পাহাড়সম খেলাপি ঋণ, সুদহার নিয়ে নানান সমীকরণের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা। সরকারের কাছ থেকে নানামুখী সুবিধা নিয়েও হচ্ছে না অবস্থার উত্তরণ। এর মধ্যেও ভালো ব্যবসা করছে ইসলামি ধারার ব্যাংক।
দেশের ৬২টি ব্যাংকের ১০টি পূর্ণাঙ্গভাবে এবং ৩৪টি নানা উপায়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। করোনা সংকটের বছরেও পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে মোট আমানতের ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জে টিকে থাকতে প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে যাচ্ছে। কারণ, ইসলামি ব্যাংকগুলোতে স্বেচ্ছায় অনেক আমানত আসে। ধর্মপ্রাণ অনেকে এ ধারার ব্যাংকে লেনেদেনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ জন্য আমানতকারীরা দর-কষাকষি করেন না। তাদের বেশির ভাগই একটি ব্যাংকে আমানত রেখেই খুশি থাকেন। তবে ঋণ বিতরণে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে পার্থক্য কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামি ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড কম। আবার রেমিট্যান্স সংগ্রহ হয় বেশি। এসব কারণে ইসালামি ব্যাংকিংয়ে ঝোঁক বাড়ছে।’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে এখনও অনেক দুর্বলতা রয়েছে। স্বতন্ত্র ইসলামি ব্যাংকিং নীতিমালা দরকার, যা এখনও হয়নি। প্রচলিত ধারার ব্যাংক ও ইসলামি ব্যাংকগুলোর কাজের মধ্যে শব্দগত পার্থক্য ছাড়া পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াগত পাথর্ক্য তেমন নেই। নীতিমালা করা হলে ইসলামি ব্যাংকিং আরও প্রসারিত হবে। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থার মন্দ ঋণ কমে আসবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অর্থায়ন সহজ হবে।
১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিংব্যবস্থা চালু হয়। এরপর নতুন পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক যেমন এসেছে, তেমনি প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডো চালু করেছে। আমানত সংগ্রহ, শিল্প, ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ, প্রবাসী আয় সংগ্রহে জনপ্রিয় হচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
ইসলামি ব্যাংক কতটি
দেশে বর্তমানে ৬২টি ব্যাংকের মধ্যে পুরোদমে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে ১০টি ব্যাংক। তবে স্ট্যান্ডার্ড ও গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক (সাবেক এআরবি গ্লোবাল) জানুয়ারি থেকে পুরোদমে ইসলামি ব্যাংকিং চালু করায় এ দুটি ব্যাংকের বিস্তারিত এ প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়নি।
আগের আটটি ব্যাংক হলো : ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, শাহজালাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ব্যাংক, আল-আরাফাহ ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড।
এসব ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ১ হাজার ৩১১টি। এ ছাড়া প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের ১৯টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা রয়েছে। ১৪ বাণিজ্যিক ব্যাংকের রয়েছে ১৯৮ ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো।
সারা দেশে মোট ১ হাজার ৫২৮টি শাখায় ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী লেনদেন হয়। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকের শাখা ১ হাজার ৩১১টি।
ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী ব্যাংকিং পরিচালনায় ব্যাংকগুলোতে ৩৮ হাজার ৭৮৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
আমানতের পরিমাণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণায় দেখা যায়, মহামারির বছরে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ৪৬ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে সার্বিক ব্যাংক খাতে মোট আমানত ১২ লাখ ৯০ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকগুলোর (প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংকে ইসলামি ব্যাংকিং শাখা, উইন্ডোসহ) আমানত রয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। এ অঙ্ক পুরো আমানতের ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
২০১৯ সালে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।
আমানত সংগ্রহের দিক থেকে সবার শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের ৩৬ দশমিক ১৩ শতাংশ সংগ্রহ করেছে ব্যাংকটি।
এর পরই রয়েছে ক্রমান্বয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৩ দশমিক ১১, এক্সিম ১২ দশমিক ২৫, আল-আরাফাহ ১০ দশমিক ৬১, সোশ্যাল ইসলামী ৯ দশমিক ১৫, শাহজালাল ইসলামী ৬ দশমিক ৬৯, ইউনিয়ন ব্যাংক ৫ দশমিক ২৮ ও আইসিবি ইসলামিক দশমিক ৩৮ শতাংশ।
ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের আমানত রাখার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে মুদারাবা আমানত সবচেয়ে বেশি ৪৭ দশমিক ০৭ শতাংশ।
এ ছাড়া ইসলামি ব্যাংকিং শাখাগুলোতে মোট আমানতের ৩ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডোগুলোতে ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ আমানত রয়েছে।
বিনিয়োগ
ডিসেম্বর শেষে দেশে ব্যবসারত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ বা বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ইসলামি ধারার আট ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
২০১৯ সালের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩১ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। ওই বছর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে শীর্ষে আছে ইসলামী ব্যাংক।
এর পরই রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৪ দশমিক ০৯, এক্সিম ১৩ দশমিক ০৭, আল-আরাফাহ ১০ দশমিক ৫৩, সোশ্যাল ইসলামী ১০ দশমিক ০৮, শাহজালাল ইসলামী ৬ দশমিক ৬৮, ইউনিয়ন ব্যাংক ৫ দশমিক ৬৬ ও আইসিবি ইসলামিক দশমিক ২৯ শতাংশ।
ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ‘বাই মুরাবাহ’ সবচেয়ে প্রচলিত। মোট বিনিয়োগের প্রায় ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে এ পদ্ধতিতে। এর পর রয়েছে ‘বাই মুয়াজ্জল’। এ ব্যবস্থায় মোট বিনিয়োগের ২৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ করা হয়েছে।
বাকি বিনিয়োগ করা হয়েছে বাই সালাম, ইজারা অ্যান্ড ইজারা, বাই ইসতিসনা, মুসারাকাসহ অন্যান্য পদ্ধতিতে।
ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে ৪৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। এর পরে দ্বিতীয় অবস্থানে শিল্প খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বৃহত্তর ও সেবা বাণিজ্যে ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এ ছাড়া অবকাঠামোতে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ, কটেজ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে করেছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ভোক্তা খাতে ২ দশমিক ৮৯, কৃষিতে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, যোগাযোগ খাতে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ, অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানকি ঋণ ১ দশমিক ৩৯ এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে দশমিক ১৬ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে ইসলামি ব্যাংকগুলো।
এ ধারার ব্যাংকগুলো আধুনিক ধারার সব ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য সুকুক বন্ড চালু করেছে। সুদবাহী বিনিয়োগ বন্ডে ইসলামি ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারে না বলে নতুন ধরনের এ বন্ড চালু করা হয়েছে। তারল্য ব্যবস্থাপনার নতুন এ মাধ্যমে সরকার চাইলে ইসলামি ব্যাংকগুলো থেকেও মূলধন নিতে পারবে।
তারল্য
ব্যাংকিং খাতে এখন মোট তারল্য ২ লাখ ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকগুলোর হাতে অলস টাকার পরিমাণ ২৯ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে শেষে এই অঙ্কটা ছিল ৯ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা।
রেমিট্যান্স
দেশের মোট প্রবাসী আয়ের ৪০ দশমিক ৫১ শতাংশের অধিক এসব ব্যাংকের মাধ্যমে আসে। অবশ্য এর মধ্যে কেবল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমেই আসে প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রবাসী আয়। ডিসেম্বর শেষে এ ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে।
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ছোঁয়াছুঁয়ি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় শতাধিক গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে এর মধ্যে বাছুরের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। কোরবানির ঈদের আগেই এর সংক্রমণ প্রকোপ ছিল বলে জানা যায়। তবে এলএসডির সংক্রমণ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের।
রোগটি সাধারণত বর্ষা মৌসুমের শেষে, শরৎ বা বসন্তের শুরুতে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তবে এবার অনেকটা আগেভাগেই এর সংক্রমণের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে খামারিসহ সাধারণ মানুষের।
উপজেলার তোড়িয়া, ধামোর আলোয়াখোয়া ও বলরামপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যাচ্ছে যে, গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজের সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি এ রোগে গরুর মৃত্যুও হচ্ছে। যার সংখ্যা ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক ছাড়িয়েছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, গত দুই দিনে উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে মৃত্যু হয়েছে ১৫টিরও বেশি বাছুরের। পার্শ্ববর্তী আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়ও মারা গেছে ১০ থেকে ১২টি বাছুরের। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে এবং মৃত্যুও হচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, তার বাছুরের প্রথম দিকে জ্বর ছিল প্রায় ১০৪°-১০৬° তাপমাত্রা। অতিরিক্ত জ্বরের জন্য মুখ ও নাক দিয়ে লালা পড়ে, পা ফুলে যায় এবং দুই পায়ের মাঝখানে পানি জমে। ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে। পরে পিণ্ডাকৃতির স্থানে লোম উঠে গিয়ে ক্ষত হওয়া শুরু করে বিভিন্ন স্থানে তা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বাছুরটি মারা যায়।
তবে, এই রোগকে পুঁজি করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন পল্লী পশু চিকিৎসকরা। তাদের এই অসাধু চিন্তার দিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো নজরদারি নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, কারিয়াল (পল্লী পশু চিকিৎসক) আসার সঙ্গে সঙ্গে ৩-৪ টা ইনজেকশন দিয়ে দেন। তাতেই ভিজিট দিতে হয় ৪০০-৫০০ টাকা। কী ওষুধ দেন না দেন আর কিছু ওষুধের নাম লিখে দিয়ে চলে যান। তারা বর্তমানে টাকার পেছনে ছুটছেন। আমাদের এলাকার অনেক গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে- তবে এর মধ্যে বাছুরের সংখ্যা ৯০ ভাগ।
এ বিষয়ে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোসা. সোয়াইবা আখতার জানান, লাম্পি স্কিন ডিজিজ ১ থেকে ৬ মাস বয়সি বাছুরের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এটি ভাইরাসংঘটিত হওয়ায় এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। শুধু সচেতনতার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে এরপরও যদি কোনো প্রাণী আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিপাইরেটিক বা অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। আর আক্রান্ত প্রাণীর নডিউল বা গুটি ফেটে গেলে সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়েটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ওই সব একাডেমিক লাইসেন্সহীন, অদক্ষ, পল্লী পশু চিকিৎসক ও ড্রাগ লাইসেন্সহীন ফার্মেসির বিরুদ্ধে আটোয়ারী উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে প্রতিদিন ২,৫০০ কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে আলোচনা করে এর সমাধান চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ফলে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসবে, যা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা।
কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা সমস্যা নিরসনে আর সময় ব্যয় না করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডা যৌথভাবে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা অতীব জরুরি বলে মনে করেন। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতি/কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করার আহ্বান জানিয়েছেন।
‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বর্তমান অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সংবাদ সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পড়েন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ)।
আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, এনবিআরের অন্তর্ভুক্ত দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। উক্ত দপ্তরগুলোর কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চালু থাকায় প্রস্তুত/রপ্তানিকারকরো যথা সময়ে আমদানি করা কাঁচামাল খালাস করতে পারছেন না। ফলে দেশের রপ্তানিতে বর্ধিত লিড টাইম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া পোর্টে/বিমানবন্দরে আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্য পড়ে থাকার দরুন বৃষ্টি/রোদে নষ্ট হচ্ছে। আংশিক কর্মঘণ্টার কারণে এক কর্মদিবসের মধ্যে প্রত্যাশিত ইউপি পেতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। যাতে রপ্তানি বিলম্বিত হচ্ছে। সৃষ্ট জটিলতার কারণে কিছু কিছু বায়ার ইতোমধ্যে এয়ার শিপমেন্ট ও রপ্তানি আদেশ বাতিলের হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি পোর্ট ড্যামারেজ নির্ধারিত রেটের চারগুণ হারে পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ‘কস্ট অব ড্রইং বিজনেস’ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান জুন-জুলাই মাসে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, এগ্রো প্রসেসিং, প্লাস্টিকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পের অধিকাংশ কারখানায়ই আগামী শীত মৌসুমের পণ্য তৈরির জন্য চাপ রয়েছে। এই পিক সিজনে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর অচলাবস্থার কারণে সঠিক সময়ে পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে বায়াররা ক্রয়াদেশ বাতিল ও ভবিষ্যতে নতুন ক্রয়াদেশ প্রদানে অনাগ্রহী হতে পারেন। আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজার কখনো বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। এসব অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাবে, যা হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এছাড়া উৎপাদিত পণ্য সঠিক সময়ে না পাঠাতে পারলে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক ও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, জুন মাসেই ব্যবসায়ীদের ওপর বার্ষিক ব্যাংক ঋণের মুনাফা জমা দেওয়ার একটি চাপ থাকে। এই সময়ে এসব বিরোধের কারণে পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে বায়ার কর্তৃক পেমেন্ট রিয়ালাইজেশন হবে না। ফলে ব্যবসায়ীরা একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে দেশের রপ্তানিকারী শিল্প নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গৃহীত আন্দোলন বায়ারদের মধ্যে পুনরায় ইমেজ সংকট সৃষ্টি করবে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আজ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত সব দপ্তরের কমর্কর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই সময়ে ওই দপ্তরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হলে তা আমদানি ও রপ্তানিকারকদের ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসবে, যা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। সুতরাং ওই আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট স্থবিরতা ও চলমান সংকট দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা অতীব জরুরি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় একটি দক্ষ, হয়রানিমুক্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গড়ার লক্ষ্যে এ সার্বিক সংস্কার বা আধুনিকায়নকে সমর্থ করে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা ও আমদানি-রপ্তানিতে যথাযথ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনো মতেই কাম্য নয় এবং তা কোনো প্রকার সফলতা নিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি না।
উল্লিখিত পরিস্থিতিতে নিম্নরূপ পদক্ষেপ নিতে সরকারের শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন ব্যবসায়ীরা।
১. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই প্রতিষ্ঠানের বিবিধ সেবা বিশেষত আমদানি ও রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সেবা বন্ধে ঘোষিত কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে তাদের সরিয়ে এনে ওই সেবার অব্যাহত প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক।
২. উত্তম কর তথা রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রণীত নীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আলাদাকরণ সংক্রান্ত তর্কিত অধ্যাদেশ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত করে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও আমাদের জাতীয় বাস্তবতার আলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামগ্রিক আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে পরস্পরের পরিপূরক করে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাস্তবায়ন করা হোক।
৩. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব জাতীয় প্রতিষ্ঠানে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।
৪. বিনিযোগ, ব্যবসাবাণিজ্য, পণ্য সরবরাহ তথা সাপ্লাই চেইনের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট অন্য রেগুলেটরি ও ফ্যাসিলিটেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক এবং সমন্বিত উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অনতিবিলম্বে সংস্কার বা আধুনিকায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে সময়াবদ্ধ পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন করা হোক।
৫. উপরোক্ত উদ্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে নির্দেশ দেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা মনে করি উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে মোটেও সময় ব্যয় না করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডা যৌথভাবে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা অতীব জরুরি। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ ন্যায়সঙ্গত সুরক্ষা ও দেশের অর্থনীতি যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে এখনই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সেই সঙ্গে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ভাই-বোনদের দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কলম বিরতি/কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কোনো প্রকার পূর্বশর্ত ছাড়া অনতি বিলম্বে কাজে যোগদান করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি একটি ইনক্লুসিভ আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট নিরসন করা সম্ভব। যেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে যৌক্তিক সংস্কার করে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা নির্দ্বিধায় আগের মতো জাতির সেবা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ, এমসিসিআইর সহ-সভাপতি সিমিন রহমান প্রমুখ।
প্রচণ্ড রোদ ও তাপপ্রবাহে ফলন কমেছে ঝালকাঠির পেয়ারার। প্রতি বছরের চেয়ে এবার ফলন কম হলেও ন্যায্য দামের আশায় বুক বেঁধেছেন চাষি ও বাগান মালিকরা। তবে আরৎদাররা বলছেন এবার পেয়ারার দাম বিগত বছরগুলোর তুলনায় একটু বৃদ্ধি পাবে। গতকাল শুক্রবার ঝালকাঠির ভিমরুলীতে বাগান ঘুরে দেখা যায় পেয়ারা পরিপক্ক হয়ে বাজারে আসতে আরো ১৫ দিন সময় লাগবে। ওই সময়ে পাইকারদের হাকডাক ও পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত হবে ঐতিহ্যবাহী পেয়ারার রাজ্য ও ভিমরুলী গ্রামের ভাসমান পেয়ারার হাট।
চাষিরা জানান, এবার গাছগুলোতে দেরিতে ফুল এসেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় সেই ফুল অনেকটাই ঝরে পড়েছে। আষাঢ় মাস শুরু হলেও এখনো পেয়ারা বিক্রির উপযোগী হতে আরও ১৫দিন সময় লাগবে। তাই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
কৃষি বিভাগ, বাগান মালিক ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেলো ঝালকাঠি জেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে পেয়ারা জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এসব এলাকার নদী-খালজুড়ে পেয়ারার সমারোহ থাকে।
তবে এ অঞ্চলে হিমাগার না থাকায় প্রতি বছরই নষ্ট হয়ে যায় মণ কে মণ পেয়ারা। বর্তমানে আমড়ার দাম চড়া থাকায় চাষিরা পেয়ারার থেকে আমড়া চাষে মনোযোগী হচ্ছে বলেও জানান অনেক।
কৃষক সুধির মালাকার বলেন, ‘মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারা গাছের গোড়া পরিষ্কার করে সার প্রয়োগ করতে হয়েছে। এরপরে কাদা মাটি দিয়ে গোড়া ঢেকে দিয়েছি। তাতে প্রতিটি গাছের গোড়ায় গড়ে তিনশত টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে। পেয়ারা গাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছিল, এ বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তা অনেকটাই ঝরে পড়েছে।’
আরেক চাষি অমিতাব মন্ডল কৃষক বলেন, ‘পানির ওপর ভাসমান হাটে বছরে কোটি টাকার লেনদেন হয় এ অঞ্চলে। এবার পেয়ারার ফলন কম হওয়ায় পাইকার আগমনসহ সবকিছুতেই একটা খারাপ প্রভাব পড়বে। আমাদের এই অঞ্চলে যদি একটি হিমাগার এবং জেলী তৈরির কারখানা থাকতো তাহলে পেয়ারা চাষি ও বাগান মালিকরা সারাবছর এই ব্যবসা নিয়ে থাকতে পারতো।’
বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে প্রায় ৩৫০ জনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিষয়ক আন্তঃসরকার সংস্থা রাইমসের (রিজিওনাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি হ্যাজার্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম) আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ খান মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী।
আন্তর্জাতিক বজ্রপাত নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে শনিবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৩.৩৬ মিলিয়ন বজ্রপাত হয়। এর ফলে প্রায় সাড়ে তিনশ মানুষের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হলো সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেট। বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে।
তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বজ্রপাতের হার ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়তে পারে।
সেমিনারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিকে (সিপিপি) পূর্ণাঙ্গ একটা অধিদপ্তর করার কাজ চলছে। শুধু ঘূর্ণিঝড়ের জন্য না, সব দুর্যোগের জন্য যে অধিদপ্তর হবে- সেটা হবে সিপিপি। এর কাজ হবে সারাদেশে সচেতনতা থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য স্থানীয় ভলেন্টিয়ারকে যুক্ত করা। শুধু একটা বিষয়ে জন্য না, সমস্ত বিষয়ের জন্য তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে।’
বজ্রপাতের সময় নিরাপদ থাকতে অনুষ্ঠানে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হয়-
বজ্রপাতের সময় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহ:
সেমিনারে আরও বলা হয়, বজ্রপাতের একাধিক শব্দ শোনার পর সর্বশেষ যে শব্দটি শোনা যাবে, সেই মুহূর্ত থেকে অন্তত ৩০ মিনিট ঘরের ভেতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় নিরাপদ থাকার জন্য।
দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে প্রতিনিয়ত লাল রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট ধরা পড়লেও এবার ভিন্ন চিত্র দেখা গেল বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ‘সবুজ’ রঙের ইয়াবা উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধুলা দিতে মাদক কারবারিরা নতুন এই কৌশল নিয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন আতুরার ডিপো এলাকার এবি সিদ্দিক কলোনীতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খোন্দকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করেন পরিদর্শক লোকাশীস চাকমা। অভিযানে সবুজ রঙের ২০০ পিস ইয়াবাসহ ডালিম প্রকাশ বাবু (২৬) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খোন্দকার জানান, ‘এটি দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে প্রথমবারের মতো সবুজ রঙের ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা। মাদক চক্র নতুন রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখছি।’
জানা গেছে, বাংলাদেশে বেশির ভাগ ইয়াবা থাকে লাল রঙের। তবে সম্প্রতি বেশ কিছু সাদা রঙের ইয়াবার চালান ধরা পড়েছে। এমনকি হলুদ ও কালো রঙের ট্যাবলেটও মিলেছে। এবার সবুজ রঙের ইয়াবার আবির্ভাব নতুনভাবে চিন্তায় ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রঙ পরিবর্তনের কৌশল নিয়েছে মিয়ানমারভিত্তিক মাদক সিন্ডিকেট। তাদের উদ্দেশ্য মাদকের বাজারে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে ধোঁকা দেওয়া।
সীমান্তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারভিত্তিক সিন্ডিকেট এখন লাল রঙ ছাড়াও সাদা, কালো, হলুদ ও সবুজ রঙের ইয়াবা বাজারে ছাড়ছে। এসব নতুন রঙের ইয়াবার চালান তুলনামূলক কম হলেও এর দাম বেশি। কারণ এসব ট্যাবলেটকে ভিন্নমাত্রার ও উচ্চমানের মাদক হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে পাচারকারীরা। এসব ইয়াবা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, রামু ইত্যাদি পয়েন্ট দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে ইয়াবা শুধু সীমান্তপথে ঢুকেই থেমে নেই, এটি দেশের অভ্যন্তরে সামাজিকভাবে বিস্তার লাভ করছে। কিছু পরিবার এখন এ ব্যবসাকে ‘পেশা’ হিসেবে নিয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কৌশলী অভিযান থাকা সত্ত্বেও মাদক ব্যবসা শেকড় গেড়ে ফেলছে সমাজে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রঙ পরিবর্তনের পাশাপাশি ইয়াবার গায়ে ছাপানো থাকে বিভিন্ন কোড বা প্রতীক, যার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয় কোন চক্রের তৈরি এবং কোন বাজারে চালান যাবে। এ ধরনের সাংকেতিক ব্যবস্থাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির বাইরে রাখতে চেষ্টা চালায় পাচারকারিরা।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, ট্রাফিক পুলিশের সহায়ক হিসেবে শিক্ষার্থীদের যেভাবে পার্টটাইম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই তাদের সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগের কথা ভাবছে সরকার।
গতকাল শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো ৫ আগস্টের পরে ট্রাফিক পুলিশের সহায়ক হিসেবে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে আমরা সরকারের বিভিন্ন অফিসে পার্টটাইম চাকরিতে নিয়োগ দিতে চাই শিক্ষার্থীদের।
বিভিন্ন দপ্তরে কিছু পদে ফুল টাইমে স্থায়ী নিয়োগ দরকার হয় না। তাই পার্টটাইমে নিয়োগ দিলে সরকারের ব্যয়ও কমবে, একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও আর্থিক সচ্ছলতা আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি এবং কীভাবে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীতে ধরা পড়েছে ৫০ কেজি ওজনের বড় আকৃতির একটি বাঘাড় মাছ।
গতকাল শনিবার বিকেলে পদ্মা নদীর কলাবাগান এলাকায় জেলে সিদ্দিকুর রহমানের জালে মাছটি ধরা পড়ে। নিলামে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে তার কাছ থেকে মাছটি কিনে নেন দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মো. চান্দু মোল্লা।
জানা গেছে, জেলে সিদ্দিকুর রহমান তার সঙ্গীদের নিয়ে দুপুরে পদ্মায় মাছ ধরতে যান। তারা নদীতে জাল ফেলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিকাল ৩টার দিকে জালে একটি বড় বাঘাড় মাছ আটকা পড়ে। বিক্রির জন্য তিনি দৌলতদিয়া মাছ বাজারে নিয়ে যান। সেখানে রেজাউলের আড়তে উন্মুক্ত নিলামে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে ৭৭ হাজার ৫০০ টাকায় স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লা মাছটি কিনে নেন।
চাঁদনী অ্যান্ড আরিফা মৎস্য আড়তের মালিক চান্দু মোল্লা বলেন, বড় বাঘাইড় মাছটি নিলামে উঠলে আমি ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করি। মাছটি আমার আড়ৎ ঘরে এনে ফেরিঘাটের পন্টুনের সঙ্গে বেঁধে রেখেছি। এটি বিক্রির জন্য এখন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভিডিও দেওয়া হয়েছে। কেজিপ্রতি অল্প কিছু টাকা লাভ হলেই মাছটি বিক্রি করে দেব।
মন্তব্য