পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ দিয়ে যে তহবিল গঠন করা হচ্ছে, সেটি পরিচালনায় বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে কারা থাকবেন, তারা নির্দিষ্ট না হলেও একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে।
এই বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, তহবিল কীভাবে ব্যবহার করা হবে, কোন কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করা হবে। মার্জিন ঋণের সুদহার কী হবে, কাদেরকে এই অর্থ দেয়া হবে।
মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ড বা ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা’ নামে তহবিল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারির দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
গত ২৭ জুন তহবিল গঠনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির ১১ দিনের মধ্যে বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বৈঠকে এই বোর্ড অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বোর্ডে কারা থাকছেন, সে নাম দেয়া হয়নি।
বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটা শর্টলিস্ট তৈরি করছি। এটা এখনই প্রকাশ করতে চাইছি না। তাদের বিষয়ে যাচাইবাছাই করছি।’
এই কাজে কত দিন লাগতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি নির্দিষ্ট নয়। তবে যত দ্রুত সম্ভব আমরা না চূড়ান্ত করব।’
যারা থাকবেন বোর্ড
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তহবিল পরিচালনা করবে ১১ সদস্যের একটি বোর্ড। এর চেয়ারম্যান ও তিন জন সদস্যকে নিয়োগ দেবে বিএসইসি। একজন সদস্য হবেন একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, যাকেও মনোনয়ন দেবে কমিশন।
একজন করে সদস্য দেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। একজন সদস্য মনোনয়ন দেবে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল, একজন মনোনয়ন দেবে সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিসিবিএল, একজন সদস্য মনোনয়ন দেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানি বিএপিএলসি।
তহবিলের চিফ অফ অপারেশন বা সিওও হবেন একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। এই সদস্যের সবার পুঁজিবাজার, হিসাববিজ্ঞান, ফিনান্স ও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আর অন্তত ৫ বছর অবশ্যই পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করতে হবে।
এই সদস্যদের কারও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শীর্ষ পদে পূর্ব ইতিহাস থাকা চলবে না। একজন সদস্য তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পাবেন। তবে মেয়াদ বাড়ানো যাবে। নিয়মিত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে বোর্ড সদস্যরা একজনকে চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেবেন। একটি অর্থবছরে তারা কমপক্ষে ছয়টি বৈঠক করবেন।
তহবিলের জন্য সম্মিলিতভাবে জবাবহিদি করতে হবে বোর্ডকে। আর তারা বিএসইসির কাছেও দায়বদ্ধ থাকবে।
অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জমার নির্দেশনা
আগের দিন এই তহবিলের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় হিসাবটি খোলা হয়েছে।
সেখানে অদাবিকৃত নগদ লভ্যাংশ বা আইপিও সাবস্ক্রিপশনের অবণ্টিত অর্থ পুঞ্জীভূত সুদসহ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে অবন্টিত লভ্যাংশ সংক্রান্ত অন্যান্য আনুষঙ্গিক তথ্য ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কাছে জমা দিতে বলা হয়েছ।
৪০ শতাংশ শেয়ারে বিনিয়োগ, ৫০ শতাংশে মার্জিন ঋণ
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই তহবিলের ৪০ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারে। ৫০ শতাংশ অর্থে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দেয়া হবে। আর ১০ শতাংশ অর্থ অতালিতাভুক্ত কোম্পানি বা সরকারি সিকিউরিটিজ, স্থায়ী আমানত ও বেমেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যাবে।
এই তহবিলের মার্জিন ঋণের সুদহার কত হবে, সেটি অবশ্য প্রজ্ঞাপনে বলা নেই। তবে এর কস্ট অব ফান্ড প্রায় শূন্য থাকায় সুদহারও কম হওয়া উচিত বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কমর্কতা দেবব্রত কুমার সরকার।
তিনি বলেন, ‘এই ফান্ড ব্যবহার করা হলেও কিন্ত দাবিদারদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। ফলে খালি চোখে কস্ট অব ফান্ড দেখা না গেলেও কিছুটা তো ম্যাইনটেন্যান্স কস্ট থাকবে। তাই একেবারে ফ্রিও বলা যাবে না।’
তহবিলের ভাবনা যেভাবে
নিয়মিত লেনদেন না করা বা দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানের কারণে ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে যায়। এতে নগদ লভ্যাংশ ব্যাংক হিসাবে জমা হয় না। একই কারণে বিও হিসাব নবায়ন না করলে শেয়ার (স্টক) লভ্যাংশ জমা না হয়ে তা কোম্পানির কাছে ফেরত চলে যায়। কোম্পানি এগুলো সাসেপেন্ডেড হিসাবে জমা দেখিয়ে আর্থিক বিবরণী তৈরি করে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ২১ হাজার কোটি টাকার মতো অবণ্টিত লভ্যাংশ পড়ে থাকার খবর আসে। তখন এই অর্থ ব্যবহার করে কীভাবে পুঁজিবাজারকে উন্নত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়।
তখনই এই তহবিল গঠনের আলোচনা উঠে। আর ২৭ জুন প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে এই তহবিল গঠন নিশ্চিত হয়।
বিএসইসির ’ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড’ খসড়া নীতিমালার উপর মতামত জন্য উন্মুক্ত করে গত ৮ মার্চ। এরপর এ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নীতিমালার উপর মতামত দেয়।
খসড়া নীতিমালার উপর বিএসইসিতে লিখিত প্রস্তাব পাঠায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির সমিতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেট কোম্পানি-বিএপিএলসি। তাদের বেশ কিছু আপত্তি বিবেচনায় নেয়া হয়।
ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে নানা আলোচনার পর অবশেষে নীতিমালা চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য পাঠানো হয় বিজিপ্রেসে।
তহবিল কত
বিএসইসি দেখেছে, টাকার অঙ্কে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা ও নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ৬৩৪ কোটি টাকা।
সিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে অবণ্টিত বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ ৮ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা ও নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ৩২১ কোটি টাকা।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৮০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অদাবিকৃত লভ্যাংশ রয়েছে তামাক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড-বিএটিবিসির। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বোনাস লভ্যাংশ এবং ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা নগদ লভ্যাংশ।
এটি ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব। এরপর ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানি, আর্থিক খাতের বেশ কিছু কোম্পানি ও বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ফলে তহবিলের অঙ্কটা বড় হতে পারে।
তবে অবণ্টিত লভ্যাংশের বোনাস শেয়ার ও রাইট শেয়ার নিয়ে কী করা হবে, সেই বিষয়টি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম।
আরও পড়ুন:মা-ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে ২৫ লাখ বর্গমিটার অবৈধ নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও ১১ জেলেকে আটক এবং ৫ কেজি মা-ইলিশ জব্দ করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে পদ্মা নদীর কলাবাগান ও অন্তার মোড় এলাকায় নৌপুলিশ ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে উপজেলা মৎস্য বিভাগ, দৌলতদিয়া নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ডের যৌথ অভিযানে
২৫ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল, ১১ জন জেলে আটক ও ৫ কেজি মা-ইলিশ জব্দ করা হয়। পরে আটককৃত ১১ জন জেলেকে মৎস্য সুরক্ষা আইন ১৯৫০ খ্রি. সালের ৫ (২) (খ) ধারা মতে মিয়মিত মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং কারেন্ট জালগুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস ও মাছগুলো এতিমখানা ও স্থানীয় অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নৌপুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্দেশনা মতে গত ৪ অক্টোবর থেকে অভিযান শুরু হয়েছে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে, মা-ইলিশ প্রজনন এই মৌসুমে সচেতনামূলক প্রোগ্রাম করা হয়েছে, যেন কোনো জেলেরা নদীতে মা-ইলিশ না ধরে, যেন মা-ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে, আমাদের নৌপুলিশের অভিযান নদীতে অব্যাহত রয়েছে। এখানে জেলা মৎস্য অফিসের সাথে আমাদের নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, ম্যাজিস্ট্রেট যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ি থেকে চারটি মামলা রুজু হয়েছে, মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে, ৬০ জনের মতো আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে, ২ কোটি ১০ লাখ বর্গমিটারের উপরে অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে, ২৬০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে গরিব ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। শেষ সময় পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম পাইলট, দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ত্রিনাথ সাহা, এসআই মেহেদী হাসান অপূর্বসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ফসল রক্ষায় বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামের বিবিসি ইটভাটা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আঁকবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসাসংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিবিসি (বিসমিল্লাহ ব্রিকস) ইটভাটার কারণে এলাকার অন্তত পাঁচশত একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, প্রাণিসম্পদ ও গ্রামীণ সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা ফসলি জমির ওপর বিবিসি ইটভাটি স্থাপন করেন। কৃষকরা অভিযোগ করেন, ইটভাটা নির্মাণের পর থেকে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে আগের মতো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। ওই ইটভাটার ৩০০ গজের মধ্যে রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিমখানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, কৃষি জমি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে সেখানে ইটভাটা চালু রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় জাহাঙ্গির আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাশির উদ্দিন, কবির গাজী, শাহীন প্যাদা ও খোকন হাওলাদার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ইটভাটার কারণে জমিতে আগের মতো ফলন হচ্ছে না, গাছে ফল ধরছে না এবং শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। তারা বরগুনা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে দ্রুত ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, তিন দিক ঘেরা ধান খেতের মধ্যে বিবিসি ইটভাটার কার্যক্রম চালু রয়েছে।
রায়বালা গ্রামের কৃষক কবির গাজী বলেন, ‘ইটভাটার কারণে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো ফসল ফলছে না। পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যিনি ধানের শীষ প্রতীক পাবেন, ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা তাকেই জিতিয়ে নেওয়ার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করব। এই নির্বাচনে ফরিদপুর সদর আসনে এবার ধানের শীষ প্রতীক হেরে গেলে আমরা শুধু হারবই না, চিরতরে হারিয়ে যাব। তাই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই ধানের শীষকে সর্বশক্তি দিয়ে বিজয়ী করে আনতে হবে।
গত বুধবার রাতে শহরের হাবেলি গোপালপুরে আফজাল হোসেন খান পলাশের বাসভবন প্রাঙ্গণে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত ও সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় রাজপথের অকুতোভয় দুঃসাহসী নেতা হিসেবে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশকে জেলা বিএনপির পরবর্তী সভাপতি দেখতে চান বলেও নেতা-কর্মীরা জোরালো বক্তব্য দেন। তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে আফজাল হোসেন খান পলাশের দৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের করণীয় কী হবে, আমরা কী করব সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই সভার আয়োজন। যারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন, সকলের প্রতিই কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, গত ১৭ বছর ফরিদপুরের রাজপথে কোনো আন্দোলন হয়েছে আর আমি আফজাল হোসেন খান পলাশ ছিলাম না তা কখনোই হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় জাতীয় পর্যায়ে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন চলছিল, তেমনি ফরিদপুরেও একটা চক্রান্ত হয়েছিল। ঐক্যবদ্ধভাবে সকল চক্রান্ত প্রতিহত করে বিএনপির ধানের শীষকে বিজয়ী করব।
ফরিদপুর জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি শামীম হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকী মিতুল, যুগ্ম আহ্বায়ক সামসুল আরেফিন সাগর, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ সালাম লাল, ফরিদপুর সুগার মিলের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, জেলা যুবদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দীন বিশ্বাস, জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার জোয়ার্দার, জেলা যুবদলের সহসভাপতি কেএম জাফর, মোহসিনুল কবির রুবেল, টিটু খাঁন, শ্যামসুন্দরপুর নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুতাওয়াল্লী আলহাজ ফরিদ শেখ, বিএনপির প্রবীণ নেতা আলমগীর মাস্টার, মো. রেজাউল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার খান, শাহীন হক, যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর কবির, আলতাফ হোসেন, হাফিজুর রহমান রাজা, জিন্না মেম্বার, হায়দার হোসেনসহ অনুষ্ঠানে ৪৫ জন বক্তা বক্তব্য রাখেন।
রংপুরে শতকরা ২৭ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। এছাড়া প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ থেকে ৮ হাজার নতুন থ্যালাসেমিয়া রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষাসহ থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করে এমন নারী-পুরুষদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা গেলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধ যোগ্য। বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে ‘থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা ও বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প’ উপলক্ষে বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতালের উদ্যোগে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা. একরামুল হোসেন স্বপন। তথ্য-চিত্র উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি ও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাফরুহা আক্তার। রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, রংপুর গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আলম আল আমিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রংপুর গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন সরকার।
সেমিনারে চিকিৎসকরা জানান, থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর থ্যালাসেমিয়ার রোগী এক নয়। বাহকের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না, তেমন কোনো চিকিৎসাও লাগে না। তবে একজন বাহক পরবর্তী প্রজন্মে রোগ বহন করতে সক্ষম। থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার বিষয়ে সবাই সচেতন হলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশির ভাগ পরিবার এর চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই এ রোগ প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় সিট সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় সপ্তাহ ১০ দিন আগেই সব টিকিট বুকিং হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘুরতে আসা পর্যটকসহ স্থানীয় যাত্রীরা।
গত শুক্রবার ঢাকা থেকে পরিবারের লোকজন নিয়ে শ্রীমঙ্গল ঘুরতে আসেন পর্যটক আরোফিন আহমেদ। বাসে যাতায়াত করা তার জন্য অস্বস্তিকর হওয়ায় তিনি ট্রেনে ফিরতে চাইলেও গত রোববার বা সোমবারের কোনো টিকিট পাননি। শেষমেষ ভোগান্তি নিয়ে তাকে বাসে করেই ঢাকায় ফিরতে হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক হুমায়রা সুলতানা বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পরেও ট্রেনের কোনো টিকিট পাইনি। ছোট্ট শিশু সন্তান নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে যাত্রা করতে হয়েছে। এটি খুবই কষ্টদায়ক। দীর্ঘদিন ধরে আমরা রেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।’
১৯১২ সালে চালু হওয়া শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন মৌলভীবাজার জেলার তিনটি উপজেলার যাত্রী ব্যবহার করে থাকেন। পাশাপাশি দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল হওয়ায় এ স্টেশনের গুরুত্ব অনেক। প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন; কিন্তু টিকিট সংকট তাদের জন্য সবচেয়ে বড় ভোগান্তি।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকাগামী শ্রীমঙ্গল থেকে বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা কালনী এক্সপ্রেসে ৮১টি, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে ৭০টি, পারাবত এক্সপ্রেসে ১০৫টি, উপবন এক্সপ্রেসে ৬৫টি, পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে ৪৭টি এবং উদয়ন এক্সপ্রেসে ৩০টি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী লিটন অধিকারী বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহেই ঢাকায় যেতে হয়। শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে টিকিট বরাদ্দ কম থাকায় সিলেট থেকে ঢাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া দিয়ে সেখান থেকে টিকিট সংগ্রহ করি।’
রাধানগর পর্যটন কল্যান পরিষদের যুগ্ম সভাপতি তাপস দাশ বলেন, ‘বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে প্রায় ১০০টি হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসলেও ট্রেনের টিকিটের সংখ্যা এত কম যে সেগুলো ১০ দিন আগেই বুকিং হয়ে যায়। ফলে পর্যটন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্প ও স্থানীয় জনগণের ভ্রমণ সুবিধা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ট্রেন চালু ও সিট সংখ্যা বাড়ানোর দাবি করেন স্থানীয়রা।
পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মা বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন ফিরতি টিকিট নিয়ে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য কোনো কোটা নেই। রাত ২টার পর ঢাকা যাওয়ার ট্রেন ধরতে স্টেশনে পর্যটকদের অপেক্ষা করতে হয়, অথচ স্টেশনের টয়লেট ব্যবস্থাও নাজুক এবং ভিআইপি রুম তালাবদ্ধ থাকে। তিনি পর্যটকদের সুবিধার্থে নতুন ট্রেন চালুর পাশাপাশি সময়সূচি আপডেটের দাবি জানান।
শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শুক্র ও শনিবারে হাজারও পর্যটক আসেন। কিন্তু যাত্রী সংখ্যার তুলনায় বরাদ্দ টিকিট অপ্রতুল। আমাদের কিছু করার নেই। অনলাইনে আগেই টিকিট কেটে নেয় যাত্রীরা। কালোবাজারির সুযোগ নেই, কারণ জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া টিকিট কাটা যায় না। তবে আমরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সিট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছি।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘এই উপজেলার পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের সার্বিক সমস্যা সমাধান, ট্রেন ও টিকিট সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় নির্মিত ৭টি রেলস্টেশনের মধ্যে ৩টির সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব রেলস্টেশন বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের সাধারণ যাত্রীদের। এছাড়া গরিবের ট্রেন খ্যাত ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস মেইল (৭৫-আপ, ৭৬-ডাউন) ট্রেনটিও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে ময়মনসিংহ-ভূঞাপুর লাইনে চলাচল করা সকল যাত্রীদের প্রতিনিয়ত সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিক জনশূন্য, ভূতুরে পরিবেশ। স্টেশনের সব কক্ষই তালাবদ্ধ। নেই বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা। প্রতিটি রেলস্টেশনে একজন স্টেশন মাস্টার ও সহকারী মাস্টার এবং চারজন করে পয়েন্টম্যান থাকার কথা থাকলেও এসব স্টেশনে কেউ নেই। ফলে যাত্রীদের সহায়তা করা ও টিকিট কাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরিষাবাড়ী উপজেলায় আন্তঃনগর যমুনা, অগ্নীবিনা ও জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস (বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ), চট্টগ্রাম মেইল ৩৭ আপসহ ৩টি লোকাল ট্রেনসহ মোট ৬টি ট্রেন চলাচল করে। বন্ধ এসব রেলস্টেশনগুলোতে ২টি লোকাল ট্রেন সামান্য সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি করলেও অন্য ট্রেনগুলো যাত্রা বিরতি করে না।
এ উপজেলায় রয়েছে ৭টি রেলস্টেশন। তার মধ্যে ১৮৯৯ সালের ব্রিটিশ শাসনামলে চালু হওয়া বাউসী, বয়ড়া ও নবনির্মিত শহীদ নগর বারইপটল স্টেশনে জনবল সংকটের কারণে সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বন্ধ থাকা এসব স্টেশনে চলে ধান মাড়াই, খড় শোকানো ও চুরি, জুয়া, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। স্টেশন বন্ধ থাকায় পড়ে থাকা মূল্যবান সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে। এসব রেলস্টেশন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এদিকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল রেলপথে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০১২ সালের ৬ জুলাই উদ্বোধন করা হয়। ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা জামালপুর, টাঙ্গাইলে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস মেইল ট্রেনটি ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে ২০২৪ সালের ২৮ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ময়মনসিংহ থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে জামালপুর এবং টাঙ্গাইলের হেমনগর, ভূঞাপুর ও ইব্রাহিমাবাদ (পূর্বের নাম বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব) রেলওয়ে স্টেশনে চলাচল করত। এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের ট্রেনের ভাড়ার থেকে ২-৩ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে অন্য যানবাহনে করে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী মঞ্জুরুল ইসলাম, রিপন মণ্ডলসহ একাধিক যাত্রী বলেন, ‘ট্রেন মূলত নিম্ন আয়ের মানুষদের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম। ট্রেনে অন্য যানবাহনের থেকে কম ভাড়ায় যাতায়াত করা যায়। নিরাপদ ভ্রমণ হিসেবে ট্রেনে আমরা কম টাকায় যাতায়াত করি। আমাদের যাতায়াতের কষ্টের বিষয়টির গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এই ট্রেনটি চালুর দাবি জানাচ্ছি।’
বন্ধ থাকা নবনির্মিত শহীদ নগর বারইপটল স্টেশন এলাকার সুমন মিয়া, শাওন আহমেদ বলেন, ‘স্টেশনটি নির্মাণের পর স্টেশন মাস্টারসহ রেলের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকত। বেশ মুখরিত ছিল এই স্টেশনটি। তবে স্টেশনটি উদ্বোধনের কয়েকদিন পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত রেল ভবন, কোয়ার্টার ও স্টেশনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, সরকারি আসবাবপত্র পরে পরে নষ্ট হচ্ছে।’
বন্ধ থাকা বয়ড়া স্টেশনের ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকে এই বয়ড়া রেলস্টেশন ছিল। এক সময় জনপ্রিয় ও জনসমাগম ছিল প্রচুর এই বয়ড়া স্টেশনে। তখন সকল ট্রেন যাত্রাবিরতি করত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই স্টেশন বন্ধ থাকায় তালাবদ্ধ অবস্থায় পরে আছে। আগের মতো লোকও আসে না ব্যবসাও নেই।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে (ঢাকা) অতি. মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. নাজমুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, জনবল সংকটের কারণেই অনেক স্টেশন বন্ধ আছে। যমুনা সেতুর পূর্ব ইব্রাহীমাবাদ রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজের জন্য ময়মনসিংহ থেকে চলাচলকারী ধলেশ্বরী মেইল ট্রেনটি বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে ইব্রাহীমাবাদ রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ অনেকটাই শেষ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো বন্ধ থাকা ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুনরায় চালু করা হবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশি হামলার’ প্রতিবাদে ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা এবং কর্মচারী ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে যশোরের শার্শা উপজেলার এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
শার্শা উপজেলার ৩৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩৬টি মাদ্রাসায় ক্লাস বর্জন করে গত সোমবার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘লাগাতার কর্মবিরতি চলছে। তারি ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। বেনাপোলে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ধান্যখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাহেব আলী বলেন, আমাদের দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অবহেলিত। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় । আমাদের যা বেতন দেওয়া হয় তা আমরা সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছি না। আমাদের সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা এবং কর্মচারী ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
তবিবর রহমান সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুব হোসেন বলেন, মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবিতে ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
বেনাপোল মদিনাতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক আমিনূল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের মাদ্রাসায় কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। উপজেলার সকল এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ক্লাস বন্ধ রয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) উপজেলার সব এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
শার্শা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শাহাজান কবীর জানান, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শার্শা উপজেলা ও বেনাপোলের সকল এমপিও ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীরা আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন।
মন্তব্য