয়ার বেড়ে হয়েছে ৬৮ টাকা ২০ পয়সা।
হারানো দর কিছুটা হলেও ফিরে পেল বিমা খাত
লেনদেনের শুরুতে বিমা খাতের শেয়ারের দর পতন হলেও দিন শেষে বেড়েছে সিংহভাগ বিমা কোম্পানির শেয়ার দর।
দিন শেষে এই খাতের ১০টি কোম্পানির দর কমার বিপরীতে বেড়েছে ৩৩টির। লেনদেন হয়েছে ১৭১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
আগের কর্মদিবসে এই খাতের ১১টির দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছিল ৩৯টির। লেনদেন হয়েছিল ১৮০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বিমা খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ৫.৮৯ শতাংশ। এছাড়া ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৭২ শতাংশ। ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ৫.১১ শতাংশ, প্রগতি লাইফের ৪.৮৮ শতাংশ, এছাড়া সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৪.৬৫ শতাংশ।
সিটি, গ্লোবাল, প্রাইম ও ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।
অন্যান্য খাতের লেনদেন
ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দর বেড়েছে ৬টির, কমেছে ১৩টির। লেনদেন হয়েছে ১০২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবসে এই খাতে ১১টির দর বাড়ার বিপরীতে কমেছিল ৬টির আর লেনদেন ছিল ১৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার।
খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির, কমেছে বাকি চারটির। লেনদেন হয়েছে ১১৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের দিন এই খাতে ১২টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছিল ৭টির, লেনদেন ছিল ১০৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৮টির, কমেছে ৫টির। লেনদেন হয়েছে ১৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে আছে এই খাতের সিভিও পেট্রোক্যামেকেল যার দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ।
আগের কর্মদিবসেও এই খাতে ১৭টি কোম্পানির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছিল ৬টির লেনদেন ছিল ১৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
একটি ফান্ডের চমকপ্রদ লভ্যাংশ ঘোষণার দিনও বেশিরভাগ ফান্ডের দর হারানোর দিন মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে লেনদেন অবশ্য বেড়েছে। ১১টির দর বৃদ্ধি, ১৩টির হ্রাস আর ১২টির দর অপরিবর্তিত থাকার দিন হাতবদল হয়েছে ১৪২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
আগের কর্মদিবসে দিন এই খাতে ১৩টির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছিল ৯টির, লেনদেন হয়েছিল ১০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
বিবিধ খাতে এদিনও বেশ ভালো লেনদেন হয়েছে। ১৪টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১০টির, কমেছে ৩টির। হাতবদল হয়েছে মোট ১৮৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
আগের কর্মদিবসে ৭টি করে কোম্পানির দর বৃদ্ধি ও কমার দিন লেনদেন ছিল ১৮৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
এদিন আগ্রহের নতুন মোড় দেখা গেছে তথ্য প্রযুক্তি খাতে। ১১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১০টিরই। কমেছে অন্যটির। হাতবদল হয়েছে মোট ৭৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬০ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৯৬ দশমিক ০৭ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৪ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩৯ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে।
ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ১৭৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৮১ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন ও মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
সোমবার (২৩ জুন) সকালে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সাবিনা আক্তার তুহিনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতায় উসকানি ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অন্যতম। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই নবাবগঞ্জের ষোল্লা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে, গতকাল (রবিবার) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেটের মনিপুরীপাড়ার একটি আবাসিক ভবন থেকে ফয়সাল বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে ডিবির আরেকটি দল।
তার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট একটি হত্যা মামলায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও হত্যার ঘটনায় তুহিন ও বিপ্লব—উভয়েই গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন। বিশেষ করে, গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় ফয়সাল বিপ্লবের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল বলে দাবি পুলিশের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক হয়রানির জন্য নয়, যথাযথ প্রমাণ ও মামলার ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দুজনেরই রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে এবং তদন্তে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারেও অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিবির কর্মকর্তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আবারও তিন ঘণ্টার কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কাফনের কাপড় পরে এই কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
এর আগে শনিবার (২১ জুন) এ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় এনবিআর কর্মকর্তাদের সংগঠন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
কাউন্সিলের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার এবং সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত কর কমিশনার সহেলা সিদ্দিকা পুনরায় এনবিআরে ‘যুক্তিসংগত সংস্কার’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
তারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, কারণ তার নেতৃত্ব সংস্কার প্রক্রিয়া শুধু বিলম্বিত হয়েছে।
এর আগেই তাকে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
গত ১৯ জুন গঠিত এনবিআর সংস্কার কমিটি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তারা।
এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, এ কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা পর্যন্ত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ১২ মে জারি করা এক অধ্যাদেশে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বাতিল করে সরকার রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে।
এরপর থেকেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআর কর্মকর্তারা নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ সংশোধনের ঘোষণা দেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার নতুন এই কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, শিশুমেলা থেকে এনবিআর কার্যালয় পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রবিবার থেকে কার্যকর হওয়া নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সব কক্ষের তালা খুলে দেওয়া হবে। তবে প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ তালাবদ্ধই থাকবে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, নাগরিক সেবার স্বার্থে আঞ্চলিক অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো চালু রাখা এবং কর্মরতদের নিজ নিজ দফতরে ফিরে গিয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। একই সঙ্গে নাগরিক সেবা নির্বিঘ্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ না করিয়ে আদালত ও সংবিধান লঙ্ঘন করায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার অপসারণ দাবি করছি।’
মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভাণ্ডার ও ক্রয়, হিসাব ও অডিট, সমাজ কল্যাণ, আইন, রাজস্ব, সম্পত্তি, পরিবহন, বিদ্যুৎ, যান্ত্রিক, সংস্থাপন, নিরাপত্তা, জনসংযোগ, আইসিটি সেল, নগর পরিকল্পনা বিভাগ এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দফতরে থেকে জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়নপত্র, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ এবং সড়কবাতি সচল রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, সাবেক সরকারের দোসর বা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর নগরভবন বা আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। দেখামাত্র প্রতিহত করা হবে। কোনও কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে নগর ভবনের বেশ কিছু কক্ষে শিকল দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তালা খুললেও প্রশাসক ও প্রকৌশলীদের কক্ষ বন্ধই থাকবে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, নতুন করে কেউ নিয়োগ দিতে চাইলে সেটিও প্রতিহত করা হবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, প্রতিটি অঞ্চলে আন্তর্জাতিক খেলা পৌঁছে দিব। এটিকে ঘিরে গড়ে উঠবে স্পোর্টস ইকোসিস্টেম।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ভেরিফাইড ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, 'কথা দিয়েছিলাম প্রতিটি অঞ্চলে আন্তর্জাতিক খেলা পৌঁছে দিব। তাকে ঘিরে গড়ে উঠবে স্পোর্টস ইকোসিস্টেম। এই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে রাজশাহীতে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর নীলফামারিতে আন্তর্জাতিক ফুটবল। এছাড়াও পরিকল্পনায় আছে খুলনাও।'
পোস্টে আরো বলা হয়েছে, 'প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুতই মাঠে বল গড়াবে ইনশাআল্লাহ।'
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী টুকু।
গণতন্ত্র মঞ্চ লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেইসবুক পেইজে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
রামপুরা ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে ত্রুটির কারণে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বিদ্যুৎ নেই বলে জানিয়েছে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি (পিজিসিবি)। এর ফলে ঢাকার একটি বড় অংশ এখন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ত্রুটি মেরামত করে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পিজিসিবি জানিয়েছে।
আজ রোববার রাত ১০টার দিকে এই ত্রুটি দেখা দেয়। এতে বসুন্ধরা, গুলশান, আফতাবনগর, রামপুরা, মগবাজার, মধুবাগ, ফার্মগেট, রাজাবাজার, কাওরান বাজার, বনানী, হাতিরঝিল, মহাখালী, সেগুনবাগিচা, মগবাজার, তেজগাঁও, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ অনেক এলাকা এখন বিদ্যুৎবিহীন।
পিজিসিবির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) এ বি এম বদরুদ্দোজা খান সুমন বলেন, রামপুরা ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড সাবস্টেশনে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আকস্মিক কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। এতে ঢাকার একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহে অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্যুতি হয়েছে। পাওয়ার গ্রিডের প্রকৌশলীরা দ্রুত সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আশা তিনি জানান, রামপুরা গ্রিডের ২৩০ কেভি অংশে সমস্যা হওয়ায় কারণে ডেসকো'র বসুন্ধরা ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিডের (আংশিক), পূর্বাচল গ্রিড, বনানী গ্রিড, আফতাবনগর গ্রিড, গুলশান গ্রিড বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এনএলডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে সঠিক কারণ উদ্ঘাটন এবং দ্রুত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা চলছে। তবে সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।
বরিশালের নদ-নদী এবং সাগরে হঠাৎ করে ধরা পড়ছে ঝাকে ঝাকে ইলিশ। সেই সঙ্গে ঝিমিয়ে যাওয়া বরিশালের সর্ববৃহৎ পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি-গত তিনদিন ধরে দৈনিক দুইশ থেকে সাড়ে তিনশ মণ পর্যন্ত ইলিশ আসছে এই পাইকারি মৎস্য আড়তে। তবে সরবরাহের অর্ধেকের বেশি ইলিশ আকারে ছোট দাবি বলে আড়তদারদের।
ইলিশের সরবরাহ বাড়তে শুরু করলেও দাম এখনো নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এক কেজি জাটকা কিনতে এখনো গুণতে হচ্ছে সর্বনিম্ন পাঁচশ টাকা। তবে সরবরাহ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ঠিক থাকলে চলতি মাসেই ইলিশে দাম আরও কমে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।
সরজমিনে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে দেখা যায়, ভোর পাঁচটা বাজার আগে থেকেই আড়তে আসছে একের পর এক ইলিশের ট্রলার। সাগর এবং নদীর মাঝ পোর্ট রোডে নামিয়ে দিয়ে ট্রলার নিয়ে জেলেরা আবার ছুটছেন সাগর এবং নদীতে। তবে বর্তমানে বরিশাল মোকামে আসা অর্ধেক ইলিশ স্থানীয় নদ-নদীর বলে দাবি জানিয়েছেন আড়াতদাররা।
পোর্টরোড আক্তার মৎস্য আড়তের আড়তদার আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, গত দুই-তিন দিনের তুলনায় রোববার ইলিশের দাম কিছুটা কম ছিল। কারণ এ কয়দিনে আড়তে ইলিশের সরবরাহ কিছু বেশি হয়েছে। এর পরও এলসি সাইজ অর্থাৎ ৭০০-৯৯৯ গ্রাম ওজনের প্রতিমণ ইলিশ ৭৫-৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া এক কেজি সাইজের ইলিশ প্রতিমণ ৮৮ হাজার, এক কেজির ওপরে ১২শ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ প্রতিমণ ৯২ হাজার, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিমণ ৯৮ হাজার টাকা, ভেলকা সাইজ অর্থাৎ ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম প্রতিমণ ৫৮-৬০ হাজার টাকা, ৩০০ থেকে ৫শ গ্রাম ইলিশ প্রতিমণ ৩২ হাজার টাকা এবং জাটকা ইলিশ প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকা দরে।
মৎস্য আড়তদার ইয়ার হোসেন জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে বরিশালের আড়তে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার মণ ইলিশও এসেছে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর সেই পরিমাণ কমে গেছে। তবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মৎস্য আড়তে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে বিধায় গত তিন দিন ধরে নদী এবং সাগরের মাছের ট্রলার বরিশালে আসছে। এ কারণে বরিশালের আড়তে সরবরাহও বেড়েছে।
বরিশাল শহীদ জিয়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জহির সিকদার বলেন, রোববার বরিশালের আড়তে তিনশ মনের বেশি ইলিশ এসেছে। যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। তবে সরবরাহ হওয়া ইলিশের মধ্যে প্রায় আড়াইশ মণই জাটকা। তাছাড়া নদীর থেকে সাগরের ইলিশটাই বেশি আসছে।
তিনি জানান, গত শনিবার বরিশাল পোর্ট রোড মোকামে ২০০ মণ এবং তার আগের দিন শুক্রবার প্রায় দুইশ মণ ইলিশ এসেছে পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে। ফলে গত তিন দিনের ব্যবধানে ইলিশের দাম মণপ্রতি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে। আগামী ২৫ জুন পূর্ণিমার জোঁ রয়েছে। ওইদিন থেকে আরও বেশি মাছ ধরা পড়বে বলে আশাবাদী এই ব্যবসায়ী।
খুঁচরা বাজারে দেখা যায়, আড়তে মাছের সরবরাহ বাড়লেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। সংকটের অজুহাতে এখনো বাড়তি দামেই ইলিশ বিক্রি করছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। ৭০০-৯৯৯ গ্রামের ইলিশ পাইকারী হিসেবে প্রতি কেজির দাম ১৮শ থেকে ১৯শ টাকা হলেও তা বিক্রি করা হচ্ছে ২২শ থেকে আড়াই হাজার টাকায়। একইভাবে কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ২২শ টাকার পরিবর্তে বিক্রি করা হচ্ছে ২৫শ থেকে ২৮শ টাকায়। আর জাটকা ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। বাড়তি দামে ইলিশ বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিম্ন আয়ের ক্রেতারা।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপণ কান্তি ঘোষ বলেন, একসময় বরিশালের পোর্ট রোড মৎস্য আড়ত জমজমাট ছিল। তখন দক্ষিণাঞ্চলের নদী এবং সাগরের ইলিশ এখানো আসত। তবে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির কারণে ইলিশ যাচ্ছে পটুয়াখালীর মহিপুর, আলিপুর এবং পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। তাছাড়া বরিশালের হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ এলাকার ইলিশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চাঁদপুরে। বরিশালের আড়তে যা মাছ আসছে তা স্থানীয় নদনদীর মাছ।
তিনি বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান অনেকটা সফল হয়েছে। এ সময় প্রচুর ইলিশের পোনা ছেড়েছে। এর সুফল সামনে পাওয়া যাবে। তবে এখনই গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই নদনদীতে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এটা ভালো লক্ষ্যন। বৃষ্টি এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি। ভবিষ্যতে আরও বেশি ইলিশ ধরা পড়লে দামও কমে আসবে বলেন এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য