× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

সোশ্যাল মিডিয়া
জান ও জবান এর ঘূর্ণিতর্ক ফেসবুকে
google_news print-icon

‘জান ও জবান’-এর ঘূর্ণিতর্ক ফেসবুকে

জান-ও-জবান-এর-ঘূর্ণিতর্ক-ফেসবুকে
ব্যানারের এই 'জান ও জবান' নিয়ে ফেসবুকে চলছে বিতর্কের ঝড়। ছবি: সংগৃহিত।
কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ সমাবেশের একটি ব্যানারে লেখা ছিল ‘জান ও জবানের স্বাধীনতা চাই’। আর এরপর থেকেই ‘জান ও জবান’ শব্দবন্ধ নিয়ে তোলপাড় চলছে ফেসবুকে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় আইনটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও একাধিক বামপন্থি সংগঠন। তবে এই আন্দোলনেই বিতর্ক উঠেছে একটি স্লোগানের দুটি শব্দ ঘিরে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে পাল্টাপাল্টি সমালোচনা। এমনকি আন্দোলনকারীদের মধ্যেই তৈরি হয়েছে দুটি পক্ষ।

মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাহবাগে বেলা ৩টায় ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৪টায় সমাবেশ করেন লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মীরা। বিভিন্ন বামপন্থি সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন সেখানে।

প্রতিবাদ সমাবেশের একটি ব্যানারে লেখা ছিল ‘জান ও জবানের স্বাধীনতা চাই’। আর এরপর থেকেই সেই ‘জান ও জবান‘ নিয়ে তোলপাড় চলছে ফেসবুকে।

বিতর্কের সূত্রপাত হয় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় এবং সুইডেন প্রবাসী লেখক ও উইমেন চ্যাপ্টার সম্পাদক সুপ্রীতি ধরের স্ট্যাটাসের সূত্রে।

এর মধ্যে দিলীপ রায়ের স্ট্যাটাসটি ছিল আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ‘গায়েবানা জানাজা'র আয়োজন নিয়ে। ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৪২ মিনিটে দিলীপ রায় স্ট্যাটাস দেন, ‘সারাদিন মিটিং মিছিল করে আসার পর ফেসবুকে কূটক্যাচাল করতে ইচ্ছে করছে না। তারপরও শুধু একটা প্রশ্ন করতে চাই- এটি একটি সাধারণ জিজ্ঞাসা। অপরাধ নেবেন না।

গায়েবানা জানাজা যদি ধর্মীয় না হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়ে থাকে, সেই কর্মসূচির নেতৃত্ব কি দিলীপ রায় দিতে পারবে?’

ভোর ৬টা ২৪ মিনিটে সুপ্রীতি ধর লেখেন, “জান ও জবান’-এর স্বাধীনতা চেয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে। এই দুটো শব্দই আমার কানে বাজছে। এতো বয়স হয়ে গেলেও মনে হয় না খুব বেশি বার/কখনও আমি এই দুটি শব্দ ব্যবহার করেছি। কথা বলার স্বাধীনতা চেয়েছি, লেখার স্বাধীনতা চেয়ে এসেছি এতোকাল। শব্দ, ভাষাও যে সাম্প্রদায়িক হয়, এ দুটো তার প্রমাণ।”

আন্দোলনে ‘জান ও জবান’ দুটি উদ্দেশ্যপূর্ণ শব্দের ব্যবহারকে ইঙ্গিত করে তার এই বক্তব্য সমর্থন করেন নেটিজেনদের অনেকে। সুপ্রীতি ধরের স্ট্যাটাসে আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ লেখেন, ‘এটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। ধর্মকে ব্যবহারের সফটকোর কায়দা। মওলানা ভাসানি স্টাইল। কে করেছে? আমি শুনিনি।’

ইমতিয়াজ মাহমুদ একটি আলাদা পোস্টে লেখেন, ‘...জান-জবান নিয়ে কি আমার অসুবিধা আছে? না, বিষয়টা অসুবিধার নয়, আশঙ্কার। আশঙ্কাটা কিসের?...বাংলাদেশে একদল লোক আছে যারা মওলানা ভাসানিকে খুব পছন্দ করেন, যে কোন অবস্থায় ভারতের বিরোধিতা করেন আর যে কোন অবস্থায় আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেন।...এরা কারা? আপনিই হিসাব করে দেখেন। বিএনপি জামাত এবং ওদের জোটের দলগুলি, সাবেক চীনপন্থি দল ও গ্রুপগুলি এবং এদের অনুগামী বা সমর্থক সমর্থকরা। এরা বাঙালিকে কেবল বাঙালি হিসাবে একটি জাতী হিসাবে দেখতে চায় না বা দেখতে পারে না, এরা বাঙালী মুসলমান ও বাঙালি হিন্দুর মধ্যে পার্থক্য করেন এবং বাংলাদেশকে বাঙালী মুসলমানের দেশ হিসাবে দেখতে পছন্দ করেন।

‘আমি মাওলানা ভাসানিকে পছন্দ করিনা। কেন করিনা? কারণ আমার জ্ঞান বুদ্ধিতে তিনি একজন সাম্প্রদায়িক নেতা ছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে তাঁর ভূমিকা একটু ম্লান ছিল এবং স্বাধীনতার পর দেশের সংবিধানে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম মানুষের বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখতে চেয়েছিলেন। চীনের প্রতি আনুগত্য ও ভারতের প্রতি বিদ্বেষ তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে একটু জটিল তো করেছিলই, তাঁর উপর আবার তাঁর নিজের পীর হিসবে মুরিদ গ্রহণ করা, মানুষকে তাবিজ দেওয়া, পড়াপানি দেওয়া, এইসব আছে। আবার বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ঘাতকদের প্রতি তাঁর ব্লেসিং, জিয়াউর রহমানকে সমর্থন, জিয়াউর রহমানের সমর্থন নিয়ে লং মার্চ এইসবও আছে।’

ইমতিয়াজ মাহমুদ লেখেন, ‘...আমি মনে সেক্যুলার মানুষ, আমি চাই দেশ সেক্যুলার হোক, রাষ্ট্র চলুক ইহজাগতিক নিয়মে। আমি মানুষকে হিন্দু মুসলমানে ভাগ করতে চাই না, বাঙালিকেও হিন্দু মুসলমানে ভাগ করতে চাই না। আমি মনে করিনা যে মাদ্রাসা শিক্ষকরা অনেক স্মার্ট আর রবীন্দ্রনাথ আমার শত্রু। আমি দেশের সমাজতন্ত্র চাই, দুনিয়াজুড়ে সমাজতন্ত্র চাই, বাজার অর্থনীতির পতন চাই। আমি মনে করি সমাজতন্ত্র অর্জন সম্ভব, সমাজতন্ত্র প্রয়োজন এবং বাজার অর্থনীতি উৎখাত করা সম্ভব। কঠিন বটে, কিন্তু অসম্ভব নয়। আমি এটাও মনে করি যে মার্ক্স সাহেবের থিসিস এখনও সঠিক। এবং আমি চাই না রাজনীতিতে কেউ ধর্মের ব্যবহার করুক।’

বাকস্বাধীনতা আদায়ের জন্য যে মঞ্চ তৈরির চেষ্টা, তাতে ‘জান ও জবান’ শব্দের ব্যবহার উদ্দেশ্যমূলক এবং সাম্প্রদায়িক মনে করে স্ট্যাটাস দেন দৈনিক সমকালের ফিচার সম্পাদক ও কবি মাহবুব আজীজ, দৈনিক দেশ রূপান্তর-এর যুগ্ম সম্পাদক গাজী নাসিরুদ্দিন খোকনসহ অনেকে।

মাহবুব আজীজ লেখেন, “কথা বলবার অধিকার আদায়ের জন্য যে মঞ্চ তৈরির চেষ্টা-- তাতে ‘জান ও জবান’ শব্দের ব্যবহার সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়। ভাষা সুতীব্রভাবে রাজনৈতিক -- জান, জবান বা সিনা, সিলসিলা -- এসব শব্দ যারা ব্যবহার করে; তাদের রাজনৈতিক গন্তব্য অবশ্যই সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে।”

‘জান জবানের স্বাধীনতা চাই’ দাবি তুলে আন্দোলনকারীরা এর মধ্যে খাটিয়া মিছিল ও গায়েবানা জানাজা করলে সাংবাদিক গাজী নাসিরুদ্দিন খোকন স্ট্যাটাস দেন, “বামপন্থীরা গায়েবানা জানাজা করল। এটিতো আর মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনায় করা হয়নি। রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। তাতে দেশের অন্য ধর্মের লোকদের এক্সক্লুড করে দেয়া হল। তারপর নাকি আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে ‘জান ও জবান’ রক্ষার দাবি নিয়ে। দৃশ্যত ভাসানী ভাসানী মনে হলেও এর স্পিরিচুয়াল গুরু সন্দেহাতীতভাবে ফরহাদ মজহার। ভাষার বিউপনিবেশিকরণের নামে ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোই এই স্লোগানের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য। মজার ব্যাপার ফরহাদের এই সমস্ত বিদ্বেষের সাবস্ক্রাইবার হচ্ছে বামপন্থী পরিচয় দেওয়া প্রতিক্রিয়াশীলরা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বামপন্থীরাও যদি ইনক্লুসিভ হতে না পারে তাহলে ভেদবুদ্ধিই রাজনীতি শাসন করবে। দিব্যচোখে এদেশের পরিণতি দেখা যায়। আরেকটা পাকিস্তান ইজ ইন দ্য অফিং।”

সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী অনেকেই এসব স্ট্যাটাসে তাদের প্রতিক্রিয়া ও মতামত দেন। সুপ্রীতি ধরের স্ট্যাটাসে খান আসাদ নামের একজনের মন্তব্য ছিল, “ব্যাপারটা খেয়াল করেছি। প্রথমে ফরহাদ মজহার এলো ‘জ্বিহাদ হচ্ছে শ্রেণীসংগ্রাম’ তত্ত্ব নিয়ে। তারপর পিনাকী ভটচাজ এলো সংখ্যাগুরু ‘মুসলমানের’ সাথে ঐক্য করার ‘কৌশল’ বোঝাতে। এরপর এখন ‘মুসলমানদের’ সাথে রিলেট করা যায়, এমন স্লোগান খোঁজা হচ্ছে। হোক এগুলো। পার্ট অফ দি প্রসেস। কিন্তু আন্দোলনে ‘সাম্প্রদায়িক ভাষা’ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলায় যে উষ্মা ও গালাগাল দেখছি, সেটা আমাকে খুবই বিস্মিত করেছে। এই ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সহিঞ্চুতা তো ফ্যাসিস্টদের থাকে।”

‘জান ও জবান’-এর এই তর্কের সূত্র ধরে লেখক ও ব্লগার অমি রহমান পিয়াল লেখেন, “বাংলা ভাষার মাসের শেষ দিনটায় দারুণ এক বলাৎকার উপহার দিলো বিপ্লবীরা। তারা মুশতাকরে ভাষা সৈনিক বইলা দাবি করছে, সেটা করতেই পারে। কিন্তু ইনকিলাবি জোশে নতুন কিছু শব্দ যোগ করছে বাংলার রাজনীতিতে, শ্লোগানে, পোস্টারে। যদিও তাগো নেতারা বলতেছে ডানপন্থী জামাত শিবির ও বিম্পি যেন তাদের দূরের না ভাবে এবং ইসলামী আন্দোলনকারীরা যেন নাস্তিক বইলা তাগো দূরে ঠেইলা না দেয় সেই নৈকট্য আনতেই তারা এইসব ভাষা প্রয়োগ করতেছে। তো আমরা ইনসানিয়াত, ইনসাফ, নফসানিয়াত, মাগরমছলি, জান কি বাজি ইত্যাদি অনেক নতুন জবান শিখলাম আলহামদুলিল্লাহ। পরে গুগল মাইরা দেখি এইসব নামে সুপারহিট সব উর্দু সিনেমা আছে! মারহাবা...”

এর বিপরীত পক্ষও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান ফেসবুকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী আর আব্দুল লতিফের গানের লিরিক, নজরুলের রাজবন্দীর জবানবন্দিসহ নানা সাহিত্যিক রেফারেন্স। মোটা দাগে দুই ধরনের বক্তব্য ও বিশ্লেষণ পাওয়া যাচ্ছে এসব স্ট্যাটাসে।

এক পক্ষ ‘সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা’কে আন্দোলনের স্লোগানে ব্যবহারের সমালোচনাকারীদের ‘সাম্প্রদায়িক ও সরকারপন্থি’ হিসেবে অভিযুক্ত করছেন। আরেক পক্ষ ভাষার চিরকালীন পরিবর্তনশীলতা, বিদেশি শব্দের সাথে সহজাত মিথস্ক্রিয়া এবং এর ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ব্যবহারের বিভিন্ন বিষয় সামনে আনছেন।

লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও কবি ফারুক ওয়াসিফ লেখেন, ‘জান ও জবান যাদের কলুষিত, তারা একদিন শহীদ মিনারকেও সাম্প্রদায়িক বলবে, যেহেতু শহীদ আরবী আর মিনার ফারসি ভাষা থেকে আসা বাংলা শব্দ।’

কবি সোহেল হাসান গালিব ফেসবুকের এই তর্কে ‘ভাষা-সাম্প্রদায়িকদের’ উদ্দেশ করে “ভাষা-সাম্প্রদায়িকতা: প্রসঙ্গ জান ও জবান” শিরোনামে পোস্টে লেখেন, “কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু আক্ষেপসহ আমাকে জানালেন তিনি কবিতায় ‘আব্বা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন বলে এক প্রগতিশীল ‘হিন্দু’ কবি বলেছেন, লেখাটা সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আব্বা’ শব্দের রিপ্লেসমেন্ট হিশেবে তার সেকুলার সাজেশনটা কী? বন্ধু বললেন, সে তাকে ‘বাবা’ লিখতে বলছে। আমি তখন বললাম, তাকে বলেন ‘বাবা’ শব্দটা তো তুর্কি। আরবির বদলে তুর্কি লেখাটা কি ঠিক হবে?…’

তিনি লেখেন, “জান ও জবান’-এর বিরোধিতা যারা করছেন, তারা সেই পুরনো সাম্প্রদায়িক ব্যাধিতে আক্রান্ত। এ যুগের ভারতচন্দ্র হিশেবে এইটুকু আমি নিশ্চিত করতে পারি।”

কবি ব্রাত্য রাইসু স্ট্যাটাস দেন, “জান’ ও ‘জবান’ শব্দ একসঙ্গে বসার কারণে এর ইসলামি উৎস প্রকট হইয়া উঠছে। তাতে ক্ষতি কী? এই শব্দ দুইটার কারণে যারা আন্দোলনে অনীহ তারাই সাম্প্রদায়িক।

‘শব্দের অবশ্যই মুসলিম ও হিন্দু উৎস আছে, থাকবে। তার ব্যবহারকারী হিসাবে আপনি যখন মুসলমান তাই হিন্দু শব্দ ব্যবহার করবেন না বইলা ঘোষণা দিবেন তখন আপনি সাম্প্রদায়িক। আবার হিন্দু হইলে মুসলমান শব্দ ব্যবহারে আপত্তি যখন জানাইতেছেন তখনও আপনি সাম্প্রদায়িক। কিন্তু যখন আপনি একই সঙ্গে মুসলমান ও ইসলামি শব্দে আপনার আপত্তি তখন আপনি দুই নম্বর। আপনি পরিচয় লুকাইতেছেন। তাইলে কারা সাম্প্রদায়িক ও ভণ্ড?

‘যারা জান ও জবানে আপত্তি করতেছেন, তারাই। ’

‘জান ও জবান’ শব্দবন্ধের বিরোধিতার সমালোচনা করে দেশ রূপান্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরিফুজ্জামান তুহিন লেখেন, ‘সুপ্রীতি ধর কহিলেন!! তসলিম নাসরিন সরাসরি বিজেপিকে সমর্থন করেন। তসলিমার সমর্থক নারীবাদীরাও বিজেপি সংঘ পরিবারের সমর্থক কট্টোর হিন্দু মৌলবাদী। এতে সুপ্রীতি ধর কেন গোস্যা হলেন বুঝতে পারছিনা। আপনি একটা আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক বলে দেগে দিলেন সেটা তুচ্ছ ঘটনা? এভাবেইতো ভারতে কৃষক আন্দোলনকে টুকরে টুকরে গ্যাং, খালিস্তান, মাওবাদী দেগে দিচ্ছে মোদি বিজেপি সংঘ পরিবার।

তিনি লেখেন, “আমরা জানি কারা আমাদের মুখ চেপে ধরতে চায়? আপনার মুখের ভাষা ‘অতি বাম’ আসলে আপনার নেত্রীর ভাষা।

আমরা জানি আপনাদের রসুনের কোয়াগুলো ঠিক কোথায় এসে বাসা বেধেছে। আমরা অপেক্ষা করি সেদিনের, যেদিন কৃষক ও শ্রমিক তার ভাষা দিয়ে আপনার জবানের জবাব দেবে। আর কান্নাকাটি কইরেন না। আন্দোলন করছেন যারা তারা আন্দোলনই করবে,যারা মামলা কারাগারে তারা তা বহন করবে। দুরে থেকে নিরাপদে থেকে তারা নারীবাদ বেঁচবে না। কারণ তারা শ্রম বেচতে জানে, আর্দশ না।”

অন্যদিকে জার্মান প্রবাসী কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট, সাহিত্য পত্রিকা অংশুমালীর সম্পাদক জোবায়েন সন্ধী সুপ্রীতি ধরের স্ট্যাটাস এর জবাবে লেখেন, “চশমাটা খুলে ফেলুন! ওরে, তোরা কেউ আর যাসনে ওই ‘শহীদ’ ‘মিনার’-এ। ‘জান’ কিংবা ‘জবান’ এই শব্দগুলো যে সাম্প্রদায়িক, এটা সুপ্রীতি ধর দাবি করেছেন। নিজেকে নারীবাদি দাবি করা সুপ্রীতি ধর উওমেন চ্যাপ্টার নামক পোর্টাল চালান। এই নারী যে ভাষা ও সাম্প্রদায়িক বিশেষজ্ঞ, সেটা আজ নতুন করে জানতে পারলাম।’’

জোবায়েন সন্ধী লেখেন, “তিনি (সুপ্রীতি) যে আওয়ামী লীগের পারপাস সার্ভ করেন সেই ‘আওয়ামী’ শব্দটায় কোনো সাম্প্রদায়িক গন্ধ পাননা। হক ও মজলুম শব্দে সাম্প্রদায়িক গন্ধ পেলেও তাঁর মেয়ের নামের শেষে ‘হক’ থাকায় তিনি কোনো সাম্প্রদায়িক গন্ধ পাননা।

সুপ্রীতির দাবি অনুযায়ী ‘ইনকিলাব’ কিংবা ‘জিন্দাবাদ’ তো মহা সাম্প্রদায়িক শব্দ!...”

এর মধ্যেই ব্লগার ও গণসংহতি আন্দোলনের কর্মী সৈকত মল্লিক স্ট্যাটাস দেন, “জান ও জবানের স্বাধীনতা চাই। ‘নফসানিয়াত’ নিপাত যাক, ‘ইনসানিয়াত’ মুক্তি পাক। ইনসাফ কায়েমের লড়াইয়ে শামিল হোন।”

বামপন্থী অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক ফিরোজ আহমেদ ফেসবুকে লেখেন, “ধাড়িগুলোকে নামিয়েছে মোস্তাক ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতো, এই ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে। অতীতে বেশ কাজে এলেও এবারে ওষুধ ধরেনি। তখন ছানাপোনাগুলোকে নামিয়েছে ঠিক ১৮০ কৌনিক দূরত্বের ‘জান-জবান’ উর্দু, এই ঢাল নিয়ে।

“আওয়ামী’ ‘লীগের’ এই দুইটি আলাদা ‘মোসাহেব’ বাহিনীই বেশ পারঙ্গম। আরে ভাই, জান-জবান শুনে উর্দু মনে হয়, তোমাদের কেউ মানা করেছে ‘বাকস্বাধীনতা রক্ষা করো, মোস্তাকের খুনীদের বিচার করো, অবৈধ দখলদার আসন ছাড়ো’ এইভাবে শুদ্ধ বাংলায় সমাবেশ ডাকতে? নিমন্ত্রণ পেলে আমিও যাবো, বিশুদ্ধ বাংলায় বক্তব্য দিয়ে আসবো।”

ফিরোজ আহমেদ ফেসবুকে লেখেন, “কী জাবর কেটে তারা সময় কাটায়, সেটা দেখেই তো বোঝা যায় কারা আসলে কোন প্রাণী, কী তারা চায়। *অত্যন্ত লজ্জিত ‘মোসাহেব’ এই ফার্সী শব্দটা রেখে দিতে হলো বলে। চাটুকার, দলদাস, দলকানা ইত্যাদি বাংলা শব্দকে আমার কাছে একটু আক্রমণাত্মক আর অভদ্র মনে হয়। ক্ষমা করবেন বাংলাভাষীবৃন্দ।”

বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি-উর্দু-তুর্কি শব্দের সহজাত ব্যবহার এবং জান-জবান এর ব্যবহারকে ‘সাম্প্রদায়িক’ হিসেবে আখ্যানের পেছনের মনস্তত্ত্ব নিয়ে বিশ্লেষণমূলক স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ‘জান ও জবান’ নিয়ে ফেসবুকের হুলুস্থুলে লেখেন, ‘‘বাজারে ‘জান’ ও ‘জবান’ নিয়া হুলুস্থুল চলতেছে। এ লাইনে করে-খাওয়া পাবলিক হিসাবে দুই-এক কথা বলা জরুরি মনে করছি। এক. এ আলাপটা আদতে ‘বিদেশি’ ভাষার আলাপ। যারা দশ ক্লাস ডিঙ্গাইছেন, তাদের সবারই মনে থাকার কথা, বাংলা ব্যাকরণ বইতে ‘শব্দের উৎসগত শ্রেণিবিভাগ’ বলে এক চিজ আছে। এটাও ভুলে যাওয়ার কারণ নাই, ইংরেজি ব্যাকরণে এ লাইনে কোনো বাতচিত ছিল না।"

তিনি লেখেন, "জটিলতায় না গিয়া কই, আপনারা পিছন ফিরা মনে করতে পারবেন, বাংলা ব্যাকরণটা সাজানো হইছে এই ‘বিদেশি’ আর ‘অবিদেশি’ ক্যাটেগরি বা বর্গ দিয়া। এর পেছনের রাজনীতি ও রাজনৈতিক র্অথনীতি বিস্তর আছে। সেদিকে না গিয়া বলি, ‘বিদেশি’ শব্দ বইলা ভাষায় আসলে কিছু থাকে না। এটা ভাষাবিজ্ঞানের খুবই প্রাথমিক আলাপ। ‘বোতল’ শব্দটা বিদেশি নয়; কারণ, দুনিয়ার কোনো ভাষায় এ রূপতত্ত্ব ও ধ্বনিতত্ত্বে ব্যাখ্যাযোগ্য কোনো শব্দ নাই। ইংরেজিতে যে নাই, তা আপনারা সকলেই জানেন। কাজেই যারা ‘বিদেশি’ ক্যাটেগরিতে আলাপটা করেছেন, পক্ষে বা বিপক্ষে, বাংলা হইয়া গেছে বা হয় নাই ইত্যাদি বলে, তারা জেনে বা না জেনে ইতিমধ্যে সাম্প্রদায়িকতার খপ্পরে থাকা ব্যাকরণের খপ্পরে পড়েছেন। এখানে বলে রাখি, ‘বিদেশি’ কথাটা শুধু বাংলা ব্যাকরণের না, ইতিহাস ও অন্য অনেক শাস্ত্রেরও ঘোষিত বা অঘোষিত ভিত্তিভূমি। কাজেই সংস্কৃতি, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক রাজনীতি ইত্যাদি চর্চায় আপনি এ গোলমাল এড়াতে চাইলে ‘সাধু’ সাজলেই কেবল হবে না, এই সাম্প্রদায়িক ‘বিদেশি’ ধারণাটাকেই গুড়িয়ে দিতে হবে। দুই. এ আলাপে ‘আরবি’ ও ‘ফারসি’ শব্দ দুটো দেদার ব্যবহৃত হয়েছে। ভুল। দুশ বছর ধরে সবচেয়ে ভদ্রলোকেরাও কথাটা এভাবে বলায় এখনকার ভদ্রলোকেরা কথাগুলো ব্যবহার করেছেন, আর দাবি করেছেন, তিনি আরবি-ফারসিতে সমস্যা মনে করছেন না, কাজেই তিনি অসাম্প্রদায়িক।"

অধ্যাপক আজম লেখেন, "আসলে পুরা আলাপটাই ভয়াবহভাবে গোলমেলে। বাংলায় ব্যবহৃত এসব শব্দের সাথে ‘আরবি-ফারসি’র সম্পর্ক খুবই সামান্য অথবা একেবারেই নাই। যে ভাষা থেকে বাংলা এবং ভারতীয় অন্য অসংখ্য ভাষায় শব্দগুলো ঢুকেছে সে ভাষাটির নাম হিন্দুস্থানি -- ইংরেজির আগে ভারতের সবচেয়ে প্রতাপশালী লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা। এ কথা মাথায় নেয়ার সাথে সাথে আপনি দুশ বছরের এ বাতচিতের গোড়ার ব্যারামটা বুঝে ফেলবেন। ‘আরবি-ফারসি’ ‘বিদেশি’ ভাষা এবং প্রধানত মুসলমানদের সাথে যুক্ত। হিন্দুস্থানি খাঁটি ভারতীয় মাল, এবং এসেন্সিয়ালি ভারতের হিন্দু-মুসলমানসহ সব জনগোষ্ঠীর সাথে যুক্ত। কাজেই হিন্দুস্থানিকে ভাসুর বানাইয়া ‘আরবি-ফারসি’র নাম জবানে এস্তমাল করতে পারলেই একসাথে অনেকগুলা কেল্লা ফতে করা যায়। গত দুশ বছর ধইরা এ ঘটনা নানা ফর্মে ঘটতেছে। যারা ফেসবুকের আলাপ ফলো করেছেন, তাদের ব্যাপারটার ব্যাপকতা বুঝতে দেরি হওয়ার কথা না। ৩। অনেকে ভাষার সাথে সাম্প্রদায়িকতা, রাজনীতি ইত্যাদির সম্পর্ক নাই বলে ফতোয়া বিতরণ করেছেন। ভালো নিয়তেই করেছেন। তাদের জন্য শুভকামনা।"

তিনি লেখেন, "এরা শুধু একটাই সমস্যা করেছেন। ভাষাকে জামার মতো ভেবেছেন, যাকে ধুয়ে-মুছে সাফ-সুতরা করিয়ে নেয়া যায়, এবং চাইলে যে কোনো সুগন্ধী মাখিয়ে অন্য ফ্লেবার দেয়া যায়। না। ভাষা ওই জিনিস না। এটা জীবনের প্রধান প্রকাশ; কাজেই জীবনের মাপই এর মাপ। জীবনে যা যা আছে ভাষাতেও তার সবই আছে।

এ দিক থেকে যারা ‘জান’ ও ‘জবান’ শব্দের একত্র-ব্যবহারে ভিরমি খেয়েছেন, তাদের পজিশন, আমি বলব, রাজনৈতিকভাবে শুদ্ধ নাও হতে পারে, কিন্তু ভাষার চরিত্রের দিক থেকে বিলকুল সহি। এ ব্যবহার রাজনৈতিকভাবে, বিশেষত সাংস্কৃতিক রাজনীতির দিক থেকে, কাজে কাজেই ক্ষমতা-সম্পর্কের দিক থেকে, অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। ”

কবি মজনু শাহ স্ট্যাটাস দেন, “Bengali words, come from others!

চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে খাওয়ার সময় হঠাৎ মাথায় এল যে এই চা চীনা শব্দ। আবার বিস্কুট ফরাসি শব্দ। বিস্কুটের সাথে থাকা চানাচুর হিন্দি। চায়ে যে চিনি ও পানি থাকে, সেখানে পানি হিন্দি । আবার চা ভর্তি পেয়ালাটা ফারসি কিন্তু কাপটা ইংরেজি। এদিকে ইংরেজি শব্দটাই আবার পর্তুগিজ।”

তিনি লেখেন, ‘চা চীনা হলেও কফি কিন্তু তুর্কি শব্দ। আবার কেক পাউরুটির কেক ইংরেজি, পাউরুটি পর্তুগীজ। খানাপিনায় যাই। বলে রাখি, খানাপিনা হিন্দী আর দাম গ্রীক। রেস্তোরাঁ বা ব্যুফেতে গিয়ে পিৎজা, বার্গার বা চকোলেট অর্ডার দেয়ার সময় কখনো কি খেয়াল করেছেন, রেস্তোরা আর ব্যুফে দুইটাই ফরাসী ভাষার, সাথে পিৎজাও। পিৎজায় দেয়া মশলাটা আরবি। মশলায় দেয়া মরিচটা ফারসি!

বার্গার কিংবা চপ দুটোই আবার ইংরেজি। কিন্তু চকোলেট আবার মেক্সিকান শব্দ। অর্ডারটা ইংরেজি। যে মেন্যু থেকে অর্ডার করছেন সেটা আবার ফরাসী। ম্যানেজারকে নগদে টাকা দেয়ার সময় মাথায় রাখবেন, নগদ আরবি, আর ম্যানেজার ইতালিয়ান। আর যদি দারোয়ানকে বকশিস দেন, দারোয়ান ও তার বকশিস দুটোই ফারসি।…

‘পুরো স্ট্যাটাস মনে না থাকলে অন্তত এটা মনে রাখবেন যে মন শব্দটা আরবি। নামে আসি। মজনু (মাজনুন) আরবি, শাহ ফারসি, বাংলা অর্থ, পাগল প্রেমিকের মাজার/দরগাহ । দরগাহ আবার ফারসি। শব্দের কেচ্ছা-কাহিনী এখানেই খতম। তবে কেচ্ছাটা আরবি, কাহিনীটা হিন্দি, উভয়ের খতমটা আরবিতে। মাফ চাইলাম না বা সরি বললাম না, কারণ মাফটা আরবি আর সরিটা ইংরেজি।’

কবি রক মনু লেখেন, “গোরস্থান বা হিন্দুস্থান নাকি গোরস্তান আর হিন্দুস্তান? জে কোনটাই হইতে পারে, কিন্তু কি আছিল আর কেমনে আর কেন পাল্টাইলো অনেকের লেখায়, শেই ইতিহাশটা মজার!

“আরো দুয়েকটা শব্দও আনা জাইতে পারে আলাপে; নিশিত বা ভোমর নাকি নিশিথ আর ভ্রমর? ছিলেট/মৌলভিবাজারের ভানু শেখের লেখা গান আছিলো, ‘নিশিতে জাইও ফুলবনে রে ভোমরা...’। এইটা চুরি করছিলেন জসিমউদ্দিন; চুরি কেন কইলাম? ভানু শেখের গানে তার দস্তখত আছিলো, লালনের গানে জেমন থাকে না, ‘শিরাজ শাই ডেকে বলে লালনকে...’ তেমন দস্তখত বা আরো আগে ‘কাশিরাম দাশ ভনে...’, তেমনটা রেওয়াজ আছিলো শেই জামানায়; আশলে এই জামানায়ও, জামানার আলাপটা ভুয়া, এখনো বাউল আর ফকিরা গানে আকছার পাইবেন এমন, আপনের টাইপের মামলা এইটা, জামানার ততো না!...’’

লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট পারভেজ আলম লেখেন, “বদলোকে কয় বাঙলা ভাষার কি জাত এই সংসারে? ভাষার কোন জাত নাই এ সংসারে। বাঙলা ভাষারও নাই। বাঙলা ভাষার দিকে তাকাইতে হবে প্রেমিকের মতো। বাঙলা ভাষার মধ্যে হাজির থাকা বিভিন্ন বংশের শব্দ ভান্ডারকে তখন আপনার আপন মনে হবে। যারা ভাষার দিকে জাতিবাদী বা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে তাকান, তারা বিভিন্ন শব্দের মধ্যে হিন্দুয়ানী, মুসলমানি, দেশী, বিদেশী এমন নানান রকম পরিচয়ই খালি খুঁজে পান। শব্দের মধ্যে তারা দেখেন খালি ‘জাতের চিহ্ন’।

ভাষারে পৈতা পরাইতে চাওয়া অথবা সুন্নতে খতনা করাইতে চাওয়া সাম্প্রদায়িকদের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দেবার জন্যে, নিজ নিজ পক্ষকে সাম্প্রদায়িক-জাতিবাদীদের প্রভাব মুক্ত রাখার জন্যে বাঙলা ভাষায় হাজির থাকা সকল শব্দকে ভালবাসুন, বেশি বেশি ব্যবহার করুন। নিজের ভাষার প্রাচুর্যকে কবুল করুন। তখন দেখবেন যে - জান ও জবান - এমন আরো কতো স্লোগান - টুপ করে, হুট করে, ধপ করে, অথবা একটা নাদের মতো করে - নাজেল হতে থাকবে আমাদের ভাষার মধ্যে। …”

কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ লেখেন, “জান’, ‘জবান’–এর সমস্যা কি? ভাষা ও শব্দকে কেন সাম্প্রদায়িকরূপে দেখা হবে? আমরা মাঝেমাঝেই বলি যে, ‘আমার কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে।’

একই কথা আবার এভাবেও বলি যে, ‘আমার জবান বন্ধ করতে চাও?’ এই যে একবার ‘কণ্ঠ’ আর একবার ‘জবান’ ব্যবহার করা গেল, এতে—এই দুই শব্দের মধ্য দিয়ে কি কোনো সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে নির্দিষ্ট করা গেল? যাচ্ছে?

মনে হয় না। একেবারেই মনে হয় না। আমরা যেমন ‘জল’ বলি, আবার ‘পানি’ও বলি। এটা আমাদের ভাষা বৈচিত্র্যের অংশ।…”

এর বাইরে এই তর্কের ঊর্ধ্বে উঠে আন্দোলনের মূল ইস্যুতে জোর দেয়ার তাগিদও দিয়েছেন অনেকে।

কলামিস্ট, সাংবাদিক ও লেখক মনজুরুল হক স্ট্যাটাস দেন, “প্রশ্ন হচ্ছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বাতিল করতে হবে। এটা বাতিল হলে কী আর নির্যাতন-নিপীড়ন হবে না? অবশ্যই হবে। সেসবের জন্য গন্ডায় গন্ডায় আইন আছে। তারপরও এই কালো আইন বাতিলের আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের আগে ‘রিদমিক স্লোগান’ হিসেবে এসেছে- ‘জান ও জবানের স্বাধীনতা চাই’। এই স্লোগানকে কেউ কেউ ‘সাম্প্রদায়িকতা দোষে দুষ্ট’ বলছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের বাক-বিতণ্ডা চরমে। মধ্যিখানে গুরুত্ব হারাল মূল ইস্যু-কুখ্যাত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বাতিলের দাবী।

তিনি লেখেন, ‘এই স্লোগানসম্বলিত পোস্টারে কুখ্যাত আইনটি বাতিলের দাবী নেই। এটাই হওয়ার কথা। আপনারা বলবেন; ভাষার আবার ধর্ম কি? আছে, আছে। মজহার সায়েব যখন জিহাদকেই শ্রেণিসংগ্রাম বলে বিভ্রান্ত করেন, তখন সেটা ধর্মের কোটিং দিয়েই হয়। শব্দ যদি নিরীহ আর নিরপরাধ হতো তাহলে সর্বহারা শ্রেণির হাতে বন্দুক উঠলে আপনারা রে রে করে ওঠেন কেন?...’

স্ট্যাটাসের শেষ অংশে তিনি লেখেন,

‘আপনারা বন্দুকের সামনেও যেতে পারেন না।

আপনারা বন্দুক হাতে নেওয়া মানতে পারেন না।

কী করে জান-জবানের স্বাধীনতা আদায় করবেন?’

এই প্রতিবেদনে ফেসবুকের স্ট্যাটাসের বানান ও ভাষারীতি একই রাখা হয়েছে। তবে কোনো কোনো দীর্ঘ স্ট্যাটাস সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:
মুশতাক ‘মাদক’ নিতেন কি না তদন্তে বেরিয়ে আসবে: তথ্যমন্ত্রী
মুশতাকের মৃত্যু: সচিবালয়মুখী বিক্ষোভে পুলিশের বাধা
মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদকারীদের মুক্তির দাবি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি বাম জোটের 
মুশতাকের মৃত্যু তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটি

মন্তব্য

আরও পড়ুন

সোশ্যাল মিডিয়া
Another 120 people from Libya have been brought back home

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে আরও ১২৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।

উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।

সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

মন্তব্য

তদন্ত কমিশনের সংবাদ সম্মেলন

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

গুমের শিকার ব‍্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।

তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।

গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।

গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।

গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।

মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।

কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।

এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সোশ্যাল মিডিয়া
The accused in the murder case

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

আদালত থেকে পালাল হত্যা মামলার আসামি

ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।

আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।

তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।

ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।

মন্তব্য

সোশ্যাল মিডিয়া
The 5th Annual Senate Meeting in the BUP

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

বিইউপিতে ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা অনুষ্ঠিত

১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।

সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।

সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।

সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।

Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র‍্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।

এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সোশ্যাল মিডিয়া
BNP does not support the electoral college in the presidential election

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থা সমর্থন করে না বিএনপি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’

গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।

এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’

স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’

বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।

মন্তব্য

সোশ্যাল মিডিয়া
Bhawal Chandipur Agrakhola road is like a death

ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী   
ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়ক যেন মরণফাঁদ

কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।

রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।

সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।

এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।

একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।

এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

মন্তব্য

সোশ্যাল মিডিয়া
Twenty four bucks the family of four runs a family of four

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

আড়াইশ টাকা আয়ে চারজনের সংসার চালায় কিশোর তোফাজ্জল!

একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।

তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।

সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।

স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।

ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।

মন্তব্য

p
উপরে