পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে নগদে লভ্যাংশ বিতরণের প্রবণতা আরও বেড়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২৩টি ব্যাংক ২ হাজার ৩৫৩ কোটি ৯০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪৮ টাকা ২০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে ১৬টি ব্যাংক নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ারও দিতে যাচ্ছে। আর সাতটি ব্যাংক কেবল নগদে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
আর তিনটি ব্যাংক কেবল বোনাস এবং একটি ব্যাংক লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
আরও দুটি ব্যাংক গত বছর ২০০ কোটি টাকা নগদে বিতরণ করেছিল, যেগুলো এখনও লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা করেনি। তারা গত বছরের মতোই লভ্যাংশ দিলে শেষ পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে মোট ২৭টি ব্যাংক। আরও চারটির লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সভা বাকি আছে।
লভ্যাংশ বিতরণে বিধিনিষেধ
এবার করোনা পরিস্থিতিতে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সার বেশি নগদে লভ্যাংশ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই সর্বোচ্চ পরিমাণ নগদে লভ্যাংশ দিয়েছে তিনটি ব্যাংক। এগুলো হলো সিটি, ইবিএল ও যমুনা ব্যাংক।
টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করতে যাচ্ছে সিটি ব্যাংক। তারা ১৭৭ কোটি টাকারও বেশি বিতরণ করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংক ১৬৯ কোটি, ইসলামী ব্যাংক, ইবিএল ১৪২ কোটি, ব্র্যাক ১৩২ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ১৩০ কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করতে যাচ্ছে।
পুঁজিবাজারে এর আগে কখনও কোনো খাতের এমনকি ব্যাংকিং খাতেরও এত বিপুল পরিমাণে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের ইতিহাস নেই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যখন বেশি বেশি স্টক দিচ্ছিল, তখন ক্যাশ লভ্যাংশের বিষয়টি এসেছিল। এতে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা অন্তত লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় ব্যাংকে বিনিয়োগ করবেন।’
ব্যাংকে টাকার রাখার চেয়ে শেয়ার কিনলে লাভ বেশি
চলতি বছর বেশ কিছু ব্যাংক যে পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে সেটি সঞ্চয়ের সুদহারের চেয়ে বেশি।
বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারদর এখন অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি বা দ্বিগুণের কম হওয়ায় এখন ব্যাংকে টাকার রাখার চেয়ে শেয়ার কিনে রাখাই বেশি লাভজনক হচ্ছে।
এখন ব্যাংকে টাকা রাখলে বছরে সাড়ে ৪ থেকে ৬ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। অথচ শেয়ারমূল্যের তুলনায় নগদ লভ্যাংশ পাওয়া যাচ্ছে এর চেয়ে বেশি হারে।
গত এক বছরে প্রাইম ব্যাংকের শেয়ারদর ছিল ১৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১৮ টাকা ৬০ পয়সা। এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা এবার দেড় টাকা করে লভ্যাংশ পেতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ শেয়ারদরের তুলনায় লভ্যাংশ (ইল্ড) ছিল ৮ থেকে সাড়ে ১০ শতাংশ।
প্রিমিয়ার ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত এক বছরে এই ব্যাংকের শেয়ারদর ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১৪ টাকা ২০ পয়সা। এই হিসাবে এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা ৯ থেকে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ মুনাফা পাবেন।
গত এক বছরে মার্কেন্টাইলে ব্যাংকের শেয়ারদর ছিল ১০ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১৪ টাকা ২০ পয়সা। এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা এক টাকা করে নগদ পেতে যাচ্ছেন। এই ব্যাংকের শেয়ারধারীদের ইল্ড ৭ থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
যমুনা ব্যাংকের দাম গত এক বছরে সর্বনিম্ন ছিল ১৬ টাকা, আর সর্বোচ্চ ২০ টাকা ৪০ পয়সা। এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা নগদ লভ্যাংশ পেতে যাচ্ছেন ১ টাকা ৭৫ পয়সা।
যাদের শেয়ার কেনা ১৬ টাকায়, তারা শেয়ারমূল্যের প্রায় ১১ শতাংশ পাচ্ছেন লভ্যাংশ হিসেবে, আর যাদের কেনা ২০ টাকা ৪০ পয়সায়, তারা পাচ্ছেন ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
এ রকম আরও অন্তত ১০টি ব্যাংক আছে যেগুলোর লভ্যাংশের ইল্ড বাজারে বর্তমানে সুদহারের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি পাওয়া গেছে বোনাস শেয়ার।
এত বেশি হারে লভ্যাংশ বিতরণ করলেও ব্যাংকের শেয়ারের দর একেবারে তলানিতে।
নিয়মিত লভ্যাংশ দিয়ে আসা তিনটি ব্যাংকের শেয়ারদর এখন ১০ টাকার নিচে। আরও একটি লোকসানি ব্যাংকের শেয়ারদর ৫ টাকার নিচে।
নিয়মিত লভ্যাংশ দেয়া অন্য একটি ব্যাংকের শেয়ারদর ১০ টাকা।
১০ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে দাম আছে নয়টির। এর মধ্যে একটি কেবল এবার ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। বাকি সবগুলোই ১০ বা তার চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ২০ ও একটি ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।
সাতটি ব্যাংকের শেয়ারদর এখন ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে দুটি সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে একটি।
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যে লেনদেন হয় তার ৯০ শতাংশ গেমলিং করে হয়। ব্যাংকে গেমলিং কম, কারণ তাদের ইক্যুইটি বেশি। বিনিয়োগকারীরা এখন স্বল্প সময়ের লেনদেন করে মুনাফা তুলে নেয়ার পক্ষে, যা ব্যাংকে হচ্ছে না।’
নগদে লভ্যাংশের প্রবণতা বাড়ে গত বছর থেকে
পুঁজিবাজারে নগদ লভ্যাংশের প্রবণতা বাড়ে ২০১৯ সালের বাজেটে কর প্রস্তাবের পর। তখন বলা হয়, কোনো কোম্পানি নগদ লভ্যাংশের সমপরিমাণ বোনাস দিলে বোনাসের উপর কর দিতে হবে না। আর শুধু বোনাস দিলে অথবা নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি বোনাস দিলে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
এই বিধানের পর ২০২০ সাল থেকেই ব্যাংকগুলো বোনাসের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে থাকে। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকের হাতে নগদ টাকা রাখার সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকগুলোকে কেবল বোনাস শেয়ার দিকে বাড়তি করারোপের শর্ত থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তার পরেও কোম্পানিগুলো বোনাসের পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করে।
মহামারি পরিস্থিতিতে টানা দ্বিতীয় বছর এই প্রবণতা চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যার আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শেয়ারহোল্ডারদের মনোবল ধরে রাখতে প্রায় প্রতিটি ব্যাংক ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। ব্যাংকের আর্থিক হিসাব অনেকটাই স্বচ্ছ। যে কারণে এ খাত থেকে প্রতি বছর ভালো লভ্যাংশ দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারে অন্যান্য খাতের তুলনায় ব্যাংক খাত এখনও বিনিয়োগযোগ্য। লভ্যাংশের তুলনায় ব্যাংকের চেয়ে কম দামে অন্য কোনো শেয়ার নেই বললেই চলে। কিন্তু এরপরেও বিনিয়োগকারীরা সেদিকে যেতে চান না। অনেকে গুজবনির্ভর বিনিয়োগে যান।’
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কোম্পানি সচিব আবুল বাশার বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা যেন আরও সুদৃঢ় হয় সেজন্য করোনাতে ব্যাংকগুলো শেয়ারধারীদের ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে।’
কোন ব্যাংক কত নগদ লভ্যাংশ দিল
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি দেড় টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাংকটির শেয়ার সংখ্যা ১০৬ কোটি ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৮৫টি। এই হিসাবে ব্যাংকটি লভ্যাংশ দেবে ১৫৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৭৭ টাকা ৫০ পয়সা।
ব্যাংক এশিয়া শেয়ার প্রতি লভ্যাংশ দিচ্ছে ১ টাকা করে। এই হিসাবে ব্যাংকটি বিতরণ করবে ১১৬ কোটি ৫৯ লাখ ৬ হাজার ৮৬০ টাকা।
শেয়ার প্রতি ১ টাকা হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক লভ্যাংশ বিতরণ করবে ১৩২ কোটি ৫৮ লাখ ৭৮ হাজার ৪৭৬ টাকা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে সিটি ব্যাংক। শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা হিসেবে তারা বিতরণ করবে ১৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার ৬৫৬ টাকা ৭৫ পয়সা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
ঢাকা ব্যাংক শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা করে বিতরণ করবে মোট ৫৩ কোটি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৬ টাকা। পাশাপাশি ৬ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে ছয়টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
শেয়ার প্রতি দেড় টাকা করে ডাচ বাংলা ব্যাংক দিচ্ছে ৯৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ১৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস শেয়ারও দিয়েছে ব্যাংকটি।
ইবিএল শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা করে বিতরণ করবে মোট ১৪২ কোটি ৬ লাখ ৪৯ হাজার ২০৬ টাকা। পাশাপাশি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে ৩৫টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
এক্সিম ব্যাংক শেয়ার প্রতি ৭৫ পয়সা করে লভ্যাংশ দেবে মোট ১০৫ কোটি ৯১ লাখ ৮৮ হাজার ৩০১ টাকা। পাশাপাশি ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
ইসলামী ব্যাংক শেয়ার প্রতি ১ টাকা করে বিতরণ করবে মোট ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮ টাকা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা করে নগদ ও প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ার দিতে যাচ্ছে। এই হিসেবে এই ব্যাংকটি বিতরণ করবে মোট ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ১০১ টাকা ৫০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা করে মোট ১৩১ কোটি ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮৭ টাকা ৫০ পয়সা বিতরণ করবে যমুনা ব্যাংক।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক শেয়ার প্রতি ১ টাকা করে বিতরণ করবে মোট ১০৩ কোটি ৩২ লাখ ১৭ হাজার ২৮ টাকা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
শেয়ার প্রতি ৭৫ পয়সা করে মোট ৭০ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬০ টাকা ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ দেবে এনসিসি ব্যাংক। পাশাপাশি ৭.৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
নতুন তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংক বিতরণ করবে ৫২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪৮ টাকা ৫০ পয়সা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা হিসেবে ওয়ান ব্যাংক দিচ্ছে মোট ৫৩ কোটি ১২ লাখ সাত হাজার ৮৪৩ টাকা। সঙ্গে সাড়ে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ারও দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এই হিসাবে প্রতি ২০০ শেয়ারে ১১টি বোনাস শেয়ার পাওয়া যাবে।
শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা হারে ১৩০ কোটি টাকা ৩৮ লাখ ৩৮ হাজার ৪০৮ টাকা ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ দেবে প্রিমিয়ার ব্যাংক। পাশাপাশি ৭.৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
প্রাইম ব্যাংক শেয়ার প্রতি দেড় টাকা হারে বিতরণ করতে যাচ্ছে মোট ১৬৯ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার ২১৫ টাকা ৫০ পয়সা।
পূবালী ব্যাংক শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা হারে মোট ১২৮ কোটি ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭৭৩ কোটি ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ বিতরণ করতে যাচ্ছে।
শেয়ার প্রতি ৭০ পয়সা করে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে মোট ৬৮ কোটি ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭৩ টাকা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দিয়েছে ব্যাংকটি।
শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা করে এসআইবিএল লভ্যাংশ দেবে মোট ৪৬ কোটি ৯০ লাখ চার হাজার ২১২ টাকা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
শেয়ার প্রতি টাকা হারে সাউথ ইস্ট ব্যাংক দিতে যাচ্ছে মোট ১১৮ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ৫২২ টাকা।
টাকার অঙ্কে সবচেয়ে কম লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এই ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি ২৫ পয়সা করে বিতরণ করতে যাচ্ছে মোট ২৫ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৯৭ টাকা। পাশাপাশি ২.৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
উত্তরা ব্যাংক শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা করে বিতরণ করতে যাচ্ছে মোট ৬২ কোটি ৭৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। পাশাপাশি ১২.৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে ২৫টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।
কেবল বোনাস শেয়ার দিল যারা
আরও তিনটি ব্যাংক এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে যারা কেবল বোনাস শেয়ার দেবে। এর মধ্যে এবি ও আইএফআইসি ব্যাংক কেবল ৫ শতাংশ হারে (প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি) এবং মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১০ শতাংশ হারে (প্রতি ১০ শেয়ারে একটি) বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
টানা লোকসানে থাকা আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এবারও শেয়ারধারীদের মধ্যে কোনো লভ্যাংশ বিতরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যেসব ব্যাংক এখনও লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি
ন্যাশনাল, রূপালী, ট্রাস্ট ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবি এখনও লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সভার কথাই জানায়নি।
আরও পড়ুন:জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করে গতকাল মঙ্গলবার বাদ যোহর জনতা ব্যাংক পিএলসির প্রধান কার্যালয়ের নামাজ ঘরে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নামাজ ঘরে এক আলোচনা সভায় ব্যাংকের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মুহ. ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এ সময় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপকরা, জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি ও জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃরাসহ সব স্তরের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আমদানি করা প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার না করলে আগামী ৭ জুলাই এনবিআর ভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ আমদানিকারকরা।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুন বাজেটে প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর দেড়শ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা এই হুঁশিয়ারি দেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে লিপ কেয়ার, ফেস ক্রিম, পাউডারসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর দাম কম হলেও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে বেড়েছে দাম। এতে বাজারে বাড়ছে অবৈধ পথে আসা প্রসাধনীর সরবরাহ। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর শঙ্কাও প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজেটে প্রসাধনী পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব বৈধ আমদানিকে নিরুৎসাহিত করবে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিটিআইএ)। তাদের মতে, শুল্ক বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বাড়াবে, বাজারে নকল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্য তৈরি করবে এবং ২৫ লাখের বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
সংগঠনটির দাবি, এই শুল্ক কাঠামো বাস্তবায়নের ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে এবং দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর সরাসরি অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে।
বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর যে ন্যূনতম শুল্কহার বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এটি দেশের বৈধ আমদানির পথকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে, যা পরিণামে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। বাজার ভরে যাবে নকল ও নিম্নমানের পণ্যে, যা শুধু ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলবে না, বরং হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং তাদের কর্মচারীরা জীবিকা হারাবেন।’
সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য হলো নতুন নতুন ব্যবসা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে, চলতি বাজেটে আমদানিকৃত প্রসাধনী পণ্যের উপর ১৫০% পর্যন্ত ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশ ২.০-এর লক্ষ্য এবং প্রধান উপদেষ্টার অভিন্ন লক্ষ্যের সম্পূর্ণ বিরোধী।
এরপরও চলতি বাজেটে এসব পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান ঘিরে থাকা এই খাতের ওপর এক সরাসরি আঘাত। এই বৈষম্যমূলক করনীতি কেবল বৈধ ব্যবসার পরিপন্থী নয়, বরং দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের স্বার্থের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক—যারা আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
সাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। চোরাচালান, ভুল ঘোষণা (misdeclaration) ও রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে। বেকারত্ব বাড়ায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।’
চোরাচালান বাড়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি সিলেটে প্রসাধনীসহ শুল্ক বেড়েছে এমন সাত কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি। যা আমাদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রসাধনী ব্যবসায়ী, অ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি কমে এসেছে। সেই সঙ্গে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে—মন খবর বাজারে আসায় তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
আগস্ট মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৬ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ১১ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসের জন্য দাম আরও কমেছে। সে ক্ষেত্রে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ সেন্ট কমে গিয়ে ৬৫ দশমিক ৯৭ ডলার হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিও ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৬৪ দশমিক ৫৮ ডলারে নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছিল তেলের বাজার। সাপ্তাহিক দরপতনের দিক থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের পর গত সপ্তাহে দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে জুন মাসে তেলের দাম বেড়েছে। আজ সোমবার (৩০ জুন) শেষ দিনের দামের পূর্বাভাসসহ ধারণা করা হচ্ছে, জুন মাসে তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর তেলের দাম বাড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর তা দ্রুত নেমে আসে ৬৭ ডলারে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, বাজারে যে আতঙ্কজনিত বাড়তি মূল্য ছিল, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তা অনেকটাই মুছে গেছে।’
এদিকে ওপেক ও সহযোগী জোটের চারজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা আগস্ট মাসে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছেন। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই পরিমাণে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে বসার কথা। এপ্রিল মাসে উৎপাদন হ্রাসের ধারার থেকে বের হওয়ার পর এটি হবে পঞ্চম দফায় উৎপাদন বৃদ্ধি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা আরও ছয়টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২-এ, অক্টোবর ২০২১ সালের পর যা সর্বনিম্ন। এ তথ্য দিয়েছে খনিজ খাতের প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষ দিন আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেন চলবে।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ ইতোমধ্যে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এবার ছাপিয়ে গেছে। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
চলতি জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার (২৫৪ কোটি), যা প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের বাকি দিনগুলোতেও একই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে মোট রেমিট্যান্স ২.৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা, প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি—এসবই এই রেকর্ড প্রবাহে সহায়ক হয়েছে। চলতি বছর প্রাপ্ত পুরো রেমিট্যান্স এসেছে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে।
মাসভিত্তিক প্রবাহের চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে ৩৩০ কোটির বেশি ডলার এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ বলেন, ‘এটি শুধু সংখ্যাগত সাফল্য নয়, বরং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতিফলন। সঠিক নীতিমালা, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ব্যাংকিং অবকাঠামো এবং আইনগত পদক্ষেপ একত্রে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই অর্থপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ কমিয়েছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে বহুমুখী শ্রমবাজার, স্বচ্ছ অভিবাসন প্রক্রিয়া ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ২৮ জুন) মধ্যে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রেমিট্যান্সবান্ধব নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা ও সহযোগিতাই এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকা শক্তি।
২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা, প্রবাসীদের আস্থার জায়গা সুসংহত রাখা এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবেশ আরও সহজতর করা অপরিহার্য। রেমিট্যান্স এখন শুধু অর্থপ্রবাহ নয়, বরং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম কৌশলগত হাতিয়ার।
ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৫ – অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাজারভিত্তিক উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আইডিই বাংলাদেশ ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত “Catalyzing Markets: iDE Bangladesh Private Sector Engagement Summit 2025”-এ তাদের প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ২০২৫–২০৩০ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে।
সামিটে সরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, উন্নয়ন সহযোগী এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি খাতের ২০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই, এসএমসি, লাল তীর সিড লিমিটেড, এনআরবিসি ব্যাংক, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন, রহিম আফরোজ, ইসপাহানি এগ্রো, ব্র্যাক, গ্রামীণ ড্যানন ফুডস লিমিটেড। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক, এফসিডিও, ইউনিসেফ, জিআইজেড, ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালীয় ও ডেনিশ দূতাবাস-এর প্রতিনিধিরা।
সামিটে ১৪টি প্রাইভেট সেক্টর প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয় এবং একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয় যেখানে কৃষি, ওয়াশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পুষ্টি ও ফিনটেক খাতের উদ্ভাবনী সমাধান তুলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি ও চেয়ারপারসন, ব্র্যাক বলেন, “আইডিইর এই স্ট্র্যাটেজি একটি সময়োপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো তৈরি করবে।”
বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে ছিলেন:
উজমা চৌধুরী, পরিচালক (ফাইন্যান্স), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
মোহাম্মদ মোহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার, এসএমসি
কাজি মো. সাফায়েত কবির, সিনিয়র EVP, এনআরবিসি ব্যাংক
ইঞ্জিনিয়ার সাদিদ জামিল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড
নিতাই পদ সাহা, সিইও, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (RSF)
সামীর কার্কি, কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইডিই বাংলাদেশ বলেন, “এই স্ট্র্যাটেজি কেবল একটি নীতি-নির্ধারণী দলিল নয়; এটি একটি যৌথ ভিশন—যেখানে ব্যবসা ও উন্নয়ন একসাথে কাজ করে টেকসই সমাধান তৈরি করে যা সকলের জন্য কার্যকর বাজার গড়ে তোলে।”
এই নতুন কৌশলগত রোডম্যাপ আইডিইর চার দশকের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে গঠিত, যার লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে বৃহৎ কর্পোরেশন পর্যন্ত সকলের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজারব্যবস্থা তৈরি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনকারী অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর ৩ বছরপূর্তি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। ২০২২ সালের ২৬ জুনের এই দিনে বহু প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর এক মুহুর্তের জন্য সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। আর এই তিন বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫ শ’ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ টাকা।
পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের বিড়ম্বনা লাঘব করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক এখন। উত্তাল নদী পারপারের ভোগান্তি থেকে শুধু মুক্তিই দেয়নি এই সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণের আর্থ সামাজিক অবস্থাও। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও যুগান্তকারী পরিবর্তন। খুলে গেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সেতুর উপর তলায় সড়ক পথ ও আর নিচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন। রাতদিন দ্রত বেগে পদ্মার উপর দিয়ে চলছে ট্রেন ও সড়ক পথের যাত্রা। পদ্মা সেতুর ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও পরদিন ২৬ জুন এই দিনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। পরের বছর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধন হয়। পদ্মা সেতু হয়ে চালু হয় ঢাকা-ভাঙ্গা নতুন রেল নেটওয়ার্ক। আর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক প্রকল্প পুরোপুরি চালু হয়। এদিন রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে নতুন পথে নড়াইল ও যশোর অতিক্রম করে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টায় খুলনা ও বেনাপোল পৌছানো যাচ্ছে। তাই এখন দক্ষিণের মানুষ সড়ক ও ট্রেন পথের সুফল পাচ্ছে।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা খুঁটি ব্যবহার করে। সেতু উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেতুতে নির্মাণ করে রাখা গ্যাস লাইন ব্যবহারে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষিণের জনপদ, এখন অপেক্ষা এখন। তাই খুশি সবাই।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, কোন হেসেল ছাড়াই টানা দিন বছর সেতুতে নিরবিচ্ছিন্নভাবর যান পারাপার করা হয়। এটি একটি বড় মাইলফলক। পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্ম সচিব আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, দেশের এই অবকাঠামো যেমন মানুষের উপকারে লাগছে, আবার রাজস্ব আয়ও হচ্ছে। সেতু ব্যবহারে টোল আদায় আরও সহজ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই চলন্ত অবস্থায়ই টোল পরিশোধ করা যাবে।
স্বপ্নের সেতু চালুর তিন বছরে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে মাওয়া দিয়ে প্রবেশ করে ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ১১২টি যান। আর ৯৮ লাখ ৫৮০টি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতুতে প্রবেশ করে। মাওয়া থেকে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪শ’৬৮ বেশি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে।
গত ৫ জুন পদ্মা সেতুতে এক দিনে রেকর্ড পরিমান ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার টোল আদায় হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতুতে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় ও যানবাহন পারাপারের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর যান চলাচলের শুরুর দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজর ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল ইদুল ফতরের আগে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ' টাকা।
নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, সেতু চালুর প্রথম বছর ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় বছর ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি যানের বিপরীতে টোল পাওয়া যায় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা। আর তৃতীয় বছর ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৬১ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ টাকা। মূল পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ। তবে অ্যাপ্রোচসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেতু নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক আইন মেনে পদ্মা সেতুতে যানাবাহানের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেতু এবং দুই প্রান্তের সড়ক জুড়ে অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে যানবাহানের গতিও বৃদ্ধি করে দুই পারের এক্সপ্রেসওয়ের মতই ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতি করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার।
মন্তব্য