রাস্তার পাশে বুকে পোস্টার ঝুলিয়ে আহাজারি করছেন বয়স্কা এক নারী। পাশে এক কিশোরী। পোস্টারে লেখা- ‘সাহায্যের আবেদন, আমরা বাঁচতে চাই’।
‘মজার টিভি’ নামের ফেসবুক পেজে এই নারী ও তার কিশোরী মেয়ের আহাজারির ভিডিও আপলোড হয় গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে। মাহসান স্বপ্ন নামের একজন অনলাইন ভিডিও ক্রিয়েটর এই পেজটি পরিচালনা করেন।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৮৪ লাখ বার, শেয়ার হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার। এতে মন্তব্য করেছেন ১০ হাজারের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী।
ভিডিওতে তুহিন সুলতানা তপু নামের ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, তিনি অভিজাত পরিবারের সন্তান, বাবা উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক। তার এক মেয়ে নায়িকা, ছেলেরাও বেশ ভালো অবস্থানে আছেন। অথচ তাদের কেউ দেখাশোনা করেন না বলে কিশোরী মেয়েটিকে নিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করছেন তিনি।
এই নারীর আহাজারি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওর বিবরণে ০১৯৫৬৮৪১৭৮১ নম্বরটি দিয়ে সেখানে বিকাশে টাকা পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
একটি শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ওই ভিডিওর ভিত্তিতে প্রতিবেদনও প্রকাশ করে রোববার। সেখানেও উল্লেখ করা হয়েছে বিকাশে টাকা পাঠানোর মোবাইল ফোন নম্বর। ওই প্রতিবেদনটিও অসংখ্য শেয়ার হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তবে সোমবার সকালে নিউজবাংলা কার্যালয়ে ফোন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক জানান, গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি পোস্টে তার নজর আকৃষ্ট হয়। সেখানে এই একই নারীর আলাদা ছবি দিয়ে মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, পিতৃহারা চতুর্থ শ্রেণির ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে তুহিন সুলতানা তপু নামের ওই নারী এখন কপর্দকশূন্য। অসুস্থ অবস্থায় তিনি চিকিৎসা নিতেও পারছেন না।
সেই পোস্টটিও ফেসবুকে বেশ ভাইরাল হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক জানান, তখন অন্য অনেকের পাশাপাশি তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে এক লাখ টাকার বেশি অর্থ সংগ্রহ করে ওই নারীকে দিয়েছেন। এমনকি এখনও কয়েকজন তাকে বিকাশে প্রতি মাসে টাকা পাঠাচ্ছেন।
এমন তথ্য পাওয়ার পর সোমবার সকালেই অনুসন্ধানে নামে নিউজবাংলা। শুরুতেই বিকাশের জন্য দেয়া ফোন নম্বরে তুহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কোথায় আছেন- জানতে চাইলে কোনো তথ্যই দিতে রাজি হননি তিনি।
তুহিন বলেন, ‘আমি কারো সাথে দেখা করব না। কেউ আমার ভালো চায় না, সবাই আমার ক্ষতি করতে চায়।’
একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘তোরা সবাই গোয়েন্দা। সবাই আমার ক্ষতি করতে চাস। আমার বিচারপতি বাবা তোদেরকে আমার পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে।’
‘বিচারপতি বাবা’র পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওর পরিচয় সবাই জানে, ওর পরিচয় আমি আলাদা করে বলতে চাই না। দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ওকে চেনেন, আপনি কেমনে চেনেন না! ওর নাম আমি মুখে আনতে চাই না।’
নিউজবাংলার প্রতিবেদক এরপর পরিচয় গোপন করে আরেকটি নম্বর থেকে ফোন করে তুহিনকে সরাসরি অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দেন।
তবে এবারেও ঠিকানা বলতে রাজি হননি তিনি। তুহিন বলেন, ‘বিকাশে টাকা পাঠান। বিকাশে পাঠাতে সমস্যা হলে আমি উত্তরা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিচ্ছি সেখানে টাকা পাঠিয়ে দিন। তাও আমি কোনোভাবে দেখা করব না।’
এর কিছু সময় পরেই বন্ধ হয়ে যায় তুহিনের ফোন নম্বর। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাই নতুন কৌশল নেয় নিউজবাংলা।
ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিওতে মাহসান স্বপ্নকে বলতে শোনা যায়, তুহিনের বড় মেয়ের নাম অবনী, তিনি অভিনয়শিল্পী। সেই সূত্র ধরে টিভি নাটকের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন- অভিনয়শিল্পী সংঘে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা।
তবে সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অবনী নামের কোনো অভিনয়শিল্পী আমাদের সংগঠনে নেই। ব্যক্তিগতভাবেও এই নামের কোনো অভিনেত্রীকে আমি চিনি না।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে খোঁজ নিয়ে সেখানেও অবনী নামের কোনো অভিনেত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। শিল্পী সমিতির অফিস সেক্রেটারি মো. জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ভোটার লিস্টে অবনী নামের কোনো অভিনয় শিল্পী নেই। নতুন কয়েকজন শিল্পী সমিতির সদস্য হয়েছেন, সেখানেও অবনী নামের কোনো অভিনেত্রী নেই।’
অবনীকে না পেয়ে অন্যপথে অনুসন্ধান শুরু করে নিউজবাংলা টিম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক তুহিনকে সহায়তার উদ্যোগ নেয়ার সময় তাকে নিয়ে পোস্টদাতা মোহাম্মদ বদরুদ্দোজার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। বদরুদ্দোজা সে সময় মেসেঞ্জারে তাকে নিশ্চিত করেন, তিনি নিজে তুহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হন।
বদরুদ্দোজা প্রমাণ হিসেবে সে সময় উত্তরা ব্যাংকে তুহিনের নামে স্থগিত থাকা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সচল করার আবেদনপত্রের কপিও পাঠান। ওই কপিতে দেখা যায়, বদরুদ্দোজা যেদিন তুহিনকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন, ঠিক সেদিনই (২২ সেপ্টেম্বর) তুহিনের নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সচল করার আবেদন করা হয়েছিল।
নিউজবাংলা ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে মোহাম্মদ বদরুদ্দোজার সঙ্গে। ফেসবুক প্রোফাইলে এনবি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন বদরুদ্দোজা। মেসেঞ্জারে তুহিনকে নিয়ে জানতে চাইলে শুরুতে তিনি দাবি করেন, বিষয়টি বুঝতে পারছেন না। এরপর তুহিনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সচল করার আবেদনপত্রের নমুনাটি পাঠানো মাত্র তিনি নিউজবাংলা প্রতিবেদককে ব্লক করে দেন।
বদরুদ্দোজার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে ২২ সেপ্টেম্বরের পোস্টটি সরিয়ে ফেলার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে লিংকড-ইনে মোহাম্মদ বদরুদ্দোজার একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেখানে দেখা যায়, তিনি এনবি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি রোবা এসএনএস এলএলসি নামের একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (ম্যানেজিং পার্টনার)। রাজধানীর কলাবাগানের সুলতানা টাওয়ারে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়।
তবে মঙ্গলবার বিকেলে সুলতানা টাওয়ারে গিয়ে জানা যায়, রোবা এসএনএস এলএলসি নামের প্রতিষ্ঠানটি ভবনের তৃতীয় তলায় ছিল আরও দুই বছর আগে। এরপর সেটি অন্য ঠিকানায় চলে যায়। এই ভবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার আবু বক্করের কাছ থেকে মোহাম্মদ বদরুদ্দোজার একটি ফোন নম্বর পায় নিউজবাংলা।
বদরুদ্দোজাকে ফোন করা হলে এবার তিনি কথা বলতে রাজি হন। তিনি জানান, সেপ্টেম্বরে ধানমন্ডি এলাকায় রাস্তার পাশে তুহিনকে দেখতে পান তিনি। এরপর তার দেয়া বিবরণ শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
বদরুদ্দোজা বলেন, ‘সে সময় আমি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়ার পর অনেকেই সাহায্য করার আগ্রহ জানিয়ে যোগাযোগ করেন। আমি নিজের গাড়ির ড্রাইভার পাঠিয়ে তুহিনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সচল করি। তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়।’
বদরুদ্দোজা দাবি করেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে তুহিনের কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়তে শুরু করে। এরপর তিনি নিজের ফেসবুক পোস্টটি ডিলিট করে দেন এবং বনশ্রী থানায় একটি জিডি করেন। পরে তিনি আর তুহিনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি। কেউ সাহায্য পাঠাতে যোগাযোগ করলে খোঁজখবর নিয়ে নিজ দায়িত্বে টাকা পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রথম দিকে এ বিষয়ে নিউজবাংলার জিজ্ঞাসা এড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বদরুদ্দোজা সুস্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
তুহিনের অবস্থান জানতে ভিডিও ক্রিয়েটর মাহসান স্বপ্নের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করে নিউজবাংলা। তবে ফেসবুক পেজে তিনি যে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়েছেন সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। বিভিন্নভাবে পাওয়া তার আরও দুটি ফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে।
এমন অবস্থায় স্বপ্নর ফেসবুকে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হয়, এরপর তিনি মঙ্গলবার সকালে একটি ল্যান্ডফোন থেকে নিউজবাংলা কার্যালয়ে ফোন করেন।
তুহিনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহসান স্বপ্ন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই আন্টির সাথে আমার রাস্তায় হঠাৎ করে দেখা। তিনি তার সমস্যার কথা আমাকে বলেন। সব কাগজ-পত্র আমাকে দেখান। তারপর আমি উনাকে সাহায্য করার জন্য ভিডিওটি করি। কারণ, আমি এ ধরনের অসহায় মানুষের পাশে সব সময় দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।’
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে তুহিনের বিকাশ নম্বরে অনেকে টাকা পাঠাচ্ছেন বলেও জানান স্বপ্ন।
তবে তুহিনের বাবার পরিচয় তিনিও জানাতে রাজি হননি। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সবই জানি, কিন্তু কিছু বলব না। বেশ কিছুদিন যাবত আমার সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ রাখতে হয়েছে। সেই বিচারপতির ভয়েই এটি করতে হয়েছে।’
এমন অবস্থায় নিউজবাংলার হাতে আসে একটি নথি, যাতে দেখা যায়- তুহিন একটি জায়গায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে নিজের নাম-ঠিকানা দিয়েছেন। সেই নথিতে তিনি রাজধানীর বনশ্রীর একটি বাসার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তুহিনের বাবার নাম মো. শামসুল হুদা, স্বামী ফখরুজ্জামান তালুকদার।
বনশ্রীর বাসার ঠিকানায় মঙ্গলবার দুপুরের দিকে গিয়ে জানা যায় তুহিন বনশ্রী এলাকায় আসেন ২০১৫ সালে। তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বনশ্রীর জি ব্লকের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সে বাসার নিরাপত্তাকর্মী নিউজবাংলাকে জানান, তুহিনের স্বামী ফখরুজ্জামান বিদেশ থাকেন।
বনশ্রী এলাকায় অনুসন্ধানে জানা গেছে, তুহিন সুলতানা ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করতেন। গেল এক বছরে তিনি তিন বার বাসা বদল করেছেন। তিনটি বাসার ভাড়া যথাক্রমে ১৬ হাজার, ১৪ হাজার ও ১২ হাজার টাকা। কখনও কোনো বাসার ভাড়া বকেয়া পড়েনি।
তুহিন বনশ্রীর যে বাসায় শেষ ভাড়া ছিলেন সে বাসার মালিক জহিরুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখে আমার বাসার সাততলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তিনি। তবে হঠাৎ করেই নভেম্বর মাসের শুরুতে জানান, বাসা ছেড়ে দেবেন। এরপর সে মাসের ২৫ তারিখ বাসা ছাড়েন, কিন্তু ডিসেম্বর মাসের ভাড়াও পরিশোধ করে দেন।’
বাসা ছাড়ার আগে তুহিন বাড়ির মালিককে জানিয়েছিলেন, তার বাবা অসুস্থ, তিনি তার সঙ্গেই থাকবেন।
বনশ্রী এলাকায় যেসব বাড়িতে তুহিন ভাড়া ছিলেন, তার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তুহিন বেশ স্বচ্ছল ছিলেন। অন্য ভাড়াটিয়াদের মধ্যে তিনিই নিয়মিত সবার আগে ভাড়া পরিশোধ করতেন। করোনার সময়েও ব্যতিক্রম হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তুহিনের তিন সন্তান। বড় ছেলের নাম অনিন্দ্য, এরপর মেয়ে অবনী, যাকে অভিনেত্রী বলে পরিচয় দিয়েছেন তুহিন। এর পর ছোট মেয়ে বর্ণা (ছদ্ম নাম), সে বনশ্রীর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
স্কুলে গিয়ে জানা যায়, করোনায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে অনলাইনে। তাই স্কুলে দায়িত্বশীল কারো উপস্থিতি নেই। তবে স্কুলের নিবন্ধন বইয়ে বর্ণার (ছদ্ম নাম) বাবার তাইওয়ানের একটি ফোন নম্বর দেয়া আছে। তবে কয়েকবার চেষ্টা করেও সেই নম্বরে সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।
স্কুলের অফিস সহকারী নাফিজ নিউজবাংলাকে জানান, বর্ণা (ছদ্ম নাম) ও তার মা স্কুলে খুবই পরিচিত মুখ। করোনা পরিস্থিতির আগে তুহিন মেয়েকে নিয়ে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করতেন। সবার কাছে নিজেকে সাবেক বিচারপতির মেয়ে পরিচয় দিতেন। নাফিজ জানান, সবশেষ নভেম্বর মাসে তুহিন স্কুলে এসেছিলেন। তখন তিনি মেয়ের স্কুলের ফি আগামী জুন পর্যন্ত পরিশোধ করেন। বর্ণার (ছদ্ম নাম) স্কুলে মাসিক বেতন ১৪০০ টাকা।
স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী শাহ নেওয়াজ নিউজবাংলাকে জানান, তুহিন সুলতানার বাসায়ও যাতায়াত ছিল তার। তিনি বলেন, ‘আমি তার ভাইয়ের মতো ছিলাম। তিনি তো খারাপ মানুষ ছিলেন না। তার ঘরে দামি-দামি জিনিস আছে, সে তো এত গরিব না। আমার সাথে নভেম্বরের পর থেকে আর যোগাযোগ নাই। ফোন দিলে ফোনও ধরেন না। কী সমস্যা কে জানে।’
ভিক্ষা করার ভিডিও শাহ নেওয়াজও দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘তার অবস্থা এত খারাপ হওয়ার কথা না। আমার ছেলেকে সে সব সময় টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করত। আর আজকে এমন খারাপ অবস্থা বিশ্বাস হয় না।’
শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘তার (তুহিন) বাসায় দামি-দামি জিনিসপত্র, টিভি, ফ্রিজ, এসি সবই ছিল। ঘরে ভালো খাবার থাকত সবসময়। তবে এই এলাকা ছেড়ে যাবার পর নভেম্বর মাসে একবার আমাকে ফোনে জানায়, তার মেয়েটা না খেয়ে আছে। আমি রান্না করে নিয়ে যেতে চাইলাম। তারপর আর ফোন ধরল না। এরপর আর যোগাযোগ নাই।’
সেপ্টেম্বরের ফেসবুক পোস্টে সাহায্য পাঠাতে বিকাশ এজেন্ট নম্বর ০১৮৮৩৭৬৬৪৪৪ এবং মেয়ে বর্ণা-এর ০১৬১১৪৪৫৪৫০ নম্বর দিয়েছিলেন তুহিন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে বিকাশ এজেন্টের শাহদাত টেলিকম এর অবস্থান। প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী নিউজবাংলাকে জানান, কিছু দিন পরপরই তুহিন তার মেয়েকে নিয়ে দোকানে এসে টাকা তুলে নিয়ে যেতেন। তবে গত কিছুদিন তারা আসেননি।
ফেসবুকে এবার আপলোড করা ভিডিওতে বিকাশে টাকা পাঠাতে নিজের ব্যক্তিগত ০১৯৫৬৮৪১৭৮১ নম্বরটি দিয়েছেন তুহিন সুলতানা।
নিউজবাংলা এই ফোন নম্বর পুলিশকে সরবরাহ করে বাহিনীর সহায়তা চায়। এর পরপরই শনাক্ত হয় টাঙ্গাইল সদরের বটতলা বাজার এলাকায় আছেন তুহিন।
তুহিনের বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে নিউজবাংলার হাতে আসা নথিতে বাবার নাম মো. শামসুল হুদা পাওয়া যায়। এই নাম যাচাই করতে গিয়ে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টে গত দুই দশকে এই নামে একজনই বিচারক ছিলেন।
হাইকোর্ট বিভাগে ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি মো. শামসুল হুদা। ২০১২ সালের ২ নভেম্বর আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে তিনি অবসরে যান। তবে বিচারপতি মো. শামসুল হুদাকে ২০১৩ সালে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। বিচারপতি মো. শামসুল হুদার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে হলেও তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় সপরিবারে আছেন।
গোপালগঞ্জ শহরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিচারপতি মো. শামসুল হুদার তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে, যাদের একজনের নাম তুহিন সুলতানা তপু। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ঢাকায় বিচারপতি মো. শামসুল হুদার বাসায় যোগাযোগ করে নিউজবাংলা।
অন্যদিকে, বুধবার আরেকটি সূত্রে ফখরুজ্জামান তালুকদারের ফেসবুক আইডির সন্ধান পায় নিউজবাংলা। তুহিনের বড় মেয়ে অবনীর ফোন নম্বরও পাওয়া যায়। এর পরেই পরিষ্কার হতে থাকে তুহিনকে ঘিরে নানান রহস্য।
তিন দিনের অনুসন্ধানে খুলল জট
ফখরুজ্জামানের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করা হলে সাড়া দেন তিনি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, এক যুগ আগে আগে তুহিনের সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। অবনী ও অনিন্দ্য তাদের দুই সন্তান। বিয়েবিচ্ছেদের কিছুদিন আগেই দেশ ছেড়ে তাইওয়ানে চলে যান ফখরুজ্জামান। আর সেখান থেকে পরে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। দেশে দুই সন্তানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে তার।
তাহলে বর্ণা (ছদ্ম নাম) কার সন্তান- সেই প্রশ্নের জবাব মিলেছে তুহিনের বড় মেয়ে অবনীর কাছ থেকে। অবনী মডেলিং পেশার সঙ্গে জড়িত। ভাই অনিন্দ্য বিয়ে করার পর যে বাসায় আছেন সেখানেই থাকছেন অবনী।
মোবাইল ফোনে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবার জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসার পার্টনার ছিলেন আবদুস সালাম লিটন নামের একজন। তার সঙ্গে মা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানতে পেরে আমার বাবা দেশ ছেড়ে চলে যান। এরপরেই বাবাকে ডিভোর্স দিয়ে মা লিটনের সাথে থাকতে শুরু করেন।’
বর্ণা (ছদ্ম নাম) এই লিটনেরই সন্তান। বিদেশে যাওয়ার পর ফখরুজ্জামান তার দুই সন্তানের ভরণ-পোষণের জন্য টাকা পাঠাতেন। তবে সেই টাকার পুরোটাই নিজের বিলাসি জীবনের জন্য তুহিন খরচ করতেন বলে অভিযোগ করেন অবনী। এ নিয়ে বিরোধের জেরে প্রায় সাত বছর আগে মায়ের ঘর ছেড়ে যান অবনী-অনিন্দ্য।
অবনী জানান, জনশক্তি রপ্তানিতে জড়িত লিটনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তিনিও নিরুদ্দেশ হন। এরপরই অর্থ সংকটে পড়েন তুহিন। বিচারপতি বাবার বাড়ি থেকে প্রায়ই আর্থিক সাহায্য আনতেন। মায়ের গয়না এনে বিক্রি করার ঘটনাও ঘটেছে। এসব নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় ভাই-বোনের সঙ্গে, ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় বাবার বাড়ির দরজা।
ও আমাদের শেষ করে দিয়েছে: বিচারপতি মো. শামসুল হুদা
বিচারপতি মো. শামসুল হুদা শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছেড়ে দেন ২০১৪ সালে। এরপর থেকে রাজধানীর সেগুনবাগিচার নিজ ফ্ল্যাটে আছেন। শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও তিনি বুধবার বিকেলে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন।
মেজ মেয়ে তুহিনকে নিয়ে বিব্রত বিচারপতি মো. শামসুল হুদা বলেন, ‘ও (তুহিন) ছোট বেলা থেকেই লোভী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করার কথা বললেও আসলে সে এসএসসিও পাস করতে পারেনি। আমি ওর বাবা হয়েও বলছি, ওরে তিন বার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়াইছি, তিনবারই ফেল করেছে।
‘একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু তার সঙ্গে সংসার টেকেনি। ও আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ওর সঙ্গে এখন যে মেয়েটি আছে তার বাবার নাম আব্দুস সামাদ লিটন। আর আমরা বিয়ে দিয়েছিলাম যার সঙ্গে সে এখন নিউজিল্যান্ডে থাকে। বিদেশে থাকলেও ওর সাথে আমাদের এখনও যোগাযোগ আছে।’
তুহিন সুলতানার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা জানিয়ে বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, ‘এর আগেও কয়েকবার এভাবে পোস্ট করেছে। তার এসব আচরণের কারণেই আমার স্ট্রোক করেছে। আমার এই অসুস্থতার জন্য সে-ই দায়ী। এখনও বাসায় বেডে শুয়ে আমার দিন কাটে।
‘তার (তুহিনের) অনেক সম্পত্তির লোভ। সে কী চায় সেটাই আমি জানি না। প্রতি মাসে তাকে হাত খরচের জন্য ১৫ হাজার টাকা করে এখনও আমরা দিয়ে যাচ্ছি।’
বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, ‘প্রত্যেক শীতে আমি গ্রামে কিছু কম্বল বিতরণ করি। সেই কম্বলও চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছে সে (তুহিন)। বাসায় এসে ১০টা মোবাইল চুরি করে নিয়ে গেছে। বাড়িতে আসলেই স্বর্ণ চুরি করে নিয়ে যায়। সে কারণে ও বাসায় আসলেই আমরা ভয় পাই।
‘তার সঙ্গে একজন ইয়াবা ডিলারের সম্পর্ক রয়েছে। আমাদেরকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসায় দিতে পারে- এমন আশঙ্কায় আমরা ওকে বাসায় আনতে ভয় পাই। তাকে গ্রামে যেতে বললে সে যায় না।’
বিচারপতি শামসুল হুদা কথা বলার সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট মেয়ে তানিয়া সুলতানা সুমি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওর (তুহিন) কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। আজ এখানে, তো কালকে আরেক জায়গায়, এসব করেই চলে। তার থাকার জন্য আমাদের গোপালগঞ্জের একটি বাড়ি ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছি, কিন্তু সে সেখানে থাকবে না। গত মাসেও গোপালগঞ্জ থেকে ২৫ হাজার টাকা বাসা ভাড়া উঠিয়ে নিয়ে এসেছে।’
সুমি বলেন, ‘এখন রাস্তায় রাস্তায় এভাবে মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে আমাদের মান-মর্যাদা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। তার এই আচরণের জন্য আমরা এখন সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। আমাদের বাসা থেকে সে দুইশ ভরি স্বর্ণ নিয়ে গেছে। প্রতিটি ভাই-বোনকে বঞ্চিত করছে।’
তুহিনের বেপরোয়া জীবনের তথ্য জানিয়ে সুমি বলেন, ‘সে তার প্রথম স্বামীকে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। দ্বিতীয় স্বামীর সাথে যদিও তার বিয়ে হয়নি, তাকেও পিটিয়ে বের করে দিয়েছে। এখন তার সঙ্গে যে মেয়েটি আছে তাকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে।’
বাবার সম্পত্তির লোভে তুহিন এখন নতুন করে প্রতারণায় নেমেছেন বলেও অভিযোগ করেন সুমি। তিনি বলেন, ‘আমরা ওকে মানসিক ডাক্তারও দেখিয়েছি। ডাক্তার মোহিত কামাল, ডাক্তার হেদায়েত উল্লাহকে দেখিয়েছি। তবে ওর কোনো মানসিক রোগ নেই। সবই ওর ভনিতা। সে টাকার জন্য সব করতে পারে।
‘ওর এই আচরণে আমরা লজ্জিত, মর্মাহত। আমরা সমাজে বের হতে পারছি না। আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলতে পারছি না। সন্তানেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেতে পারছে না।’
তুহিনের বক্তব্য যাচাই না করে একপাক্ষিক ভিডিও প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান বিচারপতি শামসুল হুদা ও তার মেয়ে তানিয়া সুলতানা সুমি।
তুহিন এখন কোথায়
নিউজবাংলা মঙ্গলবার বিকেলে নিশ্চিত হয়, তুহিন ও তার মেয়ে বর্ণা (ছদ্ম নাম) টাঙ্গাইল সদরে অবস্থান করছেন৷ এরপর টাঙ্গাইল প্রতিনিধি শামীম আল মামুনকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে যাওয়া টিম টাঙ্গাইলের সাবালিয়া পাঞ্জাপাড়া এলাকায় বুধবার দিনভর অনুসন্ধান চালায়।
এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই তুহিনের ছবি শনাক্ত করেছেন। তারা জানান, ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তুহিন এ এলাকার একটি বাড়ির পাঁচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। তবে ১৫ দিন পরই সে বাসা ছেড়ে দেন।
পাশের বাড়ির বাসিন্দা রীতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৫ দিনে কয়েকবার তার সাথে আমার কথা হয়েছে। সে জানিয়েছিল, স্বামী বিদেশ থাকে, তার সাথের মেয়েটি পালিত এবং তার আর কোনো সন্তান নেই। আমি দুইবার তার বাসায়ও গেছি, সেখানে দামি-দামি সব জিনিসপত্র ছিল।’
রীতা বলেন, ‘তুহিন খুব উগ্র মেজাজের, আশপাশের সবার সঙ্গে ঝগড়া করতেন। একদিন দেখি বাসার সামনে ট্রাক, সেই ট্রাকে মালামাল তুলে চলে গেলেন। আমাকে বললেন, পাশের এলাকায় বাসা নিছে, কিন্তু ঠিকানা বলে যায় নাই।’
তুহিন টাঙ্গাইল সদরের বটতলা বাজার এলাকায় নতুন বাসা ভাড়া নিয়ে আছেন বলে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন টাঙ্গাইল প্রতিনিধি শামীম আল মামুন ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি হুসাইন ইমাম সবুজ
আরও পড়ুন:
গাইবান্ধা জেলা কারাগারে এক নারী হাজতিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, এক প্রধান কারারক্ষীর সঙ্গে এক নারী কয়েদির ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড’ দেখে ফেলায় তার মেয়েকে এই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই নারী হাজতির নাম মোর্শেদা খাতুন সীমা। তিনি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে। সীমা মাদক মামলায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে গাইবান্ধা কারাগারে বন্দি।
লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা। সেই অভিযোগের কপি নিউজবাংলার হাতেও এসেছে।
অভিযুক্তরা হলেন- গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফা।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নং-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন নারী হাজতি সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।
এতোসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। এদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের অভিযুক্ত প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টির সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার নামটা কেন আসতেছে জানা নেই।
‘ঘটনাটি এক মাস আগের। আরেক প্রধান কারারক্ষী মোস্তফার ডিউটির সময়ের। কিন্তু আমার নাম কেন হচ্ছে বিষয়টি জানি না।’
অপর অভিযুক্ত মহিলা কারারক্ষী তহমিনা আক্তার মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন যা ঘটেছিল তার বিপরীত ঘটনা তুলে ধরে অভিযোগ করা হয়েছে। আরেফিন নামে এক নারী কারারক্ষী ও তার স্বামীর মদদে এই বন্দি এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’
কারারক্ষী তহমিনা আরও বলেন, ‘এই বন্দী (সীমা) একাধিক মামলার আসামি। প্রশাসনের লোকজনের ওপর হাত তোলার একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঘটনার দিনও সাবানা নামে এক নারী কারারক্ষীর গায়ে হাত তুলেছিলেন এই বন্দি।’
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) এডিসি মহোদয় তদন্তে এসেছিলেন। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ভেতরের ব্যাপারে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে একটি ব্যাপার তৈরি হয়েছে, যা ফোনে বলা সম্ভব নয়। তবে ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) বিষয়টির তদন্ত করেছি। খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’
ফরিদপুরের কানাইপুরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। দুর্ঘটনায় এক পরিবারের চার সদস্যসহ মোট ১৪ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরও দুজন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুরের দিগনগর তেঁতুলতলায় ঢাকা থেকে মাগুরা অভিমুখী ইউনিক পরিবহনের একটি বাস ও পিকআপের সংঘর্ষে সড়কেই ঝরে পড়ে ১১ প্রাণ। হাসপাতালে নেয়ার পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।
তবে সরেজমিনে ঘুরে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে উল্টো লেনে গাড়ি চালানো ও এবড়ো খেবড়ো সড়কের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ফরিদপুর পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার ও স্থানীয়দের দাবি অন্তত তা-ই।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও পিকআপ দুটিরই অতিরিক্ত গতি ছিল। আর পিকআপচালক তার নির্দিষ্ট লেন ছেড়ে বিপরীত লেনে চলে আসেন। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাসের চালক ফিট ছিলেন কি না, পিকআপটির চালকের লাইসেন্স ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার সুবাস বাড়ৈ বলেন, ‘গাড়িটি (বাস) ওভার স্পিডে (অতিরিক্ত গতি) চলছিল। এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই শেখ লিমনের বাড়ি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখানে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কিছু বিট ও তার পাশে গর্ত আছে, রাস্তাও এবড়ো থেবড়ো। ঈদের আগেও এখানে বিশ-বাইশটি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সকালে ওই বিটের কাছেই দুর্ঘটনা ঘটে।’
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, নিহতদের দাফনের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের পরবর্তীতে ৫ লাখ এবং গুরুতর আহতদের ৩ লাখ টাকা করে প্রদান করা হবে।
আরও পড়ুন:কর্ণফুলীর সল্টগোলা-ডাঙারচর ঘাটসহ ২০টি নদী পারাপার ঘাট ইজারা না হওয়ায় নামমাত্র ‘খাস কালেকশন’ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিরুদ্ধে। এতে করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চসিক রাজস্ব শাখার কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের পুরনো ইজারাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে খাস আদায়ে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মেয়রের নামও ভাঙাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চসিকের এসব ঘাট দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রীসহ পণ্য আনা-নেয়া করা হয়। ঘাটগুলো নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ২০ ঘাটের ইজারা দেয়া সম্ভব হয়নি।
ঘাট ইজারা না হওয়াটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে চসিকের রাজস্ব শাখা ‘খাস কালেকশন’ আদায়ের দিকে হাঁটছে। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিতে ইজারালোভী সিন্ডিকেটকে সহায়তা করছেন। খাস কালেকশনের নামে রাজস্ব আদায় কম দেখানোর সুযোগ তৈরি করছেন তারা।
এই খাস কালেকশনকে রাজস্ব ফাঁকির কৌশল হিসেবে অভিহিত করেছে পাটনিজীবী একাধিক সমিতি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন পুরনো ইজারা ব্যবসায়ী বলেন, খাস কালেকশনে টাকা আদায় কম দেখানো গেলে পরবর্তী বছরের ইজারা মূল্য কমানোর আইনগত পথ সৃষ্টি হয়। এছাড়া একাধিকবার খাস কালেকশনে পরের বছর আইনগত ঝামেলা এড়িয়ে কম টাকায় ইজারা নিতে পারেন ব্যবসায়ীরা। এভাবেই কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারসাজিতে কয়েক বছর পর পর গুরুত্বপূর্ণ ঘাটগুলোর ইজারা মূল্য কমে যায় এবং সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়।
তারা বলেন, এই পদ্ধতিতে সরকারি কোষাগারে নামমাত্র অর্থ জমা হলেও বড় অংকের টাকা চলে যাবে চসিক সিন্ডিকেটের পকেটে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এ বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে চসিক কিংবা সরকার।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, হাইকোর্ট বিভাগের রিট (১৫১৬৩/২৩) পিটিশনের কারণে এবার বাংলা ১৪৩১ সনে চসিক নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটগুলোর ইজারা স্থগিত রয়েছে। ঘাটে ঘাটে আবার কানাঘুষাও চলছে যে এসব চসিকেরই কৌশল। কেননা এতে কপাল খুলে যায় একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও চসিক-সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের।
চসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাটগুলো হলো- পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাট, সল্টগোলা ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, নয়ারাস্তা পাকা পুলঘাট, সদরঘাট, ফিশারীঘাট, নতুনঘাট, এয়াকুব নগর লইট্যা ঘাট, পতেঙ্গা ১৪ নংম্বর ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট, ১২ নম্বর তিনটিংগা ঘাট, ৭ নম্বর রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন ঘাট, ৯ নম্বর বিওসি ঘাট, অভয় মিত্র ঘাট, চাক্তাই খালের পাশে পানঘাট থেকে গাইজ্জের ঘাট, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট, বাকলিয়া ক্ষেতচর ঘাট, চাক্তাই ঘাট ও চাক্তাই লবণ ঘাট।
চলতি বছরে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্য ছিল- পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাট ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সল্টগোলা ঘাট ৫৭ লাখ ৩২ হাজার ১০০ টাকা, বাংলাবাজার ঘাট ২৪ লাখ ৪ হাজার ৬০০ টাকা, সদরঘাট ২১ লাখ ৯৭ হাজার ১২৪ টাকা, ফিশারি ঘাট ২৪ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা, পতেঙ্গা ১৪ নম্বর ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট ৮৭ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৯ নম্বর বিওসি ঘাট ৩৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।
হিসাব করলে দেখা যায়, পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্যের সঙ্গে ২০ শতাংশ ভ্যাট যোগ করলে মোট ইজারা দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এতে দৈনিক কিস্তি পড়ে ৮৮ হাজার ৬০২ টাকা। অনুরূপভাবে সল্টগোলা ঘাটের দৈনিক কিস্তি ১৮ হাজার ৮৪৫ টাকা।
এভাবে প্রতিটি ঘাটে দৈনিক ১০ হাজার থেকে ৮৮ হাজার টাকার মতো ইজারা আদায় হওয়ার কথা। কিন্তু অতি কৌশলে চসিকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দৈনিক মাত্র ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার নামমাত্র মূল্যে খাস কালেকশন আদায়ের প্রক্রিয়া নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
অভয় মিত্র ঘাটের খাস কালেকশনকারী মো. আবুল জানান, দৈনিক দু’হাজার টাকা হিসাবে তিনি এই ঘাট নিয়েছেন। বাংলাবাজার ঘাটের লোকমান দয়াল জানান, দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার টাকায় তিনি এই ঘাট দেখাশোনা করছেন।
চসিক নীতিমালায় ঘাট ইজারা কিংবা খাস আদায়ে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত স্থানীয় পাটনিজীবী সমিতিকে ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু খাস আদায়ের জন্য স্থানীয় পাটনিজীবী সমিতিগুলো মেয়রের কাছে ধর্না দিয়েও সাড়া না পায়নি। অনন্যোপায় হয়ে তারা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন কিংবা মানববন্ধন কর্মসূচির চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানা গেছে।
সল্টগোলা ডাঙ্গারচর পাটনিজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাম্পান মাঝিরা সাম্পান চালিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে দুমুঠো ডাল-ভাত খেতে চাই। আমরা চাই কেউ আমাদের পেটে লাথি না মারে। টোল কিংবা খাস কালেকশন যে আদায় করবে করুক, আমরা এই ঘাটের মাঝি; আমরা যাত্রী পারাপার করতে চাই।
‘বর্তমানে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে খাস কালেকশন দিচ্ছি। এখনও চসিক থেকে কেউ আসেনি। আমরা সরকারি রেজিস্ট্রেশনধারী পাটনিজীবী সমিতি। কিন্তু বাইরের কিছু লোক ঘাট দখলের পাঁয়তারা করছে ঘাটে চাঁদাবাজি করার জন্য। আমরা এসব হতে দেব না।’
বেশিভাগ ঘাটের ইজারাদার আব্দুল শুক্কুর প্রকাশ তেল শুক্কুর বলেন, ‘আমরা কয়েকটি ঘাটের খাস কালেকশন করতেছি। ১৫ দিন পর পর সিটি করপোরেশনে টাকা দিতে হয়।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কিছু পাটনিজীবী সমিতি মিলে হাইকোর্টে রিট করে স্টে-অর্ডার করেছে; যাতে ইজারা টেন্ডার বন্ধ থাকে। সে কারণে ঘাটগুলোর ইজারা বন্ধ রয়েছে। আমরা ডকুমেন্টস সংগ্রহ করছি। শিগগিরই রিট শুনানি করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর বর্তমানে ঘাটগুলো বিভিন্নজনকে বিভিন্নভাবে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এস্টেট শাখা ভালো বলতে পারবে।’
চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সাব্বির রাহমান সানি বিশেষ ট্রেনিংয়ে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চসিকের সহকারী এস্টেট অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের আইন শাখা কাজ করছে। শিগগিরই হাইকোর্টের স্টে-অর্ডারটি ব্যাকেট করা হবে। তারপর ঘাটগুলোর টেন্ডার কল করা হবে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব লোকজন ঘাটগুলো দেখাশোনা করছে। আর সল্টগোলা ডাঙারচর ঘাটে লোকজন গেছে।’
চসিক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে। কিছু করার নেই। খাস কালেকশনে ঘাট চলছে। যেহেতু আদালতের নির্দেশে স্থগিত ইজারা। রিট শুনানির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। কিন্তু এভাবে খাস কালেকশন চলতে থাকলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসবে না সেটাও সত্য।’
রেলওয়ের ৬৬ শতক জলাশয় ভরাট করে দখলে রেখেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। এক্ষেত্রে তিনি অজুহাতের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন খুলনা সিটি করপোরেশনকে (কেসিসি)। তার দাবি, মেয়র ওই জায়গায় পার্ক বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই পুলিশে অভিযোগ দিয়েও সেই সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারছে না রেলওয়ে।
তবে কেসিসি থেকে জানানো হয়েছে, সেখানে কোনো নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়নি। আর কাউন্সিলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কিছুই জানেন না মেয়র।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায় খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমি রয়েছে। কয়েক বছর আগে স্থানীয় জনি মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে ওই জমি ইজারা দেয়া হয়েছিল। ওই জমিটুকু জলাশয় হওয়ায় ইজারার শর্তে উল্লেখ ছিল যে তা ভরাট করা যাবে না। তবে ইজারা নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই জায়গাটি ভরাট করে ফেলা হয়।
রেলওয়ের যশোর ও খুলনার ভূমি কর্মকর্তা মহসিন আলী বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলরের নির্দেশে ওই জমি ভরাট করা হয়েছে। জনি মিয়ার দায়িত্ব ছিল ওই জলাভূমি রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের। কিন্তু তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্নার সঙ্গে যোগসাজস করে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ফেলেছেন।’
শর্ত ভঙ্গ করে ভূমি ভরাট করায় জনি মিয়ার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর সরকারি রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ভূমি কর্মকর্তা। তবে প্রভাবশালী কাউন্সিলরের চাপে পুলিশ কিছুই করতে পারেনি।
মহসিন আলী বলেন, ‘তৎকালীন ভূমি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জিআরপি থানায় যে ডায়েরি করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছিল। ওই সময়ে কাউন্সিলর মুন্না ও তার লোকজন প্রভাব খাটিয়ে ওই তদন্ত বন্ধ করে দেন। অবশেষে রেলওয়ের ৬৬ শতক জমির পুরো জলাশয়টি ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যায়।’
সম্প্রতি রেলওয়ের ওই সম্পত্তি পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। সেখানে দেখা যায়, জলাশয়টির কোনো অস্তিত্ব নেই। পুরো জায়গাটি সমতল মাঠে পরিণত হয়েছে। আর কিছু শ্রমিক ভরে ফেলা জায়গাটি সমতল করছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, রেলওয়ের ওই জমিতে শিশুপার্ক, কাউন্সিলর কার্যালয়, দোকানপাট ও বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ শেখ বলেন, ‘রেলওয়ের মালিকানাধীন ওই জায়গা যখন ভরাট করা হয় তখন কাউন্সিলর মুন্না কেসিসির প্যানেল মেয়র ছিলেন। তাই প্রকাশ্যে জমি ভরাট করলেও তাকে বাধা দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি রেলওয়ের কর্মকর্তারা এখানে এসে অসহায় বোধ করেন। মুন্না স্পষ্ট করেই তাদেরকে বলে দেন- এটি কেসিসির মালিকানাধীন পরিত্যক্ত জমি এবং তারা শিশুদের জন্য একটি পার্কসহ সেখানে কিছু স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। তখন রেলওয়ের কর্মকর্তারা পুলিশের সহায়তা নেন।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় খুলনার জিআরপি থানার ওসি ইদ্রিস আলী মৃধার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কাউন্সিলর দাবি করেন যে ড্রেন সংস্কারের সময় জমে থাকা মাটি ফেলার জায়গা নেই, তাই কেসিসি মেয়রের নির্দেশে তারা মাটি দিয়ে জলাশয়টি ভরাট করছেন।’
যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্নাও দাবি করেন, কেসিসি মেয়রকে জানানোর পর তিনি জলাশয়টি ভরাট করেছেন।
তিনি বলেন,’ জলাশয়টি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। আর তা স্থানীয়দের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই আমি মেয়রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি এবং জনগণের স্বার্থে জলাশয়টি ভরাট করে দিয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে সেখানে একটি শিশুপার্ক নির্মাণ করা হবে।
অনুমতি ছাড়া রেলওয়ের সম্পত্তি জলাশয় ভরাট করা আইনসঙ্গত কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘ওই জমিতে সিটি করপোরেশনের পার্ক স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আর জমি ভরাট ও দখলের ব্যাপারে মেয়র কোনো কিছুই জানেন না।’
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল। তিনি বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জলাশয় দখল করে নিলেন। আর জমির মালিক সরকারি প্রতিষ্ঠান পুলিশের আশ্রয় নিয়েও তা রক্ষা করতে পারলো না। এখানে আইন অন্ধ দৃষ্টির ভূমিকা রেখেছে।’
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূমি সম্পত্তি কর্মকর্তা (পাকশী জোন) মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘যারা জলাশয়টি ভরাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি ইতোমধ্যে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে জায়গাটির চারপাশে বেড়া দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ম্যানেজার আল-আমিনের জালিয়াতির নতুন নতুন খবর বেরিয়ে আসছে। ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা নয়-ছয় করে এই কর্মকর্তা ব্যক্তি জীবনে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন। চাকরির আড়ালে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উদ্যোগে তদন্ত চলছে। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর এভাবে ব্যাংকের বিপুল টাকা সরিয়ে নিয়ে চাকরির আড়ালে নিজের ব্যবসা ফেঁদেছেন ম্যানেজার আল-আমিন। ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।
সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এদিকে জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল বুধবার সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে সোমবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই সদস্যের তদন্ত দলও তাদের মতো করে তদন্ত করছে।
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের বিপুল পরিমাণ টাকার হদিস মিলছে না- এমন খবরে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার হিসাবধারী গ্রাহকরাও উৎকণ্ঠিত। তারা নিজ নিজ হিসাবের টাকার খবর জানতে ভিড় করছেন ব্যাংক কার্যালয়ে।
ইতোমধ্যে গ্রাহকদের সিসি একাউন্টসহ বিভিন্ন হিসাব থেকে বড় অংকের টাকা নয়-ছয় হওয়ার শঙ্কা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তবে এখনই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাচ্ছেন না তদন্তকারী দলের সদস্যরা।
জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে জনতা ব্যাংক তামাই শাখা থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে রোববার রাতে গ্রেপ্তার হন ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তা। এর আগে অভিযুক্তরা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে ২০ লাখ টাকা ভল্টে ফেরত দিয়েছেন- এমন তথ্য অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনুসন্ধানে গিয়ে ব্যবস্থাপক আল-আমিনের পার্টনারশিপে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। আল-আমিনের বসবাস সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি মতি সাহেবের ঘাট মহল্লায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ছয়-মাস ধরে ব্যবস্থাপক আল-আমিন তার বসতবাড়ির পাশে আবুল পাটোয়ারীর পাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনের কারখানা। ‘এম আর ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের কারখানাটিতে পিভিসি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল তৈরি হয়।
এই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের বড়বাজার পাতিলাপট্টিতে পুরাতন হিরাঝিল মার্কেটে ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’ নামে ইলেক্ট্রিক দোকানের প্রোপ্রাইটার হিসেবে ব্যবসায় করছেন আল-আমিনের ভাতিজা মঈন উদ্দিন পলাশ। ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’-এর আবরার নামটি আল-আমিনের ছোট ছেলের।
আল-আমিনের ব্যবসার গণ্ডি ছড়িয়েছে রাজধানীতেও। ঢাকার নবাবপুর ও মিরপুরে এম আর এন্টারপ্রাইজ নামে ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর দুটি দোকান রয়েছে তার। গাইবান্ধায় যমুনা নদী তীর রক্ষাবাঁধের কাজে সিসি ব্লক তৈরি প্রকল্পেও আল-আমিন টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের হোসেনপুর মোল্লাবাড়ি মহল্লার মিজানুর রহমানের সঙ্গে পার্টনারশিপে এসব ব্যবসা কারখানা ও দোকানপাট পরিচালনা করেন ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তাদের ব্যবসায়িক অফিস রয়েছে।
মঈন উদ্দিন পলাশ অবশ্য ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিকানা নিজের বলে দাবি বলেন, ইলেক্ট্রিক তার উৎপাদন কারখানাটি তার চাচার নয়, মিজানুর রহমানের।
অপরদিকে আল-আমিনের বন্ধু মিজান বলেন, ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিক আমি। আল-আমিন বা তার ভাতিজা পলাশ নয়।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক যৌথভাবে ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন ও মিজানুর রহমান।
বুধবার দুপুরে আল-আমিনের ধানবান্ধি মহল্লার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী রুনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিজানের সাথে আমার স্বামী আল-আমিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আছে। কিন্তু তার সাথে কোনো প্রকার অংশীদারত্বমূলক ব্যবসার কথা আমি জানেন না।’
একইসঙ্গে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, তার স্বামী আল-আমিন কারও খপ্পরে পড়ে এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন।
একই দিন সকালে বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে গিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী শামীম সেখের ছেলে সাদি সেখ বলেন, “এই ব্যাংকে ‘শামীম ব্রাদার্স’ ও ‘সাদি এগ্রো ফার্ম’ নামে আমাদের দুটি একাউন্ট আছে। এর মধ্যে শামীম ব্রাদার্স-এর হিসাবের ২৩ লাখ আর সাদি এগ্রো’র হিসাব থেকে ৩২ লাখ টাকা ডামি চেকে স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেয়া হয়েছে।”
মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরি নামীয় হিসাবধারী মোতালেব জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার হিসাবে ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন পাস করা আছে। আমি ২০২২ সালের পর ব্যাংকের এই শাখা থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করি নাই। ব্যাংকের এই অবস্থা জেনে হিসাবের প্রতিবেদন তুলে দেখা যায় যে, ৪৮ লাখ টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে।’
জনতা ব্যাংক তামাই শাখার অনেক গ্রাহকেরই এমন অভিযোগ। শাহিন কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের সিসি হিসাব থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। তাঁত ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের ১৫ লাখ, চান টেক্সটাইলের চান মিয়া আকন্দের ১০ লাখ, হাজী আব্দুল্লাহ আকন্দের পাঁচ লাখসহ অনেক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা তাদের একাউন্ট থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়াও বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ হাওলাতি টাকা নিয়েছেন শাখা ব্যবস্থাপক আল-আমিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, ‘২৪ মার্চ বিপদের কথা বলে স্বল্প সময়ে পরিশোধের আশ্বাসে ২০ লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন আল-আমিন। দুই লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি না জানিয়ে আমার ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। আর একই দিন সন্ধ্যায় ব্যবস্থাপক তার নামে আমার কাছ থেকে পিয়ন শহিদুল মারফত ১০ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নিয়েছেন।’
মোহাম্মদ আলী উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক হাজী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ব্যাংককে বিশ্বাস করে টাকা রাখি। সেই ব্যাংক যদি এরকম কাজ করে তাহলে আমরা যাব কোথায়?’
বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামছুল হক জানান, ম্যানেজার আল-আমিন বিভিন্ন সময় লুজ চেক ব্যবহার করে সিসি একাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছেন। তাতে স্বাক্ষরের মিল নেই, চেকের সিরিয়ালের পরম্পরা নেই।
ব্যাংকের ক্যাজ্যুয়াল পিয়ন শহিদুল বলেন, ‘ম্যানেজার স্যার বিভিন্ন সময়ে আমার নাম ব্যবহার করে আমার মাধ্যমে বিভিন্ন একাউন্টে টাকা জমা দিয়েছেন। টাকা উত্তোলনে তিনি আমার নাম লিখে দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি জানি না।’
জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ভল্টের ক্যাশ লিমিট ৭৫ লাখ টাকা। তাহলে সেই ভল্টে আত্মসাৎ করা পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকলো কীভাবে- এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত চলছে, তদন্তে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসবে। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করাই ভাল। তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’
প্রসঙ্গত, রোববার রাতে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া কার্যালয়ের ডিজিএম নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল-আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। পরদিন সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। পরে অভিযোগটি বিধি মোতাবেক সাধারণ ডায়েরি আকারে গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবনা অফিসে পাঠানো হয়।
দুদক সমন্বিত পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক বলেন, ‘অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:ব্যাংকিং নিয়মে নয়, নিজের বানানো নিয়মে ব্যাংকের কার্যক্রম চালাতেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন। নিজের ইচ্ছেমতো গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা দিতেন।
এদিকে ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হদিস এখনও মেলিনি।
বুধবার সকালে জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকদের হিসাবে থাকা টাকা তাদের অজান্তে তুলে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ক্যাশ ভল্টের ওই পরিমাণ টাকাই শেষ কথা নয়? গ্রাহকদের অজান্তে তাদের হিসাবে জমা বিপুল পরিমাণ টাকাও হাতিয়ে নেয়া হয়েছে?
শাখাটিতে অবস্থানকালে সাংবাদিকদের কথা হয় তামাই বাজারের মেসার্স মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আব্দুল মোতালেব জোয়ারদারের সঙ্গে।
তিনি জানান, তার একটি ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন করা ছিল। তবে তিনি এখনও লোনটি উত্তোলন করেননি। অথচ তার ব্যাংক হিসাব ঘেটে দেখা যায় যে তিনি পুরো টাকাই উত্তোলন করেছেন। তার এই টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে তার সিরিয়ালের চেক ব্যবহার করা হয়নি। অন্য একটি চেকে ওই পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এমন ঘটনায় মোতালেব জোয়ারদার হতবাক! এ অবস্থায় তার করণীয় কী হতে পারে বুঝতে পারছেন না।
শুধু আব্দুল মোতালেব নন, আরও অনেক গ্রাহকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। একই এলাকার ব্যবসায়ী চান টেক্সটাইলের আকন্দের হিসাব থেকে তার অজান্তেই ১০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আল ফারুক স্টোরের শহিদুল ইসলামের ২৪ লাখ টাকার সিসি লোনের মধ্যে তার অজান্তেই চেক জালিয়াতে করে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসাবেও এমন জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসছে। ঝিন্না মোল্লার ব্যক্তিগত হিসাবে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১০ টাকা থাকার কথা। কিন্তু ওই হিসাবে আছে মাত্র এক লাখ ৫ হাজার ১১২ টাকা।
তাৎপর্যের বিষয় হল, এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাওয়ার কথা থাকলেও কোন এসএমএস আসেনি। গ্রাহকরা এ বিষয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে তিনি তাদেরকে জানান- সার্ভারে ত্রুটি থাকার কারণে গ্রাহক এসএমএস পাচ্ছেন না।
বুধবার সকালে দেখা যায়, তামাই শাখার নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পাঁচজন সদস্য বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন।
জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন- ব্যাংকের এসপিও মোস্তফা কামাল, সিনিয়র অফিসার মাসুদুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার শরীফ মোহাম্মদ ইশতিয়াক ও এরিয়া ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার।
এর আগে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এস এম সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তামাই শাখার ক্যাজুয়াল পিয়ন শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৭ /৮ মাস ধরে শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিনের কথা অনুসারে তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের চেকে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। ব্যবস্থাপকের কথায় অনেক জমা ভাউচারেও তিনি স্বাক্ষর করেছেন।
কেন স্বাক্ষর করেছেন- এমন প্রশ্নে শহিদুল বলেন, ‘আমরা তাদের চাকরি করি। তিনি যা অর্ডার করতেন আমাদের তাই করতে হতো। আমি তো শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি, ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার আইডির মাধ্যমে টাকাগুলো দেয়া হতো। অনেক সময় গ্রাহকের হিসাবে টাকা না থাকলেও ম্যানেজার নিজে এসে তাদের টাকা দিতেন।’
এসব বিষয়ে নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে স্যাররাই ব্যবস্থা নেবেন।’
তদন্ত কমিটির প্রধান এজিএম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ঠিক কত টাকা গরমিল হয়েছে তার তদন্ত চলছে। গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব গ্রাহকের হিসাবে ঝামেলা হয়েছে তাদেরকে দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
ব্যাংকের বিপুল টাকার হদিস না পাওয়ার এই ঘটনায় রোববার রাতে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম।
আল আমিন সিরাজগঞ্জের ধানবান্দি পৌর এলাকার মো. হারান শেখের ছেলে, রেজাউল করিম বগুড়ার ধুনট থানার বেলকুচি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং রাশেদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের বনবাড়িয়া কাদাই গ্রামের জিয়াউল হকের ছেলে। তারা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ রোববার জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ক্যাশ ভল্টে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পড়ে।
পরে এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ম্যানেজারসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। হিসাব অনুসারে ভল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লাখ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা। বাকি ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো খোঁজ মেলেনি।
নওগাঁর রাণীনগরে কোনোভাবেই থামছে না কৃষি জমির মাটি লোপাট। দিনের আলোতে প্রশাসনের হানা দেয়ার ভয় থাকার কারণে কৌশল পাল্টেছে মাটিখেকোরা। দিনের আলো ফুরাতেই শুরু হচ্ছে মাটি কাটার মহোৎসব।
একটি মেশিনের জায়গায় বর্তমানে একই স্থানে একাধিক মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে সরকারি খাস জমির মাটি। এতে কৃষিজমি হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পাকা সড়ক।
পরিবেশ ও মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে দ্রুত প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দিন ও রাতের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গিয়ে দেখা যায়, মিরাট ইউনিয়নের ২ নম্বর স্লুইস গেট সংলগ্ন স্থানে আতাইকুলা মৌজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ সংলগ্ন স্থানে সরকারি খাস জমির সঙ্গে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বছরে ১৬ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে বন্ধক নিয়ে সেখানে পুকুর খনন করা হচ্ছে।
মাসখানেক আগে ‘অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বহনে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা’- এমন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই ট্রাক্টরচালককে কারাদণ্ড দেন। পরে সেখানে গিয়ে সরকারি খাস জমির একটি সাইনবোর্ড এবং সরকারি জমি পরিমাপ করে লাল ফিতা দিয়ে চিহ্নিত করে আসেন উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ঘটনার কয়েকদিন পর উপজেলার কুজাইল এলাকার সর্বরামপুর গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জনৈক রাজনৈতিক নেতাকে ‘ম্যানেজ করে’, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে কৌশল পাল্টে রাতে মাটি কাটা শুরু করেছে। তার পর থেকে বিষয়টি প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। ফলে রাতের আঁধারে দেদারছে সরকারি খাস জমিসহ কৃষি জমি গর্ত করে মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বড় বড় ড্রাম ট্রাকের চাকায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক ও প্রধান পাকা সড়কগুলো। শুধু তা-ই নয়, ট্রাক থেকে সড়কে মাটি পড়ার কারণে তা যানবাহন ও পথচারী চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। তাছাড়া গাড়ির নিয়ন্ত্রণে বেগ পাওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন জানান, রাতে মাটি কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়। তা না হলে রাতে খবর পেয়ে পুলিশের লোকেরা দফায় দফায় ভেকু মেশিনের চাবি কেড়ে নিয়ে যায়। পরে সন্ধির মাধ্যমে চাবি ফিরিয়ে দেয়।
তাদের দাবি, এতো ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতেই স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে এ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে মাটি ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘ওই স্থানে কিছু খাস জমি হয়ত আছে। তবে জমির মালিকরা আমার সঙ্গে চুক্তি করে মাটি কেটে নিচ্ছে। আমি মাটির বিনিময়ে তাদের জমি খনন করে দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি খনন করা হচ্ছে কি না, এই বিষয়ে জমির মালিকরা জানেন। অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না, তা তারা বলতে পারবেন।’
তবে রাতে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দিনের বেলায় প্রশাসন হানা দেয়, তাই রাতে মাটি কাটা হচ্ছে।’
মিরাট ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওই জমি থেকে মাটি কাটা নিয়ে একটি মামলা চলছিল। পরে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’
তবে মাটিখেকোরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই হয়ত রাতে মাটি কাটছে বলে ধারণা তার।
রানীনগর থানার ওসি আবু ওবায়েদ বলেন, ‘পুলিশ শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করে। কে কোথায় মাটি কাটছে, সেই বিষয়টি দেখবে উপজেলা প্রশাসন কিংবা ভূমি অফিস।
‘পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি এমন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
ইউএনও উম্মে তাবাসসুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে মাটি কাটার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে মাটিকাটা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও যদি তিনি মাটি কাটা বন্ধ না করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য