নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার একটি স্কুলে হিজাব পরার কারণে কমপক্ষে ২০ ছাত্রীকে মারধরের তথ্য প্রকাশ করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজনের বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
বিষয়টির সত্যতা জানতে শুক্রবার দিনভর দাউল বারবাকপুর গ্রামে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা। স্কুলটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এলাকাবাসী এবং প্রশাসনের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। ঘটনার সময় উপস্থিত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে জানায়, হিজাবের কারণে কাউকে সেদিন মারা হয়নি। স্কুলের নির্ধারিত পোশাক না পরার কারণে দুই শিক্ষক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল।
বুধবার অ্যাসেমব্লির সময় ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে।
শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের ঘটনাটি ঘটে বুধবার সকালে স্কুলের অ্যাসেমব্লির সময়। সে সময় ছেলে ও মেয়েদের পিটির লাইনের সামনে ছিলেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বদিউল আলম এবং শিক্ষক সুনিতা রাণী মণ্ডল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্কুলড্রেস না পরার কারণে সেদিন মেয়েদের বেত্রাঘাত করেন আমোদিনী পাল, আর ছেলেদের একই শাস্তি দেন বদিউল আলম। তবে কেবল আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভাইরাল হয়।
ঘটনাটি প্রচার পায় ‘হিজাব পরা’র শাস্তি হিসেবে। এই অভিযোগ তোলা দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে তাদের কাউকেই শুক্রবার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরাও সেখানে নেই। দুই শিক্ষার্থীর বাড়িই তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে।
‘হিজাব পরার কারণে শাস্তি’র অভিযোগটি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় বৃহস্পতিবার। একই দিন ফেসবুকে ভাইরাল হয় দুই শিক্ষার্থীর বক্তব্য এবং স্কুলে হামলার ভিডিও।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে সুমাইয়া বলে, ‘আমরা স্কুলড্রেসের সঙ্গে হিজাব পরে ছিলাম। ম্যাডাম এসে বলল, তোমরা হিজাব পরে আসো কেন? আমাদের মাস্ক ধরে টানাটানি করেছিল। মাস্ক খুলে দিল, হিজাব ধরে টানাটানি করেছিল। যারা যারা হিজাব পরেছিল সবাইকে মেরেছে। বলছে যে তোমরা হাজিগিরি করতে আসছ, ঘরের ভেতর গিয়ে বোরখা পরে থাকো।
‘স্কুলে পর্দা করা যাবে না, মাথায় কাপড় দেয়া যাবে না। শুধু স্কুলড্রেস পরে আসবে। হিজাব পরবে না, এই বলে আমাদের হিজাব ধরে টানাহেঁচড়া করেছে। মোটা কঞ্চি দিয়ে অনেক মেরেছে। যারা হিন্দু ছিল তাদের এক সাইডে নিয়ে আমাদের বলেছে, তোমরা ওদের মতো করে আসবে।’
প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন। তাদের অভিভাবকদেরও দাবি, হিজাব পরার কারণে শিক্ষক আমোদিনী পাল মেয়েদের মেরেছেন।
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার ওই স্কুলে হামলা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষক আমোদিনী পালকে স্কুলে না পেয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিউজবাংলার প্রতিবেদক শুক্রবার দাউল বারবাকপুর গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসী ও স্কুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে পাশের আরেকটি স্কুল দাউল বারবাকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন মোস্তাকিন রহমান ছিলেন সেখানে।
এই দুই স্কুলের পাশের মাঠে বুধবার অ্যাসেমব্লির সময় ঘটনাটি ঘটে। মোস্তাকিনের দাবি, তিনি সে সময় মাঠের একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
তিনি জানান, প্রতিদিন এই অ্যাসেমব্লি হয়। পিটির সময় একদিকে মেয়েরা, আরেক দিকে ছেলেরা দাঁড়ায়।
মোস্তাকিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মাঠ থেকে ৩০ হাতের মতো দূরে ছিলাম। সব স্যার-ম্যাডাম মাঠে ছিলেন। হেডমাস্টার স্যার ছিলেন না। ওই দিন বদিউল স্যার পিটি করান।’
কী হয়েছিল জানতে চাইলে মোস্তাকিন বলেন, ‘রোজার দিন তো, সবাই একটু হিজাব পরে। কেউ বোরকা পরছে। একটু পরে শুনি আমোদিনী ম্যাডাম কয়েকটা মেয়েকে মারছে, তাদের বলতেছে হিজাব কেন পরে আসছ?’
মাঠ থেকে ৩০ হাত দূরে দাঁড়িয়েও কীভাবে কথাগুলো শুনলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম তো জোরে জোরে বলেছেন। তাই স্পষ্ট শুনছি।’
মোস্তাকিনের কাছ থেকেই স্কুলের দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর ঠিকানা পায় নিউজবাংলা। গ্রামের ভেতরেই তাদের বাড়ি গিয়ে কথা বলেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এই শিক্ষার্থীরা জানায়, সেদিন হিজাবের কারণে বেত্রাঘাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। শাস্তি দেয়া হয়েছিল স্কুলড্রেস ঠিকঠাক না পরার কারণে।
আল মোক্তাদির নামে এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমি শুরু থেকে ছিলাম, জাতীয় সংগীতের সময় স্কুলের ড্রেস না পরা কিছু ছেলেমেয়ে ছিল, তাদের মারছিল। বদিউল স্যার আগে ছেলেদের মারে। এক সপ্তাহ আগে বদিউল স্যার স্কুলড্রেস পরে আসতে হবে বলছিল। মেয়েদেরকেও তা বলা হইছে।
‘কিছু ছেলেমেয়ে ওইভাবে আসেনি বলে শাসন করছে। সারিবদ্ধ করে দাঁড় করায় তাদের মারছে। বদিউল স্যার ছাত্রদের মারছে, তারপর ম্যাডাম (আমোদিনী পাল) মেয়েদের মারছে। তবে জোরে মারে নাই, একটু মারছে। হালকা, খালি শাসন করার জন্য আরকি।’
হিজাবের কারণে কাউকে মারা হয়নি জানিয়ে মোক্তাদির বলে, ‘স্কুলড্রেস তারা ঠিকমতো পরে আসে নাই। আর যারা মার খাইছে তাদের সবার মাথায় তো হিজাব ছিল না। হিজাবের জন্য তো মারে নাই। হিজাব নাই এমন মেয়েদেরও তো মারছে। ছেলেদেরও মারা হইছে।’
ওই দিন স্কুলড্রেসে না যাওয়ায় আমোদিনী পালের বেত্রাঘাত খেয়েছে প্রমি রাণী পাল নামে এক শিক্ষার্থী।
প্রমি নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমরা কয়েকজন আনড্রেস (স্কুল ড্রেস না পরা) ছিলাম। তাই আমোদিনি ম্যাডাম মেরেছিল। কঞ্চি দিয়ে একটু মারছে। আমি সেদিন এমনিই স্কুলড্রেস পরে যাইনি।’
হিজাবের কারণে শাস্তির অভিযোগে বিস্মিত প্রমি নিউজবাংলাকে বলে, ‘এটা কীভাবে আসল আমি তো জানি না। আমি তো হিন্দু, হিজাব করি না, আমিও মার খাইছি। অন্য মেয়েরা যারা মার খেয়েছে তাদের কেউ কেউ মাথায় ওড়না দিয়ে ছিল, ওগুলাও তো হিজাব না। তারাও আনড্রেসে ছিল। ছেলেদের মেরেছিল বদিউল স্যার।’
ভাইরাল ভিডিওর সুমাইয়াকে চেনে জানিয়ে প্রমি বলে, ‘সে তো ওই দিন আনড্রেসে ছিল। হিজাব তো পরা ছিল না। ওড়না দেয় মাথায়, তাও মাঝে মাঝে। ম্যাডাম তো ওগুলো নিয়ে বলে নাই, আমিও তো মাথায় ওড়না দিয়ে ছিলাম। হিজাব নিয়ে কোনো কথা হয় নাই।’
সেদিন বেত্রাঘাতের মুখে পড়া আরেক শিক্ষার্থী সজিব হোসেন নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমাদের তো অনেক দিন আগে থেকেই স্কুলড্রেস পরে আসতে বলছিল। আমিও সেদিন আনড্রেসে গেছি, অন্য অনেকেই তো আনড্রেসে যায়, তাই আমিও গেছি। পরে বদিউল স্যার প্রথমে আমাদের মারে। এরপর মেয়েদেরকে ম্যাডাম মারছে। জোরে না আস্তেই মারছে।’
দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী দীপা ও কাকলী রানী পাল নিউজবাংলাকে জানায়, ওই দিন ইউনিফর্ম ঠিকমতো পরে না আসায় আমোদিনী পাল ও বদিউল আলম তাদের অনেকে শাসন করেন। কিছু মারধরও করেন। তবে হিজাব নিয়ে টানাহেঁচড়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।
মূল ইস্যু ‘প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বিরোধ’!
ওই বিদ্যালয়ে বুধবার দুই শিক্ষক বেত্রাঘাত করলেও শুধু আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন ভাইরাল হলো, সে ব্যাপারেও অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এলাকার লোকজন এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই বর্তমান প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণের সঙ্গে আমোদিনী পালের বিরোধের বিষয়টি সামনে এনেছেন। ঘটনাচক্রে গত বুধবার স্কুলে ছিলেন না ধরণী কান্ত। তার দাবি, সেদিন স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন।
প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল স্বীকার করেছেন। তার অভিযোগ, বর্তমান প্রধান শিক্ষক নিয়োগসহ অনেকগুলো খাতে দুর্নীতি করেছেন। আগামী ১০ মে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এরপর নিয়ম অনুযায়ী আমোদিনী পালের ওই পদে যাওয়ার কথা। তিনি প্রধান শিক্ষক হয়ে ধরণী কান্ত বর্মণের দুর্নীতির হিসাব যাতে না চাইতে পারেন সে কারণেই এমন ষড়যন্ত্র হয়ে থাকতে পারে।
বুধবারের ঘটনা সম্পর্কে আমোদিনী পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন কেবল স্কুলড্রেস ঠিকমতো পরে না আসার কারণে কিছু ছেলেমেয়েকে শাসন করা হয়েছিল। হিজাব নিয়ে কিছুই হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘পোশাকের ব্যাপারে বারবার বলার পরও আনড্রেসে আসে ছেলেমেয়েরা। আমাকে ওই বদিউল স্যারই বলছে যে, আপনি একটু মেয়েদের বলেন...
‘ওরা অন্য কালারের জামা পরা ছিল, ফ্যাশন পোশাক যাকে বলে। তাদের আমি হালকা শাসন করলাম, নামমাত্র শাসন আরকি। ওটাই হিজাব হিসেবে ছড়ায় গেছে। ওরা বলছে আমি নাকি হিজাব নিয়ে বলছি। এটা আমাকে ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত। পত্রপত্রিকায় আমার নাম আসছে, কিন্তু যেই স্যার শারীরিক শিক্ষা টিচার, তার নামই আসেনি। শাসন তো আমরা দুজন করছি, কিন্তু আমার নামটা আসল অন্যভাবে।’
মেয়েরা কী ধরনের পোশাকে ছিল- এমন প্রশ্নের উত্তরে আমোদিনী বলেন, ‘কালার পোশাকে ছিল, ওইগুলার তো নাম মনে নাই। স্কুলের ড্রেস না আরকি, কালার ড্রেস পরা ছিল। স্কুলের পোশাক পরাও অনেকে ছিল, শুধু কয়েকজন ছিল না।
‘আমার চাকরির বয়স ২২ বছর, আমি তো হিজাব নতুন দেখছি না। যারা হিজাব পরবে, পরবে। খালি স্কুলের ড্রেস হলেই হয়ে গেল। কখনও কোনো ক্লাসে হিজাব নিয়ে আমি বলি নাই। মাঠে সবার সামনেই তো সমাবেশ হয়েছে। নামেমাত্র যে শাসন, তাও প্রকাশ্যে সবার সামনেই হয়েছে। আমার শিক্ষকরা সবাই ছিল সেখানে। বদিউল স্যার কিছু ছাত্রকেও শাসন করেছিলেন। তিনিই বলছেন, আপনি মেয়েদের কিছু বলেন।’
চক্রান্তের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমার প্রধান শিক্ষক (ধরণী কান্ত বর্মণ) সামনের মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত তার ডেট, তারপরে চলে যাবে। আইন অনুয়ায়ী ওই পদে আমি যাব। ওই পদ সে আমাকে দিতে চায় না। যার জন্য এই কৌশল করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
'আমি ওই পদে যদি যাই, ওই হেড মাস্টারের অনেক কুর্কীতি আছে, দুদক পর্যন্ত চলে গিয়েছিল, এই কিছুদিন আগেই। ১০টা নিয়োগ দিয়েছিল কোনো হিসাব দিতে পারেনি। এখন আমি যদি ওই পদে যাই, আমাকে তার হিসাব দিয়ে যেতে হবে তার। তাই আমাকে পদটা দেবে না। তার পছন্দমতো একজনকে পদটা দিয়ে পার পাবে। যার জন্য আমার এই অবস্থা করছে।’
বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বদিউল আলমের সঙ্গেও কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বলা হয় ইউনিফর্মের কথা। ম্যাডাম দুয়েকজনকে একটু মেরেছে। ম্যাডাম কিন্তু এমনিতে কখনও মারে না। ছাত্রদেরও কেউ কেউ অন্য ড্রেস, গেঞ্জি এসব পরে আসছে। আমরা তো সব সময় বলি স্কুলড্রেস পরে আসতে।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ বৃহস্পতিবার শুনি এসব ঘটনা। ফেসবুকে কী জানি ভাইরাল হয়েছে। আসলে এ রকম কিছু তো না। হিজাব নিয়ে কিছু হয়েছে বলে তো শুনিনি। ভুল বোঝাবুঝি কিছু হয়েছে হয়তো।’
এদিকে আমোদিনী পালের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনার (আমোদিনী পাল) সঙ্গে তো আমার বিরোধ নাই, কারণ তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক, আমার পর তো উনিই হেড মাস্টার হবে। এটা তো আইন হিসেবেই পাবে। এটা নিয়ে তো আমার কিছু নাই।’
বুধবার বিদ্যালয়ে ছিলেন না জানিয়ে ধরণী কান্ত বলেন, ‘আমি ওই দিন ছিলাম না, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ছিলাম। পরদিন আমি স্কুলে গিয়া ঘটনাটা জানতে পারি।
‘অনেক অভিভাবক এসেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল মেয়েদের হিজাব পরার জন্য মারছে। এই রকম একটা বক্তব্য আরকি। সেদিন আমোদিনী পাল স্কুলে আসেননি। আগে থেকে ছুটিও নেননি। শুধু ফোন কল করে জানিয়েছেন অসুস্থ, তাই আসতে পারবেন না।’
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক স্যার আমাকে কল দিলেন, আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বললেন। তবে আমি যেতে পারিনি কারণ বিভিন্ন সাংবাদিক আর পুলিশ ছিলেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করে তারপর আমি স্যারের কাছে যাই। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন তাকে (আমোদিনী পাল) শোকজ করে চিঠিটা স্যারকে দেখাতে। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য আমি তাকে শোকজ করি। জবাব দেয়ার সময় সাত দিন।’
তিনি বলেন, ‘হিজাবের বিষয়টা আমি শিওর না, কারণ আমি ছিলাম না। মেয়েরা যখন পুলিশকে জানায় তখন আমি ছিলাম। মেয়েরা ওই রকম কথাই বলছে।
‘হিজাব হোক, স্কুলড্রেস হোক; যে কারণেই হোক, টিচার তো মারধর করতে পারে না।’
যা বলছে প্রশাসন
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির পর থেকেই পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুল ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আর স্কুলে যে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন, শিক্ষা বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন যৌথভাবে তদন্ত করছি।’
মহাদেবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্কুলে ইউনিফর্ম না পরার কারণে বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে। তবে হিজাব পরার কারণে কাউকে শাসন করা হয়নি। তবুও আমরা ঘটনাটি আরও গভীরভাবে তদন্ত করছি।’
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেত দিয়ে মারা হয়েছে, এটা সত্য। তবে সেটা হিজাবের কারণে নয়, স্কুলড্রেস না পরে আসার কারণে মারা হয়েছে।
‘স্কুলে মুসলিম ছাত্র ও সনাতন ধর্মের ছাত্রীদেরও শাসন করা হয়েছে। ওই ঘটনার সময় বদিউল আলম নামে একজন মুসলমান শিক্ষকও ছিলেন।’
গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন হিন্দু শিক্ষকের পক্ষে এমন সাহস কতটুকু হবে একটু ভাবা দরকার। ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। পরে আরও বিস্তারিত জানাতে পারব।’
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী এলাকায় গত '২৪ এর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১ টায় ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি।
বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী এলাকায় বন্যা পরবর্তী উন্নয়নমূলক সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ ও পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলার হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় এর নবনির্মিত শাহীন ভবন উদ্বোধন এবং দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী জেলার বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল সেবা পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী জেলায় ২০২৪ সালের আকস্মিক বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর ভুমিকার ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক, ত্রাণ ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিমান বাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যার সাথে তৎকালীন বৈরী আবহাওয়া ও বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনায় এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভয়াবহ এ বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিমান বাহিনী বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, দূর্গাপুর, ছাগলনাইয়্যা-এ অবস্থিত হাবিব উল্যাহ্ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করতঃ শাহীন ভবন নামে একটি চারতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা ভবন আসবাবপত্রসহ নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক, বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ, ফেনী জেলা প্রশাসক, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য