শুরুটা ছাত্রদলের এক নেতাকে দিয়ে। ‘বিএনপি লন্ডন থেকে আসা ওহিতে চলে। তারেক রহমানের দুই বছর চুপ করে থাকা উচিত। তার যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা উচিত’- জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছিলেন এ কথা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদলের এক নেতা তাকে থামিয়ে দিয়ে সতর্ক করেন, তিনি (জাফরুল্লাহ) যেন বিএনপি নেতার সমালোচনা না করেন। আর করলে যদি তার কিছু হয়ে যায়, তবে তারা দায়ী থাকবেন না।
গত ২৬ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছাত্রদলের সহসভাপতি ওমর ফারুক কাউসার ও গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে এই আলাপন ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতিতে নতুন আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে।
গত কয়েক বছরে বিএনপির ‘পরামর্শক’ হয়ে ওঠার চেষ্টা করা চীনপন্থি সাবেক বাম নেতা আওয়ামী লীগ ঘরানায় অজনপ্রিয় হয়েছেন, এটা স্পষ্ট, কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকেও তার প্রতি তির্যক মন্তব্য এসেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নাম উল্লেখ না করে জাফরুল্লাহর সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আওয়ামী লীগের বদলে তিনি বিএনপির সমালোচনা করেন। বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে জাফরুল্লাহর সমালোচনা করেছে।
এই পরিস্থিতিতে নিউজবাংলা কথা বলেছে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে বিএনপির জোট গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে। তিনি বলেছেন, প্রেস ক্লাবের সেদিনের ঘটনায় ছাত্রদলের নেতাদের ওপর তার কোনো রাগ নেই। কিন্তু এটা নিয়ে বিএনপির তার বিরুদ্ধে কথা বলার কিছু নেই।
বিএনপিকে নিয়মিত বুদ্ধিপরামর্শ দিয়ে আসা জাফরুল্লাহ যে দলটির ওপর চটেছেন, সেটি উঠে আসে এই আলাপনে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় ছাত্রদলের এক নেতা আপনাকে সাবধান করে দিয়েছেন, যেটি আসলে হুমকি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। সেদিন আসলে কী হয়েছিল?
তারা দাঁড়িয়ে আমাকে সালাম দিয়েছে। আমি মাত্র বক্তৃতা শুরু করেছি, এমন সময়ে দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে তাদের আমি চিনিও না। তারা আমাকে সালাম দিয়েছে।
বলেছে, আসসালামু আলাইকুম
আমি বলেছি, ওয়ালাইকুম আসসালাম।
বলেছে, আপনি আমাদের কে?
আমি বলেছি, কেউ না। তোমাদের শুভানুধ্যায়ী। বলেছে, আপনি আমাদের নেতা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করবেন না। আপনি সব সময় তাকে ছোট করেন। আমি বলেছি, না তুমি আমার কথা শোনো, বসো শোনো তারপর মন্তব্য করো। বলে যে, না আপনি বলবেন না। আমি বললাম, না সেটা আমার অধিকার আছে, আমি বলব, আমার কণ্ঠস্বর কেউ বন্ধ করতে পারবে না। এটাই তো পটভূমি। এটা শুনে কোনো আলোচনার আমি জায়গাই দেখি না। আমার কাছেও তো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ সৃষ্টি হয়নি। আমার কাছে বরং মনে হয়েছে তাদের ক্ষোভটাকে তারা প্রকাশ করে ভালোই করেছে।
আপনি কিছু মনে করেননি। তবে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে এই নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
কোনো কাজ নাই তাদের। তারা এটা দিতেই পারে। এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে নাগরিক হিসেবে আমার অবশ্যই সব দল সম্পর্কে কথা বলার অধিকার রয়েছে। তাদের পছন্দ হতে পারে, না-ও হতে পারে। তারা তা সমর্থন করতে পারে, আবার সেটার বিরুদ্ধেও বক্তব্য রাখতে পারে। মূল কাজ তো তারা করে না। তারা আন্দোলন করে না, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে না। খালি একটা বক্তৃতা দেয়া ছাড়া কিছু করে না। যে এই দেশে নাই, তাদের নেতৃত্বের যে একটা সংকট চলছে, তাদের তৃণমূলের লোকেরা কার সঙ্গে কথা বলবে? -এটা হলো কী! তারা কোনো বক্তব্য খুঁজে পাচ্ছে না। একটা ছোট ঘটনাকে নিয়ে…আমার তো মনে হয়, একমুহুর্তের জন্য এই দুটি ছাত্রের সম্পর্কে খারাপ ধারণা হয়নি। বরং আমার মনে হয়েছে, তারা শুনেছে আমার বক্তৃতা, তা নয়তো প্রতিবাদও করতে পারত না, বক্তব্যও রাখতে পারত না। এটা আসলে কোনো বিষয়ই না আলাপের।
ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন আপনার থেকে এমন মন্তব্য তারা আশা করেন না…
কে এই ছাত্র? তার বয়স কত? সে বিয়ে করেছে? তাদের তো ছাত্রই থাকা উচিত না। আমি পাঁচ বছর আগে খালেদা জিয়াকে চিঠি লিখেছিলাম। আমি খালেদা জিয়াকে বলেছিলাম, ২৫ বছরের বেশি বয়স হলে তাদের আর ছাত্রদল করা উচিত না। তারপরে তারা বিয়েশাদি করে বেড়ায়, বাচাকাচ্চা থাকে। তাদের যুবদল করতে হবে। ছাত্রদলকে ২৫-২৬ বা ২৭ বছরের মধ্যে হতে হবে। তাইলে তারা আন্দোলন করবে। দেখেন ছাত্রদলের অতীত কত ভালো ছিল। যখন তারা, আমান (আমানউল্লাহ আমান), খোকন (খায়রুল কবির খোকন), এদের তখন বয়স কম ছিল। তারা আন্দোলন করেছে। এখন ছাত্রদল এত বড় একটা নির্বাচন হলো। তারা হারিয়ে গেছে। তাদের তো লজ্জা লাগা উচিত। দুঃখ পাওয়া উচিত।
তিনি বলেছেন আপনি বরাবর তাদের দল নিয়ে, প্রিয় নেতাদের নিয়ে সমালোচনা করেন…
করি, করি। এটা করি হচ্ছে গিয়ে তাদের শুভানুধ্যায়ী বলে। তাদের ব্যর্থতায় কষ্ট পাই বলে করি। তাদের বরং আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত যে আমি তাদের সঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করি। আমার পথ যে সঠিক, তা-ও আমি বলি না। কিন্তু আমি সব সময়…তারা এত বড় একটা দল। এখনও তারা খালেদা জিয়াকে বের করতে পারল না। তাদের ব্যর্থতায় আমি ব্যথিত হই। কিন্তু তারা আমাকে ভুল বুঝছে।
তাদের মধ্যে এহছানুল হক মিলন এই তাদের একটা ইয়াং ভালো…একটা ভালো লেখা লিখেছেন। প্রবন্ধ লিখেছেন। আমি সেটার আলোচক ছিলাম। সুতরাং আলোচনা করতে গেলে সবকিছু আপনার গুণকীর্তন গাইব? আপনার ভুলভ্রান্তি দেখাব না? সুতরাং সহনশীলতা অর্জন করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও তো প্রেস ক্লাবের প্রসঙ্গটি টেনে সমালোচনা করেছেন। সেটি আপনি শুনেছেন?
ওনাদের কোনো কাজ নেই। এটা একটা ঘটনা হইতে পারে? তারা মূল ইস্যুতে যাচ্ছে না। তাদের বরং বলা উচিত খালেদা জিয়াকে…গয়েশ্বর রায়রা মূল ইস্যু থেকে ছুটকে যাচ্ছে। এটা একটা ঘটনা হলো আলাপের? দুটা ছেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা এমনকি বেয়াদবিও করেনাই। এমন কিছু করে নাই, যেটা নিয়ে আলোচনার ব্যাপার আছে?
তাদের তো আর খেয়েদেয়ে কাজ নাই গোঁয়ার লোকজন। তারা তো এটা করবেই। এগুলো একদমই অহেতুক। খালেদা জিয়াকে বের করতে পারছে না। যেখানে আলাপ করা দরকার, সেখানে আলাপ করছে না। আর দুইটা বাচ্চা ছেলে কী করল না-করল, সেটা নিয়ে আলাপ করল।
আপনার কি মনে হয় বিএনপি আপনার দেয়া পরামর্শ গ্রহণ করে?
না, তারা এত বড় দল যে, সব পরামর্শ আমার গ্রহণ করবে সেটা আমার কামনা করাও ঠিক না। তবে আমি মনে করি, এটা তারা বিবেচনা করতে পারে। তারা বিবেচনা করলে তারা লাভবান হবে। সবকিছু যে আমার কথায় চলবে, তা তো না। তাদের পার্টি আছে। আমি যখন বলেছি, কয় বছর আগে বলেছি, একটা ইমার্জেন্সি কাউন্সিল করেন আপনারা। করে নতুন নেতৃত্ব আনেন। এখন তাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির যারা আছে, সবাই আমার মতো বয়স্ক। দুই-চারজন ছোট হবেন, আর দুই চারজন বয়সে বড় হবেন। এখন আমাদের বয়স বেড়ে গেছে, আমরা দৌড়াতে পারি না। অনেক কিছুতে আমাদের একটা স্থবিরতা চলে আসে। কিন্তু আজকে পরিবর্তন আনতে হলে সাহসী মনোভাব থাকতে হবে। রাস্তায় যেতে হবে, মার খেতে হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই।
আজকে আমাকে সত্য কথা বলতে হবে। আজকে যেখানে আমলারা এ দেশ শাসন করছে। তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে হবে। এসব জিনিসগুলোকে… আমি তাদের কী বলেছি, তাদের কী পরামর্শ দিয়েছি- আপনি যদি বিবেচনা করেন। তাদের আমি বলেছি, তাদের বহু লোক ভালোবাসে। আমি দেখেছি গ্রামগঞ্জে লক্ষ কোটি লোকের সমর্থন আছে। তারা আজকে রাস্তায় কেন আসছে না?
কারণ, আপনারা যদি ডাক দিতেন…খালেদা জিয়ার প্রতি যে অন্যায় করেছে তাকে যে জামিনটা দেয় না…আজকে হাইকোর্টে গিয়ে ১০ হাজার লোক যদি সাত দিন বসে থাকেন বিচারপতিদের চৈতন্য হবে। বিচারপতিদের বিবেকের দিকে তাদের সাহস বাড়বে।
আমি তো এটাই বলি, যে আপনারা মিছিল-মিটিং করেন। আপনারা আপনারা সবাইকে নিয়ে বের হোন। আপনারাই বের হোন। রাস্তায় মিছিল মিটিং করেন, কিন্তু গাড়ি ঘোড় ভাইংগেন না। সরকার ও ‘র’ (ভারতীয় গোয়েন্দা) এদের দিকেও খেয়াল রাখবেন। ওরা যেন আপনাদের ঘাড়ে দোষ না চাপাইতে পারে। এখানে বলেছি ইয়াংগার লোককে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আনেন। এটা আমি কোথায় ভুল বলেছি বলেন?
আমি বলেছি আজকে যেখানে হাফিজ (এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ) শাওকতরা (শওকত মাহমুদ) যেখানে পরিবর্তনের জন্য সজাগ। তাদের কে উলটো শোকজ করে দিয়েছেন। এটা তো আপনাদের স্থবিরতার প্রমাণ, ভুল সিদ্ধান্ত। যদি শোকজ করতেও হয় সেটা গোপনে করেন। সেটা প্রকাশ্যে এটা করা উচিত ছিল না। তাদের ডেকে নিয়ে কী কী করতে চায় সেটা বলা উচিত।
ছাত্রদলের এই ঘটনা নিয়ে আপনাকে বিএনপি থেকে কি ফোন করা হয়েছে?
না, ফোন করেনি। আর এটা তো ফোন করার মতো কোনো ঘটনায় না। কেনই বা করবে?
রাজনৈতিক সংকটের কথা উল্লেখ করে বারবার বিএনপিকে আন্দোলনের তাগিদ দিয়ে আসছেন? এই সংকট কি শুধু আন্দোলনের মাধ্যমের দূর করা সম্ভব?
আজকে ১২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তারা নির্বাচিত হন নাই। কিন্তু কথা হলো, তারা (বিএনপি) কিছুই করতে পারছে না। তার কারণ হলো তারা জনগণের …।
আজকে লকডাউন, লকডাউনের মধ্যে তাদের উচিত ছিল জনসাধারণকে, দরিদ্র মানুষকে কী করে খাবার দেয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করা। তারপরে মোটরচালিত রিকশা। গরিব মানুষরা আরামে রিকশা চালাতে পারবে না, এটা হলো না। আজকে বিএনপি বলতে পারত, আমরা ক্ষমতায় আসলে যে চালক, সেই হবে মালিক। তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা তাদের চিন্তায় রাখা উচিত।
আর ছাত্রদের যে আন্দোলন ছিল সেখানে বিএনপির অংশগ্রহণ করার দরকার ছিল। যদিও কেউ কেউ ছিল। তবে পুরোপুরিভাবে না।
৯০ সালে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকরা আপনার ফাঁসির দাবি করে পোস্টারিং করেছিলেন। সেটা কেন?
হ্যাঁ। কারণটা হলো, ভালো কাজ যারাই করতে চায়, তারা তখন সেই সুযোগ পায় না। তখন, আমি একটি স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এই যে আজকে যে গ্রামে ডাক্তার নাই, ডাক্তারের সম্মান নাই …। আজকে তারা সবাই বলে, ওইটা হইলে খুব ভালো হইত। সুতরাং তারা না বুঝে অবুঝের মতো এই ফাঁসির দাবি করেছে। ওরা বিনা বিচারে আমার ফাঁসি চেয়েছে।
সেই পোস্টার তা আমি একটা রেখেছিলাম। তাদের ভুলটা তারা অনেকেই আজকে উপলব্ধি করে। যে ওই স্বাস্থ্যনীতি হলে দেশের মঙ্গল হতো। চিকিৎসকদের সুবিধা হতো। ডাক্তাররা সব সময় তাদের দৃষ্টিতে বড় ছিল।
যখন বিলেতে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস হয়, সেটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছিল। আজকে তারা মনে করে যে, এটা একটা বিরাট কাজ হয়েছে। যুগে যুগে যারাই পরিবর্তন চেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলন হয়েছে, এটা নতুন কিছু নয়।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি, ঐক্যফ্রন্টের এই মুহুর্তে কী অবস্থা?
ঐক্যফ্রন্ট এই মুহুর্তে নেই বলা চলে।
কামাল হোসেনের সঙ্গে কি আপনার আলাপ হয়? উনি আসলে হাল ছেড়ে দিয়েছেন কেন বলে আপনার মনে হয়?
হ্যাঁ, কথা হয়। উনি হাল ছেড়ে দেন নাই। হলো কী, এখানকার মূল পার্টিটা হলো বিএনপি। বিএনপিকে উনি ওনার কোনো কথাতেই রাজি করাইতে পারেন নাই।
আমাদের একটা প্রস্তাব ছিল আমরা ৩০০টা মামলা করব, এই যে ভোট ডাকাতি হলো। এটার কোনো কিছুই করা যায়নি। আমি বারবার বলেছি ৩০০ টা মামলা করে দিতে, ট্রাইব্যুনালে ৩০০ টা মামলা করে আমরা বিষয়টাকে আবার সামনে আনি।
ব্যাপার হলো বিএনপি এই মুহুর্তে ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন নাই। তারা নিজেরা চলছে…চলুক। কিন্তু আন্দোলন হলেই হলো। তা যে ঐক্যফ্রন্টকে করতে হবে তার কোনো কথা নাই। তারা নিজেরাও নেতৃত্ব নিয়ে করতে পারে।
জুনায়েদ সাকি, নুরুল হক নুর একটি নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্মে আপনাকের সেখানে দেখা গিয়েছে…
এসব কথা আমিও শুনেছি, কিন্তু এমন কিছু দেখছি না।
আপনি সব সময় আন্দোলনের ডাক দেন, প্রতিবাদ জানান। তবে জনগণের কোনো প্রকাশ্য সমর্থন পান না কেন?
আমি তো রাজনৈতিক দলের নেতা না। সুতরাং আমার কাজও না সেটা। জনগণকে আজকে তো আমি সেই ডাক দিই না। সেই ডাক দেয়ার দায়িত্বও আমার না। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যেটা জানানো দরকার সবাইকে, সেটাকে নিয়ে আমি আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই থাকতে চাই। আমি জনগণকে বুঝাতে চাই কী কী পরিবর্তন দরকার। যেমন আমি বলেছি, বাংলাদেশে আজকে সুশাসনের জন্য কী দরকার! আমি যেভাবে দেখি, সেটাকেই প্রকাশ করেছি। কিন্তু এটা কার্যত এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আপনি পাকিস্তানকে ক্ষমা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন জায়গা থেকে পাকিস্তানের ঠিক কোন কোন অপরাধ ক্ষমা করার কথা বলেছেন? আর কেন ক্ষমার প্রসংগটি এনেছিলেন?
পাকিস্তানিরা যারা মানবতাবিরোধী অন্যায় করেছিল তারা আজকে জীবিতই নেই। হয়ত দুই একজন জীবিত থাকতে পারে। যেই প্রজন্ম এখন পাকিস্তান শাসন করছে, পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনীতিতে যুক্ত, তারা কেউ ৭১ সনে সেই অন্যায় আচরণের সঙ্গে পরিচিত নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে যোগসূত্রও নেই, অনেকে জন্মই হয় নাই তখন।
আর তাছাড়া এই ঘটনার মূল নায়ক দুইজন। জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং ইয়াহিয়া খান। জুলফিকার আলী ভুট্টোই পরবর্তীকালে পাকিস্তান শাসন করেছেন। বঙ্গবন্ধু নিজে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমরা কে আর?
উনি (বঙ্গবন্ধু) তাকে (ভুট্টো) দাওয়াত দিয়ে ঢাকায় আনলেন। লক্ষ লক্ষ সমাগম হয়েছিল। ওটাই প্রমাণ করে যে উনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। …… আজকে পাকিস্তানের বিভিন্ন ইতিহাসবিদরা তারা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করছে এই ভুল ভ্রান্তি তারা কিন্তু অনেক বেশিই।
আজকে আমাদের এই ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে জাগতে হবে, পাকিস্তানকে আমাদের পাশে দরকার। আজকে এই যে রোহিঙ্গা সমস্যা যেখানে সেটা নিয়ে ভারত কিছুই করল না। ভারত আমাদেরকে যেভাবে নাচিয়ে বেড়াচ্ছে এইসবের প্রেক্ষিতে আমি বলেছি, আজকে বাংলাদেশেরও উচিত হবে পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দিয়ে তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, তাতে লাভবান হবো আমরা।
আমাদের গোয়ার্তুমি করা ভালো না। এটাই আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, বঙ্গবন্ধুর একটা বড় গুণ ছিল মহানুভবতা। তো সেই সূত্রেই আমি ক্ষমার কথা বলেছি।
আমি তাই মনে করি যে, এইটাতে তাহলে আমরা লাভবান হবো। ইসলামিক দেশগুলো একত্রিত হতে পারবে, তারা পৃথিবীর অধিকার আদায়ে সমর্থন হবে। এইসব কিছু মিলিয়ে এখন আর আমাদের পুরা ৫০ বছর পুরানো কাহিনি মনে রাখাটা উচিত হবে না।
কিন্তু পাকিস্তানকে কেন ক্ষমা করতে হবে? তারা কী ক্ষমা চেয়েছে?
তারা তো এখন হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এইটা তো ইমরান খান বাড়িয়েছে…তাদের প্রধানমন্ত্রী এই দেশে এসেছেন। শেখ হাসিনা যখন পয়লা বার ছিলেন, তখন তাদের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এসছেন। তার আসাটা মানেই তো তারা তাদের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সো, আমরা সেই হাতটাকে ধরে আমরা আমাদের সুবিধা আদায় করা।
এই যে যেমন তিস্তার পানি পাই না অথচ এখন বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেলাম। প্রতিদিন, প্রত্যেক সপ্তাহে দুই একটা লোক মারছে। আজকে ভারতের থেকে একদিকে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা যেমন দরকার আছে, তেমনি মাতব্বরিটাকেও সহ্য করা যাবে না।
এখানে পাকিস্তানের শাসন চাইছি না আমি। আমাদের পারস্পরিক সুবিধাগুলি এবং আজকে রোহিঙ্গা সমস্যা আমার কাঁধে বসে আছে… ১২ লাখ এটার কিছুই হবে না। এখানে যখন মুসলিম দেশগুলি এগিয়ে এসেছিল, আমরা ভারতের কারণে আমরা সেদিকেও যাইনি। এই প্রেক্ষিতেই আমি বলেছি মাফ করে দিতে।
আপনি কেন উপযাজচ হয়েছেন?
আমি চাই মাফ করতে। তারা যে যুদ্ধ করেছিল আমাদের সঙ্গে, আমাদের অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছিল, সেটা তো আমরা স্বাধীন হয়েই গেছি। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করেন তাহলে তার প্রতি শ্রদ্ধার কারণেই আমাদের এইসব পুরানো মধ্যযুগীয় মনোভাব থাকা উচিত না। আমার বাপ দাদার সঙ্গে গণ্ডগোল করেছে বলে আমি এখনও গণ্ডগোল করে বেড়াব তা তো হয় না।
পাকিস্তানের পক্ষে যে দূতিয়ালি করছেন, তারা কি আমাদের প্রাপ্য সম্পদ দিয়েছে?
(হেসে) আমি সম্পত্তি পাইনি, পাবও না। তবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক হলে আমরা অনেক কিছুই পাব। সরকারও পাবে।
কিছুদিন আগে দেখলাম আপনি হঠাৎ ধর্ম শিক্ষায় মনোনিবেশ করবেন। এই সিদ্ধান্ত কেন?
আমি তো এখনও বলি যে আরবি ভাষা শেখা উচিত। শিখলে চাকরি বাকরির সুবিধা হবে। তাছাড়া একটি বৃহত্তর জনগণের ধর্ম…সেটা তারা নিজেরা আরবি পড়তে হইলে সেটা শেখা উচিত। এই যে কোরআন একটি ধর্ম গ্রন্থ। আমি চাই আমি নিজে এটা পড়ে এটার অর্থ বুঝতে। আমরা যারা পড়ি এটার অনুবাদটা পড়ি। অনুবাদ আড় মূলটা, দুইটা তো আলাদা…সেজন্যই। তাছাড়া আমি মনে করি কি, যার যার ধর্ম তার তার কাছে। প্রত্যেকেরই ধর্ম পালনে অধিকার আছে। যারা করে না তাদের বিরুদ্ধেও কারও ক্ষোভ থাকা উচিত না।
আরও পড়ুন:বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান বলেছেন, সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে হজ ও ওমরাহ পালনকে সহজ এবং সুন্দর করতে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ে হজ ও ওমরাহ মেলা ২০২৫ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, গত বছরের হজ ব্যবস্থাপনা চমৎকার ছিল। হজের ব্যয় কমিয়ে আনতে ত্রিশ হাজার টাকা বিমান ভাড়া কমানো হয়েছিল। এবছর হজ যাত্রী পরিবহনে যুক্ত থাকা অন্যান্য এয়ার লাইন্সের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আরো সাশ্রয়ী ভাড়া নির্ধারণের চেষ্টা করবো।
শুধু বিমান ভাড়া কমানো হলে হজের খরচ খুব কমে যাবে বিষয়টি এমন নয় উল্লেখ করে বিমান সচিব বলেন, হজের যে আরো চার পাঁচটি খরচের খাত রয়েছে সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। এসময় তিনি হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের সর্বোত্তম সেবাদানের জন্য হজ এজেন্সিগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করেন।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) তিন দিন ব্যাপী এই হজ ও ওমরাহ মেলার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মু: আ: আউয়াল হাওলাদার, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (হজ) ড. মো: মঞ্জুরুল হক,বিমান বাংলাদেশ এর পরিচালক (বিপনন) আশরাফুল আলম, হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার এবং শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হজ এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার।
পরে প্রধান অতিথি হজ ও ওমরাহ মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষ বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কী বলা হচ্ছে, তা জানার জন্য ইউক্রেনের খারকিভ শহরে মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয় বাসিন্দা পাভলো নেব্রোয়েভ।
খারকিভ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে চলা রাশিয়ার হামলার ব্যাপারে আলোচনার জন্য ট্রাম্প ও পুতিন আলাস্কায় বৈঠকে বসেন।
তবে, বৈঠকে ইউক্রেন ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। উল্টো এই সময়ে ইউক্রেনের খারকিভে শক্তিশালী আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। অবশ্য বৈঠকের আগে থেকেই এই আয়োজনকে পুতিনের জন্য চূড়ান্ত বিজয় হিসেবে বিবেচনা করছিলেন অনেকে।
৩৮ বছর বয়সী থিয়েটার ম্যানেজার পাভলো বলেন, ‘আমি দেখলাম, প্রত্যাশা অনুযায়ীই (বৈঠকের) ফলাফল এসেছে। আমি মনে করি, এটা পুতিনের জন্য কূটনৈতিকভাবে বড় ধরনের বিজয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘তিনি (পুতিন) নিজের বৈধতা সম্পূর্ণরূপে আদায় করেছেন।’
২০২২ সালে হামলা চালানো শুরুর পর থেকে রুশ নেতাকে পশ্চিমা বিশ্বে এড়িয়ে চলার যে প্রবণতা ছিল, ট্রাম্প এবার পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে সেটির অবসান হলো।
শীর্ষ বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটাকে পুতিনের একার বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বৈঠকে ইউক্রেনকে না রাখায় নেব্রোয়েভ শুধু ক্ষুব্ধই হননি, বরং এই বৈঠককে সময়ের অপচয় মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এটা অর্থহীন একটি বৈঠক ছিল। ইউক্রেন সম্পর্কিত সমস্যাগুলো ইউক্রেনের সঙ্গে, ইউক্রেনীয়দের অংশগ্রহণে এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে সমাধান করা উচিত।’
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নে গোয়ালখালি এলাকায় বিসিকের অধিগ্রহণকৃত ৪০ একর জমির উপর নির্মিত হবে 'ভ্যাকসিন প্লান্ট'। যেখানে ঔষধের পাশাপাশি তৈরি হবে অ্যান্টিভেনম।
প্রকল্পটি গোপালগঞ্জে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
শনিবার সকালে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
এসময় তিনি জমি রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
উপদেষ্টা বলেন, গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন প্লান্ট একদম একপাশে হয়ে গেছে। ভ্যাকসিনটা যখন তৈরি হবে তখন এটা ফ্রিজিং করে সারা বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। সেজন্য আমার এমন একটা জায়গা দরকার যেখান থেকে সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে আমরা পাঠাতে পারবো। সেক্ষেত্রে গোপালগঞ্জটা সেজন্য আমাদের জন্য উপযুক্ত হয় না।
আর এখানে যে সমস্ত টেকনোলজিস্ট, বিশেষজ্ঞ লাগবে এটা সবসময় সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই এটা আমরা এখানে করার চেষ্টা করছি। এবং এখানে ৪০ একর জমি বিসিকের কাছ থেকে নিয়েছি। সে অনুযায়ী আমাদের একটা প্ল্যান্ট- এটা এখানেই হবে যাতে করে আমাদের সমস্ত ঔষধ তৈরি করতে পারি, ভ্যাকসিন আমরা এখানে তৈরি করতে পারি এবং একইসাথে আমরা চিন্তা করছি- অ্যান্টিভেনম যেটা হয়, যেটা আমাদেরকে পাশের দেশগুলো থেকে আনতে হয়। অনেক সময় সাপের ভ্যারাইটি একরকম না, কোন কোন সময় সাপের কারণে যে ভ্যাকসিনটা দেয়া হয় ওটা কখনো কাজ করে, কখনো করে না। কাজেই আমরা এখন চেষ্টা করছি- আমাদের যেহেতু অনেক সাপ আছে, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপের বিষ এনে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এন্টিভেনম তৈরি করা হবে। আমাদের দেশের সাপ দিয়ে দেশেই ভ্যাকসিন-অ্যান্টিভেনম তৈরি হবে।
ভ্যাকসিন প্লান্ট নির্মাণে সময় প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটা সিস্টেমের ব্যাপার। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে দেশের মধ্যে উৎপাদিত প্রায় ৭০ শতাংশ ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। কোয়ালিটিতে দেশের বাইরের তুলনায় এটি কোন অংশেই কম না। এটাকে ১০০ শতাংশে উন্নিত করতে হলে আমাদের আরও কিছু মেশিনারিজ আনতে হবে। মেশিনারিজগুলো আমরা চেষ্টা করবো যত দ্রুত আনা যায়। সবকিছু মিলিয়ে এগুলো আনতে প্রায় ৬ মাসের মত লেগে যাবে।
তিনি বলেন, জমি আমাদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়া হবে, পাশের নদী শাসন করতে হবে। এরপরে মেশিনারিজ, প্ল্যান এগুলো পাশ করাতে হবে। ধরে নেন আগামী আড়াই থেকে তিন বছর লাগতে পারে। পরে উপদেষ্টা ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইডিসিল এর গোপালগঞ্জ প্লান্টের ভ্যাকসিন ইউনিট এবং মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থানান্তর করে এখানে আনা হবে। এজন্য ৪০ একর জায়গার সংস্থান করা হয়েছে। এসময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াধীন এন্টি ভেনম প্ল্যান্টও এখানে স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদান করেন। এটি সামগ্রিক বিবেচনায় লাভজনক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
এসময় ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামাদ মৃধাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে, ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাকসিন প্লান্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কারখানায় ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্লান্টটিতে ২০২৮ সালের মধ্যে ছয় ধরনের ও ২০২৯ সালে আরও ৯ ধরনের টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০৩০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথি ও শুভ জন্মাষ্টমীতে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেছেন। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূজা-অর্চনা, ধর্মালোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুর দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।
এর পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের থানা গেটসংলগ্ন স্থানে পূজা ও প্রার্থনা সম্পন্ন হয়।
আলোচনা সভায় হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে চুয়াডাঙ্গা’র অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নয়ন কুমার রাজবংশী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রসাশক এ্যাড. সুব্রত কুমার চক্রবর্তী, ঝিনাইদহ জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এবং উপসচিব রথীন্দ্রনাথ রায় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ, বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার রায়। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহা. শাহীনুজ্জামান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীরা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে বরাবরই স্পেশাল। পবিত্র কুরআনেই বলা হয়েছে কেউ অন্য ধর্মের অবতারকে গালি দিবে না তাহলে তোমার ধর্মকে গালি দিবে না। মদিনা সনদেও রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যান্য ধর্ম পালনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে আপনাদের মধ্যে যেন কোনো সংকীর্ণতা না আসে। সমান মর্যাদা সহকারে আপনারা আপনাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারবেন এই নিশ্চয়তা আমি দিচ্ছি। সকল ধর্মের মূলমন্ত্র হলো মানবিকতা। আমি এখানে আসার পর ইসলামিক এন্ড কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন নামে একটি নতুন ফ্যাকাল্টি চালু করেছি। এই ফ্যাকাল্টি চালু হলে হিন্দুধর্ম ও অন্যান্য ধর্মের গবেষণা চালু করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, হিন্দু ধর্ম মতে, যখন পৃথিবীতে অধর্মের চর্চা বেড়ে যায়, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন যখন দূর্বিষহ হয়ে যায় তখন দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের লালনের জন্য শ্রী কৃষ্ণ অবতার হিসেবে আগমন করেন। কুরআন ব্যক্তিমানুষ এবং সমাজকে এড্রেস করেছে। উপমহাদেশের ভক্তিবাদের জন্য বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সাজশ আছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র ধর্মীয় পরিচয় ভুলে মানুষ পরিচয় নিয়ে তারা পাশাপাশি থাকবে এই চেতনা লালন করতে হবে। সনাতন ধর্মীয় অনুভূতিতে কেউ আঘাত করলে মানববন্ধন না করে আমার কাছে আসলে আমি সমাধান করে দিবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ যদি এথিজম চর্চা করে এবং কোনো ধর্মকে স্ট্রাইক করে তাহলে তাকে যুক্তি দিয়ে দমন করতে হবে কারণ বর্তমান পৃথিবী হলো যুক্তিতর্কের পৃথিবী। আধুনিক পৃথিবী শক্তির পৃথিবী না বরং যুক্তির পৃথিবী।”
উল্লেখ্য, ধর্মালোচনা অনুষ্ঠানে উপাচার্যের নিকট একটি স্থায়ী মন্দিরের দাবি জানান অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহা।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন থামছে না। বরং আন্দোলন আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দীন রনি এই ঘোষণা দেন।
রনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখজনক হলো, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে শান্তিপূর্ণ অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ বারবার হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে হাসপাতালের পরিচালকসহ প্রশাসন-সমর্থিত একটি চক্র জড়িত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরিশালে এসে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পরই ন্যাক্কারজনক এই হামলার ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও জানান, হামলার পর সংশ্লিষ্টরা উল্লাস করে খিচুড়ি পার্টি” এবং ১৫ আগস্ট উপলক্ষে কাঙালীর ভোজের আয়োজন করেছে যা দেখে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে।
রনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, এই আন্দোলন থামবে না। যতদিন না দালালচক্র ভেঙে প্রকৃত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, ততদিন আমরা রাজপথ ছাড়ব না। ছাত্র আন্দোলন বন্ধ হয়ে গেছে এমন অপপ্রচার চালানো হলেও বাস্তবে আন্দোলন চলছে এবং চলমান থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আগামীকাল (রোববার) সকাল ১১টায় বরিশাল সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হল টাউন হল চত্বর থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। এ কর্মসূচিতে বরিশালবাসীসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসা সেবায় অব্যবস্থাপনা, সিন্ডিকেট ও দালালচক্র ভেঙে সাধারণ মানুষের জন্য দালালমুক্ত ও মানসম্মত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শ্রমিক, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তবে আন্দোলনকারীরা প্রায়ই হামলা ও বাধার মুখে পড়ছেন।
বৃষ্টি আর প্রচণ্ড রোদ হলেই প্রয়োজন হয় ছাতার। ঝমঝম আর টিপটিপ বৃষ্টি যেটাই বলেন, বৃষ্টিতে ছাতার কোনো জুড়ি নাই।
একসময় দেখা যেতো গ্রামে গ্রামে ফেরী করে ছাতা মেরামত করতে আসতো কারিগররা। আর মুহূর্তেই অস্থায়ী এই দোকানগুলোতে থাকতো উপচে পড়া ভিড়। এই পেশাতে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্ত সভ্যতার বিকাশের মাধ্যমে আজ আর চোখেই পরে না ছাতা মেরামত কারিগরদের। যেন পেশাটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে।
সরেজমিনে দেখা যায় পঞ্চগড় জগদল বাজার এলাকায় ছাতা মেরামত করছিলেন এনামুল। তিনি একটি দোকানের সামনে অস্থায়ী বসেছেন। হরেকরকমের ভাঙ্গা ছাতা মেরামত করছেন। আর কাজ বুঝে বেশ দামও নিচ্ছেন।
ছাতা মেরামত করতে আসা দুলাল বলেন, আমার বয়স ৪০বছর। ছোটবেলায় দেখতাম মোড়ে মোড়ে ছাতা মেরামতের মিস্ত্রি পাওয়া যেতো। কিন্ত এখন আর ছাতা মিস্ত্রিদের চোখেই পড়ে না। তাছাড়া, ছাতা মেরামত করতে যে টাকা লাগে, তার সাথে কিছু টাকা দিয়ে নতুন ছাতা কেনা যায়।
ছাতা মিস্ত্রি এনামুল বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমাদের কাজের হিড়িক পরে যেতো। আর এক মৌসুমে কাজ করেই চলতাম সারাবছর। কিন্ত আজকাল মানুষের রুচি বিদেশীদের মতো হয়ে গেছে।
ছাতার কোনো অংশ নষ্ট বা ছিঁড়ে গেলে এখন আর মেরামত করতে চান না। আগে মানুষ এতটা সৌখিন ছিল না। একটা ছাতা দিয়ে যুগ পার করে ফেলত। আর এখন মানুষ একটা ছাতা বেশী দিন ব্যবহার করে না। একটু থেকে একটু সমস্যা হলেই নতুন ছাতা কিনে নেয়।
যেখানে আগে মোরে মোরে ছাতা মেরামত করার কারিগর পাওয়া যেত, সেখানে এখন ৪ থেকে ৫ টা বাজার বা এলাকা ঘুরলে একজন ছাতা মেরামত করার কারিগর পাওয়া যায়। দিন যত যাচ্ছে ততই বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে এই পেশা।
নওগাঁর রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে বাবু প্রামানিক (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকালে রাজশাহী থেকে চিলাহাটিগামী তিতুমির এক্সপ্রেস ট্রেনে এই দূর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত বাবু প্রামানিক নওগাঁ সদর উপজেলার শিমুলিয়া উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত শমসের প্রামানিকের ছেলে।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে বাবু প্রামানিক স্ত্রীর ওপর অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। গ্রাম থেকে কিছু দুরে রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশন। তাই অভিমানে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যেতে পারে। পরে পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরে মরদেহ বাড়ি নিয়ে আসে।
রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুল খালেক বলেন, তিতুমির এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী থেকে চিলাহাটি যাচ্ছিল। এসময় সকালে বাবু প্রামানিক রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেন দূর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
সান্তাহার রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজ বলেন, তিতুমির এক্সপ্রেস ট্রেনটি রানীনগর রেলওয়ে স্টেশনে উত্তরপাশে আসলে বাবু প্রামানিক নামে ওই ব্যক্তি অসাবধানতাবসত রেললাইন পার হচ্ছিলেন। ট্রেন আসলেও স্থানীয়রা তাকে অনেকবার ডাকলেও তিনি কোন কর্নপাত করেননি। এতে ট্রেনের ধাক্কায় রেললাইনে কাটা পড়ে মারা যান তিনি। মরদহে উদ্ধার করা হয়েছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে নিহতের স্বজনরা মরদেহ নিয়ে গেছে।
মন্তব্য