বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বোববার বেলা ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টের অবস্থান ছিল কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়টির নাম নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। অনেক সংবাদ মাধ্যম লিখেছে ‘অশনি’। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে ঝড়টির ইংরেজিতে নাম ‘Asani’ লেখা হলেও বাংলায় ‘অশনি’ লেখা হয়েছে।
তবে এই নামটি এসেছে শ্রীলঙ্কার সিংহলি ভাষার শব্দ ‘আসানি’ থেকে। এই শব্দটির বাংলা অর্থ ‘ক্রোধ’, আর বাংলা ‘অশনি’ শব্দের অর্থ হলো ‘বাজ’।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম কীভাবে দেয়া হয়
বিশ্বজুড়ে ঘূর্ণিঝড় নামকরণে ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) একটি তালিকা রয়েছে। এতে চক্রাকারে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর দেয়া নাম অনুযায়ী নামকরণ হয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর।
এই তালিকা অনুযায়ী এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সিংহলি ভাষায় ‘আসানি’ শব্দের অর্থ ক্রোধ। ডব্লিউএমওর ওয়েবসাইটে নামটির উচ্চারণও দেয়া আছে।
ডব্লিউএমও তালিকা অনুসারে এ অঞ্চলে আসানির পর যে ঘূর্ণিঝড়টি আসবে, তার নাম দিয়েছে থাইল্যান্ড। সেই নামটি হবে ‘সিত্রাং’।
ডব্লিউএমওর ৪৫তম বার্ষিক সভা হয় ২০১৮ সালে। ওমানের রাজধানী মাসকাটে অনুষ্ঠিত সেই সভায় দীর্ঘ মেয়াদে যেসব ঘূর্ণিঝড় আসবে সেগুলোর নাম চূড়ান্ত করা হয়।
উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম এরই মধ্যে নির্ধারিত করা আছে। এই অঞ্চলের ১৩টি দেশের ১৩টি করে দেয়া নামের ভিত্তিতে ১৩টি চক্রে আছে মোট ১৬৯টি ঝড়।
আরও পড়ুন: সাইক্লোনের নাম ‘ইয়াস’, ‘যশ’ নয়
প্রতিটি চক্রের শুরু বাংলাদেশের দেয়া নামের ঝড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশের দেয়া নামগুলোর মধ্যে রয়েছে নিসর্গ, বিপর্যয়, অর্ণব, উপকূল, বর্ষণ, রজনী, নিশীথ, ঊর্মি, মেঘলা, সমীরণ, প্রতিকূল, সরোবর, মহানিশা। নিসর্গ এরই মধ্যে আঘাত হেনেছে উপকূলে।
‘আসানি’কে ‘অশনি’ লেখার কারণ কী
সিংহলি শব্দ ‘আসানি’কে ‘অশনি’ বলায় ‘বড় কোনো ভুল হয়নি’ বলে দাবি করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটির উপপরিচালক সানাউল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা মৌলিক কোনো ভুল নয়। কারণ ইংরেজি শব্দ (Asani) ব্যবহার করা হচ্ছে। (ইংরেজিতে) এটা কিন্তু ঠিকই লেখা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারও আসানিই উচ্চারণ করছেন। তবে অনেক গণমাধ্যম অশনি লিখছে।’
তাহলে আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বাংলায় কেন ‘অশনি’ লিখছে এবং এতে শব্দগত বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘ইংরেজিতে আমরা কিন্তু আসানি (Asani) লিখেছি। হয়তো বাংলা উচ্চারণের সময় অনেকেই অশনি বা আসানি বলছে এটা কোনো বড় বিষয় নয়। আমাদের জানতে হবে এটি ঘূর্ণিঝড় না অন্যকিছু। আর বাংলাদেশের উপরে এর প্রভাব পড়বে কি না।’
আইপিএ এবং মূল সিংহলি শব্দের উচ্চারণ থেকেও ‘আসানি’ উচ্চারণের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা।
কেন দেয়া হয় সাইক্লোনের নাম?
ডব্লিউএমওর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী সাইক্লোনের নামকরণ হয় পাঁচটি কারণে:
১. প্রতিটি সাইক্লোনকে আলাদা করে চেনার জন্য
২. এর গতিবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে
৩. একই অঞ্চলে একই সময়ে একাধিক সাইক্লোনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূর করতে
৪. দ্রুত বহুজনের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে
৫. সহজে উপকূলীয় সাইক্লোনগুলোকে মনে রাখতে
আরও পড়ুন:Deep Depression over intensified into a cyclonic storm ‘Asani’ about380 km west of Port Blair (Andaman Islands).To move northwestwards and intensify further into a Severe Cyclonic Storm over east central Bay of Bengal during next 24 hours pic.twitter.com/3AkJAtHIxw
— India Meteorological Department (@Indiametdept) May 8, 2022
নারীর মেনোপজ বা ঋতুস্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া স্বাভাবিক বার্ধক্য প্রক্রিয়ার অংশ। এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের শরীরিক ও মানসিক চাপের মুখে পড়েন প্রায় সবাই।
বয়সের সঙ্গে ডিম্বাশয়ের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে ৩৫ বছর বয়স থেকেই। মেনোপজের সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাশয়ের কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায়। এর অর্থ হলো ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন তৈরিসহ ডিম নিঃসরণের প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটিয়েছে।
সাধারণভাবে নারীদের মেনোপজের গড় বয়স ৪২ থেকে ৫৩ বছর। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে আরও আগেই এটা ঘটতে পারে। স্থায়ী মেনোপজের আগে টানা ১২ মাস বা এক বছর মাসিক বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করায় প্রকৃত মেনোপজের কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর আগে থেকেই হট ফ্ল্যাশ ও অনিয়মিত পিরিয়ডের মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই পর্যায়কে বলা হয় পেরিমেনোপজ।
মেনোপজের প্রক্রিয়ার সময় অনেকে প্রচণ্ড মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন। কারও কারও অনিদ্রা, জ্বরের অনুভূতি, যৌনাঙ্গ শুষ্ক হয়ে যাওয়া এমনকি আলঝেইমারসের লক্ষণও দেখা যেতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেনোপজের সময় বিশেষ ধরনের চোয়ালের ব্যথা আরও তীব্র হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই ব্যথার নাম টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার ডিস-অর্ডার (টিএমডি)। মেনোপজের সময় অনেক নারীর ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি চোয়ালের গোড়ায় ব্যথা আরও বাড়িয়ে দেয়।
ধারণা করা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের মধ্যে ৪.৮ শতাংশ বা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ টিএমডিতে আক্রান্ত। পুরুষের তুলনায় নারীদের টিএমডিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণভাবে এর পেছনে হরমোনজনিত পরিবর্তনকেই দায়ী মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মেনোপজের সময় টিএমডির মাত্রা বেড়ে যাওয়া নিয়ে খুব বেশি গবেষণা নেই। তবে ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেনোপজ-পরবর্তী সময়ের তুলনায় মেনোপজের প্রক্রিয়া শুরুর সময়ে নারীদের টিএমডিতে ভোগার প্রবণতা বেশি।
সম্প্রতি আরেক গবেষণাতেও এর প্রমাণ মিলেছে। ব্রাজিলের একদল গবেষক দেখেছেন, টিএমডি সম্পর্কিত ব্যথার সঙ্গে মেনোপজের চূড়ান্ত সময়ের সম্পর্ক রয়েছে। তবে মেনোপজের পর ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমে আসতে শুরু করে।
নর্থ আমেরিকান মেনোপজ সোসাইটির (এনএএমএন) জার্নাল মেনোপজে গত ১০ মে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।
ব্রাজিলের সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলেসান্দ্রা পুচি মানটেলি গলহার্দো ও তার সহকর্মীরা গবেষণাপত্রের উপসংহারে লিখেছেন, মেনোপজের দিকে যাওয়া নারীদের ক্ষেত্রে টিএমডির মাত্রাও পর্যালোচনায় আনা উচিত।
গবেষণাটির ফলাফল চমকপ্রদ বলে মনে করছেন এনএএমএস মেডিক্যাল ডিরেক্টর ড. স্টেফানি ফাউবিওন। তিনি বলছেন, ‘এই গবেষণাটি যৌনতাসংশ্লিষ্ট হরমোন, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন এবং ব্যথার অভিজ্ঞতার মধ্যে সম্পর্কের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে। পরিষ্কার প্রমাণ মিলেছে, টিএমডির লক্ষণগুলো মেনোপজের বিভিন্ন লক্ষণের সঙ্গে যুক্ত এবং মেনোপজের বিভিন্ন পর্যায়জুড়ে ভিন্ন মাত্রায় প্রকাশ পায়।’
আরও পড়ুন:প্রায় ৩ হাজার ৪০০ বছর আগে ফারাও সম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন তুতেন খামেন। ১৯২৫ সালে, লুক্সরের (প্রাচীন থিবস) কাছে ভ্যালি অফ কিং-এ তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের ৩ বছর পর, ইংরেজ প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার ফারাও তুতেন খামেনের মমির চারপাশে আবৃত উপাদানের ভাঁজে লুকানো দুটি ছোরা খুঁজে পান। গবেষকরা বলছেন, এর মধ্যে একটি ছোরা তৈরি হয়েছে উল্কা থেকে প্রাপ্ত লোহা থেকে।
তুতেন খামেনের ডান উরুতে মোড়ানো ছিল একটি লোহার ছোরা, যার হাতল ছিল সোনার এবং শেয়ালের মুখাকৃতির সোনার খাপে ঢাকা ছিল। আর দ্বিতীয় ছোরাটি পাওয়া যায় ফারাওর পেটের ভেতর এবং এই ছোরাটি ছিল সম্পূর্ণ সোনার তৈরি।
তবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল লোহার ছোরাটিই। কারণ ব্রোঞ্জ যুগে লোহা ছিল বিরল এবং সে সময় সোনার থেকেও একে মূল্যবান ভাবা হতো। যদিও প্রাচীন মিশর খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল।
তবে প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন, মিশরের ওল্ড কিংডমের (তৃতীয় সহস্রাব্দ) সময় পাওয়া লোহার বস্তুগুলো সম্ভবত উল্কা থেকে আসা ধাতু থেকে উৎপাদিত হয়েছিল। তুতের যুগের মিশরীয়রা শ্রদ্ধার সঙ্গে এটিকে ‘আকাশ থেকে লোহা’ বলে ডাকত।
মিলানের পলিটেকনিক ইউনির্ভাসিটি, ইতালির পিসা ইউনিভার্সিটি ও কায়রোর যাদুঘরের গবেষকরা এক নতুন গবেষণায় তুতেন খামেনের ছোরার লোহার সঙ্গে ১ হাজার ২৫০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে পড়া ১১টি উল্কাপিণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ২০০০ সালে মার্সা মাতরুহের কাছে আবিষ্কৃত খড়গা নামে পরিচিত উল্কাপিণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলে যায়।
পোর্টেবল এক্স-রে ফ্লুরোসেন্স স্পেক্টমেটরি স্পেক্টোমেট্রির মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা গেছে তুতেন খামেনের ছোরায় নিকেল ১০.৮ শতাংশ ও কোবাল্টের পরিমাণ ০.৫৮ শতাংশ। যা অনেকটা উল্কাপিণ্ড থেকে প্রাপ্ত লোহার মতো। গবেষকরা বলছেন, খুব সম্ভব তুতেন খামেনের ছুরিও উল্কা থেকে প্রাপ্ত লোহা দিয়েই তৈরি।
নতুন এ গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে তুতেন খামেনের সময় প্রাচীন মিশরে উল্কা থেকে প্রাপ্ত লোহার ব্যবহার নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণার সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে।
তুতেন খামেন ছিলেন মিশরীয় ১৮তম ফারাও সম্রাট। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি সিংহাসনে বসেন ও ১৯ বছর বয়সে প্রাণ হারান। গবেষকরা বলছেন, তার একটি পা ভাঙা ছিল ও সেখান থেকে সৃষ্ট গ্যাংগ্রিনেই তিনি মারা যান। তিনি ছিলেন ফারাও সম্রাট আখেনাতেনের পুত্র।
আরও পড়ুন:মঙ্গল নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে মহাকাশ উদ্যোক্তাদের আগ্রহের শেষ নেই। বিশ্বের শীর্ষধনী ইলন মাস্ক তো মঙ্গলগ্রহে মানব বসতিই স্থাপন করতে চান। শুধু ইলনই নয়, নাসাও জানতে চায় মঙ্গল সম্পর্কে। মঙ্গলকে কী মানব বসতির জন্য উপযোগী করা যাবে, সেখানে কি কখনো প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। এগুলো মঙ্গল সম্পর্কে খুব মৌলিক প্রশ্ন। যার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে নাসা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান ও জীবনধারণ নিয়ে গবেষণার জন্য পাঠানো নাসার পারসিভারেন্স রোভার তার মিশনের একটি বড় মুহূর্তে পৌঁছেছে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করে আসছেন, মঙ্গলে আদিমকালের প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে গ্রহটির অ্যানসিয়েন্ট ডেল্টা এলাকায়। আর মঙ্গলবারই ছয় চাকার রোবটটি এনসিয়েন্ট ডেল্টাতে উঠতে শুরু করবে। বলা হয়ে থাকে, এখন পর্যন্ত যতগুলো মিশন ভিন্ন গ্রহে পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পারসিভারেন্সের সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।
নাসার পাঠানো এই রোবটটি এরই মধ্যে মঙ্গলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। প্রথমবারের মতো পারসিভারেন্স রোভারই মঙ্গলে অক্সিজেন উৎপাদন করেছে। হাইটেক এই রোবট ড্রোন হেলিকপ্টারও মঙ্গলের আকাশে উড়িয়েছে।
অতীতে মঙ্গলে কোনো প্রাণ ছিল কি না তা যাচাইয়ের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো শিলা পরীক্ষা করে দেখা। পারসিভারেন্স শুধু শিলা পরীক্ষা করেই দেখে না। শিলা সংগ্রহ করে অ্যানসিয়েন্ট ডেল্টার নিচে এনে সে শিলাগুলোকে জড়ো করবে। নাসার লক্ষ্য হলো ২০৩০-এর দশকে বিস্তারিত গবেষণার জন্য এই শিলাগুলোকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা।
পারসিভারেন্স রোভারকে মঙ্গলে মিশনে পাঠানো হয়েছে প্রাণের অনুসন্ধানের জন্য। তাকে যেখানে নামানো হয় সেই স্থানটির নাম জেজেরো ক্রেটার। ধারণা করা হয়। সেখানে একসময় হ্রদ ছিল। ফলে সেখানে একসময় অণুজীবের মতো প্রাণের অস্তিত্ব থাকা অস্বাভাবিক নয়।
পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা জেজেরো ক্রেটারের কাছেই অ্যানসিয়েন্ট ডেল্টা সন্ধান পায়। এর আকৃতিতে গবেষকদের ধারণা এর পাশে নদীর মতো প্রবাহ ছিল। ফলে একসময় সেখানে প্রাণ থাকা খুবই সম্ভব। তাই পারসিভারেন্সের অ্যানসিয়েন্ট ডেল্টার যাত্রায় উচ্ছ্বসিত মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
অ্যানসিয়েন্ট ডেল্টা প্রকৃত অর্থে এমন একটি কাঠামো, যা নদীর বয়ে আনা পলি দিয়ে তৈরি হয়। যেখানে থাকে জীবন ধারণের উপাদান, ফলে একসময় সেখানে অণুজীবের জীবন ধারণ অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আরও পড়ুন:বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা অপরিচিত কণ্ঠের দিকে আকৃষ্ট হয়। ১২ বছর পার হলেই ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারায় সবচেয়ে কাছের স্বজন মায়ের কণ্ঠস্বর।
বিষয়টি একদমই প্রাকৃতিক বলে প্রমাণিত হয়েছে গবেষণায়। তবে অনেক পরিবার একে ভেবে নেয় শিশুর ‘অবাধ্য’ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে।
জার্নাল অফ নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণার ফল বলছে, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়ায় টিনএজ শিশুরা অন্যদের কণ্ঠস্বরকে আমলে নিতে শুরু করে বলেই মায়ের কণ্ঠ বাড়তি গুরুত্ব হারাতে শুরু করে।
‘তুমি কি আমার কথাও শুনছ’- মায়েরা অহরহ এমন প্রশ্ন টিনএজারদের করে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা এর সঠিক জবাব দিলে উত্তরটি ‘না’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আর এই ‘না’ এর পেছনে সত্যিই টিনএজারদের কোনো দায় নেই। বয়ঃসন্ধিকালের শিশুদের মস্তিষ্কের ওপর নতুন গবেষণা বলছে, কিছু কণ্ঠস্বরের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া সময়ের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই বদলে যায়। একটা সময়ে মায়ের কণ্ঠস্বরও কিশোর-কিশোরীর কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
শিশুদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা গেছে, ১২ বছর বা তার কম বয়সীদের স্নায়ু মায়ের কণ্ঠস্বরের প্রতি ভীষণভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। সক্রিয় হয়ে ওঠে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সেন্টারস এবং আবেগ-প্রক্রিয়া করার কেন্দ্রগুলো।
তবে এরপর শিশুদের মস্তিষ্কে বেশ পরিবর্তন আসে। এ সময়ে মায়ের কণ্ঠ আগের মতো মস্তিষ্ককে আর আন্দোলিত করে না। এর পরিবর্তে অন্যসব কণ্ঠে (পরিচিত বা অপরিচিত) তাদের মস্তিষ্ক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এই পরিবর্তন এতটাই স্পষ্ট যে গবেষকরা মায়ের কণ্ঠের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে শিশুদের বয়স অনুমান করতে পেরেছেন।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মনোচিকিৎসক ড্যানিয়েল অ্যাব্রামস বলেন, ‘একটি শিশু যেমন তার মায়ের কণ্ঠে আন্দোলিত হয়, তেমনি একজন কিশোর নতুন কণ্ঠেও আকৃষ্ট হয়।
‘একজন কিশোর হিসেবে আপনি জানেন না যে আপনি এটি করছেন। আপনি নতুন বন্ধু এবং সঙ্গী পেয়েছেন। তাদের সঙ্গেই আপনি সময় কাটাতে চান। আপনার মন ক্রমে সংবেদনশীল এবং আকৃষ্ট হচ্ছে অপরিচিত কণ্ঠের দিকে।’
গবেষকরা বলছেন, এটি কিশোর মস্তিষ্কের সামাজিক দক্ষতা তার বিকাশের লক্ষণ। একজন কিশোর ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের পরিবার থেকে দূরে সরে যায় না; তাদের মস্তিষ্ক একটি সুস্থ উপায়ে পরিপক্ব হওয়ার কারণেই এই পরিবর্তনটি ঘটে।
গবেষণা বলছে, একজন মায়ের কণ্ঠস্বর শিশুর স্বাস্থ্য এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুদের মানসিক চাপের মাত্রা, সামাজিক বন্ধন, খাওয়ার দক্ষতা এবং কথা বলার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। তবে একপর্যায়ে মায়ের কণ্ঠের চেয়ে অন্য সব কণ্ঠ তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিজ্ঞানী বিনোদ মেনন বলেন, ‘যখন কিশোর-কিশোরীরা তাদের বাবা-মায়ের কথা শোনে না, তখন তাদের অনেকে ভুল বুঝতে পারেন। তবে এর আসল কারণ একেবারেই ভিন্ন। তারা বাড়ির বাইরের কণ্ঠের প্রতি আরও মনোযোগ দিতে বাধ্য হয়।’
২০১৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্ক তাদের মায়ের কণ্ঠের সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িত।
পরে গবেষকদলটি ১৩ থেকে সাড়ে ১৬ বছর বয়সী ২২ কিশোর-কিশোরীর ওপর পরীক্ষা চালায়। এতে দেখা গেছে, মায়ের কণ্ঠস্বর তাদের মস্তিষ্কে তেমন প্রভাব ফেলেনি। এর পরিবর্তে কিশোর-কিশোরীদের শোনা সব কণ্ঠ তাদের শ্রবণ প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত নিউরাল সার্কিটকে সক্রিয় করে। মস্তিষ্ক তখন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাছাই করে এবং তৈরি করে সামাজিক স্মৃতি।
স্ট্যানফোর্ডের গবেষকরা বলছেন, যেসব শিশু অটিজমে আক্রান্ত, তারা তাদের মায়ের কণ্ঠস্বরের প্রতি তেমন শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখায় না। অন্তর্নিহিত নিউরোবায়োলজিক্যাল প্রক্রিয়াটি আরও ভালো করে বোঝা গেলে সামাজিক বিকাশের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হওয়া যাবে।
মেনন বলেন, ‘একটি শিশু একপর্যায়ে স্বাধীন হয়ে ওঠে। এটি একটি অন্তর্নিহিত জৈবিক সংকেত।
‘এটাই আমরা উদ্ঘাটন করেছি। এটি একটি সংকেত, যা কিশোর-কিশোরীদের বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করে, সংযোগ তৈরি করে। যা তাদের পরিবারের বাইরে সামাজিকভাবে পারদর্শী করে তোলে।’
আরও পড়ুন:দিনে দিনে বেড়ে চলা বয়সের লাগাম টেনে ধরা গেলে কেমন হতো? শুধু লাগাম টানাই নয়; যদি বুড়িয়ে যাওয়া জীবনে আবার ফেরানো যেত তারুণ্য, তাহলে বদলে যেত সব হিসাব-নিকাশ।
আমৃত্যু তারুণ্য ধরে রাখার বিষয়টি ভবিষ্যতে হয়তো আর অধরা স্বপ্ন হয়ে থাকবে না। এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চলছে গবেষণা, বেশকিছু সম্ভাবনাও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এসব গবেষণার অনেক বেশ চমকপ্রদ, আবার কোনোটি একেবারেই ‘মেনে নেয়ার মতো নয়’। বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল মাইকোবায়োমে সম্প্রতি সেই ‘মেনে না নেয়ার’ মতো এক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বয়সের লাগাম টানতে দারুণ কার্যকর মলের অণুজীব (মাইক্রোব)!
আঁতকে উঠবেন না। ওই গবেষণায় অল্প বয়সী ইঁদুরের মলের অণুজীব ধেড়ে ইঁদুরে প্রতিস্থাপনের পর তাদের ফের তাগড়া হয়ে উঠতে দেখা গেছে। অণুজীবগুলো বিস্ময়করভাবে ধেড়ে ইঁদুরের অন্ত্র ফের সুগঠিত করেছে, জ্যোতি বাড়িয়েছে চোখে, এমনকি মগজের বুড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলোও উধাও করে দিয়েছে।
এই গবেষণায় বয়স্ক ইঁদুরের মলের অণুজীব নবীন ইঁদুরে প্রতিস্থাপন করে ঠিক উল্টো ফল পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নবীন ইঁদুরগুলোর মস্তিষ্কে তৈরি হয়েছে বার্ধক্যজনিত নানান প্রদাহ, কমে গেছে দৃষ্টিশক্তি। অনেকটা ইঁচড়ে পাকা আচরণ দেখা গেছে সবার মধ্যে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে যেসব রোগব্যাধি এবং শারীরিক দুর্বলতা আমাদের ঘিরে ধরে তার পেছনে দুর্বল অন্ত্রের বড় ভূমিকা রয়েছে। এই দুর্বল অন্ত্রকে সজীব করে তোলায় নবীন অন্ত্রের অণুজীব বেশ কার্যকর। অল্প বয়স্ক ইঁদুরের মলের অণুজীবগুলো ধেড়ে ইঁদুরের ক্ষেত্রে ওই কাজটিই করেছে।
গবেষণাপত্রে গবেষকরা লিখেছেন, ‘আমরা হাইপোথিসিসটি পরীক্ষা করেছি। সেই হাইপোথিসিসটি হলো অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা বার্ধক্যের সঙ্গে জড়িত বেশকিছু প্রধান রোগের বিস্তারকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে মস্তিষ্ক এবং চোখের রেটিনার প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা রয়েছে।’
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মগজের চারপাশে এবং চোখের রেটিনায় প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যায়। বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত দীর্ঘস্থায়ী এই প্রদাহকে বলা হয় ‘ইনফ্লেমিং’। এর সঙ্গে দেহের বিশেষ ধরনের রোগপ্রতিরোধী কোষেরও সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট ইঁদুরের অন্ত্রের অণুজীব বয়স্ক ইঁদুরে প্রতিস্থাপন করলে এই প্রদাহ কমে আসতে শুরু করে। আর বিপরীত কাজটি করলে অন্ত্রের বার্ধক্য এবং প্রদাহের লক্ষণ দেখা দেয় ছোট ইঁদুরের মাঝে।
অন্ত্রের জটিল রোগের চিকিৎসায় মল প্রতিস্থাপনের কৌশল এখনও প্রয়োগ করছেন চিকিৎসকরা। তবে মলের অণুজীব বয়সেরও লাগাম টানতে পারে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রথম প্রমাণিত হলো।
গবেষণাটি আরও বড় পরিসরে করার ওপর জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাংলিয়ার জীববিজ্ঞানী সাইমন কার্ডিংয়ের ভাষায়, এই গবেষণাটি যুগান্তকারী। এর মাধ্যমে বার্ধক্যজনিত রোগের সঙ্গে অন্ত্রের অণুজীবের সরাসরি সম্পর্ক উদ্ঘাটিত হয়েছে। এই গবেষণা বয়স নিয়ন্ত্রণে অন্ত্রে অণুজীব প্রতিস্থাপনে থেরাপির পথ উন্মোচন করতে পারে।
আরও পড়ুন:যৌন সম্পর্কের একান্ত মুহূর্তে একেবারে আদিম আবেগের মুখোমুখি হওয়ার অনুভূতিতে আক্রান্ত হন অনেকে। এ কারণে যৌন মিলনের পর অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভিত্তিক সাইট ভাইস যৌন স্বাস্থ্য ও মানসিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে কারণটি বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছে। ভাইসের প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
২৮ বছর বয়সী লেখক জোহরা গত বছর বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে প্রথম মিলনের পর অঝোরে কেঁদেছিলেন। কান্না থামাতে পারছিলেন না তিনি।
এমন না যে তারা সেবারই প্রথম মিলিত হয়েছেন। ১০ বছর তারা একসঙ্গে আছেন, সঙ্গমও করেছেন। তবে জোহরা জানান, ব্যাখ্যাতীত কোনো কারণে বিয়ে পরবর্তী সময়ে সহবাসজনিত কান্না তাদের যৌন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
জোহরার কান্না তার সঙ্গীকে বিভ্রান্ত করে। কোনো আঘাত পেয়েছেন কিনা এমন শঙ্কা থেকে স্বামী তাকে বারবার জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে?’
জোহরা তাকে আশ্বস্ত করেন, সবকিছু ঠিক আছে। অভিভূত হওয়ার স্বাভাবিক অনুভূতি ছাড়া তার আসলে কেমন বোধ হয় তা তিনি নিজেই বুঝতে পারেন না।
জোহরা বলেন, ‘বিছানার বাইরে আমরা নিজেদের অনেক ধরনের মিথ্যার মোড়কে ঢেকে রাখি। এখন আমার মনে হয় মিলনের সময়ের অনুভূতিটা বিশেষ। কারণ তখন ওই মুহূর্তে কেবল আমরা দুজন এবং দুজনের মধ্যে একেবারেই ইউনিক এক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আমি জানি না গভীর আবেগ (প্যাশোনেট) শব্দটি এখানে খাটে কিনা, অথবা এমন অভিজ্ঞতার তীব্রতা বর্ণনা করার জন্য আদৌ উপযুক্ত কোনো শব্দ আছে কিনা।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌন মিলনের পর এ ধরনের গভীর আবেগের প্রতিক্রিয়াটি হচ্ছে পোস্টকয়টাল ডিসফোরিয়া (পিসিডি)। এর সংজ্ঞায় বলা হচ্ছে, পরিতৃপ্ত বা সম্মতিপূর্ণ যৌনতার পরে অশ্রুসিক্ত হওয়া বা দুঃখ বোধ করা।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির পিসিডি নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪১ শতাংশ পুরুষ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে পিসিডির শিকার হন। আর ৪ শতাংশ বলেছেন, তারা যৌন মিলনের পর নিয়মিত কাঁদেন। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের প্রায় অর্ধেকের পিসিডির অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেকেই ব্যাখ্যাতীতভাবে মাসে একাধিকবার এ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন।
নিউরোসাইকোলজিস্ট জসদিপ মাগো বলছেন, ‘একান্ত দুর্বল মুহূর্তে আমরা আমাদের সর্বাধিক ব্যবহার করা আবেগটিকেই কাজে লাগাই। আর অন্য কারও পাশে নগ্ন শুয়ে থাকাটি আমাদের দুর্বলতম মানসিক মুহূর্তের একটি। এ পরিস্থিতিতে একজন তার সঙ্গীর সঙ্গে নিজের গভীর আকাঙ্ক্ষা ভাগ করে নিচ্ছেন, তাকে নগ্ন দেখছেন, ভালবাসছেন ও নিজেকে পূর্ণ করার জন্য চূড়ান্ত শারীরিক সম্পর্কে যাচ্ছেন। দুর্বলতা আমাদের যৌনতার অন্যতম উপাদান।’
মাগো বলেন, ‘খারাপ খবর পেলে বা ইমোশোনাল কিছু একটা করার পর অনেকে হেসেও ফেলেন। এটা তারা কোনো আনন্দের অনুভূতির কারণে করেননি। ওই মুহূর্তে তাদের কাছে সবচেয়ে সহজলভ্য আবেগ ছিল হাসি, যা দুর্বলতার মুহূর্তে বেরিয়ে এসেছে। আমার মতো যেসব মানুষের কাছে সহজলভ্য আবেগ কান্না, তাদের ক্ষেত্রে দেখবেন তারা ঝগড়া করার সময়ও কেঁদে ফেলেছেন।’
মাগোর মতে, যে সমাজে যৌনতা ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচিত, সেখানে যৌন মিলন অনেকের কাছে অভিভূত হওয়ার মতো একটি অভিজ্ঞতা হতে পারে। এর বিশালত্বের কারণে অপ্রত্যাশিতভাবে কান্না আসতে পারে।
২৪ বছর বয়সের কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ঋতুপর্ণার ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে। ১৮ বছরে বয়সে প্রথমবার যৌন মিলনের পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার মতে, ওই বয়সে তিনি ও তার সঙ্গীর কারোই মানসিক প্রতিক্রিয়া সামাল দেয়ার মতো অভিজ্ঞতা ছিল না। এরপর কয়েক বছরের থেরাপি ও নিজের উপলব্ধি ঋতুপর্ণাকে নিজের আবেগ ও প্রতিক্রিয়া আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে।
তিনি বলেন, ‘পূর্ব ভারতের ছোট এক শহরের রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়ার কারণে যৌনতার সঙ্গে লজ্জার বিষয়টি জড়িত ছিল। ছোটবেলায় যৌনতা নিয়ে আমার ভীতিকর কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই, যখন আমি নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় যৌনমিলন করতে সক্ষম হই, তখন আমি এমন অবস্থানে আসার জন্য কৃতজ্ঞতাস্বরূপ কেঁদেছি। আমার আনন্দটি এখানে ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানতাম, এখন আমার সঙ্গে একজন মানুষের মতো আচরণ করা হবে।’
কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, সন্তান জন্মদানের পর বিষণ্নতার সম্মুখীন নারীরা যৌনতার পর কাঁদতে পারেন। এর কারণ তখন তাদের দেহে হরমোনের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। ঋতুপর্ণা বলেন, অনেকে এটিকে অক্সিটোসিন ও ডোপামিনের মতো হরমোনের ওঠানামা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তবে এ কারণে যৌনতার পরে কান্না মূলত একটি চরম আবেগ প্রকাশ করে হালকা হওয়ার প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জন্য একেবারেই অনন্য। আমি বিষয়টিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখি। এখন পর্যন্ত আমার কান্নাকাটি নিয়ে সঙ্গীরা ছিলেন খুবই সহানুভূতিশীল। অনেক ক্ষেত্রে তারাও নিজেদের দুর্বল বা অরক্ষিত মনে করা শুরু করেছেন।’
৩২ বছর বয়সী চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌরভ আরেকটি পরিস্থিতি তুলে ধরছেন। তার মতে, কুইয়ারের (ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়) ক্ষেত্রে ক্ষণস্থায়ী বা হালকা সম্পর্কের সঙ্গীর সঙ্গে যৌনতার পর দুর্বলতার প্রকাশ ঘটানো স্বাভাবিক নয়। আর তাই যৌন মিলনের পর সৌরভের কাঁদতে ইচ্ছা করলেও তিনি সঙ্গীর ঘর ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমি অবসাদজনিত কারণে কাঁদতাম। আমি জানি না কেন আমি এতটা যৌনতা প্রিয় মানুষ ছিলাম। সবকিছু আমার জন্য বাড়তি হয়ে যাচ্ছিল এবং আমি আর নিতে পারিনি। তবে আমি কখনও আমার ছেলেসঙ্গীর সামনে কাঁদিনি। এর কারণ হলো আমি আশা করিনি, ওরা বিষয়টি বুঝবে বা বোঝার চেষ্টা করবে।’
২৪ বছর বয়সী বিপণন ব্যবস্থাপক আসমা প্রায়ই অচেনা সঙ্গীর সঙ্গে যৌন মিলনের পর কান্নাকাটি করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, জীবন কি এভাবেই চলবে? আমি কি সবসময় এমন ক্ষণস্থায়ী সম্পর্কে জড়াবো? আমার জীবনে এটি বাড়তি কী যোগ করছে? যৌনতার সময় এ সবকিছুই আমার ভেতরে চলতে থাকতো এবং শেষ পর্যন্ত আমি কেঁদে ফেলতাম।’
আসমা তার আগের বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে যৌন মিলনের পরও কেঁদেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আগের সম্পর্কের মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেছি সে কারণেই এটা ঘটেছিল। এতসময় ধরে তার টানা মনোযোগে থাকতে পারার বিষয়টি সত্যিই আমাকে অভিভূত করতো।’
মাগোর মতে গভীর আবেগতাড়িত হয়ে পড়ার অনুভূতি নেতিবাচক বা ইতিবাচক দুই-ই হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘অনেকে যৌনতার পর অনেকে কাঁদেন, কারণ যৌনতা সম্বন্ধে তাদের ধারণার সঙ্গে অভিজ্ঞতার কোনো মিল থাকে না। খারাপ যৌন সম্পর্ক অনেক সময় সম্পর্কের পদ্ধতিটিকে মনে করিয়ে দেয়। এর ফলে অনেকে চরম আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।’
যৌনতা ও যৌন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আস্থা ভোহরা বলেন, যৌনতার পরে কেন অনেকে কান্নাকাটি করে তা বুঝতে হলে যৌনতার সময় যে উদ্বেগ সেটিকেও আমলে নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় নারীকে পর্যাপ্ত মাত্রায় লুব্রিকেটেড নাও করা হতে পারে, যা তাকে অস্বস্তিতে ফেলে। এটা বাড়তে বাড়তে কান্নায় পরিণত হয়। সম্মতিমূলক যৌনতা আমাদের প্রায় সব আবেগের একটি চ্যানেল, কারণ ওই সময়টিতে আমরা আক্ষরিক অর্থেই নগ্ন থাকি। এটি আপনাকে উদ্বেগ ও আবেগ প্রকাশের জন্য নিরাপদ একটি জায়গায় পৌঁছে দেয়। অনেকের জন্য, সেই নিরাপদ জায়গাটি অন্য কোথাও নাও থাকতে পারে।’
ইন্টিমেসি কোচ পল্লভি বার্নওয়াল আরও বলেন, যারা যৌনতার পরে কান্নাকাটি করেন, তাদের মধ্যে অনেকে হয়তো বাইরে মানসিকভাবে নিজেকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে চলেন। কারও বেড়ে ওঠার দিকে তাকালেও অনেক কিছু বোঝা যায়।
তিনি বলেন, ‘যৌনতা মূলত একটি আদিম প্রক্রিয়া যা অবচেতনভাবে আমাদের একবারে শুরুর দিককার বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দেয়। যেমনটা আমাদের মা-বাবার সঙ্গে থাকে। অতীতের কোনো ক্ষত বা ভয় অদ্ভুত ও অপ্রত্যাশিত সময়ে ফিরে আসতে পারে। আপনি যদি বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের মধ্যে থাকেন তবে অপরাধবোধ কখনও কখনও কান্নার মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।’
কোনো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আসন, শব্দ বা যৌনতার অন্য বিষয় অতীতের যৌন আঘাতকে উসকে দেয়। এটিও কোনো ব্যক্তিকে কান্নার দিকে পরিচালিত করতে পারে। বার্নওয়াল এসব ক্ষেত্রে থেরাপির গ্রহণের মাধ্যমে ‘মূল কারণ’ মোকাবিলার পরামর্শ দেন।
নিউরোসাইকোলজিস্ট মাগোর মতে, যৌনতার পর কান্না কোনো ধরনের অসুখ, সমস্যা বা উপসর্গ নয়। তিনি বলেন, ‘যৌনতার পর কান্না কোনো ব্যক্তির স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপকে ব্যহত করে না। যদি করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।’
বার্নওয়ালের মতে, যৌনতার পরে কান্নার ঘটনাকে ঘিরে অস্পষ্টতা ও অভিজ্ঞতার বিস্তৃতি নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যৌনতা একটি বহু-স্তরযুক্ত বিষয়, যেখানে সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বোঝা যায় না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি বিষয় বুঝতে হবে, আর তা হলো, যৌনতা বিপরীতমুখী দুটি বিষয়ের মিশেল। এই দুটি বিষয় হলো আনন্দ ও বেদনা। আপনি কীভাবে বিষয়টিকে সামাল দেন বা কীভাবে আপনার সঙ্গী পুরো প্রক্রিয়ার সময় আপনাকে সহায়তা করছে তার ওপরই নির্ভর করছে সবকিছু।
‘যৌন মিলনের পর আপনার সঙ্গীর কান্নায় ভেঙে পড়া দেখলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। অধিকাংশ সময়ে ব্যাপারটি আপনাকে নিয়ে নয়। সে সময়ে তাকে আগলে রাখুন ও ভালোবাসুন। যৌনতার পর অরক্ষিত বোধের অনুভূতি একেবারেই স্বাভাবিক বিষয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য