ফারজানা আক্তার এক যুগের বেশি সময় ধরে স্বামীর সঙ্গে সৌদিপ্রবাসী। দেশের কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয় এবং লেনদেন করেন তারা। কিন্তু এখন ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আগ্রহ জেগেছে তাদের। তাই দেশে থাকা আত্মীয়দের মাধ্যমে খোঁজ নিচ্ছেন। জানতে চাইছেন, দেশে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম কিভাবে হয়।
ফারজানার মতোই ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে অন্য অনেকের। দেশে ও দেশের বাইরে থাকা অনেকেই ঝুঁকছেন এই ব্যবস্থায়। বিশেষ করে রোজার মাসে এই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মানুষের আগ্রহ বাড়ে।
বিদেশে থাকা অনেকেই ফিতরার অর্থ ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ ছাড়া রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে আর্থিক সহযোগিতা করার ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকে। যে কারণে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে বেড়েছে হিসাব ও আমানতের পরিমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিদ্যমান ৬২টি ব্যাংকের ১০টি পূর্ণাঙ্গভাবে এবং ৩৪টি বিভিন্নভাবে শরিয়াহভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের সেবা দিচ্ছে।
২০২১ সালে করোনা সংকটের বছরেও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ধারার ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে মোট আমানতের প্রায় ২৮ শতাংশ। বিতরণ করা ঋণের সাড়ে ২৭ শতাংশের বেশি এ খাতের ব্যাংকগুলোর। প্রবাস আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ আসছে এই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।
দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু হয় ১৯৮৩ সালে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে। এরপর নতুন পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক যেমন এসেছে, তেমনি প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং শাখা চালু করেছে।
আমানত সংগ্রহ, শিল্প-ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ, প্রবাসী আয় সংগ্রহে শরিয়াভিত্তিক লেনদেন ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মভীরু। তারা সুদভিত্তিক কারবারের পরিবর্তে শরিয়াহভিত্তিক কারবারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ জন্য আমানতকারীরা দর-কষাকষি করেন না। তাদের বেশির ভাগ আবার একটি ব্যাংকে আমানত রেখেই সন্তুষ্ট থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে যাচ্ছে। কারণ ইসলামী ব্যাংকগুলোতে স্বেচ্ছায় অনেক আমানত আসে। এই ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড কম। আবার রেমিট্যান্স সংগ্রহ হয় বেশি। এসব কারণে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ঝোঁক বাড়ছে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রাহকরা এখন ইসলামী ব্যাংকিং বেশি পছন্দ করছে। মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের অনেক মানুষ সুদের সঙ্গে যুক্ত হতে চান না। ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আস্থা পান তারা। এ জন্য এই খাতের ব্যাংকগুলোর আমানত টার্গেট দ্রুত পূরণ হয়। আবার এদের মাধ্যমে রেমিট্যান্সও আসে বেশি।
‘গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে অনেক তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকও ইসলামী ব্যাংকের দিকে যাচ্ছে। আবার প্রতিটি ব্যাংক এখন ইসলামী উইন্ডোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এ জন্য ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসাও ভালো হচ্ছে।’
দেশে ইসলামী ব্যাংকের সংখ্যা কত
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালের ডিসেম্বরের তথ্য অনুসারে, দেশে ১০টি ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং করছে। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, শাহজালাল, ইউনিয়ন, এক্সিম, আল-আরাফাহ, আইসিবি ইসলামিক, স্ট্যান্ডার্ড ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (সাবেক এআরবি গ্লোবাল)।
এসব ব্যাংকের শাখার সংখ্যা এক হাজার ৬৭১টি।
প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৯টির ৪১টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা রয়েছে। এগুলো হলো দ্য সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট, যমুনা, ব্যাংক আল ফালাহ ও এনআরবিসি।
১৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের রয়েছে ৩৬৮ ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো। এগুলো হলো সোনালী, জনতা, অগ্রণী, পূবালী, ট্রাস্ট, ব্যাংক এশিয়া, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, মার্কেন্টাইল, মিডল্যান্ড, এনআরবিসি, ওয়ান, ইউনাউটেড কমার্শিয়াল, মেঘনা ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট।
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী ব্যাংকিং পরিচালনায় ব্যাংকগুলোতে ৪৫ হাজার ২৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
আমানতে শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক
২০২১ সাল শেষে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ৬৬ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংকিং শাখা, উইন্ডোসহ আমানত দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা। এই অঙ্ক পুরো আমানতের ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের আমানত ছিল ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।
আমানত সংগ্রহের দিক থেকে সবার শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির মোট আমানত ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ।
শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের ৩৫ দশমিক ১৮ শতাংশ একাই সংগ্রহ করেছে ব্যাংকটি।
আমানত সংগ্রহের দিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (১১ দশমিক ৯৩), এক্সিম (১০ দশমিক ৭৫), আল-আরাফাহ (৯ দশমিক ৬৬), সোশ্যাল ইসলামী (৮ দশমিক ৫২), শাহজালাল (৫ দশমিক ৫৩), ইউনিয়ন (৫ দশমিক ০৯), স্ট্যান্ডার্ড (৪ দশমিক ২৪), গ্লোবাল ইসলামী (৩) ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (দশমিক ৩৩ শতাংশ)।
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের আমানত রাখার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে মুদারাবা আমানত সবচেয়ে বেশি, ৪৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকিং শাখাগুলোতে মোট আমানতের ২ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং উইন্ডোগুলোতে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ আমানত রয়েছে।
বিনিয়োগ
২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ধারার ১০ ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০২০ সালের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৫৯ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।
বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৩১ শতাংশ বিতরণ করে শীর্ষে আছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির বিনিয়োগের পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ।
এর পর রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি (১২ দশমিক ৮৪), এক্সিম (১১ দশমিক ৭৫), আল-আরাফাহ (৯ দশমিক ৪১), সোশ্যাল ইসলামী (৮ দশমিক ৭১), শাহজালাল (৬ দশমিক ১৩), ইউনিয়ন (৫ দশমিক ৪৮), স্ট্যান্ডার্ড (৪ দশমিক ৬৪), গ্লোবাল (৩ দশমিক ০৩) এবং আইসিবি ইসলামিক (দশমিক ২৪) শতাংশ।
‘বাই মুরাবাহ’ পদ্ধতিতে বেশি বিনিয়োগ
ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ‘বাই মুরাবাহ’ সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। মোট বিনিয়োগের প্রায় ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ করা হয়েছে এ পদ্ধতিতে।
এরপর রয়েছে ‘বাই মুয়াজ্জল’। এ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের পরিমাণ মোট বিনিয়োগের ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।
বাকি বিনিয়োগ করা হয়েছে বাই সালাম, ইজারা অ্যান্ড ইজারা, বাই ইসতিসনা, মুসারাকাসহ অন্যান্য পদ্ধতিতে।
ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগ বেশি
ইসলামী ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে, ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে শিল্প খাত, ২৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কটেজ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে।
এ ছাড়া অবকাঠামোতে ৬ দশমিক ৪২, বৃহত্তর ও সেবা বাণিজ্যে ৫ দশমিক ৪৮, কৃষিতে ১ দশমিক ৮১, ভোক্তা খাতে ১ দশমিক ৭৯ ও যোগাযোগ খাতে ১ দশমিক ০২ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে ইসলামী ব্যাংকগুলো।
আরও পড়ুন:ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিন্ন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৬৮ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ মঙ্গলবার ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ৪৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকেই ডলার কিনছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ডলার কেনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ দফায় ডলার কেনে। ১৩ জুলাই ১৮ ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১১ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম হঠাৎ করে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া- দুটোই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বিদেশি দায় পরিশোধও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ডলারের তীব্র চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদাও বাড়তে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যবিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে ৩ টাকা। নতুন মূল্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৭৩ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়েছে ।
এছাড়া, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারে ১৩ পয়সা কমিয়ে ৫৮ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি খাতে ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেখান থেকে বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হবে।
তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরামকোর প্রপেন ও বিউটেনের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে এ দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের বড় বাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভারত থেকে টমেটো বোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টমেটো আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮ টন টমেটো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো আমদানি করতে শুল্কসহ খরচ গুণতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ টমেটো আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার হিলি বন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ণ করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এই বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি করা হয়েছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজতে থাকায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে পৌঁছেছে।
এশিয়ায় প্রাথমিক লেনদেনের সময় মূল্যবান ধাতুটি প্রতি আউন্স ৩,৫০১ দশমিক ৫৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে এর আগের রেকর্ড ৩,৫০০ দশমিক ১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মার্কিন ডলার ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নেওয়ায় সোনার দামের এই দরপতন ঘটেছে।
মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির একটি মূল্য সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে পিছিয়ে এসেছে। একই সময়ে, ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শ্রম দিবসের জন্য সোমবার ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, তখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ডলার মিশ্র লেনদেন করেছে।
বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগে ফেডের গভর্নরকে তিরস্কার করার পর ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুক পদত্যাগ না করলে, তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন।
মার্কিন আপিল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক শুল্ক, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেগুলো অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পরও এই রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
তবে আদালত আপাতত এই ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য সময় পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কমিউনিটি ব্যাংকের স্টার্টআপ রিফাইন্যান্স স্কিমের অধীনে অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখার উপস্থিতিতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসএমইএসপিডি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কিমিয়া সাআদত পারস্পরিক অংশীদারত্বমূলক এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে- বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হাফিয়া তাজরিয়ান, যুগ্ম পরিচালক মো. নুরুল কাওসার সাঈফ এবং কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মোঃ আরিফুল ইসলাম, হেড অব এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শরিফ হাসান মামুনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ব্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় ১০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয় ছিল ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে, সামগ্রিক এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টে অর্জিত ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য