নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার একটি স্কুলে হিজাব পরার কারণে কমপক্ষে ২০ ছাত্রীকে মারধরের তথ্য প্রকাশ করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজনের বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
বিষয়টির সত্যতা জানতে শুক্রবার দিনভর দাউল বারবাকপুর গ্রামে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা। স্কুলটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এলাকাবাসী এবং প্রশাসনের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। ঘটনার সময় উপস্থিত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে জানায়, হিজাবের কারণে কাউকে সেদিন মারা হয়নি। স্কুলের নির্ধারিত পোশাক না পরার কারণে দুই শিক্ষক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল।
বুধবার অ্যাসেমব্লির সময় ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে।
শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের ঘটনাটি ঘটে বুধবার সকালে স্কুলের অ্যাসেমব্লির সময়। সে সময় ছেলে ও মেয়েদের পিটির লাইনের সামনে ছিলেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বদিউল আলম এবং শিক্ষক সুনিতা রাণী মণ্ডল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্কুলড্রেস না পরার কারণে সেদিন মেয়েদের বেত্রাঘাত করেন আমোদিনী পাল, আর ছেলেদের একই শাস্তি দেন বদিউল আলম। তবে কেবল আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভাইরাল হয়।
ঘটনাটি প্রচার পায় ‘হিজাব পরা’র শাস্তি হিসেবে। এই অভিযোগ তোলা দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে তাদের কাউকেই শুক্রবার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরাও সেখানে নেই। দুই শিক্ষার্থীর বাড়িই তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে।
‘হিজাব পরার কারণে শাস্তি’র অভিযোগটি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় বৃহস্পতিবার। একই দিন ফেসবুকে ভাইরাল হয় দুই শিক্ষার্থীর বক্তব্য এবং স্কুলে হামলার ভিডিও।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে সুমাইয়া বলে, ‘আমরা স্কুলড্রেসের সঙ্গে হিজাব পরে ছিলাম। ম্যাডাম এসে বলল, তোমরা হিজাব পরে আসো কেন? আমাদের মাস্ক ধরে টানাটানি করেছিল। মাস্ক খুলে দিল, হিজাব ধরে টানাটানি করেছিল। যারা যারা হিজাব পরেছিল সবাইকে মেরেছে। বলছে যে তোমরা হাজিগিরি করতে আসছ, ঘরের ভেতর গিয়ে বোরখা পরে থাকো।
‘স্কুলে পর্দা করা যাবে না, মাথায় কাপড় দেয়া যাবে না। শুধু স্কুলড্রেস পরে আসবে। হিজাব পরবে না, এই বলে আমাদের হিজাব ধরে টানাহেঁচড়া করেছে। মোটা কঞ্চি দিয়ে অনেক মেরেছে। যারা হিন্দু ছিল তাদের এক সাইডে নিয়ে আমাদের বলেছে, তোমরা ওদের মতো করে আসবে।’
প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন। তাদের অভিভাবকদেরও দাবি, হিজাব পরার কারণে শিক্ষক আমোদিনী পাল মেয়েদের মেরেছেন।
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার ওই স্কুলে হামলা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষক আমোদিনী পালকে স্কুলে না পেয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিউজবাংলার প্রতিবেদক শুক্রবার দাউল বারবাকপুর গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসী ও স্কুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে পাশের আরেকটি স্কুল দাউল বারবাকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন মোস্তাকিন রহমান ছিলেন সেখানে।
এই দুই স্কুলের পাশের মাঠে বুধবার অ্যাসেমব্লির সময় ঘটনাটি ঘটে। মোস্তাকিনের দাবি, তিনি সে সময় মাঠের একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
তিনি জানান, প্রতিদিন এই অ্যাসেমব্লি হয়। পিটির সময় একদিকে মেয়েরা, আরেক দিকে ছেলেরা দাঁড়ায়।
মোস্তাকিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মাঠ থেকে ৩০ হাতের মতো দূরে ছিলাম। সব স্যার-ম্যাডাম মাঠে ছিলেন। হেডমাস্টার স্যার ছিলেন না। ওই দিন বদিউল স্যার পিটি করান।’
কী হয়েছিল জানতে চাইলে মোস্তাকিন বলেন, ‘রোজার দিন তো, সবাই একটু হিজাব পরে। কেউ বোরকা পরছে। একটু পরে শুনি আমোদিনী ম্যাডাম কয়েকটা মেয়েকে মারছে, তাদের বলতেছে হিজাব কেন পরে আসছ?’
মাঠ থেকে ৩০ হাত দূরে দাঁড়িয়েও কীভাবে কথাগুলো শুনলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম তো জোরে জোরে বলেছেন। তাই স্পষ্ট শুনছি।’
মোস্তাকিনের কাছ থেকেই স্কুলের দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর ঠিকানা পায় নিউজবাংলা। গ্রামের ভেতরেই তাদের বাড়ি গিয়ে কথা বলেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এই শিক্ষার্থীরা জানায়, সেদিন হিজাবের কারণে বেত্রাঘাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। শাস্তি দেয়া হয়েছিল স্কুলড্রেস ঠিকঠাক না পরার কারণে।
আল মোক্তাদির নামে এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমি শুরু থেকে ছিলাম, জাতীয় সংগীতের সময় স্কুলের ড্রেস না পরা কিছু ছেলেমেয়ে ছিল, তাদের মারছিল। বদিউল স্যার আগে ছেলেদের মারে। এক সপ্তাহ আগে বদিউল স্যার স্কুলড্রেস পরে আসতে হবে বলছিল। মেয়েদেরকেও তা বলা হইছে।
‘কিছু ছেলেমেয়ে ওইভাবে আসেনি বলে শাসন করছে। সারিবদ্ধ করে দাঁড় করায় তাদের মারছে। বদিউল স্যার ছাত্রদের মারছে, তারপর ম্যাডাম (আমোদিনী পাল) মেয়েদের মারছে। তবে জোরে মারে নাই, একটু মারছে। হালকা, খালি শাসন করার জন্য আরকি।’
হিজাবের কারণে কাউকে মারা হয়নি জানিয়ে মোক্তাদির বলে, ‘স্কুলড্রেস তারা ঠিকমতো পরে আসে নাই। আর যারা মার খাইছে তাদের সবার মাথায় তো হিজাব ছিল না। হিজাবের জন্য তো মারে নাই। হিজাব নাই এমন মেয়েদেরও তো মারছে। ছেলেদেরও মারা হইছে।’
ওই দিন স্কুলড্রেসে না যাওয়ায় আমোদিনী পালের বেত্রাঘাত খেয়েছে প্রমি রাণী পাল নামে এক শিক্ষার্থী।
প্রমি নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমরা কয়েকজন আনড্রেস (স্কুল ড্রেস না পরা) ছিলাম। তাই আমোদিনি ম্যাডাম মেরেছিল। কঞ্চি দিয়ে একটু মারছে। আমি সেদিন এমনিই স্কুলড্রেস পরে যাইনি।’
হিজাবের কারণে শাস্তির অভিযোগে বিস্মিত প্রমি নিউজবাংলাকে বলে, ‘এটা কীভাবে আসল আমি তো জানি না। আমি তো হিন্দু, হিজাব করি না, আমিও মার খাইছি। অন্য মেয়েরা যারা মার খেয়েছে তাদের কেউ কেউ মাথায় ওড়না দিয়ে ছিল, ওগুলাও তো হিজাব না। তারাও আনড্রেসে ছিল। ছেলেদের মেরেছিল বদিউল স্যার।’
ভাইরাল ভিডিওর সুমাইয়াকে চেনে জানিয়ে প্রমি বলে, ‘সে তো ওই দিন আনড্রেসে ছিল। হিজাব তো পরা ছিল না। ওড়না দেয় মাথায়, তাও মাঝে মাঝে। ম্যাডাম তো ওগুলো নিয়ে বলে নাই, আমিও তো মাথায় ওড়না দিয়ে ছিলাম। হিজাব নিয়ে কোনো কথা হয় নাই।’
সেদিন বেত্রাঘাতের মুখে পড়া আরেক শিক্ষার্থী সজিব হোসেন নিউজবাংলাকে বলে, ‘আমাদের তো অনেক দিন আগে থেকেই স্কুলড্রেস পরে আসতে বলছিল। আমিও সেদিন আনড্রেসে গেছি, অন্য অনেকেই তো আনড্রেসে যায়, তাই আমিও গেছি। পরে বদিউল স্যার প্রথমে আমাদের মারে। এরপর মেয়েদেরকে ম্যাডাম মারছে। জোরে না আস্তেই মারছে।’
দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী দীপা ও কাকলী রানী পাল নিউজবাংলাকে জানায়, ওই দিন ইউনিফর্ম ঠিকমতো পরে না আসায় আমোদিনী পাল ও বদিউল আলম তাদের অনেকে শাসন করেন। কিছু মারধরও করেন। তবে হিজাব নিয়ে টানাহেঁচড়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।
মূল ইস্যু ‘প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বিরোধ’!
ওই বিদ্যালয়ে বুধবার দুই শিক্ষক বেত্রাঘাত করলেও শুধু আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন ভাইরাল হলো, সে ব্যাপারেও অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এলাকার লোকজন এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই বর্তমান প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণের সঙ্গে আমোদিনী পালের বিরোধের বিষয়টি সামনে এনেছেন। ঘটনাচক্রে গত বুধবার স্কুলে ছিলেন না ধরণী কান্ত। তার দাবি, সেদিন স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন।
প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল স্বীকার করেছেন। তার অভিযোগ, বর্তমান প্রধান শিক্ষক নিয়োগসহ অনেকগুলো খাতে দুর্নীতি করেছেন। আগামী ১০ মে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এরপর নিয়ম অনুযায়ী আমোদিনী পালের ওই পদে যাওয়ার কথা। তিনি প্রধান শিক্ষক হয়ে ধরণী কান্ত বর্মণের দুর্নীতির হিসাব যাতে না চাইতে পারেন সে কারণেই এমন ষড়যন্ত্র হয়ে থাকতে পারে।
বুধবারের ঘটনা সম্পর্কে আমোদিনী পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন কেবল স্কুলড্রেস ঠিকমতো পরে না আসার কারণে কিছু ছেলেমেয়েকে শাসন করা হয়েছিল। হিজাব নিয়ে কিছুই হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘পোশাকের ব্যাপারে বারবার বলার পরও আনড্রেসে আসে ছেলেমেয়েরা। আমাকে ওই বদিউল স্যারই বলছে যে, আপনি একটু মেয়েদের বলেন...
‘ওরা অন্য কালারের জামা পরা ছিল, ফ্যাশন পোশাক যাকে বলে। তাদের আমি হালকা শাসন করলাম, নামমাত্র শাসন আরকি। ওটাই হিজাব হিসেবে ছড়ায় গেছে। ওরা বলছে আমি নাকি হিজাব নিয়ে বলছি। এটা আমাকে ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত। পত্রপত্রিকায় আমার নাম আসছে, কিন্তু যেই স্যার শারীরিক শিক্ষা টিচার, তার নামই আসেনি। শাসন তো আমরা দুজন করছি, কিন্তু আমার নামটা আসল অন্যভাবে।’
মেয়েরা কী ধরনের পোশাকে ছিল- এমন প্রশ্নের উত্তরে আমোদিনী বলেন, ‘কালার পোশাকে ছিল, ওইগুলার তো নাম মনে নাই। স্কুলের ড্রেস না আরকি, কালার ড্রেস পরা ছিল। স্কুলের পোশাক পরাও অনেকে ছিল, শুধু কয়েকজন ছিল না।
‘আমার চাকরির বয়স ২২ বছর, আমি তো হিজাব নতুন দেখছি না। যারা হিজাব পরবে, পরবে। খালি স্কুলের ড্রেস হলেই হয়ে গেল। কখনও কোনো ক্লাসে হিজাব নিয়ে আমি বলি নাই। মাঠে সবার সামনেই তো সমাবেশ হয়েছে। নামেমাত্র যে শাসন, তাও প্রকাশ্যে সবার সামনেই হয়েছে। আমার শিক্ষকরা সবাই ছিল সেখানে। বদিউল স্যার কিছু ছাত্রকেও শাসন করেছিলেন। তিনিই বলছেন, আপনি মেয়েদের কিছু বলেন।’
চক্রান্তের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমার প্রধান শিক্ষক (ধরণী কান্ত বর্মণ) সামনের মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত তার ডেট, তারপরে চলে যাবে। আইন অনুয়ায়ী ওই পদে আমি যাব। ওই পদ সে আমাকে দিতে চায় না। যার জন্য এই কৌশল করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
'আমি ওই পদে যদি যাই, ওই হেড মাস্টারের অনেক কুর্কীতি আছে, দুদক পর্যন্ত চলে গিয়েছিল, এই কিছুদিন আগেই। ১০টা নিয়োগ দিয়েছিল কোনো হিসাব দিতে পারেনি। এখন আমি যদি ওই পদে যাই, আমাকে তার হিসাব দিয়ে যেতে হবে তার। তাই আমাকে পদটা দেবে না। তার পছন্দমতো একজনকে পদটা দিয়ে পার পাবে। যার জন্য আমার এই অবস্থা করছে।’
বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বদিউল আলমের সঙ্গেও কথা বলেছে নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বলা হয় ইউনিফর্মের কথা। ম্যাডাম দুয়েকজনকে একটু মেরেছে। ম্যাডাম কিন্তু এমনিতে কখনও মারে না। ছাত্রদেরও কেউ কেউ অন্য ড্রেস, গেঞ্জি এসব পরে আসছে। আমরা তো সব সময় বলি স্কুলড্রেস পরে আসতে।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ বৃহস্পতিবার শুনি এসব ঘটনা। ফেসবুকে কী জানি ভাইরাল হয়েছে। আসলে এ রকম কিছু তো না। হিজাব নিয়ে কিছু হয়েছে বলে তো শুনিনি। ভুল বোঝাবুঝি কিছু হয়েছে হয়তো।’
এদিকে আমোদিনী পালের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনার (আমোদিনী পাল) সঙ্গে তো আমার বিরোধ নাই, কারণ তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক, আমার পর তো উনিই হেড মাস্টার হবে। এটা তো আইন হিসেবেই পাবে। এটা নিয়ে তো আমার কিছু নাই।’
বুধবার বিদ্যালয়ে ছিলেন না জানিয়ে ধরণী কান্ত বলেন, ‘আমি ওই দিন ছিলাম না, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ছিলাম। পরদিন আমি স্কুলে গিয়া ঘটনাটা জানতে পারি।
‘অনেক অভিভাবক এসেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল মেয়েদের হিজাব পরার জন্য মারছে। এই রকম একটা বক্তব্য আরকি। সেদিন আমোদিনী পাল স্কুলে আসেননি। আগে থেকে ছুটিও নেননি। শুধু ফোন কল করে জানিয়েছেন অসুস্থ, তাই আসতে পারবেন না।’
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক স্যার আমাকে কল দিলেন, আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বললেন। তবে আমি যেতে পারিনি কারণ বিভিন্ন সাংবাদিক আর পুলিশ ছিলেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করে তারপর আমি স্যারের কাছে যাই। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন তাকে (আমোদিনী পাল) শোকজ করে চিঠিটা স্যারকে দেখাতে। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য আমি তাকে শোকজ করি। জবাব দেয়ার সময় সাত দিন।’
তিনি বলেন, ‘হিজাবের বিষয়টা আমি শিওর না, কারণ আমি ছিলাম না। মেয়েরা যখন পুলিশকে জানায় তখন আমি ছিলাম। মেয়েরা ওই রকম কথাই বলছে।
‘হিজাব হোক, স্কুলড্রেস হোক; যে কারণেই হোক, টিচার তো মারধর করতে পারে না।’
যা বলছে প্রশাসন
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির পর থেকেই পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুল ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আর স্কুলে যে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন, শিক্ষা বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন যৌথভাবে তদন্ত করছি।’
মহাদেবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্কুলে ইউনিফর্ম না পরার কারণে বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে। তবে হিজাব পরার কারণে কাউকে শাসন করা হয়নি। তবুও আমরা ঘটনাটি আরও গভীরভাবে তদন্ত করছি।’
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেত দিয়ে মারা হয়েছে, এটা সত্য। তবে সেটা হিজাবের কারণে নয়, স্কুলড্রেস না পরে আসার কারণে মারা হয়েছে।
‘স্কুলে মুসলিম ছাত্র ও সনাতন ধর্মের ছাত্রীদেরও শাসন করা হয়েছে। ওই ঘটনার সময় বদিউল আলম নামে একজন মুসলমান শিক্ষকও ছিলেন।’
গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন হিন্দু শিক্ষকের পক্ষে এমন সাহস কতটুকু হবে একটু ভাবা দরকার। ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। পরে আরও বিস্তারিত জানাতে পারব।’
আরও পড়ুন:অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নিরাপত্তাহীনতায় পুনরায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যসহ ৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌণে সাতটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নকশি সীমান্ত পথে নকশি ক্যাম্পের টহলরত বজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিষয়টি ২৬ আগষ্ট সকালে বিজিবি পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
আটককৃতরা হলো মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) ও আসমত আলীর ছেলে রাসেল (১৬)। আটক অনুপ্রবেশকারীরা হলো, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বোমবাঘ গ্রামের শামীম শেখ (২৩), আফসানা খানম (২২), রুমা বেগম (৩২), মিলিনা বিশ্বাস (২৮) ও তিন বছর বয়সী শিশু কাশেম বিশ্বাস।
বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ আগস্ট রাতের আধারে নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে নারী এবং শিশুসহ ৫ বাংলাদেশীকে ভারতে পাঠায় মানব পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে এ পাঁচ বাংলাদেশী। এ কারণে ২৫ আগষ্ট সোমবার সকাল পৌণে সাতটার দিকে ঝিনাইগাতির নকশি সীমান্তের কালিমন্দির এলাকা দিয়ে পুনরায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা টের পেয়ে সবাইকে আটক করে। পরে মানব পাচারে জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অপরাধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সবাইকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ময়মনসিংহ বিজিবি’র ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
ঝালকাঠিতে গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে ব্রান্ডশপ লোটো ও লি কুপার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩২তম ফ্লাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে।
এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্ট লিঃ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাজী জাভেদ ইসলাম সহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আউটলেটটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
পৌর শহরের সাধনার মোড়ে মঙ্গলবার ২৬ আগষ্ট সকাল ১০টায় লোটো ও লি কুপারের ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন আনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠিতে কোম্পানীর এ যাত্রার প্রথম দিনে স্থানীয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীরা তাদের পছন্দের পন্য কালেকশন বেছে নিতে ভীর জমায়।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রথম তিনদিনের প্রতিদিন প্রথম ৩০ জন পাবেন ৫০% ছাড়, ২য় ৩০ জন পাবেন ৪০% ছাড়, ৩য় ৩০ জন পাবেন ৩০% ছাড়, ৪র্থ ৩০ জন পাবেন ২০% ছাড় এবং তৎপরবর্তী সকল কাস্টমার পাবেন ১০% ছাড়। এই বিশেষ ছাড় ২৬শে আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে
নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য