নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার একটি স্কুলে হিজাব পরার কারণে কমপক্ষে ২০ ছাত্রীকে মারধরের তথ্য প্রকাশ করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজনের বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
বিষয়টির সত্যতা জানতে শুক্রবার দিনভর দাউল বারবাকপুর গ্রামে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা। স্কুলটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এলাকাবাসী এবং প্রশাসনের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। ঘটনার সময় উপস্থিত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে জানায়, হিজাবের কারণে কাউকে সেদিন মারা হয়নি। স্কুলের নির্ধারিত পোশাক না পরার কারণে দুই শিক্ষক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল।
বুধবার অ্যাসেমব্লির সময় ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে।
শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের ঘটনাটি ঘটে বুধবার সকালে স্কুলের অ্যাসেমব্লির সময়। সে সময় ছেলে ও মেয়েদের পিটির লাইনের সামনে ছিলেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বদিউল আলম এবং শিক্ষক সুনিতা রাণী মণ্ডল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্কুলড্রেস না পরার কারণে সেদিন মেয়েদের বেত্রাঘাত করেন আমোদিনী পাল, আর ছেলেদের একই শাস্তি দেন বদিউল আলম। তবে কেবল আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভাইরাল হয়।
ঘটনাটি প্রচার পায় ‘হিজাব পরা’র শাস্তি হিসেবে। এই অভিযোগ তোলা দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে তাদের কাউকেই শুক্রবার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরাও সেখানে নেই। দুই শিক্ষার্থীর বাড়িই তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে।
‘হিজাব পরার কারণে শাস্তি’র অভিযোগটি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় বৃহস্পতিবার। একই দিন ফেসবুকে ভাইরাল হয় দুই শিক্ষার্থীর বক্তব্য এবং স্কুলে হামলার ভিডিও।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে সুমাইয়া বলে, ‘আমরা স্কুলড্রেসের সঙ্গে হিজাব পরে ছিলাম। ম্যাডাম এসে বলল, তোমরা হিজাব পরে আসো কেন? আমাদের মাস্ক ধরে টানাটানি করেছিল। মাস্ক খুলে দিল, হিজাব ধরে টানাটানি করেছিল। যারা যারা হিজাব পরেছিল সবাইকে মেরেছে। বলছে যে তোমরা হাজিগিরি করতে আসছ, ঘরের ভেতর গিয়ে বোরখা পরে থাকো।
‘স্কুলে পর্দা করা যাবে না, মাথায় কাপড় দেয়া যাবে না। শুধু স্কুলড্রেস পরে আসবে। হিজাব পরবে না, এই বলে আমাদের হিজাব ধরে টানাহেঁচড়া করেছে। মোটা কঞ্চি দিয়ে অনেক মেরেছে। যারা হিন্দু ছিল তাদের এক সাইডে নিয়ে আমাদের বলেছে, তোমরা ওদের মতো করে আসবে।’
প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন। তাদের অভিভাবকদেরও দাবি, হিজাব পরার কারণে শিক্ষক আমোদিনী পাল মেয়েদের মেরেছেন।
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার ওই স্কুলে হামলা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষক আমোদিনী পালকে স্কুলে না পেয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিউজবাংলার প্রতিবেদক শুক্রবার দাউল বারবাকপুর গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসী ও স্কুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে পাশের আরেকটি স্কুল দাউল বারবাকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন মোস্তাকিন রহমান ছিলেন সেখানে।
এই দুই স্কুলের পাশের মাঠে বুধবার অ্যাসেমব্লির সময় ঘটনাটি ঘটে। মোস্তাকিনের দাবি, তিনি সে সময় মাঠের একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
তিনি জানান, প্রতিদিন এই অ্যাসেমব্লি হয়। পিটির সময় একদিকে মেয়েরা, আরেক দিকে ছেলেরা দাঁড়ায়।
মোস্তাকিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মাঠ থেকে ৩০ হাতের মতো দূরে ছিলাম। সব স্যার-ম্যাডাম মাঠে ছিলেন। হেডমাস্টার স্যার ছিলেন না। ওই দিন বদিউল স্যার পিটি করান।’
কী হয়েছিল জানতে চাইলে মোস্তাকিন বলেন, ‘রোজার দিন তো, সবাই একটু হিজাব পরে। কেউ বোরকা পরছে। একটু পরে শুনি আমোদিনী ম্যাডাম কয়েকটা মেয়েকে মারছে, তাদের বলতেছে হিজাব কেন পরে আসছ?’
মাঠ থেকে ৩০ হাত দূরে দাঁড়িয়েও কীভাবে কথাগুলো শুনলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম তো জোরে জোরে বলেছেন। তাই স্পষ্ট শুনছি।’
মোস্তাকিনের কাছ থেকেই স্কুলের দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর ঠিকানা পায় নিউজবাংলা। গ্রামের ভেতরেই তাদের বাড়ি গিয়ে কথা বলেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এই শিক্ষার্থীরা জানায়, সেদিন হিজাবের কারণে বেত্রাঘাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। শাস্তি দেয়া হয়েছিল স্কুলড্রেস ঠিকঠাক না পরার কারণে।
আল মোক্তাদির নামে এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমি শুরু থেকে ছিলাম, জাতীয় সংগীতের সময় স্কুলের ড্রেস না পরা কিছু ছেলেমেয়ে ছিল, তাদের মারছিল। বদিউল স্যার আগে ছেলেদের মারে। এক সপ্তাহ আগে বদিউল স্যার স্কুলড্রেস পরে আসতে হবে বলছিল। মেয়েদেরকেও তা বলা হইছে।
‘কিছু ছেলেমেয়ে ওইভাবে আসেনি বলে শাসন করছে। সারিবদ্ধ করে দাঁড় করায় তাদের মারছে। বদিউল স্যার ছাত্রদের মারছে, তারপর ম্যাডাম (আমোদিনী পাল) মেয়েদের মারছে। তবে জোরে মারে নাই, একটু মারছে। হালকা, খালি শাসন করার জন্য আরকি।’
হিজাবের কারণে কাউকে মারা হয়নি জানিয়ে মোক্তাদির বলে, ‘স্কুলড্রেস তারা ঠিকমতো পরে আসে নাই। আর যারা মার খাইছে তাদের সবার মাথায় তো হিজাব ছিল না। হিজাবের জন্য তো মারে নাই। হিজাব নাই এমন মেয়েদেরও তো মারছে। ছেলেদেরও মারা হইছে।’
ওই দিন স্কুলড্রেসে না যাওয়ায় আমোদিনী পালের বেত্রাঘাত খেয়েছে প্রমি রাণী পাল নামে এক শিক্ষার্থী।
প্রমি নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমরা কয়েকজন আনড্রেস (স্কুল ড্রেস না পরা) ছিলাম। তাই আমোদিনি ম্যাডাম মেরেছিল। কঞ্চি দিয়ে একটু মারছে। আমি সেদিন এমনিই স্কুলড্রেস পরে যাইনি।’
হিজাবের কারণে শাস্তির অভিযোগে বিস্মিত প্রমি নিউজবাংলাকে বলে, ‘এটা কীভাবে আসল আমি তো জানি না। আমি তো হিন্দু, হিজাব করি না, আমিও মার খাইছি। অন্য মেয়েরা যারা মার খেয়েছে তাদের কেউ কেউ মাথায় ওড়না দিয়ে ছিল, ওগুলাও তো হিজাব না। তারাও আনড্রেসে ছিল। ছেলেদের মেরেছিল বদিউল স্যার।’
ভাইরাল ভিডিওর সুমাইয়াকে চেনে জানিয়ে প্রমি বলে, ‘সে তো ওই দিন আনড্রেসে ছিল। হিজাব তো পরা ছিল না। ওড়না দেয় মাথায়, তাও মাঝে মাঝে। ম্যাডাম তো ওগুলো নিয়ে বলে নাই, আমিও তো মাথায় ওড়না দিয়ে ছিলাম। হিজাব নিয়ে কোনো কথা হয় নাই।’
সেদিন বেত্রাঘাতের মুখে পড়া আরেক শিক্ষার্থী সজিব হোসেন নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমাদের তো অনেক দিন আগে থেকেই স্কুলড্রেস পরে আসতে বলছিল। আমিও সেদিন আনড্রেসে গেছি, অন্য অনেকেই তো আনড্রেসে যায়, তাই আমিও গেছি। পরে বদিউল স্যার প্রথমে আমাদের মারে। এরপর মেয়েদেরকে ম্যাডাম মারছে। জোরে না আস্তেই মারছে।’
দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী দীপা ও কাকলী রানী পাল নিউজবাংলাকে জানায়, ওই দিন ইউনিফর্ম ঠিকমতো পরে না আসায় আমোদিনী পাল ও বদিউল আলম তাদের অনেকে শাসন করেন। কিছু মারধরও করেন। তবে হিজাব নিয়ে টানাহেঁচড়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।
মূল ইস্যু ‘প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বিরোধ’!
ওই বিদ্যালয়ে বুধবার দুই শিক্ষক বেত্রাঘাত করলেও শুধু আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন ভাইরাল হলো, সে ব্যাপারেও অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এলাকার লোকজন এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই বর্তমান প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণের সঙ্গে আমোদিনী পালের বিরোধের বিষয়টি সামনে এনেছেন। ঘটনাচক্রে গত বুধবার স্কুলে ছিলেন না ধরণী কান্ত। তার দাবি, সেদিন স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন।
প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল স্বীকার করেছেন। তার অভিযোগ, বর্তমান প্রধান শিক্ষক নিয়োগসহ অনেকগুলো খাতে দুর্নীতি করেছেন। আগামী ১০ মে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এরপর নিয়ম অনুযায়ী আমোদিনী পালের ওই পদে যাওয়ার কথা। তিনি প্রধান শিক্ষক হয়ে ধরণী কান্ত বর্মণের দুর্নীতির হিসাব যাতে না চাইতে পারেন সে কারণেই এমন ষড়যন্ত্র হয়ে থাকতে পারে।
বুধবারের ঘটনা সম্পর্কে আমোদিনী পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন কেবল স্কুলড্রেস ঠিকমতো পরে না আসার কারণে কিছু ছেলেমেয়েকে শাসন করা হয়েছিল। হিজাব নিয়ে কিছুই হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘পোশাকের ব্যাপারে বারবার বলার পরও আনড্রেসে আসে ছেলেমেয়েরা। আমাকে ওই বদিউল স্যারই বলছে যে, আপনি একটু মেয়েদের বলেন...
‘ওরা অন্য কালারের জামা পরা ছিল, ফ্যাশন পোশাক যাকে বলে। তাদের আমি হালকা শাসন করলাম, নামমাত্র শাসন আরকি। ওটাই হিজাব হিসেবে ছড়ায় গেছে। ওরা বলছে আমি নাকি হিজাব নিয়ে বলছি। এটা আমাকে ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত। পত্রপত্রিকায় আমার নাম আসছে, কিন্তু যেই স্যার শারীরিক শিক্ষা টিচার, তার নামই আসেনি। শাসন তো আমরা দুজন করছি, কিন্তু আমার নামটা আসল অন্যভাবে।’
মেয়েরা কী ধরনের পোশাকে ছিল- এমন প্রশ্নের উত্তরে আমোদিনী বলেন, ‘কালার পোশাকে ছিল, ওইগুলার তো নাম মনে নাই। স্কুলের ড্রেস না আরকি, কালার ড্রেস পরা ছিল। স্কুলের পোশাক পরাও অনেকে ছিল, শুধু কয়েকজন ছিল না।
‘আমার চাকরির বয়স ২২ বছর, আমি তো হিজাব নতুন দেখছি না। যারা হিজাব পরবে, পরবে। খালি স্কুলের ড্রেস হলেই হয়ে গেল। কখনও কোনো ক্লাসে হিজাব নিয়ে আমি বলি নাই। মাঠে সবার সামনেই তো সমাবেশ হয়েছে। নামেমাত্র যে শাসন, তাও প্রকাশ্যে সবার সামনেই হয়েছে। আমার শিক্ষকরা সবাই ছিল সেখানে। বদিউল স্যার কিছু ছাত্রকেও শাসন করেছিলেন। তিনিই বলছেন, আপনি মেয়েদের কিছু বলেন।’
চক্রান্তের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমার প্রধান শিক্ষক (ধরণী কান্ত বর্মণ) সামনের মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত তার ডেট, তারপরে চলে যাবে। আইন অনুয়ায়ী ওই পদে আমি যাব। ওই পদ সে আমাকে দিতে চায় না। যার জন্য এই কৌশল করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
'আমি ওই পদে যদি যাই, ওই হেড মাস্টারের অনেক কুর্কীতি আছে, দুদক পর্যন্ত চলে গিয়েছিল, এই কিছুদিন আগেই। ১০টা নিয়োগ দিয়েছিল কোনো হিসাব দিতে পারেনি। এখন আমি যদি ওই পদে যাই, আমাকে তার হিসাব দিয়ে যেতে হবে তার। তাই আমাকে পদটা দেবে না। তার পছন্দমতো একজনকে পদটা দিয়ে পার পাবে। যার জন্য আমার এই অবস্থা করছে।’
বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বদিউল আলমের সঙ্গেও কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বলা হয় ইউনিফর্মের কথা। ম্যাডাম দুয়েকজনকে একটু মেরেছে। ম্যাডাম কিন্তু এমনিতে কখনও মারে না। ছাত্রদেরও কেউ কেউ অন্য ড্রেস, গেঞ্জি এসব পরে আসছে। আমরা তো সব সময় বলি স্কুলড্রেস পরে আসতে।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ বৃহস্পতিবার শুনি এসব ঘটনা। ফেসবুকে কী জানি ভাইরাল হয়েছে। আসলে এ রকম কিছু তো না। হিজাব নিয়ে কিছু হয়েছে বলে তো শুনিনি। ভুল বোঝাবুঝি কিছু হয়েছে হয়তো।’
এদিকে আমোদিনী পালের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনার (আমোদিনী পাল) সঙ্গে তো আমার বিরোধ নাই, কারণ তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক, আমার পর তো উনিই হেড মাস্টার হবে। এটা তো আইন হিসেবেই পাবে। এটা নিয়ে তো আমার কিছু নাই।’
বুধবার বিদ্যালয়ে ছিলেন না জানিয়ে ধরণী কান্ত বলেন, ‘আমি ওই দিন ছিলাম না, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ছিলাম। পরদিন আমি স্কুলে গিয়া ঘটনাটা জানতে পারি।
‘অনেক অভিভাবক এসেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল মেয়েদের হিজাব পরার জন্য মারছে। এই রকম একটা বক্তব্য আরকি। সেদিন আমোদিনী পাল স্কুলে আসেননি। আগে থেকে ছুটিও নেননি। শুধু ফোন কল করে জানিয়েছেন অসুস্থ, তাই আসতে পারবেন না।’
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক স্যার আমাকে কল দিলেন, আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বললেন। তবে আমি যেতে পারিনি কারণ বিভিন্ন সাংবাদিক আর পুলিশ ছিলেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করে তারপর আমি স্যারের কাছে যাই। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন তাকে (আমোদিনী পাল) শোকজ করে চিঠিটা স্যারকে দেখাতে। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য আমি তাকে শোকজ করি। জবাব দেয়ার সময় সাত দিন।’
তিনি বলেন, ‘হিজাবের বিষয়টা আমি শিওর না, কারণ আমি ছিলাম না। মেয়েরা যখন পুলিশকে জানায় তখন আমি ছিলাম। মেয়েরা ওই রকম কথাই বলছে।
‘হিজাব হোক, স্কুলড্রেস হোক; যে কারণেই হোক, টিচার তো মারধর করতে পারে না।’
যা বলছে প্রশাসন
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির পর থেকেই পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুল ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আর স্কুলে যে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন, শিক্ষা বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন যৌথভাবে তদন্ত করছি।’
মহাদেবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্কুলে ইউনিফর্ম না পরার কারণে বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে। তবে হিজাব পরার কারণে কাউকে শাসন করা হয়নি। তবুও আমরা ঘটনাটি আরও গভীরভাবে তদন্ত করছি।’
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেত দিয়ে মারা হয়েছে, এটা সত্য। তবে সেটা হিজাবের কারণে নয়, স্কুলড্রেস না পরে আসার কারণে মারা হয়েছে।
‘স্কুলে মুসলিম ছাত্র ও সনাতন ধর্মের ছাত্রীদেরও শাসন করা হয়েছে। ওই ঘটনার সময় বদিউল আলম নামে একজন মুসলমান শিক্ষকও ছিলেন।’
গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন হিন্দু শিক্ষকের পক্ষে এমন সাহস কতটুকু হবে একটু ভাবা দরকার। ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। পরে আরও বিস্তারিত জানাতে পারব।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
নাফ নদীর ভাঙন যেন থামছেই না। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় প্রতিদিনই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। কিছুদিন আগেও যেখানে ছিল ঈদের প্রস্তুতি, হাসি-আনন্দে মুখর পরিবার—আজ সেখানে কান্না আর হাহাকার। প্রবল জোয়ার ও টানা বৃষ্টির তোড়ে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়হীন, চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। বসতভিটা হারিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ গাছতলায় কিংবা নদীর পাড়েই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছে।
‘নাফের পানি ও তুফানে আমার ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ঈদের দিনেও কোরবানি দিতে পারিনি, ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না।’-বলেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আবুল আলী। আলোকিত শহরের ঈদ আনন্দের বিপরীতে এই দ্বীপে নেই রান্নার হাঁড়ি, নেই নতুন জামার ঝলক, শুধু অসহায়ত্ব আর কান্নার সুর।
ভাঙনের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধের আহাজারি
বৃদ্ধ আবুল আলী, কাঁপা গলায় হাতের ইশারায় দেখালেন যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানেই ছিল তার ছোট্ট ঘর। নাফের পানি একরাতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘর, চুলা, শোবার জায়গা, কিছুই নাই আর। কতবার ঘর তুলুম? আমাদের দেখার কেউ নাই। বারবার আশার বাণী শুনিয়েছেন প্রশাসন। কেউ আজো কিছু দেয়নি। তবে কিছু করবে এমন আশায় আছি।’
ঈদের রান্নাও থেমে গেছে
বৃদ্ধা চলেমা খাতুন বলেন, ‘নাফের পানি চুলোতে ঢুকে ভেঙ্গে গেছে। এখনো রান্না করতে পারি না। ঈদের দিনেও ছেলে-মেয়েদের মুখে ভাত দিতে পারি নাই। নতুন কাপড় তো দূরের কথা। কোরবানিও করা সম্ভব হয় নাই। সাহায্য আসলেও তা আমরা পাই না।’
শুধু আবুল আলী বা চলেমা খাতুনই নন, এমন গল্প আজ জালিয়াপাড়ার শত শত পরিবারের। ঈদের সময় যখন দেশের অন্যপ্রান্তে আনন্দে মুখর প্রতিটি বাড়ি, তখন এই দ্বীপে ঈদ মানে কষ্ট, ভাঙা ঘর, খালি পেট, আর ভেজা চোখ।
আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি—কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেই
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বহুবার প্রশাসনের লোকজন এসেছেন, ছবি তুলেছেন, কথা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো সহায়তা তারা পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন,
‘কেবল ছবি তুললে আর রিপোর্ট করলেই কি ঘর ফিরে পাই? আমরা তো বাস্তব সাহায্য চাই।’ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে নদীভাঙনের আতঙ্ক। শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ভাঙন নতুন নয়। ২০১২ সালের ভয়াবহ সামুদ্রিক জোয়ারে এই দ্বীপের চারটি পাড়ার অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদ, দোকান সাগরে বিলীন হয়ে যায়। নোনা পানি নষ্ট করে দেয় কৃষিজমি, নিশ্চিহ্ন হয় গ্রাম, গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। কিন্তু এত বড় অভিজ্ঞতার পরও দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০২৫ সালের এই ঈদুল আজহার সময়, ইতিহাস যেন আবার নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে—আর এই পুনরাবৃত্তি শুধু কষ্টের, শুধু কান্নার। ধ্বংসের চিত্র এখনো স্পষ্ট জালিয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে এখনো পড়ে আছে ভাঙা কাঠামো, উপড়ে যাওয়া গাছের শিকড়, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ঘরের চিহ্ন। পথচারীদের চোখে-মুখে শোক, মুখে একটাই প্রশ্ন—‘এই ভাঙন কি আর থামবে না?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ায় যেসব বাংলাদেশি নাফ নদীর ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাদের তালিকা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চন্দনা নদী থেকে মো. আসলাম প্রামানিক (৪২) নামে এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে কালুখালী থানা পুলিশ।
বুধবার (১১ জুন) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের চন্দনা ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আসলাম শেখ পাংশা উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং পিয়ার আলী প্রামানিকের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসলাম শেখ গত মঙ্গলবার ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত পর্যন্ত তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। বুধবার সকালে স্থানীয়রা চন্দনা ব্রিজের নিচে একটি মরদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মরদেহটি আসলাম শেখের বলে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার জানান, “প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসলাম শেখকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার তারাবো এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, তারাবো সুলতানবাগ এলাকার দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাবেক রূপগঞ্জ প্রতিনিধি মরহুম আবুল হাসান আসিফের ছেলে শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে তারাবো বিশ্বরোড এলাকা থেকে অটোরিক্সা যোগে তারাবো সুলতানবাগ এলাকার বাড়িতে ফিরছিলেন শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। পথিমধ্যে সাইফিং ফ্যাক্টরীর সামনে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসের সাথে অটোরিক্সাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অটোরিক্সা চালক অজ্ঞাত (৩৫) এবং আহত হয় অটোরিক্সার যাত্রী শাহরিয়ার হাসান আকাশ (২৯) ও তার বন্ধু সায়মন (২৯), তামিম সরকার (২৯)। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার হাসান আকাশ ও তার বন্ধু তামিম সরকারকে গুরুত্বর আহত অবস্থায়
স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শাহরিয়ার হাসান আকাশকে মৃত ঘোষনা করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, দূর্ঘটনার পর হাইয়েস মাইক্রোবাসের চালক মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নি।
মন্তব্য