× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Amodini sails in hijab debate in the plan of Dharani Kant?
google_news print-icon

ধরণী কান্তের ছকে ‘হিজাব বিতর্কে’ আমোদিনী পাল?

আমোদিনী পাল
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল (বাঁয়ে) ও প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ। ছবি: সংগৃহীত
আমোদিনী পালকে ‘ফাঁসানোর’ কারণ কী হতে পারে সে বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনীকে ফাঁসাতেই পরিকল্পনা করে হিজাবের ইস্যু তৈরি করা হয়। এই পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দেন বর্তমান প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ। তাকে সহায়তা করেন স্কুলশিক্ষক রবিউল ইসলাম ও অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।   

নওগাঁর মহাদেবপুরের দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণের বিরুদ্ধে লাগামহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই বলছেন, এই দুর্নীতির জবাবদিহি এড়াতেই সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালকে পরিকল্পিত ‘হিজাব বিতর্কে’ জড়ানো হয়েছে।

ধরণী কান্ত বর্মণের প্রধান শিক্ষকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১০ মে। নিয়ম অনুযায়ী, এরপর আমোদিনী পালের এই পদে আসার কথা। অভিযোগ উঠেছে, ধরণী কান্ত বর্মণ তার ঘনিষ্ঠ শিক্ষক রবিউল ইসলামকে পরবর্তী প্রধান শিক্ষক করতে চান। এ জন্য আমোদিনী পালকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।

দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব পরার কারণে কমপক্ষে ২০ ছাত্রীকে মারধরের তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজনের বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, হিজাবের কারণে কাউকে মারা হয়নি। স্কুলের নির্ধারিত পোশাক না পরার কারণে গত বুধবার আমোদিনী পালসহ দুই শিক্ষক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর দাবি, বারবার সতর্ক করার পরও স্কুল ইউনিফর্ম না পরার কারণে তাদের ‘শাসন’ করা হয়েছে।

ধরণী কান্তের ছকে ‘হিজাব বিতর্কে’ আমোদিনী পাল?
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব ইস্যুতে বিক্ষোভ

আরও পড়ুন: নওগাঁর স্কুলে ‘হিজাব বিতর্কের’ পেছনে কী?

আমোদিনী পালকে ‘ফাঁসানোর’ কারণ কী হতে পারে সে বিষয়েও অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনীকে ফাঁসাতেই পরিকল্পনা করে হিজাবের ইস্যু তৈরি করা হয়। এই পরিকল্পনায় বর্তমান প্রধান শিক্ষকসহ তার ঘনিষ্ঠ শিক্ষক রবিউল ইসলাম ও অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের দায়ী করছেন তারা।

বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষক ও কর্মচারী নিউজবাংলাকে জানান, স্কুলে নিয়োগ বিনিময়ে প্রায় কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। নিয়োগের সময় নেয়া অর্থ স্কুলের উন্নয়ন ফান্ডে দেয়ার কথা থাকলেও তা করেননি প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত। তার বিদায়ের সময় এই অর্থের হিসাব যাতে না দিতে হয় সে জন্যই আমোদিনী পালকে সরানোর চেষ্টা চলছে।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় অর্ধশত বছরের পুরোনো। ২০১০ সালের শুরুর দিকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সেখানে যোগ দেন ধরণী কান্ত বর্মণ। এরপর গত ১২ বছরে তার অধীনে ৬ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন।

ধরণী কান্তের ছকে ‘হিজাব বিতর্কে’ আমোদিনী পাল?
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ

এসব নিয়োগে বড় অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে খোদ নিয়োগপ্রাপ্তরাই নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।

কয়েকজন শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আগামী ১০ মে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হবেন আমোদিনী পাল। তিনি প্রধান শিক্ষক হয়ে যাতে ধরণী কান্ত বর্মণের আর্থিক লেনদেনের হিসাব চাইতে না পারেন সে জন্য সহকারী আরেক শিক্ষক রবিউল ইসলামকে নিয়ে হিজাব বিতর্ক তৈরি করা হয়।

এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। এরপর নিজের অনুগতদের দিয়ে একটি অ্যাডহক কমিটি করেন প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত। আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে কথিত হিজাব অবমাননার অভিযোগ ওঠে গত বুধবার। এর এক দিন পরেই অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই কমিটির তালিকা জমা দিতে বুধবার রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে গিয়েছিলেন ধরণী কান্ত।

এলাকায় বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল হাসান সুমনকে অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। আর সদস্য হিসেবে আছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা এবং শিক্ষক রবিউল ইসলামের চাচাতো ভাই রমজান আলী।

এই অ্যাডহক কমিটি আমোদিনী পালের পরিবর্তে রবিউল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করতে চায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

ধরণী কান্তের ছকে ‘হিজাব বিতর্কে’ আমোদিনী পাল?
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়

স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন রতন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ২০১১ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছি। সে সময় আমার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো নেয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল এই টাকার একটি অংশ স্কুলের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে, বাকি টাকা স্কুলের ফান্ডে জমা হবে। তবে পরে স্কুলের কোনো উন্নয়নও হয়নি, ফান্ডেও টাকা নেই।’

রতন বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আমিসহ ১০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা হলেন বিদুৎ কুমার, আকরাম হোসেন, সুনীতা রাণী মণ্ডল, আমোদিনী পাল, আশরাফুল ইসলাম। স্কুলের অফিস সহকারী আহসান হাবিব, আয়া আমিনা খাতুন, দপ্তরি জুয়েল হোসেন এবং ঝাড়ুদার আবু মুসাকেও নিয়োগ দেয়া হয়।

‘প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ করে টাকা নেয়া হয়েছে। ৪ কর্মচারীর কাছ থেকেও ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। যার অধিকাংশ ঢুকেছে প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণের পকেটে। এ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। আমোদিনী পাল প্রধান শিক্ষক হলে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে। আর আমরা চলতি মাসেই আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়েছি। তিনি (প্রধান শিক্ষক) কোনো হিসাব দিতে পারেননি।’

তার দাবি, আমোদিনী পালকে সরাতে প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত ও রবিউল ইসলাম হিজাব বিতর্ক ছড়িয়েছেন। এ কাজে সহায়তা করেছে অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি। স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন তরফদারের ডিও লেটার জাল করে অ্যাডহক মানেজিং কমিটি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষক রতন।

ধরণী কান্তের ছকে ‘হিজাব বিতর্কে’ আমোদিনী পাল?
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগের অনুলিপি

সহকারী শিক্ষক সুনীতা রাণী মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বুধবার রাজশাহীতে গিয়ে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে অ্যাডহক কমিটির তালিকা জমা দেবেন- সেটা আমরা আগেই জানতাম।

‘পরের দিন তিনি হুট করেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেন আমোদিনী পাল ম্যামকে। স্থানীয় কিছু মানুষকে তিনিই উত্তেজিত করেছেন। স্কুলের আয়-ব্যয় ও নিয়োগের টাকার কোনো সঠিক হিসাব তিনি এখনও বুঝিয়ে দেননি। আমোদিনী পাল ম্যাম প্রধান শিক্ষক হলে তার (ধরণী কান্ত) নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাবে। তাই তিনি এসব করেছেন।’

সহকারী শিক্ষক আকরাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষা বা যোগ্যতায় টিকে গেলেও অনেক কর্মক্ষেত্রে যারা উপর পদে থাকেন তাদের খুশি করতে হয়। শুধু আমি কেন, অনেকেই হয়তো এমন খুশি করেই চাকরি করে যাচ্ছেন।’

সহকারী শিক্ষক বিদ্যুৎ কুমার ও আশরাফুল ইসলামও স্বীকার করেন তাদের কাছ থেকেও নিয়োগের সময় টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তবে এখন আর বিষয়টি নিয়ে তারা কথা বলতে চান না।

স্কুলের অফিস সহকারী আহসান হাবিব, আয়া আমিনা খাতুন, দপ্তরি জুয়েল হোসেন এবং ঝাড়ুদার আবু মুসার কাছ থেকেও টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্যার, আমরা নিচু পদে কাজ করি। আমরা যদি কিছু বলি তবে পরে বড় ধরনের ঝামেলায় পড়তে পারি।’

যাকে নিয়ে স্কুলের হিজাব বিতর্ক সেই সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের বাড়িতে শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, তার চোখেমুখে আতঙ্ক ও ভয়ের ছাপ।

আমোদিনী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পুলিশ, সংবাদকর্মী, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, শিক্ষা বিভাগের স্যারেরা এসে অনেক প্রশ্ন জানতে চেয়েছেন। আমি সব মিলে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার (ধরণী কান্ত) পছন্দের কোনো এক শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতে আমি কোনোভাবেই প্রধান শিক্ষক না হতে পারি সে জন্যই আমার বিরুদ্ধে হিজাব বিতর্ক ছড়িয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১০ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি (ধরণী বর্মণ)। সে নিয়োগে অনেক টাকা গ্রহণ করেছেন। স্কুলে বিভিন্ন সময় আসা বরাদ্দ, স্কুলের ফান্ডের হিসাব কোনোটাই সঠিকভাবে দিতে পারবেন না। আর কখনও তিনি হিসাবই দেননি।

‘অবসরে যাওয়ার আগে তো সবকিছুর হিসাব দিয়ে যেতে হবে, সেটাই তো নিয়ম। সেগুলোর হিসাব যাতে না দিতে হয়, আর আমি যদি প্রধান শিক্ষক হয়ে যাই তাহলে তো তাদের সব অর্থ লোপাট ধরা পড়ে যাবে। তাই তিনি অতি কাছের কিছু লোককে দিয়ে এমন জঘন্য বিতর্কের সৃষ্টি করলেন।’

আমোদিনী পাল বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনও ধরণী কান্ত বর্মণের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করছে। যারা অন্যায় করে এত টাকা লোপাট করল তাদের বিচার হচ্ছে না। মাঝখান থেকে সবার কাছে আমাকে এত হেয় করা হলো।’

ধরণী কান্তের ছকে ‘হিজাব বিতর্কে’ আমোদিনী পাল?
হিজাব বিতর্কের পর স্কুল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে

অভিযোগ অস্বীকার করছেন সংশ্লিষ্টরা

প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধেও। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

রবিউল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত গুড রিলেশন থাকতেই পারে, তার মানে এই নয় স্কুলের নিয়োগবাণিজ্য বা টাকা লোপাট করেছি। আমার বিরুদ্ধে কাউকে ফাঁসানো বা অর্থ লোপাটের অভিযোগ মিথ্যা।’

বিদ্যালয়ের অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটিতে চাচাতো ভাই রমজান আলীর জায়গা পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন রবিউল।

এ বিষয়ে রমজান আলীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও সফল হয়নি নিউজবাংলা। অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামুদুল হাসান অবশ্য আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নাকচ করেছেন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্যও নাকচ করেছেন তিনি।

মামুদুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নই। এলাকায় সেবামূলক কাজ করি বলেই হয়তো আমাকে সভাপতি করা হয়েছে। এগুলোর মাঝে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।’

অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি করায় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ। স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার জাল করার অভিযোগও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ধরণী কান্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এমপি সাহেবের ডিও লেটার ভায়োলেট করিনি। নিয়ম মেনেই অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষা অফিস ও রাজশাহী শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। তারা সেটা গ্রহণও করেছে।

‘আর রমজান আলী অভিভাবক সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি শিক্ষক রবিউল ইসলামের ভাই হতে পারেন, এতে সমস্যার কী আছে! কমিটির মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়। এরপর অ্যাডহক কমিটি করতে একটু সময় লেগেছে। তবে কাজটি যাতে সঠিকভাবে হয় সে জন্যই সময় লেগেছে।’

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘হিজাব বিতর্কে আমাকে জড়ানো ঠিক নয়, কারণ আমি সেদিন ছিলাম রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে। আমার নামে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টিও সঠিক নয়, আমি কোনো নিয়োগ বাণিজ্য করিনি। কোনো টাকা-পয়সা নিজের পকেটে নেইনি।’

দুদকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অভিযোগ দিয়েছিল সত্য। গত বছরের শেষের দিকে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে তদন্ত করে গেছে, তবে প্রতিবেদন এখনও দেয়নি। দিলে আমি নির্দোষ হব।’

স্কুলের উন্নয়ন না হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ফান্ডে কিছু অর্থ তো আছেই। স্কুলের দেয়াল রং করেছি, কিছু চেয়ারসহ আসবাবপত্র কিনেছে। যেটুকু পেরেছি কাজ করেছি। আগামীতে হয়তো আরও কাজ করতাম।’

ধরণী কান্তের ছকে ‘হিজাব বিতর্কে’ আমোদিনী পাল?
হিজাবের কারণে হেনস্তার অভিযোগ তোলা দুই শিক্ষার্থীর বাড়ি এখন তালাবদ্ধ

দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাডহক কমিটির তালিকা মূলত প্রধান শিক্ষক করে আমাদের কাছে পাঠান। তারপর আমরা সুপারিশ করে বিভাগীয় শিক্ষাবোর্ডে পাঠাই। এখন সেই তালিকায় কারও সুপারিশ জাল হয়েছে কি না বা কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে কি না, সেটি আমাদের জানা নেই। কমিটি হওয়ার পর বা জমা দেয়ার সময়ে স্থানীয় কেউ অভিযোগ করেননি। এখন সার্বিক বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’

সুপারিশ জাল করার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন তরফদারের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে একাধিকবার ফোন করে এবং খুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

স্কুলে হিজাব বিতর্কের তদন্ত নিয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীদের হিজাব পরা নিয়ে মারধরের যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা আমরা পাইনি। একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে বলে আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি। আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। তখন বিস্তারিত বলা যাবে।’

আরও পড়ুন:
নিরাপত্তা চাই: হৃদয় মণ্ডল
বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডল অবশেষে মুক্ত
বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় কারামুক্ত হতে কতক্ষণ
রাষ্ট্রের কাছে হৃদয় মণ্ডলের নিরাপত্তা চাইলেন স্ত্রী
১৯ দিন পর জামিন পেলেন বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডল

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
During the illegal infiltration the Bangladeshi detained with the smugglers on the Garo Hill border

অবৈধ পথে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে পাচারকারীসহ ৭ বাংলাদেশী আটক

অবৈধ পথে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে পাচারকারীসহ ৭ বাংলাদেশী আটক

অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নিরাপত্তাহীনতায় পুনরায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যসহ ৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌণে সাতটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নকশি সীমান্ত পথে নকশি ক্যাম্পের টহলরত বজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

বিষয়টি ২৬ আগষ্ট সকালে বিজিবি পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।

আটককৃতরা হলো মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) ও আসমত আলীর ছেলে রাসেল (১৬)। আটক অনুপ্রবেশকারীরা হলো, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বোমবাঘ গ্রামের শামীম শেখ (২৩), আফসানা খানম (২২), রুমা বেগম (৩২), মিলিনা বিশ্বাস (২৮) ও তিন বছর বয়সী শিশু কাশেম বিশ্বাস।

বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ আগস্ট রাতের আধারে নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে নারী এবং শিশুসহ ৫ বাংলাদেশীকে ভারতে পাঠায় মানব পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে এ পাঁচ বাংলাদেশী। এ কারণে ২৫ আগষ্ট সোমবার সকাল পৌণে সাতটার দিকে ঝিনাইগাতির নকশি সীমান্তের কালিমন্দির এলাকা দিয়ে পুনরায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা টের পেয়ে সবাইকে আটক করে। পরে মানব পাচারে জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অপরাধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সবাইকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ময়মনসিংহ বিজিবি’র ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Police Super Ujjal Kumar Roy inaugurated the Loto Showroom in Jhalakathi

ঝালকাঠিতে লোটো শোরুম উদ্বোধন করলেন পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায়

ঝালকাঠিতে লোটো শোরুম উদ্বোধন করলেন পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায়

ঝালকাঠিতে গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে ব্রান্ডশপ লোটো ও লি কুপার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩২তম ফ্লাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে।

এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্ট লিঃ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাজী জাভেদ ইসলাম সহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আউটলেটটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।

পৌর শহরের সাধনার মোড়ে মঙ্গলবার ২৬ আগষ্ট সকাল ১০টায় লোটো ও লি কুপারের ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন আনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ঝালকাঠিতে কোম্পানীর এ যাত্রার প্রথম দিনে স্থানীয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীরা তাদের পছন্দের পন্য কালেকশন বেছে নিতে ভীর জমায়।

কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রথম তিনদিনের প্রতিদিন প্রথম ৩০ জন পাবেন ৫০% ছাড়, ২য় ৩০ জন পাবেন ৪০% ছাড়, ৩য় ৩০ জন পাবেন ৩০% ছাড়, ৪র্থ ৩০ জন পাবেন ২০% ছাড় এবং তৎপরবর্তী সকল কাস্টমার পাবেন ১০% ছাড়। এই বিশেষ ছাড় ২৬শে আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে

মন্তব্য

সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ, আসামীর যাবজ্জীবন

সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ, আসামীর যাবজ্জীবন

নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র‌্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।

মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।

মন্তব্য

হিল্লা বিয়ে না করার জেরে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' দম্পতি

হিল্লা বিয়ে না করার জেরে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' দম্পতি

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।

এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।

গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।

বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।

আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।

গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।

আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
In July 2021 the growth rate of revenue collection is about 20 percent 

জুলাই-২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২৫ শতাংশ 

জুলাই-২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২৫ শতাংশ 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।

জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।

আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।

২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।

রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The main accused arrested in the murder of UP member

ইউপি সদস্যকে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেফতার

ইউপি সদস্যকে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেফতার

কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।

শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র‍্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন

র‍্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।

মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।

এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।

পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মন্তব্য

খুলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই বাঁধের সব জলকপাট

খুলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই বাঁধের সব জলকপাট

কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।

কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।

ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”

স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য

p
উপরে