রংপুরের পদাগঞ্জ থেকে গত বছর ১১ জুলাই ২০ কেজি পরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম কিনে বাড়ি ফেরেন মীরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ইসহাক আলী। ওইদিন বিকেলে একটি কুরিয়ারের মাধ্যমে সেই আম ছেলেকে পাঠান। ১৪ তারিখ সকালে কুরিয়ার থেকে আম সংগ্রহ করেন আরশাদ আলী। ততক্ষণে পেকে গেছে সব আম।
আরশাদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৪ ও ১৫ তারিখে কিছু আম খেতে পারছি। এত বেশি পেকেছে যে বাকি আম ফ্রিজে রাখার মতো উপায় ছিল না। তাই ফেলে দিতে হয়েছে।’
কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্টমেন জেলির কারণে এই আম দ্রুত পাকে বা নষ্ট হতে থাকে। কীভাবে এই জেলির প্রভাব কমানো যায়, তা বের করতে গবেষণা চলছে।
৯ বছর ধরে মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ এলাকায় আম চাষ করছেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমস্যা দেখা দেয়, যখন হাঁড়িভাঙ্গা আম পাকা শুরু করে। একবারে পাকতে শুরু করলে বিপদে পড়তে হয়। আম পরিপক্ব হলে প্রতিদিনই গাছ থেকে ঝরে পড়ে, দ্রুত পেকে যায়।’
আমচাষি আমজাদ হোসেন বলেন, ‘পাকা আমের কোনো মূল্য নেই। ৫ টাকা কেজিতেও কেউ নিতে চায় না। পাকলে তিন দিনও থাকে না। ওই সময় মেডিসিন দিয়েও কোনো লাভ হয় না। এটি একটি প্রবলেম। তা ছাড়া কোনো প্রবলেম নেই।’
স্থানীয় তৈয়ব আলীও জানান একই কথা। তিনি বলেন, ‘বাড়ির গাছের আম পাকলে মেলা দিন (অনেক দিন) খাওয়া যায়। যত পাকে তত মজা খাইতে। এমনকি বেশি পাকা আম দিয়ে সকালবেলা আমরা পন্তা (পান্তা) ভাত খাই। কিন্তু হাঁড়িভাঙ্গা দিয়ে হয় না, বেশি পাকলে সেই আম আর খাওয়া যায় না, ফেলে দিতে হয়।’
চলতি বছরের ২৩ মে রংপুরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে এক কর্মশালায় হাঁড়িভাঙ্গা আমের ‘সেলফ লাইফ’ নিয়ে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। সেখানে রংপুর অঞ্চলের কৃষি কর্মকর্তা এবং বিপণন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, হাঁড়িভাঙ্গা আম অত্যন্ত সুস্বাদু। কিন্তু সমস্যা হলো এটা বেশি পাকলে খাওয়া যায় না বা দ্রুতই নষ্ট হতে বসে। বেশি দিন সংরক্ষণে সমস্যা। এই আম কীভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়, সেই বিষয়েও কর্মশালায় আলোচনা হয়েছে।
রংপুর বিপণন বিভাগের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, দেশের বাইরেও এই আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হচ্ছে, আরও বেশি অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু এই আম দ্রুত পাকা নিয়ে একটু নেতিবাচক কথাও আছে।
তিনি বলেন, ‘আমটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং মাংস বেশি, কিন্তু পাকলে সর্বোচ্চ তিন দিন থাকে। এরপর খাওয়ার উপযোগিতা নষ্ট হয়ে যায়, সে কারণে রপ্তানিকারকরা অনেকে রপ্তানি করতে ভয় পান। তাই এই আমের ‘সেলফ লাইফ’ (স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কতদিন ভালো থাকে) কীভাবে বাড়ানো যায়, সে নিয়ে কর্মশালায় প্রস্তাব তোলা হয়েছে। এই প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছে।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম নরম হলে কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়, ন্যাচারাল বৈশিষ্ট্য থাকে না। দ্রুত আম পাকা বন্ধে আমাদের কোনো ট্রিটমেন্ট বা মেডিসিন নেই।’
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশিষ কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গা আমের সমস্যা দুটি। একটা ছিল অলটারনেট বিয়ারিং (এক বছর আম ধরে আরেক বছর ধরে না বা কম ধরে) আর একটা ছিল স্টমেন জেলি (বেশি পাকলে খাওয়া যায় না বা দ্রুত পাকে)। আমরা অলটারনেট বিয়ারিং থেকে ওভারকাম করতে পেরেছি। কারণ সেখানে (পদাগঞ্জে) একটি ৪৫ বছর বয়সী গাছ রয়েছে। সুতরাং অলটারনেট বিয়ারিং আর নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই আমের সেলফ লাইফ নিয়ে অলরেডি গবেষণা শুরু করেছি। এর মধ্যে একটি রয়েছে স্টমেন জেলি (বেশি পাকলে খাওয়া যায় না বা দ্রুত পাকে) নিয়ে। আমরা স্টাডি করে দেখছি স্টমেন জেলির উপজাতক পাওয়া যায় কি না?
‘আমরা ক্রস চেক করছি। যেমন- হাঁড়িভাঙ্গার সঙ্গে হাঁড়িভাঙ্গা, হাঁড়িভাঙ্গার সঙ্গে বারি-৪, বারি-৩ ক্রস করছি, এভাবে একাধিক জাতের সঙ্গে ক্রস চেক হচ্ছে। স্টমেন জেলিটা কীভাবে ওভারকাম করা যায়, সেটা নিয়ে এখন গবেষণা চলছে।’
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর মাসতোয়া এগ্রো লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে হাঁড়িভাঙ্গা আম রপ্তানি করেছে। এবারও আমরা আম রপ্তানি করতে চাই। এ ছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ে অনেকে বিদেশে রপ্তানি করেছেন।
‘কোনো ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান হাঁড়িভাঙ্গা আম রপ্তানি করতে চাইলে আমরা অবশ্যই তাকে বা তাদের হেল্প করব। সে ক্ষেত্রে সরকারের যে নিয়মকানুন আছে, সেগুলো অবশ্যই মেইনটেইন করতে হবে।’
বাজারে আম আসবে ১৫ জুন
এই অঞ্চলের বিখ্যাত আম ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসছে আগামী ১৫ জুন। গত মঙ্গলবার মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ বাজারে এই আমের বিপণন, বাজারব্যবস্থা, পদাগঞ্জ হাট সংস্কার, রংপুরের বাইরের ব্যবসায়ী- বেপারিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক লেনদেনের নিশ্চয়তা, পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধসহ নানা বিষয়ে চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে রংপুরের প্রশাসন।
বৈঠকে আম কেনাবেচা এবং পরিবহনে যাতে কোনো ধরনের হয়রানি না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার দাবি করেছেন চাষিরা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রংপুর মেট্রোপলিটনসহ জেলার আটটি উপজেলায় এবার হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে এবার আমের আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকায় ২৫, রংপুর সদর উপজেলায় ৬০, কাউনিয়া উপজেলায় ১০, গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৩৭, মিঠাপুকুর উপজেলায় ১ হাজার ২৭০, পীরগঞ্জ উপজেলায় ৬০, পীরগাছায় ১০, বদরগঞ্জে ৪০০ এবং তারাগঞ্জে ১৫ হেক্টর রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৬ টন।
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহীন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এ বছর আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার ৪৩৬ টন। প্রতি টন গড়ে বিক্রি হবে ৩৩ হাজার টাকায়। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে প্রায় শতকোটি টাকার আম (হাঁড়িভাঙ্গা) বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।’
কৃষি বিপণন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চাষি বা ব্যবসায়ীদের আম সঠিকভাবে সর্টিং, গ্রেডিং ও প্যাকেজ করে বিক্রি করতে অনুরোধ করেছি, যাতে তারা লাভবান হন। এ ছাড়া অনলাইনে আম বিক্রি করতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। আমচাষিরা যাতে আম বিক্রি করতে কোনো ধরনের অসুবিধায় না পড়েন, সে জন্য সারা দেশের ৯২ জন ফল ব্যবসায়ীর মোবাইল নম্বর কালেক্ট করে তা লিফলেট আকারে বিতরণ করেছি আমরা।’
হাঁড়িভাঙ্গা আমের খ্যাতি যাদের হাত ধরে ছড়িয়েছে (সম্প্রসারক) তাদের একজন আবদুস সালাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাষ করছি। এই আম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। অনেক সুনাম রয়েছে। আমরা এটা বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি করতে চাই। জিআই পণ্য হিসেবে দেখতে চাই। ২০১৭ সালে আবেদন করার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না।’
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই এই আম বাজারে আসবে। আমরা চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। হাট সংস্কারে স্থানীয়দের দাবি ছিল সেটাও করে দিয়েছি।’
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হাঁড়িভাঙ্গা আরও প্রসারিত হবে বলে আশা জেলা প্রশাসকের।
আরও পড়ুন:চেনা মানুষটা কি হঠাৎ করেই অচেনা হয়ে গেল? বোঝাপড়াটাও কমে গেছে আগের চেয়ে? অল্পতেই বিরক্ত হচ্ছে সে? এতসব প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়ে ওঠে যদি আপনার সঙ্গী অন্য কাউকে আপনার জায়গায় বসাতে চেষ্টা করেন। সহজ কথায় অন্য কারো প্রেমে পড়ে যান।
সঙ্গী আপনাকে ছেড়ে অন্য কাউকে নিয়ে মত্ত বা আপনাকে সঙ্গে রেখেও অন্য কারোর দিকে ঝুঁকছেন কি না, এই সন্দেহ বহু সম্পর্ককেই শেষ করে দেয়। তবে কেবল সন্দেহের নিরিখে কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে মনে সন্দেহ জাগলে কিছু লক্ষণের দিকে নজর রাখতে পারেন।
মাঝে মাঝেই প্ল্যান বদল করুন, যদি আপনার সঙ্গে আগে থেকে হয়ে থাকা কোনো প্ল্যান সঙ্গী দিনের পর দিন বদলাতে থাকেন, তাহলে সন্দেহ তো হবেই। সেভাবে প্ল্যান বদলের কারণ যদি তিনি বলতে না পারেন, তাহলেও সন্দেহ হতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে তিনি এই হুটহাট প্ল্যান বদলে ফেলাটা কতটা সাবলীলভাবে বলছেন। এমন কি মনে হচ্ছে, যে প্ল্যান বদলে যাওয়ায় সঙ্গীর কোনও প্রভাব পড়বে না?
সম্পর্কের নাম- কোনো একটি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে জানাজানি হতেই থাকে! ফলে বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে খবর রটে যায়। যদিও অনেকে সেটা গোপন রাখতে চান। তবে আপনার সঙ্গী কি আপনার আর তার সম্পর্ক নিয়ে ইদানিং ইস্ততত করছেন। সেই জায়গায় অন্য কারোর নাম সঙ্গীর নামের সঙ্গে বারবার জড়িয়ে কানাঘুষো রটছে কি?
সোশ্যাল মিডিয়া- অনেকে মুখে যে কথা বলতে পারেন না, সেকথা তড়তড় করে বলে দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অন্তত মনের কথা নিয়ে একটি বার্তা দেন। সেক্ষেত্রে সঙ্গীর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের দিকে খেয়াল রাখা যেতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে, তার পোস্টগুলোতে কোনো বিশেষ কারোর কমেন্ট কি বেশি পড়ছে? সেই কমেন্টে কোনো ইঙ্গিত থাকছে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তবে কাউকে অযথা ‘স্টক’ বা ধাওয়া করা ঠিক নয়।
আপনার সঙ্গে ঝগড়া কি বাড়ছে- লক্ষ্য রাখতে হবে, কথায় কথায় ইদানিং সঙ্গী কি আপনাকে নিয়ে বিরক্ত? ঝগড়া কি বাড়ছে? তবে সব ধরনের বিরক্তি মানেই কাউকে ছেড়ে চলে যাওয়া নয়। সেই জায়গা থেকে দেখুন, আপনার খারাপ দিকগুলি তিনি কীভাবে পয়েন্ট আউট করছেন। আপনার সঙ্গে কারোর তুলনা হচ্ছে কী না!
সমাধানের টিপস- এই ধরনের সমস্যায় সব সময় খোলামেলা কথা বলা উচিত। অনেকেই ডবল ডেটিং নিয়ে সরাসরি স্বীকার করতে চান না। তবে সন্দেহ গাঢ় হলে সত্যিটা জানুন। যতক্ষণ না জানতে পারছেন, কথা বলে যান। বিভিন্ন প্রশ্ন করলে সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।
রাস্তা বহু- সম্পর্কে তিক্ততা বাড়লে, সেই সম্পর্ক জুড়ে রাখা কঠিন। তা আপন খেয়ালেই শেষের দিকে যাবে। তবে তাতে যন্ত্রণা থেকেই যায়। তবে সম্পর্ক দুটি মানুষই যদি ধরে রাখতে চান, তাহলে কথা বলে মন হালকা করা জরুরি। সত্যি খোলাভাবে বললে কষ্টের বোঝা খানিকটা কমে। আর তা শান্তভাবে শোনার মধ্যেও থাকে বুদ্ধিমত্তা। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে সোমবার সন্ধ্যার দিকে। এ সময় গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।
এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়েছে থাইল্যান্ডের দেয়া তালিকা থেকে। বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম সিত্রাং শব্দটির উৎপত্তি অনুসন্ধানে একে থাইল্যান্ডের একটি বংশপদবি হিসেবে উল্লেখ করেছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম বলছে ভিয়েতনামি ভাষায় শব্দটির অর্থ ‘গাছের পাতা’। তবে এসব প্রতিবেদনের কোনোটিতেই সুনির্দিষ্ট সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
থাইল্যান্ডের প্রধান ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে সোমবার দুপুর পর্যন্ত সিত্রাং নিয়ে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। থাইল্যান্ডে সাধারণভাবে ব্যবহৃত বংশপদবির তালিকাতে সিথং, সিংথং সিথওয়াং, ত্রাং-এর মতো বিভিন্ন পদবি পাওয়া গেলেও সেখানে সিত্রাংয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
তবে অনলাইনে সিত্রাং শব্দের উৎপত্তি অনুসন্ধানে থাইল্যান্ডের একটি প্রদেশের তথ্য পাওয়া গেছে।
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে মালয় উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে এই ‘ত্রাং’ প্রদেশের অবস্থান। সাগরতীরের মনোরম এই এলাকাটি একসময় বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। থাইল্যান্ডে এই ত্রাং প্রদেশেই প্রথম রাবারগাছ রোপণ করা হয়। আর এই রাবারগাছ মালয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে ১৮৯৯ সালে এনেছিলেন ত্রাং প্রদেশের গভর্নর ফ্রায়া রাতসাদানুপ্রাদিত মাহিসন পাকরি।
ফ্রায়া রাতসাদানুপ্রাদিত একই সময়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে গ্রিন ইবোনি গাছ (Jacaranda filicifolia) এনে রোপণ করেন ত্রাং প্রদেশে। এই গাছ ও ফুল দারুণ ভালোবেসে ফেলেন স্থানীয়রা। একে প্রাদেশিক গাছ ও ফুল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। স্থানীয়ভাবে এর নাম রাখা হয় ‘সি-ত্রাং’ বা ‘স্রি-ত্রাং’। থাইল্যান্ডের প্রতিটি প্রদেশেই এভাবে আলাদা আলাদা প্রাদেশিক গাছ ও ফুল রয়েছে।
ত্রাং প্রদেশের স্লোগান হলো- ‘เมืองพระยารัษฏา ชาวประชาใจกว้าง ถิ่นกำเนิดยางพารา เด่นสง่าดอกศรีตรัง ปะการังใต้ทะเล เสน่ห์หาดทรายงาม น้ำตกสวยตระการตา।’ বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায় ‘ফ্রায়া রাতসাদার শহর, উদার মানুষ, শূকরের সুস্বাদু রোস্ট, রাবারগাছের প্রথম শহর, প্রাদেশিক ফুল সি ত্রাং, পানির নিচে প্রবাল প্রাচীর, মনোরম সৈকত এবং জলপ্রপাত।’
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ সিত্রাং হওয়ার পেছনে থাইল্যান্ডের ত্রাং প্রদেশের সি-ত্রাংয়ের যোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ঘূর্ণিঝড় নামকরণে ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) একটি তালিকা রয়েছে। সেখানে সিত্রাংয়ের উচ্চারণের ক্ষেত্রেও ‘সি’ এবং ‘ত্রাং’ শব্দ দুটিকে আলাদা কিন্তু সম্পর্কিত (হাইফেনের মাধ্যমে যুক্ত) হিসেবে দেখানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম কীভাবে দেয়া হয়
ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) তালিকা অনুসারে চক্রাকারে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর দেয়া নাম অনুযায়ী নামকরণ হয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর।
এই তালিকা অনুযায়ী এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম (সিত্রাং) দিয়েছে থাইল্যান্ড। এর আগের ঝড়টির নাম দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সিংহলি ভাষায় ওই ঝড় ‘আসানি’ শব্দের অর্থ ছিল ‘ক্রোধ’।
ডব্লিউএমওর ৪৫তম বার্ষিক সভা হয় ২০১৮ সালে। ওমানের রাজধানী মাসকাটে অনুষ্ঠিত সেই সভায় দীর্ঘ মেয়াদে যেসব ঘূর্ণিঝড় আসবে সেগুলোর নাম চূড়ান্ত করা হয়।
উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম এরই মধ্যে নির্ধারিত করা আছে। এই অঞ্চলের ১৩টি দেশের ১৩টি করে দেয়া নামের ভিত্তিতে ১৩টি চক্রে আছে মোট ১৬৯টি ঝড়।
প্রতিটি চক্রের শুরু হয় বাংলাদেশের দেয়া নামের ঝড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশের দেয়া নামগুলোর মধ্যে রয়েছে নিসর্গ, বিপর্যয়, অর্ণব, উপকূল, বর্ষণ, রজনী, নিশীথ, ঊর্মি, মেঘলা, সমীরণ, প্রতিকূল, সরোবর, মহানিশা। নিসর্গ এরই মধ্যে আঘাত হেনেছে উপকূলে।
ইংরেজি বর্ণক্রমিক দিক থেকে অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে থাকার কারণেই বাংলাদেশের দেয়া ঝড়ের নাম প্রতি চক্রের শুরুতে থাকে।
সিত্রাংয়ের পর এই অঞ্চলে যে ঝড়টি তৈরি হবে তার নাম হবে ‘মানদউস’। এ নামটি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর পরে বর্তমান চক্রের শেষ ঘূর্ণিঝড়টি আসবে ‘মোখা’ নামে। এ নামটি দিয়েছে ইয়েমেন।
কেন দেয়া হয় সাইক্লোনের নাম?
ডব্লিউএমওর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী সাইক্লোনের নামকরণ হয় পাঁচটি কারণে:
১. প্রতিটি সাইক্লোনকে আলাদা করে চেনার জন্য
২. এর গতিবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে
৩. একই অঞ্চলে একই সময়ে একাধিক সাইক্লোনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূর করতে
৪. দ্রুত বহুজনের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে
৫. সহজে উপকূলীয় সাইক্লোনগুলোকে মনে রাখতে
আরও পড়ুন:বিলুপ্ত হোমিনিনের (মানুষের আদি নিকটাত্মীয়) জিনগত সঞ্চার এবং মানব বিবর্তনের সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসায় নোবেল জয় করেছেন সুইডেনের বিজ্ঞানী এসভান্তে পেবো। প্রায় দুই দশকের গবেষণায় পেবো উদ্ঘাটন করেছেন অতীতে বিলুপ্ত হোমিনিনগুলোর চেয়ে আমাদের হোমো সেপিয়েন্স কীভাবে আলাদা।
তবে বিলুপ্ত হোমিনিনের কিছু জিন সঞ্চারিত হয়েছে হোমো সেপিয়েন্সে যা এখনও সক্রিয়।
নোবেল কমিটি বলেছে, ‘মানুষ সব সময়েই তার শেকড় অনুসন্ধান করছে। আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং আমাদের আগে যারা এসেছিল তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী?
‘তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণার মাধ্যমে এসভান্তে পেবো আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কিছু উদ্ঘাটন করেছেন। তিনি বর্তমান সময়ের মানুষের বিলুপ্ত নিকটাত্মীয় নিয়ান্ডারথালের জিন মানচিত্র তৈরি করেছেন। তিনি আমাদের অজানা হোমিনিন ডেনিসোভার অস্তিত্বও আবিষ্কার করেছেন।’
পেবো প্রমাণ করেছেন, প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে অভিবাসনের পর আন্তঃপ্রজননের মাধ্যমে হোমো সেপিয়েন্সে বিলুপ্ত হোমিনিনের জিনগত স্থানান্তর ঘটে।
এসভান্তে পেবোর আবিষ্কারের গুরুত্ব নিয়ে নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধ ভাষান্তর করা হয়েছে নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
আধুনিক মানুষের উদ্ভব কীভাবে
বর্তমান মানুষের উদ্ভব কীভাবে, সেই প্রশ্নে নোবেল কমিটি বলছে, ‘আমাদের উদ্ভবের উৎস এবং কী কারণগুলো আমাদের অনন্য করছে সেই প্রশ্ন প্রাচীনকাল থেকেই মানব মনকে আচ্ছন্ন রেখেছে।
‘জীবাশ্মবিদ্যা এবং প্রত্নতত্ত্ব মানব বিবর্তনের গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে আধুনিক মানুষ বা হোমো সেপিয়েন্সের শারীরবৃত্তীয় রূপটি এখন থেকে আনুমানিক ৩ লাখ বছর আগে আফ্রিকায় প্রথম বিকশিত হয়।
‘অন্যদিকে আমাদের নিকটতম আত্মীয় নিয়ান্ডারথাল আফ্রিকার বাইরে বিকশিত হয়েছিল ৪ লাখ বছর আগে। এখন থেকে ৩০ হাজার বছর আগে পর্যন্ত তারা ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার জনবসতি গড়ে তুলেছিল এবং এই সময়ের মধ্যেই তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
‘প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে হোমো সেপিয়েন্সের দল আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসিত হয় এবং সেখান থেকে তারা বাকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। হোমো সেপিয়েন্স এবং নিয়ান্ডারথালরা এভাবে হাজার হাজার বছর ধরে ইউরেশিয়ার বিশাল অংশে সহাবস্থান করেছিল।’
নোবেল কমিটি বলছে ‘জিনগত তথ্য থেকে বিলুপ্ত নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে সূত্র পাওয়া যেতে পারে। ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে প্রায় সমগ্র মানবজাতির জিন মানচিত্র তৈরি করা গেছে। এটি ছিল এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, যার মাধ্যমে বিভিন্ন মানব জনগোষ্ঠীর মধ্যে জিনগত সম্পর্ক নিয়ে পরবর্তী গবেষণার পথ খুলে যায়।
‘বর্তমান সময়ের মানুষ এবং বিলুপ্ত নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা থেকে উদ্ধার হওয়া জিনগত ডিএনএর পর্যায়ক্রমিক সজ্জা তৈরির প্রয়োজন ছিল।’
আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব এক কাজ
দৃশ্যত সেই অসম্ভব কাজটিই করেছেন সুইডেনের বিজ্ঞানী এসভান্তে পেবো। কর্মজীবনের গোড়ার দিকে তিনি নিয়ান্ডারথালদের ডিএনএ বিশ্লেষণে আধুনিক জেনেটিক পদ্ধতি ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তবে শিগগিরই চরম প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিএনএ রাসায়নিকভাবে পরিবর্তীত হয় এবং টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
হাজার হাজার বছর পরে ডিএনএ-র সামান্য পরিমাণ অবশেষ থাকে এবং এই অবশেষ ব্যাকটেরিয়া এবং আধুনিক মানুষের ডিএনএ দ্বারা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়।
পোস্টডক্টরাল ছাত্র হিসেবে এসভান্তে পেবো এ পর্যায়ে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রগামী গবেষক অ্যালান উইলসনের সঙ্গে যোগ দেন। তারা কয়েক দশকের চেষ্টায় নিয়ান্ডারথাল থেকে পাওয়া ডিএনএ অধ্যয়নের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
পেবো ১৯৯০ সালে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেয়ার পরেও প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণের গবেষণা অব্যাহত রাখেন। তিনি নিয়ান্ডারথালের মাইটোকন্ড্রিয়া থেকে ডিএনএ বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত নেন। কোষের পাওয়ার হাউজ হিসেবে পরিচিত মাইটোকন্ড্রিয়া নিজস্ব ডিএনএ ধারণ করে।
মাইটোকন্ড্রিয়াল জিন আকারে ছোট এবং এটি কোষের জিনগত তথ্যের ভগ্নাংশ ধারণ করে। তবে এই ডিএনএর হাজার হাজার কপি থাকে বলে এগুলোর বিশ্লেষণ তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
এসভান্তে পেবো তার পরিমার্জিত পদ্ধতির সাহায্যে ৪০ হাজার বছরের পুরানো একটি হাড় থেকে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বিশ্লেষণ করেন। এভাবে প্রথম হোমো সেপিয়েন্সের একটি বিলুপ্ত নিকটাত্মীয়ের জিন মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়। এরপর সেটির সঙ্গে বর্তমান মানুষ ও শিম্পাঞ্জির জিন মানচিত্র তুলনা করে প্রমাণিত হয় নিয়ান্ডারথালরা ছিল জিনগতভাবে আলাদা।
নিয়ান্ডারথালের জিন মানচিত্র তৈরি
নিয়ান্ডারথালের মাইটোকন্ড্রিয়ালের জিন থেকে সীমিত তথ্য পাওয়ার কারণে এসভান্তে পেবো আরও সামনে এগোনোর চ্যালেঞ্জ নেন। তিনি নিয়ান্ডারথালের পারমাণবিক জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কঠিন পথে এগোতে থাকেন।
এ সময়ে তিনি জার্মানির লিপজিগে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সুযোগ পান। নতুন এই ইনস্টিটিউটে পেবো ও তার দল প্রাচীন হাড়ের অবশেষ থেকে ডিএনএ বিচ্ছিন্ন করে সেগুলো বিশ্লেষণের পদ্ধতিকে ক্রমাগত উন্নত করেন।
গবেষণায় শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সাফল্য আসে। পেবো আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করে তোলেন এবং ২০১০ সালে প্রথম নিয়ান্ডারথালের পূর্ণাঙ্গ জিন মানচিত্র তৈরিতে সক্ষম হন। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিয়ান্ডারথাল এবং হোমো সেপিয়েন্সের সবশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ প্রায় ৮ লাখ বছর আগে এই পৃথিবীতে বসবাস করত।
পেবো ও তার সহকর্মীরা এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে নিয়ান্ডারথাল এবং আধুনিক মানুষের মধ্যে সম্পর্ক অনুসন্ধানে সক্ষম। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আফ্রিকা থেকে উদ্ভূত বর্তমান মানুষের তুলনায় ইউরোপ বা এশিয়া থেকে উদ্ভূত মানুষের ডিএনএ বিন্যাসের সঙ্গে নিয়ান্ডারথালদের ডিএনএ বিন্যাসের বেশি মিল রয়েছে। এর অর্থ, নিয়ান্ডারথাল এবং হোমো সেপিয়েন্স তাদের হাজার বছরের সহাবস্থানের সময়ে আন্তঃপ্রজনন করেছে।
ইউরোপ বা এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষের জিনের প্রায় ১-৪ শতাংশ এসেছে নিয়ান্ডারথাল থেকে।
চাঞ্চল্য জাগানো আবিষ্কার ‘ডেনিসোভা’
সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ডেনিসোভা গুহায় ২০০৮ সালে ৪০ হাজার বছরের পুরোনো একটি আঙুলের হাড়ের খণ্ডাংশ আবিষ্কৃত হয়। এই হাড়ের ডিএনএ ছিল প্রায় অপরিবর্তীত।
এসভান্তে পাবোর দল এটির জিন মানচিত্র তৈরির পর চমকে যায়। নিয়ান্ডারথাল এবং আধুনিক মানুষের সমস্ত ডিএনএ বিন্যাসের তুলনায় ওই পূর্বপুরুষের ডিএনএ বিন্যাস ছিল আলাদা।
এর মাধ্যমে পেবো একটি অজানা হোমিনিন (আদি নিকটাত্মীয়) আবিষ্কার করেন, যাদের নাম দেয়া হয় ডেনিসোভা। বিশ্বের বিভিন্ন অংশের মানুষের ডিএনএর সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, ডেনিসোভা এবং হোমো সেপিয়েন্সের মধ্যেও জিন আদান-প্রদান হয়েছে।
এই আন্তঃসম্পর্কটি প্রথমে মেলানেশিয়া (দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ওশেনিয়ার একটি উপ-অঞ্চল। এই অঞ্চলে চারটি স্বাধীন দেশ হলো ফিজি, ভানুয়াতু, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং পাপুয়া নিউ গিনি) অঞ্চলে দেখা যায়। এছাড়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ডেনিসোভার জিনের সঞ্চার লক্ষ্য করা গেছে। এসব অঞ্চলের মানুষ সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ পর্যন্ত ডেনিসোভা ডিএনএ ধারণ করছেন।
পেবোর আবিষ্কারগুলো আধুনিক মানুষের বিবর্তনীয় ইতিহাস সম্পর্কে নতুন তথ্য উন্মোচন করেছে। প্রমাণ হয়েছে হোমো সেপিয়েন্স আফ্রিকা থেকে অভিবাসিত হওয়ার সময় ইউরেশিয়ায় অন্তত দুটি বিলুপ্ত হোমিনিন জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল।
নিয়ান্ডারথালরা পশ্চিম ইউরেশিয়ায় বাস করত, আর ডেনিসোভাদের আবাস ছিল মহাদেশের পূর্ব অংশে। আফ্রিকার বাইরে হোমো সেপিয়েন্সদের সম্প্রসারণের সময় তারা শুধু নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গেই নয়, ডেনিসোভাদেরও মুখোমুখি হয়েছিল।
প্যালিওজেনোমিক্স কেন যুগান্তকারী
এসভান্তে পাবো তার যুগান্তকারী গবেষণার মাধ্যমে প্যালিওজেনোমিক্স নামে বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ নতুন একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিক আবিষ্কারের পর তার দল বিলুপ্ত হোমিনিন থেকে আরও বেশ কিছু জিন মানচিত্র তৈরি ও বিশ্লেষণ করেছে।
তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে জানা গেছে, প্রাচীন হোমিনিনগুলো আফ্রিকার হোমো সেপিয়েন্সের সঙ্গে আন্তঃপ্রজনন ঘটিয়েছে।
এখন পরিষ্কারভাবে বলা যায়, বিলুপ্ত নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে পাওয়া প্রাচীন জিন বর্তমানের আধুনিক মানুষের শরীরের ওপরে প্রভাব রাখছে। যেমন ইপিএএসওয়ান জিনটি এসেছে ডেনিসোভাদের কাছ থেকে। এটি অতিরিক্ত উচ্চতায় মানুষকে টিকে থাকতে সাহায্য করে, তিব্বতের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই জিনের অস্তিত্ব রয়েছে। এছাড়া, নিয়ান্ডারথালের জিন বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
মানুষ কেন অনন্য
নিয়ান্ডারথাল বা ডেনিসোভারা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বিশ্বব্যাপী এখন দাপটের সঙ্গে টিকে রয়েছে হোমো সেপিয়েন্স।
হোমো সেপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষ জটিল সংস্কৃতির পাশাপাশি একের পর এক উন্নত উদ্ভাবন ঘটিয়ে নিজেদের অনন্য করে তুলেছে। সেই সঙ্গে সব বাধা অতিক্রম করে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে মানুষের।
নিয়ান্ডারথালরাও দলবদ্ধভাবে বাস করত এবং তাদের মস্তিষ্কের আকার ছিল বড়। তারাও জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরঞ্জামের সাহায্য নিয়েছে, তবে কয়েক হাজার বছর ধরে সেগুলো উন্নত করার গতি ছিল তুলনামূলক অনেক কম। ফলে হোমো সেপিয়েন্সের লাখখানেক বছর আগে উদ্ভব হলেও শেষ পর্যন্ত বিলুপ্তির পথে হাঁটতে হয়েছে নিয়ান্ডারথালদের।
আরও পড়ুন:অট্টহাসি, মুচকি হাসি, ফিচকে হাসি- কত ধরনের হাসিই না আমাদের মুখে অহরহ খেলে যায়। আমরা কেন হাসি, সেটাও অনেকের কাছে মনে হতে পারে ‘হাস্যকর’ প্রশ্ন।
ঠিক আছে, এই প্রশ্ন শুনে মন খুলে হেসে নিন, কিন্তু তারপর একটু ভেবে বলুন তো- কেন আমরা হাসি?
সাধারণভাবে হাসির কারণ অতি সাধারণ মনে হলেও বাস্তবে এর তল পাওয়া খুবই কঠিন। সাধারণ হাসি মোটেই কিন্তু সাধারণ নয়; উল্টো এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুগভীর মনোবিজ্ঞান, জটিল স্নায়বিক ক্রিয়াকলাপ, এমনকি বেশখানিকটা দার্শনিকতাও।
আমরা সব সময় খুশির কারণে হাসি- তেমনটি মোটেই সত্যি নয়। গভীর দুঃখের মাঝেও আমরা ফিক করে হেসে ফেলতে পারি, অন্যের দুর্দশাও আমাদের মুখে হাসি ছড়িয়ে দিতে পারে, নিজের বিব্রতকর পরিস্থিতি আড়াল করতেও হাসির আশ্রয় নিতে পারি আমরা।
হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিস্তর জটিলতা নিয়ে সায়েন্টিফিকআমেরিকানে প্রকাশিত নিবন্ধের কিছুটা সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করা হয়েছে নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।
‘হাউ মেনি সাইকোলজিস্টস ডাজ ইট টেক… টু এক্সপ্লেইন আ জোক?’- এমন শিরোনামের বাংলা করা যেতে পারে একটি কৌতুকের ব্যাখ্যার জন্য কতজন মনোবিজ্ঞানীর দরকার?
মনোবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান জ্যারেট ২০১৩ সালে এই শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। এতে তিনি বলেছেন, বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি জানেন না মানুষ কেন হাসে।
এককথায় বলা চলে হাস্যরসের ধারণাটিই রহস্যময়। সবাই জানেন ও বোঝেন হাস্যরস কী, তবে একে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা বা এর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা কঠিন। হাস্যরস থেকে অট্টহাসি বা চাপা হাসির উদ্রেগ হতে পারে। নাটক, সিনেমা, কোনো ঘটনা, ছবি কিংবা শব্দ থেকে আমরা হাস্যরসের উপাদান পেতে পারি। নিরীহ কৌতুক থেকে শুরু করে, কড়া বিদ্রূপ, শারীরিক অঙ্গভঙ্গিও আমাদের মস্তিষ্ককে নাড়া দিয়ে যায়।
হাস্যরসের উৎস অনুসন্ধানে কিছু গবেষণা হয়েছে। বলাই বাহুল্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব উৎস আমাদের দৈনন্দিন জীবনকেন্দ্রিক।
শ্রেষ্ঠত্ব ও পরিত্রাণ
দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে পণ্ডিতরা ভেবেছেন, সব ধরনের হাস্যরসের একটি সাধারণ উপাদান রয়েছে। এই উপাদানের খোঁজ প্রথম করেছেন দার্শনিকেরা, পরে যোগ দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা। মনোবিজ্ঞানীরা দার্শনিক ধারণাগুলোকে পরীক্ষামূলক ধারণায় রূপান্তর ঘটিয়েছেন।
হাস্যরস নিয়ে প্রাচীনতম তত্ত্বটি হলো, শ্রেয়তর বোধ থেকে কোনো মানুষ অন্যের দুর্ভাগ্যের মাঝে হাস্যরস খুঁজে পায় ও হাসে। প্লেটো থেকে শুরু করে অন্য গ্রিক দার্শনিকেরাও এ তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন।
এরপর আঠারো শতকে আসে পরিত্রাণের তত্ত্ব। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের দেয়া এ তত্ত্ব অনুসারে, হাসি মানুষকে নার্ভাস এনার্জি থেকে মুক্ত করে বা চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ফ্রয়েড ব্যাখ্যা করেছেন, নিষিদ্ধ অশ্লীলতা, যৌনতাবিষয়ক বিদ্রূপগুলো কেন আমাদের কাছে মজাদার মনে হয়। এসব কৌতুকের চূড়ান্ত মুহূর্তে দৃশ্যত অনুপযুক্ত আবেগ দমনের চেষ্টা মানুষের থাকে না, উল্টো তা হাসির রূপ ধরে প্রকাশিত হয়।
হাস্যরসের তৃতীয় ব্যাখ্যা হলো, অসংগতি তত্ত্ব। মানুষ প্রত্যাশা ও বাস্তবতার অসংগতিতে হাসে। অসংগতি তত্ত্বের মতোই আরেকটি তত্ত্ব হলো, কোনো ব্যক্তি একটি আপাত অসংগতির অপ্রত্যাশিত সমাধান বের করে ফেললেও হাসতে পারেন। যেমন, একজন ব্যক্তি কোনো বক্তব্যের দ্বৈত অর্থ ধরে ফেললে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সেটি আবিষ্কার করেন, এ সময় তার হাসি পায়।
মৃদু লঙ্ঘন
ওপরের ব্যাখ্যাগুলো থেকে অনেক কিছু পরিষ্কার, তবে এগুলো থেকে সব জবাব মেলে না। এসব তত্ত্ব সব ধরনের হাস্যরসের ব্যাখ্যা দেয় না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ওপরের ব্যাখ্যা স্ল্যাপস্টিকের আবেদনকে পুরোপুরি পরিষ্কার করে পারে না। স্ল্যাপস্টিক হলো ইচ্ছাকৃতভাবে করা কিছু আনাড়ি কমর্কাণ্ড অথবা বিব্রতকর ঘটনার ওপর ভিত্তি করে হাস্যকর কমেডি।
সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স জার্নালে ২০১০ সালে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের এ. পিটার ম্যাকগ্রা ও কেইলেব ওয়ারেন আগের তত্ত্বগুলোর সীমাবদ্ধতা দূর করতে ‘মৃদু লঙ্ঘন’ নামে নতুন একটি তত্ত্বের প্রস্তাব করেন।
ম্যাকগ্রা ও ওয়ারেনের প্রস্তাবিত তত্ত্ব অসংগতি তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত, তবে এর আওতা আরও বিস্তৃত।
তাদের মতে, একজন ব্যক্তি যখন স্বীকার করেন যে একটি নৈতিক, সামাজিক বা শারীরিক নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে, তবে এই লঙ্ঘনটি খুব আপত্তিকর, নিন্দনীয় বা বিরক্তিকর নয়; তেমন পরিস্থিতিও হাস্যরসের জন্ম দিতে পারে। অবশ্য নিয়ম লঙ্ঘনকে সব সময়েই ‘বড় সমস্যা’ হিসেবে দেখা লোকজন এ ধরনের রসিকতায় উল্টো বিরক্ত হতে পারেন।
উদাহরণ হিসেবে গির্জার একটি গল্প বিবেচনা করা যেতে পারে। সদস্য সংগ্রহের জন্য তারা বিশেষ অফার দিয়েছিল। প্রথম ছয় মাসে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে র্যাফেল ড্র করে বিজয়ীকে একটি এসইউভি গাড়ি পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সবাই পরিস্থিতিটিকে অসংগতিপূর্ণ বলে ধরে নিয়েছে, শুধু অবিশ্বাসীরা এটি নিয়ে সহজেই হাসতে পেরেছেন।
বহুল প্রচলিত একটি বিষয় হচ্ছে, হাস্যরস হলো ট্র্যাজেডি প্লাস টাইম। ম্যাকগ্রা, ওয়ারেন ও তাদের সহকর্মীরা ২০১২ সালে সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স জার্নালে এ ধারণাটিকে সমর্থন করেন। গুরুতর দুর্ভাগ্যের স্মৃতি (যেমন একটি গাড়ি দুর্ঘটনা) যত বেশি সময় যায়, ততই মজাদার মনে হতে পারে।
ভৌগোলিক বা মানসিক দূরত্বও এমন পরিস্থিতি তৈরি করে। একটি পরীক্ষায়, স্বেচ্ছাসেবকরা অদ্ভুতুড়ে ছবি দেখে বিমোহিত হয়েছেন (যেমন এক ব্যক্তি তার নাকে আঙুল দিয়ে চোখ দিয়ে বের করেছে)। ছবিগুলো ফটোশপে তৈরি করা জানার পর তারা বিমোহিত হন।
বিপরীতে, সাধারণ বিপত্তিকে (একজন ব্যক্তির দাড়ি বরফে জমে যাওয়ার ছবি) সত্যি বলে বিশ্বাস করার পর তারা বেশি হেসেছেন। ম্যাকগ্রার যুক্তি হলো, কোন জিনিস কতটা খারাপ এবং এটি কতটা দূরত্বে আছে তার মধ্যে ভারসাম্য ঠিক থাকলে একটা সর্বোত্তম কমিক পয়েন্ট পাওয়া যায়।
বিবর্তন তত্ত্ব
মৃদু লঙ্ঘনের ধারণাতেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি হাসির কারণ বর্ণনা করে, কিন্তু ব্যাখ্যা করে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মানুষের বিবর্তনীয় সাফল্যের পেছনে হাস্যরসের ভূমিকা রয়েছে। নিউ মেক্সিকো ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানী গিল গ্রিনগ্রস বলেন, হাস্যরস ও হাসি প্রতিটি সমাজে, একই সঙ্গে বনমানুষ (এইপ) ও এমনকি ইঁদুরের মাঝেও রয়েছে। এই সর্বজনীনতা একটি বিবর্তনীয় ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়।
কোয়ার্টারলি রিভিউ অফ বায়োলজির ২০০৫ সালের ইস্যুতে নিউ ইয়র্কের বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির বিবর্তনবিদ ডেভিড স্লোয়েন উইলসন ও তার সহকর্মী ম্যাথিউ জার্ভেইস হাস্যরসের বিবর্তনমূলক সুবিধা ব্যাখ্যা করেছেন।
উইলসন ‘গ্রুপ সিলেকশন’ তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা। এই তত্ত্বে মনে করা হয়, আমাদের মতো সামাজিক প্রাণী প্রাকৃতিক নির্বাচনের সময় এমন বৈশিষ্ট্যগুলো গ্রহণ করে যা শুধু ব্যক্তিদের নয়, পুরো গোষ্ঠীর টিকে থাকাকে সাহায্য করে।
উইলসন ও জারভেইস দুটি ভিন্ন ধরনের হাসির ক্ষেত্রে মানুষের গ্রুপ সিলেকশনের ধারণাটি প্রয়োগ করেন। স্বতঃস্ফূর্ত, সংবেদনশীল, আবেগপ্রবণ ও অনিচ্ছাকৃত হাসি হলো আমোদ ও আনন্দের একটি প্রকৃত অভিব্যক্তি। একই সঙ্গে এগুলো মজা করার প্রতিক্রিয়া; এটি শিশুর হাসিতে বা সুড়সুড়ি দেয়ার সময় দেখা যায়।
আনন্দের এ প্রদর্শনকে ডুসেন হাসি বলা হয়। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গুইলেম বেঞ্জামিন আমান্দ ডুসেন দ্য বুলোন প্রথম এমন হাসির বর্ণনা দেন। বিপরীতে, নন-ডুসেন হাসি কোনো স্বতঃস্ফূর্ত হাসির আবেগপূর্ণ অনুকরণ নয়। মানুষ একে একটি ঐচ্ছিক সামাজিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন, কথোপকথন মজার না হলেও মানুষ হাসির ব্যবহার করে।
উইলসন ও জারভেইস বলেন, মুখের অভিব্যক্তি ও তাদের নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুপথ দুই ধরনের হাসির পার্থক্য গড়ে দেয়। ডুসেন হাসির উদ্ভব হয় মস্তিষ্কের স্টেম ও লিম্বিক সিস্টেমে (যেটি আবেগের জন্য দায়ী)। নন-ডুসেন হাসি ফ্রন্টাল কর্টেক্সের প্রি-মোটোর এলাকা (পরিকল্পনা অংশগ্রহণ করে যে অংশ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
উইলসন ও জারভেইসের মতে, দুই ধরনের হাসি ও এর পেছনের স্নায়বিক প্রক্রিয়া বিভিন্ন সময়ে বিবর্তিত হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত হাসির শিকড় প্রাথমিক পর্যায়ের প্রাইমেটদের খেলার মধ্যেও রয়েছে এবং এর সঙ্গে প্রাণীর কণ্ঠস্বরের মিল লক্ষ করা যায়। সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিদিনকার কথোপকথন, অবজ্ঞা ও উপহাসের উদ্ভবের সঙ্গে ধীরে ধীরে ‘নিয়ন্ত্রিত হাসিও’ বিকশিত হয়ে থাকতে পারে।
গবেষকরা মনে করছেন, প্রাইমেটদের হাসি ধীরে ধীরে বিভিন্ন পর্যায়ে জৈবিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছে। ২০ লাখ থেকে ৪০ লাখ বছর আগে মানুষের পূর্বপুরুষদের মধ্যে মানসিক ও সামাজিক সংযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে ‘ডুসেন হাসি’।
সামাজিক নিয়মের অযৌক্তিক লঙ্ঘনকে ‘প্রোটোহিউমার’ বলছেন উইলসন ও জারভেইস। এ ধরনের হিউমার গ্রুপের কোনো সদস্যের হাসিকে অন্যদের জন্য স্বস্তিদায়ক, নিরাপদ ও হালকা আবেগের পথ প্রশস্ত করে দেয়।
পরবর্তীকালে মানব পূর্বপুরুষ আরও পরিশীলিত জ্ঞানীয় ও সামাজিক দক্ষতা অর্জনের পর ডুসেন হাসি ও প্রোটোহিউমার সব জটিল পরিস্থিতিতে হাস্যরসের ভিত্তি হয়ে ওঠে। এ পর্যায়ে কৌশলগত, হিসেবি, এমনকি উপহাসমূলক ও আক্রমণাত্মক নন-ডুসেন হাসিরও উদ্ভব ঘটে।
হাস্যরস ও হাসি যৌনসঙ্গী নির্বাচন এবং আগ্রাসী মনোভাব অবদমনে ভূমিকা রাখে বলেও মনে করেন অনেক গবেষক।
ভুল বের করা
ইনসাইড জোকস: ইউজিং হিউমার টু রিভার্স ইঞ্জিনিয়ার দ্য মাইন্ড শিরোনামের বইটি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। এর রচয়িতা আমেরিকার ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি অফ ব্লুমিংটনের ম্যাথিউ এম হার্লি, টাফটস ইউনিভার্সিটির ড্যানিয়েল ডেনেট ও পেনসিলভিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির রেজিনাল অ্যাডামস জুনিয়র।
হার্লি তার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, ‘হাস্যরস কোনো না কোনো ভুলের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রতিটি শ্লেষ, কৌতুক ও হাস্যরসাত্মক ঘটনার মধ্যে বোকাসোকা কারও ভুল থাকে বলে মনে হয়।’
সবাই ওই ভুলটি উপভোগ করেন। তবে এখানে প্রশ্ন হলো, ভুলটি কোনো অপছন্দের ব্যক্তি বা প্রতিদ্বন্দ্বী করে থাকলে মজা করা স্বাভাবিক, কিন্তু প্রিয়জনের ভুলও কেন আমরা উপভোগ করি?
হার্লির মতে, ভুল করাকে আমরা উপভোগ করি না, বরং ভুলটিকে চিহ্নিত করার বিষয়টি উপভোগ করি।
হার্লির পর্যবেক্ষণ, আমাদের মস্তিষ্ক ক্রমাগত অনুমান করতে থাকে পরে কী হবে ও অন্যদের উদ্দেশ্য কী। সার্বক্ষণিক এ প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই হাস্যরস বিকশিত হয়েছে। মানুষ তার প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে নিরীহ অসংগতিগুলো খুঁজে বের করে আনন্দ পায়। হাসি আমাদের অসংগতিগুলো শনাক্ত করার ক্ষমতার একটি সর্বজনীন লক্ষণ। এটি একটি চিহ্ন, যা আমাদের সামাজিক মর্যাদা উন্নত করে এবং আমাদের প্রজনন অংশীদারদের আকৃষ্ট করে।
কৌতুক (জোক) এটি একটি ‘অতি স্বাভাবিক’ উদ্দীপনা, যা যৌন আনন্দেরও বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ক্ষেত্রে ভুল ধরার ফলে এ আনন্দ অনুভূত হয়। ২০১৩ সালে হার্লি মনোবিজ্ঞানী জ্যারেটকে বলেছিলেন, মানুষ কী কারণে হাসে সে তত্ত্বটি আসলে অনুমানেরও বাইরের। এটি হাস্যরসের জ্ঞানীয় মূল্য ও টিকে থাকার ভূমিকাকেও ব্যাখ্যা করে।
তার পরও গ্রিনগ্রস ইনসাইড জোকসের একটি পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছেন, এই তত্ত্বটিও অসম্পূর্ণ। এটি কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিলেও আরও কিছু বিষয় অমীমাংসিত রাখে। যেমন, ‘কেন আমাদের মেজাজ বা অন্যান্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে হাস্যরস ও উপভোগের উপলব্ধি পরিবর্তিত হয়?’
ইতালিয়ান মনোবিজ্ঞানী ও হাস্যরস নিয়ে গবেষণায় যুক্ত জার্নাল আরআইএসইউর (রিভিসতা ইতালিয়ানা দি স্তুদি সুলুমোরিসমো) সম্পাদক জোভান্নাতোনিও ফোরাবস্কোও বিষয়টিতে একমত।
তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি।’
যে প্রশ্নের উত্তর নেই
অনেক প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডের রবার্ট প্রোভাইন তার ‘কারেন্ট ডিরেকশনস ইন সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স’ বইয়ে দেখিয়েছেন, মানুষ একা যতটা হাসে, অন্যেদের সঙ্গে তার ৩০ গুণ বেশি হাসে। প্রোভাইন ও তার ছাত্ররা একটি গবেষণায় গোপনে মানুষকে তাদের দৈনন্দিন কাজের সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাসতে দেখেছেন।
ফোরবস্কো দেখেছেন, হাস্যরস ও হাসির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
তিনি বলেন, ‘হাসি একটা সামাজিক ঘটনা। হাস্যরস ছাড়াও হাসির উদ্রেগ হতে পারে। হাস্যরস যে সব সময় হাসি উৎপাদন করবে, তেমনটা নয়।’
তিনি এমন কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যেখানে একজন ব্যক্তির অবমাননা করা হয় বা যেখানে একটি পর্যবেক্ষণ মজার মনে হলেও তা থেকে হাসি পায় না।
আরেকটি আলোচনার বিষয় হলো, যৌন আকর্ষণ ও প্রজনন সাফল্যে হাস্যরসের ভূমিকা। গবেষকরা দেখেছেন, পুরুষের হাস্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং নারীদের ক্ষেত্রে হাস্যরসের প্রশংসা করার সম্ভাবনা বেশি। এর অর্থ হলো, পুরুষ মনোযোগ পেতে এ জন্য বেশি প্রতিযোগিতা করে এবং নারীরা বেছে নেয়।
ফোরাবস্কো বলেন, ‘কোনো একক তত্ত্ব দিয়ে হাস্যরসের রহস্য বের করার কথা ভাবাটা বাড়াবাড়ি। আমরা এর অনেকগুলো দিক অনুভব করতে পারি। এখন নিউরোসায়েন্স গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করতে সাহায্য করছে। এতে তা দিয়ে কোনো একক সারমর্ম বের করা সম্ভব নয়। যেমন করে ভালোবাসার একক কোনো সংজ্ঞা দেয়া যায় না। আমরা প্রেমিকের হৃদস্পন্দনের ওপর প্রেয়সীর দৃষ্টির প্রভাব পরিমাপ করতে পারি। তবে এর মাধ্যমে ভালোবাসার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। হাস্যরসের বিষয়টিও একই রকম।’
তবু কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য এখন বিজ্ঞান দ্বারা স্বীকৃত। ফোরাবস্কোর মতে, এর একটি হলো অসংগতির উপলব্ধি।
তিনি বলেন, ‘এটা জরুরি কিন্তু পর্যাপ্ত নয়, কারণ কিছু অসংগতি রয়েছে যেগুলো হাস্যকর নয়। যে কারণে অন্য কী উপাদান আছে সেগুলো আমাদের খুঁজে দেখতে হয়। আমার মনে হয়েছে, অসংগতি সম্পূর্ণরূপে সমাধান না করে উপশম করা প্রয়োজন।’
অন্যান্য জ্ঞানীয় ও মনস্তাত্ত্বিক উপাদান থেকে কৌতুকের অনুসন্ধান করা যেতে পারে। ফোরাবস্কোর মতে, এগুলোর মধ্যে আগ্রাসন, যৌনতা, বিকৃতমনা ও ছিদ্রান্বেষী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো কৌতুকে থাকতেই হবে তেমনটা নয়, তবে সবচেয়ে মজার কৌতুকগুলো এসব প্রসঙ্গ নিয়েই হয়। একইভাবে, মানুষ ওইসব রসিকতায় সবচেয়ে হাস্যরস পায়, যেগুলো ‘খুব বুদ্ধিদীপ্ত ও দুষ্টপ্রকৃতির।’
ফোরাবস্কো বলেন, ‘হাস্যরস কী? এটা হয়তো ৪০ বছর পর আমরা জানতে পারব।
আরও পড়ুন:মানুষ কেন উড়তে পারে না, এমন প্রশ্নে একবাক্যে প্রায় সবাই বলতে পারেন- ডানার অভাবে। অনেকের কাছে প্রশ্নটি আবার একদম শিশুতোষও ঠেকতে পারে।
তবে ডানা থাকলেও কি মানুষ উড়তে পারত- এমন প্রশ্নের জবাবটি কিন্তু বেশ কঠিন। কারণ, ডানা থাকার পরেও উড়তে পারে না, এমন প্রাণী এই পৃথিবীতে মোটেই বিরল নয়।
উটপাখি বা এমুর কথা আমরা সবাই জানি। ডানা থাকার পরেও ওদের জীবন কেটে যায় মাটিতেই। হাঁস-মুরগিরও আকাশে ভেসে বেড়ানোর রেকর্ড খুব একটা জুতসই নয়।
আবার ডানা না থাকার পরেও বাতাসে ভেসে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পারা প্রাণীও রয়েছে পৃথিবীতে। বেলুনিং স্পাইডারের কথাই ধরা যাক, বিশেষ কৌশলে এরা বহু কিলোমিটার বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে।
ফ্লাইং স্কুইড, ফ্লাইং ফিশ, ফ্লাইং স্কুইরেলের মতো কিছু ডানাহীন প্রাণীরও রয়েছে খানিকটা ওড়ার ক্ষমতা।
এর মানে হলো, উড়তে পারা বা না পারার কারণ কেবল ডানাকেন্দ্রিক করে ফেলার যুক্তি নেই। এমনকি এটি মূল কারণও নয়।
বিজ্ঞান বলছে, মানুষকে উড়তে না দেয়ার জন্য মূলত দায়ী পৃথিবীর অভিকর্ষ বল। মানুষের শরীরের গঠন এই অভিকর্ষ বলকে উপেক্ষা করে বাতাসে ভেসে থাকার উপযোগী নয়।
পৃথিবী অভিকর্ষ বলের মাধ্যমে সবকিছুকে কেন্দ্রের দিকে টানতে থাকে। আমাদের শরীর এই অভিকর্ষ বল অতিক্রমে সক্ষম নয়। ফলে আমাদের আজীবন সেঁটে থাকতে হয় পৃথিবীর বুকে।
বিপরীতে পাখির হালকা গড়ন এবং দেহের ফাঁপা হাড় অভিকর্ষ বল এড়াতে বেশ সাহায্য করে। শরীরের ভিতরের বায়ু থলি হালকা রাখে পাখিদের, এ জন্য বাতাসের মধ্যে দিয়ে মসৃণ গতিতে ভেসে বেড়াতে পারে এরা।
পাখির শারীরিক গঠনও ওড়ার জন্য বেশ সহায়ক। এই গঠনের ফলে ওড়ার সময় এরা তেমনভাবে বাতাসের বাধায় পড়ে না। অন্যদিকে ডানার পেশি শরীরের অন্য পেশির তুলনায় বেশ শক্তিশালী হওয়ায় ডানা ঝাপটাতেও সমস্যা হয় না পাখির।
পাখির ফুসফুসের গঠনও একে উড়তে সাহায্য করে। শ্বাস নেয়ার সময় ফুসফুস প্রচুর অক্সিজেন শোষণ করে, যা ডানার পেশিকে দীর্ঘ সময় সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে।
পাশাপাশি পাখির ডানার পালক বাতাসকে ওপর থেকে নিচের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে ভূমি থেকে সহজেই আকাশপানে উড়াল দিতে পারে এরা। বিমানের ডানা বা হেলিকপ্টার ব্লেডও ঠিক এ কাজটিই করে।
আর তাই পাখির আকাশে ওড়ার ঘটনা অনেকগুলো শর্তের যোগফল। তাই কেবল ডানা লাগিয়ে নিলেই মানুষের পক্ষে ওড়া সম্ভব নয়। ওটা কেবল গল্পের পরীদের জন্যই প্রযোজ্য; যে পরীরা উড়ে বেড়ায় শুধু আমাদের কল্পনায়।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মায়ের মৃত্যুর আগে পেট চিড়ে জন্ম নেয় শিশু। শনিবারের এই ঘটনা গুরুত্ব পায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। অনেকে বিষয়টিকে অলৌকিক বলছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড চাপে এভাবে শিশু জন্ম নিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যুর শঙ্কা থাকে বেশি।
মারা যাওয়া ৩২ বছর বয়সী ওই নারীর নাম রত্না বেগম। তার মরদেহ সুরতহাল করেছেন ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেকান্দার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দ্রুতগতির ট্রাকটি ওই নারীর মাথাসহ বুকের পেটের অংশ দিয়ে উঠে যায়। এতে পেটে প্রচণ্ড চাপ লেগে নাভির পাশের অংশের চামড়া ফেটে কন্যাশিশু বেরিয়ে আসে।’
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় শনিবার ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে রত্না ছাড়াও প্রাণ হারান তার স্বামী মুস্তাফিজুর রহমান ও তাদের ছয় বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা আক্তার। রাতে রায়মনি এলাকায় শ্বশুরবাড়ির পাশে তাদের তিনজনকে দাফন করা হয়।
রত্নার প্রতিবেশী দেবর মো. শরীফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মরদেহ দাফনের আগে আমরা দেখেছি পেট ফাটা। স্বাভাবিকভাবে প্রসব হয়নি। সৌভাগ্যক্রমে আমার ভাতিজি বেঁচে আছে।’
পেট ফেটে শিশুর জন্ম নেয়ার প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যদি ওই ট্রাক শুধুমাত্র নারীর মাথা থেঁতলিয়ে চলে যেত, তাহলে শিশুটি অক্সিজেন না পেয়ে গর্ভেই মারা যেত। অথবা জরায়ু মুখ দিয়ে শিশুটি দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসত।
‘পেটের একাংশের ওপর দিয়ে গাড়ি চলে গিয়ে পেটের মাঝখানে চাপ সৃষ্টি হয়। এ সময় পেট ফেটে গর্ভে থাকা শিশুটি শতভাগ মারা যাওয়ার শঙ্কা থাকলেও সৌভাগ্যক্রমে কোনো শিশু বাঁচতেও পারে। ত্রিশালে ঠিক এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’
রত্নার প্রসবের সময় দুদিন আগে পার হয়ে যাওয়ার কথা জানান তার শ্বশুর মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু। বলেন, ‘সময় পার হয়ে যাওয়ার কারণেই তাকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে নিয়ে গিয়েছিল আমার ছেলে। ফেরার পথে তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তবে নবজাতক সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।’
দুর্ঘটনার পর ওই শিশুকে নেয়া হয় কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ বাংলাদেশ (সিবিএমসিবি) হাসপাতালে। মেডিক্যাল কর্মকর্তা আরিফ আল নূর বলেন, ‘এখানে আনার পর আমরা বাচ্চাটির অবস্থা ভালো পেয়েছি। পরে এক্স-রে করার পর ডান হাতের দুটি অংশ ভাঙা দেখা গেছে। তবে বাচ্চাটি আর কোথাও আঘাত পায়নি।’
শিশুটির চিকিৎসা ও পরবর্তী ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. এনামুল হক।
তিনি বলেন, ‘আমি ওই শিশুকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসা খরচসহ ভবিষ্যতে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য তার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে দেব।’
ময়নমনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার লাবিব হাসপাতালে মেয়েশিশুটিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক ভাইরাসের রয়েছে বিস্ময়কর নানান ক্ষমতা। এগুলো পোষকের দেহের গন্ধ পরিবর্তনের ক্ষমতাও রাখে। আর এই পরিবর্তিত গন্ধে আকৃষ্ট হয় মশার মতো প্রাণী। অনেক দূর থেকেও এরা ঠিকঠাক খুঁজে নিতে পারে আক্রমণের নিশানা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে জিকা ও ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে রোগ দুটির জন্য দায়ী ভাইরাসের বিশেষ ভূমিকা আছে। এই ভাইরাস কেবল আক্রান্তকে কাবু করেই ক্ষান্ত হয় না, তার দিকে আরও মশাকে আকৃষ্ট করতেও সাহায্য করে।
পিআর-রিভিউ জার্নাল সেল-এ প্রকাশিত এক গবেষণার বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচার। এতে বলা হয়, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ সৃষ্টিকারী দুটি ভাইরাস তাদের পোষকের দিকে আরও বেশি মশা আকৃষ্ট করতে কিছু উপাদান নির্গত করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, জিকা ও ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলো নিজেদের সুবিধার জন্য তাদের পোষকের দেহের গন্ধে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। গবেষকেরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। পরিবর্তিত এই গন্ধ রক্তপিপাসু মশাকে করে তোলে আরও আগ্রাসী।
এর মাধ্যমে নতুন নতুন মশার মাধ্যমে আক্রান্তের দেহ থেকে নিরোগ দেহে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় ভাইরাস। গবেষণা নিবন্ধের সহলেখক সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট গং চেং বলেন, ‘কেবল জিকা ও ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নয়, মশাবাহিত অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও ভাইরাস একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করতে পারে।’
আক্রান্তের শরীরে উৎকট গন্ধ
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের রোগ-নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ জেমস লোগান বলেন, ‘কিছু রোগ তাদের পোষকের গন্ধ বদলাতে পারে। ভাইরাস এবং অণুজীব নিজেদের সুবিধার জন্য বিবর্তিত হয়ে এমনটা করে থাকে।
‘উদাহরণস্বরূপ মোজাইক ভাইরাসে সংক্রামিত শসাগাছ থেকে এক ধরনের উপাদান নির্গত হয়, যা কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। এসব পতঙ্গের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদকে সংক্রামিত করে ভাইরাস। ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী পরজীবীগুলো তাদের পোষকদের শরীরের গন্ধ পরিবর্তনের মাধ্যমে মশাকে কাছে টানতে প্রলুব্ধ করে।’
জিকা এবং ডেঙ্গু ভাইরাসগুলোও মশাকে আকৃষ্ট করতে একই কৌশল বেছে নেয় কি না তা দেখতে চেং এবং তার সহকর্মীরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান। এ জন্য সংক্রামিত এবং নিরোগ ইঁদুরগুলোকে আলাদা ঘরে রেখেছিল তারা।
তারপর দুটি কক্ষের ইঁদুরের শরীরের গন্ধ মশা-ভর্তি চেম্বারে ছড়িয়ে দেয়া হয়। দেখা গেছে এরপর ৬৫-৭০ শতাংশ মশা সংক্রামিত ইঁদুরের ঘরের দিকে হামলে পড়েছে।
প্রতিটি ঘরের বাতাসের রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংক্রামিত ইঁদুরগুলো থেকে নির্গত গন্ধ মাত্রা ছিল বেশি উৎকট। এর মধ্যে অ্যাসিটোফেনন নামে একটি বায়ুবাহিত উপাদানও পাওয়া গেছে।
গবেষকরা দেখেছেন, জিকা বা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ইঁদুর সুস্থ ইঁদুরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি অ্যাসিটোফেনন তৈরি করে। আর এই উপাদান তাড়িত করেছিল মশাদের।
ত্বকে অ্যাসিটোফেনন উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার স্বাভাবিক। তবে তাদের সংখ্যা সাধারণত ত্বকের কোষ থেকে নিঃসৃত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোটিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু বা জিকায় আক্রান্ত ইঁদুরের দেহে এই প্রোটিন তৈরির জন্য দায়ী জিনটির সক্রিয়তা কমে যায়।
সংক্রামিত ইঁদুরের ত্বকে অ্যাসিটোফেনন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে, যা ইঁদুরগুলোর গন্ধকে বেশি উৎকট করার পাশাপাশি রক্তপিপাসু মশাকে আকৃষ্ট করে।
গবেষকরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির বগলের ঘাম নিয়েও পরীক্ষা করেছেন। এতে দেখা গেছে, যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বেশি অ্যাসিটোফেনন তৈরি হচ্ছে। মশাও তাদের দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে।
গবেষণায় সংক্রামিত ইঁদুরকে ভিটামিন ‘এ’ খাইয়ে (সাধারণত ত্বকের অবস্থার চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়) বেশ ভালো ফল মিলেছে। দেখা গেছে এতে অ্যাসিটোফেননের পরিমাণ কমে আসে।
মালয়েশিয়ায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমাতে ভিটামিন এ-এর ব্যবহার পরীক্ষার উদ্যোগও নিয়েছেন গবেষকরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য