× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিশেষ
বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য মানি লন্ডারিং বিএসইসির তদন্ত
google_news print-icon

‘বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য মানি লন্ডারিং’

বিডিনিউজে-এলআর-গ্লোবালের-বিনিয়োগের-উদ্দেশ্য-মানি-লন্ডারিং
বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী (বাঁয়ে) ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম
বেআইনি এই বিনিয়োগে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বিএসইসির তদন্ত কমিটি। তারা বলছে, আর্থিকভাবে ধুঁকতে থাকা বিডিনিউজের শেয়ারের দাম মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এটি পুরোপুরি উদ্দেশ্যমূলক। এমন অবস্থায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনায় থাকা আর নিরাপদ নয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের বিনিয়োগে মানি লন্ডারিং আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্ত কমিটি। মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা লঙ্ঘন করে জনগণের অর্থ রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি ও প্রতারণার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি বিডিনিউজে বিনিয়োগ করা ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থ দ্রুত ফেরত আনার সুপারিশ করেছে বিএসইসির তদন্ত কমিটি। তারা বলছে, আর্থিকভাবে ধুঁকতে থাকা বিডিনিউজের শেয়ারের দাম মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এটি পুরোপুরি উদ্দেশ্যমূলক। এমন অবস্থায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনায় থাকা আর নিরাপদ নয়।

আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা বদল হয় ২০০৬ সালে। প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেন এডিএন টেলিকমের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ মাহমুদ। ২০১৯ সালের মে মাসে আসিফ মাহমুদ নিজের হাতে থাকা ৮০ হাজার শেয়ার ৮০ লাখ টাকায় (প্রতি শেয়ারের দাম ১০০ টাকা) তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কাছে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠান থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে আগের ২০ হাজার শেয়ারসহ মোট ১ লাখ শেয়ারের পুরোটার মালিকানা চলে যায় তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কাছে।

এর মাত্র তিন মাসের মধ্যে তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার নামে থাকা কোম্পানির ২০ হাজার শেয়ার ২৫ কোটি টাকায় এবং আরও ২০ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু করে ২৫ কোটি টাকায় এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা (সিআইও) রিয়াজ ইসলামের কাছে বিক্রি করেন। তিন মাস আগের হিসাবে শেয়ারপ্রতি ১০০ টাকা হিসেবে ৪০ হাজার শেয়ারের দাম ৪০ লাখ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো বিক্রি হয়েছে ৫০ কোটি টাকায়। এ ক্ষেত্রে ১২ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকায়।

এ বিষয়ে গত বছরের শেষ দিকে বিএসইসির একটি তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। বিএসইসির তিনজন উপপরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হক, মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান ও এএসএম মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে গঠিত এ তদন্ত কমিটি বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয় ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর।

‘বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য মানি লন্ডারিং’
বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগ নিয়ে বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদন

যেভাবে ব্যাপক অনিয়ম

বিএসইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিডিনিউজের ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন আসিফ মাহমুদ, বাকি ২০ শতাংশ ছিল তৌফিক ইমরোজ খালিদীর। প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত লোকসানে থাকায় একপর্যায়ে আসিফ মাহমুদ তার তার পুরো শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।

এ সময় ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলমকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পদ মূল্যায়ন করে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। দিদারুল আলম তখন সম্পদ মূল্যায়নের একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে পাঠান, যেখানে কোনো চুক্তি, মূল্যায়ন ফি এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তের স্বাক্ষর ছিল না।

তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে দিদারুলকে উদ্ধৃত করা বলা হয়, কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তির আগে সম্পদ মূল্যায়নের এ ধরনের খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করা খুব সাধারণ একটি ঘটনা। বিডিনিউজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ‘সরল বিশ্বাসে’ এ ধরনেরই একটি খসড়া পাঠানো হয়েছিল। কোনো ধরনের স্বাক্ষর ছাড়া পাঠানো ওই খসড়াটির উদ্দেশ্য ছিল, বিডিনিউজের সঙ্গে সম্পদ মূল্যায়নের আনুষ্ঠানিক চুক্তি করা। কিন্তু তৌফিক ইমরোজ খালিদী সেই খসড়া দেখিয়েই এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামের কাছে ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ বেশি দামে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন।

প্রতিষ্ঠানে বেতন নেই, শেয়ার বিক্রি ৫০ কোটি টাকায়

বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ২০১৯ সালের ২২ মে আসিফ মাহমুদের কাছে থাকা ৮০ হাজার শেয়ার ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৮০ লাখ টাকায় কিনে নেন।

বিএসইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র-অভিবাসী রিয়াজ ইসলাম সেখানেই পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তিনি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা। রিয়াজ ইসলাম ২০১৯ সালে ১০ সেপ্টেম্বর তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বাসায় যান। সেখানে বিডিনিউজে রিয়াজের বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়।

পরে রিয়াজ ইসলাম ৫০ কোটি টাকায় ৪০ হাজার শেয়ার কেনেন। যেখানে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ছিল ২০ হাজার শেয়ার এবং নতুন ইস্যু করা হয় আরও ২০ হাজার শেয়ার। এ-সংক্রান্ত খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ‘নিজস্ব তহবিল’ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের খবরে ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর জরুরিভিত্তিতে বিএসইসির ৭০০তম কমিশন সভা আহ্বান করা হয়। সেই সভা থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশকে বিনিয়োগ-সম্পর্কিত সমস্ত দলিল উপস্থাপন করার নির্দেশ দেয়া হয়।

এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন বিএসইসিকে একটি চিঠি দিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সম্পদের সঙ্গে সংগতিহীন বিপুল আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তথ্য জানতে চায়। বিএসইসি এরপর দুদকে পাঠানো চিঠিতে জানায়, বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এলআর গ্লোবাল এর আগেও ২০১৪ সালে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে ৪৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা বিধিবহির্ভূতভাবে বিনিয়োগ করে। বিষয়টি নিয়ে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনের ৫৩৯তম সভায় আলোচনার পর এলআর গ্লোবালকে জরিমানা করা হয়। এলআর গ্লোবাল জরিমানার ১৫ শতাংশ পরিশোধের পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিট করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

বিডিনিউজে বিনিয়োগে অনিয়েমর বিষয়টি তদন্তে স্বশরীরে অনুসন্ধানও চালিয়েছেন বিএসইসির তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এলআর গ্লোবাল ও বিডিনিউজের কার্যালয়েও তারা পরিদর্শন করেন। তবে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় রিয়াজ ইসলাম ও তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কাউকেই পাওয়া যায়নি।

এই দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়। পাশাপাশি রিয়াজ ও খালিদীকে জবাব দিতে লিখিত প্রশ্ন দিয়ে আসে তদন্ত কমিটি। সেসব প্রশ্নের লিখিত জবাব, জব্দ করা নথি পরে বিশ্লেষণ করে এই কমিটি।

‘বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য মানি লন্ডারিং’
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী

উদ্দেশ্য মানি লন্ডারিং

বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগ করা ৫০ কোটি টাকার প্রায় পুরোটাই এসেছে তাদের নিয়ন্ত্রিত ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পাবলিক মানি এভাবে বিনিয়োগের মাধ্যমে সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১-এর ৫৬ বিধির পরিষ্কার লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

১০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের নিজস্ব বিনিয়োগ মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ৪৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে। প্রতিবেদনে ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ বেশি দামে কোন প্রতিষ্ঠান কতটি শেয়ার কিনেছে, তার বিবরণও দেয়া হয়েছে।

এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ৮০০ শেয়ার কিনেছে ১ কোটি টাকায়। ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৫ হাজার ১৬৬টি শেয়ার কিনেছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। গ্রিনডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৬ হাজার ৪১৪টি শেয়ার কিনেছে ৮ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়।

এ ছাড়া, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪ হাজার ৩৪৮টি শেয়ার কিনেছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এমবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৪ হাজার ৩৯৬টি শেয়ার কিনেছে ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ১৪ হাজার ৯৮টি শেয়ার কিনেছে ১৭ কোটি ৬২ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। এনসিসিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড-ওয়ান ৪ হাজার ৭৭৮টি শেয়ার কিনেছে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকায়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বিডিনিউজকে একটি ‘রুগ্ন প্রতিষ্ঠান’ আখ্যায়িত করে বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালে থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর দেড় থেকে আড়াই কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের বেতন অনিয়মিত। অথচ এমন একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে তিন মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের সঙ্গে ১২ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়াম যুক্ত হওয়া অস্বাভাবিক।

এতে বলা হয়, রিয়াজ ইসলাম অবশ্যই জানতেন যে তার বন্ধু আসিফ মাহমুদ বিডিনিউজের প্রতিটি শেয়ার ১০০ টাকা দরে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কাছে বিক্রি করেছেন। তারপরেও এলআর গ্লোবাল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা ‘অদক্ষতা ও প্রতারণার মাধ্যমে’ স্থানান্তর করেছে, যা শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণা। মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে এটি করা করা হয়ে থাকতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, সম্পদ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে কী আছে সেটি এখানে বড় বিবেচনার বিষয় নয়, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য হলো, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থ এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানে (পুঁজিবাজারে অ-তালিকাভুক্ত) বিনিয়োগ করা যায় কিনা? মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থের প্রকৃত মালিক এর বিনিয়োগকারীরা। এই অর্থের মালিক এলআর গ্লোবাল নয়।

অনুসন্ধানের সময়ে বিডিনিউজের পাশাপাশি রংপুর ডিস্ট্রিলারিতেও একই ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে এলআর গ্লোবালের ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রমাণ পায় বিএসইসির তদন্ত কমিটি। রংপুর ডিস্টিলারির ৮০ লাখ শেয়ার তারা কিনেছে ১২.৫০ টাকা দরে। বিএসইসির তদন্ত কমিটি বলেছে, এই অনিয়মের পুরো দায় এলআর গ্লোবালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) রোনাল্ড ম্যাকি গোমেজ, হেড অফ লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্ল্যায়েন্স মনোয়ার হোসেনসহ বিনিয়োগ কমিটির সব সদস্যের।

‘বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য মানি লন্ডারিং’
এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ

বিডিনিউজের মতো রুগ্ন ও লোকসানি প্রতিষ্ঠানে বিপুল বিনিয়োগে ক্ষুব্ধ ও শঙ্কায় এলআর গ্লোবালের নিয়ন্ত্রণাধীন ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা।

বিএসইসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিনিয়োগটি ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থবিরোধী। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা বিডিনিউজের এই বিনিয়োগ থেকে সামনের বছরগুলোতে কোনো ধরনের লভ্যাংশ ফেরত পাবেন না। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের বিডিনিউজের সম্পদের বিপরীতে শেয়ারপ্রতি মূল্যে ২০১৯ সালে লোকসান ছিল ৪৪১ টাকা ৪ পয়সা। ২০১৮ সালে লোকসান ছিল ২৫০ টাকা এবং ২০১৭ সালে ছিল লাভ ছিল ৯ টাকা ১২ পয়সা।

অথচ এমন একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য এলআর গ্লোবাল ২২ মে ২০১৯ থেকে ১ আগস্ট ২০১৯ সময়ে শেয়ার প্রতি মূল্য বাড়িয়েছে ১২ হাজার ৪০০ ‍শতাংশ।

বিডিনিউজে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এলআর গ্লোবাল সম্পূর্ণ অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ‘খারাপ উদ্দেশ্যে’ এ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগের ঘোষণার আগে ২০১৯ সালের ১ আগস্ট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান রিয়াজ ইসলাম ও মনোয়ার হোসেন।

বিডিনিউজে বিনিয়োগ নিয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষোভ ও উদ্বেগও তুলে ধরা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ভিআইপিবি অ্যাস্টেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বলেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য তারা এলআর গ্লোবালকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছে।

ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে তদন্ত কমিটিকে। তারা বলেছে, এই বিনিয়োগটি অনেক উচ্চ মূল্যে করা হয়েছে এবং এটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড নীতিমালার লঙ্ঘন। অন্যদিকে, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফিন্যান্স করপোরেশন লিমিটেড বলেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, একইসঙ্গে তাদের ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি একটি ‘সন্দেহজনক’ বিনিয়োগ।

‘বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য মানি লন্ডারিং’
এলআর গ্লোবালের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) রোনাল্ড ম্যাকি গোমেজ (বাঁয়ে), হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্ল্যায়েন্স মনোয়ার হোসেন

কড়া পদক্ষেপের সুপারিশ

বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের তদন্ত শেষে চারটি সুপারিশ করেছে বিএসইসির কমিটি। তারা বলেছে, বিডিনিউজ ও রংপুর ডিস্টিলারিতে বিনিয়োগ করায় এলআর গ্লোবালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) রোনাল্ড ম্যাকি গোমেজ, হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্ল্যায়েন্স মনোয়ার হোসেনসহ বিনিয়াগ-সম্পর্কিত কমিটির সবাইকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত।

বিডিনিউজ ও রংপুর ডিস্টিলারিতে করা বিনিয়োগের অর্থ ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ফেরত আনার সুপারিশও করা হয়েছে। এ ছাড়া, তদন্ত কমিটি বলেছে, বিডিনিউজ ও রংপুর ডিস্টিলারি থেকে বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনার সব খরচ এলআর গ্লোবালকে বহন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তহবিল থেকে কোনো খরচ করা যাবে না।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা এলআর গ্লোবালের বতর্মান ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে রাখা নিরাপদ নয়। এজন্য সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ এর ৫১ বিধি অনুযায়ী ফান্ডটিকে তারল্যে রূপান্তর করা যেতে পারে অথবা শেয়ারহোল্ডারদের চাহিদার ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ এর ৩১ বিধি অনুযায়ী সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি পরিবর্তন করা যেতে পারে।

বিদেশি অংশীদারদেরও প্রতারিত করেছে এলআর গ্লোবাল

তৌফিক ইমরোজের হাতে জনগণের অর্থ তুলে দেয়া রিয়াজ ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলছে তার বিদেশি অংশীদাররাও। বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় রিয়াজ ইসলামের নামে থাকা সব শেয়ার কিনে নেয়ার আগ্রহ দেখিয়ে এ বিষয়ে বিদেশি অংশীদাররা বিএসইসির অনুমতি চেয়েছে।

এলআর গ্লোবালের অংশীদার গ্যাভিন উইলসন গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসিকে পাঠানো এক চিঠিতে রিয়াজ ইসলামের প্রতারণা ও অনিয়মের নানা তথ্য তুলে ধরে প্রতিকার চান। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে এলআর গ্লোবাল কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং এর আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বহু বছর ধরে তারা অবগত নন।

আরও পড়ুন: বিডিনিউজ থেকে ফেরত যাচ্ছে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগ: বিএসইসি চেয়ারম্যান

গ্যাভিন উইলসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এলআর গ্লোবালের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশের অংশীদার নিউইয়র্কভিত্তিক এলআর ম্যানেজারস ইনভেস্টমেন্টস। বাকি ৫২ দশমিক ৩ শতাংশের অংশীদার রিয়াজ ইসলাম। তবে রিয়াজ তাদের সঙ্গে সব ধরনের তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।

গ্যাভি উইলসন লিখেছেন, ‘গত আট বছরে কোম্পানির অংশীদার এবং ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশের মালিক হওয়া সত্ত্বেও ডিভিডেন্ড হিসেবে আমাদের একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। যদিও তারা প্রতিবছর ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে।’

বিদেশি এই অংশীদার আরও বলেন, ‘এ ছাড়া আমরা বুঝতে পারছি যে, রিয়াজ ইসলাম তার বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোম্পানির বেতন-ভাতা, বোনাস এবং বিভিন্ন খরচ নিয়মিত গ্রহণ করছেন।’

সংশ্লিষ্টরা এবং কর্তৃপক্ষ যা বলছে

বিএসইসির তদন্তের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক ও মালিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর দুটি ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

অন্যদিকে, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশে যোগোযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রিয়াজ ইসলাম এখন দেশে নেই। ফলে দেশে থাকাকালীন তিনি যে নম্বর ব্যবহার করতে সেটি বন্ধ আছে। ’

বিদেশি নম্বরটি দেয়ার অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, ‘এটি আমি করতে পারব না।’

বিষয়টি নিয়ে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) রোনাল্ড ম্যাকি গোমেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে মনোয়ার সাহেব এ বিষয়ে বলতে পারবেন।’

যোগাযোগ করা হলে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অফ লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্ল্যায়েন্স মনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিডিনিউজে বিনিয়োগের সংবাদ প্রকাশের পর বিএসইসি আমাদের কাছে যত ধরনের কাগজপত্র চেয়েছে আমরা সব সরবরাহ করেছি। তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছে, তবে তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে কিনা সেটি আমরা এখনও জানি না। ’

তিনি বলেন, ‘তদন্তে রিপোর্টে বোর্ড পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিয়ে থাকলেও সেটি নিশ্চয় আমাদেরকে জানানো হবে। জানানো হলে পরবর্তীতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটি সম্পর্কে বলা যাবে। ’

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তিন চার বছর আগের। আমাদের আগের কমিশন একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। আমাদের সময়ে এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।’

‘বিডিনিউজে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য মানি লন্ডারিং’
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

তদন্ত প্রতিবেদনে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে কমিশনের পদক্ষেপ কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত নেয়া, জরিমানা করা ইত্যাদি। তারা ইতোমধ্যে জরিমানার টাকা প্রদান করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু মামলা ছিল সেগুলোরও সমাধান হচ্ছে এবং বিডিনিউজের কাছ থেকে এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’

এলআর গ্লোবালে যেসব বিনিয়োগকারী ছিল তাদের সুরক্ষার বিষয়টি জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা খবর নিয়ে দেখেছি এখন কোনো বিনিয়োগকারী নেই। তারা তাদের ইউনিট বিক্রি করে চলে গেছে।’

সম্প্রতি একজন বিদেশি ফান্ডের মালিকানা দাবি করে যে চিঠি দিয়েছেন সে বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটি নিয়েও আমরা কাজ করছি। আমরা তাকে বলেছি উনার কাছে কী কী কাগজপত্র আছে সেগুলো আমাদের কাছে জমা দিতে। আর মালিকানার বিষয়টি আমাদের নয়, এটি জয়েন্ট স্টকের বিষয়।’

আরও পড়ুন

বিশেষ
Thakurgaon Model will be followed to free Barisal Child Labor Labor Secretary

বরিশালকে শিশুশ্রম মুক্ত করতে ঠাকুরগাঁও মডেল অনুসরণ করা হবে: শ্রম সচিব

বরিশালকে শিশুশ্রম মুক্ত করতে ঠাকুরগাঁও মডেল অনুসরণ করা হবে: শ্রম সচিব

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘ঠাকুরগাঁও মডেল’ অনুসরণ করে বরিশাল জেলাকে সম্পূর্ণরূপে শিশুশ্রম মুক্ত করা হবে। শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে নিয়োজিত না রাখার পাশাপাশি তাদের নিয়মিত স্কুলে পাঠানোর উপর জোর দেন তিনি।

শুক্রবার বরিশালের শিল্পকলা একাডেমিতে ‘শিশু শ্রম নিরসনে তারুন্যের ভুমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সচিব এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন ১৮২ অনুস্বাক্ষর করেছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩ ধরনের কাজের তালিকা প্রকাশ করেছে। কোনো শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকবে না। তারা বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাবে।”

শ্রম সচিব আইএলও'র অর্থায়নে ইএসডিও কর্তৃক বাস্তবায়িত ঠাকুরগাঁও জেলার ‘চাইল্ড লেবার মনিটরিং সিস্টেম (সিএলএমএস)’ মডেলকে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ আখ্যায়িত করেন। তিনি জানান, জাতীয় পর্যায়ে এই মডেল অনুসরণ করে বরিশাল জেলাসহ অন্যান্য জেলাতেও শিশুশ্রম নিরসনের কার্যক্রমকে গতিশীল করা হবে।

শ্রম সচিব তরুণ সমাজ ও এনজিওগুলোর প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শিশুশ্রম নিরসনে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সমাজকে শিশুশ্রম মুক্ত করতে পারে। এখানে উপস্থিত সকলে যদি ১ জন শিশুরও দায়িত্ব নেন, তাহলেও বরিশাল জেলা অনেকাংশে শিশুশ্রম মুক্ত হবে।”

তিনি আরও জানান, শিশুশ্রম নিরসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন দুস্থ শ্রমিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫৭ জন শ্রমিক ও তার পরিবারকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশন হতে ২৫ লক্ষ টাকার অর্থ সহায়তার চেক প্রদান করা হয়।

বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো: রায়হান কাওসার। এছাড়াও বরিশাল জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুধীজন, এনজিও কর্মী ও তরুণরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বিশেষ
The governments strict warning will be immediately taken legal action to promote Sheikh Hasinas statement

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে সরকারের কঠোর সতর্কবার্তা, তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে সরকারের কঠোর সতর্কবার্তা, তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে

ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত অপরাধী এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামী ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার নিয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের প্রচার শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি তৈরি করে।

শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার কিছু গণমাধ্যম আইন অমান্য করে শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য সম্প্রচার করেছে, যেখানে তিনি মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের টেলিভিশন, সংবাদপত্র এবং অনলাইন আউটলেটগুলোতে ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত অপরাধী এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামী শেখ হাসিনার অডিও সম্প্রচার এবং প্রচার ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। তা ছাড়া, গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘৃণা ছড়ায় প্রাক্তন স্বৈরশাসকের এমন বক্তব্য সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে।

আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, কিছু গণমাধ্যম বৃহস্পতিবার আইন ও আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসকের একটি ভাষণ প্রচার করেছে যেখানে তিনি মিথ্যা ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এধরনের অপরাধমূলক প্রচারকর্মে জড়িত গণমাধ্যমের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি এবং দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছি যে, শেখ হাসিনার বক্তব্য কেউ ভবিষ্যতে প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমাদের জাতির ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমরা অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি তৈরির ঝুঁকি নিতে পারি না। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শেখ হাসিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় শত শত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীর গণহত্যার নির্দেশ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগের পরে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং বর্তমানে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন রয়েছে। তদুপরি, বাংলাদেশের আইন অনুসারে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং একই সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ অনুসারে, যে কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন যারা তাদের নেতাদের কার্যকলাপ বা বক্তৃতা প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে সরকার বিবৃতিতে বলছে, ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক নীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের জনগণ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা, এমন একটি সময়ে, সংবাদ মাধ্যমগুলোকে শেখ হাসিনার অডিও এবং তার বক্তৃতাগুলো, যা বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি, এগুলো প্রচার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা এবং দায়িত্বশীলতা অবলম্বন করার আহ্বান জানাই। তার মন্তব্য, বক্তৃতা এবং তার যেকোনো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার, পুনঃপ্রচার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করে। এটি কেবল জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কাজ করে। এ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ অমান্যকারী যেকোনো সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের আইনের অধীনে আইনি জবাবদিহিতার আওতায় পড়বে।’

মন্তব্য

বিশেষ
I will not be in any position in the post government government in February
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে ড. ইউনূসের নিবন্ধ

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, পরবর্তী সরকারের কোনো পদে আমি থাকব না

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, পরবর্তী সরকারের কোনো পদে আমি থাকব না

যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে নিবন্ধ লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে গত বছর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে প্রফেসর ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আর নির্বাচন শেষেই তিনি রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হবে সেটির কোনো পদেই থাকবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।

ড. ইউনূস লিখেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করেছি : জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে। এরপর যে সরকার আসবে সেখানে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করা কোনো পদে আমি থাকব না।’

তিনি বলেছেন, ‘আমার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনাগুলো বলতে পারবে। আমাদের মিশন হলো, সব বৈধ ভোটার যেন তাদের ভোট দিতে পারে, যারা প্রবাসে আছেন তারাও। এটি একটি বড় কাজ। কিন্তু আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

প্রফেসর ইউনূসের নিবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

এক বছর আগে, এই মাসেই বাংলাদেশের হাজার হাজার সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থী, যাদের পেছনে ছিল সমাজের সব স্তরের অগণিত মানুষের সমর্থন, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল, তার মাধ্যমেই তারা একজন স্বৈরাচারকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।

এরপর যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ছাত্রনেতারা আমাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ জানায়। এই সরকারের দায়িত্ব ছিল দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরি করা। শুরুতে আমি রাজি হইনি। কিন্তু যখন তারা জোর করল, তখন আমি তরুণদের জীবন উৎস্বর্গের কথা ভাবলাম, আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, সুশীল সমাজের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি উপদেষ্টা পরিষেদের সঙ্গে আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করি।

এই গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা থেকে। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জেড’ বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল। এই বিপ্লব তরুণদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে, যা দেখায় কীভাবে তারা মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং বৈষম্য—মোকাবিলার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।

আমরা ভাগ্যবান যে তারা ‘তাদের পালা আসার জন্য’ অপেক্ষা করেনি। যখন সভ্যতা অনেক দিক থেকে ভুল পথে চালিত হচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।

স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে আমাদের উত্তরণের একটি স্পষ্ট প্রমাণ ছিল যখন দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী বাংলাদেশকে তাদের ‘২০২৪ সালের সেরা দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা তখন অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং চুরি যাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধারে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমরা তখনো বুঝতে পারিনি বিশ্ব আমাদের এই অগ্রগতিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ডেসারেট নিউজ আমাদের এই যাত্রার চমৎকার কাভারেজ দিয়েছে, যা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি।

আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল গণঅভ্যুত্থানে যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল এবং যারা গুরুতর আহত হয়েছিল—সেই হাজার হাজার পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। এরসঙ্গে আমরা বিগত সরকার ও তার সহযোগীদের লুট করা অর্থ উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে সাবেক স্বৈরাচারী সরকার বছরে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য যুদ্ধ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যখন আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন অব্যবস্থার মাত্রা দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছিল না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল। অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছিল।

সরকারি কর্মচারীরা, যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য না দেখানোর কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তারা ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।

ধীরে ধীরে আমরা পুনর্গঠন শুরু করেছি। যেসব রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারের প্রতিরোধ করেছিল, তাদের পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও নতুন ধারণা, শক্তি এবং কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সশস্ত্র বাহিনী, যারা ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা চালাতে দেয়নি, তারা তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।

আমি এটি স্পষ্ট করে দিয়েছি: আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি এরপরের সরকারের কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকব না।

আমাদের প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকসহ সব যোগ্য নাগরিককে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া একটি বিশাল কাজ। কিন্তু আমরা এটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন এনেছি। যেন আমাদের প্রতিবেশী এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক জোরদার করা যায়।

বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির একটি মূল কেন্দ্র হতে পারে এবং হওয়া উচিতও। আমরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ।

রুবিওরে সঙ্গে সম্প্রতি আমার একটি ফলপ্রসূ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, যা আমাদের উভয় দেশের বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক ছিল।

যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘও আমাদের সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। আমরা এই পথে একা নই।

নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের নিয়ে একটি ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছি। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনা। যা এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে যাতে বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরাচারী শাসনে ফিরে না যায়।

বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত এমন একটি দেশে পরিণত হয় যেখানে দেশের সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। তবে তা হবে লাখ লাখ বাংলাদেশির দৃঢ়তা, কল্পনা এবং সাহসের ফল।

এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে যারা আছেন তাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। তারাই আমাদের সর্বোত্তম আশা—এবং সম্ভবত আমাদের শেষ আশা।

মন্তব্য

বিশেষ
Authorization of Visa Exemption Agreement with Pakistan

পাকিস্তানের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি অনুমোদন

পাকিস্তানের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি অনুমোদন

সরকারি এবং কূটনীতিক পাসপোর্টে পারস্পারিক ভিসা অব্যাহতি সুবিধা পেতে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।

প্রেস সচিব বলেন, ‘পাকিস্তানের মতো এ রকম চুক্তি আমরা আরও ৩১টি দেশের সঙ্গে করেছি। এই চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য করা হবে । এর ফলে যারা অফিসিয়াল পাসপোর্ট এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তারা এখন বিনা ভিসায় পাকিস্তান সফর করতে পারবেন। একইভাবে পাকিস্তানের যারা অফিসিয়াল এবং কূটনীতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন— তারাও বাংলাদেশে সফর করতে পারবেন কোন ভিসা ছাড়াই। এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস।’

উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে।

মন্তব্য

বিশেষ
Authorization of the draft of the Revenue Policy and Revenue Management Amendment Ordinance

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার অনুমোদন

উপদেষ্টা পরিষদের ৩৯তম বৈঠকে আজ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।

ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীগণের পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করা হয়।

এছাড়া, উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার কমিশনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

মন্তব্য

বিশেষ
The Ministry of Social Welfare wants to work through the coordination team to speed up the pace the new secretary of the ministry

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সেবা দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সকলের সহযোগিতা চাই। এজন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
নতুন সচিব বলেন,
আমি এই মন্ত্রণালয়ের সুনাম কাজের মাধ্যমে, আইন কানুন মেনে মানুষের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, সচিবের রুম আপনাদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এবং ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন, আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমিও আপনাদের থেকে শিখতে চাই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মন্তব্য

বিশেষ
The Ministry of Youth and Sports is going to organize the National Policy Competition 2021

জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ আয়োজন করতে যাচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ আয়োজন করতে যাচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের নয়টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫। জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য "বাংলাদেশ ২.০: তারুণ্যের নেতৃত্বে আগামীর পথে " নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ধারণাপত্র জমা দিয়ে শুরু করবে এবং নির্বাচিত দলসমূহ পূর্ণাঙ্গ নীতিপত্র প্রস্তুত ও উপস্থাপনা করবে। বিজয়ীরা পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি তাদের নীতি প্রস্তাবগুলো সরকারিভাবে পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

নীতি প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল-

১. রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

২. জুলাই পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জাতীয় স্বার্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন

৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: শিক্ষা ও দক্ষতার রূপান্তর

৪.দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক সংযোগ: জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী তরুণদের ভূমিকা

৫. গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশের করণীয় ও বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি

৬. জুলাই গণভুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠন: তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ

৭.বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ: সম্ভাবনার ব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা প্রস্তুতি

৮. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের পথে: ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

৯. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের উদ্বোধনী সম্ভাবনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র

  1. কৃষি, নদী উন্নয়নের গতিপথ: বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পুনরাবিষ্কার।

রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নীতিগতভাবে অগ্রসর হওয়া। তরুণদের চিন্তাপ্রক্রিয়া, মননশীলতা এবং গবেষণাধর্মী সক্ষমতাকে সামনে রেখে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব আর সেটি হতে হবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে।

এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব বলেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে বিনিয়োগ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণই আমাদের রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে এবং বাংলাদেশ ২.০-কে বাস্তবায়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।

মন্তব্য

p
উপরে