‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে গত জুনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঁচ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫ জন। এর বাইরে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ৩ মামলায় ৩১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সবচেয়ে বড় সহিংসতা হয়েছে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে। ওই প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রের ফেসবুক পোস্টের জেরে গুজব ছড়িয়ে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করা হয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে। গাইবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিল থেকে ক্ষমতাসীন দলের সভা মঞ্চে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া বাগেরহাটে বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে আহত হন অন্তত ১২ পুলিশ সদস্য।
দেশে এসব ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আলোচিত নেতা নূপুর শর্মা। তার মন্তব্যে ভারতের মুসলমানদের পাশাপাশি গোটা মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নূপুরকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিজিপি। ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় বাংলাদেশেও। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে জুনের মধ্যভাগে বেশ কয়েকটি মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।
নড়াইলে সহিংসতা, শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
নূপুর শর্মার সমর্থনে ১৭ জুন ফেসবুকে পোস্ট দেন নড়াইল মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থী। এ ঘটনার জেরে পরদিন দিনভর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় সারা দেশে।
শুরুতে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তাদের সামনে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানো হয়নি। তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীরের সামনেই জুতার মালা পরানো হয় অধ্যক্ষের গলায়। এ ঘটনায় প্রথমে ওসি শওকতকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরে সরিয়ে নেয়া হয় মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ মোরছালিনকে।
নূপুর শর্মার সমর্থনে পোস্ট দেয়া হিন্দু শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়ের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাহুলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন মির্জাপুর হাজিবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন।
ধর্ম অবমাননার মামলার প্রায় দেড় সপ্তাহ পর শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় আরেকটি মামলা করে পুলিশ। সেই মামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সিলেটে গ্রেপ্তার কলেজছাত্র
নূপুর শর্মার সমর্থনে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় অভিযোগে গত ১৭ জুন সিলেটে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শ্রাবণ সাঁওতাল রাজ জাফলং চা বাগানের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
তার বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরুল কবীর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। এই মামলায় কারাগারে আছেন রাজ।
গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ওমর ফারুক মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে আছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তার (রাজ) বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। রাজের ফেসবুক পোস্টটি কোথা থেকে দেয়া হয়েছে তা যাছাই করে দেখার জন্য আমরা সিআইডির সাইবার অপরাধ বিভাগকে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে এখনও রিপোর্ট আসেনি। ওই রিপোর্ট আসার পর অভিযোগপত্র দেয়া হবে।’
বাগেরহাটে গ্রেপ্তার ছাত্রী কারাগারে
বাগেরহাটের চিতলমারীতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে এক কলেজছাত্রী রনিতা বালাকে ১৯ জুন হেফাজতে নেয় পুলিশ। সেদিন থানায় হামলা চালায় একদল মানুষ। এতে আহত হন অন্তত ১২ পুলিশ সদস্য।
ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা করেন শেরেবাংলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন মুন্সি। ওই মামলায় রনিতা কারাগারে আছেন।
অন্যদিকে চিতলমারী থানায় হামলার ঘটনায় ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫০ জনকে আসামি করে ২১ জুন মামলা করে পুলিশ। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২১ জন।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম জানান, অভিযুক্ত ছাত্রী জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল। পরে তদন্তে পাওয়া যায়, মেয়েটি নিজেই ওই পোস্ট দেন।
কলেজছাত্রীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি তদন্ত করছেন চিতলমারী থানার পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মধুসূধন বিশ্বাস। মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে ১৫৩/২৯৮ ধারায় মামলা হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার সহপাঠী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। জানতে পেরেছি, বুঝে হোক আর না বুঝে হোক তিনি ধর্ম নিয়ে প্রায়ই নানা কথা বলতেন। এই মাসেই আমি মামলার চার্জশিট দেয়ার পরিকল্পনা করছি।’
খুলনা দুই মামলায় গ্রেপ্তার দুই যুবক
খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের কিংকর কুণ্ডুর বিরুদ্ধে ১৪ জুন তার ফেসবুক আইডি থেকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠে।
এর দুই দিন পর স্থানীয় কয়েক যুবক তার বাড়িতে হামলা করে ও খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পুলিশ গিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ওই রাতেই কিংকর কুণ্ডুকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে ডুমুরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন মামলা করেন।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কনি মিয়া বলেন, ‘কিংকর কুণ্ডুর বিরুদ্ধে যে এজাহার হয়েছে, সেখানে কয়েকটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে কিংকরের বাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের অজ্ঞাত আসামি ধরে সব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। হামলার জন্যও কয়েকটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তবে এখনও কেউ গ্রেপ্তার হননি।
‘কিংকর কুণ্ডু কারাগারে আছেন। মামলাটির তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে।’
খুলনায় আরেক ঘটনায় ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর একটি ওয়াজের পোস্টে বিতর্কিত কমেন্ট করার অভিযোগে ২৮ জুন কয়রা উপজেলায় উৎপল মণ্ডলকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম এস দোহা বলেন, ‘ওই যুবকের ফেসবুক কমেন্টকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ তাদের ভাগবা এলাকার বাড়িতে হামলা করতে যায়। তবে পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে পাঁচজনকে আটক করে নিয়ে আসে। হেফাজতে নেয়া হয় উৎপলকেও।’
‘তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জনরোষ তৈরির অভিযোগে কয়রা থানার উপপরিদর্শক মো. ইব্রাহিম মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
গাইবান্ধায় সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার
নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে গাইবান্ধায় ১০ জুন জুমার নামাজের পর বিক্ষোভে নামে কয়েকটি ইসলামি দল। জেলা ইমাম-ওলামা পরিষদ, ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের ব্যানারে শত শত নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন।
মিছিলটি শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বের হয়ে কাচারিবাজার মসজিদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
ওই সমাবেশস্থলের পাশে শহীদ মিনার চত্বরে পৌর আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সম্মেলন চলছিল। মিছিলকারীরা সম্মেলনস্থলের মাইক বন্ধ করতে বলেন। একপর্যায়ে তারা মাইক, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর শুরু করেন ও ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেন।
এ ঘটনায় ১২ জুন মামলা করেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াজেদ হাসান শাওন। মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ দেড় শতাধিক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার পরপরই এজাহারনামীয় চার আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলছে। তাছাড়া মামলার পর অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় চারজনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের শনাক্তসহ বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
যশোরে যুবককে পিটুনি
নূপুর শর্মার সমর্থনে ফেসবুকে পোস্ট শেয়ারের অভিযোগ ওঠে যশোরের চুড়িপট্টি এলাকার একটি জুয়েলারি দোকানের কর্মচারী অনুপ সাহার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ১৩ জুন বিকেলে জেলা পোস্ট অফিসসংলগ্ন মসজিদের সামনে তাকে পিটুনি দেয় স্থানীয়রা। পরে তাকে পুলিশে দেয় তারা।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুজ্জামান জানান, বিক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে ওই যুবককে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তার ফেসবুকে আইডি যাচাই করে স্ট্যাস্টাস কিংবা শেয়ারের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ জন্য তাকে ৫৪ ধারায় আদালতে তোলা হয়। সেদিনই তিনি জামিনে ছাড়া পান।
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকলে হাত, দাঁত ও চাপার হাড্ডি ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপের হুমকিদাতা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে (আনারস) শো-কজ করেছেন জেলা রিটার্ননিং কর্মকর্তা।
শনিবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আটককৃতরা হলেন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সুজাত আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়।
লিখিত বক্তব্যে শানিয়াজ্জামান তালুকদার জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে তার দুই কর্মী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উস্কানিমূলক ও হুমকিস্বরূপ। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে হুমকিদাতা দু’জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন সরিষাবাড়ী থানায় মামলা করেন।
মামলা হওয়ার পর শনিবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশ সাইদুল হাসান সাইদ ও খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়কে গ্রেপ্তার করে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী পথসভায় অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের জবান আমরা বন্ধ করে দেব। আমরা আগামী ৮ মে'র নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা অন্য কোনো মার্কার কোনো এজেন্ট দিতে দেবো না। রফিক সাহেবকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আজকেই ঘোষণা দিলাম।’
প্রতিপক্ষের লোকদের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাবধান হয়ে যান, আমাদের মাঝে অসন্তোষ ও হানাহানির চেষ্টা করবেন না। আপনাদের দাঁত ভেঙে দেয়া হবে। যাদের দাঁত নেই, তাদের চাপার হাড্ডি ভেঙে দেয়া হবে।’
এরপর পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় একই সভায় বলেন, ‘অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট কোনো কেন্দ্রে দিতে দেব না। এজেন্ট দিলে তার হাত বাড়ি দিয়ে ভেঙে আমরা যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করবো।’
এ সময় সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে রফিকুল ইসলাম (আনারস) ও তালেব উদ্দিন (দোয়াত-কলম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতেও আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বারের সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় মধুখালীর ঘটনা পরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিসি কামরুল আহসান তালুকদার।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও ওয়ার্ড মেম্বার অজিত কুমার সরকারকে ধরিয়ে দিতে পারলে বা তাদের ধরতে কোনো প্রকার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা দেন তিনি।
ডিসি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও মেম্বার এখন পলাতক। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করেছে। বিমানবন্দর ও সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে, যাতে তারা দেশত্যাগ করতে না পারে।
‘এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে যেকোনো প্রকার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।’
গত ১৮ এপ্রিল রাতে ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্দেহের জেরে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন আরও পাঁচ শ্রমিক।
পিটুনিতে হতাহতের ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়। এরই মধ্যে তিন মামলায় পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করায় ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় ‘হাতবোমার’ আঘাতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কানাইপুরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় দক্ষিণ কানাইপুরের প্রয়াত মালেক সরদারের ছেলে দুবাই প্রবাসী রিপন সরদার বাড়িতে আসেন। এ খবর পেয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ একই এলাকার আনসার হাওলাদারের ছেলে দেলোয়ার হাওলাদার লোকজন নিয়ে রিপনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় ঘরে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
এ ঘটনায় পরবর্তীতে গত ২৩ এপ্রিল রিপন সরদারের স্ত্রী রুনিয়া বেগম বাদী হয়ে কালকিনি থানায় ২২ জনের নামে একটি মামলা করেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এরই জেরে শুক্রবার সন্ধ্যায় রিপনের চাচাত ভাই ও আলীনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীদ পারভেজের সমর্থক জামাল সরদার স্থানীয় বাজারে যান। মাঝপথে সাবেক চেয়ারম্যান মিলন সরদারের কর্মী মহসিন লোকজন নিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করে বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় একাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রিপন হাওলাদারের আগের ঘটনার মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য