ইসরায়েলের নতুন জোট সরকারের সম্ভাব্য অংশ হতে যাচ্ছে ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল ‘ইউনাইটেড আরব লিস্ট’। ইসরায়েলি পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটাবে এই জোট। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় প্রথম আরব রাজনীতিক হিসেবে দেখা যাবে মনসুর আব্বাসকে।
কট্টর ইসলামি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের আদর্শে অনুপ্রাণিত ‘ইউনাইটেড আরব লিস্ট’ ক্ষমতায় যেতে কীভাবে ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছে, সে বিষয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে আরব নিউজ। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
কথায় আছে শাসন করা মানে বাছাই করা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ইসরায়েলের নতুন জোট সরকারের সম্ভাব্য অংশ হতে যাওয়া ‘ইউনাইটেড আরব লিস্ট’ নেতা মনসুর আব্বাসকে সামনের কয়েক মাসে কয়েকটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
আব্বাস গত বুধবার মধ্যপন্থি ইয়েশ আতিদ পার্টির ইয়াইর লাপিদ ও ডানপন্থি ইয়েমিনার নাফতালি বেনেটের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেন।
ইয়েমিনার মতো ইহুদি জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে একটি ইসলামি দলের যোগ দেয়ার খবরটি ফিলিস্তিন বা বৃহত্তর আরব বিশ্বের নজর এড়ায়নি।
এ ঘটনাকে জটিল মুহূর্তে মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া কোনো দলের কাছে আদর্শের চেয়ে ক্ষমতা ও স্বার্থকে উপরে স্থান দেয়ার আরেকটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হামদান আল শেহরি আরব নিউজকে বলেন, ‘খবরটা চমকপ্রদ না। ব্রাদারহুডের সহযোগী দলগুলো তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য সব সময়েই সব রকম পন্থা অবলম্বন করেছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘নিজ দেশের সরকার ছাড়া অন্য যে কারও সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগিতার দীর্ঘ নাটকের আরেকটি পর্ব হলো এই সমঝোতা।’
তবে স্বার্থসিদ্ধির এই ঘটনা কতদিন টেকে সেটাই এখন দেখার বিষয়। ইসরায়েলি পার্লামেন্ট কেনেসেটের অনুমোদন পেলে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটাবে এই জোট। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল গঠনের পর কোনো আরব পার্টির ইসরায়েলি সরকারের অংশ হওয়ার প্রথম ঘটনাও হবে এটি।
আব্বাস যদি মন্ত্রী হন তাহলে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় প্রথম আরব রাজনীতিক হবেন তিনি। ইহুদি-ইসরায়েলি ভোটার ও রাজনীতিবিদেরা এর আগে এ ধরনের অংশগ্রহণকে রাষ্ট্রের ইহুদি আদর্শের সঙ্গে আপসের বড় একটি পদক্ষেপ বলে গণ্য করেছেন।
নির্বাচনে জয়ের পর উত্তর ইসরায়েলের মাগহারে সমর্থকদের সঙ্গে ইউনাইটেড আরব লিস্ট নেতা মনসুর আব্বাসের উল্লাস
আরব রাজনীতিকরাও হয়ত কিছুটা নার্ভাস। কারণ তারা এমন একটা দেশের সরকারের অংশ হতে যাচ্ছেন, যেটির বৈধতা ও রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার অধিকারের বিষয়টি অধিকাংশ আরব দেশ ও মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত বিতর্কিত।
এই রাজনীতিকদের মধ্যে যেমন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির দ্রুজ সদস্যরা রয়েছেন, তেমনি আছেন সেকুলার হাদাশ কমিউনিস্টরা। একইভাবে আছেন দক্ষিণ ইসরায়েলের প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু বেদুইন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা, যাদের অনেকেই ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সে (আইডিএফ) স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।
এরপরই আছে আব্বাসের ইউনাইটেড আরব লিস্ট, যেটিকে হিব্রু ভাষায় সংক্ষেপে বলা হয় রাম। ইসরায়েলের ইসলামিক মুভমেন্টের একাংশ হচ্ছে ইউনাইটেড আরব লিস্ট যাকে মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী ধরা হয়।
অন্যদিকে, গাজা উপত্যকার পরিচালক ও পশ্চিম তীরে অত্যন্ত জনপ্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস তাদের বন্ধু ও উৎস হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুডের কথা গোপনের চেষ্টা খুব একটা করে না। আর ইউনাইটেড আরব লিস্টও এই মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্কিত। মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
২০১৫ সালে ইসরায়েল সরকার ইসলামিক মুভমেন্টকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সংগঠনের উত্তরাঞ্চলের উম আল ফাহম শহরের নেতা রায়েদ সালাহকে সহিংসতার জন্য বেশ কয়েকবার জেল খাটতে হয়েছে।
২০১৯ সালে কেনেসেটে নির্বাচিত মাঘার গ্রামের ডেন্টিস্ট আব্বাস তার চেয়ে কিছুটা নমনীয় স্বভাবের। প্রচলিত আছে যে, সংগঠনের দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যপন্থি অংশ থেকে তার আগমন, তবে তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মাইরাভ জনসজাইন আরব নিউজকে বলেন, ‘নাফতালি বেনেটের সঙ্গে মানসুর আব্বাসের কাজ করার সিদ্ধান্ত অবাক করার মতো নয়, কারণ তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে নেতানিয়াহুকে সহযোগিতা করে আসছিলেন।’
বেনেট সফটওয়্যার কোম্পানির মালিক হয়ে কোটিপতি বনে যাওয়ার আগে সায়েরাত মাটকাল ও মাগলানের মতো আইডিএফের স্পেশাল ফোর্সেস ইউনিটের হয়ে বহু যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর চার বছরের ক্ষমতাকালের প্রথম দুই বছর দায়িত্বে থাকবেন।
বেনেট-আব্বাসের জোট ‘জয়েন্ট লিস্ট অ্যালায়েন্স অফ আরব পার্টিস’ নিয়ে মন্তব্য করার সময় জোনসজাইন বলেন, ‘বামপন্থি ফিলিস্তিনি দলগুলোর চেয়ে ইহুদি ডানপন্থি দলগুলোর সঙ্গে আব্বাসের মিল বেশি।’
তিনি যোগ করেন, ‘এই জোট আসলে কেমন করবে সেটা এখন দেখার অপেক্ষা। এই জোটের সৃষ্টি ইসরায়েলি রাজনীতিতে বামপন্থি ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া ও নেতানিয়াহুর আধিপত্যের কারণে সৃষ্টি হওয়া অচলাবস্থার সংকেত দেয়।’
সত্যি কথা বলতে, ‘ইউনাইটেড আরব লিস্ট’ রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগাভাগির সুযোগ দেখে লাফিয়ে ওঠা প্রথম ইসলামপন্থি দল নয়। বহু ইসলামপন্থিই বলেছেন, গণতন্ত্র পশ্চিমাদের আবিষ্কার ও আল্লাহ প্রদত্ত আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। যদিও তাদের বাস্তব কার্যক্রমে এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ কম।
একেবারেই অবাক করার মতো বিষয় নয় যে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন ও সরকার ব্যবস্থায় ইসলামপন্থিদের অংশগ্রহণের ফল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
মুসলিম ব্রাদারহুডের নিজ ঘর মিশরে, ২০১১ সালের আরব বসন্তে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতনের পর নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তাবে দলের কিছু সিনিয়র নেতা বেঁকে বসেন।
ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (এফজেপি) সাহায্যে নির্বাচিত হওয়ার পর মুহাম্মদ মুরসির সরকারে তারা একটি বিক্ষুব্ধ সময় কাটান। যা তাদেরকে মোবারকবিরোধী আন্দোলন শুরু করা শিক্ষিত তরুণদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। নারী ও দেশের খ্রিষ্টান সংখ্যালঘুদের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়।
এই সংগঠনের গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতাকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে পারেননি সমালোচকেরা। তাদের কাছে মুরসির সরকার গঠনের সিদ্ধান্তকে মনে হয়েছে এক ধরনের নৈরাশ্যবাদী ক্ষমতার লোভ।
তিউনিশিয়ায় ২০১১ সালে বেন আলি সরকারের পতনের পর কার্যকর সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সমঝোতার সঙ্গে একটি ইসরায়েলবিরোধী, জাতীয়তাবাদবিরোধী, প্যান-ইসলামিক ইসলামপন্থি বৈশ্বিক দর্শনের পুনর্মিলন ঘটাতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে দেশটির সংসদের স্পিকার রাশেদ ঘানুশিকে।
মুসলিম ব্রাদারহুডের কিছু নেতা ব্রিটেনে থাকেন। দেশটির সিনিয়র সরকারি কর্মচারী ও কূটনীতিকেরা আন্তর্জাতিক ইসলামিক নেটওয়ার্কের পর্যালোচনায় এর অংশ বিশেষে ‘সহিংস চরমপন্থার সঙ্গে এক দ্ব্যর্থবোধক সম্পর্ক’ খুঁজে পেয়েছেন।
তুরস্কেও কয়েকজন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতার বাস। দেশটির সরকার প্রধান রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান, যার রাজনৈতিক দল একেপিকে ধরা হয় নিও-অটোমান, তিনি কট্টর জাতীয়বাদীদের সঙ্গে রাজনৈতিক সখ্য গড়ে তুলেছেন।
নেতানিয়াহুকে হটিয়ে ইসরায়েলের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে বিরোধীদের একমঞ্চে আনতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন ইয়েশ আতিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিদ (উপরে বাঁয়ে)। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলে সরকারের অংশ হয়ে আব্বাস ঠিক কী পাচ্ছেন সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। গত মাসে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের পর তাকে সাবধানে হিসাব করতে হবে।
১০ মে থেকে টানা ১২দিন হামাসের সহযোদ্ধারা আইডিএফের সঙ্গে মিসাইল ও গুলি বিনিময় করে। সংঘর্ষে প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন যাদের অধিকাংশই শিশু ও নারী। হামাসের রকেট হামলায় মারা যান অন্তত ১২ জন ইসরায়েলি নাগরিক।
সংঘর্ষ চলাকালীন ইসরায়েলের মিশ্র বসতির শহর জাফা, লোদ, হাইফা, আক্রে ও নাজারেথে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও দালান-কোঠায় ভাংচুর সামলাতে ইসরায়েলি বর্ডার পুলিশের ব্যাটালিয়নগুলোকে দ্রুত দেশের মধ্যে নিয়ে আসা হয়।
ইসরায়েলে বসবাসরত ফিলিস্তিনের মধ্যে বেকারত্বের হার উচ্চ, যেটাকে তারা বৈষম্য হিসেবেই দেখে। মোট জনসংখ্যার ২১ ভাগ হওয়ার পরও তারা ইসরায়েলি ইহুদিদের চেয়ে কম শিক্ষিত ও ধনী। তবে পশ্চিম তীর, গাজা ও আরব বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের চেয়ে তাদের জীবনমান উন্নত।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি জনগণ, ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের কাছে সরকারে আব্বাসের অন্তর্ভুক্তি বাস্তবিক ও প্রতীকী ভাবে কী পরিবর্তন আনবে?
আইসিজির বিশ্লেষক জোনসজাইন এই বিষয়ে আরব নিউজকে বলেন, ‘একদিকে যেমন ফিলিস্তিনি একটি দলের জোটের অংশ হওয়া ট্যাবুগুলো ভাঙছে ও ভবিষ্যতের জন্য উদাহরণ তৈরি করছে; তেমনি অন্যদিকে, এটাও বিশ্বাস করার কারণ নেই যে, এতে করে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক ও ধ্বংসাত্মক রাষ্ট্রীয় নীতিতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসবে।’
আরও পড়ুন:চলতি ২০২৫ সালের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন অর্থনীতিবিদ—জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। উদ্ভাবন নির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাখ্যা করার জন্য তারা এ পুরস্কার পেয়েছেন।
এই তিন অর্থনীতিবিদের মধ্যে অর্ধেক পুরস্কার পেয়েছেন জোয়েল মোকির। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্তগুলো শনাক্ত করার জন্য তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। ‘সৃজনশীল বিনাশ’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব দেওয়ার জন্য বাকি অর্ধেক পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট। রয়টার্সের তথ্যানুসারে, এই পুরস্কারের মূল্যমান ১২ লাখ ডলার।
বিবৃতিতে নোবেল কমিটি বলেছে, নোবেলজয়ীরা আমাদের শিখিয়েছেন—সব সময় প্রবৃদ্ধি হবে, এটা কখনোই নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায় না। মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রবৃদ্ধি নয়, বরং স্থবিরতাই ছিল স্বাভাবিক অবস্থা। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সম্ভাব্য হুমকিগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবিলা করতে হবে।
ঐতিহাসিক উপাত্ত ও দলিল ব্যবহার করে মোকির দেখিয়েছেন, কীভাবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উদ্ভাবন একসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নিয়মিত বিষয়ে পরিণত করেছে। অন্যদিকে আগিয়োঁ ও হাউইট সেই প্রবৃদ্ধির অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন। ১৯৯২ সালের এক প্রবন্ধে তারা গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন, যখন নতুন ও উন্নত কোনো পণ্য বাজারে আসে, তখন পুরোনো পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে টিকে থাকতে পারে না। এই প্রক্রিয়াই অর্থনীতিতে ‘সৃজনশীল বিনাশ’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ পুরোনো ব্যবস্থার ভেতর থেকেই নতুন উদ্ভাবন হয়।
পুরস্কারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে, গত দুই শতকের ইতিহাসে তা প্রথম দেখা গেছে। এর ধারাবাহিকতায় কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে। সেই মানুষেরাই আজকের সমৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী জোয়েল মোকির, ফিলিপ আগিয়োঁ ও পিটার হাউইট দেখিয়েছেন, উদ্ভাবনই ভবিষ্যৎ অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি। তাদের গবেষণা মনে করিয়ে দেয়—অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয় বা নিশ্চিত প্রক্রিয়া নয়।
অর্থনীতির এই পুরস্কার মূল নোবেল পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত নয়। ১৯৬৯ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে এই পুরস্কার চালু করে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৭ জন এই পুরস্কার পেয়েছেন। আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অর্থনীতিতে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরস্কার—এটাই এই পুরস্কারের কেতাবি নাম।
সবচেয়ে বেশি বয়সে এই পুরস্কার পেয়েছেন লিওনিড হারউইচ। ২০০৭ সালে এই পুরস্কার পাওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৯০ বছর। তিনি আরও দুজনের সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। সবচেয়ে কম বয়সে (৪৬) এই পুরস্কার পেয়েছেন এস্থার দুফলো। ২০১৯ সালে স্বামী অভিজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পান তিনি।
এবারের বিজয়ীদের পরিচয়
জোয়েল মকিয়র যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। তিনি পুরস্কারের অর্ধেক ভাগ পেয়েছেন। অন্য অর্ধেক ভাগ ভাগাভাগি করেছেন ফিলিপ আজিওন ও পিটার হাওয়িট।
আজিওন বর্তমানে প্যারিসের কোলেজ দ্য ফ্রঁস ও ইনসিয়াড এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিকাল সায়েন্সে অধ্যাপনা করছেন। হাওয়িট যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।
নোবেল কমিটির সদস্য জন হ্যাসলার বলেন, ‘জোয়েল মকিয়র ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর নির্ভরশীল টেকসই প্রবৃদ্ধির উপাদানগুলো চিহ্নিত করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিপ আজিওন ও পিটার হাওয়িট ‘ক্রিয়েটিভ ডেস্ট্রাকশন’-এর একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করেছেন — এটি এমন এক অন্তহীন প্রক্রিয়া যেখানে নতুন ও উন্নত পণ্য পুরনোকে প্রতিস্থাপন করে।’
গাজা শান্তি চুক্তি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তৃতা দেওয়ার সময় ইসরায়েলি পার্লামেন্টে হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছে। একজন আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের দিকে চিৎকার করে ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন’ স্লোগান দেন। শুধু তাই নয়, তিনি ট্রাম্পকে ‘সন্ত্রাসী’ বলেও বর্ণনা করেন।
গতকাল সোমবার বিরল এই ঘটনার পর দুই এমপিকে পার্লামেন্ট থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়।
জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্প তার ভাষণের সময় যখন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের প্রশংসা করছিলেন, তখন হাদাশ পার্টির প্রধান আয়মান ওদেহ এবং দলের একজন সদস্য ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন’ লেখা প্ল্যাকার্ড ধরে রাখেন।
পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়ার জবাবে ওদেহ বলেছেন, তিনি সবচেয়ে মৌলিক দাবি উত্থাপন করেছেন। এটি এমন একটি দাবি, যার সঙ্গে সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একমত: একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া।
নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা এই হট্টগোলের জন্য ট্রাম্পের কাছে তাৎক্ষণিক ক্ষমা চেয়েছেন। ওহানা বলেন, ‘এর জন্য দুঃখিত, মি. প্রেসিডেন্ট।’
ইসরায়েলি এমপি এবং আরেক সদস্যকে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা যখন বের করে দিচ্ছিলেন, তখন ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, কর্মকর্তারা ‘খুবই দক্ষ’। এটি শুনে অন্যান্য সংসদ সদস্যরা হেসে ওঠেন।
এদিকে, পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়া আগে নিজের বক্তৃতায় ওদেহ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে বলেন, ‘নেসেটে ভণ্ডামির মাত্রা অসহনীয়।’
তিনি বলেন, নজিরবিহীন তোষামোদের মাধ্যমে নেতানিয়াহুকে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করলেই তাকে বা তার সরকারকে গাজায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। এমনকি লাখ লাখ ফিলিস্তিনি এবং হাজার হাজার ইসরায়েলি নিহতদের রক্তপাতের দায় থেকেও মুক্তি দেওয়া যাবে না।
জেন-জি নেতৃত্বাধীন রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। গতকাল সোমবার বিভিন্ন সূত্রের বরাতে রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি র্যান্ড্রিয়ানাসোলোনিয়িকো রয়টার্সকে জানান, সেনাবাহিনীর কিছু ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর রোববার রাজোয়েলিনা মাদাগাস্কার ত্যাগ করেন।
সিতেনি বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্সির কর্মীদের ফোন করেছিলাম। তারা নিশ্চিত করেছে, তিনি দেশ ছেড়ে গেছেন।’
এর আগে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছিল, রাজোয়েলিনা গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তবে তার বর্তমান অবস্থান অজানা।
একটি সামরিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাজোয়েলিনা রোববার একটি ফরাসি সামরিক বিমানে দেশত্যাগ করেছেন।
ফরাসি রেডিও আরএফআই জানিয়েছে, রাজোয়েলিনা প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, মাদাগাস্কারের সেন্ট মেরি বিমানবন্দরে একটি ফরাসি সেনাবাহিনীর বিমান অবতরণ করেছিল। এর পাঁচ মিনিট পরে একটি হেলিকপ্টার এসে রাজোয়েলিনাকে সেটিতে স্থানান্তর করে।
সাবেক ফরাসি উপনিবেশ দেশটিতে ২৫ সেপ্টেম্বর পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। কিন্তু দ্রুতই তা দুর্নীতি, খারাপ শাসন এবং মৌলিক পরিষেবার অভাবসহ বিস্তৃত অভিযোগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পরিণত হয়।
নেপালে গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে জেন-জি নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৫ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি বন্দীকে এখনো খুঁজছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম খবরহাব এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৫ হাজার ৫৪৭ জন পলাতক এখনো পলাতক। পুলিশ ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৯ হাজার ৮ জন বন্দীকে আটক করেছে।
মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, বাকি পলাতকদের সন্ধান তীব্র গতিতে চলছে। মন্ত্রণালয় পলাতকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছে।
এর আগে মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, অস্থিরতার সময় প্রায় ১ হাজার নাবালকসহ ১৪ হাজারেরও বেশি বন্দি কারাগার থেকে পালিয়ে যায়।
কাঠমান্ডু পোস্ট উল্লেখ করেছে, পলাতকদের মধ্যে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ এবং মানব পাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। তাদের খুঁজে বের করে আটক করার জন্য সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছিলেন, পলাতকরা জননিরাপত্তার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি। তারা অপরাধমূলক গ্রুপ গঠন করতে পারে। বিশৃঙ্খলার সময় অফিস এবং ব্যারাক থেকে ১২০০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্রায় ১ লাখ রাউন্ড গুলি চুরি করা হয়েছিল।
সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে কাঠমান্ডু এবং নেপালের অন্যান্য শহরে দুর্নীতি ও সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর নেতৃত্বে মূলত জেনারেশন-জেড ছাত্র এবং কর্মীরা ছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রসিকিউটরের অফিসসহ সরকারি ভবনগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাদের বাড়িতে হামলা করে। দেশজুড়ে সহিংসতায় ৭০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায় এবং ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়।
১২ সেপ্টেম্বর নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নিযুক্ত করা হয়। তিনি নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে শীর্ষ এই পদে অধিষ্ঠিত হন।
কার্কি বলেছেন, বর্তমান সরকার ছয় মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকবে না। ২০২৬ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বন্দি থাকা জীবিত বাকি ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির হাতে তুলে দিয়েছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। সোমবার সকাল আটটার পর বন্দি মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এলাকা থেকে এসব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই রেডক্রসের গাড়িগুলো তাদের সংগ্রহ করে গাজায় অবস্থানরত ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে তুলে দেবে। এদিন মুক্তি পাওয়া বন্দিদের দ্বিতীয় দল তারা।
বন্দিদের দ্বিতীয় এই দলটিকে হামাস রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে।
এর আগে, এদিন সকালে প্রথম ৭ ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেয় হামাস। মুক্তি পাওয়া ওই ইসরায়েলিদের গাজার সীমান্ত পার করে নিজ দেশে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ইসরায়েলের এক সামরিক ঘাঁটিতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার করা হয়।
এরপর গাজায় হামাসের বন্দিশালায় ৭৩৮ দিন কাটানোর পর ইসরায়েলে ফেরা এসব বন্দিরা নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হবেন। নতুন মুক্তি পাওয়া ১৩ বন্দিকেও একই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আরও ৪৮ বন্দির মৃতদেহ আছে হামাসের কাছে। সেগুলোও আজকের মধ্যেই রেডক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
জিম্মি মুক্তির খবরে তেলআবিবে উচ্ছ্বাস-অশ্রু
এদিকে জিম্মি মুক্তির খবরে তেলআবিবে জড়ো হওয়া মানুষের মধ্যে অশ্রুসজল উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আনন্দের পাশাপাশি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অনেকে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সাত জিম্মি কিছুক্ষণ আগে সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছেন। তারা এখন প্রাথমিক অভ্যর্থনা কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছেন।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ওই কেন্দ্রেই তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিত হবেন। ওদিকে ‘দ্য হোস্টেজ ও মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ওয়েলকাম হোম’ পোস্ট করে মুক্তি পাওয়াদের স্বাগত জানিয়েছে। এ সংগঠনটি জিম্মি মুক্তির দাবিতে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে আসছিল।
আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি। শেষ জিম্মির অবস্থান শনাক্ত ও যথাযথ দাফনের জন্য ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত এই সংগ্রাম শেষ হবে না। এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, বলেছে সংগঠনটি।
জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)-এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি রোববার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরাঘচি বলেন, ‘আমরা আইএইএ-এর সঙ্গে পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করেছি। জাতিসংঘ যদি এমন কোনো প্রস্তাব দেয়, যা ইরানের অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হয়— আমরা আবার চুক্তিতে ফিরে যাব।’
ইরান ১৯৬৮ সালে আইএইএ’র সঙ্গে নন-প্রোলিফারেশন অ্যাক্ট (এনপিটি) চুক্তি করে। তখন ইরানের রাজা রেজা পাহলভী দেশটির রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ছিলেন। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরান প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা কখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে না এবং আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা করবে।
গত জুনে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের পর আইএইএ’র সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। ৬ জুন আইএইএ এক বিবৃতিতে জানায়, ইরানের কাছে বর্তমানে ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত আছে, যার বিশুদ্ধতা ৬০ শতাংশ। বিশুদ্ধতার মান ৯০ শতাংশে উন্নীত করা গেলে তা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরি সম্ভব।
আইএইএ’র ওই বিবৃতির এক সপ্তাহ পর ১২ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানে বিমান অভিযান ‘দ্য রাইজিং লায়ন’ শুরু করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এ অভিযান চালানো হয়েছে।
১২ দিনব্যাপী সংঘাতে ইরানের সেনাপ্রধান, সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও অন্তত ১২ জন জ্যেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোরও। তবে এখনো সেই ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের কোনো হদিস মেলেনি বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
সংঘাত শেষে আইএইএ তেহরান সফরের আগ্রহ জানালেও ইরান জানায়, সংলাপের জন্য তারা প্রস্তুত, তবে পরমাণু স্থাপনা দেখানোর বাধ্যবাধকতা তাদের নেই।
এরপর সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আব্বাস আরাঘচি। কিন্তু জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় সেই বৈঠক ব্যর্থ হয়। পরে জাতিসংঘ ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
রোববারের সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ফের আলোচনায় বসা হবে কি না— জানতে চাইলে আরাঘচি বলেন, ‘আমরা তার প্রয়োজন দেখছি না। ইউরোপের সঙ্গে বৈঠকের আর কোনো ভিত্তি নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যে কয়েকটি যুদ্ধ থামিয়ে ‘লাখ লাখ জীবন’ বাঁচিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি ‘নোবেলের জন্য নয়’ বরং ‘জীবন বাঁচানোর জন্য’ করেছেন।
রোববার হোয়াইট হাউস প্রকাশিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ট্রাম্পের কথোপকথনের এক ফুটেজে প্রেসিডেন্টকে এ কথা বলতে শোনা যায়।
ট্রাম্প বলেন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক সংঘাতের সমাধান করতে পারবেন বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি শুনেছি পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে এখন একটি যুদ্ধ চলছে। আপনি জানেন, আমি আরেকটি যুদ্ধ বন্ধ করছি... কারণ আমি যুদ্ধ সমাধানে পারদর্শী।’
এর আগে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সেনারা পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে জড়ায়। আফগানিস্তানের টোলো নিউজ জানিয়েছে, লড়াইয়ে কমপক্ষে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের জিও টিভি জানিয়েছে, সংঘর্ষে কয়েক ডজন আফগান সেনা প্রাণ হারিয়েছে।
মন্তব্য