বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের বিনিয়োগে মানি লন্ডারিং আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্ত কমিটি। মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা লঙ্ঘন করে জনগণের অর্থ রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি ও প্রতারণার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি বিডিনিউজে বিনিয়োগ করা ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থ দ্রুত ফেরত আনার সুপারিশ করেছে বিএসইসির তদন্ত কমিটি। তারা বলছে, আর্থিকভাবে ধুঁকতে থাকা বিডিনিউজের শেয়ারের দাম মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এটি পুরোপুরি উদ্দেশ্যমূলক। এমন অবস্থায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনায় থাকা আর নিরাপদ নয়।
আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা বদল হয় ২০০৬ সালে। প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেন এডিএন টেলিকমের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ মাহমুদ। ২০১৯ সালের মে মাসে আসিফ মাহমুদ নিজের হাতে থাকা ৮০ হাজার শেয়ার ৮০ লাখ টাকায় (প্রতি শেয়ারের দাম ১০০ টাকা) তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কাছে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠান থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে আগের ২০ হাজার শেয়ারসহ মোট ১ লাখ শেয়ারের পুরোটার মালিকানা চলে যায় তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কাছে।
এর মাত্র তিন মাসের মধ্যে তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার নামে থাকা কোম্পানির ২০ হাজার শেয়ার ২৫ কোটি টাকায় এবং আরও ২০ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু করে ২৫ কোটি টাকায় এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা (সিআইও) রিয়াজ ইসলামের কাছে বিক্রি করেন। তিন মাস আগের হিসাবে শেয়ারপ্রতি ১০০ টাকা হিসেবে ৪০ হাজার শেয়ারের দাম ৪০ লাখ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো বিক্রি হয়েছে ৫০ কোটি টাকায়। এ ক্ষেত্রে ১২ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকায়।
এ বিষয়ে গত বছরের শেষ দিকে বিএসইসির একটি তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। বিএসইসির তিনজন উপপরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হক, মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান ও এএসএম মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে গঠিত এ তদন্ত কমিটি বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয় ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর।
যেভাবে ব্যাপক অনিয়ম
বিএসইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিডিনিউজের ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন আসিফ মাহমুদ, বাকি ২০ শতাংশ ছিল তৌফিক ইমরোজ খালিদীর। প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত লোকসানে থাকায় একপর্যায়ে আসিফ মাহমুদ তার তার পুরো শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
এ সময় ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলমকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পদ মূল্যায়ন করে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। দিদারুল আলম তখন সম্পদ মূল্যায়নের একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে পাঠান, যেখানে কোনো চুক্তি, মূল্যায়ন ফি এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তের স্বাক্ষর ছিল না।
তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে দিদারুলকে উদ্ধৃত করা বলা হয়, কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তির আগে সম্পদ মূল্যায়নের এ ধরনের খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করা খুব সাধারণ একটি ঘটনা। বিডিনিউজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ‘সরল বিশ্বাসে’ এ ধরনেরই একটি খসড়া পাঠানো হয়েছিল। কোনো ধরনের স্বাক্ষর ছাড়া পাঠানো ওই খসড়াটির উদ্দেশ্য ছিল, বিডিনিউজের সঙ্গে সম্পদ মূল্যায়নের আনুষ্ঠানিক চুক্তি করা। কিন্তু তৌফিক ইমরোজ খালিদী সেই খসড়া দেখিয়েই এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামের কাছে ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ বেশি দামে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন।
প্রতিষ্ঠানে বেতন নেই, শেয়ার বিক্রি ৫০ কোটি টাকায়
বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ২০১৯ সালের ২২ মে আসিফ মাহমুদের কাছে থাকা ৮০ হাজার শেয়ার ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৮০ লাখ টাকায় কিনে নেন।
বিএসইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র-অভিবাসী রিয়াজ ইসলাম সেখানেই পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তিনি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা। রিয়াজ ইসলাম ২০১৯ সালে ১০ সেপ্টেম্বর তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বাসায় যান। সেখানে বিডিনিউজে রিয়াজের বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
পরে রিয়াজ ইসলাম ৫০ কোটি টাকায় ৪০ হাজার শেয়ার কেনেন। যেখানে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ছিল ২০ হাজার শেয়ার এবং নতুন ইস্যু করা হয় আরও ২০ হাজার শেয়ার। এ-সংক্রান্ত খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ‘নিজস্ব তহবিল’ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের খবরে ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর জরুরিভিত্তিতে বিএসইসির ৭০০তম কমিশন সভা আহ্বান করা হয়। সেই সভা থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশকে বিনিয়োগ-সম্পর্কিত সমস্ত দলিল উপস্থাপন করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন বিএসইসিকে একটি চিঠি দিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সম্পদের সঙ্গে সংগতিহীন বিপুল আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তথ্য জানতে চায়। বিএসইসি এরপর দুদকে পাঠানো চিঠিতে জানায়, বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এলআর গ্লোবাল এর আগেও ২০১৪ সালে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে ৪৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা বিধিবহির্ভূতভাবে বিনিয়োগ করে। বিষয়টি নিয়ে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনের ৫৩৯তম সভায় আলোচনার পর এলআর গ্লোবালকে জরিমানা করা হয়। এলআর গ্লোবাল জরিমানার ১৫ শতাংশ পরিশোধের পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিট করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বিডিনিউজে বিনিয়োগে অনিয়েমর বিষয়টি তদন্তে স্বশরীরে অনুসন্ধানও চালিয়েছেন বিএসইসির তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এলআর গ্লোবাল ও বিডিনিউজের কার্যালয়েও তারা পরিদর্শন করেন। তবে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় রিয়াজ ইসলাম ও তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কাউকেই পাওয়া যায়নি।
এই দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়। পাশাপাশি রিয়াজ ও খালিদীকে জবাব দিতে লিখিত প্রশ্ন দিয়ে আসে তদন্ত কমিটি। সেসব প্রশ্নের লিখিত জবাব, জব্দ করা নথি পরে বিশ্লেষণ করে এই কমিটি।
উদ্দেশ্য মানি লন্ডারিং
বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগ করা ৫০ কোটি টাকার প্রায় পুরোটাই এসেছে তাদের নিয়ন্ত্রিত ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পাবলিক মানি এভাবে বিনিয়োগের মাধ্যমে সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১-এর ৫৬ বিধির পরিষ্কার লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
১০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের নিজস্ব বিনিয়োগ মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ৪৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে। প্রতিবেদনে ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ বেশি দামে কোন প্রতিষ্ঠান কতটি শেয়ার কিনেছে, তার বিবরণও দেয়া হয়েছে।
এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ৮০০ শেয়ার কিনেছে ১ কোটি টাকায়। ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৫ হাজার ১৬৬টি শেয়ার কিনেছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। গ্রিনডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৬ হাজার ৪১৪টি শেয়ার কিনেছে ৮ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়।
এ ছাড়া, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪ হাজার ৩৪৮টি শেয়ার কিনেছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এমবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪ হাজার ৩৯৬টি শেয়ার কিনেছে ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ১৪ হাজার ৯৮টি শেয়ার কিনেছে ১৭ কোটি ৬২ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। এনসিসিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড-ওয়ান ৪ হাজার ৭৭৮টি শেয়ার কিনেছে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকায়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বিডিনিউজকে একটি ‘রুগ্ন প্রতিষ্ঠান’ আখ্যায়িত করে বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালে থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর দেড় থেকে আড়াই কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের বেতন অনিয়মিত। অথচ এমন একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে তিন মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের সঙ্গে ১২ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়াম যুক্ত হওয়া অস্বাভাবিক।
এতে বলা হয়, রিয়াজ ইসলাম অবশ্যই জানতেন যে তার বন্ধু আসিফ মাহমুদ বিডিনিউজের প্রতিটি শেয়ার ১০০ টাকা দরে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কাছে বিক্রি করেছেন। তারপরেও এলআর গ্লোবাল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা ‘অদক্ষতা ও প্রতারণার মাধ্যমে’ স্থানান্তর করেছে, যা শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণা। মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে এটি করা করা হয়ে থাকতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, সম্পদ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে কী আছে সেটি এখানে বড় বিবেচনার বিষয় নয়, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য হলো, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থ এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানে (পুঁজিবাজারে অ-তালিকাভুক্ত) বিনিয়োগ করা যায় কিনা? মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থের প্রকৃত মালিক এর বিনিয়োগকারীরা। এই অর্থের মালিক এলআর গ্লোবাল নয়।
অনুসন্ধানের সময়ে বিডিনিউজের পাশাপাশি রংপুর ডিস্ট্রিলারিতেও একই ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে এলআর গ্লোবালের ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রমাণ পায় বিএসইসির তদন্ত কমিটি। রংপুর ডিস্টিলারির ৮০ লাখ শেয়ার তারা কিনেছে ১২.৫০ টাকা দরে। বিএসইসির তদন্ত কমিটি বলেছে, এই অনিয়মের পুরো দায় এলআর গ্লোবালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) রোনাল্ড ম্যাকি গোমেজ, হেড অফ লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্ল্যায়েন্স মনোয়ার হোসেনসহ বিনিয়োগ কমিটির সব সদস্যের।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ
বিডিনিউজের মতো রুগ্ন ও লোকসানি প্রতিষ্ঠানে বিপুল বিনিয়োগে ক্ষুব্ধ ও শঙ্কায় এলআর গ্লোবালের নিয়ন্ত্রণাধীন ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা।
বিএসইসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিনিয়োগটি ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থবিরোধী। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা বিডিনিউজের এই বিনিয়োগ থেকে সামনের বছরগুলোতে কোনো ধরনের লভ্যাংশ ফেরত পাবেন না। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের বিডিনিউজের সম্পদের বিপরীতে শেয়ারপ্রতি মূল্যে ২০১৯ সালে লোকসান ছিল ৪৪১ টাকা ৪ পয়সা। ২০১৮ সালে লোকসান ছিল ২৫০ টাকা এবং ২০১৭ সালে ছিল লাভ ছিল ৯ টাকা ১২ পয়সা।
অথচ এমন একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য এলআর গ্লোবাল ২২ মে ২০১৯ থেকে ১ আগস্ট ২০১৯ সময়ে শেয়ার প্রতি মূল্য বাড়িয়েছে ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ।
বিডিনিউজে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এলআর গ্লোবাল সম্পূর্ণ অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ‘খারাপ উদ্দেশ্যে’ এ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগের ঘোষণার আগে ২০১৯ সালের ১ আগস্ট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান রিয়াজ ইসলাম ও মনোয়ার হোসেন।
বিডিনিউজে বিনিয়োগ নিয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষোভ ও উদ্বেগও তুলে ধরা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ভিআইপিবি অ্যাস্টেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বলেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য তারা এলআর গ্লোবালকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে তদন্ত কমিটিকে। তারা বলেছে, এই বিনিয়োগটি অনেক উচ্চ মূল্যে করা হয়েছে এবং এটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড নীতিমালার লঙ্ঘন। অন্যদিকে, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফিন্যান্স করপোরেশন লিমিটেড বলেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, একইসঙ্গে তাদের ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি একটি ‘সন্দেহজনক’ বিনিয়োগ।
কড়া পদক্ষেপের সুপারিশ
বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের তদন্ত শেষে চারটি সুপারিশ করেছে বিএসইসির কমিটি। তারা বলেছে, বিডিনিউজ ও রংপুর ডিস্টিলারিতে বিনিয়োগ করায় এলআর গ্লোবালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) রোনাল্ড ম্যাকি গোমেজ, হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্ল্যায়েন্স মনোয়ার হোসেনসহ বিনিয়াগ-সম্পর্কিত কমিটির সবাইকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত।
বিডিনিউজ ও রংপুর ডিস্টিলারিতে করা বিনিয়োগের অর্থ ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ফেরত আনার সুপারিশও করা হয়েছে। এ ছাড়া, তদন্ত কমিটি বলেছে, বিডিনিউজ ও রংপুর ডিস্টিলারি থেকে বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনার সব খরচ এলআর গ্লোবালকে বহন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তহবিল থেকে কোনো খরচ করা যাবে না।
তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা এলআর গ্লোবালের বতর্মান ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে রাখা নিরাপদ নয়। এজন্য সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ এর ৫১ বিধি অনুযায়ী ফান্ডটিকে তারল্যে রূপান্তর করা যেতে পারে অথবা শেয়ারহোল্ডারদের চাহিদার ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ এর ৩১ বিধি অনুযায়ী সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি পরিবর্তন করা যেতে পারে।
বিদেশি অংশীদারদেরও প্রতারিত করেছে এলআর গ্লোবাল
তৌফিক ইমরোজের হাতে জনগণের অর্থ তুলে দেয়া রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলছে তার বিদেশি অংশীদাররাও। বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় রিয়াজ ইসলামের নামে থাকা সব শেয়ার কিনে নেয়ার আগ্রহ দেখিয়ে এ বিষয়ে বিদেশি অংশীদাররা বিএসইসির অনুমতি চেয়েছে।
এলআর গ্লোবালের অংশীদার গ্যাভিন উইলসন গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসিকে পাঠানো এক চিঠিতে রিয়াজ ইসলামের প্রতারণা ও অনিয়মের নানা তথ্য তুলে ধরে প্রতিকার চান। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে এলআর গ্লোবাল কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং এর আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বহু বছর ধরে তারা অবগত নন।
আরও পড়ুন: বিডিনিউজ থেকে ফেরত যাচ্ছে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগ: বিএসইসি চেয়ারম্যান
গ্যাভিন উইলসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এলআর গ্লোবালের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশের অংশীদার নিউইয়র্কভিত্তিক এলআর ম্যানেজারস ইনভেস্টমেন্টস। বাকি ৫২ দশমিক ৩ শতাংশের অংশীদার রিয়াজ ইসলাম। তবে রিয়াজ তাদের সঙ্গে সব ধরনের তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
গ্যাভি উইলসন লিখেছেন, ‘গত আট বছরে কোম্পানির অংশীদার এবং ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশের মালিক হওয়া সত্ত্বেও ডিভিডেন্ড হিসেবে আমাদের একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। যদিও তারা প্রতিবছর ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে।’
বিদেশি এই অংশীদার আরও বলেন, ‘এ ছাড়া আমরা বুঝতে পারছি যে, রিয়াজ ইসলাম তার বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোম্পানির বেতন-ভাতা, বোনাস এবং বিভিন্ন খরচ নিয়মিত গ্রহণ করছেন।’
সংশ্লিষ্টরা এবং কর্তৃপক্ষ যা বলছে
বিএসইসির তদন্তের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক ও মালিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর দুটি ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
অন্যদিকে, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশে যোগোযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রিয়াজ ইসলাম এখন দেশে নেই। ফলে দেশে থাকাকালীন তিনি যে নম্বর ব্যবহার করতে সেটি বন্ধ আছে। ’
বিদেশি নম্বরটি দেয়ার অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, ‘এটি আমি করতে পারব না।’
বিষয়টি নিয়ে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) রোনাল্ড ম্যাকি গোমেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে মনোয়ার সাহেব এ বিষয়ে বলতে পারবেন।’
যোগাযোগ করা হলে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অফ লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্ল্যায়েন্স মনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিডিনিউজে বিনিয়োগের সংবাদ প্রকাশের পর বিএসইসি আমাদের কাছে যত ধরনের কাগজপত্র চেয়েছে আমরা সব সরবরাহ করেছি। তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছে, তবে তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে কিনা সেটি আমরা এখনও জানি না। ’
তিনি বলেন, ‘তদন্তে রিপোর্টে বোর্ড পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিয়ে থাকলেও সেটি নিশ্চয় আমাদেরকে জানানো হবে। জানানো হলে পরবর্তীতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটি সম্পর্কে বলা যাবে। ’
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তিন চার বছর আগের। আমাদের আগের কমিশন একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। আমাদের সময়ে এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।’
তদন্ত প্রতিবেদনে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে কমিশনের পদক্ষেপ কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত নেয়া, জরিমানা করা ইত্যাদি। তারা ইতোমধ্যে জরিমানার টাকা প্রদান করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু মামলা ছিল সেগুলোরও সমাধান হচ্ছে এবং বিডিনিউজের কাছ থেকে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
এলআর গ্লোবালে যেসব বিনিয়োগকারী ছিল তাদের সুরক্ষার বিষয়টি জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা খবর নিয়ে দেখেছি এখন কোনো বিনিয়োগকারী নেই। তারা তাদের ইউনিট বিক্রি করে চলে গেছে।’
সম্প্রতি একজন বিদেশি ফান্ডের মালিকানা দাবি করে যে চিঠি দিয়েছেন সে বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটি নিয়েও আমরা কাজ করছি। আমরা তাকে বলেছি উনার কাছে কী কী কাগজপত্র আছে সেগুলো আমাদের কাছে জমা দিতে। আর মালিকানার বিষয়টি আমাদের নয়, এটি জয়েন্ট স্টকের বিষয়।’
আগামী মাসে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব পাবে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
ওই সূত্র বার্তা সংস্থাটিকে জানায়, শেখ তামিমের সফরে জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় উভয় দেশ।
কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ডজনখানেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে সূত্রটি বলেছে, সফরকালে এসব এমওইউ ও চুক্তি সই করা হবে।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের আমিরের দুই দিনের সফরটি হতে পারে আগামী ২১ থেকে ২২ এপ্রিল।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমিরের বৈঠকের পর যেসব এমওইউ ও চুক্তি সই হবে, সেগুলো নিয়ে দুই পক্ষ এখন কাজ করছে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের সম্মেলন এলডিসি-৫-এর পার্শ্ববৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে কাতারের কাছে বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর একই বছরের ৪ মার্চ বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কাতার।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলে কাতার।
আরও পড়ুন:দেশের সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে আজকের বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সিনপটিক অবস্থান নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আজকের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা আছে, সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা সোমবার সকালে ছিল ৮৫%।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কের কুইন্সের একটি বাসায় মানসিক অবসাদে ভোগা ওই যুবককে বাধ্য হয়েই গুলি করতে হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে।
নিউ ইয়ক টাইমস বলছে, ১৯ বছর বয়সী উইন রোজারিওকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি ওজোন পার্কের ১০৩ নম্বর স্ট্রিটে দ্বিতীয় তলার বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
পুলিশ জনিয়েছে, ৯১১ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ ওই যুবকের বাসায় গিয়েছিল। এ সময় কাঁচি দিয়ে অফিসারদের হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এরই এক পর্যায়ে তার পায়ে গুলি চালানো হয়।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও বলেন, মা উইনকে ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। তবে এর মধ্যেই পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এই গুলি ছোড়ার কোনো দরকার ছিল না।
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুজন অফিসার মানসিক যন্ত্রণায় থাকা ব্যক্তি সম্পর্কে ৯১১ নম্বরে একটি কল পেয়ে সেখানে যায়। বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়েছে। বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছিল। রোজারিও ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন।
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও জানান, তার পরিবার ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে যান। উইনের স্বপ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া। পরিবারের গ্রিন কার্ড পেতে দেরি হওয়ায় সেটি আর হয়নি।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও জানান, তার ভাই দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে স্নাতক করেছে। সম্প্রতি বিষণ্ণ ছিলেন তিনি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কো থেকে যে ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার পেয়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছে, তা প্রতারণামূলক এবং সর্বৈব মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ ধরনের মিথ্যাচার দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেখান থেকে তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, ইউনেস্কো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ ধরনের কোনো সম্মাননা প্রদান করেনি।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গজনভি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে ইসরায়েলের ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের তাকে ‘ট্রি অফ পিস’ সম্মাননা স্মারক দেন।’
ভাস্কর হেদভা সেরও নিশ্চিত করেছেন যে, এটি ইউনেস্কোর সম্মাননা বা পুরস্কার নয়। এটি গজনভি ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত একটি পুরস্কার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করব। ড. ইউনূস ও ইউনেস্কোর নাম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। সেটি আমাদের দেশের জন্য মানহানিকর- এ তথ্যও জানাব।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পীর দেয়া পুরস্কারকে ড. ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করেছেন। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অপমানকরও বটে।
‘ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে এটি ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। ইউনূস সেন্টারকে অনুরোধ করব যে, এভাবে এ ধরনের ভয়াবহ মিথ্যাচার প্রচারণা থেকে তারা যেন বিরত থাকে। তা না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে বুধবার ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটি সঠিক নয় এবং ইউনুস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নান।
এ ধরনের সংবাদ প্রচারকে ‘প্রতারণামূলক ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার’ বলে আখ্যায়িত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনূস সেন্টারের অফিশিয়াল ওয়েব পেইজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
“ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরোমে ড. ইউনূসকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়, কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদরদপ্তর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়।
“১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে, সেখানে ইউনেস্কোর কোন অফিশিয়াল প্রতিনিধিই ছিল না। অধিকন্তু, ইউনূস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “ড. ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক/সম্মাননা প্রদান করেন ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের। মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
“নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টারের আমন্ত্রণে ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনুসকে এটি প্রদান করেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার/সম্মাননা দেয়ার এখতিয়ারও রাখেন না।
“সুতরাং, উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে।
“বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো।”
এই বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার, সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার ব্যাখা চাওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরও তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যেটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
এ ছাড়াও আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবি আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং, তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত না হন, ততদিন তাকে কোনো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কিংবা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সঙ্গে কার্যক্রমের জন্য সরকারের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, কেউ যাতে ইউনেস্কোর নামের অপব্যবহার কিংবা অপপ্রয়োগ না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা। সে হিসেবে ইউনেস্কোর নাম অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শ করে ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে অবহিত করা হবে।
আরও পড়ুন:একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও বাঙালিদের ওপর আক্রমণ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোয়াত জাহাজে অস্ত্র এসেছিল পাকিস্তান থেকে। সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে সেও পাকিস্তানিদের সঙ্গে বাঙালিদের ওপরে আক্রমণ করেছিল।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পালিয়েছিলেন বলে বিএনপির এক নেতার মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে গেলে যুদ্ধটা করল কে?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির এক নেতাকে বলতে শুনলাম, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নাকি পালিয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের কাছে জানতে চাই, তাহলে যুদ্ধটা করল কে? আজকে যে দলটি বড় বড় কথা বলছে, ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ পালিয়েছিল, তাহলে যে মুক্তিযুদ্ধের সরকার গঠন করা হলো, সেক্টর ভাগ করা হলো, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জিয়াউর রহমান ছিল একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী।
‘জিয়াউর রহমান যে মেজর থেকে মেজর জেনারেল হলো এই প্রমোশনটা কে দিল? আওয়ামী লীগ দিয়েছে৷’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগ কোথায় ছিল, আমি প্রশ্ন করি, আপনারা কোথায় ছিলেন?’
ভারতীয় পণ্য বর্জনের অংশ হিসেবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর চাদর পোড়ানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা না বলে পারলাম না। বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে পুড়ল। যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে?
‘আমি জানি, ঈদের আগে দেখি বিএনপির মন্ত্রীদের বউরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করত। আমি এখন বলব বিএনপি নেতারা যদি বাসায় গিয়ে বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ান, সেদিন বিশ্বাস করব আপনারা সত্যি ভারতীয় শাড়ি বর্জন করলেন। ভারতীয় মসলা তারা খেতে পারবে কি না এ উত্তর তাদের দিতে হবে। আপনারা এ পণ্য সত্যি বর্জন করছেন কি না, এ কথাটাই আমরা জানতে চাই।’
কিছু বুদ্ধিজীবীর সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু আঁতেল আছে। বুদ্ধিজীবী। বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন যিনি। বাংলাদেশে একটা কাণ্ড আমরা দেখি, অতি বাম, অতি ডান। স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারাটা তারা পছন্দ করেন না।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুকে সময় দেয়া হয়নি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুকে সহায়তা না করে উল্টো বিরোধিতা করা হয়েছিল। যারা এখন দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না, তারাই জাতির পিতার অবদানকে অস্বীকার করেছিল।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ঈদে যাতায়াতে দুর্ভোগ, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ভাগে ভাগে যাওয়ার সুবিধার্থে ছুটি দুই দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
ঈদযাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত করতে বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে মোজাম্মেল জানান, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটি, গাজীপুর থেকে ৪০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১২ লাখসহ ঢাকা ও আশেপাশের জেলা থেকে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। ঈদের আগের চার দিনে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ, ট্রেনে চার লাখ, প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাসে ৩৫ লাখ, মোটরসাইকেলে ১২ লাখ, লঞ্চে ৬০ লাখ, উড়োজাহাজে প্রায় এক লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।
তিনি জানান, গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে এবং খোলা ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনে ১৮ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এ ছাড়াও আন্তজেলায় যাতায়াত করবে প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি যাত্রী।
গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘কেননা এবার রোজা ৩০টি সম্পন্ন হলে ১১ এপ্রিল ঈদ হতে পারে। ঈদের আগে ১০ এপ্রিল মাত্র এক দিন সরকারি ছুটি রয়েছে। ঈদের পরে ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দিনের লম্বা ছুটি রয়েছে। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হওয়ায় এবারের ঈদযাত্রায় মুসলমানদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে লম্বা ছুটির সুবাদে গ্রামের বাড়ি যাবে। তাই যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।
‘৯ ও ১০ এপ্রিল প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে। অথচ আমাদের গণপরিবহনগুলোতে ২২ থেকে ২৫ লাখের মতো মানুষ পাড়ি দেয়ার সক্ষমতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে দেশের সকল পথে যাতায়াত পরিস্থিতি কোমায় চলে যেতে পারে। তাই ৮ এবং ৯ এপ্রিল ২ দিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হলে ৫ এপ্রিল থেকে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে, ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাবে। গণপরিবহন সংকট ও যাত্রী ভোগান্তি থেকেও মুক্তি মিলবে।’
আরও পড়ুন:দেশের পাঁচটি বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থান নিয়ে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা হয়, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
মন্তব্য