ঈদের আর বাকি কয়েক দিন। পুরোদমে কাজ করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা শ্রমিকরা। ২৭ রমজানের মধ্যেই শেষ করতে হবে সব অর্ডারের কাজ।
গত দুই ঈদে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে অনেক কারখানা মালিকদের। এবার আশা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার।
তবে লোডশেডিংয়ের কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ কারখানা মালিক-শ্রমিকদের।
স্টার ম্যাক্স পিও ফুটওয়্যারের পরিচালক সেলিম মিয়া জানান, প্রতি মাসে তাকে ৬ লাখ টাকা শ্রমিকদের বেতন হিসেবে দিতে হয়। মহামারির সময় কোনো মাসেই বেতন বন্ধ রাখেননি। তবে সে অনুযায়ী হয়নি কাজ। তাই লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।
সেলিম বলেন, ‘এই ঈদে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ ক্ষতি পুষিয়ে আসবে। তবে যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুতের গোলযোগ। চার লেনের মহাসড়কের কাজের জন্য প্রায়ই সারা দিন বিদ্যুৎ থাকে না। টার্গেট পূরণ করাই কঠিন হয়ে গেছে।
‘সেই সঙ্গে ভ্যাট আর ট্যাক্স কর্মকর্তাদের চাপে আরও দিশেহারা হয়ে পড়েছি। নানান বিষয় বের করে তারা ভ্যাট নিচ্ছেন। ভ্যাট ছাড়া এমনিতেও কর্মকর্তাদের খুশি করতে হচ্ছে। যদি বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তাহলে আমাদের লভ্যাংশ বাড়বে।’
এ প্লাস পিও ফুটওয়্যারের পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘ঈদ মৌসুমে আমাদের কারখানায় নারী, পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার জোড়া জুতার চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রমিকরা চাহিদা অনুযায়ী জুতা তৈরি করতে পারছে না।
‘লকডাউনের পর ভেবেছিলাম ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে কিন্তু তা আর হচ্ছে কই? তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পাদুকা সমিতির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলার ভাটপাড়া, নাটাই উত্তর ও নাটাই দক্ষিণ, পীরবাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে অটোমেশিনে তৈরি জুতার কারখানা। মেশিন ও হাতে তৈরি মিলিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন আছে তিন শতাধিক জুতার কারখানা।
মেশিনে তৈরি জুতার কারখানাগুলোর প্রতিটিতে ৮০ থেকে ১০০ জন এবং হাতে তৈরি কারখানাগুলোতে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এই কারখানাগুলোয় দেড়শ থেকে ৪০০ টাকা দামের জুতা-স্যান্ডেল তৈরি হয়।
চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে জুতা কেনেন। এরপর বিক্রি করেন খুচরা বাজারে।
এ প্লাস পিও ফুটওয়্যারের শ্রমিক জুয়েল মিয়া বলেন, ‘গত দুই বছর করোনার কারণে বাড়তি কাজ করতে না পারায় তেমন আয় হয়নি। খুবই কষ্টে ঈদ কেটেছে। এ বছর রোজায় বাড়তি কাজ করে বেতনের বাইরে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ইনকামের আশা করছি। এই টাকা দিয়ে সবার জন্য নতুন জামাকাপড় কিনব।’
সোহাগ সুজের মালিক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘সাত থেকে আট বছর ধরে ব্যবসা করছি। ভালোই চলছিল। তবে করোনার প্রভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পণ্য পাঠাতে পারছিলাম না, আবার অন্য জেলা থেকে অর্ডারও পাচ্ছিলাম না। কারিগরদের ঠিক সময়ে বেতন দিতে পারতাম না। ঋণ করে কারখানা চালু রাখছি।
‘তবে এই ঈদে ভালোই অর্ডার পেয়েছি। যদি অর্ডারগুলো ঠিকমতো করে পাঠাতে পারি তাহলে মালিক-শ্রমিক সবাই পরিবার নিয়ে ভালোভাবে ঈদ করতে পারব।’
ব্যবসায়ীরা জানান, জুতা তৈরির কাঁচামালের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। তাই তেমন লাভ করতে পারছেন না।
তারা বলেন, জুতা তৈরির জন্য প্রয়োজন চায়না রেকসিন, স্টিকার, সুতা, পাথরের বোতাম, রিং, বেলফো ও কেমিক্যাল। প্রধান হচ্ছে রেকসিন ও কেমিক্যাল। এগুলোর দাম এখন আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
চায়না রেকসিন আগে ছিল প্রতি গজ ৭০০ টাকা, এখন দাম ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। প্রতি গজ দেশি রেকসিনের দাম ২৫০ থেকে বেড়ে ৪০০-৪৫০ টাকা হয়েছে। আগে প্রতি লিটার কেমিক্যালের দাম ছিল ১৭৫ টাকা, এখন ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা।
জেলা পিও ফুটওয়্যার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আমানউল্লাহ বলেন, ‘জুতা-স্যান্ডেলের ব্যবসা মূলত দুই ঈদ ঘিরে। বাংলাদেশে চায়নার কেমিক্যাল আমদানি কমে গেছে। তাই দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তা ছাড়া বিদ্যুতের সমস্যাও হচ্ছে খুবই বেশি। তবুও আশা করছি, সব সমস্যা কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারব।’
জেলা পাদুকা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি কাজী শফিউদ্দিন জানান, পুরো বাংলাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তৈরি জুতার চাহিদা আছে। তবে বিদেশি জুতার কারণে এখন দেশি জুতা-স্যান্ডেলের কদর কমে গেছে। জুতা আমদানি কমিয়ে দিলে আমাদের জুতাগুলো প্রাধান্য পাবে। সরকার দেশীয় এই শিল্পের দিকে সুদৃষ্টি দিক এটাই তাদের দাবি।
আরও পড়ুন:বাগেরহাটের খুলনা-মোংলা মহাসড়কে ট্রাকের চাপায় তিন ভ্যানযাত্রী নিহত হয়েছেন।
উপজেলার চেয়ারম্যান বাড়ি মোড় এলাকায় শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো তিনজন হলেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ঝনঝননিয়া গ্রামের সাঈদ মোড়ল (৪৫), একই গ্রামের মো. আজাদ (৩৫) ও কুমরাই গাববুনিয়া গ্রামের মো. মনি (৪৫)।
এ ঘটনায় ট্রাকটির চালক যশোরের চৌগাছার চানাদা-আফরা গ্রামের বাসিন্দা গাজি সাফায়েত হোসেনকে (১৮) আটক ও ট্রাকটি জব্দ করা হয়।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে মোংলাগামী একটি ট্রাক বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী ভ্যানকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে একজন নিহত ও দুইজন গুরুতর আহত হন। পরে আহতদের রামপাল উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার পরপরই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে সাঈদ মোড়লের মরদেহসহ আহত দুইজনকে ট্রাকের চাকার নিচ থেকে উদ্ধার করে রামপাল উপজেলা হাসপাতালে পাঠায়।
খুলনা-মোংলা জাতীয় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করায় ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় ‘হাতবোমার’ আঘাতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কানাইপুরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় দক্ষিণ কানাইপুরের প্রয়াত মালেক সরদারের ছেলে দুবাই প্রবাসী রিপন সরদার বাড়িতে আসেন। এ খবর পেয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ একই এলাকার আনসার হাওলাদারের ছেলে দেলোয়ার হাওলাদার লোকজন নিয়ে রিপনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় ঘরে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
এ ঘটনায় পরবর্তীতে গত ২৩ এপ্রিল রিপন সরদারের স্ত্রী রুনিয়া বেগম বাদী হয়ে কালকিনি থানায় ২২ জনের নামে একটি মামলা করেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এরই জেরে শুক্রবার সন্ধ্যায় রিপনের চাচাত ভাই ও আলীনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীদ পারভেজের সমর্থক জামাল সরদার স্থানীয় বাজারে যান। মাঝপথে সাবেক চেয়ারম্যান মিলন সরদারের কর্মী মহসিন লোকজন নিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করে বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় একাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রিপন হাওলাদারের আগের ঘটনার মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করেই এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন:দাবদাহ আর বৃষ্টিহীনতায় পুড়ছে মাদারীপুরের পাটক্ষেত। বৈশাখের তপ্ত রোদে পাটক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাটের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেয়ায় যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি খরায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারছেন না কৃষকরা।
এমনটা চলতে থাকলে উৎপাদন অনেকটা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের তীব্র দাবদাহে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতেই মরে যাচ্ছে পাট গাছ। কোথাও শুকিয়ে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে ঘন ঘন সেচ দিয়েও গাছের আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে পারছেন না।
অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় জমিতে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে।
কৃষকরা জানান, এবার প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। যা গতবারের চেয়ে অন্তত দুই হাজার বেশি। এরপরে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য সেচ দিচ্ছেন তারা। ফলে আরও বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়।
খোয়াজপুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমে মাঠ ফেটে চৌচির। পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। একটুখানি বড় হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন চললে এবার পাট আবাদ ধসে পড়বে। অনেকেই সেচ দিলেও এক দুই দিন পরে আবার শুকিয়ে যায়। এতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠছে।’
আর মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বপন কাজ শেষ হয়েছে এবং অনেক স্থানে চারা বড় হয়ে গেছে, কিন্তু রোগের কারণে পাটের ক্ষতি হওয়ায় চাষিদের বিকেলে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবদুল মতিন বিশ্বাস বলেন, ‘এই গরমে পাটের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে কৃষকদের বলছি, যেন বিকেলে সেচের মাধ্যমে পাট গাছ জীবিত রাখে। এতে গাছ মরবে না।’
মাদারীপুর জেলায় অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পাটের অবস্থান শীর্ষে। গত বছর পাটের মূল্য ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন।
আরও পড়ুন:তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর পুনরায় শ্রীমঙ্গল-পাত্রখোলা সড়কে বাস পরিষেবা চালু করেছে শ্রীমঙ্গল-শমশেরনগর-কুলাউড়া বাস মালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার সকালে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিদ আলী ও ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন শ্রীমঙ্গল বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই রুটে ৫০ মিনিট পরপর ২৪টি বাস চলাচল করবে বলে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ মাধবপুর সড়ক দিয়ে ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা চা বাগান পর্যন্ত এ বাস চলাচল করবে।
কুরমা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। এছাড়া পাত্রখোলা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৫০ টাকা, মাধবপুর থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৪০ টাকা, কুরমা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ৪০ টাকা, পাত্রখোলা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ২৫ টাকা, মাধবপুর থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ১৫ টাকা এবং ভানুগাছ থেকে শ্রীমঙ্গল ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কুরমা নতুন বাস স্ট্যান্ডে বাস চলাচলের উদ্বোধন শেষে মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর-কুলাউড়া বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. তসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী যোগেশ্বর চন্দ্র সিংহের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান শাওন, ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ, নুরুল হক, বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, গ্রুপ সভাপতি কাসেম মিয়া ও আব্দুস সালাম প্রমুখ।
এর আগে মাধবপুর বাজারে বাস প্রবেশ করলে এলাকাবাসী বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় যাত্রীদের মানসম্পন্ন সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
এদিকে সিএনজি থেকে ভাড়া কম করে বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় যাত্রীসহ স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীরা বেজায় খুশি।
মন্তব্য