দুর্নীতির মামলায় ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭।
নানামুখী আলোচনার অবসান ঘটিয়ে কারাগারেই যেতে হলো হাজি সেলিম এমপিকে। আদালতের নির্দেশের পর পুলিশ তাকে কারাগারে নিয়ে যায়।
রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম হাজি সেলিমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালতে হাজি সেলিমের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সাঈদ আহমেদ রাজা। আর মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল।
হাজি সেলিমের আদালতে আত্মসমর্পণকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুরের আগে থেকেই আদালত চত্বরে ছিল উপচেপড়া ভিড়। কর্মী-সমর্থকদের পাহারায় আদালতে প্রবেশ করেন তিনি। আর আদালতের রায়ের পর পুলিশ পাহারায় তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতে হাজি সেলিম
ঢাকা-৭ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুরের আগে থেকেই তার কর্মী-সমর্থকরা আদালতে জড়ো হতে থাকে। বেলা ২টার পর থেকে আদালত এলাকায় উপচেপড়া ভিড় জমে যায়। সেই ভিড় ঠেলে বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৭ এর এজলাসে প্রবেশ করেন হাজি সেলিম।
ক্ষমতাসীন দলের এই এমপি এজলাসে প্রবেশ করে প্রথমে সামনের একটি বেঞ্চে বসেন। সঙ্গে সঙ্গে তার বেশকিছু কর্মী-সমর্থকও এজলাসে ঢুকে পড়েন। এ সময় তার সন্তানেরা পাশে গিয়ে দাঁড়ান।
আইনজীবী, সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে পুরো এজলাজ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অধিক মানুষের উপস্থিতিতে এজলাস কক্ষে অনেকটা হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ কারণে বিচারিক কাজ শুরু হতে বেশ কিছুটা বিলম্ব হয়।
বিকেল ৩টা ২০ মিটিনের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। আইনজীবী আর সাংবাদিক ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ছাড়া বাকিদের এজলাস কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন বিচারক। এ সময় হাজি সেলিম উঠে দাঁড়িয়ে তার কর্মী-সমর্থকদের এজলাস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কর্মী-সমর্থকরা এজলাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে হাজি সেলিম কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান। পুরোটা সময় ধরে তিনি কাঠগড়াতেই দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এবং হাজি সেলিমের পক্ষে সাঈদ আহমেদ রাজা শুনানি করেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
বিচারক হাজি সেলিমকে বসতে বলেন। পরে তিনি এজলাস থেকে নেমে এসে আবার বেঞ্চে এসে বসেন। সেখানে কিছুক্ষণ বসে থেকে আইনজীবীদের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলতে যান হাজি সেলিম। এই পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে আদালতের একটি বেঞ্চে শুয়ে পড়েন তিনি।
বিকেল ৫টার পর পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে করে হাজি সেলিমকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় তার কর্মী-সমর্থকরা নানা স্লোগান দিতে থাকে। অনেককে তার জন্য কান্না করতেও দেখা যায়।
আইনজীবীদের বক্তব্য
দুদকের পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আজ হাজি সেলিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। একইসঙ্গে জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আদালত তার জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আর চিকিৎসা এবং কারাগারে ডিভিশনের বিষয়ে জেল কোড অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।’
অন্যদিকে হাজি সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তিনি আজকে আত্মসমর্পণ করেছেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। তবে ডিভিশন এবং চিকিৎসার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
‘আজ আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ামাত্রই সর্বোচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করব এবং আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করব। আশা করি সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে আমার মক্কেল কারামুক্তি লাভ করবেন।’
হাজি সেলিম এই মামলায় এর আগে দেড় মাস জেল খেটেছেন বলেও জানান আইনজীবী।
হাইকোর্টের রায়
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ হাজি সেলিমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় আদালত।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। ২৫ এপ্রিল রায়ের সার্টিফায়েড কপি পায় আসামি পক্ষ। সে হিসাবে ৩০ দিনের মধ্যেই রোববার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এই সংসদ সদস্য।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল দুটি ধারার একটিতে ১০ বছর এবং একটিতে তিন বছর করে মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। এরপর ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করে।
পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
দীর্ঘ শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:রাজধানীর বনানীতে মাঝ সড়কে চলন্ত অবস্থায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একটি বাস বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, বিকেল ৪টা ২ মিনিটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন লাগার খবর আসে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপন করে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করা জে কে এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসটি অনেক দূর নিয়ে আসে। এতে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়ে বাসটিতেও আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বারের সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় মধুখালীর ঘটনা পরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডিসি কামরুল আহসান তালুকদার।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও ওয়ার্ড মেম্বার অজিত কুমার সরকারকে ধরিয়ে দিতে পারলে বা তাদের ধরতে কোনো প্রকার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা দেন তিনি।
ডিসি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও মেম্বার এখন পলাতক। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করেছে। বিমানবন্দর ও সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে, যাতে তারা দেশত্যাগ করতে না পারে।
‘এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে যেকোনো প্রকার তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।’
গত ১৮ এপ্রিল রাতে ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্দেহের জেরে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন আরও পাঁচ শ্রমিক।
পিটুনিতে হতাহতের ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়। এরই মধ্যে তিন মামলায় পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করায় ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় ‘হাতবোমার’ আঘাতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কানাইপুরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় দক্ষিণ কানাইপুরের প্রয়াত মালেক সরদারের ছেলে দুবাই প্রবাসী রিপন সরদার বাড়িতে আসেন। এ খবর পেয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ একই এলাকার আনসার হাওলাদারের ছেলে দেলোয়ার হাওলাদার লোকজন নিয়ে রিপনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় ঘরে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
এ ঘটনায় পরবর্তীতে গত ২৩ এপ্রিল রিপন সরদারের স্ত্রী রুনিয়া বেগম বাদী হয়ে কালকিনি থানায় ২২ জনের নামে একটি মামলা করেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এরই জেরে শুক্রবার সন্ধ্যায় রিপনের চাচাত ভাই ও আলীনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীদ পারভেজের সমর্থক জামাল সরদার স্থানীয় বাজারে যান। মাঝপথে সাবেক চেয়ারম্যান মিলন সরদারের কর্মী মহসিন লোকজন নিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করে বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় একাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রিপন হাওলাদারের আগের ঘটনার মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন:গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম। বাড়ি তার বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর গ্রামে। বর্তমানে ঢাকার সুত্রাপুর থানায় কর্মরত।
৩৮ বছর বয়সী এ যুবকের নেশা বিয়ে করা। যেখানেই যান সেখানেই তিনি বিয়ে করেন। এ পর্যন্ত ৭টি বিয়ে করেছেন।
সর্বশেষ তিনি বিয়ে করেন ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি এলাকার। ঢাকায় থাকাকালে সেঁজুতি নামের পবহাটির একটি মেয়ের সঙ্গে সপ্তমবারের মতো সংসার শুরু করেন তিনি।
তবে এর মানে এই নয় যে, তার আগের সব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী পারভীন তার গ্রামের বাড়িতে এবং ষষ্ঠ স্ত্রী রয়েছেন যশোরের বেনাপোলে। ২ স্ত্রীর ঘরে ২টি সন্তানও রয়েছে তরিকুলের।
সম্প্রতি সংসার জীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই যুবক। স্বামীকে ফিরে পেতে আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে ঝিনাইদহের পবহাটিতে আসেন ষষ্ঠ স্ত্রী হোসনে আরা আক্তার সাথী। তরিকুলকে স্বামী দাবি করলে সেখানে বেঁধে যায় রণক্ষেত্র। স্বামীকে নিয়ে সেঁজুতির সঙ্গে শুরু হয় তার কাড়াকাড়ি। কোনো উপায় না পেয়ে পালিয়ে যান আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে সাথী জানান, বেনাপোল বন্দরে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজেকে এতিম পরিচয় দিয়ে তাকে বিয়ে করেন তরিকুল। ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ের পর থেকে একসঙ্গেই ছিলেন দুজন। তবে ২০২২ সালে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান তরিকুল। তার কিছুদিন পর থেকে সাথীর সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ।
তিনি জানান, ঢাকায় বদলি হওয়ার পর থেকে তার ও তাদের সন্তানের কোনো খরচ পাঠাতেন না তরিকুল। এরই মধ্যে সেঁজুতির সঙ্গে তার ইমোতে পরিচয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে সেঁজুতিকে বিয়ে করেন তিনি।
সাথী বলেন, ‘গত ঈদে আমার কাছে গিয়ে ৬ দিন ছিল। সেখানে আমাকে ভুলিয়ে আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে চলে আসে। তারপর আবার সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার আড়াই বছরের মেয়েটি বাবার জন্য সব সময় কান্নাকাটি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ঝিনাইদহ আছে- এমন খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এর মধ্যে আবার পালিয়েছে সে (তরিকুল)। আমি তরিকুল ও সেঁজুতির বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে আনসার সদস্য তরিকুলের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য