মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীর নিহত হওয়ার মামলায় বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান বাসচালক জামির হোসেন।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তির আগেই কারাবন্দি অবস্থায় ২০২০ সালের ১ আগস্ট মারা যান জামির। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার সময়ে ঈদের দিন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, পরে রাজধানীর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনার জন্য জামির হোসেনকে দায়ী করে বিচারিক আদালত যাবজ্জীবন সাজা দেয়ার পাশাপাশি আরেকটি মামলায় তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিবাদীদের আপিল শুনানির অপেক্ষায়।
এ ছাড়া মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে করা ক্ষতিপূরণের আরেকটি মামলা হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ওই দুর্ঘটনার ১১ বছর পরও তিনটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি আদালতে। বাসচালক জামিরও মারা গেছেন দুই বছর আগে। তার সাজার বিরুদ্ধে আপিল এবং ক্ষতিপূরণের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কবে হতে পারে, সে বিষয়ে বাদী-বিবাদী কোনো পক্ষেরই ধারণা নেই।
সারা দেশকে নাড়া দেয়া ২০১১ সালের ওই সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর ছাড়াও তাদের মাইক্রোবাসচালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন মারা যান। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল-মামুনসহ আহত হন পাঁচজন।
দুর্ঘটনার জন্য বিচারিক আদালতে জামির দোষী সাব্যস্ত হলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সামছুল হকের একটি অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে, বাসচালক জামির ছিলেন ‘নির্দোষ’।
সরেজমিন অনুসন্ধান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ড. সামছুল হক বলছেন, সেদিন রাস্তায় সঠিক লেনেই ছিল জামিরের বাস। একটি বাঁকের মুখে তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসার কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা জামিরের বাসটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
বিচারিক আদালতে ওই দুর্ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটি ঘটেছিল বলেও মনে করছেন অধ্যাপক ড. সামছুল হক। এ কারণে হাইকোর্টে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। সাক্ষী হিসেবে তার নাম আদালতে দাখিলও করেছে বিবাদীপক্ষ। তবে এরপর বিষয়টিতে আর কোনো গতি নেই।
বাসচালক জামির হোসেনের স্ত্রী রাশিদা বেগমের অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। সপ্তাহখানেক আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর তাকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা বলছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্বজনদের দাবি, স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স বাসের মালিক মুজিবুল হক খোকন জানিয়েছেন, মামলার পেছনে ছুটতে ছুটতে তিনি এখন প্রায় সর্বস্বান্ত। নানান শারীরিক জটিলতায় প্রায় দুমাস ধরে তিনি শয্যাশায়ী।
কী আছে ড. সামছুল হকের অনুসন্ধানে
মর্মান্তিক ওই সড়ক দুর্ঘটনাটি নিয়ে নিউজবাংলার কাছে গত বছর নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিলেন অধ্যাপক সামছুল হক। সে সময় তিনি বলেন, ‘তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা। ওই দুর্ঘটনার পর পরই আমি এর কারণ গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে শুরু করি। অনুসন্ধানের একদম শুরুতে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক আমাকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছিলেন।
‘তারা প্রথম দিনে ঘটনাস্থলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি আমাকে পাঠিয়েছিলেন। কিছু ছবি তোলা হয়েছিল উঁচু গাছ থেকে, যেগুলো আমার কাছে ছিল সারকামসটেন্সিয়াল এভিডেন্সের মতো। সেসব ছবি দেখে আমি বুঝেছিলাম, এখানে অনেক কিছু বলার মতো বিষয় লুকিয়ে আছে।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছ থেকে আরও বেশ কিছু কনটেন্ট পেয়েছিলাম। এর মধ্যে একটি ভিডিও ছিল, যেখানে বাসের উইন্ডশিল্ডের কাছে বসা একজন নারীর কথা ছিল। তার সাবলীল বিবরণ থেকে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেক নতুন কিছু পাওয়ার আছে।’
ড. সামছুল হক নিজেও পরদিন দুর্ঘটনাস্থলে যান। বিভিন্ন আলামত নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি কথা বলেন স্থানীয় লোকজন ও তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘একে একে বিভিন্ন বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল, সেই সঙ্গে সাধারণ বিবরণের মধ্যে গোঁজামিলগুলোও ধরা পড়ছিল। তখনও আমি দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটি ভালোভাবে দেখতে পারিনি। ওটা একদম চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিল। মাইক্রোবাসে কে কার পাশে বসেছিলেন, সেটা তখনও আমি জানতাম না।’
তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানের পাশাপাশি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের অপেক্ষা করছিলাম। তিন সদস্যের এ কমিটির সঙ্গে আমার একজন সাবেক ছাত্রও যুক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। একই সঙ্গে আমার কাছে যেসব তথ্য-প্রমাণ ছিল, সেগুলো একসূত্রে গাঁথার চেষ্টা করছিলাম। তবে এর মধ্যে খণ্ড খণ্ড বেশ কিছু মিসিং লিংক ছিল।
‘এর মধ্যেই ডেইলি স্টারে তারেক মাসুদের সহকারী মনীশ রফিকের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। মনীশ ছিলেন মাইক্রোবাসচালকের ঠিক পাশের আসনে; দুর্ঘটনায় তিনিও সামান্য আহত হন। মনীশের বক্তব্য থেকে এমন কিছু বিষয় পাই, যেটি আমার প্রাথমিক অনুসন্ধানকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।’
ড. সামছুল হক বলেন, ‘সাধারণভাবে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে গাড়ির হার্ড ব্রেক কষার কথা। হার্ড ব্রেক অ্যাপ্লাই করলে রাস্তায় একটি স্পিড মার্ক পাওয়া যায়। আর সেই স্পিড মার্ক পেলে গাড়ির আসল অবস্থান চিহ্নিত করা যায়। অথচ আমি রাস্তায় কোনো স্পিড মার্ক পাইনি।
‘আমরা যারা দুর্ঘটনা বিষয়ে কাজ করি, তাদের কাছে বিষয়টি গোলমেলে। আমি তখন ভাবার চেষ্টা করছিলাম, বৃষ্টির কারণেই রাস্তায় হয়তো স্পিড মার্ক নেই। তবে সেটা মিলছিল না। স্পিড মার্ক এমন একটি বিষয় যার কোনো না কোনো চিহ্ন থাকবেই। কারণ এ সময় চাকার প্রচণ্ড ঘর্ষণে রাস্তার পাথরকুচি উঠে যায়।’
তিনি বলেন, ‘তাহলে কেন এ ধরনের চিহ্ন নেই- সেটি নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। অবশেষে সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল মনীশ রফিকের সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেছিলেন, সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। মাইক্রোবাসের পেছন দিকে যাত্রীরা মুখোমুখি বসে তুমুল আড্ডায় মেতেছিলেন। তার কথার প্রতিটি বিষয় আমার সামনে একেকটি চিত্র তৈরি করছিল। মাইক্রোবাসে মুখোমুখি কী করে বসা যায়! তার মানে সেটির আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। মনীশ আরও বলেন, হঠাৎ একটি বাস দৈত্যের মতো তাদের মাইক্রোবাসে আঘাত করে।’
এই ‘হঠাৎ’ শব্দটি অনেক প্রশ্নের জবাব পাইয়ে দেয় ড. সামছুল হককে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ হলেই তো গাড়ির স্পিড মার্ক পাওয়া যায় না! কিছু দূর আগে থেকে দেখতে পেলেও হার্ড ব্রেক কষা সম্ভব, কিন্তু কী এমন পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়েছিল যে কারণে বাসটিকে তারা হঠাৎ দেখতে পেলেন!’
এরপর আবার দুর্ঘটনাস্থলে যান ড. সামছুল হক। এ সময় স্থানীয় একজনের বক্তব্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া পত্রিকায় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বক্তব্য ছাপা হয়।
এসব থেকে পরিষ্কার হয়, দুর্ঘটনার ঠিক কিছু আগে একটি বড় বাস রাস্তার বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিকশাকে ওভারটেক করে। ওই বাসটির পিছু পিছু একই দিকে যাচ্ছিল তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাস। ওই বাসটির পিছু নিয়ে তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাসটি অটোরিকশাকে একইভাবে ওভারটেক করতে বাঁকের মুখে নিজের ডান লেনে চলে গিয়েছিল। এ সময়েই বাঁকের বিপরীত দিক থেকে আসা জামির হোসেনের বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষ হয়।
ড. সামছুল হক বলেন, ‘অটোরিকশাকে ওভারটেক করা বাসটির চালক কিন্তু বাঁকের অন্য প্রান্তে বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটিকে দেখতে পেয়েছিলেন। এর পরও তিনি ক্যালকুলেটেড (হিসাব করা) ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাকে ওভারটেক করে আবার নির্ধারিত বাম লেনে বাসটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। মহাসড়কে চলাচলকারী বাস-ট্রাক সাধারণত এ ধরনের হিসাবি ঝুঁকি নিতে অভ্যস্ত।
‘তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাসটিও সামনের বাসটিকে অনুসরণ করে ডান লেনে চলে যায়। তবে একজন শহুরে চালকের জন্য কাজটি ছিল মারাত্মক ভুল। সামনের বাসের মতো তিনি আর মাইক্রোবাসকে আবার বাম লেনে নিতে পারেননি। আর এই ভুলের কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটির সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়।’
বিপরীত দিকের বাসের চালক জামির বাঁকের মুখে নিজের সঠিক বাম লেনেই ছিলেন বলে মনে করছেন ড. সামছুল হক।
তিনি বলেন, ‘উল্টো দিকে আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসা মাইক্রোবাসের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসচালক জামির হোসেনের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কারণ বাঁকের উল্টো দিক থেকে তিনি মাইক্রোবাসটিকে দেখতেই পাননি। আর এ জন্যই সেই হঠাৎ দুর্ঘটনা, যেখানে বাসচালক ব্রেক কষারও সময় পাননি।’
দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটিকে বিধ্বস্ত অবস্থায় রাস্তায় এর বাম দিকের লেনে পাওয়া যায়। ফলে মামলার রায়ে বিচারিক আদালতের বিচারক বিষয়টির উল্লেখ করে বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে মাইক্রোবাসটি তার সঠিক লেনেই ছিল।’
তবে ড. সামছুল হক বলেন, এখানে বোঝার ভুল আছে। বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা ড. সামছুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, “সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে আমি দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটির টার্মিনাল পজিশনের বেশ কিছু ছবি পেয়েছিলাম। একটি দুর্ঘটনাকে বিশ্লেষণের জন্য ‘টার্মিনাল পজিশন’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা হলো দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটির চূড়ান্ত অবস্থান।”
তিনি বলেন, “এখানে লক্ষ করার বিষয় হলো, একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর কোনো মাইক্রোবাস যদি তার ‘সঠিক’ লেনে থাকে (যদিও সে অবস্থানটিও ছিল রাস্তার মাঝ বরাবর), তাহলে ধরে নিতে হবে দুর্ঘটনার আগের চিত্র ছিল অন্যরকম। কারণ একটি বাসের যে ভর ও গতি, তাতে সংঘর্ষের পর মূল অবস্থান থেকে মাইক্রোবাসটির বেশ কিছুটা দূরে সরে যাওয়ার কথা। মাইক্রোবাসের জীবিত আরোহীদের বক্তব্যেও সেটি জানা গেছে। ফলে দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটিকে রাস্তার মাঝ বরাবর পাওয়ার অর্থ হলো, প্রকৃতপক্ষে সেটি রং সাইডে ছিল। ধাক্কা খাওয়ার পর এর টার্মিনাল পজিশনটি পাওয়া গিয়েছিল মধ্যরাস্তায়।
“আর দুর্ঘটনার আগে মাইক্রোবাসটি সত্যিই নিজের বাম লেনে থাকলে ধাক্কা খাওয়ার পর সেটির রাস্তার কিনারায় বা রাস্তার পাশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। এটাই হলো বিজ্ঞান। অথচ বিচারপ্রক্রিয়ায় এই বিজ্ঞানকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।”
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসের অবস্থা দেখে পরিষ্কার বোঝা গেছে, বাসের সঙ্গে এর আংশিক মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। ডিভাইডারবিহীন একটি সড়কে এ ধরনের আংশিক মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে হলে দুটি যানের যেকোনো একটিকে রং সাইডে থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোবাস ও বাসের অবস্থান এবং সংঘর্ষে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দেখে পরিষ্কার বোঝা যায়, মাইক্রোবাসটিই ওভারটেক করতে গিয়ে রং সাইডে ছিল। দুর্ঘটনার পর সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি ও মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রতিবেদনেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। তবে মামলার বিচারের ক্ষেত্রে সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।’
দুর্ঘটনার জন্য সে সময় রাস্তার ‘অবৈজ্ঞানিক’ বাঁককেও দায়ী করছেন ড. সামছুল হক।
তিনি বলেন, ‘১১ ফুট প্রশস্ত ওই রাস্তায় কোনো বাঁক থাকলে রাস্তার বক্রতার ধরন অনুসারে অংশটি অন্তত ১৩ ফুট চওড়া হওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তবে তা ছিল না। একই সঙ্গে বাঁকটিতে গাছপালা থাকায় দৃষ্টিসীমা ছিল একদম কম।
‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যেসব ব্ল্যাকস্পট ছিল, এই বাঁকটি তার একটি। মানিকগঞ্জের জোকায় তখন প্রতি বছর তিনটির বেশি করে দুর্ঘটনা ঘটছিল। এখন সেখানে ডিভাইডার করা হয়েছে, রাস্তা চওড়া হয়েছে, ফলে এখন আর দুর্ঘটনা হচ্ছে না।’
ড. সামছুল হকের অনুসন্ধান যেভাবে ‘অন্ধকারে’
দুর্ঘটনার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দাঁড় করানোর পর সেটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের কাছে তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. সামছুল হক, তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে সবার অনীহা ছিল বলে অভিযোগ তার।
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরিস্থিতি পুনর্নির্মাণের পর আমি প্রেজেন্টেশনটি কিছু সাংবাদিককে দিয়েছিলাম। তবে সেটি কোথাও প্রকাশ করা হয়নি।
‘বাসচালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে একদিন ব্র্যাকে একটি সেমিনারে আমি অনুসন্ধানটি সবার সামনে উপস্থাপন করলাম। সেখানে ক্যাথরিন মাসুদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেনও ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সারা হোসেন বললেন, আমি যে বিষয়টি বের করেছি সেটির সঙ্গে তাদের ভিন্ন মত নেই, তবে তাদের ফাইন্ডিংস আলাদা। আমি তখন তাকে (সারা হোসেন) বললাম, আপনি আপনার জায়গা থেকে কখনই বাসচালকের বাইরে যেতে পারবেন না, কিন্তু আমার বিশ্লেষণের পরিসর আরও বিস্তৃত।’
ড. সামছুল হক বলেন, ‘এরপর সারা হোসেনের টিম আমার কাছে এসেছিল, আমাকে সাক্ষ্য দিতে মানিকগঞ্জের আদালতে যেতে বলা হয়েছিল। তবে আমি তখন বলেছিলাম, একজন শিক্ষক হিসেবে দিনের পর দিন আমার পক্ষে মানিকগঞ্জে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া আমি তখন ভেবেছিলাম, আদালত নিশ্চয়ই দুর্ঘটনার সব দিক চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করেই রায় দেবে।’
২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রায়ে জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। রায়ের পর জামিরকে প্রথমে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার ও পরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় চমকে যান ড. সামছুল হক। সিদ্ধান্ত নেন, উচ্চ আদালতে তিনি অনুসন্ধানের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। এ জন্য যোগাযোগ শুরু করেন বিভিন্ন মহলে।
তিনি বলেন, ‘একটি সড়ক দুর্ঘটনার বিচার ও সাধারণ বিচারের মধ্যে যে মাত্রাগত পার্থক্য থাকা প্রয়োজন, সেটি রায়ে দেখতে পাইনি। মনের মধ্যে ছটফট অবস্থা তৈরি হলো। পুরো বিষয়টি আবার নতুন করে কীভাবে সবার সামনে আনা যায়, সেই চেষ্টা শুরু করলাম। মিডিয়া শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে রক্ষণশীলতা দেখাচ্ছিল, ফলে সেখানকার অনেকেই গুরুত্ব দিতে চাইলেন না। কেউ কেউ এমনও বললেন, আমি বাসচালকের পক্ষে কাজ করছি।
‘তবে আমি বারবারই বলেছি, এখানে বিজ্ঞান কথা বলছে, আমি নিজে কিছু বলছি না। এটা কার পক্ষে যাচ্ছে বা বিপক্ষে যাচ্ছে, সেটা কোনো বিষয় নয়।’
ড. সামছুল হক জানান, একপর্যায়ে ২০২০ সালের শুরুতে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।
তিনি বলেন, ‘আমার শুধু মনে হচ্ছিল, একটি অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। সেটা জেনেও চুপ করে থাকা আরও ঘোরতর অন্যায় হবে। এ কারণে আমি নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করেছিলাম।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সামনে দেড় ঘণ্টার একটি প্রেজেন্টেশন দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভূমিকা দেয়ার পর তাকে চারটি বা পাঁচটি দিক থেকে ভুল দেখাচ্ছিলাম। মন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম, জামিরের বাস বেপরোয়া গতিতে চলছিল বলা হলেও বাস্তবে এর গতি ছিল নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যেই। আইনমন্ত্রী প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়ার সমস্যাটি ধরে ফেললেন। উনি বললেন, সড়ক দুর্ঘটনার মতো বিষয়গুলোকে সাধারণ মামলার মতো করে বিচার করা তো মোটেই ঠিক হচ্ছে না।
‘আমি উচ্চ আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। তবে তখনই জানলাম, কোনো মামলা উচ্চ আদালতে যাওয়ার পর নতুন করে সাক্ষী যুক্ত করা যায় না। এটা করতে হলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।’
এরপর বিবাদীপক্ষ হাইকোর্টে ড. সামছুল হককে সাক্ষী হিসেবে পক্ষভুক্ত করার আবেদন করে। তবে করোনা মহামারির কারণে সেই আবেদনের শুনানি তখন হয়নি। এখনও সেটি সেখানেই আটকে আছে। এরই মধ্যে ২০২০ সালের ১ আগস্ট কারাগারে মারা যান বাসচালক জামির হোসেন।
ড. সামছুল হক বলেন, ‘বৈশিষ্ট্যগত নানান কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা আর সব ঘটনা থেকে আলাদা। একটি হত্যাকাণ্ডের বিচারে যেমন শুধু সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়, সেখানে সড়ক দুর্ঘটনার বিচারে সাক্ষীর বাইরেও পারিপার্শ্বিক আরও অনেক কিছু বিবেচনায় নেয়া দরকার।’
তিনি বলেন, “জামিরের মামলায় আদালত ‘সর্বোৎকৃষ্ট সাক্ষী’ হিসেবে যাদের বিবেচনা করেছে, তারা সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী৷ দুর্ঘটনার সময় তারা হয় উল্টো দিকে ঘুরে আড্ডা দিচ্ছিলেন, নয়তো ছিলেন একদম পেছনের সিটে। অথচ যিনি মাইক্রোবাসচালকের একদম পাশের সিটে ছিলেন, সেই মনীশ রফিকের সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। কোনো বাসযাত্রী বা স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যও গুরুত্ব পায়নি।”
জামিরকে যাবজ্জীবনের রায়ে যা বলেছিলেন বিচারক
বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনকে হত্যার দায়ে বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর রায় ঘোষণার পর পরই কারাগারে পাঠানো হয় জামিরকে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কয়েক দিন পরই জামির হোসেন মেহেরপুর গাংনীর চৌগাছা থেকে গ্রেপ্তার হন। তবে কয়েক মাস পরই জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়ার দিন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন।
রায় ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিচারক দণ্ড ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ‘নির্লিপ্ত’ দেখা যাচ্ছিল জামিরকে। রায়ের পর পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে কারাগারে পাঠায়।
বিচারক আদেশে বলেন, ‘জামির হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৪২৭ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাকে ৩০৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হলো। আর দণ্ডবিধির ৪২৭ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।’
আসামির উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলেও আদেশ দেন বিচারক।
বিচার চলার সময় ৩২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। এর মধ্যে ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা। আসামির পক্ষে দুজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।
বিচারক রায়ে বলেন, ‘এজাহার, অভিযোগপত্র, খসড়া মানচিত্র, বিআরটিএর চিঠি, জব্দ করা ভুয়া ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীর অভিন্ন ও অকাট্য সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, আসামি বাসটিকে বৃষ্টি ও বাঁকের মধ্যে অবহেলার সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে একটি মিনিবাসকে ওভারটেক করে মাইক্রোবাসটিকে নির্মমভাবে আঘাত করেন। ফলে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচটি তরতাজা প্রাণ ঝরে যায়। আসামির বেপরোয়া আচরণ ও অবহেলার কারণেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়।’
আসামির পক্ষে আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দেন চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটির যাত্রী শাহনেওয়াজ রয়েল ও অধ্যাপক নাসরিন আশরাফী।
তবে বিচারক রায়ে বলেন, ‘তাদের কেউই ওই বাসের যাত্রী হওয়ার প্রমাণ হিসেবে বাসের টিকিট আনেননি। এ দুজন সারা জীবনে এবং ঘটনার পর থেকে অসংখ্যবার বাসে ওঠার কথা। একটি নির্দিষ্ট দিনে কোন বাসে উঠেছিলেন তা মনে রাখা দুঃসাধ্য। তারা যদি ঘটনার পর কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিতেন, তাহলে অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য হতো।
‘এ ছাড়া শাহনেওয়াজ সাক্ষ্য দেয়ার সময় বলেছেন, দুর্ঘটনাস্থলে কোনো বাঁক নেই। আর তিনি ছিলেন বাসের বাঁ দিকে চার আসন পেছনে। ফলে ডান দিকের বিষয় দেখা সম্ভবপর নয়। আর নাসরিন আশরাফীও বলেছেন, সেখানে বাঁক ছিল না। তার চশমার পাওয়ার ৩.৫০। ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির একজন বয়স্ক মহিলার পক্ষে দীর্ঘদিনের আগের বৃষ্টির মধ্যে সংঘটিত কোনো ঘটনার সঠিক বিবরণ দেয়া আদৌ সম্ভবপর নয়।’
মাইক্রোবাসের বেঁচে যাওয়া আরোহীরা যা বলছেন
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন চিত্রশিল্পী ঢালী আল মামুন।
গত বছর তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাইক্রোবাসটি ছিল তারেকের, যেটা শুটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হতো। সেদিন আমরা ঢাকায় ফিরছিলাম। চালকের পরের সিটটা ব্যাক টু ব্যাক করা ছিল। তার পরের সিটটা যেভাবে থাকে, সেভাবেই ছিল। আমরা পাঁচজন সামনাসামনি বসেছিলাম।
‘তারেক আর ক্যাথরিন চালকের পেছনে ছিল। আর উল্টো দিকে মিশুক আমার ডান পাশে ছিল; বাঁ পাশে ছিল আমার স্ত্রী। সামনে দুই জন ছিল। তার মধ্যে একজন ছিল তারেকের সহকারী পরিচালক। আমরা মোট ১০ জন ছিলাম।’
দুর্ঘটনার সময়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল, সে কারণে আমাদের গাড়ির গতি ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের বেশি ছিল না। আমরা তখন একটি খাবার দোকান খুঁজছিলাম। সে কারণে গাড়ি স্লো ছিল। আমাদের গাড়ি কখনোই রাস্তার সাদা লাইন ক্রস করেনি।
‘দুর্ঘটনায় গাড়িতে ডান পাশে বসা পাঁচজন স্পট ডেট হয়। আর বাকিরা আহত হই। তার মধ্যে আমার অবস্থা সব থেকে খারাপ ছিল। পরে আমাকে ব্যাংকক নিয়ে যেতে হয়েছিল।’
অন্যদিকে মাইক্রোবাসে থাকা প্রডাকশন কন্ট্রোলার সাইদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা লোকেশন দেখে ফিরছিলাম। মোটামুটি একটা লেভেলে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি গাড়ির একেবারে পেছনের সিটে হাতের বাম পাশে ছিলাম। সামনের সিটগুলা ঘোরানো ছিল। চালকের পাশে বসা ছিলেন মনীশ রফিক। উনি কিছুই দেখেননি, কিছুই বলতে পারেননি। তার কারণ উনি পেছনের দিকে তাকানো ছিলেন।’
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যেখানে বসা ছিলাম সেখান থেকে একদম পরিষ্কার সামনে দেখা যাচ্ছিল। তারেক ভাই এবং ক্যাথরিন আপার মাঝখান দিয়ে একটা ফাঁকা ছিল। সেখান দিয়ে সামনে দেখা যাচ্ছিল। সে সময় তারেক ভাই কথা বলছিলেন। আমি দেখলাম, আমাদের সামনে একটা ছোট পিকআপের মতো আছে। দেখলাম একটা ছোট মিনিবাস আমাদের অপর দিক থেকে আসছে। আমরাও ওই পিকআপটার পেছনে আছি। এ সময় পেছন থেকে একটা বড় বাস আমাদের কাছাকাছি এসেছে।
‘আমাদের গাড়ি তখন বাম পাশে যে সাদা দাগ থাকে তার মধ্যেই ছিল। যখন আমাদের গাড়িটি কার্ব হয়ে ঢুকছিল, তখন উল্টো দিক থেকে একটা বাস এসে সজোরে ধাক্কা দেয়। তখন আমি দুই সিটের মাঝখানে যে জায়গা থাকে সেখানে পড়ে যাই। এরপর আমার আর কিছু মনে নাই। পরে আমাকে যারা তুলেছে তারা বলেছেন, আমার ওপর তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর পড়েছিলেন। ক্যাথরিন আপা আমাকে নাকি টেনে বের করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।’
ঝুলে আছে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি
আলোচিত ওই দুর্ঘটনার পর ঘিওর থানার তখনকার উপপরিদর্শক লুৎফর রহমান একটি মামলা করেন। অন্যদিকে ঘটনার দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাসমালিক, চালক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলা করেন।
পরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বার্থে হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করলে ক্ষতিপূরণের মামলা দুটি হাইকোর্টে চলে আসে।
দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।
ক্ষতিপূরণের অর্থের মধ্যে বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) তিন মালিকের ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫২ টাকা, বাসচালক জামির হোসেনের ৩০ লাখ টাকা এবং রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৮০ হাজার টাকা দেয়ার কথা। এ টাকা ক্যাথরিন মাসুদ, তারেক মাসুদের ছেলে নিষাদ মাসুদ ও বৃদ্ধা মা নুরুন নাহার পাবেন বলে রায়ে বলা হয়।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বাস মালিকপক্ষ, সেটি এখন আপিলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
ক্ষতিপূরণের মামলার শুনানির বিষয়ে তারেক মাসুদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগে যে আপিলটা পেন্ডিং আছে, সেটি যাতে শুনানি হয় সে বিষয়ে আমরা অবশ্যই উদ্যোগ নেব। এত বছর হয়ে গেছে আমরা শেষ করতে পারছি না। এ মামলাটি শুধু তারেক মাসুদের পরিবারের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে দুটো বিষয়- একটি হলো ক্ষতিপূরণের, আরেকটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দায়িত্বটা আসলে কী সেটি। এ প্রশ্নগুলো কিন্তু আদালতের সামনে উত্থাপিত হয়েছে। এখন আদালতের রায়ের মাধ্যমে যদি এ প্রশ্নের সুরাহা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য একটা বড় উপকার হবে। তার কারণ হলো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দায়দায়িত্ব নিলে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আমরা দেখতে পারব।’
সারা হোসেন জানান, তারেক মাসুদের মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারের অপেক্ষায় আছে। আর মিশুক মুনীরের মামলাটি হাইকোর্টে তালিকাভুক্ত ছিল ঈদের আগে।
তিনি বলেন, ‘সেখানে প্রক্রিয়াগত একটা সমস্যা হয়েছে যে, বাসের চালক মারা গেছেন। এখন তার উত্তরসূরিদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেটা নিয়ে এখন কাজ চলছে। এটা হয়ে গেলে হাইকোর্টে এ মামলাটির শুনানি হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাস মালিক খুবই অসুস্থ। মৃত্যুপথযাত্রী। এ মামলায় এখন আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।’
জামিরের স্ত্রী জীবন সংকটে, বাসমালিক অসুস্থ
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে যাওয়ার পর বাসচালক জামির হোসেন মারা যান ২০২০ সালের ১ আগস্ট। পরিবার এখন কেমন আছে জানতে রোববার তার স্ত্রী রাশিদা বেগমের নম্বরে ফোন করা হলে সেটি ধরেন সুমি নামে এক নারী।
সুমি নিজেকে বাড়ির ভাড়াটিয়া পরিচয় দিয়ে জানান, রশিদা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার দেখাশোনা করতে মেয়ে আরিফা খানম জ্যোতি ও জামাই ইব্রাহিম হোসেনও হাসপাতালে আছেন।
এরপর ইব্রাহিম হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমার শাশুড়ি স্ট্রোক করেছেন। এখন তিনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার অবস্থা ভালো না। বলা যায় তিনি এখন মৃত্যুশয্যায়।’
জামির হোসেনের মৃত্যুর পর থেকেই তার স্ত্রী বিভিন্ন অসুস্থতার মধ্যে ছিলেন বলে জানান ইব্রাহিম।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সোমবার সকাল ৯টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বেডে অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন রাশিদা। পাশে উদ্বিগ্ন তার একমাত্র মেয়ে জ্যোতি।
জ্যোতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক দুর্ঘটনায় আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেল। বাবা জেলে মারা গেলেন, আর মায়ের এই অবস্থা। চুয়াডাঙ্গায় অবস্থা খারাপ হলে মাকে গত ২৭ তারিখে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার বলেছেন, ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। আরও কিছু সমস্যা আছে।
‘মাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছি। আমরা খুব খারাপ পরিস্থিতিতে আছি। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’
রাশিদার চিকিৎসা চলছে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আক্রামুজ্জামান মিন্টুর তত্ত্বাবধানে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোগীর ব্রেইনে ছোট্ট একটি স্ট্রোক করেছে। তার শরীরে লবণের ঘাটতি ছিল। রক্তে ইনফেকশন আছে। সব মিলিয়ে তিনি ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতিতে আছেন। আমরা বেডে রেখে তাকে অবজার্ভ করছি। লবণ কারেকশন করা হচ্ছে।
‘রক্তে ইনফেকশনের জন্য উচ্চ ক্ষমতার অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছি। আর জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করছি। বেড ফাঁকা হলে আমরা তাকে হাই ডিপেডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) নিয়ে যাব। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছি।’
রাশিদার সঙ্গে গত বছরের আগস্টে কথা বলেছিল নিউজবাংলা। সে সময় তিনি জানান, মানিকগঞ্জের দুর্ঘটনাটি ছাড়া জামির হোসেন আর কখনও বড় কোনো দুর্ঘটনার মুখে পড়েননি। ওই দুর্ঘটনার পর তাকে মেহেরপুরের গাংনীর চৌগাছা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তিনি তিন মাস জেলে ছিলেন। সে সময় বারবার বলতেন, তার কিছুই হবে না, কারণ তিনি নির্দোষ।
রাশিদা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্টের সংসার। কোনো জমিজমা নেই। খুব কষ্টে মামলার খরচ চালাতাম। তার ডায়াবেটিস ছিল, তেমন কিছু খেতে পারতেন না।’
আবেগাপ্লুত রাশিদা বলেন, ‘জেলে যাওয়ার পর চিন্তায় চিন্তায় আমার স্বামীর জীবনটা চলে গেল। সেই থেকে আমাদের বাড়ি থেকে আনন্দ চলে গেছে। কেউ আর হাসে না। যে যাবার সে চলে গেছে। এখন এসব বলে বা নিউজ করে কী হবে? তখন তো কেউ আসেনি।’
মানিকগঞ্জে দুর্ঘটনার পর স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন জামির হোসেন।
সেই সময়ের কথা জানিয়ে রাশিদা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনি কাঁপতে কাঁপতে বলেন, আমার গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি অনেকবার হর্ন দিছি। গাড়ি রাস্তার পাশের খাদের দিকে নিয়ে গেছি।
‘আমার গাড়িতে অনেক যাত্রী ছিল। মাইক্রোবাসটি ভুল পথে এসে দ্রুত আমার গাড়িতে ধাক্কা মেরে দিল। আমার গাড়ি রাস্তার ঠিক দিকেই ছিল। মনে হচ্ছে খুব দামি মানুষ এরা। আমি পরে কথা বলব।’
রাশিদা জানান, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পর মুষড়ে পড়েন জামির। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সুষ্ঠু বিচার পাইনি। আমি অপরাধী না হয়েও অপরাধী হলাম।’
জামির হোসেনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়া স্কুলপাড়া এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, দরিদ্র জীবনযাপন করতেন জামির। বসতভিটা ছাড়া কোনো জমিজমা নেই। ২০০৮ সালে মেয়ে আরিফা খানমকে বিয়ে দেন কলেজশিক্ষক ইব্রাহিমের সঙ্গে। জামিরের মৃত্যুর পর জামাতার বাড়িতেই ছিলেন রাশিদা বেগম।
অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের মালিক মুজিবুল হক খোকনও অসুস্থতার কারণে দুই মাস ধরে প্রায় শয্যাশায়ী। তিনি জানান, মামলার পেছনে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছুটতে ছুটতে এখন বলতে গেলে নিঃস্ব।
ক্ষতিপূরণ-সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ’মাঝে দুইবার তারিখ পড়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে আমার বাসের চালক জামিরের মৃত্যুর নথি তলব করেছে। সেই নথি এখনও আদালতে পৌঁছায়নি। ওই নথি এলে পরবর্তী কী হবে সেটা আমার আইনজীবী বলতে পারবেন।’
আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে আমি যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে আমার পক্ষ থেকে একজন যোগাযোগ করেছেন। এই মামলা থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সেটাই আমার চাওয়া। আর কতদিন এটা এভাবে ঝুলে থাকবে।’
তারেক মাসুদের পক্ষে ক্ষতিপূরণের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদনের বিষয়েও শুনানির কোনো তারিখ পড়েনি বলে জানান তিনি।
খোকন বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা হলো মামলাগুলো দ্রুত শুনানি শেষ হয়ে যেন চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটে। এটা তো আমাদের জন্য একটা বড় ব্যথার কারণ হয়ে আছে। আল্লাহই জানেন এটা থেকে কবে পরিত্রাণ পাব!’
মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আশা ছাড়েননি ড. সামছুল হক
আলোচিত মামলাটির এখনও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে ড. সামছুল হক। তিনি চাইছেন, দুর্ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে উচ্চ আদালতে তার ডাক পড়বে।
ড. সামছুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক আগে বাসচালক জামির হোসেনের পক্ষ থেকে একবার আমার এনআইডি ও নামটাম নিয়েছিল। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নাই। এটাও অনেক আগে।’
সড়ক দুর্ঘটনার বিচারের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে প্রধান সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে প্রয়োজনে বিশেষ আইন করার দাবি তুলে তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় হওয়া মামলার বিচারের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সাক্ষ্য হিসেবে নেয়া উচিত, বিশেষ করে যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনায় সাক্ষী থাকে না।
‘এর কারণ চলন্ত অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীরা যে যেখানকার সেখানে চলে যান। ফলে এসব মামলায় সাক্ষী পাওয়া দুরূহ হয়। এমনকি মামলার বিচারেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। এ কারণে ঘটনায় দোষ কার, সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে পারলে দোষী শনাক্ত সহজ হবে।’
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি দেশে এ ধরনের বিশেষ আইন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও একটি হত্যা মামলার মতোই যেমন কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, চালক ব্রেক কষেছিল কি না, কত দূর থেকে কষেছিল, কে রং সাইডে ছিল, গাড়িটির শেষ অবস্থান কী- ইত্যাদি বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে হয়।
‘এটা তদন্ত কর্মকর্তা বা বাইরে থেকে কাউকে সাক্ষী বানিয়ে প্রমাণ করা যায় না। সব কিছু মিলিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণের জন্য একটা বিশেষ আইন করা হলে হয়তো সঠিকভাবে নিরূপণ করা সহজ হবে।’
এ মামলায় অধ্যাপক সামছুল হক পক্ষভুক্ত হয়ে সাক্ষ্য দেয়ার আগ্রহের বিষয়ে গত বছর আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রশ্ন করেছিল নিউজবাংলা। বিষয়টি তোলার পর মন্ত্রী বলেন, ‘এটার বিষয়ে আমার কোনো এখতিয়ার নাই। এটা হাইকোর্টের এখতিয়ার। হাইকোর্টে ওনারা দরখাস্ত দেবেন, হাইকোর্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর কুখ্যাত চাঁদাবাজ লিটনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ছিনতাই ও অপহরণের মামলা ছিল।
বুধবার (২৮ মে) রাত ১০টার দিকে পুরানো পল্টনের নিউ বন্ধু হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকায় ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়, অপহরণ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিল লিটন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এসব কার্যক্রম আরও বেড়ে যায়।
পুরানা পল্টন এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের অভিযোগে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। এরপর সেনাবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো লিটনের গতিবিধি নজরদারিতে রাখে।
বুধবার রাতে নিউ বন্ধু হোটেলের পাশের একটি ভবনে থাকা লিটনের ব্যক্তিগত অফিসে অভিযান চালানো হয়। হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে হোটেল কক্ষ, অফিস ও তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে পাঁচটি মোবাইল ফোন, নগদ ২ লাখ টাকা ও ১ হাজার ১০০ ডলার উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।
সেনাবাহিনীর মেজর শাকিব সাংবাদিকদের জানান, লিটনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গণহত্যার বিচার আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
উপদেষ্টা আজ তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘বিচার শুরু হচ্ছে শিগগির। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি আছে সমাজে। এটি দৃশ্যমান করা হয়েছিল আট মাস আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়েই।
এরপর তদন্তকারী অফিস ও প্রসিকিউশন অফিস পুনর্গঠন করা হয়েছে। তদন্তকারী দল কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষ করেছে। প্রসিকিউশন টিম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একটি মামলার ফরমাল চার্জ গঠন করেছে। গতকাল রোববার এটি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়ার পর তা আমলে নেয়া হয়েছে।’
উপদেষ্টা বলেছেন, ‘ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে একটি বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। সেটি গতকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার মামলার বিচারের শুনানি পর্ব শুরু হচ্ছে অচিরেই। ইনশাল্লাহ্, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এই বিচারের রায় পেয়ে যাবো আমরা। গণহত্যার বিচার, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।’
স্ত্রী-কন্যাসহ আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নামে থাকা মোট নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। এসব হিসাবে মোট ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৯৬ টাকা রয়েছে।
বুধবার (২১ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। এদিন দুদকের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক আদালতে হিসাব অবরোধের আবেদন করেন।
অবরুদ্ধ হওয়া হিসাবে মো. আব্দুর রাজ্জাকের নিজ নামে থাকা চারটি ব্যাংকে হিসাবে, ৪২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা, তার স্ত্রী শিরিন আকতার বানুর চারটি ব্যাংক হিসাবে ৬৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৫ টাকা ও তার মেয়ে ফারজানা আক্তার তন্দ্রার হিসাবে ২৮ লাখ টাকা রয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডার ও মনোনয়ন বাণিজ্য, নিয়োগে দুর্নীতি, সরকারি জমি দখল, এসিআই ও আদম ব্যবসায়ী নূর আলীর মাধ্যমে শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার এবং পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।
এতে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানকালে রাজ্জাক ও তার স্ত্রী-মেয়ের নামে অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এই সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করলে তদন্ত ব্যাহত হতে পারে এবং ভবিষ্যতে তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই তদন্তের স্বার্থে এসব হিসাব অবরুদ্ধ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
নারী নির্যাতনের একটি মামলায় সঙ্গীতশিল্পী মামলায় মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছে ডেমরা থানা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার তালিবুর রহমান এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার (১৯ মে) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ডেমরার স্টাফ রোড এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ‘তার বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় নারী নির্যাতনে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে ডেমরা পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুর রহমান ইউএনবিকে জানান, ‘ইসরাত জাহান প্রিয়া নামে ইডেন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর সাথে রুবেলের টেলিফোনে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে প্রায় সাত মাস আগে রুবেল প্রিয়াকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কীর্তন করে টেমরা থানার অধীন আমতলা নামক স্থানে একটি ফ্লাট বাসায় রাখে। বিগত সাত মাসে প্রিয়ার সাথে সম্পর্ক করে এবং পরিবারের কারও সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি।’
সম্প্রতি প্রিয়ার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, যেটা দেখে প্রিয়ার বাবা-মা ডেমরা থানা যোগাযোগ করেন। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার রাত দশটায় আমতলার বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রিয়াকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু রুবেল সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে প্রিয়া ডেমরা থানা এসে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডেমরার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। রুবেল তখন একটি গাড়ি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
বাংলাদেশের গায়ক হলেও নোবেল খ্যাতি অর্জন করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি বাংলা চ্যানেলের গানবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’ থেকে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় জিততে না পারলেও তৃতীয় হন নোবেল, আর নিজের সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে খুব সহজেই দুই দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি।
এরপর থেকে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেও এই আলোচিত গায়কের সুখ্যাতি নিমেষেই নষ্ট হয়ে যায় তার ব্যক্তিগত জীবন সবার সামনে আসার পর। স্ত্রীকে মারধর, মাদক সেবন, মদের ঘোরে ভাঙচুর, টাকা নিয়ে শো করতে না যাওয়া—এমন নানা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হন নোবেল।
২০১৯ সালে মেহরুবা সালসাবিল মাহমুদের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। পরবর্তীতে খ্যাতির মধ্যে থাকা অবস্থায় নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিক্ততা শুরু হয় স্ত্রীর সঙ্গে, যার শেষ পরিণতি হয় বিচ্ছেদ।
২০২৩ এর নভেম্বরে অন্যের স্ত্রী ফারজানা আরশির সাথে অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করে নোবেল সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন তিনি আবারও বিয়ে করেছেন। পরবর্তীতে ফারজানা আরশি পুলিশের কাছে গায়কের নামে অভিযোগ দায়ের করে জানান যে নোবেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি, জোর করে গোপালগঞ্জের বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এরপরে মাদক খাইয়ে ওই অন্তরঙ্গ ছবিগুলো তোলা হয়েছিলো।
ব্যক্তিগত জীবনের বাইরেও একই বছর শরীয়তপুরের একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে অর্থ নিয়েও না যাওয়ায় ঢাকার মতিঝিল থানায় প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয় নোবেলের বিরুদ্ধে।
২০২৪ সালে বেশ কিছু মাস রিহ্যাবে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর নোবেল সম্প্রতি আবারও গানের জগতে ফিরে এসেছিলেন এবং বেশ কিছু নতুন গানের কাজ করছিলেন।
নাশকতার পরিকল্পনা ও সামাজিকমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া সৈনিক নাঈমুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগীকে রাজধানীর খিলক্ষেতের বটতলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বিভিন্ন সামরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নাঈমুল ইসলামকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনুষঙ্গিক আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কতিপয় বরখাস্ত বা অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্যকে সঙ্গে নিয়ে নাঈমুল বিভিন্ন গণমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়াসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা করে আসছিলেন।
এতে আরও বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আগামীকাল রোববার (১৮ মে) ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশপথে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, এ ধরনের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল আজ বেলা দুইটার দিকে খিলক্ষেতের বটতলা বাজার এলাকায় নাঈমুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। এ সময় নাঈমুল তার কিছু সহযোগীকে নিয়ে উপস্থিত এক সেনাসদস্যের ওপর দেশি অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালান। তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্প থেকে একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাঈমুল ও তাঁর দুই সহযোগীকে আটক করে।
রাজধানীতে 'লও ঠেলা' নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় ৯ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুর থানার রায়ের বাজারের মেকাপ খান রোডে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
গ্রেফপ্তাররা হলেন— মো. জোবায়ের ওরফে যুবরাজ (২২), মো. হাসান (১৯), মো. রায়হান (২৭), মো. ওয়াসিম (২৫), মো. আনোয়ার হোসেন রাজু (৩২), মো. নুরুল আমিন (১৮), মো. কামাল হোসেন (২২), মো. শাহিন (২৮) ও মো. মেহেদী হাসান (২৫)।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি চাপাতি ও চারটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।
মোহাম্মদপুর থানা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার মেকআপ খান রোডে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ভয়ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। পরে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জব্দ করা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুর থানা এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় ছিনতাইসহ ত্রাস সৃষ্টি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল গ্রেপ্তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা নিশ্চিত করতে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সঙ্গে জনসাধারণের যোগাযোগের জন্য হালনাগাদ যোগাযোগ নম্বর প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
আজ মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যে আপডেটেড নম্বরসমূহে যোগাযোগ করুনঃ
১। গাজীপুর, কোনাবাড়ী, পূবাইল, কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, টঙ্গি, কাপাসিয়া, কালিগঞ্জ, কাশিমপুর, শ্রীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বন্দর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং গজারিয়া।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৯৫১৯৮, খ। ০১৭৬৯-০৯৫২৫০, গ। ০১৭৬৯-০৯১০২০।
২। ডেমরা, ওয়ারী, রমনা, শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, শাহজাহানপুর, কোতোয়ালী, বংশাল, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর এবং কদমতলী।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৯২৪২৮, খ। ০১৭৬৯-০৯৫১৯৮, গ। ০১৭৬৯-০৯৫২৫০,
ঘ। ০১৭৬৯-০৯১০২০।
৩। সাভার, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, হেমায়েতপুর, বাইপাইল, দোহার, গাজীপুর, মৌচাক এবং মানিকগঞ্জ।
যোগাযোগের নম্বরসমূহ
ক। ০১৭৬৯-০৯৫২০৯, খ। ০১৭৬৯-০৯৫১৯৮, গ। ০১৭৬৯-০৯৫২৫০,
ঘ। ০১৭৬৯-০৯১০২০।
৪। ফরিদপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ এবং শরীয়তপুর।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৯৩৫০৯, খ। ০১৭৬৯-০৯৫১৯৮, গ। ০১৭৬৯-০৯৫২৫০,
ঘ। ০১৭৬৯-০৯১০২০।
৫। বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, দক্ষিন খান, উত্তরখান, উত্তরা পূর্ব।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০২৫৭৬৬, খ। ০১৭৬৯-০২৫৭৬৯, গ। ০১৭৬৯-০২৫৮৬৫,
ঘ। ০১৭৬৯-০২৫৭৬৭।
৬। মিরপুর মডেল থানা, মিরপুর-২, ৬, ৭, ১০, দুয়ারীপাড়া, রুপনগর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মনিপুর।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৫০৭১০, খ। ০১৭৬৯-০৫০৬৯৩, গ। ০১৭৬৯-০৫০৬৯৫,
ঘ। ০১৭৬৯-০৫০৬৯৬।
৭। উত্তরা তুরাগ থানা ও উত্তরা পশ্চিম থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৮২৮৩৬, খ। ০১৩১৮-৩৭১৫৫৪, গ। ০১৩১৮-৩৭১৫৫৫।
৮। দারুসসালাম থানা এবং শাহআলী থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৩৩৭০০,খ। ০১৭৬৯-০৩৩৭০২, গ। ০১৭৬৯-০৩৩৭০৪।
৯। গুলশান, বনানী, ভাটারা এবং বাড্ডা থানা
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯০৫০২৮৩, খ। ০১৭৬৯০১১৫৫৯।
১০। খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানা
যোগাযোগের নম্বরঃ
ক। ০১৭৬৯০৫৩১৪৪।
১১। রামপুরা, সবুজবাগ এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা
যোগাযোগের নম্বরঃ
ক। ০১৭৬৯০৫৩১৬৮।
১২। ক্যান্টনমেন্ট, কাফরুল, ভাসানটেক।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯-০৫১৮২৫, খ। ০১৭৬৯-০১৯০৭৩, গ। ০১৭৬৯-০১৩২৩৬।
১৩। হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, কলাবাগান এবং নিউমার্কেট থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৮৯৭৯১৪৮৬২, খ। ০১৮৯৭৯১৪৮৬৩, গ। ০১৮৯৭৯১৪৮৬৪,
ঘ। ০১৮৯৭৯১৪৮৬৫, ঙ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৮, চ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৯।
১৪। শের-ই-বাংলা নগর, আদাবর এবং মোহাম্মদপুর থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৮১৫৭৯৫৯৫১, খ। ০১৭৬৯০৫৯৮৮৮, গ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৮
ঘ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৯।
১৫। তেজগাঁও থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯০১৯৪০৯, খ। ০১৭৬৯০১৯৪১৫, গ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৮
ঘ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৯।
১৬। লালবাগ, চকবাজার এবং কামরাঙ্গীরচর থানা।
যোগাযোগের নম্বরসমূহঃ
ক। ০১৭৬৯০১৩৪৩৯, খ। ০১৬১৯৮৩২০৬৯, গ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৮
ঘ। ০১৭৬৯০৫১৮৩৯।
দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ জনগণকে যেকোন সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য প্রদান করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানানো হয়।
মন্তব্য