করোনাকালের দুই বছর পর খোলা ময়দানে ঈদের জামাতে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
কোন ময়দানের জামাত বড় হয়, এ নিয়ে দুই জেলার মানুষের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। কিশোরগঞ্জবাসী মানতেই নারাজ যে দিনাজপুরের জামাত বড় হয়, তবে দিনাজপুরের জামাত থেকে ২০১৯ সালের মতোই ঘোষণা দেয়া হয়েছে ছয় লাখের জমায়েতের কথা।
২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত হয়নি। দুই বছর বিরতি শেষে এবার ঈদ জামাতের আয়োজনের প্রস্তুতিকালেই সবচেয়ে বড় জমায়েতের জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা ছিল লক্ষণীয়।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এবার জামাত হয়েছে ১৯৫তম। এর প্রতিটিই বরাবরের মতো বিশাল হয়েছে।
অন্যদিকে শোলাকিয়াকে টেক্কা দিতে গোর-এ শহীদের প্রস্তুতি ২০১৭ সাল থেকে শুরু। ২০১৯ সালে এসে আয়োজক কমিটি ঘোষণা দেয়, তাদের জামাত দেশের বৃহত্তম।
শোলাকিয়া ও গোর-এ শহীদের ময়দান- দুটোই আয়তনে বিশাল। তবে তাতেও সব মুসল্লিকে ধারণ করতে পারে না। দুই ময়দান ছাপিয়েই হাজার হাজার মানুষ নামাজ পড়েছেন লাগোয়া ফাঁকা জায়গা বা মাঠ এবং সড়কে।
মুষলধারে বৃষ্টিতে ছোট হয়নি শোলাকিয়ার জামাত
সকাল ১০টায় জামাত শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কিশোরগঞ্জে বিখ্যাত হয়ে ওঠা ময়দানে দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা ফজরের আমাজের আগে থেকেই মাঠে চলে আসতে থাকেন। ঈদগাহ জামে মসজিদে নামাজ পড়েন মাঠেই।
তবে সকাল ৭টা থেকেই শুরু হয় মূল স্রোত। একপর্যায়ে মাঠ ছাপিয়ে পাশের ময়দান, মূল সড়ক ও আশপাশের মসজিদে গিয়ে ছড়ায়।
২৬৫টি সারি হয়। প্রতিটি সারিতে প্রায় ৫০০ করে মুসল্লি দাঁড়াতে পারেন। সব মিলিয়ে শুধু মাঠের ভেতরেই প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
তবে এই মাঠই জামাতের শেষ কথা নয়। পাশের বিশাল আয়তনের আরেকটি মাঠ এবং কিলোমিটার দুয়েক রাস্তাতেও থাকে মুসল্লিদের ভিড়। এই হিসাবে জামাতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা চার লাখের কম হবে না বলে ধারণা করছেন আয়োজক কমিটি।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হয় বজ্রপাত আর মুষলধারে বৃষ্টি। তার পরও কেউ মাঠ ত্যাগ করেননি। বজ্রপাত আর মুষলধারে বৃষ্টির ফলে বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যা সৃষ্টি হলে কিছুক্ষণের জন্য মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ইমামের সঙ্গে মুসল্লিরা মোকাব্বিরের ভূমিকায় তাকবির দিতে থাকেন।
ঈদুল ফিতরের জন্য নির্ধারিত ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। তার বিকল্প ইমাম মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ ইমামতি করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজার শাহাবুদ্দীন জামে মসজিদের খতিব।
নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। এ ছাড়া মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং দেশের কল্যাণে আরও বেশি অবদান রাখতে দোয়া করা হয়।
এই মাঠে নামাজ পড়তে এসেছেন জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দা সোলাইমান হোসেনও। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মাঠে নামাজ আদায় করার ইচ্ছে বহু দিন আগে থেকেই। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে একবার এই মাঠে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর ধরে করোনা মহামারির কারণে এই মাঠে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়নি।’
তিনি বলেন, একটু বেশি আগ্রহ নিয়ে দুই দিন আগেই চলে এসেছি। এই মাঠ আর পুরো শহর ঘুরে দেখেছি। আজ নামাজ শুরু হওয়ার আগেই মুষলধারে বৃষ্টি আর বজ্রপাত শুরু হয়েছে। কিন্তু মাঠ ত্যাগ করার ইচ্ছে হয়নি। বৃষ্টিতে ভিজেই নামাজ আদায় করেছি।’
আপনার বাড়ি জয়পুরহাট, সেখান থেকে দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ তো কাছে। কাছে তার পরও কিশোরগঞ্জে এসেছেন কেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে দিনাজপুর ১০০ কিলোমিটার আর কিশোরগঞ্জ ৩০০ কিলোমিটারের বেশি। তার পরও এখানে আসার মূল কারণ হচ্ছে এই মাঠে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় জামাত হয়। এ ছাড়া এই মাঠের ঐতিহ্য আছে।’
মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা সারোয়ার জাহানও এসেছিলেন শোলাকিয়ায়। এবারই প্রথম নয়। তার বয়স ৪৫ বছর। তার মধ্যে ২৫ বছর থেকেই এই মাঠে নামাজ করে আসছেন। শুরুটা হয়েছিল বাবার হাত ধরে।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে এই মাঠে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। তার পরও আমি এসেছিলাম শুধু মাঠটি দেখার জন্য। বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদামাটিতে বসে নামাজ আদায় করেও মনে আনন্দ পেয়েছি।’
মাঠের পাশে দোকানি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘দুই বছর পর এবার আবারও দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন। গতকাল থেকেই আমার দোকানে ভিড় বেড়েছে।’
গোর-এ শহীদের মাঠ ছাপিয়ে ভিড় পাশের মাঠে
দিনাজপুরের এই ময়দানে সকাল ৭টার পর থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকেন। কেবল শহরের মুসল্লিরা নয়, জেলার ১৩টি উপজেলা থেকে বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকে নামাজ পড়তে আসেন তারা।
সকাল সাড়ে ৮টা বাজতেই গোর-এ শহীদ বড় ময়দান পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে। মাঠে নামাজ পড়ার জন্য দুই শতাধিক কাতারে মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে যান। একেকটি কাতারে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ হিসাবে মাঠেই নামাজ পড়েন আড়াই লাখের মতো মানুষ।
তবে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনের সড়ক ও গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের পাশে অবস্থিত আরেকটি মাঠেও মুসল্লিরা কাতারে দাঁড়িয়ে পড়েন। সেই মাঠটিতে অর্ধেক যানবাহন ও অর্ধেক মুসল্লি অবস্থান করেন।
টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, যশোর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা এসেছেন নামাজ পড়তে।
টাঙ্গাইল জেলা থেকে নামাজ পড়তে গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে এসেছেন শফিউর রহমান বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলাম। এই মাঠের নাম অনেক শুনেছি। তাই এই মাঠে নামাজ পড়তে গতকাল রাতে দিনাজপুরে আসছি। এখানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে রাত্রি যাপন করে নামাজ পড়তে আসছি। লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে নামাজ পড়ে অনেক খুশি লাগছে।’
সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছি। কিন্তু দিনাজপুরের ঈদের নামাজটা অনেক বড় মনে হলো। এত পরিমাণ লোক এখানে আসছে এবং তাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’
বিশাল নামাজে ইমামতি করেছেন মওলানা শামসুল হক কাসেমী।
নামাজ শেষে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘একসঙ্গে এই মাঠে ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নামাজ আদায় করেছেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।’
ঈদের নামাজে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ৬৫৯জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছেন।
এ ছাড়া পুলিশ, র্যাব, আনসার, ডিবি, ডিএসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই সদস্যরা সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেছেন।
২০১৫ সালে বড় ঈদগাহ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছয়টি ঈদের জামাত হয়েছিল।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান ও সোনাহাট স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক।
বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজে পৌঁছান তিনি। সেখানে বিশ্রাম ও দুপুরের খাবারের পর জেলা শহরের কাছে ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত প্রস্তাবিত ভুটান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন।
দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সেখানে পৌঁছান তিনি। সেখানে প্রায় ২০মিনিট অবস্থান করে সবকিছু দেখেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাজা স্থান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ সময় তিনি এলাকাটি ঘুরে দেখেন এবং সবার সঙ্গে ছবি তোলেন। পরিদর্শনকালে জোন এলাকাটি তার পছন্দ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়াও ইকোনোমিক জোন এলাকায় অ্যাগ্রোবেজড ও ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ হওয়ার সম্ভাবনার রয়েছে বলে তিনি আভাস দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ভুটানের বিনিয়োগকারী এবং বাংলাদেশের স্থানীয়দের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে ইকোনোমিক জোনে কী ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। পরে জোন এলাকা থেকে তিনি ১টা ৪০ মিনিটে সোনাহাট স্থলবন্দরের উদ্দেশে সড়কপথে যাত্রা করেন।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী এম এ আরাফাত, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার, সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ ও পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক বলেন, ‘জায়গাটি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আমি কাজ শুরু হলে আবারও এখানে আসব।’
এরপর বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তিনি সোনাহাট স্থলবন্দর এলাকায় পৌঁছান। সেখানে ২০ মিনিট অবস্থানের পর তিনি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের গোলকগঞ্জ দিয়ে ভুটানের উদ্দেশে ভারতে প্রবেশ করেন। সোনাহাট থেকে সড়ক পথে ভুটানের দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার।
সফর শেষে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘উনি শতভাগ সন্তষ্ট। জায়গা দেখেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখেছেন। সবকিছু মিলিয়ে উনি সন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে কী ধরনের কার্যক্রম হতে পারে, সে বিষয়ে রাজা জানিয়েছেন, এখানকার স্থানীয় লোকজনের কী ধরনের চাহিদা রয়েছে এবং ভুটানের বিনিয়োগকারী লোকজনের কী চাহিদা রয়েছে- তার ওপর ভিত্তি করে এখানে কী ধরনের শিল্পকারখানা হবে তা নির্ধারণ করা হবে। তবে কৃষিনির্ভর ও ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১০/২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই সফরের মধ্য দিয়ে অনুন্নত কুড়িগ্রাম উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে। ২০১৬ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক জোনের জন্য জায়গা খুঁজতে বলেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমরা সফলতার মুখ দেখছি।
‘এটি বাস্তবায়ন হলে এলাকার বেকার মানুষ কাজ পাবে। সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে পিছিয়ে পড়া এই জেলা।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পতেঙ্গা থানাধীন ১৫ নম্বর ঘাটে নোঙর করা একটি ফিশিং বোটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন- ৫৫ বছর বয়সী জামাল উদ্দিন, ৪৫ বছর বয়সী মাহমুদুল করিম ও মফিজুর রহমান এবং ২৮ বছর বয়সী এমরান। এদের মধ্যে প্রথম তিনজনের শরীরের ৮০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে। অন্যজনের শরীর পুড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।
চমেক হাসপাতালে বার্ন ও ক্যাজুয়ালটি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের বড় ধরনের বার্ন হয়েছে। এই ধরনের রোগীদের অবস্থা ভালো থাকে না।’
চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ-থানার ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারে ইঞ্জিন থেকে সৃষ্ট আগুনে ৪ জন দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
মোটা অংকের বেতনের প্রলোভনে লিবিয়ায় নিয়ে চট্টগ্রামের চার তরুণকে জিম্মি করেছে একটি চক্র। সেখানে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। আর সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছে চাওয়া হয়েছে মুক্তিপণ। এ নিয়ে দেশে স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জিম্মিদের অভিভাবকরা এ ঘটনা বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
লিবিয়ায় মানব পাচার চক্রের হাতে জিম্মি চার তরুণ হলেন- আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে ওয়াসিম, একই এলাকার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন, আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন। এদের বয়স ১৯ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
অপহৃতদের স্বজনরা জানান, রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম লিবিয়ায় নিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রতি ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। ওই তরুণরা ১৬ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ায় পৌঁছেন। লিবিয়ায় তাদের সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা দাবি করে তাদের নির্যাতন করা শুরু হয়। মানব পাচার চক্র এরপর নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো শুরু করে পরিবারের সদস্যদের কাছে।
স্বজনরা জানান, চট্টগ্রামের জহিরুল ভুক্তভোগীদের টুরিস্ট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজান নামে এক লোকের হাতে ওদেরকে তুলে দেয়া হয়। মিজান তিনদিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিজের কাছে নিয়ে নেয়। সাতদিন পর দুবাই থেকে মিসর হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে মিজান ওই চার তরুণকে অন্য দালালের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) স্বজনদের কাছে কয়েকটি নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও অডিও বার্তা পাঠায় দালাল চক্রের সদস্যরা। ভিডিও বার্তায় জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। আর ওই টাকা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি হিসাব নম্বরও দেয় তারা।
হুমকি দেয়া হয়, মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হবে চার জিম্মিকে। এজন্য বেঁধে দেয়া হয় সময়ও। বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে যতটা পারে তত টাকা দিতেও বলা হয়। টাকা না দিলে এক এক করে লাশ পাঠাবে বলে স্বজনদের জানিয়েছে দালালরা।
অপহৃত ওয়াসিমের মামা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে চারজনের জন্য চার লাখ টাকা পাঠাতে বলেছে। বিকেল থেকে মোবাইল ফোনে ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করেছে টাকার জন্য। তাদের নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও পাঠাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
জাবেদুর রহিমের বাবা আবদুর রহিম বলেন, ‘টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার যা ছিল সব বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। সেখানে ছেলে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এখন ১০ লাখ টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দেবে বলে জানিয়েছে অপরণকারীরা। এই মুহূর্তে এত টাকা কই পাব আমি?’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন জানান, অপহৃতদের স্বজনদের কাছ থেকে তারা লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে দুর্নীতি করার ঘোষণা দেন এ সংসদ সদস্য।
তার বক্তব্যের অংশবিশেষের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রকাশিত ওই ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচটা বছর (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না; আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যেভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’
প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আখতার। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনার বক্তব্য উনি বলেছেন, এখানে আমার কোনো কথা নেই।’
বক্তব্যর বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বক্তব্যে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, অনেকেই এরকম করে। আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লংঘন, অন্যদিকে নির্বাচনি বিধিরও লংঘন।
‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারকাজে একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না।’
সংসদ সদস্যের কাছে গঠনমূলক বক্তব্যেরও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ শহরের প্রবেশপথে যানজট নিরসনে ও পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক ও ফুটপাত থেকে শতাধিক হকার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করা হয়।
প্যানেল মেয়র তসলিম মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্থায়ী কিছু ব্যবসায়ীরা ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে ব্যবসা করে আসছেন। এতে করে শহরে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পথচারীদের সুবিধার্থে যানজট দূর করতেই এই উচ্ছেদ অভিযান।
উচ্ছেদ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ মো. তসলিম মিয়া ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানাসহ থানা পুলিশ ও পৌরসভার কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠির রাজাপুরে নদীর তীর থেকে এক ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো যুবকের মামুন হোসেন, যার বয়স ২৫ বছর। তিনি রাজাপুরের পশ্চিম সাতুরিয়া গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে।
ভ্যানচালক মামুন দুই দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন জানিয়ে রাজাপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে সাতুরিয়া গ্রামের ইদুরবাড়ি এলাকায় কচা নদীর তীর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। লাশের ময়নাতদন্তসহ পরবর্তী সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে এটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা, সেটি তদন্তে বের হবে।’
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পূর্ব পূয়ালী গ্রামের আব্দুর রহিম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে রাব্বি হাওলাদার।
২৫ বছর বয়সী রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট। ডাক্তারের পরামর্শ তার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। বর্তমানে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রাব্বির কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য এতো টাকা লাগবে শোনার পর থেকেই তার কৃষক বাবা সাহায্যের জন্য ছুটছেন চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় বিত্তবানদের কাছে। কেন না তার সবকিছুই বিক্রি করে দিলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি জোগাড় করার সামর্থ্য হচ্ছে না।
রাব্বি বর্তমানে ঢাকার মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এমন অবস্থায় কৃষক বাবা তার সন্তানকে বাঁচাতে দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। দেশের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই হয়ত বেঁচে যাবে তার সন্তান।
রাব্বির পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাব্বি হাওলাদার কয়েক মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (সেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যান তার পরিবার। সেখানে চিকিৎসক তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন রাব্বির দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল রাব্বির, কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরই মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ওপরে শুধু হাসপাতাল ও ওষুধের বিল দিতে হয়েছে। দরিদ্র এই পরিবারটি আত্মীয়স্বজনসহ সবার সহায়তায় ওই বিল দেয়া সম্ভব হয়।
রাব্বির মা রেভা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এভাবে আর কয়দিন চিকিৎসা করাতে পারব জানি না। কারণ আমাদের সামর্থ্য শেষ হয়ে এসেছে। শুধু টাকার অভাবে তাকে ভালো কোনো হাসপাতালেও নিতে পারছি না, কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপারেশনের ধকল সহ্য করার মতো সুস্থ অবস্থায় আনা খুব জরুরি।’
রাব্বির বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে আপনাদের ভালোবাসা ও সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন। কারণ শুধু টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় আমার একমাত্র ছেলে অকালে ঝরে যাবে তা আমার জীবন থাকতে মানতে পারছি না।’
তাকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে ০১৯৯৭-২২৮৯৭৫ ও ০১৯৮৭-৩৬৬৫৬৮ (বিকাশ-পার্সোনাল) নাম্বারে পাঠাতে পারেন ও যোগাযোগ করতে পারেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য