মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীর নিহত হওয়ার মামলায় বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান বাসচালক জামির হোসেন।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তির আগেই কারাবন্দি অবস্থায় ২০২০ সালের ১ আগস্ট মারা যান জামির। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার সময়ে ঈদের দিন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, পরে রাজধানীর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনার জন্য জামির হোসেনকে দায়ী করে বিচারিক আদালত যাবজ্জীবন সাজা দেয়ার পাশাপাশি আরেকটি মামলায় তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিবাদীদের আপিল শুনানির অপেক্ষায়।
এ ছাড়া মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে করা ক্ষতিপূরণের আরেকটি মামলা হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ওই দুর্ঘটনার ১১ বছর পরও তিনটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি আদালতে। বাসচালক জামিরও মারা গেছেন দুই বছর আগে। তার সাজার বিরুদ্ধে আপিল এবং ক্ষতিপূরণের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কবে হতে পারে, সে বিষয়ে বাদী-বিবাদী কোনো পক্ষেরই ধারণা নেই।
সারা দেশকে নাড়া দেয়া ২০১১ সালের ওই সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর ছাড়াও তাদের মাইক্রোবাসচালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন মারা যান। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল-মামুনসহ আহত হন পাঁচজন।
দুর্ঘটনার জন্য বিচারিক আদালতে জামির দোষী সাব্যস্ত হলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সামছুল হকের একটি অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে, বাসচালক জামির ছিলেন ‘নির্দোষ’।
সরেজমিন অনুসন্ধান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ড. সামছুল হক বলছেন, সেদিন রাস্তায় সঠিক লেনেই ছিল জামিরের বাস। একটি বাঁকের মুখে তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসার কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা জামিরের বাসটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
বিচারিক আদালতে ওই দুর্ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটি ঘটেছিল বলেও মনে করছেন অধ্যাপক ড. সামছুল হক। এ কারণে হাইকোর্টে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। সাক্ষী হিসেবে তার নাম আদালতে দাখিলও করেছে বিবাদীপক্ষ। তবে এরপর বিষয়টিতে আর কোনো গতি নেই।
বাসচালক জামির হোসেনের স্ত্রী রাশিদা বেগমের অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। সপ্তাহখানেক আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর তাকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা বলছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্বজনদের দাবি, স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স বাসের মালিক মুজিবুল হক খোকন জানিয়েছেন, মামলার পেছনে ছুটতে ছুটতে তিনি এখন প্রায় সর্বস্বান্ত। নানান শারীরিক জটিলতায় প্রায় দুমাস ধরে তিনি শয্যাশায়ী।
কী আছে ড. সামছুল হকের অনুসন্ধানে
মর্মান্তিক ওই সড়ক দুর্ঘটনাটি নিয়ে নিউজবাংলার কাছে গত বছর নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিলেন অধ্যাপক সামছুল হক। সে সময় তিনি বলেন, ‘তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা। ওই দুর্ঘটনার পর পরই আমি এর কারণ গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে শুরু করি। অনুসন্ধানের একদম শুরুতে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক আমাকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছিলেন।
‘তারা প্রথম দিনে ঘটনাস্থলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি আমাকে পাঠিয়েছিলেন। কিছু ছবি তোলা হয়েছিল উঁচু গাছ থেকে, যেগুলো আমার কাছে ছিল সারকামসটেন্সিয়াল এভিডেন্সের মতো। সেসব ছবি দেখে আমি বুঝেছিলাম, এখানে অনেক কিছু বলার মতো বিষয় লুকিয়ে আছে।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছ থেকে আরও বেশ কিছু কনটেন্ট পেয়েছিলাম। এর মধ্যে একটি ভিডিও ছিল, যেখানে বাসের উইন্ডশিল্ডের কাছে বসা একজন নারীর কথা ছিল। তার সাবলীল বিবরণ থেকে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেক নতুন কিছু পাওয়ার আছে।’
ড. সামছুল হক নিজেও পরদিন দুর্ঘটনাস্থলে যান। বিভিন্ন আলামত নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি কথা বলেন স্থানীয় লোকজন ও তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘একে একে বিভিন্ন বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল, সেই সঙ্গে সাধারণ বিবরণের মধ্যে গোঁজামিলগুলোও ধরা পড়ছিল। তখনও আমি দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটি ভালোভাবে দেখতে পারিনি। ওটা একদম চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিল। মাইক্রোবাসে কে কার পাশে বসেছিলেন, সেটা তখনও আমি জানতাম না।’
তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানের পাশাপাশি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের অপেক্ষা করছিলাম। তিন সদস্যের এ কমিটির সঙ্গে আমার একজন সাবেক ছাত্রও যুক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। একই সঙ্গে আমার কাছে যেসব তথ্য-প্রমাণ ছিল, সেগুলো একসূত্রে গাঁথার চেষ্টা করছিলাম। তবে এর মধ্যে খণ্ড খণ্ড বেশ কিছু মিসিং লিংক ছিল।
‘এর মধ্যেই ডেইলি স্টারে তারেক মাসুদের সহকারী মনীশ রফিকের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। মনীশ ছিলেন মাইক্রোবাসচালকের ঠিক পাশের আসনে; দুর্ঘটনায় তিনিও সামান্য আহত হন। মনীশের বক্তব্য থেকে এমন কিছু বিষয় পাই, যেটি আমার প্রাথমিক অনুসন্ধানকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।’
ড. সামছুল হক বলেন, ‘সাধারণভাবে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে গাড়ির হার্ড ব্রেক কষার কথা। হার্ড ব্রেক অ্যাপ্লাই করলে রাস্তায় একটি স্পিড মার্ক পাওয়া যায়। আর সেই স্পিড মার্ক পেলে গাড়ির আসল অবস্থান চিহ্নিত করা যায়। অথচ আমি রাস্তায় কোনো স্পিড মার্ক পাইনি।
‘আমরা যারা দুর্ঘটনা বিষয়ে কাজ করি, তাদের কাছে বিষয়টি গোলমেলে। আমি তখন ভাবার চেষ্টা করছিলাম, বৃষ্টির কারণেই রাস্তায় হয়তো স্পিড মার্ক নেই। তবে সেটা মিলছিল না। স্পিড মার্ক এমন একটি বিষয় যার কোনো না কোনো চিহ্ন থাকবেই। কারণ এ সময় চাকার প্রচণ্ড ঘর্ষণে রাস্তার পাথরকুচি উঠে যায়।’
তিনি বলেন, ‘তাহলে কেন এ ধরনের চিহ্ন নেই- সেটি নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। অবশেষে সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল মনীশ রফিকের সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেছিলেন, সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। মাইক্রোবাসের পেছন দিকে যাত্রীরা মুখোমুখি বসে তুমুল আড্ডায় মেতেছিলেন। তার কথার প্রতিটি বিষয় আমার সামনে একেকটি চিত্র তৈরি করছিল। মাইক্রোবাসে মুখোমুখি কী করে বসা যায়! তার মানে সেটির আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। মনীশ আরও বলেন, হঠাৎ একটি বাস দৈত্যের মতো তাদের মাইক্রোবাসে আঘাত করে।’
এই ‘হঠাৎ’ শব্দটি অনেক প্রশ্নের জবাব পাইয়ে দেয় ড. সামছুল হককে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ হলেই তো গাড়ির স্পিড মার্ক পাওয়া যায় না! কিছু দূর আগে থেকে দেখতে পেলেও হার্ড ব্রেক কষা সম্ভব, কিন্তু কী এমন পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়েছিল যে কারণে বাসটিকে তারা হঠাৎ দেখতে পেলেন!’
এরপর আবার দুর্ঘটনাস্থলে যান ড. সামছুল হক। এ সময় স্থানীয় একজনের বক্তব্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া পত্রিকায় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বক্তব্য ছাপা হয়।
এসব থেকে পরিষ্কার হয়, দুর্ঘটনার ঠিক কিছু আগে একটি বড় বাস রাস্তার বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিকশাকে ওভারটেক করে। ওই বাসটির পিছু পিছু একই দিকে যাচ্ছিল তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাস। ওই বাসটির পিছু নিয়ে তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাসটি অটোরিকশাকে একইভাবে ওভারটেক করতে বাঁকের মুখে নিজের ডান লেনে চলে গিয়েছিল। এ সময়েই বাঁকের বিপরীত দিক থেকে আসা জামির হোসেনের বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষ হয়।
ড. সামছুল হক বলেন, ‘অটোরিকশাকে ওভারটেক করা বাসটির চালক কিন্তু বাঁকের অন্য প্রান্তে বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটিকে দেখতে পেয়েছিলেন। এর পরও তিনি ক্যালকুলেটেড (হিসাব করা) ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাকে ওভারটেক করে আবার নির্ধারিত বাম লেনে বাসটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। মহাসড়কে চলাচলকারী বাস-ট্রাক সাধারণত এ ধরনের হিসাবি ঝুঁকি নিতে অভ্যস্ত।
‘তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাসটিও সামনের বাসটিকে অনুসরণ করে ডান লেনে চলে যায়। তবে একজন শহুরে চালকের জন্য কাজটি ছিল মারাত্মক ভুল। সামনের বাসের মতো তিনি আর মাইক্রোবাসকে আবার বাম লেনে নিতে পারেননি। আর এই ভুলের কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটির সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়।’
বিপরীত দিকের বাসের চালক জামির বাঁকের মুখে নিজের সঠিক বাম লেনেই ছিলেন বলে মনে করছেন ড. সামছুল হক।
তিনি বলেন, ‘উল্টো দিকে আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসা মাইক্রোবাসের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসচালক জামির হোসেনের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কারণ বাঁকের উল্টো দিক থেকে তিনি মাইক্রোবাসটিকে দেখতেই পাননি। আর এ জন্যই সেই হঠাৎ দুর্ঘটনা, যেখানে বাসচালক ব্রেক কষারও সময় পাননি।’
দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটিকে বিধ্বস্ত অবস্থায় রাস্তায় এর বাম দিকের লেনে পাওয়া যায়। ফলে মামলার রায়ে বিচারিক আদালতের বিচারক বিষয়টির উল্লেখ করে বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে মাইক্রোবাসটি তার সঠিক লেনেই ছিল।’
তবে ড. সামছুল হক বলেন, এখানে বোঝার ভুল আছে। বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা ড. সামছুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, “সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে আমি দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটির টার্মিনাল পজিশনের বেশ কিছু ছবি পেয়েছিলাম। একটি দুর্ঘটনাকে বিশ্লেষণের জন্য ‘টার্মিনাল পজিশন’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা হলো দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটির চূড়ান্ত অবস্থান।”
তিনি বলেন, “এখানে লক্ষ করার বিষয় হলো, একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর কোনো মাইক্রোবাস যদি তার ‘সঠিক’ লেনে থাকে (যদিও সে অবস্থানটিও ছিল রাস্তার মাঝ বরাবর), তাহলে ধরে নিতে হবে দুর্ঘটনার আগের চিত্র ছিল অন্যরকম। কারণ একটি বাসের যে ভর ও গতি, তাতে সংঘর্ষের পর মূল অবস্থান থেকে মাইক্রোবাসটির বেশ কিছুটা দূরে সরে যাওয়ার কথা। মাইক্রোবাসের জীবিত আরোহীদের বক্তব্যেও সেটি জানা গেছে। ফলে দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটিকে রাস্তার মাঝ বরাবর পাওয়ার অর্থ হলো, প্রকৃতপক্ষে সেটি রং সাইডে ছিল। ধাক্কা খাওয়ার পর এর টার্মিনাল পজিশনটি পাওয়া গিয়েছিল মধ্যরাস্তায়।
“আর দুর্ঘটনার আগে মাইক্রোবাসটি সত্যিই নিজের বাম লেনে থাকলে ধাক্কা খাওয়ার পর সেটির রাস্তার কিনারায় বা রাস্তার পাশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। এটাই হলো বিজ্ঞান। অথচ বিচারপ্রক্রিয়ায় এই বিজ্ঞানকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।”
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসের অবস্থা দেখে পরিষ্কার বোঝা গেছে, বাসের সঙ্গে এর আংশিক মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। ডিভাইডারবিহীন একটি সড়কে এ ধরনের আংশিক মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে হলে দুটি যানের যেকোনো একটিকে রং সাইডে থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোবাস ও বাসের অবস্থান এবং সংঘর্ষে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দেখে পরিষ্কার বোঝা যায়, মাইক্রোবাসটিই ওভারটেক করতে গিয়ে রং সাইডে ছিল। দুর্ঘটনার পর সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি ও মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রতিবেদনেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। তবে মামলার বিচারের ক্ষেত্রে সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।’
দুর্ঘটনার জন্য সে সময় রাস্তার ‘অবৈজ্ঞানিক’ বাঁককেও দায়ী করছেন ড. সামছুল হক।
তিনি বলেন, ‘১১ ফুট প্রশস্ত ওই রাস্তায় কোনো বাঁক থাকলে রাস্তার বক্রতার ধরন অনুসারে অংশটি অন্তত ১৩ ফুট চওড়া হওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তবে তা ছিল না। একই সঙ্গে বাঁকটিতে গাছপালা থাকায় দৃষ্টিসীমা ছিল একদম কম।
‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যেসব ব্ল্যাকস্পট ছিল, এই বাঁকটি তার একটি। মানিকগঞ্জের জোকায় তখন প্রতি বছর তিনটির বেশি করে দুর্ঘটনা ঘটছিল। এখন সেখানে ডিভাইডার করা হয়েছে, রাস্তা চওড়া হয়েছে, ফলে এখন আর দুর্ঘটনা হচ্ছে না।’
ড. সামছুল হকের অনুসন্ধান যেভাবে ‘অন্ধকারে’
দুর্ঘটনার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দাঁড় করানোর পর সেটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের কাছে তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. সামছুল হক, তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে সবার অনীহা ছিল বলে অভিযোগ তার।
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরিস্থিতি পুনর্নির্মাণের পর আমি প্রেজেন্টেশনটি কিছু সাংবাদিককে দিয়েছিলাম। তবে সেটি কোথাও প্রকাশ করা হয়নি।
‘বাসচালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে একদিন ব্র্যাকে একটি সেমিনারে আমি অনুসন্ধানটি সবার সামনে উপস্থাপন করলাম। সেখানে ক্যাথরিন মাসুদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেনও ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সারা হোসেন বললেন, আমি যে বিষয়টি বের করেছি সেটির সঙ্গে তাদের ভিন্ন মত নেই, তবে তাদের ফাইন্ডিংস আলাদা। আমি তখন তাকে (সারা হোসেন) বললাম, আপনি আপনার জায়গা থেকে কখনই বাসচালকের বাইরে যেতে পারবেন না, কিন্তু আমার বিশ্লেষণের পরিসর আরও বিস্তৃত।’
ড. সামছুল হক বলেন, ‘এরপর সারা হোসেনের টিম আমার কাছে এসেছিল, আমাকে সাক্ষ্য দিতে মানিকগঞ্জের আদালতে যেতে বলা হয়েছিল। তবে আমি তখন বলেছিলাম, একজন শিক্ষক হিসেবে দিনের পর দিন আমার পক্ষে মানিকগঞ্জে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া আমি তখন ভেবেছিলাম, আদালত নিশ্চয়ই দুর্ঘটনার সব দিক চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করেই রায় দেবে।’
২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রায়ে জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। রায়ের পর জামিরকে প্রথমে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার ও পরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় চমকে যান ড. সামছুল হক। সিদ্ধান্ত নেন, উচ্চ আদালতে তিনি অনুসন্ধানের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। এ জন্য যোগাযোগ শুরু করেন বিভিন্ন মহলে।
তিনি বলেন, ‘একটি সড়ক দুর্ঘটনার বিচার ও সাধারণ বিচারের মধ্যে যে মাত্রাগত পার্থক্য থাকা প্রয়োজন, সেটি রায়ে দেখতে পাইনি। মনের মধ্যে ছটফট অবস্থা তৈরি হলো। পুরো বিষয়টি আবার নতুন করে কীভাবে সবার সামনে আনা যায়, সেই চেষ্টা শুরু করলাম। মিডিয়া শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে রক্ষণশীলতা দেখাচ্ছিল, ফলে সেখানকার অনেকেই গুরুত্ব দিতে চাইলেন না। কেউ কেউ এমনও বললেন, আমি বাসচালকের পক্ষে কাজ করছি।
‘তবে আমি বারবারই বলেছি, এখানে বিজ্ঞান কথা বলছে, আমি নিজে কিছু বলছি না। এটা কার পক্ষে যাচ্ছে বা বিপক্ষে যাচ্ছে, সেটা কোনো বিষয় নয়।’
ড. সামছুল হক জানান, একপর্যায়ে ২০২০ সালের শুরুতে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।
তিনি বলেন, ‘আমার শুধু মনে হচ্ছিল, একটি অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। সেটা জেনেও চুপ করে থাকা আরও ঘোরতর অন্যায় হবে। এ কারণে আমি নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করেছিলাম।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সামনে দেড় ঘণ্টার একটি প্রেজেন্টেশন দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভূমিকা দেয়ার পর তাকে চারটি বা পাঁচটি দিক থেকে ভুল দেখাচ্ছিলাম। মন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম, জামিরের বাস বেপরোয়া গতিতে চলছিল বলা হলেও বাস্তবে এর গতি ছিল নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যেই। আইনমন্ত্রী প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়ার সমস্যাটি ধরে ফেললেন। উনি বললেন, সড়ক দুর্ঘটনার মতো বিষয়গুলোকে সাধারণ মামলার মতো করে বিচার করা তো মোটেই ঠিক হচ্ছে না।
‘আমি উচ্চ আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। তবে তখনই জানলাম, কোনো মামলা উচ্চ আদালতে যাওয়ার পর নতুন করে সাক্ষী যুক্ত করা যায় না। এটা করতে হলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।’
এরপর বিবাদীপক্ষ হাইকোর্টে ড. সামছুল হককে সাক্ষী হিসেবে পক্ষভুক্ত করার আবেদন করে। তবে করোনা মহামারির কারণে সেই আবেদনের শুনানি তখন হয়নি। এখনও সেটি সেখানেই আটকে আছে। এরই মধ্যে ২০২০ সালের ১ আগস্ট কারাগারে মারা যান বাসচালক জামির হোসেন।
ড. সামছুল হক বলেন, ‘বৈশিষ্ট্যগত নানান কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা আর সব ঘটনা থেকে আলাদা। একটি হত্যাকাণ্ডের বিচারে যেমন শুধু সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়, সেখানে সড়ক দুর্ঘটনার বিচারে সাক্ষীর বাইরেও পারিপার্শ্বিক আরও অনেক কিছু বিবেচনায় নেয়া দরকার।’
তিনি বলেন, “জামিরের মামলায় আদালত ‘সর্বোৎকৃষ্ট সাক্ষী’ হিসেবে যাদের বিবেচনা করেছে, তারা সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী৷ দুর্ঘটনার সময় তারা হয় উল্টো দিকে ঘুরে আড্ডা দিচ্ছিলেন, নয়তো ছিলেন একদম পেছনের সিটে। অথচ যিনি মাইক্রোবাসচালকের একদম পাশের সিটে ছিলেন, সেই মনীশ রফিকের সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। কোনো বাসযাত্রী বা স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যও গুরুত্ব পায়নি।”
জামিরকে যাবজ্জীবনের রায়ে যা বলেছিলেন বিচারক
বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনকে হত্যার দায়ে বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর রায় ঘোষণার পর পরই কারাগারে পাঠানো হয় জামিরকে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কয়েক দিন পরই জামির হোসেন মেহেরপুর গাংনীর চৌগাছা থেকে গ্রেপ্তার হন। তবে কয়েক মাস পরই জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়ার দিন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন।
রায় ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিচারক দণ্ড ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ‘নির্লিপ্ত’ দেখা যাচ্ছিল জামিরকে। রায়ের পর পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে কারাগারে পাঠায়।
বিচারক আদেশে বলেন, ‘জামির হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৪২৭ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাকে ৩০৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হলো। আর দণ্ডবিধির ৪২৭ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।’
আসামির উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলেও আদেশ দেন বিচারক।
বিচার চলার সময় ৩২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। এর মধ্যে ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা। আসামির পক্ষে দুজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।
বিচারক রায়ে বলেন, ‘এজাহার, অভিযোগপত্র, খসড়া মানচিত্র, বিআরটিএর চিঠি, জব্দ করা ভুয়া ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীর অভিন্ন ও অকাট্য সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, আসামি বাসটিকে বৃষ্টি ও বাঁকের মধ্যে অবহেলার সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে একটি মিনিবাসকে ওভারটেক করে মাইক্রোবাসটিকে নির্মমভাবে আঘাত করেন। ফলে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচটি তরতাজা প্রাণ ঝরে যায়। আসামির বেপরোয়া আচরণ ও অবহেলার কারণেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়।’
আসামির পক্ষে আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দেন চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটির যাত্রী শাহনেওয়াজ রয়েল ও অধ্যাপক নাসরিন আশরাফী।
তবে বিচারক রায়ে বলেন, ‘তাদের কেউই ওই বাসের যাত্রী হওয়ার প্রমাণ হিসেবে বাসের টিকিট আনেননি। এ দুজন সারা জীবনে এবং ঘটনার পর থেকে অসংখ্যবার বাসে ওঠার কথা। একটি নির্দিষ্ট দিনে কোন বাসে উঠেছিলেন তা মনে রাখা দুঃসাধ্য। তারা যদি ঘটনার পর কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিতেন, তাহলে অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য হতো।
‘এ ছাড়া শাহনেওয়াজ সাক্ষ্য দেয়ার সময় বলেছেন, দুর্ঘটনাস্থলে কোনো বাঁক নেই। আর তিনি ছিলেন বাসের বাঁ দিকে চার আসন পেছনে। ফলে ডান দিকের বিষয় দেখা সম্ভবপর নয়। আর নাসরিন আশরাফীও বলেছেন, সেখানে বাঁক ছিল না। তার চশমার পাওয়ার ৩.৫০। ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির একজন বয়স্ক মহিলার পক্ষে দীর্ঘদিনের আগের বৃষ্টির মধ্যে সংঘটিত কোনো ঘটনার সঠিক বিবরণ দেয়া আদৌ সম্ভবপর নয়।’
মাইক্রোবাসের বেঁচে যাওয়া আরোহীরা যা বলছেন
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন চিত্রশিল্পী ঢালী আল মামুন।
গত বছর তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাইক্রোবাসটি ছিল তারেকের, যেটা শুটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হতো। সেদিন আমরা ঢাকায় ফিরছিলাম। চালকের পরের সিটটা ব্যাক টু ব্যাক করা ছিল। তার পরের সিটটা যেভাবে থাকে, সেভাবেই ছিল। আমরা পাঁচজন সামনাসামনি বসেছিলাম।
‘তারেক আর ক্যাথরিন চালকের পেছনে ছিল। আর উল্টো দিকে মিশুক আমার ডান পাশে ছিল; বাঁ পাশে ছিল আমার স্ত্রী। সামনে দুই জন ছিল। তার মধ্যে একজন ছিল তারেকের সহকারী পরিচালক। আমরা মোট ১০ জন ছিলাম।’
দুর্ঘটনার সময়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল, সে কারণে আমাদের গাড়ির গতি ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের বেশি ছিল না। আমরা তখন একটি খাবার দোকান খুঁজছিলাম। সে কারণে গাড়ি স্লো ছিল। আমাদের গাড়ি কখনোই রাস্তার সাদা লাইন ক্রস করেনি।
‘দুর্ঘটনায় গাড়িতে ডান পাশে বসা পাঁচজন স্পট ডেট হয়। আর বাকিরা আহত হই। তার মধ্যে আমার অবস্থা সব থেকে খারাপ ছিল। পরে আমাকে ব্যাংকক নিয়ে যেতে হয়েছিল।’
অন্যদিকে মাইক্রোবাসে থাকা প্রডাকশন কন্ট্রোলার সাইদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা লোকেশন দেখে ফিরছিলাম। মোটামুটি একটা লেভেলে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি গাড়ির একেবারে পেছনের সিটে হাতের বাম পাশে ছিলাম। সামনের সিটগুলা ঘোরানো ছিল। চালকের পাশে বসা ছিলেন মনীশ রফিক। উনি কিছুই দেখেননি, কিছুই বলতে পারেননি। তার কারণ উনি পেছনের দিকে তাকানো ছিলেন।’
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যেখানে বসা ছিলাম সেখান থেকে একদম পরিষ্কার সামনে দেখা যাচ্ছিল। তারেক ভাই এবং ক্যাথরিন আপার মাঝখান দিয়ে একটা ফাঁকা ছিল। সেখান দিয়ে সামনে দেখা যাচ্ছিল। সে সময় তারেক ভাই কথা বলছিলেন। আমি দেখলাম, আমাদের সামনে একটা ছোট পিকআপের মতো আছে। দেখলাম একটা ছোট মিনিবাস আমাদের অপর দিক থেকে আসছে। আমরাও ওই পিকআপটার পেছনে আছি। এ সময় পেছন থেকে একটা বড় বাস আমাদের কাছাকাছি এসেছে।
‘আমাদের গাড়ি তখন বাম পাশে যে সাদা দাগ থাকে তার মধ্যেই ছিল। যখন আমাদের গাড়িটি কার্ব হয়ে ঢুকছিল, তখন উল্টো দিক থেকে একটা বাস এসে সজোরে ধাক্কা দেয়। তখন আমি দুই সিটের মাঝখানে যে জায়গা থাকে সেখানে পড়ে যাই। এরপর আমার আর কিছু মনে নাই। পরে আমাকে যারা তুলেছে তারা বলেছেন, আমার ওপর তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর পড়েছিলেন। ক্যাথরিন আপা আমাকে নাকি টেনে বের করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।’
ঝুলে আছে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি
আলোচিত ওই দুর্ঘটনার পর ঘিওর থানার তখনকার উপপরিদর্শক লুৎফর রহমান একটি মামলা করেন। অন্যদিকে ঘটনার দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাসমালিক, চালক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলা করেন।
পরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বার্থে হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করলে ক্ষতিপূরণের মামলা দুটি হাইকোর্টে চলে আসে।
দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।
ক্ষতিপূরণের অর্থের মধ্যে বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) তিন মালিকের ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫২ টাকা, বাসচালক জামির হোসেনের ৩০ লাখ টাকা এবং রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৮০ হাজার টাকা দেয়ার কথা। এ টাকা ক্যাথরিন মাসুদ, তারেক মাসুদের ছেলে নিষাদ মাসুদ ও বৃদ্ধা মা নুরুন নাহার পাবেন বলে রায়ে বলা হয়।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বাস মালিকপক্ষ, সেটি এখন আপিলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
ক্ষতিপূরণের মামলার শুনানির বিষয়ে তারেক মাসুদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগে যে আপিলটা পেন্ডিং আছে, সেটি যাতে শুনানি হয় সে বিষয়ে আমরা অবশ্যই উদ্যোগ নেব। এত বছর হয়ে গেছে আমরা শেষ করতে পারছি না। এ মামলাটি শুধু তারেক মাসুদের পরিবারের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে দুটো বিষয়- একটি হলো ক্ষতিপূরণের, আরেকটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দায়িত্বটা আসলে কী সেটি। এ প্রশ্নগুলো কিন্তু আদালতের সামনে উত্থাপিত হয়েছে। এখন আদালতের রায়ের মাধ্যমে যদি এ প্রশ্নের সুরাহা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য একটা বড় উপকার হবে। তার কারণ হলো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দায়দায়িত্ব নিলে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আমরা দেখতে পারব।’
সারা হোসেন জানান, তারেক মাসুদের মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারের অপেক্ষায় আছে। আর মিশুক মুনীরের মামলাটি হাইকোর্টে তালিকাভুক্ত ছিল ঈদের আগে।
তিনি বলেন, ‘সেখানে প্রক্রিয়াগত একটা সমস্যা হয়েছে যে, বাসের চালক মারা গেছেন। এখন তার উত্তরসূরিদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেটা নিয়ে এখন কাজ চলছে। এটা হয়ে গেলে হাইকোর্টে এ মামলাটির শুনানি হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাস মালিক খুবই অসুস্থ। মৃত্যুপথযাত্রী। এ মামলায় এখন আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।’
জামিরের স্ত্রী জীবন সংকটে, বাসমালিক অসুস্থ
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে যাওয়ার পর বাসচালক জামির হোসেন মারা যান ২০২০ সালের ১ আগস্ট। পরিবার এখন কেমন আছে জানতে রোববার তার স্ত্রী রাশিদা বেগমের নম্বরে ফোন করা হলে সেটি ধরেন সুমি নামে এক নারী।
সুমি নিজেকে বাড়ির ভাড়াটিয়া পরিচয় দিয়ে জানান, রশিদা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার দেখাশোনা করতে মেয়ে আরিফা খানম জ্যোতি ও জামাই ইব্রাহিম হোসেনও হাসপাতালে আছেন।
এরপর ইব্রাহিম হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমার শাশুড়ি স্ট্রোক করেছেন। এখন তিনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার অবস্থা ভালো না। বলা যায় তিনি এখন মৃত্যুশয্যায়।’
জামির হোসেনের মৃত্যুর পর থেকেই তার স্ত্রী বিভিন্ন অসুস্থতার মধ্যে ছিলেন বলে জানান ইব্রাহিম।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সোমবার সকাল ৯টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বেডে অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন রাশিদা। পাশে উদ্বিগ্ন তার একমাত্র মেয়ে জ্যোতি।
জ্যোতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক দুর্ঘটনায় আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেল। বাবা জেলে মারা গেলেন, আর মায়ের এই অবস্থা। চুয়াডাঙ্গায় অবস্থা খারাপ হলে মাকে গত ২৭ তারিখে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার বলেছেন, ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। আরও কিছু সমস্যা আছে।
‘মাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছি। আমরা খুব খারাপ পরিস্থিতিতে আছি। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’
রাশিদার চিকিৎসা চলছে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আক্রামুজ্জামান মিন্টুর তত্ত্বাবধানে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোগীর ব্রেইনে ছোট্ট একটি স্ট্রোক করেছে। তার শরীরে লবণের ঘাটতি ছিল। রক্তে ইনফেকশন আছে। সব মিলিয়ে তিনি ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতিতে আছেন। আমরা বেডে রেখে তাকে অবজার্ভ করছি। লবণ কারেকশন করা হচ্ছে।
‘রক্তে ইনফেকশনের জন্য উচ্চ ক্ষমতার অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছি। আর জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করছি। বেড ফাঁকা হলে আমরা তাকে হাই ডিপেডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) নিয়ে যাব। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছি।’
রাশিদার সঙ্গে গত বছরের আগস্টে কথা বলেছিল নিউজবাংলা। সে সময় তিনি জানান, মানিকগঞ্জের দুর্ঘটনাটি ছাড়া জামির হোসেন আর কখনও বড় কোনো দুর্ঘটনার মুখে পড়েননি। ওই দুর্ঘটনার পর তাকে মেহেরপুরের গাংনীর চৌগাছা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তিনি তিন মাস জেলে ছিলেন। সে সময় বারবার বলতেন, তার কিছুই হবে না, কারণ তিনি নির্দোষ।
রাশিদা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্টের সংসার। কোনো জমিজমা নেই। খুব কষ্টে মামলার খরচ চালাতাম। তার ডায়াবেটিস ছিল, তেমন কিছু খেতে পারতেন না।’
আবেগাপ্লুত রাশিদা বলেন, ‘জেলে যাওয়ার পর চিন্তায় চিন্তায় আমার স্বামীর জীবনটা চলে গেল। সেই থেকে আমাদের বাড়ি থেকে আনন্দ চলে গেছে। কেউ আর হাসে না। যে যাবার সে চলে গেছে। এখন এসব বলে বা নিউজ করে কী হবে? তখন তো কেউ আসেনি।’
মানিকগঞ্জে দুর্ঘটনার পর স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন জামির হোসেন।
সেই সময়ের কথা জানিয়ে রাশিদা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনি কাঁপতে কাঁপতে বলেন, আমার গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি অনেকবার হর্ন দিছি। গাড়ি রাস্তার পাশের খাদের দিকে নিয়ে গেছি।
‘আমার গাড়িতে অনেক যাত্রী ছিল। মাইক্রোবাসটি ভুল পথে এসে দ্রুত আমার গাড়িতে ধাক্কা মেরে দিল। আমার গাড়ি রাস্তার ঠিক দিকেই ছিল। মনে হচ্ছে খুব দামি মানুষ এরা। আমি পরে কথা বলব।’
রাশিদা জানান, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পর মুষড়ে পড়েন জামির। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সুষ্ঠু বিচার পাইনি। আমি অপরাধী না হয়েও অপরাধী হলাম।’
জামির হোসেনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়া স্কুলপাড়া এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, দরিদ্র জীবনযাপন করতেন জামির। বসতভিটা ছাড়া কোনো জমিজমা নেই। ২০০৮ সালে মেয়ে আরিফা খানমকে বিয়ে দেন কলেজশিক্ষক ইব্রাহিমের সঙ্গে। জামিরের মৃত্যুর পর জামাতার বাড়িতেই ছিলেন রাশিদা বেগম।
অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের মালিক মুজিবুল হক খোকনও অসুস্থতার কারণে দুই মাস ধরে প্রায় শয্যাশায়ী। তিনি জানান, মামলার পেছনে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছুটতে ছুটতে এখন বলতে গেলে নিঃস্ব।
ক্ষতিপূরণ-সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে খোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ’মাঝে দুইবার তারিখ পড়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে আমার বাসের চালক জামিরের মৃত্যুর নথি তলব করেছে। সেই নথি এখনও আদালতে পৌঁছায়নি। ওই নথি এলে পরবর্তী কী হবে সেটা আমার আইনজীবী বলতে পারবেন।’
আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে আমি যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে আমার পক্ষ থেকে একজন যোগাযোগ করেছেন। এই মামলা থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সেটাই আমার চাওয়া। আর কতদিন এটা এভাবে ঝুলে থাকবে।’
তারেক মাসুদের পক্ষে ক্ষতিপূরণের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদনের বিষয়েও শুনানির কোনো তারিখ পড়েনি বলে জানান তিনি।
খোকন বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা হলো মামলাগুলো দ্রুত শুনানি শেষ হয়ে যেন চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটে। এটা তো আমাদের জন্য একটা বড় ব্যথার কারণ হয়ে আছে। আল্লাহই জানেন এটা থেকে কবে পরিত্রাণ পাব!’
মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার আশা ছাড়েননি ড. সামছুল হক
আলোচিত মামলাটির এখনও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে ড. সামছুল হক। তিনি চাইছেন, দুর্ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে উচ্চ আদালতে তার ডাক পড়বে।
ড. সামছুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক আগে বাসচালক জামির হোসেনের পক্ষ থেকে একবার আমার এনআইডি ও নামটাম নিয়েছিল। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নাই। এটাও অনেক আগে।’
সড়ক দুর্ঘটনার বিচারের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে প্রধান সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে প্রয়োজনে বিশেষ আইন করার দাবি তুলে তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় হওয়া মামলার বিচারের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সাক্ষ্য হিসেবে নেয়া উচিত, বিশেষ করে যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনায় সাক্ষী থাকে না।
‘এর কারণ চলন্ত অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীরা যে যেখানকার সেখানে চলে যান। ফলে এসব মামলায় সাক্ষী পাওয়া দুরূহ হয়। এমনকি মামলার বিচারেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। এ কারণে ঘটনায় দোষ কার, সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে পারলে দোষী শনাক্ত সহজ হবে।’
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি দেশে এ ধরনের বিশেষ আইন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও একটি হত্যা মামলার মতোই যেমন কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, চালক ব্রেক কষেছিল কি না, কত দূর থেকে কষেছিল, কে রং সাইডে ছিল, গাড়িটির শেষ অবস্থান কী- ইত্যাদি বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে হয়।
‘এটা তদন্ত কর্মকর্তা বা বাইরে থেকে কাউকে সাক্ষী বানিয়ে প্রমাণ করা যায় না। সব কিছু মিলিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণের জন্য একটা বিশেষ আইন করা হলে হয়তো সঠিকভাবে নিরূপণ করা সহজ হবে।’
এ মামলায় অধ্যাপক সামছুল হক পক্ষভুক্ত হয়ে সাক্ষ্য দেয়ার আগ্রহের বিষয়ে গত বছর আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রশ্ন করেছিল নিউজবাংলা। বিষয়টি তোলার পর মন্ত্রী বলেন, ‘এটার বিষয়ে আমার কোনো এখতিয়ার নাই। এটা হাইকোর্টের এখতিয়ার। হাইকোর্টে ওনারা দরখাস্ত দেবেন, হাইকোর্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’
আরও পড়ুন:দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য