× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
12 thousand tons of vegetables in one village
google_news print-icon

এক গ্রামে ১২ হাজার টন সবজি

এক-গ্রামে-১২-হাজার-টন-সবজি
তোলা সবজি বাছাই করে বাজারে নিয়ে ব্যস্ত কৃষকরা। ছবি: নিউজবাংলা
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার নাছরুল মিল্লাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় ধনপোতা গ্রামের কৃষকদের মৎস্য ঘেরের পাড়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি বীজ সরবরাহ করা হয়।’

মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, বেগুন, করলাসহ হরেক রকম সবজির ক্ষেতে কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। সবজি তোলা, সেগুলো বাছাই করে বাজারে নিয়ে যেতেই ব্যস্ত কেউ কেউ। কেউ আবার সবজির পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মাশকাটা ধনপোতা গ্রামের কৃষকরা।

গ্রামটি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নে। গ্রামটিতে বছরে উৎপাদিত হচ্ছে ১২ হাজার টন সবজি। আর এগুলো বিক্রি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে। এখান থেকেই বছরে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের ধনপোতা, খরিবনিয়া, চাকুলি ও কুমারখালী বিল। এই চার বিলের ১৪০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, বেগুন, করলা, তরমুজ, বাঙ্গিসহ নানা জাতের সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় চার শতাধিক কৃষক।

মৎস্য ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত এসব সবজিতে কোনো প্রকার রাসায়নিক, কীটনাশক ও সার দেয়া হয় না। প্রাকৃতিক বালাইনাশক ও জৈব সার ব্যবহার করে এসব সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানান এখানকার কৃষকরা।

ধনপোতা গ্রামের কৃষক জীবন পাল বলেন, ‘আমাদের এই গ্রামের আশপাশের চারটি বিলে আমরা চার শতাধিক কৃষক মৎস্য ঘেরে মাছ ও সবজি চাষ করি। আমরা মাছের ঘেরে লাইলে সবজি চাষ করার কারণে সবজিতে কোনো কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করি না। কারণ এ ধরনের কীটনাশক বা সার পানিতে পড়লে মাছ মারা যাবে।’

এক গ্রামে ১২ হাজার টন সবজি

তিনি বলেন, ‘আমি সবজির পাইকারি ব্যবসাসহ নিজের জমিতে উৎপাদিত সবজি ঢাকা, কুমিল্লা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার আড়তে বিক্রি করি। এই সবজি বিক্রির টাকা দিয়েই আমি একটি বাড়ি করেছি ও একটি মোটরসাইকেল কিনেছি। সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে আমার আয় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।’

একই গ্রামের কৃষক বাসু দেব বলেন, ‘রাসায়নিক সারের বদলে আমরা ভার্মি কমপোস্ট ও জৈব সার এবং কীটনাশকের বদলে নীম পাতার রস দিয়ে প্রাকৃতিক বালাইনাশক স্প্রে করি। এ ছাড়া মেহগনি গাছের ফলের বিজ দিয়ে স্প্রে করা হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে আমাদের চাষ করা প্রায় প্রতিটি সবজির ব্যাপক ফলন হচ্ছে। এতে আমাদের মাছের চেয়ে সবজিতে বেশি লাভ হচ্ছে।’

কৃষক মকবুল শেখ বলেন, ‘ফকিরহাট কৃষি অফিস থেকে আমাদের গ্রামের চার শতাধিক কৃষককে বিভিন্ন সময় মাছের ঘেরে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষি অফিসার এসে আমাদের হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে উচ্ছ ফলনশীল বীজ। সব মিলিয়ে সবজি চাষে আমাদের ভাগ্য বদলে গেছে। গ্রামের প্রতিটি মানুষই এখন স্বাবলম্বী। কেউ বেকার বসে নেই।’

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার নাছরুল মিল্লাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় ধনপোতা গ্রামের কৃষকদের মৎস্য ঘেরের পাড়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি বীজ সরবরাহ করা হয়।

‘এর সুফল হিসেবে বছরে চারটি বিল থেকেই উৎপাদিত হচ্ছে ১২ হাজার টন সবজি। যার বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকারও বেশি।’

এক গ্রামে ১২ হাজার টন সবজি

তিনি জানান, পদ্মা সেতুর সুবাদে পাইকার সবজি ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকদের ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করছেন। ধনপোতা গ্রামের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে সবজির পাইকারি হাট। কৃষকরা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে ওই স্থানগুলোতে রাখেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ট্রাক করে সবজি কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।

ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফকিরহাট উপজেলাকে কৃষিতে সমৃদ্ধ একটি উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ কাজ করছে। কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। আশা করছি ধনপোতা গ্রামের কৃষকদের দেখে অন্য কৃষকরাও বিষমুক্ত সমন্বিত কৃষিতে আগ্রহী হবেন।’

আরও পড়ুন:
তিন বছরে মাল্টার বাগানে ফলন ৩ গুণ
কলা চাষে লাভবান নাটোরের চাষিরা 
ভোগান্তির পর খুশি মেহেরপুরের পাটচাষিরা
‘বড় বিপদে আছি বাপু’
ব্রহ্মোত্তর এখন সবজির গ্রাম

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
The jute field is burning

দাবদাহে নষ্ট হচ্ছে পাটক্ষেত

দাবদাহে নষ্ট হচ্ছে পাটক্ষেত বৈশাখের তপ্ত রোদে পাটক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ছবি: নিউজবাংলা
কৃষকরা জানান, এবার প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। যা গতবারের চেয়ে অন্তত দুই হাজার বেশি। এরপরে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য সেচ দিচ্ছেন তারা। ফলে আরও বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়।

দাবদাহ আর বৃষ্টিহীনতায় পুড়ছে মাদারীপুরের পাটক্ষেত। বৈশাখের তপ্ত রোদে পাটক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাটের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেয়ায় যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি খরায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারছেন না কৃষকরা।

এমনটা চলতে থাকলে উৎপাদন অনেকটা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা কৃষকদের।

সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের তীব্র দাবদাহে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতেই মরে যাচ্ছে পাট গাছ। কোথাও শুকিয়ে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে ঘন ঘন সেচ দিয়েও গাছের আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে পারছেন না।

অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় জমিতে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে।

কৃষকরা জানান, এবার প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। যা গতবারের চেয়ে অন্তত দুই হাজার বেশি। এরপরে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য সেচ দিচ্ছেন তারা। ফলে আরও বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়।

খোয়াজপুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমে মাঠ ফেটে চৌচির। পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। একটুখানি বড় হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন চললে এবার পাট আবাদ ধসে পড়বে। অনেকেই সেচ দিলেও এক দুই দিন পরে আবার শুকিয়ে যায়। এতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠছে।’

আর মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বপন কাজ শেষ হয়েছে এবং অনেক স্থানে চারা বড় হয়ে গেছে, কিন্তু রোগের কারণে পাটের ক্ষতি হওয়ায় চাষিদের বিকেলে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবদুল মতিন বিশ্বাস বলেন, ‘এই গরমে পাটের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে কৃষকদের বলছি, যেন বিকেলে সেচের মাধ্যমে পাট গাছ জীবিত রাখে। এতে গাছ মরবে না।’

মাদারীপুর জেলায় অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পাটের অবস্থান শীর্ষে। গত বছর পাটের মূল্য ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন।

আরও পড়ুন:
দাবদাহ: ৭ দিন বন্ধ স্কুল কলেজ
‘১০০ কেজি বেগুন ৫০০ টাকায় বিক্রি করি’
বেগুনে পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষক, ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’ পাতার পরামর্শ
১৫২ কৃষক পেলেন কোটি টাকার বেশি ঋণ
দিল্লি অভিমুখে লক্ষাধিক কৃষক, আটকাতে সড়কে কংক্রিটের দেয়াল

মন্তব্য

বাংলাদেশ
4 hundred bigha of paddy was burnt by the heat of the brick kiln

ইটভাটার তাপে পুড়েছে ৪ শ’ বিঘা জমির ধান

ইটভাটার তাপে পুড়েছে ৪ শ’ বিঘা জমির ধান পুড়ে যাওয়া ধানের গোছা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এক কৃষক। ছবি: নিউজবাংলা
ইটভাটার মালিক রমিজ উদ্দিন রমি বলেন, ‘আগুনের তাপে ধানের ফুল আসার সময় কয়েকজন কৃষকের ফসল নষ্ট হইছে। পরে তারা ইটভাটার গেইটে তালা মেরে রাখেন।’

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামের দুইশ’ কৃষকের প্রায় ৪ শ’ বিঘা জমির বোরো ধান ইটভাটার আগুনের তাপে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভাটার আগুনের তেজস্ক্রিয়তায় পার্শ্ববর্তী দড়িনাশেরা গ্রামের কৃষকদেরও ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

অভিযোগ পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিস জমির ফসল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নির্ণয় করে তাদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার চারপাশের বিপুল পরিমাণ জমির ফসল পুড়ে যাওয়ার মতো লালচে রঙ ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ফলজ গাছপালা ও সবজির বাগান।

স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সাল থেকে কাপাসিয়ার তারাগঞ্জের ফেটালিয়া গ্রামে এসকেএস ইটভাটা স্থাপিত হয়। হাত বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামেরও পরিবর্তন হয়। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে কর্তৃপক্ষ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কখনও ফেটালিয়া ব্রিক ফিল্ড, ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ড নামে ইটভাটা পরিচালনা করলেও বর্তমানে এসআরএফ নামে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বর্তমান মালিক।

তারা জানান, এ ইটভাটার ২০০ ফিট দূরত্বের মধ্যে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ঘনবসতি রয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছে ফুল-ফল থাকে না; সব কিছু অকালেই ঝরে যায়। প্রতি বছর যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করে, তা হলো কালো ধোঁয়া ও তাপে পুড়ে যায় ফসলের মাঠ। এ বছরও বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ ভাটার আগুনের তাপে পুড়ে গেছে।

ইটভাটার তাপে পুড়েছে ৪ শ’ বিঘা জমির ধান

স্থানীয় কৃষকরা জানান, অনুমোদন না থাকায় ঈদের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ইটের ভাটাটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়। এই ভাটাটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধের দাবি করে আসছিল এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও ইট পোড়ানো হয় এ ভাটায়। কয়েকদিন পরপর ইটভাটায় কয়েক দফা অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন, কিন্তু পরবর্তীতে ফের শুরু হয় ভাটার কার্যক্রম। তবে সেসব সময় অদৃশ্য কারণে নীরবতা পালন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফেটালিয়া ও নাশেরা গ্রামটি ধান উৎপাদনে ব্যাপক প্রসিদ্ধ। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের আয়ের মূল চালিকা শক্তি ফল উৎপাদন ও কৃষির বিভিন্ন ফসল। কৃষকদের দাবি, অথচ এক ইটভাটার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে পুরো এলাকার মানুষের।

মো. বুরুজ আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানে দুধ আসার পরপরই ভাটার আগুনের তাপে তা পুড়ে গেছে। টাকা ধার করে জমি চাষ করেছিলাম। সেই ধারের টাকা এখন কীভাবে পরিশোধ করব, তা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছি না।’

কৃষক মো. রফিকুল বলেন, ‘এ বছর ১৫ শতাংশ জমিতে ধানের চাষ করেছি। তার এক মুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারব না। ইটভাটার আগুনের তাপে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

‘গরুকে খাওয়ানোর যে কুটা (খড়) লাগবে তাও পাই কিনা সন্দেহ। আগুনের তাপে ঝলসে যাওয়া কুটা গরুও খেতে চায় না। এখন গরু কী খাবে, আর আমরাই বা কী খাব?’

আবাদি জমির পাশে ইটভাটা নির্মাণ হওয়ায় প্রতি বছরই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান কৃষক আব্দুল হাই।

কিছুটা ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘ভাটার আগুনের তাপ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে, যা কোনোভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। ওই জমির ফসল দিয়েই আমাদের সারা বছরের খাওয়ার যোগান হয়। কীভাবে কী করবো বুঝতে পারছি না।’

কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে ভাটার ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্যেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। এ বিষয়ে কৃষক আব্দুল বাতেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেতে কাজ করতে গেলেই আমার বাবার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি।’

এই এলাকায় যেন কোনো ইটের ভাটা না থাকে, প্রশাসনের কাছে এমন দাবি রাখেন তিনি।

ইটভাটার তাপে পুড়েছে ৪ শ’ বিঘা জমির ধান

দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফেটালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই শতাধিক কৃষকের ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ পেতে কৃষকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা ক্ষতিপূরণ পাবে কি না এখনই বলা যাচ্ছে না।’

এ বিষয়ে ইটভাটার মালিক রমিজ উদ্দিন রমি বলেন, ‘আগুনের তাপে ধানের ফুল আসার সময় কয়েকজন কৃষকের ফসল নষ্ট হইছে। পরে তারা ইটভাটার গেইটে তালা মেরে রাখেন।’

কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার ভাটাটি বন্ধ রয়েছে। আমি এখনও ভাটার লাইসেন্স করতে পারিনি।’

কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার মঞ্জুরুল আমিন সম্প্রতি কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত ফলজ গাছ ও ধানের ফসল পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিনে তিনি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ও তথ্যানুসন্ধান করে জেনেছেন, স্থানীয় ইটভাটার কারণেই কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

নিউজবাংলাকে এসব তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধান পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই নির্গত ক্ষতিকর ধোঁয়ায় সব ঝলসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কৃষি অফিসে জমা দেয়া হবে।’

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Bina Dhan 25 successful in experimental cultivation

পরীক্ষামূলক চাষে সফল বিনা ধান-২৫

পরীক্ষামূলক চাষে সফল বিনা ধান-২৫ ছবি: নিউজবাংলা
নতুন উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান বোরো জাতের বিনা ধান-২৫। উচ্চ ফলনশীল হলেও ধানটি হাইব্রিড নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। বাসমতি চালের বিকল্প হিসেবে এ ধানের চাষ বাড়লে দেশে চিকন চালের আমদানি কমতে পারে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদে সফলতা পাওয়া গেছে। স্বল্প সময়ে ধানের বাম্পার ফলনে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এ ধান উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছে।

নতুন উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান বোরো জাতের বিনা ধান-২৫। উচ্চ ফলনশীল হলেও ধানটি হাইব্রিড নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। বাসমতি চালের বিকল্প হিসেবে এ ধানের চাষ বাড়লে দেশে চিকন চালের আমদানি কমতে পারে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের জলালপুর গ্রামে এ বছর বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়েছে। মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. নওরোজ মিয়াসহ এলাকার তিনজন কৃষক চার একর জমিতে বিনা ধান-২৫ এর চাষাবাদ করেছেন।

পরীক্ষামূলক চাষে সফল বিনা ধান-২৫

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বিনা ধান-২৫ বোরোর উন্নতমানের নতুন একটি জাত। নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের জাতটি সর্বাধিক লম্বা ও সরু। এর চালের আকার চিকন ও লম্বা। বিদেশ থেকে যে বাসমতি চাল আমদানি করা হয় এটাও অবিকল সেই চালের মতো। এজন্য এই চালের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি।

এর বাজারমূল্যও বেশ ভালো জানিয়ে সূত্র আরও জানায়, উৎপাদন ব্যয় অন্য ধানের মতোই। তবে ফলন অন্য ধানের চেয়ে ভালো হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি এই ধান রপ্তানিও করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃষক নওরোজ মিয়া বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি। এই প্রথম নতুন জাতের বিনা ধান-২৫ চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি শীষে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০টি ধান ধরেছে।

‘অন্যান্য জাতের তুলনায় বিনা ধান-২৫ জাতে শীষ প্রতি ধানের পরিমাণও বেশি। চাষাবাদে আশানুরূপ ফলন হওয়ায় নিজেকে আরও উদ্বুদ্ধ করে তুলছে বলে মনে হচ্ছে।’

কমলগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দেব বলেন, ‘পরীক্ষামূলক চাষাবাদে এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ধান কাটা হবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Farmers of Sherpur worried about Boro rice in loadshedding

লোডশেডিংয়ে বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় শেরপুরের কৃষকরা

লোডশেডিংয়ে বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় শেরপুরের কৃষকরা পর্যাপ্ত সেচের অভাবে ধানের থোড় শুকিয়ে যাচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
কৃষক আলমগীর হারুন বলেন, ‘বোরোর আবাদ কইরা আমরা বর্তমানে খুবই আশঙ্কার মধ্যে আছি। মাঠে যে থুর (থোড়) ধানগুলা বাইর হইতাছে, ঠিকমত সেচ দিবার পাইতাছি না। এই ধানগুলা চিচ (চিটা) হইয়া যাইব।’

সারা দেশের মতো তাপপ্রবাহে পুড়ছে শেরপুর জেলাও। কয়েকদিনের গরমে শেরপুরে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শুধু তাই নয়, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জেলার বোরো ধানের আবাদেও।

কৃষি বিভাগের তথ্যনুসারে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলাজুড়ে ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানখেতে ধান পুষ্ট হতে শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় চাহিদামাফিক সেচ দিতে না পারছেন না জেলার কৃষকরা। ফলে ধানের আশানুরূপ ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তাদের মনে।

বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় সেচ পাম্পের মোটরও পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সেচ পাম্পের মালিকরাও আছে বিপাকে।

শেরপুর কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের ফ্লাওয়ারিং হয়েছে (ফুল ফুটেছে)। অন্যদিকে, পাহাড়ি এলাকায় আগাম জাতের লাগানো ধানগুলো ইতোমধ্যে কাটা শুরু করেছে।

জেলার পিডিবি অফিস বলছে, জেলায় দৈনিক বিদ্যুৎতের চাহিদা প্রায় ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ২৮ মেগাওয়াট। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের মতও একইরকম। তাদের ভাষ্য, জেলায় পল্লীবিদ্যুতের বিদ্যুৎ চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ৫০ মেগাওয়াটেরও কম। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ দিয়ে যতটা পারা যায়, ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছেন তারা।

লোডশেডিংয়ে বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় শেরপুরের কৃষকরা

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মতো। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিক মতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় মোটর পুড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, পানির অভাবে জমি ফেটে যাচ্ছে। ধানের থোড় (গাছে যে অংশ থেকে ফুল হয়ে পরে ধান হয়) বের হওয়ার পর কিছু কিছু জমির থোড় শুকিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ অবস্থার পরিবর্তন না হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।

সদর উপজেলার যোগিনীমুড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হারুন বলেন, ‘বোরোর আবাদ কইরা আমরা বর্তমানে খুবই আশঙ্কার মধ্যে আছি। মাঠে যে থুর (থোড়) ধানগুলা বাইর হইতাছে, ঠিকমত সেচ দিবার পাইতাছি না। এই ধানগুলা চিচ (চিটা) হইয়া যাইব।

‘বিদ্যুৎ দিনে ৪-৫ ঘণ্টা থাকে। এত কষ্ট কইরা ফসল ফলাইয়া ঘরে না তোলবার পাইলে আমরা মাঠেই মারা যাব।’

সদর উপজেলার বাজিতখিলা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘আবাদ তো নষ্ট হইয়া গেল। কারেন্ট থাহে না। ৫০ হাজার টাহা খরচ কইরা ধান লাগাইছি। পানি দিবার না পাইলে তো সব শেষ। আমগোরে কি মাইরা হারবার চাইতাছে নাকি?’

আরেক কৃষক শামসুল মিয়া বলেন, ‘দিনে কারেন্ট থাহে ৪-৬ ঘণ্টা, কিন্তু ভোল্টেজ তো থাহে না। কম ভোল্টেজে মোটর চালু দিলে তো মোটর পুইড়া যায়।’

কৃষকদের কাছে বিদুৎ সঙ্কটের কারণে সেচে প্রভাব পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তার দাবি, এতে সেচে তেমন প্রভাব পড়বে না।

শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আলী হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এই শেরপুর জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত ৫টি উপজেলা এবং এর আওতায় প্রায় ১০ হাজার সেচ সংযোগ রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এর আগে আমরা ভালো বিদুৎ পেয়েছি, তবে বর্তমানে জেলায় ৩০ শতাংশের মতো লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করি, খুব দ্রুত এ সঙ্কটও কেটে যাবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
In Moulvibazar paddy harvesting is going on in full swing

দাবদাহের মধ্যে হাকালুকি হাওরে ধান কাটার ধুম

দাবদাহের মধ্যে হাকালুকি হাওরে ধান কাটার ধুম মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওরে বোরো ধান কেটে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা। ছবি: নিউজবাংলা
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলতি মাসে হাওর অঞ্চলের ধান কাটা শেষ হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পুরো উপজেলার ধান কাটা শেষ হবে।’ 

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা।

উপজেলার হাকালুকি হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সোনালি ফসল তুলতে মাঠে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন কৃষকরা।

কুলাউড়ার অনেক জায়গায় অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির শঙ্কায় কৃষকরা আধা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেছেন। হাওরে পানি ঢোকার আগে ফসল ঘরে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। হাকালুকি হাওরপাড়ের কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বোরো ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে।

কৃষকদের ভাষ্য, হাওরে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।

এ বছর হাওরে এখন পর্যন্ত পানি না আসায় সময়মতো নিরাপদে ধান কাটছেন কৃষকরা। হাওরপাড়ের ভুকশিমইল, কানেহাত, কারেরা, বাদে ভুকশিমইল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদে উত্তপ্ত আবহাওয়ায় কৃষকরা হাওরের ভেতর থেকে ধান কাটেছেন।

কৃষক মনিরুল উসলাম বলেন, ‘ধান পাকার আগে অতি বৃষ্টি হলে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। হাওরে উজানের পানি ঢুকলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। হাওরে এখন পানি না থাকায় ফসল তুলতে সুবিধা হচ্ছে।’

আরেক কৃষক জমির মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ধান পাকতে শুরু করলে বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেত নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় ছিলাম। এখন অতিরিক্ত গরম থাকলেও ধান নিরাপদে কাটা সম্ভব হচ্ছে।’

এক কৃষকের ভাষ্য, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে প্রতি বছর বোরো আবাদে বেশ ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। গেল বছর খরায় বোরো ধান আবাদ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির সংকটে পড়ায় ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, বোরো চাষের এলাকায় গভীর নলকূপের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো পানি সংকটের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। গত বছর হাকালুকি হাওরে যে ছোট-বড় খাল রয়েছে, সেগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল। আবাদি জমির পরিমাণ বেশি হওয়ায় তুলনামূলক পানির জোগান না থাকায় দেখা দিয়েছিল পানির অতিরিক্ত সংকট। কোনো কোনো জায়গায় ধান বের হলেও পানির অভাবে চারার অবস্থা ছিল শোচনীয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সব শঙ্কা কাটিয়ে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে খুশি কৃষকরা।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলতি মাসে হাওর অঞ্চলের ধান কাটা শেষ হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পুরো উপজেলার ধান কাটা শেষ হবে।

‘এ বছর বোরো ধানের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য সরকারি ভর্তুকি মূল্যে কয়েকটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার কৃষকদের দেয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
মাতৃভূমি রক্ষা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য: সেনাপ্রধান
ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না: প্রধানমন্ত্রী
মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির দিকে চোখ রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
হাওরে ধান কাটা শুরু
মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Dreaming of the teachers hobby vineyard

স্বপ্ন দেখাচ্ছে শিক্ষকের শখের আঙুর বাগান

স্বপ্ন দেখাচ্ছে শিক্ষকের শখের আঙুর বাগান এ বছর ১৪ শতক জমিতে আঙুর বাগান করেছেন শিক্ষক বিল্লাল হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা
কাজী বিল্লাল হোসেন খোকন পেশায় কলেজ শিক্ষক। শখ করে করা আঙুর বাগানটি এখন তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর উৎপাদনের।

থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। আর কয়েকদিন পর পেকে গেলে তা গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা হবে। বাতাসে দোল খাওয়া আঙুর বাগানের এমন দৃশ্য দেখা গেল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বলরামপুর গ্রামে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা কাজী বিল্লাল হোসেন খোকন পেশায় কলেজ শিক্ষক। শখ করে করা আঙুর বাগানটি এখন তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর উৎপাদনের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে বিস্তৃর্ণ ধানি জমি। তার মাঝেই উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মাচা। সেই মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে গাঢ় সবুজ রঙের আঙুর।

বাগানে নিবিষ্ট চিত্তে গাছের পরিচর্যা করছিলেন বিল্লাল হোসেন। এ সংবাদ সগ্রাংহককে দেখে এগিয়ে আসেন তিনি। এরপর আগ্রহ নিয়ে ঘুরিয়ে দেখান তার শখের আঙুর বাগান।

বাগানের প্রতিটি কোণায় যত্নের ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষকের হাতের ছোঁয়ায় আঙুর গাছগুলো সজীব ও সতেজ হয়ে বাগানে শোভা ছড়াচ্ছে।

স্বপ্ন দেখাচ্ছে শিক্ষকের শখের আঙুর বাগান

বিল্লাল জানান, বছর দুই আগে শখ করে তার নার্সারিতে দুটি আঙুর চারা রোপণ করেন তিনি। সেবার গাছ দুটি থেকে তিনি প্রায় ১৮ কেজি আঙুর পেয়েছিলেন। তারপর ইউটিউব দেখে আঙুর বাগান করার উদ্যোগ নেন তিনি।

তিনি জানান, এ বছর ১৪ শতক জমিতে আঙুর বাগান করেছেন। মোটামুটি লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে তার। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বাগান থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকার আঙুর তিনি বিক্রি করতে পারবেন।

শখের এ কৃষকের চিন্তা, আগামী বছর তিনি বাগানের পরিসর আরও বড় করবেন।

কুমিল্লা জেলার মাটিতে আঙুর চাষের উপযোগিতা আছে কি না তা এ মুর্হুতে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে এ জেলার মাটি সব ধরনের ফল উৎপাদনে সহায়ক বলে জানান অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ।

কৃষি বিভাগের অব্যাহত সহযোগিতা পেলে আঙুর চাষেও সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আঙুর চাষে শিক্ষক খোকনের প্রচেষ্টা অন্যদের উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি জেলায় ফলের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Cucumbers started selling in dreams at lower prices than the open market

স্বপ্নতে ১২ টাকা কেজিতে শসা

স্বপ্নতে ১২ টাকা কেজিতে শসা শসাচাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শসা কেনে ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষ। কোলাজ: স্বপ্ন
স্বপ্নর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘আমরা শসাচাষিদের দুর্ভোগের কথা জানতে পেরেছি নিউজের মাধ্যমে। আমরা দিনাজপুর, ময়মনসিংহসহ বেশ কিছু এলাকার কৃষকের দুর্ভোগের কথা জানার পর তাদের কাছ থেকে শসা কিনেছি ন্যায্য মূল্যে।’

রমজানের মধ্যে শসার বাজার চড়া দাম থাকলেও বর্তমানে শসাচাষিরা দাম পাওয়া নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন।

এমন দুঃসময়ে শসাচাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের অন্যতম রিটেইল চেইন সুপারশপ ‘স্বপ্ন’।

সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়, ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার শসাচাষিরা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে চার টাকায়। ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা।

এমন সময় সেই শসাচাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্যটি কেনে ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষ। সেই শসা এখন খোলাবাজারের চেয়ে কম দামে স্বপ্ন আউটলেটে পাওয়া যাচ্ছে।

খোলা বাজারে বৃহস্পতিবার ৪০ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি করতে দেখা গেলেও স্বপ্ন আউটলেটে তা ১২ টাকা কেজিতে গ্রাহকরা কিনতে পেরেছেন। এরই মধ্যে দিনাজপুরের খানসামার ওই এলাকা থেকে দুই টন এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকা থেকে ছয় টন শসা কিনেছে স্বপ্ন প্রতিনিধি।

বর্তমানে তাদের উৎপাদিত শসা পৌঁছে গেছে স্বপ্নর আউটলেটে। স্টক থাকা অবধি এ অফার গ্রাহকরা পাবেন।

স্বপ্নর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘আমরা শসাচাষিদের দুর্ভোগের কথা জানতে পেরেছি নিউজের মাধ্যমে। আমরা দিনাজপুর, ময়মনসিংহসহ বেশ কিছু এলাকার কৃষকের দুর্ভোগের কথা জানার পর তাদের কাছ থেকে শসা কিনেছি ন্যায্য মূল্যে।

‘অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও কৃষকদের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান থাকবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভবান না করে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি সেতুবন্ধের চেষ্টা করে আসছে স্বপ্ন। এ চেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকবে।’

এ প্রসঙ্গে স্বপ্নর হেড অফ পার্চেজ সাজ্জাদুল হক বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে শসাচাষিদের সংকটের খবর দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, কৃষকদের পাশে আমরা দাঁড়াব। দিনাজপুর, ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে এরই মধ্যে ৮ টন শসা আমরা কিনেছি।

“দুঃসময়ে কষ্টে থাকা অনেক কৃষকদের পাশে ‘স্বপ্ন’ এর আগেও দাঁড়িয়েছে। সামনেও পাশে থাকবে।”

দিনাজপুরের খানসামা এলাকার কৃষক সাকিব হোসেন বলেন, ‘প্রায় এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছিলাম এবার। শসার বীজ, সারসহ নানা কাজে লাখ টাকা খরচ হয় আমার, কিন্তু ১০ রমজান অবধি কিছু শসা বিক্রি করার পর বাজারে শসার দাম কমে যায়। প্রতি কেজি ১০ টাকা, এরপর পাঁচ টাকা এবং সবশেষে আরও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। অনেক শসা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক লোকসান হচ্ছিল।’

তিনি আরও বলেন, “আমার এলাকার এক সাংবাদিক নিউজ করার পর এসিআই কোম্পানির ‘স্বপ্ন’ থেকে যোগাযোগ করে আমার অনেকগুলো শসা কিনে নিয়েছেন উনারা। এতে করে লোকসানের অনেক ঘাটতি পূরণ হয়েছে আমার। তাদের অশেষ ধন্যবাদ।”

আরও পড়ুন:
লাউয়াছড়ায় গাড়িচাপায় প্রাণ গেল ১২ ফুট অজগরের
এক ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে ফিরিঙ্গি বাজার বস্তির আগুন
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কমলগঞ্জে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা
দুর্বৃত্তের হামলায় পা বিচ্ছিন্ন হওয়া যুবকের মৃত্যু
মাছ-মাংসের দাম বেড়েছে, সামান্য স্বস্তি সবজিতে

মন্তব্য

p
উপরে