দুর্নীতির মামলায় ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭।
নানামুখী আলোচনার অবসান ঘটিয়ে কারাগারেই যেতে হলো হাজি সেলিম এমপিকে। আদালতের নির্দেশের পর পুলিশ তাকে কারাগারে নিয়ে যায়।
রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম হাজি সেলিমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালতে হাজি সেলিমের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সাঈদ আহমেদ রাজা। আর মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল।
হাজি সেলিমের আদালতে আত্মসমর্পণকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুরের আগে থেকেই আদালত চত্বরে ছিল উপচেপড়া ভিড়। কর্মী-সমর্থকদের পাহারায় আদালতে প্রবেশ করেন তিনি। আর আদালতের রায়ের পর পুলিশ পাহারায় তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতে হাজি সেলিম
ঢাকা-৭ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুরের আগে থেকেই তার কর্মী-সমর্থকরা আদালতে জড়ো হতে থাকে। বেলা ২টার পর থেকে আদালত এলাকায় উপচেপড়া ভিড় জমে যায়। সেই ভিড় ঠেলে বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৭ এর এজলাসে প্রবেশ করেন হাজি সেলিম।
ক্ষমতাসীন দলের এই এমপি এজলাসে প্রবেশ করে প্রথমে সামনের একটি বেঞ্চে বসেন। সঙ্গে সঙ্গে তার বেশকিছু কর্মী-সমর্থকও এজলাসে ঢুকে পড়েন। এ সময় তার সন্তানেরা পাশে গিয়ে দাঁড়ান।
আইনজীবী, সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে পুরো এজলাজ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অধিক মানুষের উপস্থিতিতে এজলাস কক্ষে অনেকটা হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ কারণে বিচারিক কাজ শুরু হতে বেশ কিছুটা বিলম্ব হয়।
বিকেল ৩টা ২০ মিটিনের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। আইনজীবী আর সাংবাদিক ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ছাড়া বাকিদের এজলাস কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন বিচারক। এ সময় হাজি সেলিম উঠে দাঁড়িয়ে তার কর্মী-সমর্থকদের এজলাস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কর্মী-সমর্থকরা এজলাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে হাজি সেলিম কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান। পুরোটা সময় ধরে তিনি কাঠগড়াতেই দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এবং হাজি সেলিমের পক্ষে সাঈদ আহমেদ রাজা শুনানি করেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
বিচারক হাজি সেলিমকে বসতে বলেন। পরে তিনি এজলাস থেকে নেমে এসে আবার বেঞ্চে এসে বসেন। সেখানে কিছুক্ষণ বসে থেকে আইনজীবীদের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলতে যান হাজি সেলিম। এই পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে আদালতের একটি বেঞ্চে শুয়ে পড়েন তিনি।
বিকেল ৫টার পর পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে করে হাজি সেলিমকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় তার কর্মী-সমর্থকরা নানা স্লোগান দিতে থাকে। অনেককে তার জন্য কান্না করতেও দেখা যায়।
আইনজীবীদের বক্তব্য
দুদকের পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আজ হাজি সেলিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। একইসঙ্গে জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আদালত তার জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আর চিকিৎসা এবং কারাগারে ডিভিশনের বিষয়ে জেল কোড অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।’
অন্যদিকে হাজি সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তিনি আজকে আত্মসমর্পণ করেছেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। তবে ডিভিশন এবং চিকিৎসার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
‘আজ আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ামাত্রই সর্বোচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করব এবং আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করব। আশা করি সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে আমার মক্কেল কারামুক্তি লাভ করবেন।’
হাজি সেলিম এই মামলায় এর আগে দেড় মাস জেল খেটেছেন বলেও জানান আইনজীবী।
হাইকোর্টের রায়
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ হাজি সেলিমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় আদালত।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। ২৫ এপ্রিল রায়ের সার্টিফায়েড কপি পায় আসামি পক্ষ। সে হিসাবে ৩০ দিনের মধ্যেই রোববার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এই সংসদ সদস্য।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল দুটি ধারার একটিতে ১০ বছর এবং একটিতে তিন বছর করে মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। এরপর ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করে।
পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
দীর্ঘ শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী এলাকা থেকে শুক্রবার ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শাহাদাত হোসেন নিউজবাংলাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার ১৯ বছর বয়সী এই যুবকের নাম সজীব মিয়া। তার বাড়ি দক্ষিণ লোহাজুরী এলাকায়।
কিশোরীর বাবা জানান, তার মেয়ের বয়স ১৫ বছর। স্থানীয় একটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। কথা বলতে না পারলেও ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বুঝতে পারে।
মামলার এজাহারে তিনি বলেন, অভিযুক্ত সজীব প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। তার মেয়ের সঙ্গে ইশারায় কথাবার্তাও বলতেন তিনি। গত ২ এপ্রিল সজীবের বাড়িতে যায় মেয়েটি। এ সময় সজীব তাকে ফুঁসলিয়ে একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি কাউকে জানায়নি মেয়েটি। গত ২৭ জুন হঠাৎ বমি করছিল সে। স্থানীয় একটি ক্লিনিকে পরীক্ষা করে জানতে পারেন সে অন্তঃসত্ত্বা। জিজ্ঞেস করলে ইশারায় বিষয়টি জানায় সে। পরে সজীবের বাড়িতে নিয়ে গেলে ইশারায় সজীবকে দেখিয়ে দেয়।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন।’
লোহাজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দার মারুয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযুক্ত সজীব ও তার পরিবারের সদস্যদের ডেকে এনেছিলাম। আমার কাছে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন সজীব। পরে ভিকটিমের পরিবারকে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’
ওসি এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরীর বাবা থানায় মামলা করেছেন। পরে অভিযান চালিয়ে ভোরে সজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
ভুক্তভোগীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যকার-গবেষক ও শিক্ষক ড. রতন সিদ্দিকীর বাসায় হামলার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় ৫ নম্বর সেক্টরে ৬এ রোডের একটি মসজিদ থেকে শতাধিক মুসল্লি বেরিয়ে এই হামলা চালায় বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন রতন সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘‘আজকে দুপুরের সময় এক দল মুসল্লি ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে আমার বাসায় হামলা করে। তারা আমার কলাপসিবল গেইট ভাঙার চেষ্টা করে। এক ঘণ্টা চলার পর পুলিশ-র্যাব এসে তাদেরকে সরিয়ে দেয়। প্রায় শ দুয়েক লোক ছিল।’
কেন হামলা চালিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে একজন এসে বলেছে, আমি নাকি বলেছি, এখানে ধর্মের নামে ভণ্ডামি হয়। অথচ আমি কিছুই বলিনি। আমার বাসার সামনে একটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল, সেটি সরানোর জন্য ড্রাইভার হর্ন দেয়। একজন মসজিদ থেকে এসে বলেছে, নামাজের সময় কেনো হর্ন দিল। এরপরই আরেকজন এসে বলে, আমি নাাকি ধর্মের বিরুদ্ধে বলি। এই বলে হামলা করে।’
কলাপসিবল গেইট আটকানোর সময় ড. রতন সিদ্দিকী কয়েকটি কিল ঘুষি খেয়েছেন এবং এ সময় মুসল্লিরা তার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
খরব পেয়ে স্থানীয় পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারাও সেখানে রয়েছেন।
শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘স্যার গাড়ি নিয়ে বাসায় ঢুকছিলেন, এ সময় তার বাসার সামনে একটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল। তখন নামাজ চলছিল, স্যার মোটরসাইকেল সরাতে বলায় কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এখন সেটা সমাধান হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি।’
রতন সিদ্দিকী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
তিনি উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
রতন সিদ্দিকী ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
আরও পড়ুন:নাটোরে পাঁচ ছিনতাইকারীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ।
সিংড়া ও বড়াইগ্রাম আমলি আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই পাঁচজন হলেন সিংড়া উপজেলার নাছিয়ারকান্দি এলাকার আব্দুল করিম, কালিনগর গ্রামের সোহেল রানা, শিবপুর গ্রামের রাজীব ওরফে রাজু ও কলম লক্ষ্মীপুর গ্রামের ইয়াকুব আলী এবং পাবনার সুজানগর উপজেলার নওয়াগ্রাম এলাকার রইচ উদ্দিন।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে শুক্রবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, গত ৩০ মার্চ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত সিংড়া ও বড়াইগ্রাম উপজেলায় মোটর সাইকেলসহ টাকা ছিনতাইয়ের তিনটি ঘটনা ঘটে। মামলার পর পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
এসপি বলেন, ‘তারা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করতেন। তাদের কাছ থেকে চারটি মোটরসাইকেল, ৫০ হাজার টাকা ও দুটি চাপাতি জব্দ করা হয়েছে। বুধবার চারজনকে ও শুক্রবার একজনকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
আরও পড়ুন:জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয় পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
শুক্রবার গুলশানের হোলি আর্টিজান হামলার ষষ্ঠ বার্ষিকী উপলক্ষে দীপ্ত শপথ ভাষ্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এ মন্তব্য করেন।
২০১৬ সালের পহেলা জুলাই হোলি আর্টিজান হামলায় তৎকালীন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন খান নিহত হন।
তাদের স্মরণে গুলশান মডলে থানার সামনে ২০১৮ সালে দীপ্ত শপথ নামে এই দুই অফিসারের ভাষ্কর্য বানানো হয়। প্রতি বছর হলি আর্টিজানের হামলার বার্ষিকীতে দীপ্ত শপথ ভাষ্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা যেভাবে জঙ্গিবাদ দমন করেছি সেই ধারাবাহিকতা ধরেও রেখেছি। সাইবার জগতে আমরা জঙ্গি কার্যক্রমের বিষয়ে নজরদারি রাখছি।
‘জঙ্গিবাদ দমনে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এক সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছি। যার কারণে জঙ্গিবাদ এখন তাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারছে না। তার পরও আমরা কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি না, সব সময় সতর্ক আছি।’
র্যাব ডিজি বলেন, ‘আমরা ইতমধ্যে ১৬ জঙ্গিকে ডিরেডিকালাইজেশন (দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে উৎসাহ দেয়া) করেছি। আমরা ১৬ জন জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি, যাতে করে তারা আবার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে কি না। আমরা এই করবছি এবং তা অব্যাহত রেখেছি।
‘কেউ জঙ্গিবাদের পথ ছেড়ে ভালো পথে আসতে চায়, কোনো অপরাধে জড়িত হয়নি তাদেরকে ভালো পথে শান্তির পথে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করি।’
তিনি বলেন, ‘৬ বছর আগে ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই হোলি আর্টিজানে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে এতে ৩ বাংলাদেশিসহ ২০ জন নিহত হন। যারা মারা গিয়েছেন আমরা তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও আত্মার শান্তি কামনা করছি। ওই সময় দুজন পুলিশ অফিসার বীরত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছে।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘র্যাব সব সময় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান কর্নেল আজাদ সিলেটে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হন। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।’
র্যাব এ পর্যন্ত ৩ হাজার জঙ্গি গ্রেপ্তার করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘র্যাব আজ পর্যন্ত ৩ হাজার জঙ্গি গ্রেপ্তার করেছে। হোলি আর্টিজানের পর আমরা ১৫০০-এর বেশি জঙ্গি গ্রেপ্তার করেছি। আমরা সমন্বিতভাবে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ও আস্তানা ভেঙে ঘুরিয়ে দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:বড় ভাইয়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম।
শুক্রবার সকালে তার বড় ভাই হাজি কায়েসের মৃত্যু হয়। পরিবার থেকে আবেদন করা হলে প্যারোলে মুক্তি পান হাজি সেলিম।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছে।’
হাজি সেলিমের ব্যক্তিগত সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বেলাল বলেন, ‘আজ সকাল ৭টা ২০ মিনিটে হাজি সেলিমের ভাই হাজি কায়েস শ্যামলীর নিজ বাসায় মারা যান। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন। বড় ভাইয়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে হাজি সেলিমের প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা হয়।’
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হাজি সেলিমকে জামিন না দিয়ে গত ২২ মে কারাগারে পাঠায় আদালত।
ওইদিনই তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয় চিকিৎসার কথা বলে। এরপর থেকে কারা তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই আছেন এ সংসদ সদস্য। সেখান থেকেই তাকে আজ প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:যশোরের কেশবপুরে এক যুবকের গলা ও পেট কাটা দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
উপজেলার মজিদপুর গ্রামের ঋষিপাড়া থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
২৫ বছরের নিহত চঞ্চল দাস কেশবপুর বাজারে একটি সেলুনে কাজ করতেন।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দীন এসব তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
চঞ্চলের বাবা কার্তিক দাস জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাড়ির পাশের একটি কলাবাগানে যান চঞ্চল। হঠাৎ তার চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে যায় স্থানীয়রা। সেখানে গলা ও পেট কাটা অবস্থায় চঞ্চলকে পড়ে থাকতে দেখেন তারা। তাকে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে অবস্থার অবনতি হয়। এরপর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি।
পুলিশ বলছে, ঋষিপাড়া মাঠে একই এলাকার ২০ বছরের সুদেব দাসের সঙ্গে চঞ্চলের প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সুদেব চাকু বের করে চঞ্চলকে গলায় ও পেটে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
ওসি বোরহান উদ্দীন বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। হত্যার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ছয় বছর আগে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরপর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। তারা সক্ষমতা হারিয়েছে। দেশে তাদের কোনো ‘ফিজিক্যাল’ অ্যাকটিভিটি নেই। অনলাইনে কিছুটা কার্যক্রম থাকলেও তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
বর্তমানে দেশে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী রয়েছে আটটি। আরও একটি নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ছয় বছর পূর্তিতে সিটিটিসি-প্রধান মো. আসাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নিয়েছে নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম।
প্রশ্ন: হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর আপনারা কীভাবে সাড়া দিয়েছেন?
মো. আসাদুজ্জামান: বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাসে অন্যতম বড় একটি ঘটনা হোলি আর্টিজান। এখানে আমাদের দুজন পুলিশ কর্মকর্তা, ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হয়েছেন। এরপর মামলার তদন্তভার সিটিটিসির ওপর বর্তায়। সিটিটিসি মামলাটির সফল তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এই মামলার রায় হয়েছে। আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছি, তাদের একজন বাদে সবাইকে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দিয়েছে আদালত। পরবর্তীতে সিটিটিসি ইন্টেলিজেন্ট পুলিশিংয়ের কারণে জঙ্গিদের আস্তানা খুঁজে বের করে প্রায় সবগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছে। হোলি আর্টিজান হামলার পরে যেসব অভিযান হয়েছে তার প্রায় সবই হয়েছে জঙ্গিদের আস্তানায়।
প্রশ্ন: জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এখন কতটা তৎপর?
মো. আসাদুজ্জামান: সম্প্রতি দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কোনো অপারেশন লক্ষ করিনি। বিচ্ছিন্ন যা দুয়েকটা ছিল সেগুলো খুবই যৎসামান্য। পরবর্তীতে সেগুলোও আমরা উদঘাটন করেছি। এর পেছনে যারা ছিল, সকলকেই সিটিটিসি গ্রেপ্তার করেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে মে মাসে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ বক্সের পাশে যে একটা আইইডি তারা রেখে এসেছিল, সেটার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করেছি। এমনকি তারা যে আস্তানায় বসে আইইডি প্রস্তুত করেছিল, যারা যারা জড়িত ছিল, সবাইকে আমরা অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছি।
এরপর গত দুই বছরে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কোনো অপারেশন আপনারা দেখেননি। আমরা বলব, জঙ্গিদের সে রকম কিছু করার সক্ষমতা নেই। সিটিটিসি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আমাদের কার্যক্রমের কারণে জঙ্গিদের তৎপরতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
লাগাতার অভিযানে জঙ্গিরা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। করোনার সময়ে অনলাইনে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। সাইবার জগতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে সেখানেও তাদের কার্যক্রম সীমিত হয়ে এসেছে।
প্রশ্ন: জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতার এখন প্রবণতাগুলো কী?
মো. আসাদুজ্জামান: এখন জঙ্গিদের ফিজিক্যাল কোনো অ্যাকটিভিটি নেই। করোনাকালীন তারা অনলাইনে বেশ কিছু সক্রিয় ছিল। অনলাইন র্যাডিকেলাইজেশনের ক্ষেত্রে তাদের প্রচার প্রচারণা, রিক্রুট, ট্রেনিং সবকিছু সাইবার স্পেসকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছিল। সেটাও আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। অনলাইনে যারা লিড রোল রাখছিল, তাদের অনেককেই আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এ কারণে অনলাইনে জঙ্গিদের তৎপরতা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে। তারপরও যে কিছু নাই, তা বলব না। ডার্ক ওয়েব, ডিপ ওয়েব বা নিজেদের গ্রুপে প্রচার-প্রচারণা চালায় তারা, কিন্তু সেটা খুব বেশি না।
প্রশ্ন: সংগঠিত প্রচারণা ছাড়াও কেউ কি জঙ্গিবাদে দীক্ষিত হতে পারে?
মো. আসাদুজ্জামান: জঙ্গিদের একটা অংশ সেলফ র্যাডিকেলাইজড হয়েছে। এটা হচ্ছে সাইবার স্পেসের কারণে। আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে সকলের হাতে স্মার্টফোন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যদি ওই রকম একটি কনটেন্ট চোখে পড়ে বা পছন্দ হয়ে যায়, তাহলে আরও কনটেন্ট দেখতে আগ্রহী হয়, কমেন্ট করে। এর ফলে কিছু যে হচ্ছে না, তা বলব না। হচ্ছে। আমি বলব, এখনকার প্রজন্ম অনেক সচেতন, অভিভাবকও অনেক সচেতন। কেননা তারা দেখেছে, জঙ্গিদের পরিণতি কী, জঙ্গিবাদের সর্বশেষ পরিণতি কী? সিটিটিসি প্রায় ২৬-২৭টা হাইরিস্ক অপারেশন করেছে, যেখানে জঙ্গিদের কঠিন পরিণতি তারা স্বচক্ষে দেখেছে। ফলে আগে যেভাবে খুব সহজে র্যাডিকেলাইজ করতে পারত, এখন কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী বা বর্তমান প্রজন্ম তারা অনেক বেশি সচেতন। খুব সহজে তারা ফাঁদে পা দেয় না।
প্রশ্ন: জঙ্গিবাদ দমনে অভিযান ছাড়া আর কোন ধরনের কৌশল আপনারা প্রয়োগ করছেন?
মো. আসাদুজ্জামান: জঙ্গি দমনে হলি আর্টিজানে হামলার পর সিটিটিসি দেশব্যাপী ২৩টি হাই রিস্ক অপারেশন করেছে। এসব অভিযানে ৬৩ জঙ্গি মারা গেছে। জঙ্গি দমনে এসব হার্ড অ্যাপ্রোচের পাশাপাশি সফট অ্যাপ্রোচ নিয়ে কাজ করছে সিটিটিসি। বিশ্বের যেসব দেশ জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে আছে, তারাসহ জাতিসংঘ সর্বসম্মতভাবে একটা সিদ্ধান্তে আসে যে, শুধু অপারেশন বা বিচারের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন করা যাবে না। বাংলাদেশও একই ফিলোসফিতে কাজ করে। হার্ড অ্যাপ্রোচের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করতে পারে এমন সহায়ক পরিবেশকেও প্রতিরোধ করতে হবে। যেসব কারণে জঙ্গিবাদ ছড়ায়, সেগুলো প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এই প্রতিরোধের অন্যতম পদ্ধতি হলো সচেতনতা বৃদ্ধি। সেই কাজটাই আমরা করছি।
বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাস দমন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নামে একটি প্রকল্প নিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে দেশের ৪৮টি জেলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি সম্পন্ন করেছি। এই বছরও আমরা ১২টি জেলায় কাজ করেছি। সর্বশেষ শরীয়তপুর জেলায় করেছি। এতে আমরা একটি জেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয়। স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন ইউনিট হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। আমরা সকল ইউপি চেয়ারম্যানকে এতে যুক্ত করি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেম্বারদেরকেও যুক্ত করি। ওয়ার্ডে কী হয় না হয়, কোন ছেলেটা কেমন, এটা কিন্তু একজন ইউপি মেম্বার সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন। তার নজরে চলে আসে। তিনি যদি জঙ্গিবাদের লক্ষণগুলো জানেন, তাহলে তিনি সতর্ক করতে পারেন। তাদেরকে আমরা এসব বিষয়ে ব্রিফ করি। তাদের মন্তব্যও আমরা শুনি।
প্রশ্ন: এতে কতটা সুফল পাওয়া যাচ্ছে?
মো. আসাদুজ্জামান: জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রী, ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যুক্ত করি। আমরা এর সুফল পাচ্ছি। দেশের মানুষ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করে। ধর্মের নামে মানুষ হত্যাকে এ দেশের মানুষ সমর্থন করে না। এটাই আমাদের মূল শক্তি। যেখানেই গিয়েছি, আমরা সেখানে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি। এসব কারণে গত দুই বছর বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি হামলা ঘটেনি। এতে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ সূচকে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। যেখানে আমেরিকার অবস্থান ২৮, ইউকে ৩২, বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে ৪০। গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স যারা তৈরি করে, তারা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: জঙ্গিদের পুনর্বাসনে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?
মো. আসাদুজ্জামান: যারা ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে ইতোমধ্যে প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে সিটিটিসি। কারাগারে থাকা জঙ্গিদের ডির্যাডিকেলাইজ করার মধ্য দিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হবে। এ প্রকল্পের অনুমোদন পেয়ে গেছি। যারা গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় আছে, যারা সাজা খেটে বের হয়েছে, জামিনে আছে, এমন ব্যক্তিদের আমরা ডির্যাডিকেলাইজ করব, তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনব। জেলখানা থেকেই কাজটা শুরু করতে চাই। খুব দ্রুতই কাজটা আমরা শুরু করব। এই কাজের জন্য সাইকোলজিস্ট, ধর্মীয় নেতা ও সমাজবিজ্ঞানীদের নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় টার্নিং পয়েন্ট হবে। যারা র্যাডিকেলাইজ হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চরমপন্থি হয়ে গেছে, এমন সকলকেই আমরা রিভার্স ওয়েতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনব। ইসলামের যে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তার প্রকৃত ব্যাখ্যাটা আমরা দেব।
মন্তব্য