করোনাকালের দুই বছর পর খোলা ময়দানে ঈদের জামাতে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
কোন ময়দানের জামাত বড় হয়, এ নিয়ে দুই জেলার মানুষের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। কিশোরগঞ্জবাসী মানতেই নারাজ যে দিনাজপুরের জামাত বড় হয়, তবে দিনাজপুরের জামাত থেকে ২০১৯ সালের মতোই ঘোষণা দেয়া হয়েছে ছয় লাখের জমায়েতের কথা।
২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত হয়নি। দুই বছর বিরতি শেষে এবার ঈদ জামাতের আয়োজনের প্রস্তুতিকালেই সবচেয়ে বড় জমায়েতের জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা ছিল লক্ষণীয়।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এবার জামাত হয়েছে ১৯৫তম। এর প্রতিটিই বরাবরের মতো বিশাল হয়েছে।
অন্যদিকে শোলাকিয়াকে টেক্কা দিতে গোর-এ শহীদের প্রস্তুতি ২০১৭ সাল থেকে শুরু। ২০১৯ সালে এসে আয়োজক কমিটি ঘোষণা দেয়, তাদের জামাত দেশের বৃহত্তম।
শোলাকিয়া ও গোর-এ শহীদের ময়দান- দুটোই আয়তনে বিশাল। তবে তাতেও সব মুসল্লিকে ধারণ করতে পারে না। দুই ময়দান ছাপিয়েই হাজার হাজার মানুষ নামাজ পড়েছেন লাগোয়া ফাঁকা জায়গা বা মাঠ এবং সড়কে।
মুষলধারে বৃষ্টিতে ছোট হয়নি শোলাকিয়ার জামাত
সকাল ১০টায় জামাত শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কিশোরগঞ্জে বিখ্যাত হয়ে ওঠা ময়দানে দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা ফজরের আমাজের আগে থেকেই মাঠে চলে আসতে থাকেন। ঈদগাহ জামে মসজিদে নামাজ পড়েন মাঠেই।
তবে সকাল ৭টা থেকেই শুরু হয় মূল স্রোত। একপর্যায়ে মাঠ ছাপিয়ে পাশের ময়দান, মূল সড়ক ও আশপাশের মসজিদে গিয়ে ছড়ায়।
২৬৫টি সারি হয়। প্রতিটি সারিতে প্রায় ৫০০ করে মুসল্লি দাঁড়াতে পারেন। সব মিলিয়ে শুধু মাঠের ভেতরেই প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
তবে এই মাঠই জামাতের শেষ কথা নয়। পাশের বিশাল আয়তনের আরেকটি মাঠ এবং কিলোমিটার দুয়েক রাস্তাতেও থাকে মুসল্লিদের ভিড়। এই হিসাবে জামাতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা চার লাখের কম হবে না বলে ধারণা করছেন আয়োজক কমিটি।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হয় বজ্রপাত আর মুষলধারে বৃষ্টি। তার পরও কেউ মাঠ ত্যাগ করেননি। বজ্রপাত আর মুষলধারে বৃষ্টির ফলে বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যা সৃষ্টি হলে কিছুক্ষণের জন্য মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ইমামের সঙ্গে মুসল্লিরা মোকাব্বিরের ভূমিকায় তাকবির দিতে থাকেন।
ঈদুল ফিতরের জন্য নির্ধারিত ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। তার বিকল্প ইমাম মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ ইমামতি করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজার শাহাবুদ্দীন জামে মসজিদের খতিব।
নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। এ ছাড়া মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং দেশের কল্যাণে আরও বেশি অবদান রাখতে দোয়া করা হয়।
এই মাঠে নামাজ পড়তে এসেছেন জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দা সোলাইমান হোসেনও। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মাঠে নামাজ আদায় করার ইচ্ছে বহু দিন আগে থেকেই। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে একবার এই মাঠে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর ধরে করোনা মহামারির কারণে এই মাঠে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়নি।’
তিনি বলেন, একটু বেশি আগ্রহ নিয়ে দুই দিন আগেই চলে এসেছি। এই মাঠ আর পুরো শহর ঘুরে দেখেছি। আজ নামাজ শুরু হওয়ার আগেই মুষলধারে বৃষ্টি আর বজ্রপাত শুরু হয়েছে। কিন্তু মাঠ ত্যাগ করার ইচ্ছে হয়নি। বৃষ্টিতে ভিজেই নামাজ আদায় করেছি।’
আপনার বাড়ি জয়পুরহাট, সেখান থেকে দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ তো কাছে। কাছে তার পরও কিশোরগঞ্জে এসেছেন কেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে দিনাজপুর ১০০ কিলোমিটার আর কিশোরগঞ্জ ৩০০ কিলোমিটারের বেশি। তার পরও এখানে আসার মূল কারণ হচ্ছে এই মাঠে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় জামাত হয়। এ ছাড়া এই মাঠের ঐতিহ্য আছে।’
মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা সারোয়ার জাহানও এসেছিলেন শোলাকিয়ায়। এবারই প্রথম নয়। তার বয়স ৪৫ বছর। তার মধ্যে ২৫ বছর থেকেই এই মাঠে নামাজ করে আসছেন। শুরুটা হয়েছিল বাবার হাত ধরে।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে এই মাঠে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। তার পরও আমি এসেছিলাম শুধু মাঠটি দেখার জন্য। বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদামাটিতে বসে নামাজ আদায় করেও মনে আনন্দ পেয়েছি।’
মাঠের পাশে দোকানি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘দুই বছর পর এবার আবারও দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন। গতকাল থেকেই আমার দোকানে ভিড় বেড়েছে।’
গোর-এ শহীদের মাঠ ছাপিয়ে ভিড় পাশের মাঠে
দিনাজপুরের এই ময়দানে সকাল ৭টার পর থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকেন। কেবল শহরের মুসল্লিরা নয়, জেলার ১৩টি উপজেলা থেকে বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকে নামাজ পড়তে আসেন তারা।
সকাল সাড়ে ৮টা বাজতেই গোর-এ শহীদ বড় ময়দান পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে। মাঠে নামাজ পড়ার জন্য দুই শতাধিক কাতারে মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে যান। একেকটি কাতারে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ হিসাবে মাঠেই নামাজ পড়েন আড়াই লাখের মতো মানুষ।
তবে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনের সড়ক ও গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের পাশে অবস্থিত আরেকটি মাঠেও মুসল্লিরা কাতারে দাঁড়িয়ে পড়েন। সেই মাঠটিতে অর্ধেক যানবাহন ও অর্ধেক মুসল্লি অবস্থান করেন।
টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, যশোর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা এসেছেন নামাজ পড়তে।
টাঙ্গাইল জেলা থেকে নামাজ পড়তে গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে এসেছেন শফিউর রহমান বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলাম। এই মাঠের নাম অনেক শুনেছি। তাই এই মাঠে নামাজ পড়তে গতকাল রাতে দিনাজপুরে আসছি। এখানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে রাত্রি যাপন করে নামাজ পড়তে আসছি। লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে নামাজ পড়ে অনেক খুশি লাগছে।’
সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছি। কিন্তু দিনাজপুরের ঈদের নামাজটা অনেক বড় মনে হলো। এত পরিমাণ লোক এখানে আসছে এবং তাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’
বিশাল নামাজে ইমামতি করেছেন মওলানা শামসুল হক কাসেমী।
নামাজ শেষে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘একসঙ্গে এই মাঠে ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নামাজ আদায় করেছেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।’
ঈদের নামাজে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ৬৫৯জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছেন।
এ ছাড়া পুলিশ, র্যাব, আনসার, ডিবি, ডিএসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই সদস্যরা সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেছেন।
২০১৫ সালে বড় ঈদগাহ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছয়টি ঈদের জামাত হয়েছিল।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য