বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের আমরবুনিয়া গ্রামে এক হিন্দু পরিবারের বসতবাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ওই ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া জামায়াতের নুরজামাল হাওলাদার ও যুবলীগের উজ্জ্বল খানকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। তারা গ্রেপ্তার হলে গ্রামে স্বস্তি ফিরবে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের ওই গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলো ফের হামলার আতঙ্কে রয়েছে। আর মুসলমান পরিবারের পুরুষরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন।
ফেসবুকে ইসলাম ও মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে ১১ এপ্রিল রাতে আমরবুনিয়া গ্রামের এক হিন্দু পরিবারের বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ওই গ্রামের যুবক কৌশিক বিশ্বাসকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় কৌশিকের বাবা রমনী বিশ্বাস বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮০-৯০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা করে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে গ্রামের সত্তার হাওলাদার বাদী হয়ে কৌশিক বিশ্বাসের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। এই দুই মামলায় এখন পর্যন্ত কৌশিকসহ কারাগারে আছেন ২০ জন।
মোড়েলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান জানান, ওই হিন্দু পরিবারে হামলায় নেতৃত্ব দেয়া স্থানীয় জামায়াত সমর্থক নুরজামাল হাওলাদার ও যুবলীগ সমর্থক উজ্জ্বল খানকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
রোববার ওই গ্রাম ঘুরে একাধিক হিন্দু ও মুসলমান পরিবারের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের। সেখানে প্রায় প্রতিটি হিন্দু পরিবারের সদস্যরা ফের হামলার আশঙ্কার কথা বলেছেন। প্রতিটি মুসলমান পরিবারের পুরুষরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
আমরবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দদের ভাষ্য
আমরবুনিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মালেক গাজী বলেন, ‘হামলার ঘটনায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হলেও অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৮০-৯০ জনকে। গ্রামের সাধারণ মানুষ ওই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেক পরিবারের পুরুষরা গ্রামের বাইরে অবস্থান করছেন। কিছু কিছু পরিবারের পুরুষ গ্রামেই আছেন। তারা দিনের বেলায় লুকিয়ে বাড়ি আসেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হামলার নেতৃত্ব দেয়া উজ্জ্বল ও নুরজামাল এখনও পলাতক। এই দুইজন গ্রেপ্তার হলে গ্রামের মানুষ স্বস্তি পেতো।’
আমরবুনিয়ার পাশের ঝিউধরা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরবুনিয়া গ্রামের অনেক পুরুষ এলাকা ছেড়েছেন। পাশাপাশি আমাদের গ্রামের মানুষও আতঙ্কে রয়েছে। ঘটনার দিন শুধু আমরবুনিয়া নয়, আশপাশের বিভিন্ন গ্রামসহ মোংলা উপজেলা থেকেও মানুষ এসে ওই বাড়িতে হামলা চালায়।
‘ঘটনার দিন ওই গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন মানুষ ওইখানে গেছিলো। সবাই তো আর ভাঙচুর করতে যায়নি। তারপরও গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্ক রয়েছে সবার মনে।’
আমরবুনিয়া গ্রামের সুরেষ রায়ের স্ত্রী সিকা রায় বলেন, ‘ঘটনার দিন আমার বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল। প্রায় ৩০-৩৫ জন মেহমান বাড়িতে ছিলেন। ভয়ে বাড়ির পেছনে মাঠে আত্মীয়-স্বজনসহ লুকিয়ে ছিলাম।
‘গ্রামে পুলিশ আছে। এখন পরিস্থিতি ভালো। তবে এখানকার হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক রয়েছে। সবকিছু ভুলে গিয়ে আগের মতো হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে গ্রামে বসবাস করতে চাই আমরা।’
কৌশিকের বাবা রমনী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ছেলে যে অপরাধ করেছিল, গ্রামের সালিশে তার বিচার হয়েছে। তাকে আমি শাসন করেছি। বিষয়টি তখনই মিটমাট হয়ে যায়। তারপারও আমি ছেলের অপরাধের শাস্তির দাবি জানাই। সে যদি অপরাধী হয়, দেশের আইনে তার বিচার হোক।
‘আমার বাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে আমি তাদেরও বিচার চাই। এখনও আমরা বাড়িতে ঘুমাই না। ঘটনার দিন আমারা আশপাশের প্রায় পাঁচটি হিন্দু পরিবারের সবাই বাড়ি-ঘর ছেড়ে ধান ক্ষেতে লুকিয়ে ছিলাম। অনেকে আবার মৎস্য ঘেরের পানিতে গলা পর্যন্ত ডুবে ছিল। কারা হামলা করেছে কিছুই দেখতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে পুলিশ অনেক সহযোগিতা করছে। তারা এখনও আছে বলে কিছুটা নিরাপত্তার মধ্যে আছি। গোপনে অনেক হুমকী-ধামকী পাচ্ছি, সেগুলো বলতে পারবো না।’
রমনী বিশ্বাসের প্রতিবেশী কামরুল চাপরাশি বলেন, ‘ঘটনার দিন নুরজামাল ও উজ্জ্বলের নেতৃত্বে একটা মিছিল এসে হামলা করে। সেই মিছিলে গ্রামের অনেক মানুষ থাকার পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ছিল। দুই জনের উসকানিতে ঘটনা ঘটিয়ে এখন পুরো গ্রামের মানুষ অশান্তির মধ্যে রয়েছে। ওরাতো ঠিকই ঘটনার পর পালিয়ে জঙ্গলে (সুন্দরবনে) চলে গেছে।’
যা বলছে জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ
নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু বলেন, ‘আমরবুনিয়া গ্রামে ১১০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে হিন্দু পরিবার আছে ৫৪টি। দীর্ঘদিন ধরে এখানে হিন্দু ও মুসলমান পরিবারগুলো সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আসছে। কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার দিন শুধু আমরবুনিয়া গ্রামের মানুষই নয়, পাশের গ্রামের অনেক মানুষ তাদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছিলেন।
‘ঘটনার পর রমনী বিশ্বাসের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও গ্রামের মন্দিরটি ইউএনওর নির্দেশে মেরামত করে দেয়া হয়েছে। রমনী বিশ্বাসকে নতুন পাকাঘর ও মন্দিরটি সংস্কার কাজ করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি, শিগগিরই কাজ শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ এ ঘটনার নেতৃত্ব দেয়া উজ্জ্বল ও নুরজামাল দুইজনই দুর্ধর্ষ। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িত। এই দুইজনের উসকানিতেই মূলত ঘটনা ঘটে।
‘গ্রামের মানুষ গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই সব পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করেছি, নিরীহ মানুষকে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে না।’
মোড়েলগঞ্জ থানার ওসি সাইদুর রহমান বলেন, ‘ওই এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সেখানে ২৪ ঘন্টা পুলিশ মোতায়েন রেখেছি। তদন্তে দোষী না হওয়া পর্যন্ত কাউকে আমরা গ্রেপ্তার করছি না। তাই গ্রামের মানুষের ভয়ের কিছু নেই। ঘটনার পর দুটি মামলা করা হয়েছে।’
ওসি জানান, দুই মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া উজ্জ্বল ও নুরজামালকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম বন্দরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাহাজে বহন করা ৫৫ হাজার টন কয়লা খালাস ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এটি এখন দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দর থেকে আমিরাতের আরেক বন্দর মিনা সাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে। সেখানে পণ্য লোড করার পর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা করবে।
মে মাসের মাঝামাঝিতে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি চট্টগ্রামে পৌঁছবে বলে ধারণা করছে মালিক পক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ।
২৩ নাবিকসহ জাহাজটি ২১ এপ্রিল বিকেলে আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করে। জেটিতে নোঙর ফেলে ২২ এপ্রিল। এরপর শুরু হয় কয়লা খালাসের প্রক্রিয়া।
কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আল হামরিয়া বন্দরে পণ্য খালাস করে শনিবার রাতে জাহাজটি মিনা সাকার নামে আরেকটি বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। সেখান থেকে নতুন পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে এমভি আবদুল্লাহ। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি চট্টগ্রামে নোঙর করবে বলে আমরা আশা করছি।’
প্রসঙ্গত, ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে। পরে মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ১৩ এপ্রিল রাতে ছাড়া পায়। অর্থাৎ জিম্মি করার ৩২ দিন পর জাহাজটি মুক্তি পায়।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকলে হাত, দাঁত ও চাপার হাড্ডি ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপের হুমকিদাতা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে (আনারস) শো-কজ করেছেন জেলা রিটার্ননিং কর্মকর্তা।
শনিবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আটককৃতরা হলেন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সুজাত আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়।
লিখিত বক্তব্যে শানিয়াজ্জামান তালুকদার জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে তার দুই কর্মী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উস্কানিমূলক ও হুমকিস্বরূপ। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে হুমকিদাতা দু’জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন সরিষাবাড়ী থানায় মামলা করেন।
মামলা হওয়ার পর শনিবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশ সাইদুল হাসান সাইদ ও খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়কে গ্রেপ্তার করে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী পথসভায় অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের জবান আমরা বন্ধ করে দেব। আমরা আগামী ৮ মে'র নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা অন্য কোনো মার্কার কোনো এজেন্ট দিতে দেবো না। রফিক সাহেবকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আজকেই ঘোষণা দিলাম।’
প্রতিপক্ষের লোকদের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাবধান হয়ে যান, আমাদের মাঝে অসন্তোষ ও হানাহানির চেষ্টা করবেন না। আপনাদের দাঁত ভেঙে দেয়া হবে। যাদের দাঁত নেই, তাদের চাপার হাড্ডি ভেঙে দেয়া হবে।’
এরপর পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় একই সভায় বলেন, ‘অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট কোনো কেন্দ্রে দিতে দেব না। এজেন্ট দিলে তার হাত বাড়ি দিয়ে ভেঙে আমরা যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করবো।’
এ সময় সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে রফিকুল ইসলাম (আনারস) ও তালেব উদ্দিন (দোয়াত-কলম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য