ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় আইনটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও একাধিক বামপন্থি সংগঠন। তবে এই আন্দোলনেই বিতর্ক উঠেছে একটি স্লোগানের দুটি শব্দ ঘিরে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে পাল্টাপাল্টি সমালোচনা। এমনকি আন্দোলনকারীদের মধ্যেই তৈরি হয়েছে দুটি পক্ষ।
মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাহবাগে বেলা ৩টায় ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৪টায় সমাবেশ করেন লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মীরা। বিভিন্ন বামপন্থি সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন সেখানে।
প্রতিবাদ সমাবেশের একটি ব্যানারে লেখা ছিল ‘জান ও জবানের স্বাধীনতা চাই’। আর এরপর থেকেই সেই ‘জান ও জবান‘ নিয়ে তোলপাড় চলছে ফেসবুকে।
বিতর্কের সূত্রপাত হয় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় এবং সুইডেন প্রবাসী লেখক ও উইমেন চ্যাপ্টার সম্পাদক সুপ্রীতি ধরের স্ট্যাটাসের সূত্রে।
এর মধ্যে দিলীপ রায়ের স্ট্যাটাসটি ছিল আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ‘গায়েবানা জানাজা'র আয়োজন নিয়ে। ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৪২ মিনিটে দিলীপ রায় স্ট্যাটাস দেন, ‘সারাদিন মিটিং মিছিল করে আসার পর ফেসবুকে কূটক্যাচাল করতে ইচ্ছে করছে না। তারপরও শুধু একটা প্রশ্ন করতে চাই- এটি একটি সাধারণ জিজ্ঞাসা। অপরাধ নেবেন না।
গায়েবানা জানাজা যদি ধর্মীয় না হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়ে থাকে, সেই কর্মসূচির নেতৃত্ব কি দিলীপ রায় দিতে পারবে?’
ভোর ৬টা ২৪ মিনিটে সুপ্রীতি ধর লেখেন, “জান ও জবান’-এর স্বাধীনতা চেয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে। এই দুটো শব্দই আমার কানে বাজছে। এতো বয়স হয়ে গেলেও মনে হয় না খুব বেশি বার/কখনও আমি এই দুটি শব্দ ব্যবহার করেছি। কথা বলার স্বাধীনতা চেয়েছি, লেখার স্বাধীনতা চেয়ে এসেছি এতোকাল। শব্দ, ভাষাও যে সাম্প্রদায়িক হয়, এ দুটো তার প্রমাণ।”
আন্দোলনে ‘জান ও জবান’ দুটি উদ্দেশ্যপূর্ণ শব্দের ব্যবহারকে ইঙ্গিত করে তার এই বক্তব্য সমর্থন করেন নেটিজেনদের অনেকে। সুপ্রীতি ধরের স্ট্যাটাসে আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ লেখেন, ‘এটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। ধর্মকে ব্যবহারের সফটকোর কায়দা। মওলানা ভাসানি স্টাইল। কে করেছে? আমি শুনিনি।’
ইমতিয়াজ মাহমুদ একটি আলাদা পোস্টে লেখেন, ‘...জান-জবান নিয়ে কি আমার অসুবিধা আছে? না, বিষয়টা অসুবিধার নয়, আশঙ্কার। আশঙ্কাটা কিসের?...বাংলাদেশে একদল লোক আছে যারা মওলানা ভাসানিকে খুব পছন্দ করেন, যে কোন অবস্থায় ভারতের বিরোধিতা করেন আর যে কোন অবস্থায় আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেন।...এরা কারা? আপনিই হিসাব করে দেখেন। বিএনপি জামাত এবং ওদের জোটের দলগুলি, সাবেক চীনপন্থি দল ও গ্রুপগুলি এবং এদের অনুগামী বা সমর্থক সমর্থকরা। এরা বাঙালিকে কেবল বাঙালি হিসাবে একটি জাতী হিসাবে দেখতে চায় না বা দেখতে পারে না, এরা বাঙালী মুসলমান ও বাঙালি হিন্দুর মধ্যে পার্থক্য করেন এবং বাংলাদেশকে বাঙালী মুসলমানের দেশ হিসাবে দেখতে পছন্দ করেন।
‘আমি মাওলানা ভাসানিকে পছন্দ করিনা। কেন করিনা? কারণ আমার জ্ঞান বুদ্ধিতে তিনি একজন সাম্প্রদায়িক নেতা ছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে তাঁর ভূমিকা একটু ম্লান ছিল এবং স্বাধীনতার পর দেশের সংবিধানে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম মানুষের বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখতে চেয়েছিলেন। চীনের প্রতি আনুগত্য ও ভারতের প্রতি বিদ্বেষ তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে একটু জটিল তো করেছিলই, তাঁর উপর আবার তাঁর নিজের পীর হিসবে মুরিদ গ্রহণ করা, মানুষকে তাবিজ দেওয়া, পড়াপানি দেওয়া, এইসব আছে। আবার বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ঘাতকদের প্রতি তাঁর ব্লেসিং, জিয়াউর রহমানকে সমর্থন, জিয়াউর রহমানের সমর্থন নিয়ে লং মার্চ এইসবও আছে।’
ইমতিয়াজ মাহমুদ লেখেন, ‘...আমি মনে সেক্যুলার মানুষ, আমি চাই দেশ সেক্যুলার হোক, রাষ্ট্র চলুক ইহজাগতিক নিয়মে। আমি মানুষকে হিন্দু মুসলমানে ভাগ করতে চাই না, বাঙালিকেও হিন্দু মুসলমানে ভাগ করতে চাই না। আমি মনে করিনা যে মাদ্রাসা শিক্ষকরা অনেক স্মার্ট আর রবীন্দ্রনাথ আমার শত্রু। আমি দেশের সমাজতন্ত্র চাই, দুনিয়াজুড়ে সমাজতন্ত্র চাই, বাজার অর্থনীতির পতন চাই। আমি মনে করি সমাজতন্ত্র অর্জন সম্ভব, সমাজতন্ত্র প্রয়োজন এবং বাজার অর্থনীতি উৎখাত করা সম্ভব। কঠিন বটে, কিন্তু অসম্ভব নয়। আমি এটাও মনে করি যে মার্ক্স সাহেবের থিসিস এখনও সঠিক। এবং আমি চাই না রাজনীতিতে কেউ ধর্মের ব্যবহার করুক।’
বাকস্বাধীনতা আদায়ের জন্য যে মঞ্চ তৈরির চেষ্টা, তাতে ‘জান ও জবান’ শব্দের ব্যবহার উদ্দেশ্যমূলক এবং সাম্প্রদায়িক মনে করে স্ট্যাটাস দেন দৈনিক সমকালের ফিচার সম্পাদক ও কবি মাহবুব আজীজ, দৈনিক দেশ রূপান্তর-এর যুগ্ম সম্পাদক গাজী নাসিরুদ্দিন খোকনসহ অনেকে।
মাহবুব আজীজ লেখেন, “কথা বলবার অধিকার আদায়ের জন্য যে মঞ্চ তৈরির চেষ্টা-- তাতে ‘জান ও জবান’ শব্দের ব্যবহার সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়। ভাষা সুতীব্রভাবে রাজনৈতিক -- জান, জবান বা সিনা, সিলসিলা -- এসব শব্দ যারা ব্যবহার করে; তাদের রাজনৈতিক গন্তব্য অবশ্যই সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে।”
‘জান জবানের স্বাধীনতা চাই’ দাবি তুলে আন্দোলনকারীরা এর মধ্যে খাটিয়া মিছিল ও গায়েবানা জানাজা করলে সাংবাদিক গাজী নাসিরুদ্দিন খোকন স্ট্যাটাস দেন, “বামপন্থীরা গায়েবানা জানাজা করল। এটিতো আর মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনায় করা হয়নি। রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। তাতে দেশের অন্য ধর্মের লোকদের এক্সক্লুড করে দেয়া হল। তারপর নাকি আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে ‘জান ও জবান’ রক্ষার দাবি নিয়ে। দৃশ্যত ভাসানী ভাসানী মনে হলেও এর স্পিরিচুয়াল গুরু সন্দেহাতীতভাবে ফরহাদ মজহার। ভাষার বিউপনিবেশিকরণের নামে ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোই এই স্লোগানের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য। মজার ব্যাপার ফরহাদের এই সমস্ত বিদ্বেষের সাবস্ক্রাইবার হচ্ছে বামপন্থী পরিচয় দেওয়া প্রতিক্রিয়াশীলরা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বামপন্থীরাও যদি ইনক্লুসিভ হতে না পারে তাহলে ভেদবুদ্ধিই রাজনীতি শাসন করবে। দিব্যচোখে এদেশের পরিণতি দেখা যায়। আরেকটা পাকিস্তান ইজ ইন দ্য অফিং।”
সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী অনেকেই এসব স্ট্যাটাসে তাদের প্রতিক্রিয়া ও মতামত দেন। সুপ্রীতি ধরের স্ট্যাটাসে খান আসাদ নামের একজনের মন্তব্য ছিল, “ব্যাপারটা খেয়াল করেছি। প্রথমে ফরহাদ মজহার এলো ‘জ্বিহাদ হচ্ছে শ্রেণীসংগ্রাম’ তত্ত্ব নিয়ে। তারপর পিনাকী ভটচাজ এলো সংখ্যাগুরু ‘মুসলমানের’ সাথে ঐক্য করার ‘কৌশল’ বোঝাতে। এরপর এখন ‘মুসলমানদের’ সাথে রিলেট করা যায়, এমন স্লোগান খোঁজা হচ্ছে। হোক এগুলো। পার্ট অফ দি প্রসেস। কিন্তু আন্দোলনে ‘সাম্প্রদায়িক ভাষা’ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলায় যে উষ্মা ও গালাগাল দেখছি, সেটা আমাকে খুবই বিস্মিত করেছে। এই ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সহিঞ্চুতা তো ফ্যাসিস্টদের থাকে।”
‘জান ও জবান’-এর এই তর্কের সূত্র ধরে লেখক ও ব্লগার অমি রহমান পিয়াল লেখেন, “বাংলা ভাষার মাসের শেষ দিনটায় দারুণ এক বলাৎকার উপহার দিলো বিপ্লবীরা। তারা মুশতাকরে ভাষা সৈনিক বইলা দাবি করছে, সেটা করতেই পারে। কিন্তু ইনকিলাবি জোশে নতুন কিছু শব্দ যোগ করছে বাংলার রাজনীতিতে, শ্লোগানে, পোস্টারে। যদিও তাগো নেতারা বলতেছে ডানপন্থী জামাত শিবির ও বিম্পি যেন তাদের দূরের না ভাবে এবং ইসলামী আন্দোলনকারীরা যেন নাস্তিক বইলা তাগো দূরে ঠেইলা না দেয় সেই নৈকট্য আনতেই তারা এইসব ভাষা প্রয়োগ করতেছে। তো আমরা ইনসানিয়াত, ইনসাফ, নফসানিয়াত, মাগরমছলি, জান কি বাজি ইত্যাদি অনেক নতুন জবান শিখলাম আলহামদুলিল্লাহ। পরে গুগল মাইরা দেখি এইসব নামে সুপারহিট সব উর্দু সিনেমা আছে! মারহাবা...”
এর বিপরীত পক্ষও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান ফেসবুকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী আর আব্দুল লতিফের গানের লিরিক, নজরুলের রাজবন্দীর জবানবন্দিসহ নানা সাহিত্যিক রেফারেন্স। মোটা দাগে দুই ধরনের বক্তব্য ও বিশ্লেষণ পাওয়া যাচ্ছে এসব স্ট্যাটাসে।
এক পক্ষ ‘সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা’কে আন্দোলনের স্লোগানে ব্যবহারের সমালোচনাকারীদের ‘সাম্প্রদায়িক ও সরকারপন্থি’ হিসেবে অভিযুক্ত করছেন। আরেক পক্ষ ভাষার চিরকালীন পরিবর্তনশীলতা, বিদেশি শব্দের সাথে সহজাত মিথস্ক্রিয়া এবং এর ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ব্যবহারের বিভিন্ন বিষয় সামনে আনছেন।
লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও কবি ফারুক ওয়াসিফ লেখেন, ‘জান ও জবান যাদের কলুষিত, তারা একদিন শহীদ মিনারকেও সাম্প্রদায়িক বলবে, যেহেতু শহীদ আরবী আর মিনার ফারসি ভাষা থেকে আসা বাংলা শব্দ।’
কবি সোহেল হাসান গালিব ফেসবুকের এই তর্কে ‘ভাষা-সাম্প্রদায়িকদের’ উদ্দেশ করে “ভাষা-সাম্প্রদায়িকতা: প্রসঙ্গ জান ও জবান” শিরোনামে পোস্টে লেখেন, “কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু আক্ষেপসহ আমাকে জানালেন তিনি কবিতায় ‘আব্বা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন বলে এক প্রগতিশীল ‘হিন্দু’ কবি বলেছেন, লেখাটা সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আব্বা’ শব্দের রিপ্লেসমেন্ট হিশেবে তার সেকুলার সাজেশনটা কী? বন্ধু বললেন, সে তাকে ‘বাবা’ লিখতে বলছে। আমি তখন বললাম, তাকে বলেন ‘বাবা’ শব্দটা তো তুর্কি। আরবির বদলে তুর্কি লেখাটা কি ঠিক হবে?…’
তিনি লেখেন, “জান ও জবান’-এর বিরোধিতা যারা করছেন, তারা সেই পুরনো সাম্প্রদায়িক ব্যাধিতে আক্রান্ত। এ যুগের ভারতচন্দ্র হিশেবে এইটুকু আমি নিশ্চিত করতে পারি।”
কবি ব্রাত্য রাইসু স্ট্যাটাস দেন, “জান’ ও ‘জবান’ শব্দ একসঙ্গে বসার কারণে এর ইসলামি উৎস প্রকট হইয়া উঠছে। তাতে ক্ষতি কী? এই শব্দ দুইটার কারণে যারা আন্দোলনে অনীহ তারাই সাম্প্রদায়িক।
‘শব্দের অবশ্যই মুসলিম ও হিন্দু উৎস আছে, থাকবে। তার ব্যবহারকারী হিসাবে আপনি যখন মুসলমান তাই হিন্দু শব্দ ব্যবহার করবেন না বইলা ঘোষণা দিবেন তখন আপনি সাম্প্রদায়িক। আবার হিন্দু হইলে মুসলমান শব্দ ব্যবহারে আপত্তি যখন জানাইতেছেন তখনও আপনি সাম্প্রদায়িক। কিন্তু যখন আপনি একই সঙ্গে মুসলমান ও ইসলামি শব্দে আপনার আপত্তি তখন আপনি দুই নম্বর। আপনি পরিচয় লুকাইতেছেন। তাইলে কারা সাম্প্রদায়িক ও ভণ্ড?
‘যারা জান ও জবানে আপত্তি করতেছেন, তারাই। ’
‘জান ও জবান’ শব্দবন্ধের বিরোধিতার সমালোচনা করে দেশ রূপান্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরিফুজ্জামান তুহিন লেখেন, ‘সুপ্রীতি ধর কহিলেন!! তসলিম নাসরিন সরাসরি বিজেপিকে সমর্থন করেন। তসলিমার সমর্থক নারীবাদীরাও বিজেপি সংঘ পরিবারের সমর্থক কট্টোর হিন্দু মৌলবাদী। এতে সুপ্রীতি ধর কেন গোস্যা হলেন বুঝতে পারছিনা। আপনি একটা আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক বলে দেগে দিলেন সেটা তুচ্ছ ঘটনা? এভাবেইতো ভারতে কৃষক আন্দোলনকে টুকরে টুকরে গ্যাং, খালিস্তান, মাওবাদী দেগে দিচ্ছে মোদি বিজেপি সংঘ পরিবার।
তিনি লেখেন, “আমরা জানি কারা আমাদের মুখ চেপে ধরতে চায়? আপনার মুখের ভাষা ‘অতি বাম’ আসলে আপনার নেত্রীর ভাষা।
আমরা জানি আপনাদের রসুনের কোয়াগুলো ঠিক কোথায় এসে বাসা বেধেছে। আমরা অপেক্ষা করি সেদিনের, যেদিন কৃষক ও শ্রমিক তার ভাষা দিয়ে আপনার জবানের জবাব দেবে। আর কান্নাকাটি কইরেন না। আন্দোলন করছেন যারা তারা আন্দোলনই করবে,যারা মামলা কারাগারে তারা তা বহন করবে। দুরে থেকে নিরাপদে থেকে তারা নারীবাদ বেঁচবে না। কারণ তারা শ্রম বেচতে জানে, আর্দশ না।”
অন্যদিকে জার্মান প্রবাসী কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট, সাহিত্য পত্রিকা অংশুমালীর সম্পাদক জোবায়েন সন্ধী সুপ্রীতি ধরের স্ট্যাটাস এর জবাবে লেখেন, “চশমাটা খুলে ফেলুন! ওরে, তোরা কেউ আর যাসনে ওই ‘শহীদ’ ‘মিনার’-এ। ‘জান’ কিংবা ‘জবান’ এই শব্দগুলো যে সাম্প্রদায়িক, এটা সুপ্রীতি ধর দাবি করেছেন। নিজেকে নারীবাদি দাবি করা সুপ্রীতি ধর উওমেন চ্যাপ্টার নামক পোর্টাল চালান। এই নারী যে ভাষা ও সাম্প্রদায়িক বিশেষজ্ঞ, সেটা আজ নতুন করে জানতে পারলাম।’’
জোবায়েন সন্ধী লেখেন, “তিনি (সুপ্রীতি) যে আওয়ামী লীগের পারপাস সার্ভ করেন সেই ‘আওয়ামী’ শব্দটায় কোনো সাম্প্রদায়িক গন্ধ পাননা। হক ও মজলুম শব্দে সাম্প্রদায়িক গন্ধ পেলেও তাঁর মেয়ের নামের শেষে ‘হক’ থাকায় তিনি কোনো সাম্প্রদায়িক গন্ধ পাননা।
সুপ্রীতির দাবি অনুযায়ী ‘ইনকিলাব’ কিংবা ‘জিন্দাবাদ’ তো মহা সাম্প্রদায়িক শব্দ!...”
এর মধ্যেই ব্লগার ও গণসংহতি আন্দোলনের কর্মী সৈকত মল্লিক স্ট্যাটাস দেন, “জান ও জবানের স্বাধীনতা চাই। ‘নফসানিয়াত’ নিপাত যাক, ‘ইনসানিয়াত’ মুক্তি পাক। ইনসাফ কায়েমের লড়াইয়ে শামিল হোন।”
বামপন্থী অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক ফিরোজ আহমেদ ফেসবুকে লেখেন, “ধাড়িগুলোকে নামিয়েছে মোস্তাক ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতো, এই ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে। অতীতে বেশ কাজে এলেও এবারে ওষুধ ধরেনি। তখন ছানাপোনাগুলোকে নামিয়েছে ঠিক ১৮০ কৌনিক দূরত্বের ‘জান-জবান’ উর্দু, এই ঢাল নিয়ে।
“আওয়ামী’ ‘লীগের’ এই দুইটি আলাদা ‘মোসাহেব’ বাহিনীই বেশ পারঙ্গম। আরে ভাই, জান-জবান শুনে উর্দু মনে হয়, তোমাদের কেউ মানা করেছে ‘বাকস্বাধীনতা রক্ষা করো, মোস্তাকের খুনীদের বিচার করো, অবৈধ দখলদার আসন ছাড়ো’ এইভাবে শুদ্ধ বাংলায় সমাবেশ ডাকতে? নিমন্ত্রণ পেলে আমিও যাবো, বিশুদ্ধ বাংলায় বক্তব্য দিয়ে আসবো।”
ফিরোজ আহমেদ ফেসবুকে লেখেন, “কী জাবর কেটে তারা সময় কাটায়, সেটা দেখেই তো বোঝা যায় কারা আসলে কোন প্রাণী, কী তারা চায়। *অত্যন্ত লজ্জিত ‘মোসাহেব’ এই ফার্সী শব্দটা রেখে দিতে হলো বলে। চাটুকার, দলদাস, দলকানা ইত্যাদি বাংলা শব্দকে আমার কাছে একটু আক্রমণাত্মক আর অভদ্র মনে হয়। ক্ষমা করবেন বাংলাভাষীবৃন্দ।”
বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি-উর্দু-তুর্কি শব্দের সহজাত ব্যবহার এবং জান-জবান এর ব্যবহারকে ‘সাম্প্রদায়িক’ হিসেবে আখ্যানের পেছনের মনস্তত্ত্ব নিয়ে বিশ্লেষণমূলক স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ‘জান ও জবান’ নিয়ে ফেসবুকের হুলুস্থুলে লেখেন, ‘‘বাজারে ‘জান’ ও ‘জবান’ নিয়া হুলুস্থুল চলতেছে। এ লাইনে করে-খাওয়া পাবলিক হিসাবে দুই-এক কথা বলা জরুরি মনে করছি। এক. এ আলাপটা আদতে ‘বিদেশি’ ভাষার আলাপ। যারা দশ ক্লাস ডিঙ্গাইছেন, তাদের সবারই মনে থাকার কথা, বাংলা ব্যাকরণ বইতে ‘শব্দের উৎসগত শ্রেণিবিভাগ’ বলে এক চিজ আছে। এটাও ভুলে যাওয়ার কারণ নাই, ইংরেজি ব্যাকরণে এ লাইনে কোনো বাতচিত ছিল না।"
তিনি লেখেন, "জটিলতায় না গিয়া কই, আপনারা পিছন ফিরা মনে করতে পারবেন, বাংলা ব্যাকরণটা সাজানো হইছে এই ‘বিদেশি’ আর ‘অবিদেশি’ ক্যাটেগরি বা বর্গ দিয়া। এর পেছনের রাজনীতি ও রাজনৈতিক র্অথনীতি বিস্তর আছে। সেদিকে না গিয়া বলি, ‘বিদেশি’ শব্দ বইলা ভাষায় আসলে কিছু থাকে না। এটা ভাষাবিজ্ঞানের খুবই প্রাথমিক আলাপ। ‘বোতল’ শব্দটা বিদেশি নয়; কারণ, দুনিয়ার কোনো ভাষায় এ রূপতত্ত্ব ও ধ্বনিতত্ত্বে ব্যাখ্যাযোগ্য কোনো শব্দ নাই। ইংরেজিতে যে নাই, তা আপনারা সকলেই জানেন। কাজেই যারা ‘বিদেশি’ ক্যাটেগরিতে আলাপটা করেছেন, পক্ষে বা বিপক্ষে, বাংলা হইয়া গেছে বা হয় নাই ইত্যাদি বলে, তারা জেনে বা না জেনে ইতিমধ্যে সাম্প্রদায়িকতার খপ্পরে থাকা ব্যাকরণের খপ্পরে পড়েছেন। এখানে বলে রাখি, ‘বিদেশি’ কথাটা শুধু বাংলা ব্যাকরণের না, ইতিহাস ও অন্য অনেক শাস্ত্রেরও ঘোষিত বা অঘোষিত ভিত্তিভূমি। কাজেই সংস্কৃতি, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক রাজনীতি ইত্যাদি চর্চায় আপনি এ গোলমাল এড়াতে চাইলে ‘সাধু’ সাজলেই কেবল হবে না, এই সাম্প্রদায়িক ‘বিদেশি’ ধারণাটাকেই গুড়িয়ে দিতে হবে। দুই. এ আলাপে ‘আরবি’ ও ‘ফারসি’ শব্দ দুটো দেদার ব্যবহৃত হয়েছে। ভুল। দুশ বছর ধরে সবচেয়ে ভদ্রলোকেরাও কথাটা এভাবে বলায় এখনকার ভদ্রলোকেরা কথাগুলো ব্যবহার করেছেন, আর দাবি করেছেন, তিনি আরবি-ফারসিতে সমস্যা মনে করছেন না, কাজেই তিনি অসাম্প্রদায়িক।"
অধ্যাপক আজম লেখেন, "আসলে পুরা আলাপটাই ভয়াবহভাবে গোলমেলে। বাংলায় ব্যবহৃত এসব শব্দের সাথে ‘আরবি-ফারসি’র সম্পর্ক খুবই সামান্য অথবা একেবারেই নাই। যে ভাষা থেকে বাংলা এবং ভারতীয় অন্য অসংখ্য ভাষায় শব্দগুলো ঢুকেছে সে ভাষাটির নাম হিন্দুস্থানি -- ইংরেজির আগে ভারতের সবচেয়ে প্রতাপশালী লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা। এ কথা মাথায় নেয়ার সাথে সাথে আপনি দুশ বছরের এ বাতচিতের গোড়ার ব্যারামটা বুঝে ফেলবেন। ‘আরবি-ফারসি’ ‘বিদেশি’ ভাষা এবং প্রধানত মুসলমানদের সাথে যুক্ত। হিন্দুস্থানি খাঁটি ভারতীয় মাল, এবং এসেন্সিয়ালি ভারতের হিন্দু-মুসলমানসহ সব জনগোষ্ঠীর সাথে যুক্ত। কাজেই হিন্দুস্থানিকে ভাসুর বানাইয়া ‘আরবি-ফারসি’র নাম জবানে এস্তমাল করতে পারলেই একসাথে অনেকগুলা কেল্লা ফতে করা যায়। গত দুশ বছর ধইরা এ ঘটনা নানা ফর্মে ঘটতেছে। যারা ফেসবুকের আলাপ ফলো করেছেন, তাদের ব্যাপারটার ব্যাপকতা বুঝতে দেরি হওয়ার কথা না। ৩। অনেকে ভাষার সাথে সাম্প্রদায়িকতা, রাজনীতি ইত্যাদির সম্পর্ক নাই বলে ফতোয়া বিতরণ করেছেন। ভালো নিয়তেই করেছেন। তাদের জন্য শুভকামনা।"
তিনি লেখেন, "এরা শুধু একটাই সমস্যা করেছেন। ভাষাকে জামার মতো ভেবেছেন, যাকে ধুয়ে-মুছে সাফ-সুতরা করিয়ে নেয়া যায়, এবং চাইলে যে কোনো সুগন্ধী মাখিয়ে অন্য ফ্লেবার দেয়া যায়। না। ভাষা ওই জিনিস না। এটা জীবনের প্রধান প্রকাশ; কাজেই জীবনের মাপই এর মাপ। জীবনে যা যা আছে ভাষাতেও তার সবই আছে।
এ দিক থেকে যারা ‘জান’ ও ‘জবান’ শব্দের একত্র-ব্যবহারে ভিরমি খেয়েছেন, তাদের পজিশন, আমি বলব, রাজনৈতিকভাবে শুদ্ধ নাও হতে পারে, কিন্তু ভাষার চরিত্রের দিক থেকে বিলকুল সহি। এ ব্যবহার রাজনৈতিকভাবে, বিশেষত সাংস্কৃতিক রাজনীতির দিক থেকে, কাজে কাজেই ক্ষমতা-সম্পর্কের দিক থেকে, অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। ”
কবি মজনু শাহ স্ট্যাটাস দেন, “Bengali words, come from others!
চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে খাওয়ার সময় হঠাৎ মাথায় এল যে এই চা চীনা শব্দ। আবার বিস্কুট ফরাসি শব্দ। বিস্কুটের সাথে থাকা চানাচুর হিন্দি। চায়ে যে চিনি ও পানি থাকে, সেখানে পানি হিন্দি । আবার চা ভর্তি পেয়ালাটা ফারসি কিন্তু কাপটা ইংরেজি। এদিকে ইংরেজি শব্দটাই আবার পর্তুগিজ।”
তিনি লেখেন, ‘চা চীনা হলেও কফি কিন্তু তুর্কি শব্দ। আবার কেক পাউরুটির কেক ইংরেজি, পাউরুটি পর্তুগীজ। খানাপিনায় যাই। বলে রাখি, খানাপিনা হিন্দী আর দাম গ্রীক। রেস্তোরাঁ বা ব্যুফেতে গিয়ে পিৎজা, বার্গার বা চকোলেট অর্ডার দেয়ার সময় কখনো কি খেয়াল করেছেন, রেস্তোরা আর ব্যুফে দুইটাই ফরাসী ভাষার, সাথে পিৎজাও। পিৎজায় দেয়া মশলাটা আরবি। মশলায় দেয়া মরিচটা ফারসি!
বার্গার কিংবা চপ দুটোই আবার ইংরেজি। কিন্তু চকোলেট আবার মেক্সিকান শব্দ। অর্ডারটা ইংরেজি। যে মেন্যু থেকে অর্ডার করছেন সেটা আবার ফরাসী। ম্যানেজারকে নগদে টাকা দেয়ার সময় মাথায় রাখবেন, নগদ আরবি, আর ম্যানেজার ইতালিয়ান। আর যদি দারোয়ানকে বকশিস দেন, দারোয়ান ও তার বকশিস দুটোই ফারসি।…
‘পুরো স্ট্যাটাস মনে না থাকলে অন্তত এটা মনে রাখবেন যে মন শব্দটা আরবি। নামে আসি। মজনু (মাজনুন) আরবি, শাহ ফারসি, বাংলা অর্থ, পাগল প্রেমিকের মাজার/দরগাহ । দরগাহ আবার ফারসি। শব্দের কেচ্ছা-কাহিনী এখানেই খতম। তবে কেচ্ছাটা আরবি, কাহিনীটা হিন্দি, উভয়ের খতমটা আরবিতে। মাফ চাইলাম না বা সরি বললাম না, কারণ মাফটা আরবি আর সরিটা ইংরেজি।’
কবি রক মনু লেখেন, “গোরস্থান বা হিন্দুস্থান নাকি গোরস্তান আর হিন্দুস্তান? জে কোনটাই হইতে পারে, কিন্তু কি আছিল আর কেমনে আর কেন পাল্টাইলো অনেকের লেখায়, শেই ইতিহাশটা মজার!
“আরো দুয়েকটা শব্দও আনা জাইতে পারে আলাপে; নিশিত বা ভোমর নাকি নিশিথ আর ভ্রমর? ছিলেট/মৌলভিবাজারের ভানু শেখের লেখা গান আছিলো, ‘নিশিতে জাইও ফুলবনে রে ভোমরা...’। এইটা চুরি করছিলেন জসিমউদ্দিন; চুরি কেন কইলাম? ভানু শেখের গানে তার দস্তখত আছিলো, লালনের গানে জেমন থাকে না, ‘শিরাজ শাই ডেকে বলে লালনকে...’ তেমন দস্তখত বা আরো আগে ‘কাশিরাম দাশ ভনে...’, তেমনটা রেওয়াজ আছিলো শেই জামানায়; আশলে এই জামানায়ও, জামানার আলাপটা ভুয়া, এখনো বাউল আর ফকিরা গানে আকছার পাইবেন এমন, আপনের টাইপের মামলা এইটা, জামানার ততো না!...’’
লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট পারভেজ আলম লেখেন, “বদলোকে কয় বাঙলা ভাষার কি জাত এই সংসারে? ভাষার কোন জাত নাই এ সংসারে। বাঙলা ভাষারও নাই। বাঙলা ভাষার দিকে তাকাইতে হবে প্রেমিকের মতো। বাঙলা ভাষার মধ্যে হাজির থাকা বিভিন্ন বংশের শব্দ ভান্ডারকে তখন আপনার আপন মনে হবে। যারা ভাষার দিকে জাতিবাদী বা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে তাকান, তারা বিভিন্ন শব্দের মধ্যে হিন্দুয়ানী, মুসলমানি, দেশী, বিদেশী এমন নানান রকম পরিচয়ই খালি খুঁজে পান। শব্দের মধ্যে তারা দেখেন খালি ‘জাতের চিহ্ন’।
ভাষারে পৈতা পরাইতে চাওয়া অথবা সুন্নতে খতনা করাইতে চাওয়া সাম্প্রদায়িকদের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দেবার জন্যে, নিজ নিজ পক্ষকে সাম্প্রদায়িক-জাতিবাদীদের প্রভাব মুক্ত রাখার জন্যে বাঙলা ভাষায় হাজির থাকা সকল শব্দকে ভালবাসুন, বেশি বেশি ব্যবহার করুন। নিজের ভাষার প্রাচুর্যকে কবুল করুন। তখন দেখবেন যে - জান ও জবান - এমন আরো কতো স্লোগান - টুপ করে, হুট করে, ধপ করে, অথবা একটা নাদের মতো করে - নাজেল হতে থাকবে আমাদের ভাষার মধ্যে। …”
কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ লেখেন, “জান’, ‘জবান’–এর সমস্যা কি? ভাষা ও শব্দকে কেন সাম্প্রদায়িকরূপে দেখা হবে? আমরা মাঝেমাঝেই বলি যে, ‘আমার কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে।’
একই কথা আবার এভাবেও বলি যে, ‘আমার জবান বন্ধ করতে চাও?’ এই যে একবার ‘কণ্ঠ’ আর একবার ‘জবান’ ব্যবহার করা গেল, এতে—এই দুই শব্দের মধ্য দিয়ে কি কোনো সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে নির্দিষ্ট করা গেল? যাচ্ছে?
মনে হয় না। একেবারেই মনে হয় না। আমরা যেমন ‘জল’ বলি, আবার ‘পানি’ও বলি। এটা আমাদের ভাষা বৈচিত্র্যের অংশ।…”
এর বাইরে এই তর্কের ঊর্ধ্বে উঠে আন্দোলনের মূল ইস্যুতে জোর দেয়ার তাগিদও দিয়েছেন অনেকে।
কলামিস্ট, সাংবাদিক ও লেখক মনজুরুল হক স্ট্যাটাস দেন, “প্রশ্ন হচ্ছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বাতিল করতে হবে। এটা বাতিল হলে কী আর নির্যাতন-নিপীড়ন হবে না? অবশ্যই হবে। সেসবের জন্য গন্ডায় গন্ডায় আইন আছে। তারপরও এই কালো আইন বাতিলের আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের আগে ‘রিদমিক স্লোগান’ হিসেবে এসেছে- ‘জান ও জবানের স্বাধীনতা চাই’। এই স্লোগানকে কেউ কেউ ‘সাম্প্রদায়িকতা দোষে দুষ্ট’ বলছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের বাক-বিতণ্ডা চরমে। মধ্যিখানে গুরুত্ব হারাল মূল ইস্যু-কুখ্যাত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বাতিলের দাবী।
তিনি লেখেন, ‘এই স্লোগানসম্বলিত পোস্টারে কুখ্যাত আইনটি বাতিলের দাবী নেই। এটাই হওয়ার কথা। আপনারা বলবেন; ভাষার আবার ধর্ম কি? আছে, আছে। মজহার সায়েব যখন জিহাদকেই শ্রেণিসংগ্রাম বলে বিভ্রান্ত করেন, তখন সেটা ধর্মের কোটিং দিয়েই হয়। শব্দ যদি নিরীহ আর নিরপরাধ হতো তাহলে সর্বহারা শ্রেণির হাতে বন্দুক উঠলে আপনারা রে রে করে ওঠেন কেন?...’
স্ট্যাটাসের শেষ অংশে তিনি লেখেন,
‘আপনারা বন্দুকের সামনেও যেতে পারেন না।
আপনারা বন্দুক হাতে নেওয়া মানতে পারেন না।
কী করে জান-জবানের স্বাধীনতা আদায় করবেন?’
এই প্রতিবেদনে ফেসবুকের স্ট্যাটাসের বানান ও ভাষারীতি একই রাখা হয়েছে। তবে কোনো কোনো দীর্ঘ স্ট্যাটাস সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদান করেনি বলে শিক্ষামন্ত্রীর দাবির একদিন পর এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪-১৬ মার্চ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বাকু ফোরাম একাদশে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামের অফিশিয়াল অনুষ্ঠানসূচিতেও অধ্যাপক ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসকে বাকু ফোরামের সমাপনী নৈশভোজে যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারটি গ্রহণের জন্য মঞ্চে সশরীর উপস্থিত থাকেন।
ইউনূস সেন্টার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনেস্কোর পুরস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে। অধ্যাপক ইউনূসকে প্রদত্ত ‘ট্রি অফ পিস’ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত পদকের একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর আগে ২০২৩ সালের জুনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ইউনেস্কো এবং অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনূস স্পোর্টস হাবের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউনেস্কোর ফিট ফর লাইফ ফ্ল্যাগশিপের অধীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উভয় প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া।
এর আগে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের চেয়ারম্যান মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আজারবাইজানের গঞ্জাভি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ড. ইউনূসকে ইসরাইলের একজন ভাস্কর ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।”
ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বলে ড. ইউনূস যে দাবি করেছেন তা অসত্য বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:শান্তিতে নোবেলজয়ী হয়েও ড. ইউনূস ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার পক্ষ নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, হত্যাযজ্ঞে নিশ্চুপ থেকে এবং একজন ইসরায়েলির দেয়া পুরস্কার নিয়ে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন। আর ইউনূস সেন্টার এটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার উল্লেখ করে মিথ্যাচার করছে, যা খুবই দুঃখজনক।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইউনূস সেন্টারের মিথ্যাচারে আমি বিষ্মিত, হতবাক। সম্প্রতি আজারবাইজানের বাকুতে একটি সম্মেলনে মিজ হেদভা সের নামে একজন ইসরায়েলি ভাস্বর ড. ইউনুসকে একটি পুরস্কার দিয়েছেন। এ সম্মেলনে ইউনেস্কো কোনোভাবে জড়িত ছিল না।
‘এই পুরস্কার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তো নয়ই, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। আর ইউনূস সেন্টার সেটিকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বলে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করেছে। তবে এটিই প্রথম নয়, এর আগেও এ ধরনের মিথ্যাচার ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ওদিকে গাজায় আজ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
‘বরং এই সময়ে তিনি একজন ইসরায়েলির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ কি এটাই নয় যে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সীমান্ত হত্যায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২৫ মার্চ মধ্যরাতে লালমনিরহাট ও ২৬ মার্চ ভোরে নওগাঁ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো এবং সীমান্তে পতাকা বৈঠকও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। সম্প্রতি ভারত সফরেও এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে গুরুত্বসহ আলোচনা করেছি। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নন-লেথাল বা প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রাবার বুলেটে অনেকে আহত হন; কিন্তু প্রাণহানি কমে এসেছে। তবে আমাদের লক্ষ্য প্রাণহানিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা।’
নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা চলছে
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার ও জাহাজটিকে মুক্ত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ সম্পর্কে শুধু এটুকু বলতে চাই, নাবিকদের মুক্ত করার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। আমরা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছি। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাদ্য সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জাহাজটিতে খাদ্য সংকট নেই। এর আগে তিন মাস ধরে জলদস্যুদের কবলে থাকা অন্য জাহাজেও খাদ্য সংকট ছিল না।
আরও পড়ুন:ঈদের পর সমাধান করা হবে- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে এক মাসের জন্য আন্দোলন থামালেন বেতন-ভাতা বাড়ানো ও বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনকারী পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকরা যে দাবিগুলো করেছেন সেগুলো যৌক্তিক। চিকিৎসকরা হাসপাতালকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে। তারা কাজে যোগদান করুক।’
বিষয়টি কতদিনে বাস্তবায়িত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন তো লাগবেই। তবে ঈদের পর হয়তো বলতে পারব, কতদিনের মধ্যে বেতন বাড়বে।’
এর আগে গত শনিবার (২৩ মার্চ) চার দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
আগামী মাসে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব পাবে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
ওই সূত্র বার্তা সংস্থাটিকে জানায়, শেখ তামিমের সফরে জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় উভয় দেশ।
কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ডজনখানেক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে সূত্রটি বলেছে, সফরকালে এসব এমওইউ ও চুক্তি সই করা হবে।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের আমিরের দুই দিনের সফরটি হতে পারে আগামী ২১ থেকে ২২ এপ্রিল।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমিরের বৈঠকের পর যেসব এমওইউ ও চুক্তি সই হবে, সেগুলো নিয়ে দুই পক্ষ এখন কাজ করছে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে।
গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের সম্মেলন এলডিসি-৫-এর পার্শ্ববৈঠকে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে কাতারের কাছে বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর একই বছরের ৪ মার্চ বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কাতার।
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন খোলে কাতার।
আরও পড়ুন:দেশের সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন বার্তা দিয়েছে।
পূর্বাভাসে আজকের বৃষ্টিপাত নিয়ে বলা আছে, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সিনপটিক অবস্থান নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আজকের তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা আছে, সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা সোমবার সকালে ছিল ৮৫%।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কের কুইন্সের একটি বাসায় মানসিক অবসাদে ভোগা ওই যুবককে বাধ্য হয়েই গুলি করতে হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে।
নিউ ইয়ক টাইমস বলছে, ১৯ বছর বয়সী উইন রোজারিওকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি ওজোন পার্কের ১০৩ নম্বর স্ট্রিটে দ্বিতীয় তলার বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
পুলিশ জনিয়েছে, ৯১১ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ ওই যুবকের বাসায় গিয়েছিল। এ সময় কাঁচি দিয়ে অফিসারদের হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এরই এক পর্যায়ে তার পায়ে গুলি চালানো হয়।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও বলেন, মা উইনকে ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। তবে এর মধ্যেই পুলিশ গুলি ছুড়েছে। এই গুলি ছোড়ার কোনো দরকার ছিল না।
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুজন অফিসার মানসিক যন্ত্রণায় থাকা ব্যক্তি সম্পর্কে ৯১১ নম্বরে একটি কল পেয়ে সেখানে যায়। বাধ্য হয়েই গুলি চালাতে হয়েছে। বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এবং বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছিল। রোজারিও ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন।
উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও জানান, তার পরিবার ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে যান। উইনের স্বপ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া। পরিবারের গ্রিন কার্ড পেতে দেরি হওয়ায় সেটি আর হয়নি।
নিহতের ভাই উশতো রোজারিও জানান, তার ভাই দুই বছর আগে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে স্নাতক করেছে। সম্প্রতি বিষণ্ণ ছিলেন তিনি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কো থেকে যে ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার পেয়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছে, তা প্রতারণামূলক এবং সর্বৈব মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ ধরনের মিথ্যাচার দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেখান থেকে তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, ইউনেস্কো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ ধরনের কোনো সম্মাননা প্রদান করেনি।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গজনভি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে ইসরায়েলের ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের তাকে ‘ট্রি অফ পিস’ সম্মাননা স্মারক দেন।’
ভাস্কর হেদভা সেরও নিশ্চিত করেছেন যে, এটি ইউনেস্কোর সম্মাননা বা পুরস্কার নয়। এটি গজনভি ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত একটি পুরস্কার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করব। ড. ইউনূস ও ইউনেস্কোর নাম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। সেটি আমাদের দেশের জন্য মানহানিকর- এ তথ্যও জানাব।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পীর দেয়া পুরস্কারকে ড. ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করেছেন। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অপমানকরও বটে।
‘ইউনূস সেন্টারের ওয়েবসাইটে এটি ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। ইউনূস সেন্টারকে অনুরোধ করব যে, এভাবে এ ধরনের ভয়াবহ মিথ্যাচার প্রচারণা থেকে তারা যেন বিরত থাকে। তা না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে বুধবার ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটি সঠিক নয় এবং ইউনুস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নান।
এ ধরনের সংবাদ প্রচারকে ‘প্রতারণামূলক ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার’ বলে আখ্যায়িত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনূস সেন্টারের অফিশিয়াল ওয়েব পেইজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
“ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরোমে ড. ইউনূসকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়, কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদরদপ্তর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়।
“১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে, সেখানে ইউনেস্কোর কোন অফিশিয়াল প্রতিনিধিই ছিল না। অধিকন্তু, ইউনূস সেন্টার কর্তৃক দাবিকৃত সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “ড. ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক/সম্মাননা প্রদান করেন ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের। মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ‘ট্রি অফ পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
“নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টারের আমন্ত্রণে ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনুসকে এটি প্রদান করেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার/সম্মাননা দেয়ার এখতিয়ারও রাখেন না।
“সুতরাং, উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রেরিত এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে।
“বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো।”
এই বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার, সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার ব্যাখা চাওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরও তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যেটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
এ ছাড়াও আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবি আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং, তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত না হন, ততদিন তাকে কোনো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কিংবা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সঙ্গে কার্যক্রমের জন্য সরকারের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, কেউ যাতে ইউনেস্কোর নামের অপব্যবহার কিংবা অপপ্রয়োগ না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা। সে হিসেবে ইউনেস্কোর নাম অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শ করে ইউনেস্কো সদর দপ্তরকে অবহিত করা হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য