সিলেটে চলতি বছরের চার মাসে নগরীতে অন্তত ১০টি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে পুড়ে একজন মারাও গেছেন। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও বিপুল।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, এই মৌসুমে বাতাস বেশি থাকে। তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বাসা ও মার্কেটে পুরোনো বৈদ্যুতিক তার থেকে আগুনের সূত্রপাত হচ্ছে। এ ছাড়া অসতর্কতার কারণেও বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
ঈদের আগের দিন ২ মে ভোরে লালদীঘির পাড় হকার্স মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঈদের বেচাকেনা করে মধ্যরাতে বাড়ি ফিরছিলেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ভোরে সেহরির সময় শুনতে পান তাদের মার্কেটে আগুন লেগেছে ।
এই মার্কেটে এক হাজারের বেশি কাপড়ের এবং অর্ধশত ভোগ্যপণ্যের দোকান রয়েছে। খুচরার পাশাপাশি পাইকারিও বিক্রি করা হয় এ মার্কেটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মধ্যে পুড়ে যায় অন্তত ২৫টি দোকান।
ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ক্ষতি হয় প্রায় ১০ কোটি টাকার। এ আগুনে পথে বসতে হয়েছে অনেক ব্যবসায়ীকে।
আগুনের খবর পেয়ে এদিন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।
তিনি রোববার নিউজবাংলাকে জানান, এখন যেখানে লালদীঘির পাড় হকার্স মার্কেট সেখানে আগে লালদীঘি নামে একটি বিশাল দিঘি ছিল। সেই দিঘি ভরাট করে মার্কেট করেছে সিটি করপোরেশন। এভাবে নগরের বেশির ভাগ পুকুর-দিঘি ভরাট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পুকুর-দিঘি ভরাটের ফলও আমরা হাতেনাতে পাচ্ছি। কোথাও আগুন লাগলে নেভানোর পর্যাপ্ত জলাধার পাওয়া যাচ্ছে না। হকার্স মার্কেটের আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পানি সংকটে পড়তে হয়েছিল।’
চলতি বছরের প্রথম দিনই নগরীর কাকলী শপিং সেন্টারে আগুন লাগে। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ১১তলা শপিং সেন্টারের চতুর্থ তলা থেকে মধ্যরাতে আগুনের সূত্রপাত হয়। বৈদ্যুতিক কেব্লের মাধ্যমে আগুন ওপরের তলাগুলোয় ছড়িয়ে যেতে লাগে। এতে কারও প্রাণহানি না হলেও, কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয় হয় বলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার মোড়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ব্লু-মুন নামের একটি বন্ধ কাপড়ের দোকানে আগুন লাগে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন দোকানের মালিক সোয়েব হাসান।
একই মাসের ২৮ তারিখ দক্ষিণ সুরমায় বাবনা পয়েন্টে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মধ্যে পুড়ে যায় দোকানের সব গ্যাস সিলিন্ডার। ওই দোকানের ২০০ গজের মধ্যে ছিল যমুনা ও পদ্মার ডিপো। অল্পের জন্য সেগুলো রক্ষা পায়।
নগরীতে মার্চে দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ৫ মার্চ আখালিয়ার গুয়াবাড়ি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে এক বৃদ্ধা নিহত হন। এ ঘটনায় কলোনির আটটি ঘর পুড়ে যায়। বিকেলে গ্যাসের চুলা থেকে কলোনির একটি ঘরে আগুন লাগে। এ সময় ঘরে আটকা পড়ে ৮০ বছর বয়সী শোভা রানী চন্দ্র মারা যান। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
৬ মার্চ নগরীর জেল রোড এলাকার বহুতল বিপণিবিতান আনন্দ টাওয়ারের পেছনে ফার্নিচারের গোডাউনে আগুন লাগে। রাত ৯টায় লাগা এ আগুন দুই ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। এতে ফার্নিচারের দুটি গোডাউন ও ছয়টি ঘর পুড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী।
এপ্রিলের ৫, ৬, ৭ ও ৯ তারিখে নগরীতে চারটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ৫ এপ্রিল পূর্ব দরগাহ গেটে বেবি গার্ডেন নামের শিশুপণ্যের একটি দোকান পুড়ে যায়। ভোর ৫টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানের মালিক বাবর আহমদ।
নগরীর চৌহাট্টায় দৌলতপুর স্কয়ার নামের একটি ৫তলা ভবনে ৬ এপ্রিল বেলা ২টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি, তবে ভবনটির একাধিক ফ্লোর পুড়ে যায়।
৭ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকার আর্কেডিয়া শপিং কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ে আগুন লাগে। একটি গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুনে কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর ৯ এপ্রিল আগুনে পুড়ে যায় মালনীছড়া চা বাগানের একটি বসতঘর ও একটি দোকান। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সিলেট নগরীতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী চম্পক দে বলেন, ‘দুদিন পরপর একেকটা মার্কেটে আগুন লাগছে। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
অসতর্কতার কারণে বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্সের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম ভূঞা।
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ও গ্যাসের চুলা থেকে। এগুলো ব্যবহারে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। পুরোনো বিদ্যুতের লাইন, সুইচ ও গ্যাসের পাইপ নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।’
শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার বেশির ভাগ মার্কেট ও বাসার বৈদ্যুতিক তার পুরোনো। সেগুলো স্পার্ক করে। এ ছাড়া ঝড়ে তারে তারে ঘষা লেগে বা ছিঁড়ে গিয়েও আগুন লেগে যায়।’
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, এই সময় সিলেটে প্রচুর ঝড় হয়। ঝোড়ো বাতাসে আগুনের ঝুঁকিও বেশি থাকে। কোথাও আগুন লাগলে বাতাসের কারণে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য