বগুড়ার চার উপজেলায় ১৩৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আটকে গেছে। তবে ভাতা বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো চিঠি পাননি তারা।
কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানিয়েছেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সমন্বিত তালিকা তৈরি করছে। এতে ৩৩টি প্রমাণকসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জামুকার সুপারিশ প্রয়োজন। এসব জটিলতায় এই ভাতা বন্ধ থাকতে পারে।
সোনালী ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের ভাতা গত ৯ মার্চ আসে। এতে বগুড়ার চার উপজেলার ১৩৯ জনের হিসাবে ফেব্রুয়ারির ভাতা জমা হয়নি। অথচ তারা জানুয়ারি মাসের ভাতা পেয়েছিলেন। অন্যরা টাকা পেয়েছেন। এই চার উপজেলা হলো বগুড়া সদর, দুপচাঁচিয়া, ধুনট ও নন্দীগ্রাম।
ব্যাংক জানিয়েছে, বগুড়ার সব উপজেলায় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ হয়েছে। তবে ভাতা জমা না হওয়ার বিষয়ে তারা কোনো চিঠি পাননি।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে ভাতা পাননি এমন দুজনকে পাওয়া যায়। তাদের একজন তোফাজ্জাল হোসেন তোতা। বগুড়া সদরের মালতীনগরের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা তিনি।
কলেজজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ছিলেন সেই সময়ের আজিজুল হক কলেজের নেতা। যুদ্ধের ডাক পেয়ে যান ভারতে। সেখানে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশকে মুক্ত করতে যুদ্ধে অংশ নেন।
তোফাজ্জল ভাতা নিয়মিত পেতেন। ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কেন বন্ধ হলো, সেই উত্তর নেই তার কাছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের যাচাইবাছাই তালিকা করে আমাদের নাম রেজ্যুলেশন করা হয়। আমরা ভারতীয় গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সব কাগজ আমার আছে।’
তোফাজ্জল বলেন, ‘এতদিন নিয়মিত ভাতা পেয়ে এসেছি। ফেব্রুয়ারিতে কী হলো? টাকা ব্যাংকে আসেনি। কোনো চিঠি বা নোটিশও দেয়নি। শুনেছি অনেকের বিএনপি করার কারণে সম্মানী ভাতা আটকে গেছে। অথচ আমি তো কখনও বিএনপি করিনি।’
এমনি আরেকজন ভাতাবঞ্চিত নাট্যাভিনেতা আহসানুল হক মিনু। তিনি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পেয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে কোনো টাকা পাননি।
আহসানুল হক বলেন, ‘২০০৫-এ অনেকগুলো গেজেট হয়। এর মধ্যে লাল মুক্তিবার্তায় অনেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যারা যুদ্ধ করেছেন তারাও হয়েছেন। যারা যুদ্ধ করেননি তারাও তালিকায় নাম দিয়েছিলেন। অনেক চোরবাটপারও এই সময় নিজের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় দেয়।
‘এটা সাময়িক সমস্যা বলে মনে করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকার যাচাইবাছাইয়ে জামুকার সুপারিশ লাগবে। তাদের প্রক্রিয়া শেষ হলে ভাতা বন্ধের এই সমস্যার সমাধান হবে।’
ভাতা বন্ধের বিষয়ে বগুড়া জেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বাবলু বলেন, ‘ভাতা বন্ধের কথা শুনেছি। তবে জেলায় কতজনের ভাতা বন্ধ হয়েছে তা বলতে পারব না। কারণ আমাদের কাছে এখন কোনো তথ্য থাকে না।’
সাবেক এ কমান্ডার আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম যাচাইবাছাই শুরু হয়। ওই সময় মামলা জটিলতায় বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম এই তিনটি উপজেলা বাদ থাকে। তখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি বা যাবতীয় তথ্য রাখার বিষয় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা দেখছেন। সব হিসাব তাদের হাতে দেয়া হয়েছে।’
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার গৌর গোপাল গোস্বামী বলেন, ‘সম্প্রতি একটি যাচাইবাছাই হয়। এতে অনেকের নাম বাদ পড়েছে বলে শুনেছি।’
জেলার কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যাচাইবাছাই কার্যক্রম শুরু করে জামুকা। ওই সময় বগুড়ায় যাচাইবাছাইয়ে সমস্যা হয়। পরে সেই কাজ স্থগিত করে জামুকা। সম্প্রতি পঞ্চম ধাপের যাচাইবাছাইয়ে সমন্বিত খসড়া তালিকা তৈরি করে জামুকা। এখানে যেমন নতুন করে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম সংযোজন হয়েছে, তেমনি অনেকের নাম বাদ পড়েছে।
জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাভোগীর পরিসংখ্যান সোনালী ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয়। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা উপজেলা পর্যায়ের সোনালী ব্যাংকের শাখায় পাঠানো হয়। এর আগে সমাজসেবা অধিদপ্তর এই তথ্য সংরক্ষণ করত।
সোনালী ব্যাংকের ধুনট শাখার ব্যবস্থাপক মাহবুবুল আলম জানান, উপজেলায় ফেব্রুয়ারি মাসে ভাতা পাননি ২৯ জন। ধুনট শাখায় মোট বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতাভোগী ২১২ জন। আর ফেব্রুয়ারি মাসে ভাতা এসেছে ১৮১ জনের।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা সোনালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক এস এম মনোয়ার হোসেন জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে ভাতা এসেছে ১৫৬ জনের। আর ২৯ জনের বন্ধ রয়েছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলার সোনালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান জানান, দুজন ফেব্রুয়ারি মাসের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। জানুয়ারি মাসে সোনালী ব্যাংক নন্দীগ্রাম শাখায় ভাতা জমা হয় ৪৮ জনের। ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ৪৬ জনের।
সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, বগুড়া সদর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩৯৫ জন। গত জানুয়ারি মাসে এই ভাতা পেয়েছেন ৩৭৮ জন। আর ফেব্রুয়ারিতে ভাতা পান ৩২২ জন। তবে এর মধ্যে উত্তোলন করতে পারেন ৩১১ জন। ওয়ারিশ ও বিভিন্ন সমস্যার জন্য বাকি ১১ জনের ভাতা তোলা হয়নি। কাগজপত্রের কাজ শেষ হলেই তারা এই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
তিনি জানান, ওই হিসাবে সদর উপজেলায় ৮৪ জন মুক্তিযোদ্ধা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভাতা পাননি।
মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য এমআইএস পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে পে-রোল পাঠাই আমরা। মন্ত্রণালয় সেই পে-রোল সমন্বয় করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠায়।’
করপোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জেসমীন আক্তার বলেন, ‘জামুকার যাচাইবাছাই কাজের কারণে সব উপজেলায় কমবেশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বন্ধ রয়েছে। এখানে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। আমরা শুধু টাকাগুলো বিতরণ করি।’
কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সনদ যাচাইয়ের বিষয়ে একটি পরিপত্র ইস্যু করা হয়। পরে প্রমাণক সংক্রান্ত পরিপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীসহ সরকারের সব মন্ত্রণালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু করে।
এ পরিপত্রে সাতটি শ্রেণিতে ৩৩টি প্রমাণক নির্ধারণ করা হয়েছে।
এগুলো হলো
ক. ভারতীয় তালিকা (পদ্মা, মেঘনা, সেক্টর, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী); খ. লাল মুক্তিবার্তা (চূড়ান্ত লাল বই) ও লাল মুক্তিবার্তায় স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা; গ. গেজেট (বেসামরিক গেজেট, প্রবাসে বিশ্ব জনমত গেজেট, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত গেজেট, বিসিএস গেজেট, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক গেজেট, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত বা দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা, মুজিবনগর গেজেট; ঘ. বাহিনী গেজেট (সেনা, নৌ, বিমান, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও নৌ-কমান্ডো); ঙ. শহীদ গেজেট (শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহীদ গেজেট, শহীদ বিজিবি গেজেট, শহীদ পুলিশ গেজেট); চ. খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট; এবং ছ. যুদ্ধাহত (যুদ্ধাহত গেজেট, যুদ্ধাহত পঙ্গু, যুদ্ধাহত বিজিবি গেজেট ও যুদ্ধাহত সেনা গেজেট)।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সেটিকে পাশ দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস খাড়ে পড়ে যায়। এতে অল্পের জন্যে জীবন রক্ষা পেয়েছে বাসের অন্তত ৬৫ যাত্রীর। তবে এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর জেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে বাস ও আহতদের উদ্ধার করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হাওলাদার পরিবহনের একটি বাস প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বরিশাল থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঘটকচর এলাকায় আসলে একটি ইজিবাইক রাস্তার মাঝে চলে আসে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকটিকে পাশ দিতে বাসচালক দ্রুত মোড় নেয়ায় বাসটি রাস্তার পাশের খাদে চলে যায়। তবে খাদটি বেশি গভীর না হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। তবে আঘাত পেয়ে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীদের হাত-পায়ে একাধিক স্থানে কেটে গেছে। এ ঘটনায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে মোস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় যাত্রীদের উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলাম। ঘটকচর স্ট্যান্ডের কিছুটা দূরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে গেলাম। পরে দেখি বাসটি খাদে পড়ে গেছে। আমার নাকে কিছুটা আঘাত পেয়েছি। অন্য যাত্রীদেরও বেশ আঘাত লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক পাশ দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কে ইজিবাইক নছিমন বন্ধ করা উচিত।’
এ ব্যাপারে মোস্তফাপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মারুফ রহমান বলেন, ‘বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তত ৬৫ জন যাত্রী। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইজিবাইকটি আটক করা যায়নি।’
আরও পড়ুন:বৃহত্তর চট্টগ্রামে রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত ও অপর একজন আহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক ও হাটহাজারী পৌরসভার প্রশাসক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু শনিবার বলেন, ‘কয়েক দিনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আমাদের তিনটি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গাড়ি পোড়ানো ও সড়কে নৈরাজ্যের প্রতিবাদসহ চার দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (রোববার) সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলায় এই ধর্মঘট পালিত হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে সোমবার বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাসে আগুন দেয়া হয়।
বুধবার ওই বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা শান্ত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনের সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। যদিও জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সে সঙ্গে দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মন্তব্য