× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিশেষ
উবার সেবায় স্বেচ্ছাচার
google_news print-icon

উবার-সেবায় স্বেচ্ছাচার

উবার-সেবায়-স্বেচ্ছাচার
সড়কের পাশে যাত্রীর জন্য রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের চালকদের অপেক্ষা। ছবি: নিউজবাংলা
গন্তব্য পছন্দ না হলে চালকেরা যেতে অস্বীকৃতি জানান। যাত্রীকে রিকোয়েস্ট বাতিল করতে বাধ্য করেন। বিকাশে ভাড়া পরিশোধে চালকেরা রাজি থাকেন না। এসব নিয়ে যাত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন জাহিদ হাসান। ভোরের আলস্যে ঘুম ভাঙতে একটু দেরি হয়ে যায় তার। থাকেন সিদ্ধেশ্বরীতে। গন্তব্য বনানী। আড়মোড়া ভেঙে রাস্তায় এসে ডাকেন উবার।

একটু অপেক্ষার পর একটি গাড়ির সন্ধান দিল উবার। ফোন করতেই চালক জানালেন, ‘টাকা ক্যাশে দেবেন নাকি বিকাশে?’ জাহিদের তখন অফিস পৌঁছানোর তাড়া। চালকের উদ্দেশে বললেন, ‘যেভাবে আপনার সুবিধা।’

আবারও প্রশ্ন এলো। এবার জানতে চাওয়া হলো, ‘কোন দিকে যাবেন?’

জাহিদ বললেন, ‘বনানীর দিকে।’ তবে এই গন্তব্য পছন্দ হলো না চালকের। তাই না করে দিলেন জাহিদকে।

বেশ বিরক্ত হলেন জাহিদ। উবারে যে রিকোয়েস্ট বাতিল করে দেবেন, সেটাও হচ্ছে না।
কারণ, অ্যাপটি এমনভাবে বানানো, যাত্রী যদি নিজের ইচ্ছায় কোনো রাইড রিকোয়েস্ট বাতিল করেন, সে ক্ষেত্রে তাকে জরিমানা গুনতে হয়।

অপরদিকে চালক যেতে রাজি না হলেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চান না তারা। কারণ, তাতে তার রেটিং কমে যাবে। ফলে তাড়াহুড়োর মধ্যে যাত্রীকে ক্ষতিটা মেনে নিয়ে আরেকটি উবার বা বিকল্প ব্যবস্থায় গন্তব্যে যেতে হয়।

জাহিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন হয়রানি যদি চলতে থাকে, তবে এই সেবা দিয়ে আমার কী লাভ হবে?’

গণপরিবহনে ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে উবারসহ রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলোকে স্বাগত জানিয়েছিল নগরবাসী। কিন্তু বছর কয়েকের ব্যবধানে বদলে গেছে সেই ধারণা।

যাত্রীদের অভিযোগ, উবারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে হয়রানি।

তিন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিকাশে পেমেন্ট নিতে অনীহা, লোকেশন পছন্দ না হওয়া আর যাত্রীদের রিকোয়েস্ট বাতিল করতে বাধ্য করা।

এ বিষয়ে উবারের বক্তব্য জানতে চাইলে সময়ক্ষেপণ করলেও সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য তারা দেয়নি।

দেশে রাইড শেয়ারিংয়ের শুরু ২০১৫ সালে। গণপরিবহনের হয়রানি থেকে রেহাই পেতে নগরে নতুন সুবিধা রাইড শেয়ারিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় যাত্রীরা। একই বছর আসে দেশি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ‘পাঠাও’।

বেশি আলোচনা হয় বহুজাতিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘উবার’ চালু নিয়ে। অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি কল দিয়ে স্বল্প খরচে যেকোনো জায়গায় যাওয়ার সুবিধা রাজধানীতে ট্যাক্সির অভাব অনেকটাই পূরণ করেছিল।

তবে সেবাটির ‘মধুচন্দ্রিমা’ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। একের পর এক হয়রানির অভিযোগ বাড়তে থাকে রাইড শেয়ারিং সেবার বিরুদ্ধে।

উবার কিছু পদক্ষেপ ও সুবিধা যোগ করলেও তা অল্প দিনের জন্য স্থায়ী হয়। নতুন করে অভিযোগ আসতে থাকে যখন বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে চালকের টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে উবারের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগগুলো স্পষ্ট হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, গন্তব্য বাছাইয়ে চালকের যথেচ্ছাচার। গন্তব্য পছন্দ না হলে চালকেরা যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে যাত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সরোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীর গন্তব্যের সঙ্গে চালকের পছন্দ মেলে না। আর এতে চালক বারবার ট্রিপ ফরোয়ার্ড করতে থাকেন, যা একধরনের ভোগান্তি। এ ছাড়া চালকের অহেতুক বিরক্তি প্রকাশ ও অসদাচরণও মেনে নিতে হয়।

তিনি বলেন, ‘সেবা পাচ্ছি টাকার বিনিময়ে। তবে কেন এত ভোগান্তি হবে?’
সরোয়ার আরও অভিযোগ করেন, একবার এক চালক তার এক হাজার টাকার নোট ভাঙতি দিতে পারেননি। তখন তিনি বিকাশে পেমেন্টের কথা বললে তাতেও চালক রাজি হননি। বাধ্য হয়ে তাকে দোকান থেকে কিছু কিনে টাকা ভাঙাতে হয়েছে।

মেরুল বাড্ডায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাকরিম আহমেদ অভিযোগ করেন, ‘চালকের প্রান্ত থেকে সমস্যা হলেও যাত্রীদের ট্রিপ ক্যানসেল করতে বাধ্য করা হয়। গন্তব্যের মিল না হলে চালক ট্রিপ ক্যানসেল করতে বলেন।’

তিনি বলেন, ‘রিকোয়েস্ট পাঠালে চালক যাত্রীর গন্তব্য দেখতে পান না। তিনি গন্তব্য জানার পর যেতে না চাইলে ট্রিপ ক্যানসেল করতে বলেন, যা আমার জন্য জরিমানা। এ ক্ষেত্রে আমাকে বাধ্য হয়ে ক্যানসেল করতে হয়। এটা অনেক বড় ধরনের হয়রানি।’

গত বছর ১১ আগস্ট করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে ক্যাশ টাকার পরিবর্তে বিকাশে পেমেন্টের কথা ঘোষণা করে উবার। তখন বলা হয়, এতে নগদ বা ভাঙতি টাকার ঝামেলা ছাড়াই রাইডের ভাড়া যাত্রীর বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ করা যাবে।

বিশেষ করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাত্রী ও চালক উভয়কে রক্ষা করতে ক্যাশলেস এই পেমেন্ট ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়।

তবে বিকাশের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ মানতে নারাজ চালকেরা। তাদের কথা, এই পেমেন্টের টাকা হাতে পেতে তাদের অনেক বেশি সময় লেগে যায়। ক্যাশ টাকা হাতে পেলে তাদের সুবিধা বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক নিউজবাংলাকে বলেন, সব চালকের ব্যবহার বা আচার-আচরণ এক হবে না। মাঝে মাঝে যাত্রীরাও গন্তব্য নিয়ে ঝামেলা করেন। তবে তারা মেনে নেন যে, বিকাশে পেমেন্ট দিলে তাদের টাকা পেতে ঝামেলা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উবারের এক চালক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো লোকেশন দেখতে পারি না। এমন অনেক সময় হয় যে দিনের শেষ ট্রিপ নেব নিজের বাসার কাছাকাছি। তখন যদি গন্তব্য না মেলে তবে ফরোয়ার্ড করে দিই।

‘এটা আমার ক্ষেত্রে হয়। অন্যদের কথা জানি না। কিন্তু লোকেশন না দেখতে পাওয়া একটা বড় সমস্যা আমাদের জন্য।’

উবার জবাব দেয় না

বাংলাদেশে উবারের নিজস্ব কার্যালয় নেই। বেঞ্চমার্ক পিআর নামে একটি জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে উবারের কর্মকাণ্ড সমন্বয় করে।

এসব অভিযোগের জবাব পেতে বেঞ্চমার্ক পিআর-এর সঙ্গে ১১ ফেব্রুয়ারি যোগাযোগ করে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়। তখন বেঞ্চমার্ক পিআর থেকে জানানো হয়, এই প্রশ্নগুলো তারা উবারকে পাঠাবে।

এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি বেঞ্চমার্ক পিআরের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হলে তারা উবারের ২০২০ সালের ‘ফিরে দেখা’ নামে একটি বিবৃতি পাঠায়, যেখানে সমস্যাগুলো নিয়ে কোনো উত্তর ছিল না।

বেঞ্চমার্ক পিআরের পরিচালক (পাবলিক অ্যাফেয়ার্স) এ এফ এম আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, তারা প্রশ্নগুলো উবারকে পাঠিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত উবার থেকে কোনো উত্তর তারা পাননি।

কবে উত্তর পাওয়া যাবে, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘উবার প্রশ্ন যাচাইবাছাই করে। আমরা এখান থেকে পাঠিয়েছি। ওরা বলল, আমরা দেখছি।’

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিশেষ
A newborn is born to a mentally unstable woman in an abandoned school room

স্কুলের পরিত্যক্ত কক্ষে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর এক নবজাতক জন্ম

স্কুলের পরিত্যক্ত কক্ষে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর এক নবজাতক জন্ম

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী সাবানার কোলে জন্ম নিয়েছে এক নবজাতক কন্যা শিশু। পরে অসুস্থ ওই নারীকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। এ শিশুটিকে দত্তক নিতে আসছে অনেকেই। নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস স্থানীয় প্রশাসনের।

মানসিক ভারসাম্যহীন নারী সাবানা দীর্ঘদিন ধরে শ্রীবরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। তাকে বিভিন্ন সময় রাতে লংগরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে ঘুমাতে দেখা যায়। ১৮ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ স্কুলের পরিত্যক্ত ভবন থেকে নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনে এলাকাবাসী ছুটে যান সেখানে। পরে তারা দেখতে পান, ওই নারীর কোলে জন্ম নিয়েছে একটি কন্যা শিশু। পরে স্থানীয়রা দ্রুত মা ও নবজাতককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান এবং তাদের খাবার ও প্রাথমিক সেবা দেন। শিশুটি সুস্থ থাকলেও মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

এদিকে অসহায় নবজাতককে দত্তক নিতে অনেকেই এগিয়ে এসেছে। বলতে গেলে প্রতিযোগিতাই শুরু হয়েছে।

এঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে কেউ ওই নারীর পরিচয় জানেনা। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্ন ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শ্রীবরদী সমাজসেবা অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে প্রতিনিধি পাঠিয়েছি। হাসপাতালে সমাজসেবা শাখা রয়েছে। তারাই চিকিৎসা সহায়তা দেবে। এরপর নবজাতক ও ওই নারীর পূনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শ্রীবরদী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাসিব-উল-আহসান বলেন, মা ও নবজাতকের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। তাদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হবে। এছাড়াও ওই নারীর ঠিকানা সম্পর্কে খোঁজ নিতে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।

শেরপুর জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা: তানবির আহমেদ জানান, নবজাতক ভাল আছে। তবে মানষিক ভারসাম্যহীন মহিলার অবস্থা খারাপ থাকায় তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তার চিকিৎসা চলছে।

মন্তব্য

বিশেষ
Condemn not in cell before finalization of death sentence Appeal hearing on October 28

মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্তের আগে কনডেম সেলে নয় : আপিল শুনানি ২৮ অক্টোবর

মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্তের আগে কনডেম সেলে নয় : আপিল শুনানি ২৮ অক্টোবর

মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না, হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির জন্য আগামী ২৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

রোববার (১৯ অক্টোবর) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই দিন ধার্য করেন।

আদালতে বিষয়টি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে ২০২৪ সালের ১৫ মে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না, এ রায় স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর আগে ২০২৪ সালের ১৩ মে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল, রিভিউ, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার ধাপগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে সারা দেশে যত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে, তাদের দুই বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সাধারণ সেলে রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে, বিশেষ কারণে (স্বাস্থ্যগত কারণ, সংক্রামক রোগ) কোনো ব্যক্তিকে নির্জন কারাকক্ষে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি হতে হবে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সারোয়ার পায়েল, নাসিম ইসলাম রাজু।

আইনজীবীরা বলেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়।

২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয় সেদিন। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।

এর আগে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনকারীরা হলেন– চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

মন্তব্য

বিশেষ
16 fishermen were detained in the operation of the naval police in Meghna to protect the hilsa

ইলিশ রক্ষায় মেঘনায় নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৬ জেলে আটক

ইলিশ রক্ষায় মেঘনায় নৌ-পুলিশের অভিযানে ১৬ জেলে আটক

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছেন মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। এ অভিযানে অবৈধভাবে ইলিশ মাছ ধরার অভিযোগে ১৬ জন জেলেকে আটক করা হয়।

শুক্রবার রাতে উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ৬টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও প্রায় ৬ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্টজাল জব্দ করা হয়। পরে উদ্ধারকৃত কারেন্টজাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

আটককৃত জেলেরা হলেন রিপন মোল্লা (২৫), মো. রিপন দেওয়ান (৪৪), মো. মফিজুল (৩৫), মো. জসিম মিজি (৩৫), মো. আকাশ (২০), মো. উজ্জল (৪৫), স্বপন সিকদার (২৪), মো. শান্ত মাদবর (২০), মো. শাহিন সরদার (৩৪), আল আমিন (৩৫), মো. জব্বার সিকদার (৪৫), মো. বিল্লাল গাজী (৪০), মো. নাসির ঢালী (৩২), আব্দুর রাজ্জাক (২০), মো. আরিফ (১৯) ও মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৭)। তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে ৬টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা দিন-রাত নদীতে টহল ও অভিযান চালাচ্ছি। কেউ নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরলে ছাড় দেয়া হবে না। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, সরকার ঘোষিত মা ইলিশ সংরক্ষণের সময় নদীতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধভাবে মাছ ধরার সরঞ্জাম পেলেই ধ্বংস করা হবে।

মন্তব্য

বিশেষ
Election schedule to be announced in first half of December CEC

ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে: সিইসি

ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে: সিইসি

আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এর আগে, তিনি বরিশাল বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সভা করেন।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ড সরকার নিষিদ্ধ করেছে, তাই বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে, যদি নির্বাচনের আগে বিচার সম্পন্ন হয় তখন সেটা দেখা যাবে।
এনসিপির শাপলা প্রতীকের দাবির প্রশ্নে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের তালিকায় না থাকায় শাপলা প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, কোনো গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা প্রভাবিত হবে না নির্বাচন কমিশন। সভায় বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, ছয় জেলার জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বিশেষ
A monument will be built in Shapla square in the name of martyrs of Hefazat Asif Mahmud

শাপলা চত্বরে হেফাজতের শহীদদের নামে হবে স্মৃতিস্তম্ভ:আসিফ মাহমুদ

শাপলা চত্বরে হেফাজতের শহীদদের নামে হবে স্মৃতিস্তম্ভ:আসিফ মাহমুদ  স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গতকাল শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হেফাজত ইসলামের মহাসমাবেশে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলামের শহীদদের নামে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হবে। যাতে দেশের মানুষ তাদের আজীবন স্মরণ করে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হেফাজত ইসলামের মহাসমাবেশ ও মোদিবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ২০১৩ সালে হেফাজত ইসলামের আন্দোলনেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সেদিন সরকার নিরপরাধ ও নিরীহ হেফাজত কর্মীদের হত্যা করে ভেবেছিল, দেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে। জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণমানুষের আন্দোলনকে স্তব্ধ করে হত্যা করা যাবে। কিন্তু এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করে, জুলুম ও নির্যাতন কখনো স্থায়ী হয় না।
তিনি আরও বলেন, হেফাজত ইসলামের সেই আন্দোলনের সূত্র থেকেই ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের জন্ম। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিবাদের নেত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
উপদেষ্টা বলেন, ২০১৩ সালে নবম শ্রেণিতে পড়তাম। টেলিভিশনে দেখেছি লাখো জনতা কীভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেদিনের প্রকৃত তথ্য জাতিকে জানানো হয়নি।
তিনি আরও জানান, হেফাজত ইসলামের শহীদদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ শাপলা চত্বরে তৈরি করা হবে। এতে এই আন্দোলন আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণা যোগাবে।
অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহীদ ৫৮ জন এবং ২০২১ সালের মার্চে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শহীদ ১৯ জনের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজত কর্মীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে তৎকালীন সরকার মনে করেছিল জুলুম-নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন দমন করা যাবে।
ওই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার হেফাজত ইসলামের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সেদিন শাপলা চত্বরে সাত হাজারের বেশি পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা হেফাজত কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। প্রায় দেড় লাখ গুলি খরচ করা হয়েছিল। তারপরও ইতিহাস থেকে সেই ঘটনা মুছে ফেলা যায়নি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহিদী। আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমীর মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মহাসচিব মাওলানা মাজেদুর রহমান, জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, খেলাফতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক, গণধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর প্রমুখ।

মন্তব্য

বিশেষ
We are behind the collective lies

সম্মিলিত মিথ্যার পিছনেই আমরা

সাকিব রায়হান
সম্মিলিত মিথ্যার পিছনেই আমরা

আমি তখন কলেজে পড়ি। স্যারের বাসায় যত সিনসিয়ারলি যাই তত সিনসিয়ারলি পড়ালেখা করি না। পুরা শহর ঘুরে বেড়ানোয় যত মনোযোগ ততটা মনোযোগ কলেজে যাওয়ায় না। তবে নিঃসন্দেহে দারুণ সময় পার করছিলাম। একদিন আমি কোনো এক কাজে রিকশায় করে ফরেস্ট ঘাটের দিকে যাচ্ছিলাম। যথারীতি রিকশা চালকের সাথে নানবিধ গল্প করছি। রাজনীতি, শহর, দেশসহ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই আমাদের আলোচনায় স্থান পাচ্ছিল। রিকশা চালকের চিন্তা এবং জ্ঞান দেখে আমি বেশ মুগ্ধই হয়েছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম যে আমাদের সমাজে আসলেই অনেক সুচিন্তাশীল মানুষ আছে যারা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ঘটনা ঘটলো যেটা আমার চিন্তাশক্তিকে কিছুক্ষণের জন্যে অবশ করে দিলেও পরবর্তীতে একটা কঠিন সত্যকে জানতে সাহায্য করেছিল। ফরেস্ট ঘাটের কাছাকাছি একটা জায়গায় পৌঁছেতেই কিছু দূরে একটা জটলা মত পেলাম এবং একজন পথচারীর কাছ থেকে জানতে পারলাম তিনি আর কেউ না, শহরের সবচেয়ে কুখ্যাত টেরর (যার নাম বললে আপনারা সবাই চিনবেন)। আমি কেন যেন আর অগ্রসর হতে চাইলাম না। রিকশা চালককে ওখানেই আমাকে নামিয়ে দিতে বললাম। ঘৃণা থেকেই হোক বা অজানা শঙ্কায় হোক সে মুহূর্তে ওই মানুষটার কাছাকাছি যেতে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল না। আমি রিকশা থেকে নেমে যখন ভাড়া মিটাচ্ছিলাম তখন দেখি আমার সেই রিকশাচালক বেশ রাগান্বিত হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রিকশা চালককে তার হাতের বিড়িটা ফেলে দিতে বলছে। প্রায় ধমকের স্বরেই বলেছিল, ‘বিড়ি ফ্যাল ব্যাটা। সামনে একজন সম্মানিত মানুষ দেখা যায় সেটার খেয়াল নেই?’ আমি বেশ ভালো রকমের ধাক্কা খেলাম। অনেকটা বিড়বিড় করে বললাম, ‘সামনে কোনো সম্মানিত লোক আছে যে এখানে দাঁড়িয়ে এই রিকশাচালক বিড়ি খেতে পারবে না?’ তখন আমার সেই রিকশাচালক আমার উপর বিরক্ত হয়েই বলেছিল, ‘ভাইরে চিনেন না?’ আমি আর কোন কথা না বলে যতটা সম্ভব দ্রুত হেঁটে বিপরীত দিকে চলে গিয়েছিলাম। মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের রিকশা থেকে সেই সম্মানিত(!) লোক এতটুকু দুরুত্বে ছিল যে আরেকজন রিকশাচালক বিড়ি খেলে সেটা দেখতে পাবে না। তার মানে সে ভয় থেকে কথাটা বলে নি। বরং তার চোখে মুখে এক ধরনের মুগ্ধতা দেখেছিলাম। কিছুক্ষণ আগেও যে রিকশাচালককে আমি বুদ্ধিমান, বিবেকবান মনে করেছিলাম তার প্রতি আমার দৃষ্টি ভঙ্গিটাই মুহূর্তে পালটে গিয়েছিল।

এটুকু পড়ে হয়তো অনেকেই ভাবছেন এটাতে কি আর এমন ঘটনা আছে যে এত বছর পরে এসে আমাকে লিখতে হবে? আসলে এটা আমার একটা ভিন্ন চিন্তা শক্তিকে উন্মুক্ত করেছিল। এরপর থেকে একটা বিষয় আমি খুব ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করি। আমরা কম বেশি সবাই নীতি কথা বলি, বিবেকের কথা বলি; কিন্তু অসৎ এবং খারাপ মানুষদের কেন এক গোপন সমর্থন দিয়ে যাই? কেন অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের সবচেয়ে খারাপ মানুষদের একজনকে ভোট দিয়ে আমরা নির্বাচিত করি? কোনো এক ব্যাক্তি যদি অশ্লীল কথা বলে তারপরেও কেন আমরা তাকে পছন্দ করি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে ফলো করে যাই? তারচেয়েও যেটা আমাকে বেশি ভাবতে সাহায্য করেছিল যে আমাদের চোখের সামনে পরিষ্কার অনিয়ম, অন্যায় দেখতে পেলেও কেন আমরা তার প্রতিবাদ তো করিই না বরং কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা তার নীরব সমর্থনও দিয়ে যাই? আর এই অনিয়মের অংশ কিন্তু মূর্খ, জ্ঞানহীন বা অবুঝ মানুষজনই শুধু না বরং শিক্ষিত, মার্জিত, বুদ্ধিমানেরাও। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কেন আমরা সম্মিলিতভাবে অন্যায়কে মেনে নেই?

আমরা সবসময় আমাদের স্বার্থ নিয়েই ভাবি। আমাদের কম্ফোর্ট নষ্ট হয় এমন কিছুকে ইচ্ছা করেই এড়িয়ে চলি। আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে আমরা সত্য খুঁজি না, আমাদের কম্ফোর্ট খুঁজি। অর্থাৎ, যে ঘটনা বা তথ্য আমাদেরকে ডিসকম্ফোর্ট দিবে সেটাকে আমরা দেখেও না দেখার ভাণ করি। মনে করেন আপনি একটা গাড়িতে বসে আছেন। সেই গাড়িটা যদি ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করে বা কাউকে বোকা বানিয়ে আপনাকে বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে দেয় তখন কিন্তু আপনি মনে মনে খুশী হবেন। আবার ঠিক বিপরীতভাবে, আপনার পাশ দিয়ে আপনাকে বোকা বানিয়ে যদি আরেকটা গাড়ি নিয়ম ভঙ্গ করে কোন ব্যানিফিট নেয় তাহলে তার উদ্দেশে নৈতিক কথা বলবেন এবং সে যে অন্যায় করেছে সেটার জন্যে আপনি কথা শুনিয়ে দিবেন। তার মানে ন্যায় এবং সত্য আপনার স্বার্থের সাথে সমন্বয় করে চলে। কোনো অসৎ এবং খারাপ মানুষের কাছ থেকে আপনি যদি সুবিধা পেয়ে থাকেন তাহলে তার সেই অসততা আপনি মনে মনে মেনে নেবেন।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে তাহলে কি সবাই অন্যায়ের সাথেইে আপস করে চলে? না, সবাই আপস করে না। সংখ্যায় খুব অল্প হলেও অনেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মতামত প্রদান করে। তবে এর ফলে তাকে অনেকটাই সমাজচ্যুত হতে হয়। এখন হয়তো ভাবছেন কয়টা বিষয়ে কজনা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে? এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র আন্দোলনে না। এর অনেক রূপ আছে। মজার বিষয় হচ্ছে সেসব প্রতিবাদীরা আইসোলোটেড হয়ে যায়, কারণ আমি আপনিই নিয়মের জালে তাদের একলা করে দেই। সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্টিং মিডিয়া সব জায়গায় দেখবেন চটুল লোকদের জয়জয়কার। যারা ন্যায়ের কথা বলছে, সমাজ ও দেশের কথা বলছে তাদের অস্তিত্ব থাকছে না। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে ন্যায়ের কথা বলা লোকজনেরা শুধুমাত্র কোণঠাসাই হয় না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আক্রমণের স্বীকারও হয়।

ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে সবচেয়ে ভালো ও জনপ্রিয় ছাত্রটিই সাধারনত সবচেয়ে ভালো মিথ্যাবাদী। অন্যভাবে বললে যে যত সুন্দরভাবে গুছিয়ে এবং কনভিন্সিংলি মিথ্যা বলতে পারে সে তত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এমনকি গবেষকরা বলেছেন যে বর্তমান সমাজে বুঝিয়ে মিথ্যা বলতে পারাটা দারুণ একটা স্কিল হিসাবে গন্য হতে পারে। যারা এই মতবাদে বিশ্বাসী না তাদের অনুরোধ করব একটু ভালো করে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। অনেক ক্ষেত্রেই ডিসিভাররা দারুণভাবে জনপ্রিয়। তারা সুন্দরভাবে গুছিয়ে মিথ্যা বলে আমাদেরকে মিথ্যা গিলিয়ে দিচ্ছে। তাদের মিথ্যা ধরার মতো ক্ষমতা বেশিরভাগ মানুষেরই নেই। যারা মিথ্যাকে ধরতে পারছে তারা প্রতিবাদ করছে না কারণ এতে করে তারা আক্রমণের স্বীকার হবে। এটাই আমাদের সমাজের অদ্ভুত নিষ্ঠুরতা। সত্য যখন আমাদেরকে ডিসকম্ফোর্ট দেয় কিংবা আনসেটেল্ড করে দেয় তখন আমরা সত্যবাদীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আক্রমণ করে বসি।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে কেন সত্যের চেয়ে মিথ্যা বেশি প্রসারিত এবং জনপ্রিয়। এর সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা হচ্ছে, সত্য উপলব্ধি করার জন্যে জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, সত্যকে যাচাই করে নিতে হয়। সত্য কখনো কখনো রূঢ় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্য আমাদের ডিস্কম্ফোর্ট দেয়, আমাদের স্বার্থে আঘাত হানে। অন্যদিকে মিথ্যা হচ্ছে সহজ এবং চটুল। মিথ্যাকে যাচাই করতে হয় না, মিথ্যাকে ধারণ করার জন্যে কোন জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। মিথ্যার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে মিথ্যা আপনাকে কম্ফোর্ট দিবে, কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে দিবে না। সত্য র‍্যাশিওনাল আর্গুমেন্টকে উৎসাহিত করে আর মিথ্যা আবেগকে ম্যানিপুলেট করে। যেটা আবেগকে ম্যানিপুলেট করতে পারে তার জয় তো হবেই, তাই না?

কগনিটিভ ডিসোন্যান্স নামে সাইকলোজিতে একটা পরিস্থিতি আছে। এটা হচ্ছে নিজের ভেতরে নিজের আরেকটা ভিন্নমত। আমার মনে হয় কম বেশি আমরা সবাই এই সমস্যাতে ভুগি। এটার মাত্রা বেড়ে গেলে তখন হয়তো রোগাক্রান্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। অনেক সত্যই আমরা জানি কিন্তু সেই সত্যকে আরেকটা যুক্তি দিয়ে আমরা নিজের কাছে নিজেই আশ্বস্ত হতে চাই। একটা উদাহরণ দেই যেটা আমাদের আগে আলোচনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একজন অসৎ এবং খারাপ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা নেতা হিসাবে মেনে নেই। একজন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজকে দেখবেন পিএইচডি করা এক ব্যাক্তি ভোট দিচ্ছে। এসবই হচ্ছে কম্ফোর্ট দেয়া মিথ্যার আশ্রয় নেয়া। একজন খারাপ মানুষকে যখন আমরা সমর্থন করি তখন নিজের কাছে নিজেই যুক্তি দেই যে, অমুক তো এর চেয়েও বেশি খারাপ কাজ করেছে। তমুক তো, এই ভালো কাজটা করেনি। অতএব, আমি যে খারাপ মানুষটাকে সমর্থন করছি সেটা করাই যায়। আমাদের সমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের এক চূড়ান্ত জায়গায় এসে উপনীত হয়েছে। আমরা নিজ স্বার্থে মিথ্যাকে আকড়ে ধরে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে বসবাস অনুপযোগী এক সমাজ ব্যবস্থা রেখে যাচ্ছি। আমরা সম্মিলিতভাবে মিথ্যাকে মেনে নিয়েছি। আমরা সবাই কগনিটিভ ডিসোন্যান্সে সংক্রমিত।

লেখক: কথাশিল্পী ও নাট্যকার।

মন্তব্য

বিশেষ
Award distribution of Dr Hamdu Mia Memorial Scholarship in Nabinagar

নবীনগরে ডা. হামদু মিয়া স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তির পুরস্কার বিতরণ

নবীনগরে ডা. হামদু মিয়া স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তির পুরস্কার বিতরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ডা. হামদু মিয়া স্মৃতি শিক্ষা বৃত্তি–২০২৪-এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার ইব্রাহিমপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. কামরুজ্জামান। তিনি অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বও করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নবীনগর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম হোসেন খান টিটু, ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মোছা, সাবেক চেয়ারম্যান মো. নোমান চৌধুরী, ইব্রাহিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন, প্রধান শিক্ষক শাহানাজ আক্তার, আল আমিন খন্দকার, মো. আলী মাহমূদুর রহমান রাছেল ও মাজেদুল হকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন ৯৬ ব্যাচ।

শেষে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

মন্তব্য

p
উপরে