মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীর নিহত হওয়ার মামলায় বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান বাসচালক জামির হোসেন।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তির আগেই কারাবন্দি অবস্থায় ২০২০ সালের ১ আগস্ট মারা যান জামির। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার সময়ে ঈদের দিন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, পরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
দুর্ঘটনার জন্য বিচারিক আদালতে জামির দোষী সাব্যস্ত হলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সামছুল হকের অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে, বাসচালক জামির ছিলেন ‘নির্দোষ’।
অধ্যাপক ড. সামছুল হকের সে অনুসন্ধানের ভিত্তিতে নির্মাণ হয়েছে ডক্যুফিল্ম ‘স্যোশাল ক্রসফায়ার’। আজহারুল ইসলাম অভি পরিচালিত ডক্যুফিল্মটির প্রযোজক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী। সহকারী প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন মো. সেলিম।
এই ডক্যুফিল্মের প্রিমিয়ারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, অধ্যাপক সামছুল হকের অনুসন্ধানে পরিষ্কার হয়েছে, দুর্ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেন ছিলেন নির্দোষ।
জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে মঙ্গলবার ডক্যুফিল্মটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। আয়োজকেরা বলছেন, সারা দেশে প্রদর্শন করা হবে এটি।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর ঘটনায় সারাদেশের মানুষ কষ্ট পেয়েছিলেন। সেদিন সবাই বলেছিলেন, এই অকালমৃত্যু কাম্য নয়। এ ঘটনার সুনিশ্চিতভাবেই তদন্ত হওয়া দরকার। আমরাও সে ধরনের একটা তদন্ত চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিকে সামনে আনা হোক।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে কিন্তু সেই ক্ষণটি আমাদের সামনে এসেছে। বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক গবেষণার মাধ্যমে সত্যটি উদ্ঘাটন করেছেন। আজকে স্যোশাল ক্রসফায়ার নামের ডক্যুমেন্টারিটি দেখে আমরা সবাই অভিভূত। এ জন্য তাকে (ড. সামছুল হক) ধন্যবাদ জানাই, স্যালুট জানাই। তিনি প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, ওই দুর্ঘটনার জন্য বাসচালকের ততখানি ভূমিকা ছিল না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাসচালক জামিরের যে দোষ নেই, সেটা আমি শুনেছিলাম। আজকে সেটা দেখে গেলাম।’
সরেজমিন অনুসন্ধান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ড. সামছুল হক বলছেন, সেদিন রাস্তায় সঠিক লেনেই ছিল জামিরের বাস। একটি বাঁকের মুখে তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসার কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা জামিরের বাসটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
বিচারিক আদালতে ওই দুর্ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটি ঘটেছিল বলেও মনে করেন অধ্যাপক সামছুল হক।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত দুর্ঘটনা হলেই আমরা চালককে ধরার জন্য ছুটি। চালককে না ধরতে পারলে গাড়িটি জ্বালিয়ে দিই।
‘এটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। উত্তেজিত জনতা সেটাই করে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও অনেকবার বলেছেন, চালক সবসময় দায়ী নন।’
হাইওয়েতে ভারী যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কাজ চলছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মহাসড়কগুলোতে ছোট যানবাহনের জন্য আলাদা লেন করা হচ্ছে। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে দুর্ঘটনা অনেক কমবে।
‘পাশাপাশি হাইওয়ে বা মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা পৃথক একটা পুলিশ বাহিনী তৈরি করেছি। মহাসড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ক্যামেরার আওতায় এসেছে।’
সড়ক দুর্ঘটনা যেকোনো মহামারির চেয়েও ভয়াবহ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে যত প্রাণঘাতী রোগ রয়েছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর কারণ গবেষণা করে অধ্যাপক সামছুল হক তুলে ধরেছেন।’
অনুষ্ঠানে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘ড. সামছুল হকের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি ডক্যুফিল্ম আমরা সারা দেশে দেখাব। বিচারকদের কাছে এটা পাঠাব, দেখুন কী অন্যায় আপনারা করেছেন। কোন আইনে একজন বাসচালককে এভাবে স্যোশাল ক্রসফায়ারে হত্যা করলেন!’
তিনি বলেন, ‘এই ফিল্মের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে ওই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যে ব্যক্তিকে সোশ্যাল ক্রসফায়ারে হত্যা করা হলো, সেই চালক জামির হোসেন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিলেন না।’
তিনি বলেন, ‘সব দুর্ঘটনার তদন্ত শুধু পুলিশ দিয়ে করলে হবে না। এ বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদের দিয়ে তদন্ত করলে প্রকৃত দোষী বেরিয়ে আসবে। সঠিক তদন্তে কোনো চালক দোষী হলে তার সাজা আমরা মাথা পেতে মেনে নেব, তবে অন্যায়ভাবে শুধু চালককে দায়ী করে ফাঁসি চাইলে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হকও বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে যে ফ্যাক্টগুলো পেয়েছি, তা কখনও পুলিশের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, কখনও বিআরটিএর বিরুদ্ধে বা কখনও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধেও যাচ্ছে।
‘আমি বিজ্ঞানের দৃষ্টি দিয়ে দেখেছি, সত্যটা বের করার চেষ্টা করেছি। নিরাপরাধ কোনো ব্যক্তির যাতে সাজা না হয় সেটার জন্য আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সব কিছুর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করে আমি এটা করেছি।’
অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, ‘একটি ঘটনার বহুমাত্রিক কারণ থাকতে পারে, দায় আলাদা আলাদা হতে পারে। দায় কারও কম, কারও বেশি এমনটা হতে পারে। আমরা দেখছি দুর্ঘটনার পরে তদন্তের জন্য যে কমিটি হয় সেখানকার সদস্যরা বিজ্ঞানের না। বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবেন না। এ ধরনের কমিটির তদন্ত থেকে ভালো কিছু বের হয়ে আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সফল রাষ্ট্রগুলো শুধু চালককে নিয়ে চিন্তা করেনি। তারা পুরো সিস্টেম নিয়ে চিন্তা করেছে। একটি দুর্ঘটনার সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। সবগুলোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাহলেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।’
বক্তব্যে বাসচালক জামির হোসেনকে নিয়ে নিউজবাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভূয়সী প্রশংসা করেন সামছুল হক। তিনি বলেন, এসব প্রতিবেদনের কারণেই তার গবেষণার বিষয়টি সবার সামনে এসেছে।
তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরদের মাইক্রোবাসের সঙ্গে জামির হোসেনের বাসের সংঘর্ষ নিয়ে ড. সামছুল হকের অনুসন্ধানভিত্তিক একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউজবাংলা।
দুর্ঘটনার জন্য জামির হোসেনকে দায়ী করে বিচারিক আদালত যাবজ্জীবন সাজা দেয়ার পাশাপাশি আরেকটি মামলায় তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিবাদীদের আপিল শুনানির অপেক্ষায়।
এ ছাড়া মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে করা ক্ষতিপূরণের আরেকটি মামলা হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ওই দুর্ঘটনার ১১ বছর পরও তিনটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি আদালতে। বাসচালক জামিরও মারা গেছেন দুই বছর আগে। তার সাজার বিরুদ্ধে আপিল এবং ক্ষতিপূরণের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কবে হতে পারে, সে বিষয়ে বাদী-বিবাদী কোনো পক্ষেরই ধারণা নেই।
সারা দেশকে নাড়া দেয়া ২০১১ সালের ওই সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর ছাড়াও তাদের মাইক্রোবাসচালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন মারা যান। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল-মামুনসহ আহত হন পাঁচজন।
কী আছে ড. সামছুল হকের অনুসন্ধানে
মর্মান্তিক ওই সড়ক দুর্ঘটনাটি নিয়ে নিউজবাংলার কাছে গত বছর নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিলেন অধ্যাপক সামছুল হক। সে সময় তিনি বলেন, ‘তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা। ওই দুর্ঘটনার পর পরই আমি এর কারণ গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে শুরু করি। অনুসন্ধানের একদম শুরুতে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক আমাকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছিলেন।
‘তারা প্রথম দিনে ঘটনাস্থলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি আমাকে পাঠিয়েছিলেন। কিছু ছবি তোলা হয়েছিল উঁচু গাছ থেকে, যেগুলো আমার কাছে ছিল সারকামসটেন্সিয়াল এভিডেন্সের মতো। সেসব ছবি দেখে আমি বুঝেছিলাম, এখানে অনেক কিছু বলার মতো বিষয় লুকিয়ে আছে।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছ থেকে আরও বেশ কিছু কনটেন্ট পেয়েছিলাম। এর মধ্যে একটি ভিডিও ছিল, যেখানে বাসের উইন্ডশিল্ডের কাছে বসা একজন নারীর কথা ছিল। তার সাবলীল বিবরণ থেকে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেক নতুন কিছু পাওয়ার আছে।’
ড. সামছুল হক নিজেও পরদিন দুর্ঘটনাস্থলে যান। বিভিন্ন আলামত নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি কথা বলেন স্থানীয় লোকজন ও তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘একে একে বিভিন্ন বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল, সেই সঙ্গে সাধারণ বিবরণের মধ্যে গোঁজামিলগুলোও ধরা পড়ছিল। তখনও আমি দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটি ভালোভাবে দেখতে পারিনি। ওটা একদম চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিল। মাইক্রোবাসে কে কার পাশে বসেছিলেন, সেটা তখনও আমি জানতাম না।’
তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানের পাশাপাশি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের অপেক্ষা করছিলাম। তিন সদস্যের এ কমিটির সঙ্গে আমার একজন সাবেক ছাত্রও যুক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। একই সঙ্গে আমার কাছে যেসব তথ্য-প্রমাণ ছিল, সেগুলো একসূত্রে গাঁথার চেষ্টা করছিলাম। তবে এর মধ্যে খণ্ড খণ্ড বেশ কিছু মিসিং লিংক ছিল।
‘এর মধ্যেই ডেইলি স্টারে তারেক মাসুদের সহকারী মনীশ রফিকের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। মনীশ ছিলেন মাইক্রোবাসচালকের ঠিক পাশের আসনে; দুর্ঘটনায় তিনিও সামান্য আহত হন। মনীশের বক্তব্য থেকে এমন কিছু বিষয় পাই, যেটি আমার প্রাথমিক অনুসন্ধানকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।’
ড. সামছুল হক বলেন, ‘সাধারণভাবে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে গাড়ির হার্ড ব্রেক কষার কথা। হার্ড ব্রেক অ্যাপ্লাই করলে রাস্তায় একটি স্কিড মার্ক পাওয়া যায়। আর সেই স্কিড মার্ক পেলে গাড়ির আসল অবস্থান চিহ্নিত করা যায়। অথচ আমি রাস্তায় কোনো স্কিড মার্ক পাইনি।
‘আমরা যারা দুর্ঘটনা বিষয়ে কাজ করি, তাদের কাছে বিষয়টি গোলমেলে। আমি তখন ভাবার চেষ্টা করছিলাম, বৃষ্টির কারণেই রাস্তায় হয়তো স্কিড মার্ক নেই। তবে সেটা মিলছিল না। স্কিড মার্ক এমন একটি বিষয় যার কোনো না কোনো চিহ্ন থাকবেই। কারণ এ সময় চাকার প্রচণ্ড ঘর্ষণে রাস্তার পাথরকুচি উঠে যায়।’
তিনি বলেন, ‘তাহলে কেন এ ধরনের চিহ্ন নেই- সেটি নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। অবশেষে সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল মনীশ রফিকের সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেছিলেন, সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। মাইক্রোবাসের পেছন দিকে যাত্রীরা মুখোমুখি বসে তুমুল আড্ডায় মেতেছিলেন। তার কথার প্রতিটি বিষয় আমার সামনে একেকটি চিত্র তৈরি করছিল। মাইক্রোবাসে মুখোমুখি কী করে বসা যায়! তার মানে সেটির আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। মনীশ আরও বলেন, হঠাৎ একটি বাস দৈত্যের মতো তাদের মাইক্রোবাসে আঘাত করে।’
এই ‘হঠাৎ’ শব্দটি অনেক প্রশ্নের জবাব পাইয়ে দেয় ড. সামছুল হককে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ হলেই তো গাড়ির স্কিড মার্ক পাওয়া যায় না! কিছু দূর আগে থেকে দেখতে পেলেও হার্ড ব্রেক কষা সম্ভব, কিন্তু কী এমন পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়েছিল যে কারণে বাসটিকে তারা হঠাৎ দেখতে পেলেন!’
এরপর আবার দুর্ঘটনাস্থলে যান ড. সামছুল হক। এ সময় স্থানীয় একজনের বক্তব্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া পত্রিকায় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বক্তব্য ছাপা হয়।
এসব থেকে পরিষ্কার হয়, দুর্ঘটনার ঠিক কিছু আগে একটি বড় বাস রাস্তার বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিকশাকে ওভারটেক করে। ওই বাসটির পিছু পিছু একই দিকে যাচ্ছিল তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাস। ওই বাসটির পিছু নিয়ে তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাসটি অটোরিকশাকে একইভাবে ওভারটেক করতে বাঁকের মুখে নিজের ডান লেনে চলে গিয়েছিল। এ সময়েই বাঁকের বিপরীত দিক থেকে আসা জামির হোসেনের বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষ হয়।
ড. সামছুল হক বলেন, ‘অটোরিকশাকে ওভারটেক করা বাসটির চালক কিন্তু বাঁকের অন্য প্রান্তে বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটিকে দেখতে পেয়েছিলেন। এর পরও তিনি ক্যালকুলেটেড (হিসাব করা) ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাকে ওভারটেক করে আবার নির্ধারিত বাম লেনে বাসটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। মহাসড়কে চলাচলকারী বাস-ট্রাক সাধারণত এ ধরনের হিসাবি ঝুঁকি নিতে অভ্যস্ত।
‘তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাসটিও সামনের বাসটিকে অনুসরণ করে ডান লেনে চলে যায়। তবে একজন শহুরে চালকের জন্য কাজটি ছিল মারাত্মক ভুল। সামনের বাসের মতো তিনি আর মাইক্রোবাসকে আবার বাম লেনে নিতে পারেননি। আর এই ভুলের কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটির সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়।’
বিপরীত দিকের বাসের চালক জামির বাঁকের মুখে নিজের সঠিক বাম লেনেই ছিলেন বলে মনে করছেন ড. সামছুল হক।
তিনি বলেন, ‘উল্টো দিকে আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসা মাইক্রোবাসের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসচালক জামির হোসেনের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কারণ বাঁকের উল্টো দিক থেকে তিনি মাইক্রোবাসটিকে দেখতেই পাননি। আর এ জন্যই সেই হঠাৎ দুর্ঘটনা, যেখানে বাসচালক ব্রেক কষারও সময় পাননি।’
দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটিকে বিধ্বস্ত অবস্থায় রাস্তায় এর বাম দিকের লেনে পাওয়া যায়। ফলে মামলার রায়ে বিচারিক আদালতের বিচারক বিষয়টির উল্লেখ করে বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে মাইক্রোবাসটি তার সঠিক লেনেই ছিল।’
তবে ড. সামছুল হক বলেন, এখানে বোঝার ভুল আছে। বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা ড. সামছুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, “সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে আমি দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটির টার্মিনাল পজিশনের বেশ কিছু ছবি পেয়েছিলাম। একটি দুর্ঘটনাকে বিশ্লেষণের জন্য ‘টার্মিনাল পজিশন’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা হলো দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটির চূড়ান্ত অবস্থান।”
তিনি বলেন, “এখানে লক্ষ করার বিষয় হলো, একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর কোনো মাইক্রোবাস যদি তার ‘সঠিক’ লেনে থাকে (যদিও সে অবস্থানটিও ছিল রাস্তার মাঝ বরাবর), তাহলে ধরে নিতে হবে দুর্ঘটনার আগের চিত্র ছিল অন্যরকম। কারণ একটি বাসের যে ভর ও গতি, তাতে সংঘর্ষের পর মূল অবস্থান থেকে মাইক্রোবাসটির বেশ কিছুটা দূরে সরে যাওয়ার কথা। মাইক্রোবাসের জীবিত আরোহীদের বক্তব্যেও সেটি জানা গেছে। ফলে দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটিকে রাস্তার মাঝ বরাবর পাওয়ার অর্থ হলো, প্রকৃতপক্ষে সেটি রং সাইডে ছিল। ধাক্কা খাওয়ার পর এর টার্মিনাল পজিশনটি পাওয়া গিয়েছিল মধ্যরাস্তায়।
“আর দুর্ঘটনার আগে মাইক্রোবাসটি সত্যিই নিজের বাম লেনে থাকলে ধাক্কা খাওয়ার পর সেটির রাস্তার কিনারায় বা রাস্তার পাশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। এটাই হলো বিজ্ঞান। অথচ বিচারপ্রক্রিয়ায় এই বিজ্ঞানকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।”
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসের অবস্থা দেখে পরিষ্কার বোঝা গেছে, বাসের সঙ্গে এর আংশিক মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। ডিভাইডারবিহীন একটি সড়কে এ ধরনের আংশিক মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে হলে দুটি যানের যেকোনো একটিকে রং সাইডে থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোবাস ও বাসের অবস্থান এবং সংঘর্ষে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দেখে পরিষ্কার বোঝা যায়, মাইক্রোবাসটিই ওভারটেক করতে গিয়ে রং সাইডে ছিল। দুর্ঘটনার পর সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি ও মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রতিবেদনেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। তবে মামলার বিচারের ক্ষেত্রে সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।’
দুর্ঘটনার জন্য সে সময় রাস্তার ‘অবৈজ্ঞানিক’ বাঁককেও দায়ী করছেন ড. সামছুল হক।
তিনি বলেন, ‘১১ ফুট প্রশস্ত ওই রাস্তায় কোনো বাঁক থাকলে রাস্তার বক্রতার ধরন অনুসারে অংশটি অন্তত ১৩ ফুট চওড়া হওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তবে তা ছিল না। একই সঙ্গে বাঁকটিতে গাছপালা থাকায় দৃষ্টিসীমা ছিল একদম কম।
‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যেসব ব্ল্যাকস্পট ছিল, এই বাঁকটি তার একটি। মানিকগঞ্জের জোকায় তখন প্রতি বছর তিনটির বেশি করে দুর্ঘটনা ঘটছিল। এখন সেখানে ডিভাইডার করা হয়েছে, রাস্তা চওড়া হয়েছে, ফলে এখন আর দুর্ঘটনা হচ্ছে না।’
সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত ডক্যুফিল্ম প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজও বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য